নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ও বলতে চাই !

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন

ব্লগিং হউক সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার ।

ওয়াসিম ফারুক হ্যাভেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন কখনোই অপরাধ হতে পারে না।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:২০

দাবী আদায়ে ছাত্র আন্দোলন নতুন কিছু নয়। যুগ যুগ ধরে নিজেদের ন্যায্য অধিকার আাদায়ের পাশাপাশি রাষ্ট্র ও সমাজের নানান ন্যায্য অধিকার অসংগতি দাবী নিয়ে ও ছাত্ররা নানা সময় আন্দোলন করেছেন এবং করে আসছেন এর জন্য অনেক শিক্ষার্থী জীবন পর্যন্তু উৎসর্গ করতে হয়েছে ও হচ্ছে। ১৬০ খ্রিস্টাব্দে চীনের ইমপেরিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সরকারের কয়েকটি নীতির প্রতিবাদে রাস্তায় নামে। আর এটা পৃথিবীর ইতিহাসের প্রথম ছাত্র আন্দোলন। ইমপেরিয়ালে পড়তে আসা গরীব মেধাবী ছাত্ররা তাদের অধিকার ও দাবী প্রতিষ্ঠার জন্য ই এই আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন পরবর্তীতে এই আন্দোলনে চীনা গনমানুষের অংশগ্রহনে এক মহা আন্দোলনে রুপ নেয় ৩০ হাজারের ও বেশি মানুষ ছাত্রদের এই আন্দোলনে শরীক হয়ে রাস্তায় নেমে আসে। ১৭২ জন শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে অমানুষিক নির্যাতন করে তৎকালীন চীনা সরকার ঐ আন্দোলন দমাতে ব্যর্থ হয়ে পরবর্তীতে ছাত্রদের ন্যায্য দাবী মানতে বাধ্য হয়। এ ছাড়াও ১৯৪২ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন নাৎসি শাসনের বিরুদ্ধে মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা " হোয়াইট রোজ আন্দোলন" এর সূচনা করে। হিটলার প্রশাসনের বিরুদ্ধে জনমানুষকে সচেতন করাই ছিল এই হোয়াইট রোজ আন্দোলনের মুল উদ্দেশ্য। ১৯৪৩ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট রোজের দুই সদস্য জার্মান গুপ্ত পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। এর একে একে ধরা পড়েন হোয়াইট রোজ গ্রুপের অন্য সদস্যরাও। অবশেষে আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ছয় সদস্যকে তথাকথিত বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়া করিয়ে প্রত্যেককেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। হিটলার প্রশাসনেকে এই আন্দোলন তেমন পরিবর্তন করতে না পরলেও ছাত্রদের এই সাহসী পদক্ষেপ নাৎসি প্রোপাগান্ডায় কিছুটা হলেও ফাটল তৈরি করে হিটলার প্রশাসনের বিরুদ্ধে জার্মান জনগনকে সজাগ করতে পেরেছিল।



১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীদের মধ্যে দাবি-দাওয়া নিয়ে অসন্তোস চলছিল। কর্মচারীদের মাসিক বেতন ছিল নগণ্য। তাঁদের থাকার জন্য কোনো বাসস্থান ছিল না। ৩ মার্চ থেকে কর্মচারীরা ধর্মঘট শুরু করেন। কর্মচারীদের ধর্মঘটের সমর্থনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসমাজ ৩ মার্চ ক্লাস বর্জন করে। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের আহ্বানে ৫ মার্চ পূর্ণ ছাত্র ধর্মঘটের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে বেলা ১২টায় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বলা হয়, কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া কর্তৃপক্ষ যত দিন মেনে না নেবে, ততদিন সহনুভূতিসূচক ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রনেতা ও যুবকর্মী হিসেবে কর্মচারীদের আন্দোলনকে শুরু থেকেই সমর্থন করে আসছিলেন। শুধু তা-ই নয়, একসময় তিনি এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে শুরু করেন। শেখ মুজিবুর রহমনের নেতৃত্বে সে সময় অন্যদের মধ্যে নঈম উদ্দিন আহমেদ, মোল্লা জালাল উদ্দিন, আবদুস সামাদ, আবদুর রহমান চৌধুরী, কল্যাণ দাশগুপ্ত, নাদেরা বেগম, অলি আহাদ, দবিরুল ইসলাম প্রমুখ এই আন্দোলনে জড়িত ছিলেন। প্রাদেশিক সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই আন্দোলন ভন্ডুল করার জন্য ১১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। ১৯৪৯ সালের ২৬ মার্চ ২৭ জন ছাত্র-ছাত্রীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। ৬ জনকে ৪ বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। ১৫ জনকে আবাসিক হল থেকে বহিষ্কার করা হয়। একজনকে ১০ টাকা জরিমানা করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৫ জনকে ১৫ টাকা করে জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া তাঁদের মুচলেকা দিতে বলা হয়। অনাদায়ে ছাত্রত্ব বাতিল এই মর্মে ঘোষনা দেয় কতৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষের এই সিদ্বান্তের প্রতিবাদে ১৯৪৯ সালের ২০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ে হরতাল ও অবস্থান ধর্মঘট ডাকা হয়। এ সময় শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার অবস্থায় তাঁকে ছাত্রত্ব ফিরে পাওয়ার জন্য জরিমানা ও মুচলেকা দিতে বলা হয়। তিনি মুচলেকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সিদ্ধান্তে শেখ মুজিবুর রহমানকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবনের পরিসমাপ্তি ঘটান।



উপরের ঘটনা গুলি টানার কারন সাম্প্রতিক সময়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার প্রেক্ষাপটে। ৫ দফা দাবী নিয়ে অনেক দিন ধরেই আন্দোলন করে আসছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলনের জের কঠিন ভাবে দিতে হয়েছে কয়েক জন ছাত্র ও শিক্ষককে। কি আছে শিক্ষার্থীদের ঐ ৫ দফা দাবিতে? তাঁদের ৫ দফা দাবির মধ্যে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী অধ্যাদেশ বাতিল, নির্মাণকাজের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ, শিক্ষার্থীদের আবাসন-সংকট নিরসন ও বেতন-ফি কমানো। এর প্রত্যেকটাই যৌক্তিক দাবী হিসেবে মেনে নিয়েছেন খুলানা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. ফায়েক উজ্জামান। এমনকি তিনি বলেছেন ২০১৯ সালের নভেম্বরেই অধিকাংশ দাবি পূরণ করা হয়। তার পর ও কেন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন? আমারা জানি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট চরমে তারই লক্ষ্যে কয়েকটি ছাত্রাবাস নির্মানের কাজ হাতে নেওয়া হয় আর ঐ সকল ছাত্রাবাস নির্মানের চরম দুর্নীতির কথা আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি। ছাত্রাবাসের জীবনানন্দ দাশ ভবনে ৫ ইঞ্চির জায়গায় ৩ ইঞ্চি ছাদ দেওয়া হয়েছে। ওই ভবনের মোট ৭টি কক্ষের বিভিন্ন জায়গায় এই সমস্যা ধরা পড়ে। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের টেন্ডারে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে এর নির্মানের কাজের ঠিকাদার নিয়োগ করা হয় নানা দুর্নীতি ও অপকর্মের দায়ে বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা জি কে শামীমের কোম্পানি জিকেএস কে। তাই ছাত্ররা তাদের যেই দাবী গুলি নিয়ে আন্দোলন করে আসছে তা অবশ্যই ন্যায় সঙ্গত যৌক্তিক দাবী। আর ছাত্রদের যে কোন যৌক্তিক ন্যায় সঙ্গত আন্দোলনর মাধ্যমে ন্যায় ও অধিকার প্রতিষ্ঠা সহ সকল যৌক্তিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে সঠিক পথ দেখাতে সহায়তা করাই একজন আর্দশ শিক্ষকের দায়িত্ব। আর আমার মনে হয় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠাও জন্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে প্রতিবাদী আন্দোলন করে যাচ্ছেন তাতে যেই শিক্ষকেরা সমর্থন করেছেন তারা অবশ্যই প্রত্যকেই নীতিবান আর্দশ শিক্ষকের মতই তাদের নৈতিক দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে বিশ্বিবদ্যালয় কতৃপক্ষ এই আন্দোলননের জের ধরে যেই দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বহিষ্কারের জন্য চূড়ান্ত নোটিশ দিয়ে যে অগণতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করেছেন তা ১৯৪৯ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন ও তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের কথাই স্মরন করিয়ে দেয়। আমাদের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে ছাত্রদের ভুমিকা ই ছিল মুখ্য বায়ান উনসত্তর একাত্ত নব্বই। সব সময়ই আমারা দেখে আসছি বিশ্ববিদ্যালয়ের একশ্রেনীর শিক্ষক নিজেদের পদ পদবী ও স্বার্থ রক্ষায় নানান সরকারের লেজুড়বৃত্তিতে লিপ্ত ছিলেন বলেই আজ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সহ সকল স্হানেই আজ অযোগ্যদের আধিপত্য। কারন যে রাষ্ট্র বা সমাজে মেধার চেয়ে লেজুড়বৃত্তিকে মূল্যায়ন করা হয় সেই সমাজের কর্তাব্যক্তিরা সাধারন মানুষের জন্য আর কত টুকুই বা করবে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ঘটনা ঘটে গেল ততা সম্পুর্ন ভাবে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চেতনা বিরোধী। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান সিন্ডিকেট ও ভিসি দ্বারা নতুন করে ইতিহাসের পাতায় এক কলংকিত অধ্যায় রচিত হলো। এখন হয়তো যে কোন ভাবেই হউক ছাত্রদের অনশন ভাঙ্গানো সম্ভব হয়েছে। তবে সাধারন মানুষের মন থেকে ইতিহাস থেকে এই কলংক মুছা কখনোই সম্ভব হয় না।



মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:৪৮

Imran Khan 017 বলেছেন: শিক্ষার্থীরা বর্তমানে খুবই নির্যাতিত হচ্ছে।
দলীয় সরকারের অধীনে যারা আছে তারা তো আরামেই আছে। আর অনেক শিক্ষার্থী চাপে বা ভয়ে চুপ হয়ে সব কিছু মেনে নিচ্ছে।
ভয় কে জয় করে যে কয়েক জন একটু মুখ খুলছে তাদেরকেও অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে।

২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:৫৫

চাঁদগাজী বলেছেন:



বাংলার ছাত্ররা সামান্য অংক পারে না, ইংরেজী পারে না, সায়েন্স বুঝে না, পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করতে হয়, তারা কি করে বুঝবে আন্দোলন কখন দরকার, আর কখন পড়ালেখা করার দরকার? আপনি নিজ সময়ে পড়ালেখা করেছেন তো?

৩| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:২৭

স্থিতধী বলেছেন: @ চাঁদগাজী সাহেব

আপনি যখন মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন তখন আপনার বয়স কত ছিলো? ছাত্র জীবন পুরো শেষ হয়েছিলো? এ দেশের লাখো মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে যারা যারা ছাত্র জীবনেই যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলো তাঁদের মাঝে কতজন তখন আপনার মতো ইংরেজী, সায়েন্স বুঝতো, কতজন আপনার থেকে কম বা বেশী পারতো, কত জন প্রশ্নফাঁস না করে পরীক্ষা দিয়েছে সেসব জানার সুযোগ হয়েছিলো?

সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়াতে স্বৈরাচারী পুতিনের পতন ঘটানোর চেষ্টায় মূলত ছাত্রদের একটা আন্দোলন ঘটছে, রাশিয়ার এসব ছাত্ররা কি প্রশ্নফাঁস জেনারেশন নাকি তাঁদের আন্দোলনের সময়জ্ঞান বেশী?

৪| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৪৫

নাসরীন খান বলেছেন: বাংলার ছাত্ররা বাংলা ভালমতো জানে। আমরা তাদের থেকে কম জানি।যে যেটাতে পড়ে সেটা ভালমতো রপ্ত করলে সেটাই তার জন্য সার্থক।
আন্দোলন ন্যায় ও ন্যায্য হলে সেটা অবশ্যই জাতীর জন্য কল্যানকর।

৫| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেউ কখনও আন্দোলন করতে পারে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.