নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Wasiful Gofur Abir\n\nFacebook ID: Wasif Abir

দ্যা বান্দর

দ্যা বান্দর › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাঠ-প্রতিক্রিয়া: দুর্ঘটনায় কবি

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:২৬


উপন্যাস
ঘরানা: ড্রামা
লেখক: জিয়া হাসান
প্রকাশনী: আদর্শ
সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য: ৩০০ টাকা

ফেইসবুকে লেখালেখির যে নতুন একটা ইন্টেলেকচুয়াল ধারা শুরু হয়েছে সেটার অন্যতম একজন শরীক জিয়া হাসান। তাঁর অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ আর বিশ্লেষণী লেখালেখির জন্য ফেইসবুকে তিনি ব্যাপক সেলিব্রেটেড, ইস্যুভেদে সমালোচিতও। নন-ফিকশন ধারায় তাঁর প্রথম বইটির (শাহবাগ থেকে হেফাজত: রাজসাক্ষীর জবানবন্দি, ২০১৪) সাফল্যের পর এই ফিকশন বইটি নিয়ে দ্বিতীয় বারের মত বইমেলায় পদার্পণ। তাঁর আগ্রহের বিষয় মূলত সমাজ-সংস্কৃতি, রাজনীতি আর অর্থনীতি। তাই ফিকশন লিখলেও প্রত্যাশা ছিল সচরাচর যেসব ইস্যুকে অ্যাড্রেস করেন উপন্যাসে সেরকমই কিছু আনবেন- জিয়া হাসান যথাযথভাবেই সেটা মিটিয়েছেন।

দুর্ঘটনায় কবি মূলত সমাজের একজন প্রিভিলেজপ্রাপ্ত মানুষের কমফোর্ট জোন থেকে ছিটকে পড়া এবং এই ছিটকে পড়ার মাধ্যমে সমাজ ও আত্মপরিচয়ের কিছু বড় বড় প্রশ্নে সম্মুখীন হওয়ার গল্প- যে প্রশ্নগুলো মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত অনেকের মাথার ভিতরই আছে, কিন্তু সাধারণত সামনে এনে দেখা হয় না।

লেখকের ভাষা খুবই সহজ আর সাবলীল। গল্প বলার ক্রাফটের টেকনিকগুলো নিয়ে তাঁর যথেষ্ট পড়াশোনা আছে, তাই তেল, নূন, মসলা যথাযথভাবেই দেওয়া হয়েছে। চরিত্রগুলোর সাথে অল্প কথায়ই ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট গড়ে উঠে। টেনশন বিল্ডআপে লেখকের দক্ষতা প্রশংসনীয়, টেনশন একবারে থ্রিলারের হাইটে নিয়ে গেছেন। আর সবশেষে চেরি অন টপ একটা অর্থবহ টুইস্ট। পড়া শেষ করে ফেইসবুক বা মুভি নিয়ে বসে যাওয়ার মত বই না এটা- পাঠককে চিন্তায় আচ্ছন্ন করতে আর নাড়া দিতে ভালোমতই সক্ষম।

উপন্যাসের প্রোটাগনিস্ট সারোয়ার বাংলাদেশের একটা প্রথম শ্রেণীর গার্মেন্টসের মার্চেন্ডাইজিং ডিরেক্টর। অসাধারণ ই.কিউ, আই.কিউ, নেগোশিয়েশন দক্ষতা, পরিশ্রম এবং অতিঅবশ্যই ভাগ্যের আশীর্বাদে একজন বি.এ পাশ গ্রামের ছেলে থেকে সে আজকের এই অবস্থানে এসেছে। অঢেল প্রাপ্তির পরেও সারোয়ারের জীবনের কোণাকাঞ্চিতে হতাশা আর বেদনা।

একজন প্রথম প্রজন্মের শহুরে উচ্চবিত্তের জীবনে সাধরণত যেসব ক্রাইসিস থাকতে পারে তার অধিকাংশই সারোয়ারের উপর চাপিয়েছেন লেখক। সারোয়ারের বিত্তবৈভব আছে, কিন্তু নেই আশরাফ বংশপরিচয়- চাঁদপুরের এক জমিদার বংশের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক সেই অভাব পূরণ করলেও সেই সম্পর্কই তাকে ঠেলে দেয় নতুন টানাপোড়েনের মুখে- সমাজের দুই শ্রেণীর দ্বন্দ্ব আর গ্রামে ফেলে আসা স্বজনদের প্রতি দায়বদ্ধতা বনাম শহরে সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়ার কর্তব্যের মধ্যে সংঘর্ষ। নিজেকে নিম্নবিত্ত গার্মেন্টসকর্মীদের ত্রাতা ভেবে তৃপ্তি পেলেও তাদের প্রতি দায়িত্ব আর নিজের স্বার্থকে পাল্লায় মাপতে গিয়ে বিভ্রান্ত হয় সে। গল্পের সময়কাল দেড় দিন আর একটা সড়ক দুর্ঘটনাকে ঘিরেই মূল ঘটনাপ্রবাহ আবর্তীত হয়েছে। এই ক্ষুদ্র ব্যাপ্তিতেই লেখক বিশাল ডিসকোর্সকে ধারণ করতে চেষ্টা করেছেন। আর এই চেষ্টাটাই উপন্যাসটাকে দান করেছে অনন্য ইন্টেলেকচুয়াল অ্যাপীল যেটা অনেক সমসাময়িক ফিকশন লেখকদের চেয়ে জিয়া হাসানকে এগিয়ে রাখবে।উপন্যাস
ঘরানা: ড্রামা
লেখক: জিয়া হাসান
প্রকাশনী: আদর্শ
সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য: ৩০০ টাকা

ফেইসবুকে লেখালেখির যে নতুন একটা ইন্টেলেকচুয়াল ধারা শুরু হয়েছে সেটার অন্যতম একজন শরীক জিয়া হাসান। তাঁর অন্তর্দৃষ্টিপূর্ণ আর বিশ্লেষণী লেখালেখির জন্য ফেইসবুকে তিনি ব্যাপক সেলিব্রেটেড, ইস্যুভেদে সমালোচিতও। নন-ফিকশন ধারায় তাঁর প্রথম বইটির (শাহবাগ থেকে হেফাজত: রাজসাক্ষীর জবানবন্দি, ২০১৪) সাফল্যের পর এই ফিকশন বইটি নিয়ে দ্বিতীয় বারের মত বইমেলায় পদার্পণ। তাঁর আগ্রহের বিষয় মূলত সমাজ-সংস্কৃতি, রাজনীতি আর অর্থনীতি। তাই ফিকশন লিখলেও প্রত্যাশা ছিল সচরাচর যেসব ইস্যুকে অ্যাড্রেস করেন উপন্যাসে সেরকমই কিছু আনবেন- জিয়া হাসান যথাযথভাবেই সেটা মিটিয়েছেন।

দুর্ঘটনায় কবি মূলত সমাজের একজন প্রিভিলেজপ্রাপ্ত মানুষের কমফোর্ট জোন থেকে ছিটকে পড়া এবং এই ছিটকে পড়ার মাধ্যমে সমাজ ও আত্মপরিচয়ের কিছু বড় বড় প্রশ্নে সম্মুখীন হওয়ার গল্প- যে প্রশ্নগুলো মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত অনেকের মাথার ভিতরই আছে, কিন্তু সাধারণত সামনে এনে দেখা হয় না।

লেখকের ভাষা খুবই সহজ আর সাবলীল। গল্প বলার ক্রাফটের টেকনিকগুলো নিয়ে তাঁর যথেষ্ট পড়াশোনা আছে, তাই তেল, নূন, মসলা যথাযথভাবেই দেওয়া হয়েছে। চরিত্রগুলোর সাথে অল্প কথায়ই ইমোশনাল অ্যাটাচমেন্ট গড়ে উঠে। টেনশন বিল্ডআপে লেখকের দক্ষতা প্রশংসনীয়, টেনশন একবারে থ্রিলারের হাইটে নিয়ে গেছেন। আর সবশেষে চেরি অন টপ একটা অর্থবহ টুইস্ট। পড়া শেষ করে ফেইসবুক বা মুভি নিয়ে বসে যাওয়ার মত বই না এটা- পাঠককে চিন্তায় আচ্ছন্ন করতে আর নাড়া দিতে ভালোমতই সক্ষম।

উপন্যাসের প্রোটাগনিস্ট সারোয়ার বাংলাদেশের একটা প্রথম শ্রেণীর গার্মেন্টসের মার্চেন্ডাইজিং ডিরেক্টর। অসাধারণ ই.কিউ, আই.কিউ, নেগোশিয়েশন দক্ষতা, পরিশ্রম এবং অতিঅবশ্যই ভাগ্যের আশীর্বাদে একজন বি.এ পাশ গ্রামের ছেলে থেকে সে আজকের এই অবস্থানে এসেছে। অঢেল প্রাপ্তির পরেও সারোয়ারের জীবনের কোণাকাঞ্চিতে হতাশা আর বেদনা।

একজন প্রথম প্রজন্মের শহুরে উচ্চবিত্তের জীবনে সাধরণত যেসব ক্রাইসিস থাকতে পারে তার অধিকাংশই সারোয়ারের উপর চাপিয়েছেন লেখক। সারোয়ারের বিত্তবৈভব আছে, কিন্তু নেই আশরাফ বংশপরিচয়- চাঁদপুরের এক জমিদার বংশের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক সেই অভাব পূরণ করলেও সেই সম্পর্কই তাকে ঠেলে দেয় নতুন টানাপোড়েনের মুখে- সমাজের দুই শ্রেণীর দ্বন্দ্ব আর গ্রামে ফেলে আসা স্বজনদের প্রতি দায়বদ্ধতা বনাম শহরে সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়ার কর্তব্যের মধ্যে সংঘর্ষ। নিজেকে নিম্নবিত্ত গার্মেন্টসকর্মীদের ত্রাতা ভেবে তৃপ্তি পেলেও তাদের প্রতি দায়িত্ব আর নিজের স্বার্থকে পাল্লায় মাপতে গিয়ে বিভ্রান্ত হয় সে। গল্পের সময়কাল দেড় দিন আর একটা সড়ক দুর্ঘটনাকে ঘিরেই মূল ঘটনাপ্রবাহ আবর্তীত হয়েছে। এই ক্ষুদ্র ব্যাপ্তিতেই লেখক বিশাল ডিসকোর্সকে ধারণ করতে চেষ্টা করেছেন। আর এই চেষ্টাটাই উপন্যাসটাকে দান করেছে অনন্য ইন্টেলেকচুয়াল অ্যাপীল যেটা অনেক সমসাময়িক ফিকশন লেখকদের চেয়ে জিয়া হাসানকে এগিয়ে রাখবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.