নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের\'

যাযাবর জোনাকি

‘আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের’

যাযাবর জোনাকি › বিস্তারিত পোস্টঃ

আষাঢ়ের অন্তরালবর্তী

০৯ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:০৩



তিন রাস্তার মাথায় সাদা রঙের একটা দোতালা বাড়ি, পুরাতন, সাদা চুনকাম খসে পড়েছে, পলেস্তারা খসে পড়েছে, নিচে দুটি বন্ধ শাটার, কোন এককালে নিল রঙ করা ছিল, ক্রমশ জং ধরে তা কমলা হয়ে যাচ্ছে। বাড়িটার সামনের দিক একটু অর্ধ বৃত্তাকার, দোতালায় বড় বড় গরাদ ওয়ালা অনেক গুলি কাঠের জানালা। নিচ থেকে উপরে যাবার একটা প্যাঁচানো লোহার সিড়ি বাড়িটির সামনের দিকে এক কোনায় প্রায় দেখাই যাচ্ছে না। ঝুম আষাঢ়ে বৃষ্টিতে বাড়িটাকে রহস্যময় দেখাচ্ছে।
অর্ধ বৃত্তাকার ঘরটা দেখলেই বোঝায় আগের আমলে সৌখীন বড় বারান্দা, পরবর্তীতে যেটা মেস বাড়ির ঘর করা হয়েছে,ঘরটা গুমোট, দক্ষিনের বড় গরাদওয়ালা জানালা গুলি খোলা থাকলেও পশ্চিমের গুলি বন্ধ। ঘরে তিনটা চৌকি, তিনটা সিট।

যুবক দাঁড়িয়ে আছে বড় গরাদ ওয়ালা এক জানালার সামনে। ঘরের ভেতরে গুমোট গরম, জানালা দিয়ে যুবক তাকিয়ে আছে দূরে ঈশানকোণে , ঘন কালো মেঘে পুরা আকাশ ছেয়ে গেছে, তারপরও মনেহচ্ছে ঈশানকোণ থেকে যেন অদৃশ্য কোন চিমনী দিয়ে বের হয়ে আরো কালো মেঘ এসে জুড়ছে কালো মেঘের আকাশে। যুবক সময় আন্দাজ করার চেষ্টা করছে, পারছেনা। বস্তুত এই জায়গাটাও তার কাছে পুরোপুরিভাবে অপরিচিত। ভেজা ঠাণ্ডা বাতাস যুবকের মুখে হাতে এসে লাগলো, আরাম, আকাশের ঘন কালো মেঘ আস্তে আস্তে ঘনীভূত হয়ে হালকা রুপালী রঙ ধরেছে।থমথমে চারিদিক। গুরুগম্ভীর মেঘনাদে যেন এক মহাস্রাবণের সতর্কবাণী। আবার বৃষ্টি আরম্ভ হল। তুমুল বৃষ্টি, বৃষ্টির শব্দে কিছুক্ষনের মধ্যেই এক ধরনের ঘোরের সৃষ্টি হয়। যুবক বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে একবার চিন্তা করল, সে এখানে কেন, কিভাবে? ইত্যাদি। পরে বৃষ্টির শব্দের ঘোরে সে ক্লান্ত হয়ে ভাবল, হয়তো এই মহাস্রাবণ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সে এখানে আশ্রয় নিয়েছে, অথবা বর্ষা বন্দি হয়েছে। যাইহোক না কেন বিষয়টা তার ভাল লাগছে। শুধু সমস্যা হচ্ছে সময়টা টের পাওয়া যাচ্ছে না,তার হাতে কোন ঘড়িও নেই।

যবুক দীর্ঘক্ষণ ধরে বৃষ্টি দেখছে, কতক্ষণ তা বোঝার উপায় নেই, ঘরে কোন ঘড়ি নেই, ঘরটা অন্ধকার, বাথরুম একপাশে কোথাও , কল লিক করে পানি পরার শব্দ হচ্ছে। বাইরে যাকে বলে কাকপক্ষী কেউ নেই। রাস্তার ওপাশের নর্দামা থেকে পানি উপচে রাস্তা পার হয়ে এপাশের নর্দামাতে পড়ছে, যুবক লক্ষ করলো রাস্তা পার হওয়া পানির স্রোতে রক্তের একটা চিকন রেখা। নর্দামার পানিতে রক্ত ভেসে আসছে। রাস্তার অল্প জমা পানির বুক চিরে, বৃষ্টির তোড় সামলে আস্তে আস্তে একটা রিক্সার আগমন। রিক্সা এসে থামল রাস্তার ওপারে ভুবনভিলা গাছ ওয়ালা একটা বড় লোহার গেটের সামনে, রিক্সাওয়ালা কাক ভেজা, রিক্সা থেকে প্লাস্টিকের পর্দা সরিয়ে নামলো এক তরুণী, পরনে সবুজ শাড়ী, রিক্সা থেকে নেমে গেট পর্যন্ত যেতেই সে পুরাপুরি ভিজে গেল, ভেজা শাড়ী তার শরীরে লেপ্টে গেল, রিক্সাওয়ালা আগের মতই শ্লথগতিতে ঝুম বৃষ্টির মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল,মুগ্ধ নয়নে যুবক এইসব কিছু দেখছে,তার ভাল লাগছে।

বৃষ্টির শব্দে যুবকের নেশা ধরে যাচ্ছে।বাইরের আবছা আলো আধারিত পরিবর্তনহীন পরিবেশ এক ধরনের ভ্রম সৃষ্টি করছে, না সকাল হচ্ছে না রাত বোঝা মুশকিল, একেই বুঝি বলে সময়ের থমকে যাওয়া। ঝুম বৃষ্টি! অবিরাম, ক্ষান্তহীন ঝুম বৃষ্টি। একটা দেশলাই জ্বালানোর শব্দ পয়ে যুবক পেছনে ফিরে তাকাল, একটা জ্বলন্ত সিগারেট দেখা যাচ্ছে,অন্ধকারে পেছনের মানুষটাকে দেখা যাচ্ছে না,শুধু সিগারেট টানার সাথে সাথে লাল আলোয় তার ক্লান্ত চোখ দুটি দেখা যাচ্ছে। লোকটি চেয়ারে বসে আছে।
"কিছু খেয়েছেন? হ্যা আপনাকেই বলছি,খেয়েছেন?"
ভারি গলা ভেসে এল অন্ধকার থেকে। যুবক অবাক হয়ে উত্তর দিল,
"না মানে, না"
" আমার বাম দিকের দেয়ালে সুইচ বোর্ড আছে, কষ্টকরে লাইট জ্বলিয়ে দেখেন ওপাশে টেবিলে খাবার ঢাকা আছে, খেয়ে নিন।"
কথায় তাচ্ছিল্যের সুর। যুবক অনুমানে সুইচ বোর্ডের কাছে গেল, সুইচ বোর্ড কাঠের তার ভেতরে গোল কালো সুইচ অনেক পুরানো। সুইচ নামাতেই টিমটিমে একটা হলুদ বাতি জ্বলে উঠলো।
"এন্ড হি এনলাইটেড দ্যা ওয়ার্ল্ড! "
লোকটি বিড়বিড় করে বলল। সত্যিই বাইরের পরিবেশের প্রেক্ষিতে এই টিমটমে হলুদ আলো যেন নক্ষত্র সম। যুবক লোকটিকে দেখতে পেল, মাঝবয়েসী, ফুল হাতা চেক শার্ট আর জিন্স পরে আছেন। চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, মাঝারী গড়ন, নাকের নিচে একটা পুরু গোঁফ আছে। লোকটি কাঠের হাতল ওয়ালা চেয়ারে আরাম করে বসে আছেন। যুবক একপাশের টেবিলে রাখা খাবারের দিকে এগিয়ে গেল। দুটি মেলামাইনের থালা পাশাপাশি সরপোশ দিয়ে ঢাকা আছে, একটা সিলভারের জাগে পানি পাশে একটা গ্লাস। একটা থালার সরপোশ তুলে সে দেখতে পেল, খাবার অবস্থা তার কল্পনার চেয়ে অনেক ভাল, গরম খিচুড়ি, একটা ইলিশ মাছ ভাজা,ছোট এক টুকরা ইলিশ মাছের ডিম ভাজি, একটা গোল করে কাটা বেগুন ভাজা। যুবক থালাটা হাতে তুলে নিতে নিতে আস্তে লোকটাকে জিজ্ঞেস করল
"আপনি....?"
"আমি খেয়েছি।ওটা আরেক জনের।"
"প্রতিদিন কি খাবার এইরকম দেয়?"
"না মনেহয়, আজ আবহাওয়ার সাথে মিল করে...আরকি।"
যুবক থালা হাতে নিয়ে বিছানার অপরে পা ভাজ করে বসে তৃপ্তি সহকারে খেতে শুরু করল,লোকটি সামেন টিপয়ে রাখা আশট্রেতে ছাই ফেলে একটা পত্রিকা হাতে তুলে নিলেন। যুবক আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
"আজকের নাকি,তারিখটা বলবেন?"
"নাহ, এটা আজকের না,অনেক পুরাণ ১৯৮৭!"
"বলেন কি? এত দেখি পাব্লিক লাইব্রেরি! আজকের তারিখ টা..."
"তা আমি কেমন করে বলবো? আপনি যে ঘরে আমিও সে ঘরে..পত্রিকা বলছে ৩১শে মে রবিবার ১৯৮৭!"
" তাহলে বললেন যে পুরাণ?"
"কাগজের হাল দেখে বলেছি মাহামান্য আদালত!"
লোকটির তাচ্ছিল্য ভরা উত্তরে যুবক খাবার দিকে মন দিলো। খাওয়া শেষ করে যুবক হাত চাটতে আরম্ভ করল,অনেক সুস্বাদু খাবার।
"খাওয়া হয়ে গেলে থালাটা ওই টেবিলের এককোনায় অন্য এঁটো থালার সাথে রেখে দিবেন, হাত ধোয়ার জন্য, ঐ যে ঐখানে বাথরুম আছে, লাইট নষ্ট সাবধানে যাবেন।"
যুবক লোকটির কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করল। সবশেষে যুবক আবার বৃষ্টি দেখাতে মন দিল।
"তা কি করেন আপনি?"
যুবক বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থেকেই উত্তর দিল।
"ছাত্র ছিলাম"
"ছিলাম মানে?"
" ছিলাম মানে ছিলাম, এখন নেই।"
"এখন কি করেন?"
"দেখতেই তো পাচ্ছেন "
লোকটি শরীর দুলিয়ে উচ্চস্বরে হেসে উঠে বললেন,
"মনে কিছু নিয়েন না, চলবে? " বলে সে একটা সিগারেট আগিয়ে দিল।
"না ধন্যবাদ, আমি খাই না। "
"বেশতো!" বলে লোকটি নিজেই সিগারেটটা ধরিয়ে একটা আয়েশি টান দিলেন।
"ড্রেনের পানি দেখেছেন?"
"কেন বলেন তো?"
"পরশু যে শ্রমিক হরতালে পুলিশ গুলি করেছে জানেন?"
"না,কোথায়?"
"কোথায় আবার শিল্পনগরিতে, পুলিশসহ ৩৪ জন স্পোট ডেড!"
"তার সাথে ড্রেনের পানির সম্পর্ক কি?"
"এই আপনারা হলেন স্পাইনলেস নাগরিক, সব বুঝেও না বুঝার ভান করেন, ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে শহরে কার্ফু চলছে, আন্দোলনকারি দের দেখা মাত্র গুলি করছে পুলিশ,একের পর এক কারখানায় আগুন দিচ্ছে শ্রমিকরা, এই শ্রমিক আন্দোলনে বিদেশি কোম্পানি গুলি নড়ে বসেছে, সরকার সামাল দিতে না পারলে, শীঘ্রই পতন নিশ্চিত, অনেক বিদেশি কোম্পানি বন্ধ হয়েছে এই দুই দিনে। ড্রেনে যে রক্ত আপনি দেখেননি? "
"আপনি কি করেন বলেন তো?"
"আমি, একটা কোম্পানিতে চাকরি করতাম, শ্রমিকরা বন্ধ করে দিয়েছে।"
"ও আচ্ছা! কেন এই আন্দোলন?"
"ঐ গরিবের বাচ্চাদের আবার কেন লাগে? মগেরমুল্লুক না! "
"আপনি এভাবে বলছেন কেন?"
" তো কিভাবে বলব?তাদের ক্ষতিপূরণ, বেতন বাড়ান সব চাই। নাও চাকরি, কোম্পানি সব ভোগে! এখন হয় গুলি খেয়ে মর, না হয় খায়ে মর!"
"ঘটনা কি ঘটেছিল?"
"কেন পত্রিকায় পড়েন নি? আমাদের কারখানার দুইটা কারখানা পরেই একটা সোয়েটার ফ্যাক্টরি, দিনে প্রায় ৮০০ শ্রমিক কাজ করে।একদিন কি একটা মেশিন নষ্ট হল, সুপারভাইজার মারধর করল এক শ্রমিক কে,পরদিন পাল্টা আন্দোলনের মুখে মার খেল সুপারভাইজার। এর কিছুদিন পরে ফ্যাক্টরির সাত তালায় আগুন ধরলে সবাই বের হয়ে গেল, কিন্তু আট তালাতে ঐ সুপারভাইজার কাওকে বের হতে না দিয়ে বাইরে থেকে তালাচাবি মেরে প্রায় ১২৩জন শ্রমিক কে আটকে রাখল, আগুন যখন আটতলাতে তখন অনেকেই জানালার গ্রিল ভেঙে আট তলা থাকে লাফ দিল, আগুনে পুরে মারা গেল ১০৯ জন! পরদিন সুপারভাইজারে লাশ মিলল শহরের এক হোটেলে, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আন্দোলন করল, ক্ষতিপূরণ দাবি করল, কোম্পানি কিছু শ্রমিক ছাটাই করল, তারপর দিন রাতে ঐ ফ্যাক্টরিতে আগুন দিল শ্রমিকেরা, পরদিন থেকে হরতাল, ঐদিনও অনেকে চেষ্টা করল পাশাপাশি ঐ কোম্পানির আরও তিনটি ফ্যাক্টরিতে আগুন দেবার,পুলিশ আর শ্রমিকের মধ্যে মারামারি হল,পুলিশের হাত থেকে বন্দুক নিয়ে পুলিশ হত্যা করল শ্রমিকেরা, পুলিশও নির্বিচার গুলি করে শ্রমিক হত্যা করল, তারপর এইতো চলছে কার্ফু! "
"এত কিছু হয়ে গেল, কোন খবরও পেলাম না!"
বাইরে বৃষ্টি আগের মতোই হচ্ছে, কোন কম বেশী নেই, অবিরাম একই গতিতে, মেঘলা আকাশের ঘনঘটা কাটেনি। যুবক এবং লোকটি দুজনেই চুপ করে বসে বাইরের বৃষ্টি দেখছে, তারা যেন অসহায় দর্শক।
"বাতিটা নিভিয়ে দিন।"
যুবক যেন ধ্যানমগ্ন কন্ঠে বলল।

কিছুক্ষণ পর প্রায় সাপের মত নিঃশব্দে ঘরে প্রবেশ করলো এক বৃদ্ধ, বয়েস কত, এই ৬০ বছর হবে।হাতের কালো ছাতাটা ভাজকরে দরজার সাথে ঝুলিয়ে দিয়ে বিছানায় বসতে বসতে গায়ের পাঞ্জাবি খুলে পাশে রাখল।
"মানে ফার্মেসি টা বন্ধ,ডাক্তার, ঔষধ কোনটায় নেই! কাল থেকে পেশাব টা ক্লিয়ার হচ্ছে না,এদিকে আবার এই বৃষ্টি! কি যে করি। "
যুবক লক্ষ করল বৃদ্ধর পা দুটি অসম্ভব ফোলা, তাতে কালো ছোপ ছোপ দাগ। বেশ কয়েকবার ঢেকুর তোলার মত করল।
"খাবার ঢাকা আছে খেয়ে নিন।"
"নাহ এই অবস্থায় খেয়ে শান্তি হবে না, পেশাবটা না হলে....।"
বৃদ্ধ এবং লোকটির কথা শেষ হলে, বৃদ্ধ শুয়ে পড়লো।

মহাস্রাবনের কোন পরিবর্তন নেই।অনেকক্ষণ ধরে যুবক খেয়াল করছে বৃদ্ধ বার বার উঠছেন আর শুচ্ছেন। এক ধরনের অসস্থি কাজ করছে তার সারা শরীর জুড়ে। লোকটি চেয়ারে বসেই ঘুমাচ্ছেন।
"খুব বেশি খারাপ লাগছে? "
"না মানে পেশাব টা না হলে..."
"বাথরুমে বসে ট্যাপ কল ছেড়ে একবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন, কাজ হতে পারে।"
"বলছেন যখন চেষ্টা করে দেখি একবার।"
বৃদ্ধ আস্তে আস্তে বাথরুমের দিকে এগুলেন, যুবক বৃষ্টি দেখতে আরম্ভ করল আবার। বাথরুমের ভেতর থেকে ট্যাপের পানির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। যুবক একমনে বৃষ্টি দেখছে, বাইরের বাতাবরণ পরিবর্তন হয়নি। কিছুক্ষণ পর বৃদ্ধ বের হয়ে এল তাকে বেশ প্রসন্ন দেখাচ্ছে, দরজার উপরের নেড়ে দেয়া গামছা দিয়ে হাতমুখ মুছে নিজের খাটে খাবার থালা নিয়ে বসল। আগের চেয়ে আরও চকচকে মূখে সে খাবার খাচ্ছে আর গল্প করছে এখন।
"আপনার পদ্ধতি কাজে লেগেছে, কি বলে যে ধন্যবাদ দিব! আমার দুটো কিডনি প্রায় ড্যামেজ ভাল বিদেশী ডিগ্রিধারী ডাক্তার দেখালাম, বলল ঔষধ পত্রে লাভ হবে না বড়জোর এক বছর! কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করতে পারলে ভাল,মেলা টাকার ব্যাপার, কাছেপিঠের কোন আত্মীয় নেই যে ডনেট করবে, কিছুদিন ডাইলেসিস করেছি, সব টাকা শেষ। পরে না পেরে গেলাম এক হমিও ডাক্তারের কাছে, সত্যি কথা বলি আমার ঐ হমিওতে অত বিশ্বাস নাই, কিন্তু আশ্চর্য ঔষধ বাবা! খাবার সাথে সাথে শরীরের সব পানি নেমে গেল! অস্বীকার করব না এলোপ্যাথি ঔষধও খাচ্ছি পাশাপাশি। জীবন বড়ই মায়াময়। "
বৃদ্ধ খাবার থালে হাত ধুয়ে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর বৃদ্ধের নাক ডাকার আওয়াজ পাওয়া গেল।

যুবক বৃষ্টি দেখছে এখনও। বাইরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু রাস্তা ডুবেনি। যে পরিমাণ বৃষ্টি তাতে হাটু পানি ছাড়িয়ে কোমর পানি হয়ে যাওয়ার কথা। যুবকের চোখের পাতা ভারি হয়ে আসছে, বৃষ্টির ছন্দে বন্দি যুবকের চেতনা একসময় অসাড় হয়ে আসে, যুবক গভীর এক শুন্যতা অনুভব করে মাথায়, বৃষ্টির ঠাণ্ডা বাতাসে যুবক নিজেকে আত্মসমর্পণ করে ঘুমের দেবীর কাছে।

তীব্র শীতে যুবকের গা কেপে ঘুম ভাঙলে সে চারিদিকে তাকিয়ে দেখে বাতাবরণ পাল্টে গেছে, কোন এক শহরের উঁচু অট্টালিকার চিলেকোঠায় একটা বিছানায় নিজেকে আবিষ্কার করল সে,গায়ে একটা পাতলা লেপ। বিছানার পাশে কাচের জানালা দিয়ে পাশের ছাদটা দেখা যাচ্ছে, পরিষ্কার পূর্নিমা। জোছনার বন্যায় পুরা ছাদ ভেসে যাচ্ছে। শীতের রাত,পিন পতন নীরবতা,যুবক শুনতে পেল দূর থেকে ভেসে আসছে সুর করে পড়া ওয়াজ মাহফিলের শব্দ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৪৭

প্রামানিক বলেছেন: গল্প পড়ে ভালো লাগল। ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.