নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ধকারের মাঝে একটু আলো.. আলোর অনুসরণ ।\n\nhttps://www.facebook.com/profile.php?id=100004783727702 ।

তর্কে জড়াতে পারবোনা, জ্ঞান সীমিত ।

কলমের কালি শেষ

লেখক পাওয়া যাচ্ছে না তাই আমিই লেখক...

কলমের কালি শেষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রুমাল । ( অণুগল্প )

১৪ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:৪২

১।

সন্ধ্যায় হামিদ সাহেব খুব ফুরফুরে মেজাজে আছেন । তিনি তাঁর ৩২ টা রুমাল আলমারি থেকে বের করে খাটে বসেছেন । সেগুলো খুলে খুলে দেখছেন, ঘ্রাণ নিচ্ছেন, আবার ভাঁজ করছেন । সাথে গুনগুন করে গান ও গাচ্ছেন ।স্ত্রী শুমিতা ড্রেসিং টেবিল থেকে মুখ ফিরিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন,

- কীইই ব্যাপার ? এতো খুশি কেন শুনি ?

- হুম...ম কারণ তো একটা আছে ।

- কী !

- আজকে গাড়িটা নষ্ট হয়ে ভালোই হয়েছে । বাসে করে আসার সময় আমার মত একটা ছেলেকে দেখলাম । মনটা ভরে গেল ।

- ও ও এই ঘটনা, হাহ, আমিতো ভাবছি কি না কি ! শুনেছি দেখতে একই রকম মানুষ নাকি পৃথিবীতে সাতজন থাকে । হয়তো তোমার মত দেখতে আরেকজন এই শহরেই আছে তাই দেখেছ । এতে এতো খুশির কী আছে !

- ও তুমি বুঝবে না শুমিতা । এই বলে হামিদ সাহেব নিজের কাজে মন দেয় ।

- হয়েছে, তোমার এসব পাগলামী আমার এতো বোঝার দরকার নাই । কাল বিকালে একটু বিউটি পার্লারে যাব । দশ হাজার টাকা লাগবে ।

- আব্বু, আমাকে আই ফোন সিক্সটা কিনে দিতে হবে । এটাতে আরো দারুণ দারুণ ফিচার্স যোগ হয়েছে । মিতু এসে বলল ।

- আব্বু , আমার একটা ইলেক্ট্রিক গিটার লাগবে । সামনে ইনিভার্সিটি ফাংশানে পারফর্ম করবো । সুহান এসে বলল ।

ফুরফুরে মেজাজে থাকার মজাটা হামিদ সাহেব এবার টের পেলেন । তাতক্ষনিক তিনটা আবদার তাঁর সামনে মুখ থুবড়ে পড়লো । তিনি হ্যাঁ করে দিলেন । খোশ মেজাজে থাকলে তিনি স্ত্রী সন্তানদের কোন আবদারে না করতে পারেন না । আর হামিদ সাহেবের টাকা পয়সারও কমতি নেই । তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকের এম ডি । বেতন পান মাসে দুই মিলিয়ন++ অন্যান্য সুবিধা । তবে বড় হতে হতে সন্তানদের চাহিদা আর বয়স হতে হতে স্ত্রীর বিউটি পার্লারের বিল দিন দিন বেড়েই চলছে । সুহান এইবার নামীদামী একটা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে আর মিতু পড়ছে ‘এ’ লেভেলে একটা নামীদামী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে । তাই খরচের এমন ঘোড় দৌড় দেখে হামিদ সাহেব একটু চিন্তিত ।

হামিদ সাহেবের রুমাল রহস্য নিয়ে তার স্ত্রী সন্তানদের কৌতূহল বহু আগেই মরে গিয়েছে । সুহান আর মিতু উনাকে প্রায় সময় রুমালের কথা জিজ্ঞেস করতো । তারা উত্তর না পেয়ে বলে, তুমি কী আগে রুমাল বিক্রি করতে নাকি বাবা, তাই আমাদের বলতে চাচ্ছো না ! হামিদ সাহেব ছেলেমেয়েদের এমন কথা শুনে আওয়াজহীন একটা হাসি দিয়ে চুপ হয়ে যেতেন । উনার কাছে মজাই লাগে । এরপর থেকে তারা আর তেমন জিজ্ঞেস করে না । তবে শুমিতা একটু বেশিই গিয়েছিল । সে রুমাল নিয়ে হামিদ সাহেবের সাথে ঝগড়া লাগাতো । উনাকে সন্দেহ করতো বিয়ের আগে দেওয়া প্রেমিকার রুমাল কিনা । একসময় শুমিতা অসহ্য হয়ে হামিদ সাহেবকে বলল,

- তুমি মানসিক ডাক্তার দেখাও । তোমার এইসব পাগলামি আমার সহ্য হচ্ছে না ।

- তোমাকে এ নিয়ে মাথা ঘামাতে কে হলেছে ? তুমি তোমার কাজ নিয়েই থাকো না ।

- আমাকে এ ঘরে থাকতে হয় । তোমার এই সব ছাতার রুমাল কীর্তি আমার আর ভাল লাগছে না । আর যদি এসব করো তোমার এই রুমালগুলো আমি আগুনে পুড়ে ফেলবো । শুমিতা রাগ নিয়ে বলে ।

- খবরদার শুমিতা, এ কথা যদি আরেকবার মুখ দিয়ে আনো তোমাকেই আমি আগুন দিয়ে পুড়ে ফেলবো । হামিদ সাহেবের চোখ রাগে লাল হয়ে যায় । শুমিতা খুব ভয় পায় । সে চুপ হয়ে যায় । এরপর থেকে রুমাল টুমাল নিয়ে শুমিতাও আর তেমন কিছু বলে না ।

২।

হামিদ সাহেব আজও গাড়ি বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছেন । তিনি অফিস থেকে বাসে করেই যাবেন । গতবার ছেলেটাকে দেখার পর থেকে তিনি বাসে করেই বাসায় ফেরেন । তিনি ছেলেটাকে খুঁজছেন । একমাস হয় তিনি বাসে করে ফিরছেন অথচ ছেলেটাকে খুঁজে পাচ্ছেন না । গতবার ছেলেটাকে ধরে রাখলে আর এই সমস্যাটা হত না ।কিন্তু তখন হামিদ সাহেব এতো আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিলেন যে ছেলেটাকে ধরে রাখার চিন্তাটাই মাথা থেকে চলে গিয়েছিল । এ নিয়ে হামিদ সাহেব নিজেকে ধিক্কার দিচ্ছেন । তিনি বাসের ভেতর উঁকিঝুঁকি করছেন যদি ছেলেটাকে পেয়ে যান !

- ভাইজান, ভাড়াগুলো সবার হাতে হাতে নেন ।

হামিদ সাহেব মার্জিত আওয়াজটা শুনে বাসের সামনের দিকে তাকাচ্ছেন । ছেলেটাকে ভিড়ের জন্য দেখা যাচ্ছে না । তিনি দাঁড়িয়ে দেখার চেষ্টা করছেন । এইতো ছেলেটার মাথাটা দেখা যাচ্ছে । মাথায় একটা রুমাল বাঁধা, মুখে একটা রুমাল বাঁধা । চমৎকার চোখের দৃষ্টি । গোছানো কথাবার্তা । দেখে মনে হচ্ছে কলেজ পড়ুয়া ছাত্র । হয়তো তারও দুইটা ছোট ভাই আছে, একজন মা আছেন । হয়তো ছেলেটা পড়াশোনার পাশাপাশি বাপমরা সংসারটাকেও চালাচ্ছে বাসে হেলপারি করে । হামিদ সাহেবের চোখ টলমল করছে । ছেলেটা উনার কাছে ভাড়া চাচ্ছে । হামিদ সাহেব ভাড়ার সাথে সাথে একটা কার্ডও দিল ছেলেটাকে । তিনি বললেন, বাবা এই ঠিকানায় তুমি এসো । আর অবশ্যই এইভাবে মাথায় এবং মুখে রুমাল বেঁধে । এই বলে হামিদ সাহেব বাস থেকে নেমে গেলেন । ছেলেটা বাসের জানালা দিয়ে হামিদ সাহেবকে দেখার চেষ্টা করছে...

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:৪২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: বাহ! বেশতো গভীর ইঙ্গিত রেখে দিলেন ছোট ফ্রেমে!!!

+++

১৪ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৯

কলমের কালি শেষ বলেছেন: চমতকার মন্তব্যে অসংখ্য ধন্যবাদ বিদ্রোহী ভাই ।

ভাল থাকুন । :)

২| ১৪ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:০০

সুমন কর বলেছেন: শেষটা চমৎকার এবং পাঠকের কাছে রেখে দেবার জন্য দারুণ হয়েছে।

বেসরকারি ব্যাংকের এম ডি'রা এত বেতন পান !! :-&

গল্পে ভালো লাগা রইলো।

১৪ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১১:৪৬

কলমের কালি শেষ বলেছেন: ব্যাংকের এম ডি দের এইটা মিডিয়াম স্যালারি । সর্বোচ্চ আছে ৩৭ লাখ +++ অন্যান্য সুবিধা । #:-S

সুন্দর মন্তব্যে অনেক ভাল লাগলো সুমন ভাই ।

শুভ কামনা রইল । :)

৩| ১৫ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৫

ঢাকাবাসী বলেছেন: ভাল লাগল্ । ভাল কথা প্রাইভেট ব্যাংকের এমডিদের গাড়ী বাসাতে পাঠাতে হয় না, মিনিমাম ৩ খানা গাড়ী প্রত্যেক এমডির থাকে, তার একখানা বাসায় বেগম সাহেবাদের জন্য আরেকটা মেয়ে বা ছেলের জন্য স্ট্যান্ডবাই। ধন্যবাদ।

২৭ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৪১

কলমের কালি শেষ বলেছেন: গাড়ী বাসায় পাঠিয়ে দেয়া বলতে বুঝিয়েছি হামিদ সাহেব বাসে করে যাবেন তাই । তিনি বাসার কারো জন্য পাঠাননি ।

পাঠে এবং মন্তব্যে অনেক ধন্যবাদ ঢাকাবাসী ভাই ।

ভাল থাকবেন সবসময় । :)

৪| ১৬ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:০৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: সার্থক অণুগল্প।

২৭ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৪২

কলমের কালি শেষ বলেছেন: অনেক ভাল লাগলো পাঠে এবং ভাললাগার মন্তব্যে হামাভাই ।

বিলম্ব প্রতিউত্তরে দুঃখিত ।

শুভ কামনা রইলো । :)

৫| ১৬ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:১২

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: গল্পে ভালোলাগা রইল, বিশেষ করে শেষে এসে শেষ না করাটা।

অটঃ বেসরকারি ব্যাংকের এমডি স্যালারি পান না, উনারা যেটা পান সেটা হল রেমুনারেশন, অনারারি রেমুনারেশন। আর এই রেমুনারেশন এতো হাই হওয়ারও একটা মোজেজা আছে, একটু খোঁজ খবর করলেই পেয়ে যাবেন ;)

২৭ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৪৬

কলমের কালি শেষ বলেছেন: আমার মত আদার ব্যাপারী জাহাজের খবর না নিলেও চলবে । :| তবে আমি যা বলেছি তা রিউমারের কথা যা অনেকেই মনে করে ইভেন আমার এক টিচারও বলেছিল ।

ভাললাগার মন্তব্যে অনেক ভাল লাগলো বোমা ভাই ।

বিলম্ব প্রতিউত্তরে দুঃখিত ।

ভাল থাকুন সবসময় । :)

৬| ১৭ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:৪৫

দীপংকর চন্দ বলেছেন: মন ছুঁয়ে গেলো ভাই!

অনিঃশেষ শুভকামনা জানবেন।

অনেক ভালো থাকবেন। সবসময়।

২৭ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৪৭

কলমের কালি শেষ বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যে ভাললাগা অনেক দীপংকর চন্দ ভাই ।

বিলম্ব প্রতিউত্তরে দুঃখিত ।

শুভ কামনা অশেষ । :)

৭| ১৮ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২২

এহসান সাবির বলেছেন: ঈদের শুভেচ্ছা রইল। ভালো থাকুন সব সময়।

শুভ কামনা।

২৭ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৪৭

কলমের কালি শেষ বলেছেন: আপনাকেও ঈদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা এহসান ভাই ।

বিলম্ব প্রতিউত্তরে দুঃখিত ।

ভাল থাকবেন সবসময় । :)

৮| ২৭ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৩৯

মহান অতন্দ্র বলেছেন: সুন্দর গল্প। শুভ কামনা ভাইয়া।

২৭ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৪৮

কলমের কালি শেষ বলেছেন: অনেক ভাললাগা মহান আপু ।

ভাল থাকবেন সবসময় । :)

৯| ২৭ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:৫৬

আমি তুমি আমরা বলেছেন: বেসরকারী ব্যাংকের এমডি ৩৭লাখ টাকা বেতন পান? বেঁচে থেকে আর লাভ কি?

২৮ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:৩৮

কলমের কালি শেষ বলেছেন: হুম্মম । সেটাই । :|

সুন্দর মন্তব্যে ভাল লাগলো অনেক আমরা ভাই ।

ভাল থাকুন সবসময় । :)

১০| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ২:০৭

কালীদাস বলেছেন: লেখাটা সুন্দর হইছে :) আমার ভাল্লাগছে :)

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৯

কলমের কালি শেষ বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যে ভাললাগা অনেক কালীদাস ভাই ।

শুভ কামনা অশেষ । :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.