নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের\'

যাযাবর জোনাকি

‘আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের’

যাযাবর জোনাকি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মৃত্যু কে সহজভাবে মেনে নিতে শেখা

২৫ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১১:৫২

[নিজেস্ব উপলব্ধি]

"মৃত্যুরে কে মনে রাখে ?… কীর্তিনাশা খুঁড়ে খুঁড়ে চলে বারো মাস
নতুন ডাঙার দিকে – পিছনের অবিরল মৃত চর বিনা
দিন তার কেটে যায় – শুকতারা নিভে গেলে কাঁদে কি আকাশ ?"
-জীবনানন্দ দাশ

যার জীবন আছে তার মৃত্যুও আছে। এই কথাটা আমরা সবাই জানি।এইটাই প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম। জীব তো বটেই, যেকোনো মানুষ যেকোনভাবে যেকোনো সময় মারা যেতে পারে। এইটা বড় একধরনের অনিশ্চয়তা। এইটাও আমরা সবাই জানি, সবাই মানি। সমস্যা বাধে যখন এই বিশাল ভারি সত্যটা উপলব্ধি করতে হয়, হজম করতে হয়, বসে ঠাণ্ডা মাথায়এই নিয়ে চিন্তা করতে হয়।
প্রকৃতিতে মানুষ থেকে শুরু করে কিছু বুদ্ধিমান প্রাণিসহ সকলেরই অজানা কে জানার একটা অভিপ্রায় রয়েছে। মানব সভ্যতার প্রায় ঊষা লগ্ন থেকেই মৃত্যু কে ঘিরে মানুষের নানাবিধ জল্পনাকল্পনা, জানার চেষ্টা। এই বিষয়ে বহু তত্ত্বকথা প্রচলিত আছে, বস্তুত দর্শন, সাহিত্য, ধর্ম এবং বিজ্ঞানের মুখোরচক বিষয় হচ্ছে এই মৃত্যু। মৃত্যুর পরে কেউ বলে পুনর্জন্মের কথা, কেউ বলে অনন্ত জীবনের কথা, কেউ বলে ভৌত পরিবর্তনের কথা।

মৃত্যু কি বা মৃত্যুর পরের জীবন কেমন? এই প্রশ্নের উত্তর যেমন সবাই জানতে চায়, ঠিক তেমনি মৃত্যুকে ভয় পায় প্রাণিকুলের সকলেই। অজানা কে জানার অভিপ্রায়ে ভাটা পড়ে এখানে, কেউই মরতে চায় না। হয়তো জীবের জীবনের মূখ্য উদ্দেশ্য জীবনকে ধারণ করা তাই প্রাকৃতিকভাবে এই ভয় জীবের মধ্যে ঠুকে দেয়া আছে,আর এই ভয় কে ভুলে থেকে জীবন ধারণ করার জন্য মৃত্যুর ক্ষণে এত বড় অনিশ্চয়তা। এই সবই তত্ত্বকথা।

বলা হয় এটা বিজ্ঞানের যুগ। ছোটবেলা বিজ্ঞান বইয়ে পড়েছি বিজ্ঞানের জয়যাত্রা, ভয়ঙ্কর 'টিটুফাজ ভাইরাস' ক্ষতস্থানে আক্রমণের ফলে সৃষ্টি হয় ক্যান্সার নামক মরণ ব্যাধির, এই ব্যাধির চিকিৎসা আবিষ্কার হয়েছে। এখন একমাত্র মরণ ব্যাধির নাম এইডস, এইচ আই ভি নামক ভাইরাস থেকে এই রোগ হয়,এর কোন চিকিৎসা বর্ত্তমান বিশ্বে নাই, এর একমাত্র পরিণতি মৃত্যু। মনেমনে ভাবতাম ক্যান্সারের যখন চিকিৎসা আছে,তখন বুঝি সবরকম রোগের চিকিৎসাই আছে। শুধুমাত্র এইডস এর চিকিৎসা নাই। বড় হয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি , ছোটবেলার বিজ্ঞান অনেকাংশই ভুল। সবধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসা হয় না, ব্যাপারগুলি আসলে অনেক জটিল। এছাড়া আরও কিছু জন্মগত, কিছু জিনগত, কিছু অজানা কারনবশত রোগ আছে যেগুলির কোন চিকিৎসা বর্ত্তমান বিশ্বে নেই। এগুলির বেশি ভাগের পরিণতি মৃত্যু।

কিছুদিন আগে দেখি সামাজিক গণমাধ্যমে একজন জনপ্রিয় ব্যাক্তির অসুস্থতা নিয়ে বিশাল হল্লা। ডাক্তার বলছে সবকিছু মিলিয়ে তার শারীরিক অবস্থা জটিল, তেমন কিছু আর করার নেই। একদলের মনভাব যত টাকাই লাগুক তার চিকিৎসা করতে হবে,দরকার হলে দেশের বাইরে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। এইসময় একজন ডাক্তার খুব সুন্দর করে ঐ ব্যাক্তির শারীরিক অবস্থা এবং করনীয় কি তা লিখেছিলেন,যার সারাংশ হল : আমাদের মৃত্যু কে সহজভাবে নিতে হবে।

আমাদের সমাজে বেশীরভাগ লোক মনেকরেন (বিশেষ করে শিক্ষিত লোকজন ) বর্ত্তমান যুগে এমন কোন রোগ নেই যার চিকিৎসা হয় না। টাকা থাকলেই চিকিৎসা আছে, দেশে না হলে বাইরের বিশ্বে আছে। ধারণাটা যে ভুল তা আগেই বলেছি।
তাহলে এখন, যখন একজন ব্যাক্তি ডাক্তারের কাছে শুনবেন যে, তেমন কিছুই আর করার নেই। বা তার অসুস্থতার পরিণতি মৃত্যু, তখন তার করনীয় কি? এইরকম বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ডাক্তাররা রোগীর চিকিৎসা করতে চান না বা শুধুমাত্র অসুখ ব্যাবস্থাপনা ছাড়া আর কিছু করতে পারেননা। আসলে যুক্তি দিয়ে বিচার করলে এর বেশি আর কি বা করতে পারেন তাঁরা? এক্ষেত্রে বেশীরভাগ রোগীরা নানাবিধ শারীরিক যন্ত্রণায় ভোগেন, এর সাথে যুক্ত হয় একটা ভয়, মৃত্যু ভয়। কারন তখন তাদের জীবন থেকে চলে যায় একটা বিশাল অনিশ্চয়তা। শুরু হয় মানুষিক যন্ত্রণা, অনিদ্রা, হতাশা। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত জীবনটুকু অসহনীয় হয়ে ওঠে। সব প্রাণির মত তারাও বাঁচতে চায়, মৃত্যুর এই অগ্রিম যন্ত্রণার তাড়নায় তারা বিভিন্ন অপূর্ণাঙ্গ,অস্বাস্থ্যকর ও অপকারী (কিন্তু বাঁচার আশাজাগানিয়া) পন্থা অবলম্বন করে।

আসলে কি কিছুই করার নেই? আছে, আমি মনেকরি আছে। আর সেটা হল মৃত্যু কে সহজ ভাবে মেনে নেয়া বা মেনে নিতে শেখা। এই দায়িত্ব সমাজের, সমাজের দায়িত্ব মৃত্যু পথযাত্রীর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানসিক স্বাস্থ্যর দিকে খেয়াল রাখা,রোগী কে মৃত্যুর মত ব্যাপারটাকে সহজ ভাবে মেনে নিতে শেখান। আমার মতে এই ধরনের রোগীদের জন্য বিশেষ ভাবে কাউন্সেলিংয়ের ব্যাবস্থা থাকা উচিৎ যা অসুখ ব্যাবস্থাপনা পরিকল্পনার অন্তর্গত হবে। এই বিশেষ কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে রোগী শিখবে কিভাবে মৃত্যুকে সহজভাবে মেনে নিতে হয়, এর মাধ্যমে রোগীর মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে, মানসিক যন্ত্রণা থেকে তারা অনেকাংশ মুক্তি পাবে বলে আমি মনে করি। কাউন্সিলিং সফল হলে রোগী বিভিন্ন অপূর্ণাঙ্গ, অস্বাস্থ্যকর ও অপকারী পন্থা অবলম্বন করা থেকে বিরত থাকবে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১২:১৯

চাঁদগাজী বলেছেন:



মৃ্ত্যুকে আপনি সহজভাবে নেয়ার পর, আপনার পদ্ধতি আমাদেরকে জানাবেন।

২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:১১

যাযাবর জোনাকি বলেছেন: আমার ক্ষেত্রে ধর্মীয় কাউন্সেলিং অনেক কাজে দিয়েছে।

২| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:১৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


ঠিক আছে; কাজ দিলেই হলো

৩| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:৩২

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: এক সময়ে জয় করতে পারলেও এখন কিন্তু দূর্বল, বাধ্য হয়েই।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.