নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের\'

যাযাবর জোনাকি

‘আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের’

যাযাবর জোনাকি › বিস্তারিত পোস্টঃ

মীমদের জন্যে

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:৫৩


উৎসর্গ
ফাতিহা তাসাব্বুর ঊর্জ্জা
কে

এই বাড়িতে আমাকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসে মীম। সেই আমি যখন অনেক ছোট, শুধু চিৎকার করে কাঁদি, তখন বাবা আমাকে নিয়ে এসে মীমের কোলে তুলে দিয়েছিল। মীম আমাকে গোসল করিয়ে দিত, চিরুনি করে দিত। ছোটবেলায় শক্ত খাবার খেতে পারতাম না, মীম ছোট বোতলে দুধ নিয়ে আমাকে খাওয়াত।সারাদিন আমি আর মীম কত যে খেলা খেলতাম, দুপুরবেলা মীম আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমাতো,ও ঘুমিয়ে গেলে আমি আস্তে করে উঠে পালিয়ে যেতাম । সন্ধ্যাবেলা মা'র হাজার বকাবকি করা স্বত্বেও মীম আমাকে কোলে নিয়েই পড়তে বসতো, নিজে পড়ে পড়ে আমাকে পড়াতো।

বাবা আমাকে অনেক আদর না করলেও ভালবাসতেন, তিনি খবরেরকাগজ পড়ার সময় আমি খবরেরকাগজ নিয়ে খেলতাম, বাবা কোনদিন বকা দেননি, মারেননি, শুধু গলাদিয়ে ভারি আওয়াজ করতেন "ঊহ!" ব্যাস। মা সারাদিন বকাবকি করতেন, মীমকেও, আমাকেও। কাজের সময় রান্নাঘরে গেলেই, লাঠি নিয়ে তাড়া করতেন আবার এটা ওটা আদর করে খেতেও দিতেন।খুব শীতের সময় মার পাশে রান্নাঘরে বসে থাকতাম, চুলার তাপে গরম হতাম আমি আর ছোট বাবু, মা মাঝেমাঝে পরম স্নেহে গায়ে হাত বুলিয়ে দিতেন। ছোটবাবু একটা ভীতুর ডিম। সবকিছু দেখেই তার ভয়, টিকটিকি দেখে ভয়, মেঘেরডাকে ভয়, মাছের কাঁটাতে ভয়। ছোটবাবু বেশী কাঁটাওয়ালা মাছ ভয়েই খেতে পারতো না, গোটা মাছ এঁটো করে, মায়ের চোখের আড়ালে আমাকে দিয়ে দিত।

এইবাড়িতে আরও একজন আছেন তিনি বুড়ো দাদু। দোতলার ঘরে থাকেন। সারাদিন বারান্দায় বসে থাকেন। সকালে আর বিকালে তাঁর কাছে গেলে নোনতা বিশকুট পাওয়া যায়। আমি, মীম, ছোটবাবু তো প্রায়ই বিশকুট খেতে দাদুর কাছে যেতাম। দাদু মীম কে খুব আদর করেন। বিশকুটের কৌটায় হাত দেবার অধিকার একমাত্র মীমের আছে আর কারও নেই। আমি প্রায় দুপুরবেলা সেই নোনতা বিশকুটের কৌটা খোলার চেষ্টা করতাম, শব্দ পেয়ে দাদু লাঠি নিয়ে তাড়া করতো, আমি এক দৌড়ে নিচে পালিয়ে আসতাম।

একদিন হাঠাৎ কি যে হয়ে গেল। সেদিন বাড়ির সবাই বেড়াতে গেল, আমি আর দাদু বাসায় থাকলাম। মীমের বাটিভরতি করে দুধ ঢালা দেখে আগেই বুঝতে পেরেছিলাম ওদের ফিরতে অনেক দেরী হবে। আমি প্রতিদিনের মত ওইদিনেও বিকালবেলা ঘুম থেকে উঠে একটু দুধ খেয়ে একা একা খেলতে গেলাম বাড়ির পেছনের বাগানটায়। একটা প্রজাপতির পিছু নিলাম, নাচতে নাচতে সেটা গিয়ে বসলো গোলাপের ঝোপে। গোলাপের ঝোপের কাছাকাছি যেতেই দেখতে পেলাম, ঝোপের নিচে সবুজ, চকচকে,লম্বা কি একটা নড়ছে। আমি খুব সাবধানে, আস্তে আস্তে ওটার একটু কাছে গেলাম।ওটা যেন কোনকিছু টের না পায় এমন ভাবে আরেকটু কাছে গিয়ে দিলাম এক লাফ, একেবারে জিনিষটার ওপর গিয়ে পড়লাম, দু হাতে ভালমত জাপটে ধরলাম জিনিষটাকে,ওটা কি পিচ্ছিল! সাথে সাথে হাত থেকে পিছলে বের হয়ে গেল, আর মূহুর্তের মধ্যেই আমার পায়ে কি একটা ফুটলো, মনেহল সাথেসাথে পুড়ে গেল।এদিকে চোখের নিমিষে জিনিষটা হাওয়া হয়ে গেল। আমি ভয়ে এক দৌড়ে বাড়ির ভেতরে পালিয়ে আসলাম।

আমার সারা শরীর জ্বলা করতে শুরু করলো, গলা শুকিয়ে আসতে লাগলো। কলতলাতে গেলাম, পানি খেয়ে শান্তি পেলাম না। দৌড় দিয়ে গেলাম দুধের বাটির কাছে, ততক্ষণে মাথার ভেতর ভোঁ ভোঁ করতে শুরু করেছে, জোড়ে করে মীমকে ডাকতে চেষ্টা করলাম, গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছিলো না। একটু দুধ খেতে চেষ্টা করলাম, গলার কাছে আটকে গেল, দুধের বাটিটাও উল্টে পড়ে গেল।

আমার মাথা ঘুরতে লাগলো,থেকে থেকে সব কিছু আবছা হয়ে যাচ্ছিল, এবার দৌড় দিয়ে গেলাম দোতালার বারান্দায়, দাদুর পায়ের কাছে গিয়ে ঠান্ডা মেঝেতে গড়াগড়ি দিলাম, কোন লাভ হল না, জ্বালা আরও বেড়ে গেল, দাদুকে ডাকতে চেষ্টা করলাম, মুখ দিয়ে ফেনা বের হতে লাগলো, দাদু লাঠি দিয়ে তাড়া দিলো। আমি এক দৌড়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তায় গেলাম। ততক্ষণে সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেছে। শুধু টের পেলাম মাথার ওপর গরম পানি পড়ছে, পাশে থেকে কে যেন বলছে "মরা বিলাইয়ের মাথায় পেচ্ছাপ করলে বিলাই আবার জ্যাতা হয়ে যায়, দেখপি? বিলাইয়ের জান বাবা !" তারপর আর কিছুই মনে নেই।

আজকাল মীমের মন খুব খারাপ থাকে।এখনো সন্ধ্যাবেলা কারেন্ট চলে গেলে মীম একা একা ছাদে আসে, একমনে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে, লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদে, ওর চোখের পানি কেউ দেখতে পায় না। আমি কিন্তু ঠিকই দেখতে পাই,সব দেখতে পাই, সবকিছু।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:০৭

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: গল্প না সত্যি ঘটনার অংশ ?

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:৩৩

যাযাবর জোনাকি বলেছেন: গল্প, তবে কাছাকাছি ঘটনা অনেক আছে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.