নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সেদিন একজন ফ্যাকাল্টি ম্যাডাম আমাদেরকে পড়াশোনা নিয়ে কথা শোনাচ্ছিলেন। তিনি বললেন, প্রতিদিন কমসে কম ৩-৪ ঘন্টা করে পড়ালখা করতে হবে। সফল হতে হলে সবচেয়ে সুবিধাজনক হল অ্যাকাডেমিক লাইনে ক্যারিয়ার গড়া। নাহলে দেশে ইন্ডাস্ট্রিতে ক্যারিয়ারের লাইন অনেক কষ্টকর।
তিনি যুক্তি দেখান, বেতন ভালো হলে ৪০,০০০ টাকা হতে পারে। বাচ্চাকে ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ানোর খরচ মাস প্রতি ২০,০০০, বাড়ি ভাড়া ভালো জায়গায় ৩০,০০০। খরচ কুলাতে কুলাতে দম বের হয়ে যাবে। তাঁর ভাষায়, আমি এখন ৪ ঘন্টা পড়তে বলছি মুখ তিতা হয়ে গেল। কিন্তু যে ভদ্রমহিলাকে বিয়ে করবে, তিনি যখন বলবেন, দিনে ৮ ঘন্টা করে কাজ কর কেন? ১৬ ঘন্টা করে কাজ করবে। আমার বান্ধবীর হাজবেন্ডের এই আছে সেই আছে, তোমার কী আছে? তখন তুমি কী বলবে?
ইউনিভার্সিটির কোন ছাত্রকে মোটিভেট করতে এর চেয়ে ভালো কথা আর হয় না, সরাসরি তাকে জানিয়ে দিন ভবিষ্যতে তার জন্য কেমন জীবন অপেক্ষা করছে। নো মোর বুলশিটিং! কিন্তু এই আপাতঃনিরীহ প্রেপ টকেই লুকিয়ে আছে ভয়ংকর অনিশ্চিত জীবনের বার্তা...
সাফল্যের হার বনাম জনসংখ্যার লেখচিত্র সব সময়ই বেল-শেইপড কার্ভ। অর্থাৎ কার্ভের মোড বা সর্বাধিক জনসংখ্যা মিডিওকারদের দখলে, এই আলোচনার কনটেক্সটে যারা অ্যাকাডেমিক লাইনে ক্যারিয়ার গড়তে পারেনি, অথবা অন্য লাইনেও সাফল্যের শিখরে পৌঁছতে পারেনি, মাঝামাঝি পর্যায়ে জীবন অতিবাহিত করছে। অর্থাৎ ম্যাডামের বর্ণনা মোতাবেক প্রত্যাশার চাপ সামলাতে সামলাতে খাবি খাওয়া মানুষদের সংখ্যাই বেশি, আর দিনে দিনে এই সংখ্যা বাড়বে।
আমরা সবাই উন্নত জীবনযাত্রার মান, আধুনিক নাগরিক সুবিধার কথা বলি, আমাদের ব্যক্তিজীবন থেকে সমাজ, প্রশাসন তার লক্ষ্যেই চালিত হয়। কিন্তু ভুলে যাই, উন্নত জীবন যাত্রা সব সময়ই ব্যয়বহুল।
সময় সচেতনতার জন্য বিখ্যাত জাপানে প্রায়ই কয়েক মিনিট করে ট্রেন লেট করছে। কারণ ট্রেনে কাটা পড় মানুষ আত্মহত্যা করছে। এই আত্মহত্যার উর্ধ্বমুখী হারের পেছনে আছে তাদের বহু আকাঙ্ক্ষিত উন্নত জীবন, যে জীবন তাদের কাঁধে চাপিয়েছে খরচের জোয়াল, পায়ে জড়িয়েছে বাধ্যশ্রমের শেকল, আর তাদের ক্লাস কনশাসনেস তাদের ঠেলে দিয়েছে এক ভয়ংকর পয়েন্ট অভ নো রিটার্নে, যেখান থেকে সাধারণ জীবনযাপনে ফিরে আসার কোন উপায় নাই। তারা বড় বড় মাল্টিন্যাশনাল কম্পানির ভোক্তা এবং কর্মচারী। ফেইসবুকে যে পোস্ট পড়ে জেনেছি
বিগত কয়েক দশকে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পরিচয় ছিল শিক্ষিত প্রতিক্রিয়াশীল জনগণ হিসেবে। আমরা নিজেদেরকে সমাজের মূল্যবোধের ধারক-বাহক এবং নিম্নবিত্তদের প্রতি আসল সিমপ্যাথেটিক হিসেবে গণ্য করে তৃপ্তি পাই। কিন্তু ভবিষ্যতের মধ্যবিত্তের সংজ্ঞা দাঁড়াতে পারে ক্যাপিটালিস্ট আর কনজিউমারিজমের এক্সটেনশন হিসেবে, স্বার্থপরতা চরিতার্থে মগ্ন যন্ত্রমানব হিসেবে।
©somewhere in net ltd.