নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শারমিন আকতার

শারমিন আক্‌তার

জ্ঞান অর্জনের জন্য ছুটে চলা অবিরাম .....

শারমিন আক্‌তার › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ নিমন্ত্রণ

২৭ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:০২

নিমন্ত্রণ

শারমিন আক্‌তার



শহরের সবচেয়ে বড় চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ঝিয়াং-এ যাওয়ার সুযোগ এসেছিল কয়েকদিন আগেই । ফুফাতো ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে। কনে দেখার অনুষ্ঠান । ফুফাতো ভাই তার বউ দেখার জন্য আমাকে সাথে নিয়ে গিয়েছিল । আমাদের ফ্যামিলিতে বলতে গেলে ফুফাতো ভাইটাই সবচেয়ে বেশী শিক্ষিত । আর ওর পর আমিই একমাত্র ছেলে আমাদের গোষ্ঠীজুড়ে, যে এম.এ. পাশ করেছি । সে কারণেই চাকুরী না হলেও আমাদের ফ্যামিলিতে তার পরে পরেই আমার মর্যাদা রয়েছে । আর ঠিক একই কারণে শহুরে হাল-চাল বিশেষ করে ঢাকা শহরের হাল-চাল না বুঝলেও তার সাথে যাওয়ার সুযোগটা পেয়ে গিয়েছিলাম অনায়াসেই । ছোট ফুফুর একমাত্র ছেলে সে। বড় ফুফুর পাঁচ ছেলের মধ্যে অধিকাংশই সাচ্চা কিষাণ । বড় চাচার দুই ছেলে আছে ,তবে তাদের কেউ সে ভাবে পড়াশুনা করে নাই । টেনে টুনে এস.এস.সি. পাশ করার পর একজন বাজারে একটা কাপড়ের দোকান দিয়েছে । আর একজন একটা পাওয়ার টিলার কিনে নিজের জমিতে, পাশাপাশি অন্যের জমিতে চাষ করে আয় রোজগার করে । দুজনেই বিয়ে করেছে । দুজনেরই বউ এত সুন্দর ! চোখে না দেখলে বিশ্বাস করানো যাবেনা ।

আমার ফুফাতো ভাই যার বউ দেখতে গিয়েছিলাম, সে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার । বুয়েট থেকে পাশ করেছে গত বছর । পাশ করার পরে পরেই বিরাট বেতনের চাকুরী পেয়ে গেল । তাই বিয়ের তোর জোরটাও তাড়াতাড়ি । আমার চেয়ে বয়সে ও প্রায় তিন বছরের ছোট । কিন্তু চাকুরী আগে হওয়াই বিয়ের শানাইও বেজে গেল আগে আগেই । আমি তো নিতান্ত এক হতভাগা । তাই শানাইয়ের সূর শুনতে বহু দেরী হবে আমার । তাছাড়া বাংলাদেশে এমনই হয় । কার বয়স কম, কার বেশী এর ভিত্তিতে বিয়ে হয় না । হয় ছেলের আয় রোজগার ভিত্তিতে । যে যত তাড়াতাড়ি ইনকাম করা শুরু করে; তার বিয়ের শানাইও বাজে তত তাড়াতাড়ি । বয়স ষোলই হোক, আর ছত্রিশই হোক; সেটা কোন ফ্যাক্টর নয় । শহরে ছেলেদের দাড়ি মোছ গঁজালে যখন তারা লজ্জায় বাথরুমের দরজা লাগিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে বড় বোনের ফেস ওয়াশ দিয়ে সেভ করে; গ্রামের অনেক ছেলেই তখন শানাই বাজিয়ে হাজার লোকের সামনে বউয়ের সাথে মালা বদল করে । বিয়ের মাধ্যমেই নিজের দাপুটে পৌরুষত্ব্যের জানান দেয় । এখানেও সেই নিয়ম । সে ইনকাম করে । পাশের বাসায় মন্ডলের ধান খেতে পাওয়ার টিলার চালায় । মাছ মেরে বাজারে মাছ বিক্রি করে । অথবা রাস্তার ধারে একটা নিজস্ব পানের দোকান আছে তার ।



যাই হোক এবার নিজের কথায় যাই। নিজের তো আর বিয়ে শাদি হলো না । তাই ফুফাতো ভাইয়ের হবু বউ দেখতে গেলাম। অন্যের বউ দেখে নিজের চোখ জুড়ানোর ব্যার্থ চেষ্টা করলাম। দুধের সাঁধ ঘোলে মেটানো আর কি । সে উদ্দেশ্যে গায়ে জড়ালাম সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট । গলায় ঝুলালাম সাহেবী নীল টাই । ইনকাম না থাকলেও এমন ভাব দেখালাম যেন কোন মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানীর জি. এম. । মুখে সাহেবী গাম্ভীয মেখে ভাবের দোলায় দুলতে দুলতে ছুটলাম ঝিয়াং এর দিকে ।

বেশ দাপুটে ভাব নিয়ে প্রবেশ করলাম ভিতরে । হঠাৎ একজন আংগুল উঁচিয়ে ইশারায় কাছে ডাকতে ডাকতে বলল

-এই ভাই এই দিকে অসুন তো । তাড়াতাড়ি করুন । সবাই এসে পড়লো ।

আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না ।

- কেন আমার সাথে আদেশের সুরে কথা বলছে লোকটা ?

- আমাকে কিই বা তাড়াতাড়ি করতে বলছে ?



আগুন্তক লোকটার কথায় পাত্তা না দিয়ে নিজের ঠাঁট বজায় রেখে যথারীতি আরো ভিতরে ঢুকলাম সাহেবী ভঙিতে । কয়েক কদম এগিয়ে যেতেই ফুফাতো ভাইয়ের সাথে দেখা হয়ে গেল । সেও আমার মতই সার্ট, প্যান্ট পরে গলায় একটা টাই ঝুলিয়েছে । সে আমাকে এক পলক দেখে কেমন যেন ভূত দেখার মত চমকে উঠে বলল

-আপনি এসব কি পরেছেন ভাইজান ?

আমি আমার নিজের ইন করা শার্টের দিকে একবার তাকিয়ে হালকা বিস্ময়ের সাথে প্রশ্ন করলাম

-কেন ? কি হয়েছে ?

সে আমার প্রশ্নের কোন উত্তর দিল না । শুধু আশাহত মানুষের মত চুপসে গিয়ে কি যেন ভেবে বলল

-ভাইজান আপনি একটু বসুন । আমি ভিতর থেকে আসছি ।

সে চলে গেলে অসহায়ের মত একটা টেবিলের এক কোণে বসে পড়লাম । একটু পরেই দেখি আমার মতই সাদা শার্ট, কালো প্যান্ট ও নীল টাই পরা সাহেবী বাবুরা খাবারের ট্রে, প্লেট, পানির বোতল নিয়ে ছুটো ছুটি করছে......।

ওদের দেখে চমকে উঠলাম । একি ওয়েটার কেন এই ড্রেসে ? লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলাম । একবার আড় চোখে রেস্টুরেন্টে আসা ভদ্র লোকগুলোর দিকে তাকালাম । কেউ আমাকে দেখছে না কি না তা জানতে । হ্যাঁ একজন আমার দিকে আবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । আর তার পাশে বসে থাকা আর এক ভদ্র লোক আমার দিকে হাত বাড়িয়ে ডাকছে

-ব্রাদার এদিকে.....।

অন্য দিক থেকে আর একজন বলল

-এই বয় এই দিকে আসো । ঐ ভাবে বসে আছো কেন ?

এমনকি রেস্টুরেন্টের একটা ওয়েটার কাছে এসে বলল

-ভাই এভাবে বাবু হয়ে বসে থাকলে হবে ? হাত লাগান ।

বলেই সে আমার হাতে এক গাদা প্লেট তুলে দিল ।

তারপর এক টুকরো মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল

-ব্রাদার একটু সার্ভ করুন না প্লিজ। মনে হয় আজকে নতুন জয়েন্ট করেছেন ।

আমাকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সে দৌড়ে চলে গেল পাশের টেবিলে তাদের কিছু লাগবে কিনা জানতে.... ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.