নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ধকারের মাঝে একটু আলো.. আলোর অনুসরণ ।\n\nhttps://www.facebook.com/profile.php?id=100004783727702 ।

তর্কে জড়াতে পারবোনা, জ্ঞান সীমিত ।

কলমের কালি শেষ

লেখক পাওয়া যাচ্ছে না তাই আমিই লেখক...

কলমের কালি শেষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৃত্যুবাণী ।( গল্প )

১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:৫৫

১।

সেদিন ঠিক সন্ধ্যায় কিরানের দেহটিকে আঁধারের অনেকগুলো হাত টেনে নিয়ে যাচ্ছে । সে তখনো পুরোপুরি মৃত ছিল না । যতটুকু মৃত থাকলে তার দেহটি টেনে নেয়া সে অনুভব করতে পারে ঠিক ততটুকুই ছিল । শুধু ঠোঁট দুটো নড়ছে- আমায় আরেকটু সময় দাও… আমায় আরেকটু সময় দাও……

ঘটনার শুরু বিশ বছর আগে । তখন অল্প কিছু সময়ের জন্য কিরানের মন খারাপ হয়েছিল । উড়ন্ত যৌবনের যখন শুরু তখন নিজের মৃত্যুর আগাম সংবাদ শুনতে কারইবা ভাল লাগে । কিরান তখন সম্পূর্ণ মাতালে সুন্দরী ললনাদের সাথে ক্লাবে কাম-পিয়াসী নৃত্যে বাঁধনহারা ছিল । হঠাৎ তার মোবাইলে একটা ম্যাসেজ আসে । ক্লাবের এই পরিবেশে ম্যাসেজের আওয়াজ টের পাওয়াটা অসম্ভব । কিন্তু কিরান ম্যাসেজ আসাটা টের পায় । কারণ ম্যাসেজটা ফাইনাল্লি মোবাইলে প্রেরিত হওয়ার সাথে সাথে তার শরীর এমনভাবে কেঁপে উঠে যে এই ঘোরের মধ্যেও সে একটুর জন্য থমকে দাঁড়ায় । মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে সে ম্যাসেজ চেক করছে...
- কিরান !! কাম অন বেইবি, আই ওয়ান্না ডান্স উইথ ইউ, প্লিজ টেক মি হোউউম… (মাতাল কন্ঠি একটি মেয়ের আবেদন) ।
কিরান ম্যাসেজটার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে । তারপর হাত দিয়ে চোখ মুছে সে আবার আগের জায়গায় ফিরে যায় । সে ভাবছে মাতাল মস্তিষ্কের বিভ্রম । লেট নাইটে ক্লাব ঘর থেকে যখন সে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামলো তখন রাস্তার দু’পাশ জুড়ে খুব আলো দেখতে পেল । পথের কিনারে কিনারে অদভুত কিছু ছায়া হাতে হাতে প্লে কার্ড নিয়ে দঁড়িয়ে আছে । যেন তাকে সংবর্ধনা দিচ্ছে । প্লে কার্ডে আঁকা ক্রস চিহ্ন । কিরান বাসা পর্যন্ত পুরো রাস্তায় এসব দেখতে দেখতে এসেছে । গ্যারেজে কোনভাবে গাড়িটা পার্ক করে তার ঘরে চলে গেল । গাড়ি থেকে চাবিটাও খুলতে ভুলে গেছে । তার শরীরে খুব অবসাদ লাগছে । সে ঘুমিয়ে পড়লো ।

সকালে সে যখন ঘুম থেকে ওঠে তার খুব ভালো লাগা অনুভব হয় । সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে সকালের ঠান্ডা হাওয়া গায়ে মাখাচ্ছে । তখন তার মনে পড়লো রাতের ম্যাসেজটার কথা । সে মোবাইলটা নিয়ে চেক করে দেখে ওরকম কোন ম্যাসেজ নেই । লাস্ট ম্যাসেজ সিমিনের, এর আগেরটা রিঙ্কির, এর আগেরটা শিমুর… কিন্তু আননোন কোন ম্যাসেজ নেই । কিরানের তখন আরও ভালো লাগতে থাকে। সে ভাবে রাতের পিনিকটা খারাপ ছিলো না ! অসাধারণ ফিলিংস, মৃত্যুর ঘোরে থাকা । বন্ধুদের জানানোর জন্য সে খুব উদগ্রীব হয়ে ওঠে । সে তার বন্ধুদের সাথে খুব উৎফুল্ল ভাব নিয়ে শেয়ার করলো। তার বন্ধুরাও খুব আগ্রহ নিয়ে শুনে এবং তারাও এরকম ফিলিংস পেতে চায় । তাই হঠাৎ তারা সিদ্ধান্ত নেয় আজ রাতে আরেকটা পার্টির আয়োজন করবে ।তবে আজকের পার্টিতে আরেকটা এক্সট্রা জিনিস থাকবে।সেটা হলো গাঞ্জা । আজকাল মদটদ দিয়ে ভাল নেশা উঠে না তাই একটু কড়া চাই । সবাই খুব উচ্ছ্বসিত কিরানের অদ্ভুত ফিলিংসটা পাওয়ার জন্য । কিন্তু খেয়ালী মনোভাবে এমন ফিলিংস আসে না । তাদের অভিজ্ঞ বন্ধু কিরান এ বিষয়ে সতর্ক করে দিলো ।

গাঞ্জার জন্য যোগাযোগ করতে হবে গোপন মামার সাথে । গোপন মামার রহস্য হচ্ছে সকল প্রকার গোপনীয় কাজের সহজ সমাধান তার কাছে পাওয়া যায় । তাই যারা গোপন কাজের খদ্দের তারাই শুধু তাকে এই নামে ডাকে । কিন্তু অন্য সবাই জানে রইসুল মামা নামে । রইসুল মামা নামের লোকটিকে দেখে কেউ বুঝবে না তিনিই গোপন মামা । সাদাসিদা একজন মানুষ, মুখে সবসময় মিষ্টি কথা লেগে থাকে, পান সুপারীতে মুখ লাল করে রাখে। বেনারসি বস্তির দক্ষিণ- পূর্ব কোণে তার একটা ছোট্ট চায়ের দোকান আছে । তার দোকানে সবসময় ভিড় লেগে থাকে । কারণ তার বাকির খাতা বেশ লম্বা । অর্থ কষ্টে অনেকে তার সান্নিধ্য পায় । রইসুল মামা এতো উদার হওয়ার কারণ হচ্ছে গোপন মামাকে ঢাকনা দেয়া ।

- ওই গোপন মামারে তো ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না । তুই একটু ফোন দিয়ে দেখ তো রিন্টু । কিরান বললো ।

- দাঁড়া দেখছি । হ্যাঁ রিং হচ্ছে, ধর কথা বল ।

- হ্যালো মাম্মা কেমন আছো ? ব্যবসা কেমন চলছে ? মাম্মা পোটলা… টু টু ।

- কিরে রিন্টু মামা তো ফোন কাইটা দিলো । কিরান একটু এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো, চল মামার দোকানেই যাই ।

পথের মধ্যেই গোপন মামার সাথে তাদের দেখা হয়ে গেল । কিন্তু সে জানালো সে আর এসব গোপন কাজে নাই । সবকিছু ছেড়ে দিয়েছে এমন কী দোকানে সিগারেটও বিক্রি করে না । এই কথা জানিয়েই গোপন মামা হাঁটা দিলো । কিরান আর রিন্টু গোপন মামার পথের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো । কিন্তু তাই বলে কী তাদের গাঞ্জা টানা হবে না ? তারা শেষ পর্যন্ত অনেক খুঁজে গাঞ্জা জোগাড় করলো । রাতে রিন্টুদের বাসার ছাদে রাতুল, রিন্টু ,রাহাত এবং কিরান আবারও পার্টির আসর বসালো । রাত যত গভীর হচ্ছে তাদের নেশা তত তীব্র হচ্ছে । কিন্তু নেশা বাড়লেও কারো কিরানের পাওয়া সেই নেশা আসছে না । কিরানও ট্রাই করছে । এভাবে নেশা উঠাতে উঠাতে তারা ছাদেই লুটিয়ে গেল ।

সকালের সূর্যের তীব্র আলোয় ঘুম ভাঙলো কিরানের । সে গা মুড়ি দিয়ে ওঠে অন্য সবার অবস্তা দেখছে । সে দেখে রিন্টু ছাদে নেই । পাশের রাস্তা থেকে মানুষজনের হট্টগোলের আওয়াজ আসছে । কিরান নিচে তাকিয়ে দেখে রাস্তার কিনার ঘেঁষে বেশ কিছু মানুষ দঁড়িয়ে আছে ।

- এই রাতুল, রাহাত তাড়াতাড়ি ওঠ ! রিন্টু তো রাতে ছাদ থেকে পড়ে গেছে বোধয় !! কিরান দিশেহারার মত ডাকতে থাকে ।
কিরান খুব তাড়াহুড়ো করে সিঁড়ি দিয়ে নেমে যায় । তার পেঁছনে রাহাত আর রাতুলও নামে । তারা ভিড় ঠেলে ভেতরে ঢুকে দেখে রিন্টু ড্রেনের মধ্যে কাত হয়ে আছে । রিন্টু আস্তে আস্তে চোখ মেলে দেখে অনেক মানুষ তার দিকে তাকিয়ে আছে । সে চমকে উঠে বসে যায় । সে আস্তে আস্তে উঠে ভিড় থেকে বের হয়ে তাড়াতাড়ি বাসার দিকে ঢুকে যায় । তার পেঁছন পেঁছন রাহাত, রাতুল, কিরানও যায় ।

-কিরে রিন্টু তোর কী হয়েছে ? তুই ড্রেনে গেলি কীভাবে ? কিরান হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করে রাহাত রাতুলের সাথে ।

- দোস্ত আমি তো তোর ফিলিংসটা পেয়েছিলাম । রিন্টু বলে ।

- বলিস কী !! তাই নাকি ! কিরান খুব এক্সাইটেট হয়ে জিজ্ঞেস করে । কিন্তু ড্রেনে কীভাবে গেলে ?

- আরে বলিস না, রাতে হঠাৎ আমার শরীর কেঁপে ওঠে । আমি চোখ মেলে দেখি সিঁড়ির দিক থেকে খুব আলো আসছে । আমি উঠে সিঁড়ির দিকে আসি । দেখি কিছু ছায়া হাতে প্লে কার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে । প্লে কার্ডে ক্রস আঁকা । আমি নামতে থাকি আর এইসব দেখতে থাকি । এরপর আর কিছু মনে নাই । কীভাবে আমি ড্রেনের মধ্যে গেলাম তাও মনে নেই ।

-পার্ফেক্ট ম্যান । রিন্টুর গায়ে বাহবা দিয়ে বললো কিরান । রাহাত, রাতুলের মন খারাপ হলো তারা সেই ফিলিংসটা পাইনি ।

কিরানের মোবাইলে একটা কল আসলো । কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে রইসুল মামার দোকানের পোলাটা বললো, রইসুল মামা আজ ভোরে মারা গেছে । কিরান ফোনটা নামিয়ে বললো,

- রইসুল মামা আজকে সকালে মারা গেছে ।

- কস কী কিরান !! অবাক হয়ে বলে রাহাত, রাতুল, রিন্টু। গতকালই না তার সাথে দেখা হলো ! তারা বুঝতে পারে রইসুল মামা গোপন কাজ ছেড়ে দিয়েছিল কেন । রিনটু যেন একটু খুশি হলো, ওই শালা মারা গেছে ভালোই হইছে , শালায় আমাগোরে গাঞ্জা দেই নাই । কিরান বলে, এ থাক রিন্টু, মরা মানুষকে গালি দিতে নাই ।

২।

কিরান চোখ বুজে বেশ মোটা গদির চেয়ারে হেলান দিয়ে আছে । বংশ পরমপরায় পাওয়া ব্যবসায়ের গতি টানার সম্পূর্ণ দায়বার এখন তার হাতে । ব্যবসায়ের দড়ি তার হাতে আসার পর থেকে ব্যবসায়ের উন্নতি চরম শিখরে উঠেছে । তবে কিরানের বাবা এতে মোটেও খুশি নয় । কারণ তার বাবা কখনো চাননি হালাল টাকায় গড়া ব্যবসায়ের সাথে হারামের অংশ যোগ হোক । কিন্তু কিরান তা করে যাচ্ছে অবলীলায় ।সে আঁড়ালে বিভিন্ন অবৈধ ধান্ধায় জড়িত । আজকেও তেমনি একটা ডিল করেছে যা তার অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে । চায়নিজ একটা কম্পানীর সাথে সাতশ বিশ কোটি টাকার নথি সাইন হয়েছে । কিরান তাদেরকে ঔষধ তৈরির একটা নকল ইনগ্রিডিয়েন্ট দেবে । যার বাজার মূল্য প্রতি মিলি ৭৫ পায়সা আর কিরান তা দেবে মাত্র ১০ পয়সায় । তারা আলরেডি অর্ধেক এডভান্স করে দিয়েছে । আর তাদের বানানো ঔষধটা কিরানই আমদানি করবে । সে তা দেশের বাজারে ছেড়ে দেবে । কিরান খুব ভাল করেই জানে ঔষধটা স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর । কিন্তু এতে তার কী আসে যায় । এর আগেও সে অনেক অবৈধ বিজনেস করেছে । তাই তার কাছে এগুলোই বৈধ হয়ে গেছে । হান্ড্রেটে ফিফটি পার্সেন্ট প্রফিট থাকবে । তার চাই টাকা । তার চাই ব্যবসায়ের আরও শাখা-প্রশাখা । তাই সে বেশ আয়েশি হেলান দিয়ে আছে ।

হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠায় কিরানের তন্দ্রা ভাঙ্গে ।বন্ধু রিন্টুর বাসা থেকে ফোন এসেছে । তার বাসা থেকে খবর আসে সে আজ বিকালে মারা গেছে । হঠাৎ বুকে পেইন ওঠে । তখন ডাক্তারের কাছে নিতে নিতে পথেই মারা যায় । খবরটা শুনে কিরানের মনটা খুব খারাপ হয়ে যায় । তার বিশ্বাস হচ্ছে না । গতকালই তো তারা একটা নৈশ পার্টিতে একসাথে ছিল । ছোটবেলার বন্ধু ছিল রিন্টু । তার সাথে কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে । এভাবে রিন্টুর হঠাৎ চলে যাওয়াটা কিরান মেনে নিতে পারছে না । রিন্টুর জন্য আফসুস হয় কিরানের, বেচারা বুঝি আর ধরতে পারলো না । এখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে । কিরানের হাতে কিছু কাজ থাকলেও সেগুলো রেখে সে বের হবে । রিন্টুর বাসায় যাবে । পরিবারকে সান্তনা দেয়ার কাজটা তাকেই করতে হবে । সে গাড়ির চাবিটা নিয়ে অফিস থেকে বের হয়ে যায় । সে নিজেই ড্রাইভ করে ।গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লো । কিন্তু চৌরাস্তায় এসে জ্যামে গাড়ি আটকা পড়লো । সে মনে মনে রিন্টুর কথা ভাবছে । আচ্ছা রিন্টু তো নিশ্চয় তার মৃত্যুর কথা আগেই জেনেছিল । কিন্তু সে তো আমাকে বলতো । মানুষ তার মৃত্যুর কথা অন্তত পক্ষে একদিন আগে জানে, এর বেশি আগেও জানে, তবে একদিন হচ্ছে সর্বনিম্ন । সে অনুযায়ী সেও অন্তত একদিন আগেই জেনেছিল । কিন্তু আমাকে বলেনি কেন ? সে তো তার ফ্যামেলিকেও জানাতে পারতো । কিন্তু তারা তো বললো হঠাৎ মারা গেছে । তবে কী সে জানেনি ? নাহ, এমন তো হওয়ার কথা নয় । তখন কিরানের হঠাৎ বিশ বছর আগের কথা মনে পড়ে । তখন তারা দুজন দুষ্টমীর ছলে হলেও সেই আগাম মৃত্যুর হিসেব মিলিয়ে রেখেছিল । তাদের মৃত্যুর ব্যবধান ছিলো দু’ঘন্টা আগে পরে । কিরান সালটা মনে করার চেষ্টা করে । এবং সে পায় সালটা এই বছরই । শুধু দিন আর সময়টা মনে করতে পারে না । তার হাত পা সব ঠান্ডা হতে শুরু করে, সে কাঁপতে থাকে । ফোনটা হাতে নিয়ে সে ফোন দিতে চাচ্ছে রিন্টুর বাসায় । সে জানতে চায় রিন্টু কয়টায় মারা গিয়েছিল । তার হাত কাঁপাকাঁপিতে ফোনটা গাড়িতে পড়ে যায় । সে আবার হাতে নিয়ে নাম্বার টিপে ফোন দেয় । এই কড়া এসির গাড়িতেও সে খুব ঘামছে । ফোন দিয়ে জানতে পারে রিন্টু বিকাল প্রায় সোয়া পাঁচটার দিকে মারা যায় । আর এখন বাজে পোনে সাতটা । তার হাতে সময় আছে আর মাত্র আধাঘন্টা । সে এখন কী করবে বুঝতে পারছে না । সে জানতো না বিশ বছর আগের মাতাল ঘোরে জেনে যাওয়া মৃত্যুটাই সত্য ছিল ।

কিরান এখন বিশাল জ্যামের মাঝখানে গাড়ি নিয়ে বসে আছে । ব্যাক টার্ন নেয়ারও কোন জায়গা নেই । গাড়ির দরজাটাও সামান্য খুলতে পারছে । এই সামান্য ফাঁকা দিয়ে কোনমতে শরীর চেপে বের হয় সে । বের হয়েই পাগলের মতো উল্টো দিকে দৌঁড়াতে থাকে। কারণ স্বর্গীয় উদ্যান সেদিকে । সে ভেবেছিল যেহেতো মৃত্যুর খবর অন্তত একদিন আগে জানবে সেহেতো সে খুব আয়েশেই স্বর্গীয় উদ্যানে পৌঁছে যেতে পারবে । সে আর এমন দূর কী ! আর স্বর্গীয় উদ্যানে পৌঁছাতে পারলে ডিরেক্ট স্বর্গে চলে যেতে পারবে । কিন্তু এমন একটা দূর্ঘটনা ঘটবে কিরান তা ভাবেনি । কিরান ছুটছে লাগামহীন । বয়স হয়েছে তাই একটু পর পর হাঁপিয়ে উঠছে । তারপরও সে দৌঁড়াচ্ছে । কারণ তাকে সেখানে অবশ্যই পৌঁছাতে হবে । তার অতীত জীবনের সকল কার্জকলাপ ভেসে উঠছে চোখের সামনে । সে জানে এ সব পাপের কোন ক্ষমা নেই । স্বর্গীয় উদ্যান না ধরতে পারলে তাকে পরকালে নরকে জ্বলতে হবে । তার আশেপাশে অনেক গুলো কালো ফানুস উড়ছে । সময়টা তীব্র বিস্বাদময় লাগছে তার কাছে । একটা সময় সে আবিষ্কার করে তার আশেপাশে আরও অনেকে দৌঁড়াচ্ছে । তারাও স্বর্গীয় উদ্যানে যাচ্ছে । সে একটু সাহস পায় ।সে আরও লম্বা পা ফেলে এগিয়ে যায় । একটু পর সে স্বর্গীয় উদ্যান নিজ চোখে দেখতে পায় । এই তো আর কিছু পথ । সে খুশিতে ফেটে পড়ে ।

কিরান আগে কখনো স্বর্গীয় উদ্যান দেখেনি । কারণ এই উদ্যান শুধু মৃত্যু পথযাত্রিরাই দেখতে পায় । আর সে এখন এই পথে। স্বর্গীয় উদ্যানের হাজার হাজার দরজা দূর থেকে কিরান দেখতে পায়, আলোয় জ্বলজ্বল করছে । হঠাৎ দেখে তার দুই পাশ থেকে কিছু পরিচিত লোক তার সাথে বাড়ি খেয়ে আবার মিলিয়ে যাচ্ছে । সে দৌড়াচ্ছে আর তারাও সেই তালে তালে বাড়ি খাচ্ছে আর হাসছে আর মিলিয়ে যাচ্ছে । বিদঘুটে হাসি । কিরান তাদের মুখ খুব ভালো করে চেনে । এরা তার জীবনের বিভিন্ন সময়ের সুখসঙ্গী। তাদের সাথে কিরানের খুব সখ্যতা ছিল ।এমনকি মৃত রিন্টুও তাদের সাথে আছে । কিন্তু সে ভাবছে তার সাথে এরা এমন করছে কেন ? তারাও কী মৃত্যুর খবর পেয়েছে ? নাহ, তা হওয়ার কথা নয় । তাহলে তো তারাও আমার সাথে দৌঁড়াতো । কিরান খেয়াল করলো সে স্বর্গীয় উদ্যানের বেশ নিকটে চলে এসেছে । কিন্তু কাছাকাছি এসে সে আবিস্কার করলো স্বর্গীয় উদ্যানে ঢোকার জন্য তার কোন দরজা নেই । আশে পাশে তাকিয়ে দেখছে সবার দরজা আছে শুধু তারটা নেই । সে পাগলের মত কাছে গিয়ে খুঁজতে থাকে । হাত দিয়ে হাঁতড়াতে থাকে কিন্তু তার সামনে শুধু একটা আয়না ভাসছে । সেটা দিয়ে সে ভেতরের অপরূপ আয়োজনে সাজানো স্বর্গ দেখছে । সেখানে সবাই চিরন্তনী সুখ লাভ করছে । কিরান পাগলের মত হয়ে যায় ।সে আয়নাটা ভাঙ্গতে চাচ্ছে । খুব ছুটিছুটি করছে কিন্তু লাভ হচ্ছে না । তার আশেপাশে থাকা সবাই ঢুকে গেছে । স্বর্গীয় উদ্যানটাও আস্তে আস্তে দূরে সরে যাচ্ছে । হঠাৎ কিরানের অনুভব হতে লাগলো তার দরজাটা তার পেঁছনেই দাঁড়িয়ে আছে । তাকে টেনে ঢোকানোর চেষ্টা করছে । সে পেঁছন ফিরে তাকায় । সে খুব খুশি হয়ে যায় । দরজাটা তার ঠিক পেঁছনেই ।

কিরান দরজার দিকে আগাতে থাকে কিন্তু দরজাটা পেঁছনে চলে যায় । দরজাটার আশেপাশে সে দেখতে পায় অনেকগুলো হাত । সে হাতগুলো দরজাটাকে তার দিক থেকে দূরে টেনে রাখছে । একটু পরে দরজার চারপাশ থেকে তার সেই পরিচিত, খুব পরিচিত মুখগুলো বের হয় । তার সকল মৃত এবং জীবিত অপকর্মের সঙ্গীরা। তারা দরজাটাকে কিরানের দিকে যেতে দিচ্ছে না । তারা খিলখিল করে বিদঘুটে হাসি দিচ্ছে । কিরান দরজাটাকে ধরার চেষ্টা করতে করতে একটা পর্যায়ে পড়ে যায় । সে আর চেষ্টা করে না । সে তার ঘড়ির দিকে তাকায় । দেখে আর মাত্র দুই মিনিট আছে । সে চোখ দুটো বন্ধ করে ফেলে । সে অনুভব করতে থাকে অন্ধকারের অনেকগুলো কালো হাত তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে । সে আকুতি করতে থাকে, আমাকে আরেকটু সময় দাও... আমায় আরেকটু সময় দাও... আমি প্রায়শ্চিত্ত করবো... আমি প্রায়শ্চিত্ত করবো...

কিন্তু সে কার কাছে আকুতি করছে তা স্পষ্ট নয় ।


[গল্পের থিম চমৎকার রিভিও রাইটার প্রিয় ''আধখানা চাঁদ'' থেকে ধার করা। জানি না কতটুকু ভাল হয়েছে ।তবুও এই গল্প তার জন্য উৎসর্গ করলাম ।]

মন্তব্য ৩০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৩০) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৩:৩৮

শ্মশান বাসী বলেছেন: ভাল হয়েছে।

১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৮

কলমের কালি শেষ বলেছেন: পাঠে এবং মন্তব্যে অসংখ্য ধন্যবাদ শ্মশান বাসী ভাই ।

ভাল থাকুন । :)

২| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:৩১

ঢাকাবাসী বলেছেন: সুন্দর হয়েছে।

১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৯

কলমের কালি শেষ বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যে ভাললাগা অনেক ঢাকাবাসী ভাই ।

ভাল থাকবেন । :)

৩| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৫

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: সুন্দর গল্প। ভালো লাগলো খুব, শুভেচ্ছা।

১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪০

কলমের কালি শেষ বলেছেন: ভাললাগার মন্তব্যে অনেক ভাল লাগলো রেজওয়ানা আলী তনিমা আপু ।

ভাল থাকুন । :)

৪| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: চমৎকার একটা দুঃস্বপ্ন যাত্রা ছিলো। ভালো লেগেছে।

১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪০

কলমের কালি শেষ বলেছেন: ভাললাগার মন্তব্যে ভাললাগা বেশ হামা ভাই ।

ভাল থাকুন । :)

৫| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৫

সুমন কর বলেছেন: শেষ দুই প‌্যারাতে গল্পের অনুভূতিটা চরমভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

ভালো লাগা রইলো।

১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪১

কলমের কালি শেষ বলেছেন: বেশ ভাল লাগলো সুন্দর মন্তব্যে সুমন ভাই ।

শুভ কামনা রইল । :)

৬| ১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৩

সুফিয়া বলেছেন: ভাল লাগল। কয়েকটা বানান ঠিক করে দিতে হবে।

ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।

১২ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪২

কলমের কালি শেষ বলেছেন: পাঠে এবং ভাললাগার মন্তব্যে অনেক ধন্যবাদ সুফিয়া আপু ।

ভাল থাকবেন । :)

৭| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:৪৮

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন: ভাল লেগেছে গল্প । বিশেষ করে শেষটা ।

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:২৮

কলমের কালি শেষ বলেছেন: ভালোলাগার মন্তব্যে অনেক ধন্যবাদ কথাকথিকেথন ভাই ।

ভাল থাকুন । :)

৮| ১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:৩৮

তামান্না তাবাসসুম বলেছেন: সুন্দর গল্প :)

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:২৯

কলমের কালি শেষ বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যে ভাল লাগা অনেক তামান্না আপু ।

ভাল থাকবেন । :)

৯| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:০০

সাহসী সন্তান বলেছেন: গল্প অনেক সুন্দর হয়েছে! বিশেষ করে শেষের দিকটা ভীষন ভাল লেগেছে!

সুন্দর গল্পের জন্য ধন্যবাদ!

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২১

কলমের কালি শেষ বলেছেন: আপনার ভীষণ ভাল লেগেছে জেনে আমারো খুব ভাল লাগলো সাহসী সন্তান ভাই ।

ভাল থাকবেন। :)

১০| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:০৫

প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৯

কলমের কালি শেষ বলেছেন: পাঠে এবং মন্তব্যে অনেক ভাললাগা প্রামানিক ভাই ।

ভাল থাকুন । :)

১১| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:০২

মহান অতন্দ্র বলেছেন: ভালো লেগেছে। সুন্দর ভাবে অনুভুতি টা ফুটিয়ে তুলেছেন।

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:০১

কলমের কালি শেষ বলেছেন: সুন্দর মন্তব্যে অনেক ভাললাগা মহান আপু ।

ভাল থাকুন । :)

১২| ১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৫৫

এহসান সাবির বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

কেমন আছেন?

২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:১৮

কলমের কালি শেষ বলেছেন: এই তো আলহামদুলিল্লাহ । আপনি কেমন আছেন ?

সুন্দর মন্তব্যে অনেক ভাললাগা এহসান ভাই ।

ভাল থাকুন । :)

১৩| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:২৩

জুন বলেছেন: সমাজটা মনে হয় পচে গলে গেছে কিরানদের মত মানুষের জন্য। প্রায়শ্চিত্য ও তাদের জন্য যথেষ্ট নয় ককাশে। অনেক সুন্দর গল্পে অনেক ভালোলাগা।
+

২০ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৩৭

কলমের কালি শেষ বলেছেন: তারা প্রায়শ্চিত্ত এর সময়ও পায় না ।

অনেক ভাল লেগেছে জেনে বেশ পুলকিত অনুভব করছি জুন আপু ।

ভাল থাকা হোক সবসময় । :)

১৪| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৪

আধখানা চাঁদ বলেছেন: থীম সবাই মাথায় নিয়ে ঘোরে, কজন সেটা কলমের কালি দিয়ে লিখে শেষ করতে পারে? আপনি পেরেছেন, খুব ভালো মত পেরেছেন। তাই এ গল্পের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব আপনার।

উৎসর্গ করার মত কিছু করেছি বলে মনে করি না। সম্পূর্ণই আপনার উদারতা। আপনার নতুন লেখা কই ? হারিয়ে যাবেন না যেন।

অসংখ্য ধন্যবাদ।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৯

কলমের কালি শেষ বলেছেন: আপনার থেকে থীম পাওয়া সো ক্রেডিট গোজ টু ইউ । :)

মানুষ আসে হারিয়ে যাওয়ার জন্য ! ;)

আপনার সুন্দর মন্তব্য পেয়ে অনেক ভাল লাগলো আধখানা চাঁদ ভাই ।

ভাল থাকুন । :)

১৫| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১০

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: গল্প ভালো হয়েছে ককাশে, শুভকামনা সতত। ভালো থাকুন সবসময়।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:২৩

কলমের কালি শেষ বলেছেন: পাঠে এবং সুন্দর মন্তব্যে ভাললাগা অনেক প্রিয় বোমা ভাই ।

ভাল থাকুন সবসময় । :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.