নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Wasiful Gofur Abir\n\nFacebook ID: Wasif Abir

দ্যা বান্দর

দ্যা বান্দর › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিউডোসায়েন্স নিয়ে যত কথা

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:০৬

একটা সংখ্যারেখার একপ্রান্তে যদি ধর্ম বসান, আর আরেকপ্রান্তে বিজ্ঞান, তাইলে সংখ্যারেখাটার মাঝামাঝি কোন জায়গায় পাইবেন সিউডোসায়েন্স। সিউডো হইল মিথ্যা, সায়েন্স হইল বিজ্ঞান, মোট কথা জিনিসটা হইল অলীক-বিজ্ঞান। এখন কথা হইল এটার কাম কী?

আমি একটা জিনিস বিশ্বাস করি, ঠিক মত কথা সাজাইলে যে কাউরেই যে কোন কিছু কনভিন্স করা যায়। হ্যারি হুডিনির জীবনীতে দেখসিলাম এমন ভণ্ড প্রেতসাধক ছিল, যারা অনেক সায়েন্টিস্টরেও বোকা বানাইসে। মানুষ মনে করে জ্ঞান বাড়াইলে, শিক্ষিত হইলে ধোঁকা খাওনের ভালন্যারিবিলিটি কমে। আমার মতে, কমে না, নতুন টেকনিক দরকার হয়, অশিক্ষিত মানুষ যেসব কথায় বোকা হবে, শিক্ষিত মানুষ সেগুলা খাবে না।

কোন মানুষরে কিছু কনভিন্স করাইতে হইলে দেখতে হবে, সে কোন লাইনে পড়াশোনা করসে, কোন পত্রিকার কোন কোন পতা পড়ে, ফেইসবুকে কোন কোন ব্যক্তি বা পেইজের সাবস্ক্রিপশন আছে- মোদ্দা কথা, তার শব্দভাণ্ডারে কোন কোন শব্দ যোগ হইতেসে, কোন কোন শব্দের উপস্থিতি দেখলে সে কোন পিস অভ রাইটংরে গুরুত্ব সহকারে পড়বে। অ্যান্ড দ্যাট’স হোয়্যার সিউডো-সায়েন্স কামস ইন।
বুঝুক বা না বুঝুক শিক্ষিত মানুষ বিজ্ঞান জিনিসটারে সমীহ করে। তাই মানুষ দৈনিক পত্রিকার বিজ্ঞানের পাতায় যেসব শব্দের সাথে ফ্যামিলিয়ার হয়, সেসব শব্দ ব্যবহার করে আপনি যে কোন ভুংচুং বিষয়রে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধের চেহারা দিতে পারবেন। সেটাই মূলত অলীক-বিজ্ঞান। সেসব শব্দের একটা ছোটখাট লিস্ট দিলাম:

কোয়ান্টাম ফিজিক্স, আর্থ ম্যাগনেটিক ফিল্ড, কসমিক রশ্মি, ইউনিভার্সাল অবজার্ভার, ব্রেইনওয়েভ, মেটাবলিজম, রেস্পিরেশন, হরমোন প্রবাহ, পরিপাকের এনজাইম, নার্ভ স্টিমুলেশন, অর্গানিক, জেনেটিক, তরঙ্গের আয়োনাইজেশন, টাইম-স্পেস, মানুষের শরীরের উপর গ্রহ-নক্ষত্রের মাধ্যাকর্ষণ ক্রিয়া, অবচেতন মন ইত্যাদি ইত্যাদি।

এই শব্দগুলোর দুই ধরণের ব্যবহারকারী আছে, তাদের নিয়ে আলাদা করে আলোচনা করছি।

প্রথম বলি ব্যবসায়ীদের কথা, যেমন বিভিন্ন মেডিটেশন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, হার্বাল প্রসাধনী আর ওষুধের কোম্পানি, স্পর্শ চিকিৎসক বা অলৌকিক ক্ষমতার দাবীদার বৈদ্য, জ্যোতিষবিদ, অকাল্টিস্ট ইত্যাদি।

অনেক অ্যানশিয়েন্ট নলেজের প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল, এবং কিছু কিছু আমি নিজের জীবনে প্রয়োগ করতেও আগ্রহী। আমার মতে, মানুষ নিজ নিজ ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী অ্যানশিয়েন্ট নলেজের দ্বারপ্রার্থী হইতেই পারে, মেডিটেশন কইরা যদি মনের ব্যায়াম করে, যোগব্যায়াম কইরা স্ট্রেচিং করে, প্রাণায়াম কইরা স্ট্যামিনা বাড়ায়- এখানে তো সমস্যা নাই। সমস্যা হইল যখন এসব নলেজের অত্যুৎসাহী ডিসাইপল বা ব্যবসায়ী কাটতি বাড়ানোর জন্য প্রাচীন জ্ঞানকে আধুনিক বিজ্ঞানে ইন্টারপ্রেট করতে গিয়ে গোঁজামিল ঢুকায়। অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসায় মানুষের ভরসা কমে যাওয়ায় যে গ্যাপটা সৃষ্টি হয়েছে, তাঁরা স্রেফ সেটার সুযোগ নেন। এটা দুঃখজনক, অনেক মানুষকেই এসব বিপথে নেয়, বিভ্রান্ত করে।

এক্ষেত্রে হুমায়ুন আহমেদের একটা ঘটনা মনে পড়ল। তিনি চীনে একটা বিখ্যাত হার্বাল চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে গেছেন। ওখানকার চিকিৎসক তাঁকে দেখেই বলে দিলেন তাঁর বাইপাস সার্জারি হয়েছে, শুনে তিনি অবাক। পরে তাঁর স্ত্রীর কথায় বুজতে পারলেন, সার্জারির জন্য হাত থেকে যে ভেইন নেয়া হয়েছে-সেই কাটা দাগটা রয়ে গেছে। সেটা দেখে যে কেউ বাইপাস সার্জারির কথা অনুমান করতে পারবে। কয়েকদিন আগেও বাংলাদেশে মেটাল রিস্টব্যান্ড বেঁচা হত, এই কথা বলে যে, মানুষের বাত ব্যথার কারণ হল সেলফোনের তরঙ্গ, আর সেই রিস্টব্যান্ড তরঙ্গের কুপ্রবাব থেকে রক্ষা করবে।

আধুনিক মেডিসিন হার্বালেরই ডেরিভেটিভ। প্রকৃতিতে যেসব উপাদানের ঔষধি গুণ আছে, সেসবই সংগ্রহ করে মূল ক্রিয়াশীল পদার্থটাকে চিহ্নিত করা হয়, প্রয়োজনে সেটাকেই মডিফাই করে আরও উন্নত করা হয়, আর এভাবেই আমরা অ্যালোপ্যাতির ওষুধ পাই।
সিউডোসায়েন্সের দ্বিতীয় যে গ্রুপটা আছে, সেটা হইল অনলাইনের ওয়ানা-বি অ্যাকটিভিস্ট। ইদানিং ট্রেন্ড ‍শুরু হয়েছে কন্সপিরেসি চর্চা, অ্যান্টি-ভ্যাকসিন, অ্যান্টি জিএমও, অ্যান্টি-বিগ ফার্মা ইত্যাদি, ওয়ানা-বি অ্যাকটিভিস্টদের বেশিরভাগেরই কাজ হল প্যানিক মংগারিং। আমি এসব আন্দোলনের বিরুদ্ধে কথা বলছি না না, আমি তাদের সিউডোসায়েন্স ব্যবহারের বিরুদ্ধে।

প্রথম কারণটা অভিয়াস, মানুষ বিভ্রান্ত হইতেসে। দ্বিতীয়টা হইল, এতে তাদের নিজেদেরই উদ্দেশ্যটা খর্ব হইতেসে। কেমনে? অনলাইনের আন্দোলকারীরা অ্যানোনিমাস। ধরেন, তাদের মধ্যে প্রো-জিএমও, প্রো-বিগ ফার্মারা মিশে গিয়ে সিউডোসায়েন্সের ভড়ং ব্যবহার করে বিভিন্ন ইস্যুর প্রচার করল। তারপর আসল ওয়ানা-বি অ্যাকটিভিস্টরা না বুঝে সেগুলো লুফে নিল আর সেগুলোর প্রচার করা শুরু করল। সেসব ভুয়া ইস্যু ভালো পাবলিসিটি পাওয়ার পর প্রো-জিএমও, প্রো-বিগ ফার্মারা স্বরূপে আবির্ভূত হয়ে বৈজ্ঞানিক যুক্তি দেখায়ে ইস্যুগুলা খন্ডন কইরা দিল। যারা নিউট্রাল, তারা এসব দেইখা অ্যাকটিভিস্টদের দুয়ো দিল, আর শেষমেষ দাঁড়াইল কী? অ্যাকটিভিস্টদের যেসব অরিজিনাল ইস্যু ছিল সেগুলা চাপা পইড়া গেল। [এরকম কিছু আদৌ ঘটসে কিনা আমার কাছে এভিডেন্স নাই, প্রো-জিএমওরা চাইলে এরকম কিছু একটা ঘটাইতে পারে- এরকম একটা সম্ভাবনার কথা বললাম।]

যেমন যারা অ্যান্টি-জিএমও বা অর্গানিক কৃষির সমর্থনকারী, তারা বলাবলি করতেসিল জেনেটিক্যালি মডিফায়েড অর্গানিজম বা খাদ্যশস্য খাইলে এই হইব, সেই হইব, হরমোনাল প্রবলেম হইব, হরাইজনটাল জিন ট্রান্সফার হইব। পরে রিসার্চে প্রমাণিত হইল জিএমও খাইলে অসুবিধা নাই, (http://www.jasbsci.com/content/4/1/37) তখন অ্যান্টি-জিএমওদের আসল ইস্যু চাপা পইড়া গেল, যেমন রাসায়নিক কীটনাশক, সার ব্যবহারে পরিবেশের ক্ষতি, জিএমও নিয়ে খাদ্য রাজনীতি ইত্যাদি। এইচএসসির বইতে পড়ানো হয়, জেনেটিক্যালি মডিফাইড সুপার রাইস দিয়ে এশিয়ান শিশুদের ভাইটামিন-এ এর অভাব পূরণ করা হইব, কিন্তু বলা হয় না গ্রামেগঞ্জের রাস্তাঘাটে কুড়ায়া পাওয়া সবজিতেই ভাইটামিন-এ এর সোর্স আছে। মাঝখান দিয়া জিএমও ল্যাবের লাভ, মিলিয়ন ডলারের প্রজেক্ট।

জিএমও নিয়া আরেকটা সমস্যা আছে। একটা অ্যানালজি দিয়া বুঝাই।

ধরেন, আপনাগো ভিটাবাড়িতে চৌদ্দপুরুষ ধইরা মালিকানা ভোগ করতেসেন। এখন একটা এসি কম্পানি আইসা বলল, এহহে! আপনাগো বাড়িতে তো এসি নাই, গরমে কষ্ট করেন। আমরা একটা এসি লাগায়া দেই। এসি লাগানের পর আপনে ঠাণ্ডা বাতাস পাইলেন। কিন্তু এখন তারা দাবি কইরা বসল, এসি যেহেতু লাগায় দিসি, এখন পুরা বাড়ির মালিকানা আমার। তাইলে কেমন হইব ব্যাপারটা?

এই যে চাইল-ডাইল খাইতেসেন এগুলা কি সৃষ্টির শুরু থেকা এইরকম চেহারার ছিল? না, এগুলা জংলি উদ্ভিদ ছিল। আপনের পূর্বপুরুষরা যুগের পর যুগ ধইরা জংলি জাতটারেই ধইরা আইনা সিলেকটিভ ব্রিডিং করতে করতে আজকের চেহারায় নিয়া আসছে, তাইলে বংশপরম্পরায় আপনে এক ধরনের অলিখিত মালিকানা ভোগ করতেসেন। কিন্তু তখন জিএমও কম্পানি আইসা বলতেসে, এহহে! আপনের ধানে তো ভাইটামিন এ নাই, কিংবা আপনের ধান তো ফসল তুলার আগেই বন্যায় ভাইসা যাইতেসে, আসেন এগুলার ফসল আসার সময়টা আগায় দেই বা ধানগাছগুলারে লম্বা কইরা দেই যাতে না ডুইবা যায়, অথবা আপনের গাছে কীট-প্রতিরোধী জিন ঢুকায় দেই। তারপর তারা নতুন গুণ অ্যাড কইরা পুরা জাতের প্যাটেন্ট লইব। এইটা করতে গিয়া আপনের বাপদাদারা যেসব গুণ অ্যাড করসিল এত যুগ ধইরা সেগুলার মালিকানাও লয়া লইতেসে...

জিএমও কম্পানির কাজ লাভ তোলা, মানুষের পুষ্টি বা খাদ্য উৎপাদন তাদের মূল লক্ষ্য না, ওষুধ কম্পানির কাজ লাভ তোলা, মানুষের স্বাস্থ্য আদৌ কই গেল সেটা তাদের কাছে সেকেন্ডারি। কিন্তু সিউডোসায়েন্স এসবের বিকল্প হইতে পারে না।

আপনি কন্সপিরেসি থিওরি চর্চা করতে চান, ইউ আর ওয়েলকাম, ইওর ইন্টেলেকচুয়াল সার্ভিস ইজ ওয়েলকামড। কিন্তু ইন্টারনেটে ভিত্তিহীন সিউডোসায়েন্স আর্টিকেল পইড়া সময় নষ্ট কইরেন না। আপনি বিজ্ঞান শিখেন, ইকোনমিকস শিখেন, সোশ্যাল ডিনামিকস শিখেন। তার আগে গইড়া তুলেন র‌্যাশিওনাল নির্মোহ চিন্তাভাবনা করা, জার্নালে পাবলিশ করা পেপারের সাথে মিলিয়ে দেখার চর্চা, কঠিন কঠিন লেখা হজম করার চর্চা।

A reminder to me, first and foremost.

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১:০২

অতনু অর্ঘ বলেছেন: ভালো Post দিয়েছেন ভাই। তবে, দু:খজনক হলেও সত্যি - এইসব Post মূল্যায়ন করার জায়গা এই ব্লগ বা এই দেশ না। এরচেয়ে আপনি যদি বিজ্ঞানের আলোকে চাঁদে সাঈদি হুজুরকে দেখতে পাওয়ার অকাট্য প্রমাণ দিতেন - তাহলে অনেক বাহবা পেতেন। তবে আর যাই করেন, ভুলেও বিজ্ঞান দিয়ে আমাদের কোমল অনুভুতিতে আঘাত দিয়েননা ভাই। কারণ - "জগৎ বিখ্যাত মোরা ধর্মপ্রাণ জাতি"। তাহলে চাপাতির কোপ খেয়েতো মরবেনই, সাথে আপনার চৌদ্দগুষ্টির জন্য গালি-গালাজ ফ্রি।

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১:৪৮

দ্যা বান্দর বলেছেন: হুমম

২| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৩:০২

হাসান মাহবুব বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। +++++

০২ রা মে, ২০১৫ সকাল ১১:৫১

দ্যা বান্দর বলেছেন: ধন্যবাদ হামা ভাই

৩| ০১ লা মে, ২০১৫ সকাল ৯:৪৭

অদ্ভুত_আমি বলেছেন: ভালো লাগলো ।

০২ রা মে, ২০১৫ সকাল ১১:৫২

দ্যা বান্দর বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য

৪| ০১ লা মে, ২০১৫ সকাল ১০:০৩

এইচ তালুকদার বলেছেন: অসাধারন লিখেছেন

০২ রা মে, ২০১৫ সকাল ১১:৫২

দ্যা বান্দর বলেছেন: ধন্যবাদ তালুকদার সাহেব

৫| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৩৩

শায়মা বলেছেন: দারুন একটা পোস্ট!!!!!!!


:) :) :)


প্রিয়তে রাখলাম এতদিন পরে ভাইয়া!


আজ হঠাৎ এই সিউডো সায়েন্স নিয়ে দরকার পড়তেই এই লেখার সন্ধান পেলাম!


অনেক অনেক ধন্যবাদ এমন লেখার জন্য!


আর লেখোনা কেনো ভাইয়ামনি!!!!!

৬| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৬

জাহিদ অনিক বলেছেন:
বাহ দুর্দান্ত

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.