নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ধকারের মাঝে একটু আলো.. আলোর অনুসরণ ।\n\nhttps://www.facebook.com/profile.php?id=100004783727702 ।

তর্কে জড়াতে পারবোনা, জ্ঞান সীমিত ।

কলমের কালি শেষ

লেখক পাওয়া যাচ্ছে না তাই আমিই লেখক...

কলমের কালি শেষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্যা ডার্ক ইন্টারভিউ । ( গল্প )

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:০৯

১।

অস্কার জয়ী অভিনেত্রী মিস এমান্ডা রিচের সুইসাইডের খবরে পুরো বিশ্ব স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে । মিস রিচ শুধু একজন অভিনেত্রীই নন, অত্যন্ত প্রভাবশালী পাবলিক ফিগারও ।তিনি ওয়ার্ল্ড চেঞ্জ কর্মসূচিগুলোর একজন সক্রিয় ব্যক্তিত্ব । পৃথিবীর যেকোন বিপর্যয়, স্যোশাল প্রবলেম, ক্লাইমেট চেঞ্জ এইসব ক্ষেত্রে মিস রিচকেই সবার আগে দেখা যেত । তিনি এসব ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন স্যোশাল মিডিয়াম, ফাউন্ডেশন, এনজিও গুলোকে বিপুল পরিমানে অনুদান দিয়ে আসছেন এবং বিভিন্ন ধনকুবদের কাছ থেকেও তহবিল সংগ্রহে কাজ করছেন । এছাড়াও তিনি কবলিত এলাকাগুলোতে গিয়ে কাজের খোঁজ খবর করেন এবং সকলকে একযোগে এগিয়ে আসার জন্য বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়ে থাকেন । তখন নিজ হাতেও অনেক সাহায্য সহযোগিতা দেন । এসব মানব কল্যাণমূলক কাজের জন্য মিচ রিচের সুখ্যাতি আকাশচুম্বী । তাই তাঁর হঠাৎ সুইসাইডের খবর বিশ্ববাসীর জন্য এক বিশাল ধাক্কা । আন্তর্জাতিক এবং বিভিন্ন লোকাল মিডিয়াগুলো শোকার্ত হৃদয়ে ঘন্টায় ঘন্টায় নিউজ প্রকাশ করছে । বিশ্বখ্যাত অন্যান্য ব্যক্তিত্বরা মিডিয়া মাতিয়ে রেখেছেন ।

মিস রিচের মধ্যে সুইসাইডের তেমন কোন সুনির্দিষ্ট কারণ কখনো দেখা যায়নি কিংবা আন্দাজও করা যায়নি তিনি এমনটা করবেন । কিন্তু কেন করলেন ? সবসময় প্রাণবন্ত এবং হাসিখুশি একজন মানুষকেই সবাই দেখেছে ।তবে উনার মধ্যে নিজেকে লুকানোর একটা স্বভাব সবসময়ই ছিল । তাই উনার পার্সোনাল বিষয়গুলো সবার আড়ালেই রয়ে গেছে । এই বিষয়ক যে কোন প্রশ্ন তিনি সুকৌশলে এড়িয়ে যেতেন । তিনি বলতেন, আমাকে জেনে কী হবে ? আমি চাই মানুষ আমার কাজকে জানুক, আমাকে জানুক আমার কাজের মাধ্যমে এবং তাদের ভেতরেও এগিয়ে আসার উৎসাহ জাগুক । তাই বিভিন্ন দিক থেকে খবর চাউরে উঠছে ব্যক্তিগত কোন বড়ধরণের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন তিনি । মিডিয়াগুলো এখনো ইনভেস্টিগেশন টিমের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে না কারণ ভিক্টিম এরিয়া কঠোর নিরাপত্তায় বেষ্টিত ।

২।

মিঃ রিচার্ড, সি আই এ, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন অথরিটি, দাঁড়িয়ে আছেন মিস রিচের মৃতদেহের সামনে । মিচ রিচ গলায় ব্লেড চালিয়ে সুইসাইড করেছেন । তাই গলার কাটা অংশ ফাঁকা হয়ে আছে, চারপাশে রক্ত জমাট বেঁধে আছে, ব্লেডটি এখনো হাতে আটকে আছে, চোখগুলো বড় বড় হয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে । মিঃ রিচার্ড রুমের চারপাশ দেখছেন, তিনি চেষ্টা করছেন উল্লেখযোগ্য ক্লু বের করার । তিনি মিস রিচের টেবিলের দিকে গেলেন । টেবিলের উপর ল্যাপটপ রাখা, পাশে ছোট্ট একটা চিরকুট । মিঃ রিচার্ড চিরকুটটি হাতে নিলেন । ওখানে শুধু বাংলা অক্ষরে লেখা তিনটি শব্দ, ‘আমি আর পারছিনা’ । আনফরচুনেটলি মিঃ রিচার্ড বেশকটি ভাষায় দক্ষ । তার মধ্যে বাংলা ভাষাটিও আছে । তিনি লেখাটা পড়ে ল্যাপটপের দিকে তাকালেন । ল্যাপটপটা ওপেন করা এমন কী ই-মেইল বক্সটাও খোলা । তিনি চারপাশে তাকিয়ে দেখছেন পুলিশ অন্যান্য রুমগুলোয় ঘোরাফেরা করছে । তারপর মেইল বক্সটার দিকে আবার তাকালেন । সেখানে একটা মেইল ওপেন করা । মেইলটা পাঠিয়েছে জার্নালিস্ট সোবহান নামে একজন ভদ্রলোক ।

‘প্রিয় মিস রিচ,

আমি বাংলাদেশ থেকে বলছি ।আপনাকে একটা গল্প শোনাতে চাই । প্রায় ১৭ বছর আগের একটি ঘটনা । আমাদের দেশে এনামুল নামে বাইশ বছরের এক ছেলে ছিল । তার বাবা মিঃ আবেদ একজন সাংসদ এবং মা মিসেস রেহানা একটা সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক । মিঃ এন্ড মিসেস আবেদ যতটুকু ভালো তাদের ছেলেটা ততটুকু ভাল ছিলো না ।

এনামুল তার বাবার আধিপত্যের ছায়ার অনেক অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে । তখনকার সময় ধর্ষক হিসেবে সে হয়ে উঠে আতংকের নাম । তার প্রধান শিকার ছিল কিশোরী, তরুণী । সে ইতিমধ্যে তিন চারটা কাজ খুব সফলভাবেই করে ফেলে এবং বাবার ক্ষমতাবলে সব পার পেয়ে যায় । তাই এনামুলের কাছে ধর্ষণ একটা নেশা হয়ে যায় । কিন্তু সে বেশিদিন টিকতে পারেনি । তার টিমের শেষ শিকার স্কুল পড়ুয়া কিশোরীকে ধর্ষণ করে পালানোর সময় ক্ষুব্ধ জনতার হাতে সে গণ-পিটুনির শিকার হয় । তাকে যখন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হসপিটালে নেওয়া হয় তখন কর্তব্যরত ডাক্তার জানায় এনামুলের অন্যান্য শারীরিক তেমন ক্ষতি হয়নি কিন্তু... তার যৌনাঙ্গ... । এই খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগলো খুব রসালো আঙ্গিকে । মিঃ এন্ড মিসেস আবেদ লজ্জায় কারো সামনে মুখ দেখাতে পারেননি কয়েকমাস । এনামুলের জ্ঞান ফেরার পর যখন সে তার অবস্থার কথা জানতে পারে তখন সে মানসিকভাবে খুব ভেঙ্গে পড়ে । ধরতে গেলে একপ্রকার বধির হয়ে যায় ।

এনামুল যখন সুস্থ হয়ে বাসায় ফেরে তখন তাকে চেনা যায় না । শারীরিক অবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে, মানসিকভাবেও সে খুব বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে । মিঃ এন্ড মিসেস আবেদ তার এই শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার অবনতি দেখে এর একমাস পরই তাকে কানাডা পাঠিয়ে দেয় এবং সেখানে প্রচুর অর্থ ব্যায়ে তার লিঙ্গ পরিবর্তন করে দেওয়া হয় । এবং তাকে বলে দেওয়া হয়, দেশে আসা কিংবা দেশের সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ না করার জন্য । তার ওখানে থাকতে যত টাকা পয়সা লাগে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে । এনামুলের হরমন চেঞ্জ হতে হতে সে মেয়ে হয়ে যেতে লাগলো ।সুন্দর এনামুল হয়ে যায় সুন্দরী এনামুল । তারপর সে তার নাম পরিবর্তন করে ফেলে, মিঃ এনামুল থেকে মিস এমান্ডা রিচ হয়ে যায় । ছেলে হিসেবে সে সুন্দর এবং সুগঠিত সাস্থের অধিকারী থাকায় মেয়ে হয়ে যাওয়ার পর সে আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে । আর তখন থেকে সে মিডিয়া লাইনে ঝুঁকতে থাকে এবং আস্তে আস্তে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে সে এখন ইন্টারন্যাশনাল ফিগার ।

মিঃ এনামুল, এই সুন্দর গল্পটি আপনাকে এখন পর্যন্ত ৯৯ বার সেন্ড করলাম । জানি কাজটা আমি ভাল করছি না কিন্তু once upon a time আপনার কাজটাও ভাল ছিল না । তবে এই শেষবার আপনাকে জ্বালাচ্ছি এরপর আর জ্বালাবো না । যদিও এই কথাটি আপনাকে এর আগে ৯৮ বারই বলেছি কিন্তু রক্ষা করিনি । আসলে রক্ষা করিনি তা নয় রক্ষা করতে পারিনি । তবে এবার রক্ষা করবো কথা দিলাম এবং আপনাকে তা বিশ্বাস করতেই হবে । আর আপনার কাছে এবার তেমন চাইবোও না । মাত্র ১ লাখ ডলার । এই ফিগারটা আপনার কাছে বেশ মামুলি ব্যাপার । প্লিজ তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দেবেন অনেক কাজ বাকি আছে আমার ।

ইতি,
আপনার স্নেহধন্য
জার্নালিস্ট সোবহান’।

সি আই এ দের কোন কিছুতেই অবাক হয়ে যাওয়ার বিধান নেই কিন্তু মিঃ রিচার্ড লেখাটা পড়ে স্তব্ধ হয়ে গেলেন । তিনি যেন কিছুক্ষণের জন্য জমে গেলেন । তিনি নিজেকে সামলে নিয়ে ল্যাপটপ আর চিরকুটটা নিয়ে বেরিয়ে গেলেন ।

৩।

জার্নালিস্ট মিঃ সোবহান একটি বদ্ধ রুমে বসে আছেন । রুমের চারপাশ অন্ধকার । শুধু মাথার উপরে একটি হলুদ লাইট জ্বলছে । তাঁর সামনে একটা টেবিল, টেবিলের একপাশে কিছু ফাইল, ল্যাপটপ আর চিরকুটটা রাখা ।

জার্নালিস্ট মিঃ সোবহানকে আটক করা হয়েছে । কিন্তু তিনি জার্নালিস্ট মিঃ সোবহান নয় । তিনি ডাঃ নিধান যার হাতে এনামুলের চিকিৎসা হয়েছিল । জার্নালিস্ট সোবহান তিনি ছদ্ম নাম হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন । বয়সের ভারে নুয়ে পড়া একজন ব্যক্তি, মাথার চুল ধবধবে সাদা, মুখের মাংস ঝুলে পড়েছে, চোখে মোটা গ্লাস এবং ফ্রেমের চশমা, একটা সাদামাটা টি-শার্ট পড়া ।তবে এখনো দেখে মনে হচ্ছে না তিনি ভীত, উল্টো মনে হচ্ছে খুব প্রানবন্ত একজন বৃদ্ধা । মিঃ রিচার্ড মুখোমুখি খালি চেয়ারটায় এসে বসেছেন ।তিনি ডাঃ নিধান সাহেবের দিকে তাকিয়ে আছেন । লোকটাকে তেমন চিন্তিত মনে হচ্ছেনা দেখে মিঃ রিচার্ড একটু অবাকই হলেন ।

- সো... মিঃ নিধান, কেমন আছেন ?

- আপনি বাংলা জানেন !


- হুমম... আপনাদের জন্য জানতে হয়েছে । ভাষাটা অনেক কঠিন । আয়ত্ব করতে সমস্যা হয়েছে অনেক ।

- জেনে খুব ভাল লাগছে একজন ভিনদেশী লোক আমাদের ভাষায় কথা বলছে । তবে আপনার একসেন্টটা এখনো দুর্বল ।

- হুমম... আমাদের কাজের জন্য একসেন্টটা জরুরী নয় । মিঃ রিচার্ড বুঝতে পারছেন না এই লোক এখনো কীভাবে এমন খোশ মেজাজে কথা বলে যাচ্ছে ! মিঃ নিধান সাহেব, আপনার কী এখনো ভয় করছে না ?

- কেন ভয় করবে ? ভয় তো তাদের জন্য যারা ভয়কে ভয় ভাবে ।

- হুম...। এখন আমার কৌতূহলটা কী আপনি মেটাবেন ?

- কীসের কৌতূহল ?

- মিস এমান্ডা রিচের...

- ( এই প্রথম ডাঃ নিধান সাহেবের চেহারা ভারী হয়ে আসে, তিনি চশমাটা খুলে টেবিলের উপর রাখেন, তাঁর চোখদুটো জ্বলজ্বল করতে থাকে ।) মিঃ রিচার্ডকে তিনি থামিয়ে দিয়ে বলতে থাকেন, আমি এনামুলের (এমান্ডা রিচের) চিকিৎসক ছিলাম পাশাপাশি ঐ স্কুলপড়ুয়া কিশোরীটিরও । একটু খোলাভাবে বললে, ধর্ষক এবং ধর্ষিতা দু’জনেরই চিকিৎসক আমি ছিলাম । কিশোরী মেয়েটি পাঁচদিন পর মারা যায় । এই পাঁচদিন হসপিটাল বেডে পড়ে থাকা মেয়েটির বীভৎস দেহটি আমাকে দেখতে হয়েছে । এমন ক্ষত-বিক্ষত যন্ত্রণাক্লেষ্ট আহাজারি দেখে আমার মত একজন ডাক্তারের মনেও অজান্তে চলে আসে মেয়েটার মৃত্যু কামনা ।মেয়েটিকে যখন তার বাবা মা নিয়ে যাচ্ছে তখনকার মা বাবা তার সন্তানের মৃতদেহ বয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যটির মত এমন ভারী দৃশ্য পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি আছে কিনা আমার জানা নেই ।আর এনামুলকে তার বাবা মা একমাস চিকিৎসাধীন রাখার পর বাসায় নিয়ে যায় । তখন আমার মনে ছোট্ট একটা সান্তনা ছিল এনামুল তার আপরাধের শাস্তিটা পেয়েছে । এক গ্লাস পানি দেওয়া যাবে ?

মিঃ রিচার্ড পানির জন্য অর্ডার পাঠালেন । তিনি দেখছেন ডাঃ নিধান সাহেবের গলা শুকিয়ে আসছে ।

- তারপর কী হলো ? মিঃ রিচার্ড জিজ্ঞেস করলেন । ডাঃ নিধান পানিটা খেলেন । একটু নিঃশ্বাস নিলেন ।

- তারপর তো আপনি জানেন । চিরকুটটা তো নিশ্চয় পড়েছেন ?

- হামম... পড়েছি । আমি বলতে চাচ্ছি ই-মেইলের ব্যাপারটি ।

- আমার ডাক্তারি জীবনে আমি অনেক রুগি পেয়েছি কিশোরী সেই মেয়েটির মত । এবং তাদের বেশিরভাগই সমাজে বিভিন্নভাবে নিগ্রহ, লাঞ্চনা, অবহেলার শিকার হয়েছে । কিন্তু তাদের এমন হওয়াটা কোনভাবেই কাম্য ছিল না । তারা ধর্ষিতা এটা তো তাদের অপরাধ নয়, তারা ভয়ংকর অপরাধের শিকার হয়েছে ! ধরেন, কোন সন্ত্রাসী আপনার একহাত কেটে দিল তাহলে কী আপনার সমাজ আপনাকে দূরে ঠেলে দেয় নাকি আপনাকে সাহায্যের হাত বাড়ায় ? নিশ্চয় দূরে ঠেলে দেয় না, সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে ? কিন্তু একজন ধর্ষিতার ক্ষেত্রে এমনটা হয় না । এবং খুবই হাস্যকর বিষয় তারা সমাজের চোখে অপরাধীর থেকেও বেশি নিগ্রহের শিকার হয় । এমনকি অনেক পরিবারও দেখেছি তাদের মেয়েটিকে গ্রহণ করতেও নারাজ । এমনই একটা হতভাগী সুইসাইডও করেছিল । মেয়েটা যখন আমাকে তার পরিবারের কথা জিজ্ঞেস করে আমি মাথা নিচু করে ফেলি । মেয়েটা বুঝে ফেলে তার পরিবার তাকে ছেড়ে চলে গেছে । এরপর রাতে হসপিটাল থেকে আমার কাছে ফোন আসে । আমাকে জানানো হয় মেয়েটা হসপিটালের বারান্দা দিয়ে লাফ দেয় । আমি হসপিটালে ছুটে যাই । কিন্তু মেয়েটা মারা যায় । এ ছাড়াও এইসব মেয়েগুলো সমাজে গিয়েও স্বাভাবিক হতে পারে না । আসলে পারে না তা নয় সমাজ তাকে হতে দেয় না । বড়ই হাস্যকর এই সমাজ । মিঃ রিচার্ড, আমি জানি না আপনাদের সমাজও কী এমন ?

- হুম... তারপর ? মিঃ রিচার্ডকে দেখে মনে হচ্ছে উনি প্রশ্নের উত্তর দেয়া থেকে শুনতেই বেশি আগ্রহী।

- এরপর আমি সিদ্ধান্ত নিই এইসব সমাজত্যাজ্য মেয়েদের জন্য কিছু করার । আমি তাদের জন্য একটা পুনর্বাসন কেন্দ্র খুলি । ছোট্ট একটা ফ্ল্যাটে । সর্বোচ্চ ৮ জন থাকা যায় । সেখানে প্রথম ২ জন মেয়েকে রাখি এবং তাদের ব্যসিক চাহিদাগুলোর পাশাপাশি জীবনধারণের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করি । এখানেও প্রথম প্রথম কিছু পুলিশি ঝামেলা হয়েছিল । ঝামেলার কথাটি বললে এখানেও সেই সমাজ । তারা এটাকে মনে করতে লাগলো বিজনেস ।এইসব ঝামেলাগুলো মিটমাট করতে অনেক সমস্যা হয়েছিল । তারপর এই ফ্ল্যাটে আস্তে আস্তে মেয়ের সংখ্যা বাড়তে থাকলো । তাদের মধ্যে আবার কেউ চাকরি পেয়ে চলে গেল, আবার কেউ বিয়ে হয়ে চলে গেল । সবকিছুই আমার নিজের তত্ত্বাবধানেই করে আসছিলাম । আর যে সব মেয়েগুলো চাকরি করতো তারাও আমাকে হেল্প করতো । কিন্তু একটা সময় আর কুলায়ে উঠতে পারছিলাম না, দিনদিন মেয়েদের সংখ্যা বাড়ছে, নতুন বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে । কী করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না । তখনি পেপারের বিনোদন পাতায় মিস এমান্ডা রিচের খবর দেখি । তাকে দেখে আমার কেমন যেন চেনা চেনা লাগছিল । আর এনামুলের লিঙ্গ পরিবর্তনের প্রথমিক পর্যায়ের বিষয়গুলো তার বাবা মা আমাকে জানিয়েই করেছিল । এরপর দীর্ঘদিন আর যোগাযোগ করেনি । তাই পেপারে ছবিটা দেখে এনামুলের চেহারা ভেসে উঠলো । তারপর খোঁজ নিয়ে জানতে পারি মিস এমান্ডা রিচই এনামুল । তখনি আমার মাথায় এই কুচিন্তা কিংবা সুচিন্তাটি আসে । আমি তার মা বাবার কাছে যাই তার ই-মেইল, ফোন নাম্বার নেওয়ার জন্য । কিন্তু তার মা বাবা জানায় কানাডা পাঠানোর কয়েকমাস পর থেকে এনামুলের সাথে তাদের কোন যোগাযোগ নেই । তারা জানেও না সে কোথায় আছে, কেমন আছে । কথাটা শুনে আমি অবাক হলাম । আমি ভাবতে লাগলাম এরা হয়তো মিথ্যা বলছে । পরে কানাডায় আমার এক ডাক্তার বন্ধুর সাথে যোগাযোগ করে বহুকষ্টে মিস রিচ মানে এনামুলের ইমেইল এড্রেস সংগ্রহ করি । তারপর আমি জার্নালিস্ট সোবহান ছদ্ম নামটি ব্যবহার করি । প্রথম যে মেইলটি মিস রিচকে পাঠাই তখন অনেক ভয় হয়েছিল এবং ভেবেছিলাম হয়তো কোন রিপ্লাই আসবে না । কিন্তু দুই দিন পর রিপ্লাই আসে । রিপ্লাইতে শুধু লেখা থাকে ‘কী চাই ?’ । এ দুটি শব্দ থেকেই বুঝতে পারি ই-মেইলটি মিস রিচকে বেশ ধাক্কা দিয়েছে । তারপর থেকে তার আর আমার মধ্যে লেনদেন শুরু হয় । আমি তাকে মেইল করে সবসময় ভয়ে থাকতাম কারণ সে যদি রিফিউজ করে দেয় তখন আমি কী করবো ?

- তখন আর কী করতেন ? নিউজটা ফ্ল্যাশ করে দিতেন । নিউজ কোম্পানি থেকেও অনেক প্রাইস পেতেন । এতে ভয় কীসের ?

- আপনি যতটা সহজ করে বললেন কাজটা ততটা সহজ নয় । আর আমার উদ্দেশ্যও ছিল না নিউজটা ফ্ল্যাশ করে দেয়ার ।তার থেকে অর্থ আদায় করাটাই ছিল আমার মূল উদ্দেশ্য । তার দেয়া অর্থ দিয়েই আমি পুনর্বাসন কেন্দ্রটা বড় পরিসরে চালাতে লাগলাম । তার কাছে লাস্ট এমাউন্ডটা চেয়েছিলাম পুনর্বাসন কেন্দ্রের দু’টো মেয়ের বিয়ে দেয়ার জন্য ।

- আচ্ছা, আপনি তো চাইলে মিস রিচকে অনুদানের প্রস্তাব দিতে পারতেন । উনি তো পৃথিবীজুড়ে এইধরণের স্যোশাল কাজগুলোই করছেন । তাহলে তো তিনিও এখন বেঁচে থাকতেন ।

- হ্যাঁ, আমি পারতাম । কিন্তু আমি তাকে শাস্তি দিতে চেয়েছি । তাকে মানসিক যন্ত্রণায় রাখতে চেয়েছি । কারণ সে অত্যন্ত জগণ্য কাজে লিপ্ত ছিল । আর আপনার কী ধারণা একজন ধর্ষক থেকে এইসব হতভাগ্য মেয়েদের জন্য আমি অনুদান নেব ? তার থেকে যে অর্থ আমি নিয়েছি সেগুলো তার প্রায়শ্চিত্ত । কিন্তু এতেও মিস রিচের প্রায়শ্চিত্ত হয়েছে কিনা আমি জানি না ।তার কাছ থেকে অর্থ আদায় করাটা মূল উদ্দেশ্য থাকলেও তাকে মানসিক যন্ত্রণার ভেতর রাখাটাও মূখ্য ছিল । আর এটাই তার কাছে আমার শেষ চাওয়া ছিল কারণ আমি পুনর্বাসন কেন্দ্রটির দায়িত্ব ওখানে বড় হওয়া সিনিয়র মেয়েদের দিয়ে দিয়েছে । তারা ভালো চাকরি করছে, ব্যবসা করছে, ভালভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে । এখন তারাই আমার থেকে দায়িত্ব চেয়ে নিয়েছে । শুধু এই দু’টো মেয়েকে বিয়ে দিয়েই আমার অবসরে যাওয়ার কথা । কিন্তু মিস রিচের যা আমি চাইনি তা তিনি নিজেই করে গেলেন ।

- কিন্তু মিস রিচ তো আপনার কারণেই সুইসাইড করেছে । তাহলে তো আপনিও মিস রিচের মতোই অপরাধী । সে ধর্ষক, আর আপনি খুনি ।

- (ডাঃ নিধান কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন) তারপর বললেন, আমি জানি না আমি কী করেছি । তবে আমি জানি মিস রিচের খবরটি দুনিয়া জানবে না । কারণ এই খবর জানলে অনেক সেক্টরেরই বেশ ক্ষতি হবে । আর আমি এও জানি আপনারা আমাকে এখান থেকে যেতে দেবেন না । আপনারা আমাকে চিরতরে লুকিয়ে ফেলবেন । পৃথিবীর কাছে আমাকে প্রকাশ করবেন ঘৃণিত ব্যক্তি হিসেবে আর মিস রিচ হবেন প্রশংসিত । আমাকে পৃথিবীর মানুষ চির জীবন ঘৃণা করবে আর এনামুল হয়ে থাকবে চির অমর ।

মিঃ রিচার্ড খাম থেকে একটা লেটার বের করে ডাঃ নিধান সাহেবের দিকে এগিয়ে দিলেন । ডাঃ নিধান সাহেব টেবিলে পড়ে থাকা লেটারটির দিকে তাকালেন । মিঃ রিচার্ড বলতে লাগলেন,

- এটা হচ্ছে একটা টারমিনেশন লেটার । আপনার... । আর এটা হচ্ছে টারমিনেশন রুম । এই কথা বলতে বলতে মিঃ রিচার্ড টেবিলে রাখা ফাইলগুলো, ল্যাপটপ, চিরকুট এবং টারমিনেশন লেটারটি পাশে রাখা বাক্সটিতে ফেলে দিলেন । এরপর তিনি কাঠি দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিলেন । তিনি আবার বলতে লাগলেন, এই টারমিনেশন লেটারটি প্রেসিডেন্ট সাইন করেছেন । আপনাকে কোন আদালত, জিজ্ঞাসাবাদ করার আগেই আপনার টারমিনেশন অর্ডার চলে এসেছে । এতোক্ষণ যে আপনার সাথে কথা বলছি এগুলো নিতান্তই আমার কৌতূহল ছিল । এছাড়া আর কিছুই না । এই রুমে কোন ক্যামেরা নেই, কোন হিডেন গ্লাস নেই, ভয়েজ রেকর্ডার নেই, কিছুই নেই, শুধু হলুদ লাইট জ্বলা বদ্ধ একটা অন্ধকার রুম মাত্র । যা শুধুমাত্র আপনাদের জন্য তৈরি করা আর আমিও শুধু এই কাজের জন্যই । আর হ্যাঁ, আপনি যা ভাবছেন তাই হবে । পৃথিবীর মানুষ আপনাকে সেইভাবেই জানবে । এই কথা বলে মিঃ রিচার্ড চলে যাচ্ছেন । অর্ধেক গিয়ে আবার দাঁড়ালেন । তিনি মাথা কিঞ্চিত পেঁছনে ঘুরিয়ে বললেন, মিঃ নিধান, আপনার জন্য আমার খুব মায়া লাগছে কিন্তু আমার কিছু করার নেই । ডাঃ নিধান সাহেব বললেন,

- আমি কী আমার পরিবারের কাছে একটা ফোন করতে পারি ? শুধু এইটুকু বলার জন্য, I never come back, don’t confuse me dead or alive .

মিঃ রিচার্ড মাথা নেড়ে সায় দিলেন । তিনি বেরিয়ে গেলেন ।বাইরে এসে পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখটা মুচলেন । উনাকে অনেক বিষণ্ণ দেখাচ্ছে । তিনি কর্তব্যরতদের দিকে তাকিয়ে মাথা নেড়ে জানালেন জব ডানের জন্য ।

ডাঃ নিধান চোখে চশমাটা পড়লেন । তিনি রুমটার চারপাশে মাথা ঘুরিয়ে দেখছেন । এই প্রথম রুমটাকে তার মৃত্যুকূপের মত মনে হল । তবে তিনি মৃত্যুর জন্য ভয় পাচ্ছেন না, মৃত্যু তো সবারই কাম্য, কেউ আগে কেউ পরে, আর ভয় পাওয়ার বিষয়টি তো আসে শোধরানোর প্রয়াস থেকে ।কিন্তু ডাঃ নিধানের হয়তো শোধরানোর কিছুই নেই । উনার শুধু একটু আফসোস হচ্ছে পৃথিবীর মানুষ উনাকে আজীবন ঘৃণা করবে আর তাঁর পরিবার সেটা বহন করবে, তাঁকে ভুল বুঝবে । পরিবারের জন্যও ডাঃ নিধান সাহেবের মনটা কেঁদে উঠছে, মনে পড়ছে ভাগ্য নিপীড়িত মেয়েগুলোর কথাও । যে কোন সাহসী যোদ্ধারই মৃত্যুর কাছাকাছি থাকলে মনে হয় এমনই অনুভূতি জাগে- মৃতুর ভয় নয়, কিছু অসমাপ্তের আক্ষেপ ।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:১৯

আনু মোল্লাহ বলেছেন: গল্পটি বেশ সুন্দর করে সাজিয়েছেন। আমার ভাল লেগেছে।
শুভেচ্ছা নেবেন।

২| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৫

রানা আমান বলেছেন: ভাল লিখেছেন ।

৩| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৬

বিজন রয় বলেছেন: কেমন আছেন? নতুন পোস্ট দিন।

৪| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:০৯

আমি তুমি আমরা বলেছেন: এনামুল লিংগ পরিবর্তন করলেও তার চেহারায়তো এশিয়ান ভাবটা থেকে যাওয়ার কথা, স্পেশালি যেহেতু সে উপমহাদেশের লোক। তাই চরিত্রের নাম এমান্ডা রিচ না হয়ে উপমহাদেশীয় কোন নাম হলেই ভাল হত।

৫| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৩

কালীদাস বলেছেন: চমৎকার থ্রিলার। অসাধারণ। একটানে শেষ করেছি। আমি সম্ভবত তখন ব্লগে ছিলামনা যে কারণে চোখে পড়েনি।

কয়েকটা ছোট ফাঁক ছিল গল্পটায়। ফর এক্সাম্পল: ছেলে থেকে মেয়েতে পরিণত হলেও চামড়ার রং, চোখের রং এগুলো চেন্জ হবে কিভাবে! যতদূর জানি, ফেয়ার লাভলি এতটা পাওয়ারফুল না এখনও :D এবং হঠাৎ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একজনের নাজিল হওয়াটাও খানিকটা প্রশ্নবোধক। মিডিয়ার কাছে নিজেকে যতই লুকিয়ে রাখুক, আইডেন্টি ডকুমেন্ট ব্যাপক ফরজারি না করলে এত উপরে যেতে পারবেন না একজন। এনিওয়ে, এত প্রশ্নের উত্তর দিতে আপনি বাধ্য না, পাঠকদেরও খানিকটা ঝুলিয়ে রাখা উচিত সমাধান বের করার জন্য :P

আপনি ইদানিং ইরেগুলার হয়ে গেছেন মনে হচ্ছে :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.