নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শারমিন আকতার

শারমিন আক্‌তার

জ্ঞান অর্জনের জন্য ছুটে চলা অবিরাম .....

শারমিন আক্‌তার › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ সাক্ষী গোপাল

২২ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:৪৫

সাক্ষী গোপাল

(বিশ্বজিৎ স্বরণে)

শারমিন আকতার



-মা ! ও মা ! দেখে যাও । ভাইয়াকে খবরে দেখাচ্ছে । ভাইয়াকে মারছে মা ।

আর্তনাদের সাথে চিৎকার করতে করতে মা কে ডাকলো পূজা । দ্রুত মেয়ের কাছে ছুটে আসলো পূজার মা । তারপর মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলল

-কি কইলি তোর ভাইয়াকে দেখাচ্ছে ?

-এ দেখ ।

টিভির দিকে আঙুল বাড়িয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল পূজা ।

-মোড়ে নাকি গন্ডগোল লাগছে । হরতালের সমর্থক মনে করে হরতাল বিরোধীরা ভাইয়াকে মারছে মা । ভাইয়াকে মারছে মা .....

এক নিশ্বাসে কথা কটা বলল পূজা । ভাইয়াকে একদল স্বসস্ত্র লোক ছুরির কোঁপে ক্ষত বিক্ষত করছে । আর নিজ চোখে সেটা নির্বাক হয়ে দেখতে হচ্ছে তাকে । এর চেয়ে করুন দৃশ্য কি আর হতে পারে । পূজার কথায় টিভিতে চোখ ফেলল পূজার মা । সত্যিই তো । হায় একি !

-একি মা ! কেন আমার প্রসেনজিৎরে ওরা মারছে? কেন ? হায় ভগবান ! তুমি আমার ছেলেকে বাঁচাও ভগবান । আমার প্রসেনজিৎকে বাঁচাও ।

কান্নার আহাজারীতে প্রসেনজিৎ-এর বাসায় থমথমে ভাব বিরাজ করছে । এদিকে প্রসেনজিৎ এর মা আদরের ছেলেকে রক্তাক্ত দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল । পাশের বাসা থেকে এক মহিলা আসলো এসময় । কি হইছে জানার জন্য । এসেই সেও টিভিতে চোখ রাখলো ।

-সে কি ? ওরা প্রসেনজিৎ কে মারছে কেন ? কেন ওরা আমাদের এত ভাল ছেলেটাকে মারছে ? কেন?

পূজার দিকে তাকিয়ে আতঙ্কিত কন্ঠে মহিলা বলল

-পূজা তোমার আব্বাকে কল দাও । তোমার আব্বাকে এখনি কল দাও ।

দ্রুত মহিলা পূজার মায়ের জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা চালাতে লাগল । আর পূজা মহিলার পরামর্শ মত তাড়াতাড়ি মোবাইল হাতে নিয়ে তার বাবাকে কল দিল । কঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল

-হ্যালো বাবা ! ভাইয়াকে খবরে দেখাচ্ছে । একদল গুন্ডা ওকে মারছে । বাবা তুমি ভাইয়াকে বাঁচাও ।

এক মৃত্যু পথযাত্রী ভাইয়ের জন্য বোনের আকুল আবেদন । কয়েক সেকেন্ড যেন হতভম্ব হয়ে গেল প্রসেনজিতের বাবা । কি বলছে পূজা ! সে আবার নিশ্চিত হওয়ার জন্য মেয়েকে প্রশ্ন করল

-তুই ভুল করছিস নাতো ? ভাল করে দেখেছিসতো? তোর ভাইয়া না অন্য কেউ ?

- বাবা আমি ভাল করে দেখেছি । মা, রানু কাকীমা সবাই দেখেছে । মা ভাইয়ারে আহত অবস্থায় দেখেই তো জ্ঞান হারাইছে । তুমি শীঘ্রই ভাইয়ার কাছে যাও । ভাইয়াকে বাঁচাও বাবা । ভাইয়াকে বাঁচাও ।

নিমিষেই পুরো শরীর যেন অবশ হয়ে গেল প্রসেনজিতের বাবার । চোখের সামনে যেন ভেসে উঠছে আদরের ছেলের অস্পস্ট রক্তাক্ত শরীর । কোন মতে একটা রিক্সা নিয়ে দ্রুত ঘটনা স্থলে চলে গেল প্রসেনজিতের বাবা । ঘটনা স্থলে পৌছেই সে ছেলের কাছে পৌছে গেল । রক্তাক্ত শরীর পড়ে আছে রাজ পথে । চারদিকে ভীড় করে দাড়িয়ে আছে সাংবাদিক ও ক্যামেরা ম্যানরা । ছবি তোলা ও ভিডিও ক্লিপ সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় নেমেছে যেন মানুষগুলো । প্রসেনজিতের বাবা তাদের ভীড় ঠেলে ভীতরে প্রবেশ করে সবছর উদ্দেশ্যে বলল

-ভাইসাব ! দয়া করে আপনারা আমার ছেলেটাকে হসপিটালে পাঠার ব্যাবস্থা করেন প্লিজ । আমারে ছেলেটারে হসপিটালে পাঠার ব্যাবস্থা করেন ।

এবার যেন সবাই কিছুটা সচেতন হল । শুধু ভিডিও ক্লিপ সংগ্রহ নয় তাকে যে হসপিটালে নেয়া দরকার এটা যেন সবাই অনুধাবন করতে পারলো । অবশেষে স্থানীয় জনগন ও সাংবাদিকদের সহায়তায় একটা অ্যাম্বুলেন্স আসলো প্রসেনজিতকে হসপিটালে নেয়ার জন্য । মেইন রোডের উপর অ্যাম্বুলেন্স রেখে চিকন চাপানো রাস্তার দিকে ছুটল কর্মচারীরা স্ট্রেচার নিয়ে । অ্যাম্বুলেন্সের স্ট্রেচারে তোলা হল প্রসেনজিতের রক্তাক্ত দেহ । স্ট্রেচার নিয়ে অ্যআম্বুলেন্সের দিকে ছুটছে তারা । প্রসেজিতের বাবা, স্থানীয় জনতা ও সাংবাদিকরাও ছুটছে স্ট্রেচারের পিছু পিছু ।

কিছুদূর যাওয়ার পরই থমকে দাড়ালো স্ট্রেচারের রথ । কি হল ! সবাই দাড়িয়ে পড়লো কেন ?

স্ট্রেচারের সারথীরা সবার উদ্দেশ্যে বলল

-আর যেয়ে লাভ নাই । ওনি নেই ।

সবাই যেন থমকে গেল । প্রসেনজিতের বাবা তাড়াতাড়ি ছেলের কাছে এসে ওর অবশ দেহ ধরে মুখ ঝাঁকাতে ঝাঁকাতে বলল

-কথা বল বা জান । কথা বল । তোর কিছু হই নাই । আর কয়েক মিনিট তুই থাকতে পারলি না বাজান । আর কয়েক মিনিট..... ।

তাকে শান্তনা দিতে লাগল স্থানীয় জনগন । তারপর সবাই যেন এবার কিছুটা ফুঁসে উঠলো ।

চারিদিকে মিছিলের ঢল নামলো । স্লোগানে স্লোগনে প্রকম্পিত হল বাংলার আকাশ । প্রসেনজিতের নিস্পাপ অবশ দেহ নিয়ে রাজপথে নামতেও পিছপা হল না তারা । চারিদিকে ধ্বনিত হচ্ছে

-প্রসেনজিতের হত্যার বিচার চাই । প্রসেনজিতের হত্যাকারীর ফাঁসি চাই ।

হায়রে নাদান, সাহসী বাঙালী ! এই গজনর্টা যদি প্রসেনজিৎ বেচেঁ থাকতে দিত। ওকে যখন দুর্বত্তরা মারছিল তখন সাক্ষী গোপাল হয়ে না থেকে প্রতিবাদ করত । তাহলে কি প্রসেনজিৎকে এভাবে অকালে প্রাণ দিতে হত? কখনই না । বরং খুনীরা ভয়ে পালিয়ে যেত । আমরা বাঙলীরা এখন শুধু মাছের মার পুত্র শোকই করতে জানি । আবার কখনও কখনও ক্ষেত্র বিশেষে খাঁচায় আটকা সিংহের মত ব্যথ গর্জন তুলি কন্ঠে। সঠিক সময়ে রাজ পথে নামতে পারি না বায়ন্নোর মত । একাত্তরের মত জ্বলে উঠতে পারি না আর কখনও। এদিকে প্রসেনজিৎ অভিনীত সিনেমার চূড়ান্ত সুটিং এ ব্যাস্ত হল সাংবাদিক ও গণ মাধ্যম কর্মীরা । কার চ্যানেলে সবার আগে ও সবচেয়ে নিঁখূত ভাবে প্রসেনজিতের মৃত্যুর সংবাদ ভিডিও ক্লিপ সহ দেয়া যাবে তারই প্রতিযোগিতা যেন শুরু হয়ে গেল চারিদিকে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.