নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের\'

যাযাবর জোনাকি

‘আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের’

যাযাবর জোনাকি › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুফরি কালাম

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:৪৩



মাঝ রাত্রি। ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমেছে কিছুক্ষণ হল, কুসুম দীঘি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় আশ্রয় নিয়েছে ডাল মিঞা। বারান্দায় দাঁড়িয়েই প্রথমে ফটফট শব্দ করে ভালভাবে গা ঝাড়া দিয়ে নিল সে। তারপর মুখ দিয়ে গোঁ..ধরনের একটা অলস শব্দ করে গা টানা দিয়ে বসে সামনের পা দুটিতে থুতনি গুঁজে চোখ পিটপিট করতে থাকলো।
গ্রামের নাম কুসুম দীঘি।এই গ্রামে কুসুম নামে বিশাল এক দীঘি আছে।ডাল মিঞা এই গ্রামের সবচেয়ে প্রবীণ কুকুরগুলিদের মধ্যে একটি, ডাল মিঞা কে গ্রামে সবাই চেনে। অন্য কুকুরদের থেকে সাহসী এবং শক্তিশালী হওয়ায় দুই সমাজেই তার কদর অনেক বেশী। এছাড়াও ডাল মিঞার দুটি বিশেষত্ব আছে। ওর গায়ের রঙ অনেকটা মেছো বাঘের মত, যা সাধারণত কুকুরদের ক্ষেত্রে বিরল, আর ওর চোখের রঙ নীল।
ডাল মিঞা স্কুলের লম্বা বারান্দার ঠিক মধ্যখানে বসে আছে। একটু পরে বৃষ্টি আরও জোরে নামলো। হঠাৎ করে ডাল মিঞার বাম দিকে বারান্দার শেষ মাথার জংলাটায় কিছু একটা খসখস শব্দ করে উঠল। ডাল মিঞা সতর্কতার সাথে দুই কান খাড়া করে সে দিকে তাকিয়ে গড়গড় শব্দ করতে লাগলো । শত্রু তার চেনা। ডাল মিঞার ঘাড়ের লোম খাড়া হয়ে গেল,সে উঠে দাঁড়ালো, একমাত্র এই শত্রুকেই তার ভয়। জংলা ঝোপের ভেতর থেকে একটা চাপা গোঙানির মত আওয়াজ আসছে। ডাল মিঞা দুবার ঘেউঘেউ করে একটু পেছনে সরে গেল। জংলার ভেতর থেকে হিংস্র গর্জনের মত শব্দ ভেসে এল সাথে একটা গোটা ইট এসে পড়লো ডাল মিঞার পায়ের কাছে। ডাল মিঞা লেজ গুটিয়ে দৌড় দিয়ে দাঁড়ালো বারান্দার অপর প্রান্তে।জংলার দিকে তাকিয়ে একটানা ঘেউঘেউ করতে থাকলো। জংলার ভেতর থেকে হাঁচড়ে পাচড়ে চার হাত পায়ে ভর দিয়ে বারান্দায় উঠলো ছোটখাটো একটা মানুষের অবয়ব। হাতের লাঠি, ঝোলা নামিয়ে রাখল মেঝেতে। তারপর সামনে দুইপা ছড়িয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসলো সে। ডাল মিঞা ঘেউঘেউ করা আরও বাড়িয়ে দিল।
ডাল মিঞা স্কুলের লম্বা বারান্দার ঠিক মধ্যখানে বসে আছে। একটু পরে বৃষ্টি আরও জোরে নামলো। হঠাৎ করে ডাল মিঞার বাম দিকে বারান্দার শেষ মাথার জংলাটায় কিছু একটা খসখস শব্দ করে উঠল। ডাল মিঞা সতর্কতার সাথে দুই কান খাড়া করে সে দিকে তাকিয়ে গড়গড় শব্দ করতে লাগলো । শত্রু তার চেনা। ডাল মিঞার ঘাড়ের লোম খাড়া হয়ে গেল,সে উঠে দাঁড়ালো, একমাত্র এই শত্রুকেই তার ভয়। জংলা ঝোপের ভেতর থেকে একটা চাপা গোঙানির মত আওয়াজ আসছে। ডাল মিঞা দুবার ঘেউঘেউ করে একটু পেছনে সরে গেল। জংলার ভেতর থেকে হিংস্র গর্জনের মত শব্দ ভেসে এল সাথে একটা গোটা ইট এসে পড়লো ডাল মিঞার পায়ের কাছে। ডাল মিঞা লেজ গুটিয়ে দৌড় দিয়ে দাঁড়ালো বারান্দার অপর প্রান্তে।জংলার দিকে তাকিয়ে একটানা ঘেউঘেউ করতে থাকলো। জংলার ভেতর থেকে হাঁচড়ে পাচড়ে চার হাত পায়ে ভর দিয়ে বারান্দায় উঠলো ছোটখাটো একটা মানুষের অবয়ব। হাতের লাঠি, ঝোলা নামিয়ে রাখল মেঝেতে। তারপর সামনে দুইপা ছড়িয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসলো সে। ডাল মিঞা ঘেউঘেউ করা আরও বাড়িয়ে দিল।
টানা একঘণ্টা ঝুম বৃষ্টির পর আস্তে আস্তে বৃষ্টি ধরে এল। ডাল মিঞা বারান্দার এক কোনে সতর্কতার সাথে বসে আছে।বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করছে যেন। আর ফুকনি বুড়ি দম টেনে টেনে কাশছে। থেকে থেকে গলা দিয়ে অদ্ভুত আওয়াজ বের করছে। মাঝেমাঝে নাকি সুর করে কাঁদছে। ব্যাথায় কোঁকাচ্ছে। ক্ষানিক বাদে বৃষ্টি কিছুটা থেমে দুই এক ফোটা করে পড়ছে, সুযোগ বুঝে ডাল মিঞা বারান্দা থেকে নেমে ঘেউঘেউ করতে করতে ঝেড়ে দৌড় লাগাল। ফুকনি বুড়ি ব্যাপারটা উপভোগ করে খিকখিক করে হেসে উঠল,হাসি থামল একটা দমকা কাশি দিয়ে।
শেষ রাতের দিকে বৃষ্টি থেমে গেল আর উথাল পাথাল দমকা হাওয়ায় আকাশের মেঘ পরিষ্কার হয়ে গেল। চাঁদনী আলোয় চারপাশ দিনের মত ঝলমল করতে লাগলো। চাঁদের আলো এসে ঠাঁই নিলো ইশকুলের বারান্দায়। ফুকনি বুড়ীর ছায়া মাঝেতে প্রতীয়মান হল।
"হারামজাদী মাগী, ডাইনী তুই আবার আইছোস! আর কত জ্বালাবি রে মাগী, তর কথা কমে না? এই রাইত বিরাইতে তর এত কিয়ের কথা? শয়তানের বান্দি তর মরণ নাই? আবার হাসি? যাহ ভাগ! আমার কথা কইতে কষ্ট লাগেনা! আমারে খুবালাইয়া খা মাগী!"একটানা কথাগুলি বলে কিছুক্ষনের জন্য দম নিল ফুকনি বুড়ী।তারপর অনবরত কথা বলে যেতে থাকলো তার ছায়ার সাথে।
ভোর হতে আর ঘন্টা খানেক, রতন তার গা থেকে চাদর খুলে উঠে বসলো। তারপর একটা হাই তুলে হাতের টর্চলাইটা জ্বালালো, চাঁদের আলো দেখে সেটা আবার বন্ধ করে দিলো, দাঁড়িয়ে চাদরটা ঝাড়া দিয়ে ভাঁজ করল।দোকানের ছাউনি থেকে বের হয়ে এসে সে তার লাঠিটা বগলদাবা করে একটা বিড়ি ধরাল, তারপর বিড়ি টানতে টানতে ইশকুলের দিকে হাঁটা দিল।
রতন ইশকুলের নাইটগার্ড।সে এই গ্রামের লোক না।হারামী নাম্বার ওয়ান। সহজে ওর সাথে কেউ লাগতে যায় না। রাতে জুয়া খেলে ফেরার পথে বৃষ্টি তে আটকা পড়েছিল সে, তাই এই দোকানের ছাউনিতে ঘুম দিয়েছিল। এখন ডিউটির শেষ রাউন্ডটা দিতে যাচ্ছে। ইশকুলের কাছাকাছি যেতেই তার কানে ভেসে এল একটা কর্কশ গলার গান আর সেই তালে হাত তালির আওয়াজ,
"জ্ঞানোবা মাওলী, জ্ঞানোবা মাওলী
জ্ঞানোবা মাওলীই,তুকাড়া
জ্ঞানোবা মাওলী, জ্ঞানোবা মাওলী
জ্ঞানোবা মাওলী, জ্ঞানোবা মাওলী
জ্ঞানোবা মাওলী ই, তুকাড়া
জ্ঞানোবা মাওলী, জ্ঞানোবা মাওলী
জ্ঞানোবা মাওলীতুকাড়া..... "
ইশকুলের বারান্দায় উঠে রতন ফুকনি বুড়ী কে একা দেখে একটু অবাক হল।দূর থেকে মনে হচ্ছিলো যেন গানের সাথে অনেকজন মিলে হাত তালি দিচ্ছে। সে ফুকনি বুড়ীর দিকে এগিয়ে গেল। লাঠি দিয়ে ফুকনি বুড়ী কে একটা খোঁচা দিয়ে বলল,
"কি রে বুড়ী কি গান করস এডি? "
"এইযে মাঞ্জেলায়ে গান বানছে, তাই খালি কইতে কয়,আমার দমনাই।" কপট অভিমানের সুরে উত্তর দিল ফুকনি বুড়ী।
"তয় মাঞ্জেলাডা আবার কেডা? কই?"
ফুকনি বুড়ী তাচ্ছিল্যের সাথে তার ছায়ার দিকে ইশারা করল,
"এইযে বেডী, বইয়া বইয়া হাসে, মাঞ্জেলা!"
রতন ফ্যাচফ্যাচ করে শয়তানি একটা হাসি দিয়ে বলে,
"ও তুমার ছায়ার নাম বুজি মাঞ্জেলা! "
"ওই বেডা একটা বিড়ি দেনা, টানি! "
লোভে চকচক করছে ফুকনি বুড়ীর এক চোখ।সে তাকিয়ে আছে রতনের ঠোটে বিড়ির দিক। রতন আগের মতই হাসতে হাসতে বলে,
"ও তুমি বিড়িও খাইবা,এই লও" রতন নিজের আধখাওয়া বিড়িটা ফুকনি বুড়ীর দিকে এগিয়ে দিল।
"আইডা ডাই দিলি বান্দির পুত"
রতন শয়তানের মত মুচকি হেসে নতুন আরেকটা বিড়ি ধরিয়ে সুখটান দিয়ে বলল,
"বিড়ি দিলাম, এবার আমার একখান কাম কইরা দে।"
"ওরে হারামী, আমগো আইডা বিড়ি খাওয়াইয়া আবার কাম চুদাও!"
রতন এবার উবু হয়ে ফুকনি বুড়ীর পাশে বসে আগের মত ফ্যাচফ্যাচ করে হাসলো খানিকক্ষণ, তারপর গলার আওয়াজ নিচু করে ফিসফিস করে বলল,
"কামডা গুপোন, একজনেরে বাণ মারা লাগবো। কাম অইলে একডা না একআডি বিড়ি দিমু। ক, পারবি?"
"বাকির নাম ফাঁকি, তয় মাঞ্জেলায় কইছে পারবো। তুই আগে আরো বিড়ি দে। "
"ওরে হারামজাদী বুড়ী! এই ল। " বলে রতন তার বিড়ির প্যাকেট থেকে কয়েকটা বিড়ি বের করে ফুকনি বুড়ীর হাতে দিলো, বুড়ী সেগুলি নিজের ঝোলার মধ্যে ঢুকাতে ঢুকাতে বলল,
"ক নাম ক, সাথে মায়ের নাম ক দেহি"
"নাম জাহানারা খাতুন , মায়ের নাম জামিলা খাতুন।আর কিছু কি লাগবো? "
"নাহ, যা তর কাম হইবো যাহ।"
"হারামজাদা,বিড়ির মধ্যে গাঞ্জা মিলাইছোস?"
রতন ফ্যাচফ্যাচ করে হেসে বলে,
"বুড়ীরে ধরছে রে! "
রতন আর ফুকনি বুড়ী বসে বসে গাঁজা টানতে থাকলো।একসময় রতন দেখল, ফুকনি বুড়ী গাঁজার নেশায় একা একা কথা বলছে, মাথা নাড়ছে। চাঁদের আলোয় ফুকনি বুড়ীর ফোলা পায়ের ঘা গুলিকে কয়েক থোকা রংগন ফুলের মত দেখাচ্ছে, যেন তাতে বাসা বেধেছে অসংখ্য অশরীরী সব পোকারা। হঠাৎ রতন খেয়াল করলো ফুকনি বুড়ীর ছায়াটা উল্টা।ঠিক যেন ফুকনি বুড়ীর দিকে মুখ করে বসে আছে। রতনের শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা একটা স্রোত বয়ে গেল,কিন্তু সে মুখে কিছুই বলল না।
প্রথম ফজরের আজান ভেসে আসছিল। ফুকনি বুড়ী বিড়ির শেষ পর্যন্ত টেনে, তল্পিতল্পা গুটিয়ে নিয়ে, হাত তালি দিয়ে গান গাইতে গাইতে ঝোপের দিকে আগাতে থাকলো। রতন স্থির বসে রইলো ইশকুলের বারান্দায়।
"জ্ঞানোবা মাওলী, জ্ঞানোবা মাওলী
জ্ঞানোবা মাওলীই,তুকাড়া
জ্ঞানোবা মাওলী, জ্ঞানোবা মাওলী
জ্ঞানোবা মাওলী, জ্ঞানোবা মাওলী
জ্ঞানোবা মাওলী ই, তুকাড়া
জ্ঞানোবা মাওলী, জ্ঞানোবা মাওলী
জ্ঞানোবা মাওলীতুকাড়া..... "
আসতে আসতে গানটা ঝোপের আড়ালে মিলিয়ে গেল।

ফুকনি বুড়ির আসল নাম ছিল ফকরুন্নেসা। এই বিশ-ত্রিশ বছর আগেও তাকে এই গ্রামের অনেকেই স্বাভাবিক অবস্থায় দেখেছে। তার বাড়ি ছিলো উত্তর পাড়ায়।তার স্বামীর নাম ছিলো তকছির মিয়া। তিন ছেলে নিয়ে মোটামুটি সচ্ছল পরিবার ছিলো তাদের। আফসোস ছিল শুধু তকছির মিয়ার একটা মেয়ে সন্তানের। সেই আফসোস মিটাতে গিয়েই নাকি ফুকনি বুড়ির আজ এই অবস্থা বলে বিশ্বাস করে গ্রামের মুরুব্বীরা।
আজ থেকে ত্রিশ বছর আগের কথা।তখন ফকরুন্নেসা গায়ে গতরে শক্তিশালী ছিলো বলে প্রায়ই মণ্ডল বাড়িতে যেত ঢেঁকিতে পাড়া দেবার জন্যে।শরিফ মণ্ডল অবস্থাপন্ন মানুষ। তাঁর তিন বৌ। তিনজনের মধ্যে মেজো জন ছিলো সবচে সুন্দরী, নিঃসন্তান এবং একটু অন্যরকম। পিঠ পিছে সকলে বলাবলি করতো সে জ্বিনে ধরা,কেউ বলতো পাগল, কেউ বলতো তার অলৌকিক ক্ষমতা আছে এইসব।পাড়ার মেয়ে বৌ রা অসুখবিসুখে তার কাছে পানিপড়া, তাবিজ-কবজ নিতে আসতো । তার সাথে ফকরুন্নেসার বেশ ভাব ছিলো। একদিন মন্ডলের মেজো বৌয়ের চুল বেণী করতে করতে ফকরুন্নেসা তার মনের দুঃখের কথা সব খুলে বলল।শুনে মেজো বৌ দুঃখের সাথে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, "হায় রে! মাটি আর বীজ দোনো ডা না মিললে কি মনের মত ফসল হয়!তবে যা বলি করতে পারলে কাম হইবোই,আমার আর বেশী দিন নাই রে সোনা! যা বলি মন দিয়া শোন... "। ফকরুন্নেসা মন দিয়েই সব শুনেছিলো। মেজো বৌ যা করতে বলেছিল হয়তোবা করেও ছিলো তাই। কিন্তু সব কেমন যেন গোলমেলে হয়ে গেল, যেদিন সে শুনতে পেল মণ্ডল বাড়িতে শক্তিশালী জ্বিন বাহিনীর আছর পড়েছে। সকলের প্রচুর পরিমাণে পাতলা পায়খানা আর রক্তবমি হচ্ছে। এই ঘটনার পরের জুম্মাবার বাদ ফজর মণ্ডল বাড়ির সকলে একসাথে মারা গেল আর ঐ জুম্মাবারের ঠিক ১ বছর পর ফকরুন্নেসার আবার একটা পুত্র সন্তান হল। ফকরুন্নেসা শোকে পাগল হয়ে গেল। ফকরুন্নেসার অবস্থা দেখে তকছির মিঞা আবার বিয়ে করলো। নতুন বৌ এসে ছেলেপুলেগুলাকে মানুষ করল।ফকরুন্নেসা পাগল হয়ে বনে জংগলে ঘুরে বেড়াতে লাগলো।
এক সময় গ্রামের লোকজন আবিষ্কার করলো, ফকরুন্নেসা জাদুটোনা করা শুরু করেছে। প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে সে মন্ডলের মেজো বৌয়ের কবরে যায়।সেখানে অদ্ভুতুড়ে ভাষায় মন্ত্র বলে ফুক দেয় এবং বিভিন্ন জনের নামে পুতুল বানিয়ে সেখানে বাণ মেরে রেখে আসে। এই খবর জুম্মাবারে মসজিদে উঠলে, আরও বিস্তারিত ভাবে জানা যায় যে, গ্রামের মেয়ে-বৌ রাই একে অন্যের বিরুদ্ধে এইসব কাজ করার বিনিময়ে ফকরুন্নেসা কে খাবার এবং টাকাকড়ি দিয়ে থাকে। সব শুনে ইমাম সাহেব ফতোয়া দিলেন , যেহেতু ফকরুন্নেসা এইসব হারাম কাজ, কুফরি কালাম করে শয়তানের গোলামে পরিণত হয়েছে, তাই সে একজন কাফের-ডাইনী। তাকে সমাজ থেকে তথা এই গ্রাম থেকে বহিষ্কার করা হোক এবং সে এখান থেকে যেতে না চাইলে তাকে পাথর মেরে গ্রামের সীমানা ছাড়া করা হোক। পাথর না পেলেও ঐদিনেই জুম্মার নামাজের পর মুসল্লিরা সবাই দলবদ্ধ ভাবে ফকরুন্নেসা কে আধলা ইট, বাঁশ দিয়ে মেরে গ্রাম ছাড়া করলো।
এই ঘটনার পর ফকরুন্নেসা অনেক বছর নিরুদ্দেশ ছিলো। সে নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি, তার পরিবারও তার কোন খোঁজ করেনি। হঠাৎ একদিন কুসুম দীঘির মানুষ খবর পেলো, পাশের গ্রামে ফকরুন্নেসা ভরদুপুরে এক বাড়ি থেকে বাচ্চা চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। লোকজন তাকে গাছের সাথে বেধে প্রচুর মেরেছে এবং তার এক হাত ভেঙে দিয়েছে। এই খবর শুনে তার বড়ছেলে গিয়েছিলো তাকে নিয়ে হাসপাতালে।এর কয়েক বছর পর ফুকনি বুড়ী আবার ধরা পড়ে ইব্রাহীম পুর গ্রামে। সেবার অপরাধ আরও গুরুতর, ফুকনি বুড়ী কবর খুঁড়ে লাশ বের করে তাতে কাটাকুটি করেছে। শাস্তি হিসেবে তার এক চোখ খেজুর কাঁটা দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়।সেবার আর কেউ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়নি।
এরপর থেকে তাকে শুধু এইগ্রামের আনাচেকানাচে ঝোপে ঝাড়ে দেখা যায়, বেশী দূরে আর সে যেতে পারে না। ভিক্ষা করে, ছল চাতুরী করে,চুরি করে, খেয়ে না খেয়ে, রোগে ভুগে সে দিন পার করে দিচ্ছেএকটা পশুর মত। বাচ্চাকাচ্চা আর উঠতি বয়সের ছেলেপুলে তাকে দেখলে দূর থেকে ঢিল মেরে পালায়,আর বড়রা তাকে স্রেফ উপেক্ষা করে চলে।

ভরদুপুর বেলা,ঝাঁঝাল রোদে চারিদিক ধুধু করছে। থেকে থেকে লু হাওয়া বইছে। এবারে গরমের তাপদাহে কোন প্রাণী টিকতে পারছে না।সব নলকূপ,কুয়া শুকনো খঠখঠা, কোথাও পানি নেই।এই প্রচণ্ড ক্ষরায় কুসুম দীঘি গ্রামে একমাত্র পানির ব্যবস্থা এখন কুসুম দীঘি। দুপুরের খাওয়া দাওয়া হয়ে গেলে, ময়না বিবি রান্নাঘরে গিয়ে দেখে ঘড়াতে পানি খুব অল্পই আছে। বাধ্য হয়ে ময়না বিবি কাপড় দিয়ে ভালভাবে মাথা মুখ জড়িয়ে, কলসী নিয়ে বের হল পানি আনতে। দীঘির ধারে পৌছনোর পর তার কেন জানি গা ছমছম করতে লাগলো। চারিদিক কেমন খা খা করছে। দীঘির পাশের জংগলটায় বাতাসে গাছ দোলার সড় সড় শব্দ হচ্ছে আর শুকনো পাতা উড়ে বেড়াচ্ছে। ময়না বিবি খুবই ধার্মিক মহিলা, সে তাড়াতাড়ি দোয়া পড়ে বুকে থুথু দিলো । তারপর কোন রকমে সে কলসীটা একবার ধুয়ে, পানি ভরে বাড়ির দিকে তীর বেগে হাটা দিলো । কিছু দূর হাটার পর তার মনে হল কেউ একজন তার পিছে পিছে আসছে। এইরকম সময় পিছন ফিরে তাকাতে হয় না। সে হাটার গতি বাড়িয়ে দিলো। হাটা না থামিয়ে সে সাহস করে জিজ্ঞেস করলো একবার "কে?", কোন উত্তর এলো না। আর কিছুক্ষণ জোরে হেটে ময়না বিবি বাড়ি পৌঁছে গেল। রান্না ঘরে ঢুকে ঘড়ায় পানি ঢেলে সে কলসীটা নামিয়ে রাখলো।মাথার কাপড় খুলে আঁচল দিয়ে মূখের গলার ঘাম মুছলো ময়না বিবি।হঠাৎ রান্নাঘরের পেছনে খসখসে আওয়াজ পেয়ে সে এবার চিৎকার করে উঠলো,
"কে রে?"
"ওরে বৌ আমি রে আমি" বিড়ালের মত মিউ মিউ করে পেছন থেকে বের হয়ে এলো ফুকনি বুড়ী।
"জালাইল্লা কী বাইত আছে? " প্রথমে সতর্কতার সাথে জিজ্ঞেস করলো ফুকনি বুড়ী।
"ও আল্লা গো আল্লা এ কিরাম হালত গো তুমার? না হে বাইত নাই, গঞ্জ গেছে। বহ বহ।"
অনেক দিন পর ফুকনি বুড়ীর দূরঅবস্থা দেখে ময়না বিবির চোখ কপালে উঠেছে। বাড়িতে বড় ছেলে জালাল নেই শুনে ফুকনি বুড়ী আরাম করে বসে। সে তার চার ছেলেকেই খুব ভয় পায়।তারা তাকে দেখলেই মারতে তেড়ে আসে।বাড়িতে ঢুকতে দেয় না খেদিয়ে দেয়। একমাত্র এই বড় বৌ মাটির মানুষ, কোনদিন মুখ ঝামটা দেয়নি তাকে। অন্য বৌদের মত তাকে দেখে স্বামী কে ডেকে এনে তাড়িয়ে দেয় না।অভাবের ঠেলায় পড়লে প্রায়ই ফুকনি বুড়ী বড় বৌয়ের কাছে এসে খাবার পায়। আবার বাড়িতে স্বামী থাকলে ময়না বিবি লুকিয়েও ফুকনি বুড়ী কে খাবার দেয়।
"অ বড় বৌ চাইরডা ভাত দে না, দনো দিন কিছুই প্যাডে পড়ে নাই!"
ময়না বিবি ভাতের হাড়ি থেকে সামান্য ভাতই অবশিষ্ট পেল।সামান্য ভাত, একটু ভর্তা, একটু লবন সে একটা থালায় তুলে, এক গেলাস পানি সহ ফুকনি বুড়ীর দিকে এগিয়ে দিল। ফুকনি বুড়ী থালা গেলাস হাতে নিলো, গেলাসটা মাটিতে রেখেই সে হামলে পড়লো ভাতের ওপর।
"হাত ধুইলা না! ভাত বেশি নাই, তয় ফ্যান আছে,দিমু? "
ফুকনি বুড়ী খেতে খেতে মুখ ভর্তি ভাত সহ শুধু উত্তর দিল "হ"। ময়না বিবি আরেকটা গেলাসে করে লবন দিয়ে ভাতের মাড় দিলো ফুকনি বুড়ীকে।ফুকনি বুড়ী চোখের নিমিষে সব কিছু খেয়ে শেষ করে ফেলে, বড় বড় দম নিতে লাগলো। এরপর গেলাসের পানিটা নিয়ে মাথায় ঢালল।
"তুমার মাথাতো পুরাডাই গ্যাসে দেহি !" বলে ময়না বিবি আরেক গেলাস পানি দিল তাকে। পানি খেয়ে ফুকনি বুড়ী আয়েশ করে দু পা ছড়িয়ে বসলো।
"তর মাইয়ারা কি করে?ও বৌ পান নাই? পান দে, খাই! "
"তিন রাজকইন্যা গুমায়। খাড়াও পান দিতাছি।"
ঘরের ভেতর থেকে পান এনে সে ফুকনি বুড়ীকে দিলো। পান চাবাতে চাবাতে ফুকনি বুড়ীর দৃষ্টি শুন্য হয়ে গেল। সে যেন বাড়ির উঠানের দিকে তাকিয়ে অতীতের মাঝে ডুব দিল টুপ করে।
"আহারে তকছির মিঞা! সারাডা জনম মাইয়া মাইয়া কইরা গ্যালা! অহন রাজকইন্যার মেলা বইছে মিঞা বাড়িত!"
ঘড়ঘড়ে গলায় আহাজারি করলো ফুকনি বুড়ি। ময়না বিবি হাসি হাসি মুখ করে বলল,
"এম্নে সব মাইয়া হইলে বংশে বাতি দিবো কেডায়? "
"ক্যান জহিরের পোলা, জহির মিঞা বিয়া করছে না?"
"হ, বিয়া করছে দু মাসও যায় না আর পোলা না! তা তুমি কি গ্যাসলা বৌ দ্যাখতে? কি সুন্দর, ছোট্ট মাইয়াডা, মায়া মায়া মুখ। "
"গেছিলাম,হারামজাদা পুলায় ঢুকতে দ্যায় নাই,নকল মায়েরে বাড়িত বহাইয়া রাখছে, আসল মায়ের খবর নাই! থু "
বলে একদলা পানের পিক ফেললো ফুকনি বুড়ী।
"তুমার পায়ে দেহি ঘা!"
"হ,পুকা ধরছে। খালি কামড়াইয়া খায় আর গুন গুন কইরা গান গায়। গোরের পুকা।"
"তুমি আজকাল থাহো কই, দেহি না যে? "
"আর কইস না, এই মাঞ্জেলা মাগী সারাডাক্ষন পাছে পাছে গুরে, তাই আনধারে লুকাইয়া থাহি। আবার নয়া মওলানা আইছে, কি দ্যামাগ তার। দেখলেই মারতে আহে! তাই এ দিক আহি না।"
" মাঞ্জেলাডা ক্যাডা? এহন লগে আছে?"
"মাঞ্জেলা হইল আমার লগে যে থাহে হে। এহন নাই, তয় বাইরে গেলে পাছ ধরবো। শান্তি নাই।"
একথা ওকথা করতে করতে আর থাকতে না পেরে ময়না বিবি খুব তেলতেলে গলায় একসময় বলেই ফেলল,
"শুনছি তুমি নাহি ম্যালা তাবিজ-কবজ জানো। দেওনা আমারে একটা,যেন আমার একডা পুলা হয়!"
ফুকনি বুড়ী খেক শিয়ালের মত খিক খিক করে হেসে বলে,
"হায় রে! মাটি আর বীজ দোনো ডা না মিললে কি মনের মত ফসল হয়? হয় না! পোলা তো হইবো জহির মিঞার বৌয়ের। তোর এবারের ডাও মাইয়া রে ময়না বিবি।"
হাসতে হাসতে ফুকনি বুড়ী কাশতে থাকে। এশুনে ময়না বিবির রাগে দুঃখে দুচোখ বয়ে অঝরে অশ্রু নামলো। সে নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে নিয়ে গলা ঝাড়া দিয়ে বলল,
"হইছে যাও যাও, এহন যাও। হে আসার সময় হইছে,আমি নামাজ পরুম যাও।"
কি ভুল বলেছে বুঝতে না পেরে এবং ছেলের ভয়ে ফুকনি বুড়ী দেরী না করে রান্নাঘরের পেছন দিয়েই চলে গেল। ময়না বিবি যে অন্ত:সত্ত্বা এ কথা সে এখনো স্বামীকেই বলেনি, ফুকনি বুড়ী টের পেল কিভাবে? এ কথা ভাবতে ভাবতে আর ফুকনি বুড়ির ভাববাণীর ভাবনায় সে দুহাতে মুখ চাপা দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো।

শরৎের শিশির ভেজা সকাল। এই সাতসকাল বেলা শেখ পাড়ায় পুলিশ এসেছে। পুলিশ নিয়ে এসেছে কালাম মাঝী আর তার দুই ছেলে কবির মাঝি, করিম মাঝি। ঘটনা একটু জটিল। মনু শেখের বেটার বৌ এবং কালাম মাঝির মেয়ে জাহানারা খাতুন। গতকাল রাত্রে নিজের ঘরে গলায় ফাঁস নিয়ে মারা গেছে। ভোর বেলা কেরামতের বৌ তাকে গোসলের জন্য ডাকতে এসে জানালা দিয়ে দেখে এই অবস্থা। সাথে সাথে সে লোকজন ডেকে পাড়া মাথায় তোলে। পাড়ার লোকে খবর দেয় কালাম মাঝি কে। থানা কাছে হওয়ায় কালাম মাঝি দ্রুত পুলিশ নিয়ে আসে।পুলিশ এসে লাশ নামায়। লাশের দেহ তল্লাশি করে অনেক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা গেল, মনু শেখের ছেলে স্বপন শেখ গাঁজার নেশায় তার বৌয়েকে প্রায়শই মারধর করত। জুয়া খেলার জন্য টাকা চাইতো। পুলিশ স্বপন শেখের খোঁজ করল। স্বপন শেখকে পাওয়া গেল জুয়ার ডেরায় নেশার ঘোরে ঘুমন্ত অবস্থায়। পুলিশ তৎক্ষণাৎ রহস্যর সমাধান করে ফেলল। ঘটনা আত্মহননের মত সাজানো হয়েছে আসলে এটা পরিষ্কার খুন। আসামী স্বপন শেখ। কি করবে বুঝতে না পেরে মনু শেখ কাটা মুরগীর মত এদিক ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকলো ।এক পর্যায় সে দারোগা সাহেবের পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে আরম্ভ করলো।দারোগা সাহেব কষে তার গালে এক থাপ্পড় দিয়ে বলল,
"মাজায় লাত দিয়া বাপ বেটাক একলগে হাজতে ঢুকামু শুয়ারের বাচ্চা! ছাড় পা ছাড়!"
কালাম মাঝির অনেক আপত্তির পরও পুলিশ জাহানারার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠালো। সুযোগ বুঝে সাবার চোখের আড়ালে কবির মাঝি দারোগার হাতে কিছু হাজার টাকার নোট গুঁজে দিলো। দারোগা সে টাকা পকেটে ঢুকিয়ে কালাম মাঝির কাছে গিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,
"মুরুব্বী কাইন্দেন না, দেহি আমি যত তাড়াতাড়ি পারি লাশ ফেরত দেওনের ব্যাবস্থা করুম। আর বেশী কাটা ছেড়া যাতে না হয় সে কথাও কমু। আপনি চিন্তা কইরেনা মুরুব্বী আমি দেখতেছি।পরিষ্কার ফকফকা খুনের কেস।হালার পুতেরে ফাঁসিতে ঝুলামু। এই ছুডো ভাই তুমি আমার লগে আহো। ঐ নিয়া আয় শুয়ারের বাচ্চারে ! "
এদিকে স্বপন শেখ হাতে হাতকড়া আর কোমরে দড়ি পড়া অবস্থায় মাটিতে বসে বিহ্বল হয়ে নিজের ঘরের দিকে তাকিয়ে ছিলো। পুলিশ তাকে দড়ি ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেল থানার দিকে।
জাহানারার লাশ মাঝি বাড়িতে এলো ঐ দিনেই দুপুরের পরে। কাফন শেষ করে লাশ নিয়ে যাওয়া হল মসজিদে। বাদ আসর জানাজা হবে। কিন্তু নামাজ শেষে মসজিদের নতুন ইমাম আনসার আলী ফতোয়া দিলেন,
"এই লাশের জানাজা আমি পড়াইতে পারুম না। কারন মরহুমা নিজে গলায় ফাঁস নিসে, তাই আমি কেন? অন্যকেউও যদি এর জানাজা পড়ায় বা জানাজায় শরিক হয়, তয় সে মুরতাদ হইবো।আত্মহত্যা মহাপাপ,আত্মহত্যাকারী নিঃসন্দেহে জাহান্নামি, এই লাশের জানাজা হইবনা।আপনেরা যান। "
কালাম মাঝি চোখ মুছতে মুছতে জোর গলায় বলল,
"মানে? কে কইছে আপনেরে আমার মাইয়া ফাঁস নিসে? হেই খুন হইছে! আজব কথা!"
"মুরুব্বী, আপনে চুপ করেন। ধর্ম কি আমার চেয়ে বেশী বুঝেন? সকলে দেখছে সে নিজের গলায় ফাঁস নিসে। আর আদালতে এহনো কিছু সাবিত হয় নাই। "
"কিন্তু দারগা সাব কইয়া গ্যাছে এইডা খুন!"
"তয় যান না দারগার কাছে, হে জানাজা পড়াইব। দারগা কি কোরান-হাদিস? দারগা হইল নাসারা আইনের গোলাম। নাসারা আইন পয়সা দিয়া কিনা যায়। আল্লাহ্‌র আইন আল্লাহ্‌র রসুলের আইন বিক্রি নাই। কি কন আপনেরা? "
ইমাম সাহেবের ধমকের সুরে সকলে বলে উঠলো,
"বেশক, বেশক।"
"ওই লাশ সরান এইখান থেইকা,অহনি।"
ইমাম সাহেবের কথার ওপর কোন কথা হবে না। দুই চার জন যুবক ছেলে মিলে লাশ নিয়ে গোরস্থানের দিকে রওনা হল। কবির মাঝি চতুর লোক।সে লক্ষ করল শেখ বাড়ির কেউই মসজিদে আসেনি। সে কেচাল করতে পারতো, কিন্তু সন্ধ্যা নেমে আসছে দেখে সে আর কথা বাড়ালো না। জানাজা ছাড়াই জাহানারা খাতুনের লাশ দাফন হয়ে গেল।

বছর ঘুরে বর্ষা এসেছে। টানা বৃষ্টি চলছে তো চলছেই থামার নাম নেই। চারিদেকে পানি উঠতে আরম্ভ করেছে। পুবালি গ্রামে নদী থৈথৈ করছে।এরকম আর কয়েকদিন চললে নদী উপচে বন্যা হবেই। সেই কবে চায়ের দোকানে পরিমল বাবু বলছিলেন "মা এ বছর নৌকায় আসছে, যাবে হাতিতে। এবছর বন্যা হলেও সামনের বছর যে ফলন ভাল হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। " এ বছর জহির ধান বোনেনি, পুকুর লিজ নিয়ে পোনামাছ ছেড়েছে। হয়তো পরিমল বাবুর কথার একটা প্রভাব তার ওপর পড়েছিল নিজের অজান্তেই।বেশী বৃষ্টি হওয়াতে পাম্পের খরচ তার বেচে গেছে ঠিকই, কিন্তু বন্যা হলেই সর্বনাশ। টিনের চালে অনবরত বৃষ্টি পড়ছে, সেই শব্দে জহিরের মাথায় এইসব চিন্তা খেলা করছে। জহির দুপুরে খাবার পর বারান্দায় বসে আছে বাইরে যেতে পারেনি। বাড়িতে মুখ বেড়েছে।তার ঘরে ছেলে সন্তান জন্ম নিয়েছে। এখন থেকেই ভবিষ্যতের চিন্তা করতে হবে। বাড়িতে একজন অতিরিক্ত মানুষ, তার সৎ মা। অন্য ভাইয়েরা তার দায়িত্ব না নিলেও জহির নিয়েছে। কারন জহির কে সে কোলে পিঠে মানুষ করেছে। মা বলতে জহির ছোটবেলা থেকে তাকেই চেনে। তার শরীর ভালো না। কিছু চিকিৎসা খরচ আছে। বৃষ্টি এত জোরে পড়া শুরু করল যেন এবার চাল ভেঙে জহিরের মাথায় পড়বে। হঠাৎ জহির তার বৌয়ের চিৎকার শুনে লাফিয়ে উঠে নিজের ঘরের দিকে দৌড় দেয়। সেখানে গিয়ে জহিরের ছোখ ছানাবড়া! তার বৌ অজ্ঞান হয়ে দরজার কাছে পড়ে আছে। ঘরের ভেতরে ফুকনী বুড়ী কাক ভেজা হয়ে তার বাচ্চাকে কোলে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। জহির হুংকার দিয়ে বলল,
"ঐ বুড়ী বাচ্চা রাখ কইলাম! তর আইজ আমার হাতে মরণ আছে। রাখ বাচ্চা রাখ!"
"রাগ হইস না বাজান, এক নজর দ্যাখতে আইছি।রাখতেছি "
পেছন থেকে জহিরের সৎ মা দৌড়ে এসে ঘটনা দেখে তাড়াতাড়ি ছেলের বৌয়ের মাথা নিজের কোলে নিয়ে চিৎকার করে বলে,
" ওর হাত থেইকা কাইরা নে! ওর হাত থেইকা কাইরা নে! ও বৌ, বৌ! উডো! ও বৌ!"
জহির শক্ত হাতে বাচ্চা কেড়ে নিলো।তারপর তার সৎ মার কোলে বাচ্চা দিয়ে লাঠি হাতে নিলো । ফুকনী বুড়ী চোরের মত ঝেড়ে দৌড় দিলো । পেছন থেকে জহির লাঠিটা ছুড়ে মারলো। লাঠি গিয়ে সরাসরি ফুকনি বুড়ীর মাথায় লেগে গলগল করে রক্ত বের হতে লাগলো । জহির তার পিছে ধাওয়া করে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো। ফুকনী বুড়ী হাওয়া।কোথাও নেই। উঠানে বৃষ্টির জমে থাকা পানিতে শুধু ছোপ ছোপ কালো রক্তগুলি ধীরেধীরে দ্রবীভূত হয়ে যাচ্ছে।

চারিদিকে শীতের আমেজ। গ্রামে গ্রামে মেলা লেগেছে। নানান যাত্রাপালা, কত গান বাজনা, লাল নীল আলো। গ্রামে সবার বাড়িতেই একটা উৎসব উৎসব ভাব। মসজিদের ইমাম সাহেব আনসার আলী এশার নামাজ , হাদিসের কেতাব পড়িয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। উনার কেন জানি মনে হচ্ছে মসজিদ থেকে কেউ উনার পিছু নিয়েছে। উনি পিছন ফিরে তাকাচ্ছেন না। মাঝপথে উনি থমকে দাঁড়ালেন। গলা খেঁকারি দিয়ে বললেন, "কেডা?"
"হুজুর আমি! "
"আমি কেডা?"
"আমি রতন, ইশকুলের নাইট গাট। "
"সামনে আহো, চুরের লাহান লুকায়ে আছো ক্যান?"
"না হুজুর মানি কিছু কথা আছিলো।"
"কি কথা কইয়া ফেলাও। হুনি।"
রতন সুযোগ বুঝে ইমাম সাহেবের হাত দুটো ধরে সব ঘটনা ফিসফিস করে খুলে বলল। সবশুনে ইমাম সাহেব মাথা নেড়ে বলল,
"না না মিঞা কামডা তুমি ঠিক করো নাই। আসতাগফিরুল্লাহ! এখন একমাত্র আল্লাহ্‌পাকের কাছে তওবা করোন ছাড়া আর রাস্তা খোলা নাই। তিনি গফুরুর রহিম।তিনি চাইলে মাফ করতে পারেন।যাইহোক সামনের জুম্মাবারে বাদ জুম্মা আমি এই বিষয়ে ফতোয়া জারি করুম।"
"তুমার কথা আমি কাউরে কমুনা।তয় তুমি আইজ থিইকা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে আদায় করবা, বাদ এশা হাদিসের তালিমে বসবা,সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবার দাওয়াতের কামে আমার লগে থাকবা। আর হুনো কাইলকে একটু গাঞ্জাম আছে, আমাদের লগে ঐ মেলায় যাইবা। দুইচারজন তাগত ওয়ালা জোয়ান পুলা লগে লইবা। মেলায় যাত্রা শুরু করছে। রাইতের বেলা ল্যাংটা নাচ হয়। আমরা এই শয়তানি কাম বন্ধ করুম।"
রতন সুবোধ বালকের মত মাথা নাড়ে।
"জ্বে, আইচ্ছা। "
"যাও এহন বাড়িত যাও।"
"আসসালামু আলাইকুম হুজুর। "
"ওয়ালাইকুম, যাও।"
জুম্মাবারে বাদ জুম্মা ইমাম সাহেব জরুরী ভাষণ দিলেন,
"সম্মানিত মুসল্লি-কেরাম, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহু। আইজ বহুদিন যবৎ আমাদের গেরামে একটা হারাম কাম, শয়তানি কাম হইতেছে,কিন্তু আমরা কেউই আমলে নি নাই, সবাই দ্যাইখ্যাও না দ্যাখার ভান করছি। এই সুযুগ নিয়া শয়তানে তার বান্দিরে দিয়া গেরামের মানুষের ওপরে যাদু, কুফরি কালাম করাইছে। যে সহল ভাই বইনেরা এই কুফরি কালামের ফয়দা লইছেন, তাগো যায়গা জাহান্নামে, তাগো বিচার আল্লাহ্‌পাক করবেন, আল্লাহপাক গফুরুর রহিম তিনি ক্ষমা করলেও করতে পারেন। কিন্তু যেই আসল শয়তান নিজের আত্মা বেইচা যাদুগর হইছে, ডাইনী হইছে, যে সমানে একযুগ ধইরা কুফরি কালাম করতাছে, হেই ফুকনি বুড়ীরে আমরা ছাড় দিয়া রাখছি। লানৎ আমাগো উপরে! লানৎ! ঐ যাদুগরের ঐ ডাইনী ফুনকি বুড়ীর এক মাত্র শাস্তি, তরবারি দিয়া ওর গর্দান ফেলায়ে দেয়া ! কিন্তু আফসোস! নাসারা আইনের কাছে আমাগো হাত বান্ধা! আমাগো হাতে হুকুমতের তরবারি নাই!"
এইবলে ইমাম সাহেব দুইহাত দিয়ে তার অশ্রু মুছলেন। তারপর আবার বক্তব্য দেয়া শুরু করলেন,
"আম্মাবাদ, আমার কাছে খবর আছে, আমি কারো নাম কমু না, নাম লওয়া নিষেধ, কিন্তু পাকা খবর। গেল বৎতসর কালাম মাঝির কন্যা জাহানারা খাতুন খুন হয় নাই, নিজে নিজে গলায় ফাঁস ও লই নাই। হের উপরে সিহির করা হইছে। হের গায়ে পুলিশ যে নিশান পাইছে, সেগুলান বদ জিনিষের মাইরের নিশান। আর এই সিহির করছে শয়তানের বান্দি ডাইনী ফুকনি বুড়ী!আল্লাহ্‌র কসম কইলাম আমার খবর এক্কেরে পাকা!"
ইমাম সাহেব সকলের চেহারা দিকে তাকালেন ভাবগতি বোঝার জন্যে। কালাম মাঝি হুহু করে কেঁদে উঠল। মনু শেখ অসহায় হয়ে ইমাম সাহেবের দিকে তাকাল।
"মুরুব্বী কাইন্দা লাভ নাই,যা হওয়ার তা হইছে, মরহুমা জাহানারা খাতুন বিনা হিসাবে জান্নাতে যে যাবে, এতে কুনো সন্দেহ নাই। কিন্তু একজন শয়তান কে শাস্তি না দিয়া একজন বেগুনাহ কে শাস্তি দেওন কি ঠিক হইবো?মরণের পর আল্লাহ্‌র কাছে জবাব দেওন লাগবো, হেইডা চিন্তা কইরেন! কি বলেন আপনেরা? লাগবো কি লাগবো না? "
সবাই বলে উঠলো,
"বেশক! বেশক! "
মাঝখান থেকে জহির দাঁড়িয়ে বলল,
"ফুকনি বুড়ীর লগে আমাগো মিঞা পরিবারের কুনো লেনাদেনা নাই। ইমাম সাব আপনি যা ভাল বুঝেন করেন।"
এই শুনে জালাল কিছুই বলল না শুধু মাথা নিচু করে বসে রইলো।
ইমাম সাহেব আবার বলা শুরু করলেন,
"আলহামদুলিল্লাহ্‌! আপনাগো কথায় আল্লাহ্‌ পাক খুশি হইছেন। আমি মওলানা আনসার আলী,আপনাগো ইমাম, শয়তান, কাফির ডাইনী ফুকনি বুড়ীরে সিহির কইরা মানুষ মারার গুনাহর শাস্তিতে ১০১ দোররা মারার হুকুম দিলাম! বাকি বিচার আল্লাহ পাকের হাতে! তারে যেখান থিইকা পারা যায় ধইরা আজ বাদ আসরের সময় এই মসজিদের সামনে, ঐ নিম গাছের তলায় হাজির করা হোক। আমার কথা এইখানেই শ্যেষ,আসসালামু আলাইকুম। "
শীতের দুপুর এমনিতেই ছোট। সকলে মসজিদ থেকে বাড়ি গিয়ে ভাত খেয়ে, দক্ষ শিকারির মত বের হল ফুকনি বুড়ী কে খুঁজতে।
বাদ আসরেও যখন ফুকনি বুড়ীকে খুঁজে পাওয়া গেলনা, তখন রতনের নেতৃত্বে একটা দল গেল দীঘির পারের জংগলে। চিরুনি অভিযানে ধরা পড়লো ফুকনি বুড়ী। তার গলায় দড়ি পরিয়ে, হাত বেধে টেনে নিয়ে আসা হল মসজিদের সামনের নিমগাছ তলায়। তখন প্রায় সন্ধ্যা হব হব করছে। ইমাম সাহেব রতনকে আদেশ দিলেন ফুকনি বুড়ীকে গাছের সাথে বাধার জন্য। ফুকনি বুড়ীকে উপর করে গাছের সাথে বাধা হল। ফুকনি বুড়ী কোন কথা বলছে না, শুধু বিড়ালের মত নাকি সুরে কাঁদছে। তার মাথায় একটা নোংরা কাপড়ের পট্টী। পুরা ব্যাপারটায় সে ভয় পেয়েছে অনেক। বাদ মাগরিব ইমাম সাহেব আবার রতন কে আদেশ দিলো ফুকনি বুড়ীর কোমরে ১০১ দোররা মারার। রতন "বিসমিল্লাহ " বলে শুরু করলো। মসজিদের কাছে মহাউৎসাহে গ্রামের নারী পুরুষ বাচ্চাকাচ্চা সবাই হাজির হল ঘটনা দেখতে। তবে মিঞা বাড়ির কাউকে সেখানে দেখা গেল না।প্রথম ২০ দোররা মারার পরই ফুকনি বুড়ী জ্ঞান হারাল। ধুপ করে সে হাটু ভাজ করে গাছের সাথে লটকে রইল। ইমাম সাহেব পরীক্ষা করে দেখলেন সে জীবিত আছে কিনা? শ্বাস চলছে দেখে তিনি দোররা চালিয়ে যাবার হুকুম দিলেন। রতন জোরে জোরে গুনতে থাকলো আর দোররা মারতে থাকলো।
" ৫৬,৫৭,৫৮,৫৯..."
১০১ দোররা মারা শেষ হলে ইমাম সাহেব আবার পরীক্ষা করে দেখলেন। ফুকনি বুড়ী মরেনি, জ্বরে তার গা পুড়ে যাচ্ছে। ইমাম সাহেব বললেন
"না মরে নাই! থাহুক এমনেই। ফজরের পর মশোয়ারা কইরা একটা হাল বাইর করন লাগবো। সবাই ইশার নামাজে আহেন। "
প্রচণ্ড শীতের রাত পার করে ফজরের সময় যখন কেউ কেউ এসে উপস্থিত হল তখন নীম গাছের তলাটা ফাকা।শুধু দড়ি গুলি পড়ে আছে। সকলে মনে মনে করল আপদ বিদায় হয়েছে।এইভাবে দিনের পর দিন পার হয়ে যেতে থাকলো কুসুম দীঘি গ্রামে। কবির মাঝি মামলা মোকদ্দমার খরচ বাবদ কিছু টাকা মনু শেখের কাছ থেকে নিয়ে স্বপন শেখের নামে মামলা তুলে নিলো। ফুকনি বুড়ীকে আর কোথাও দেখা গেল না।

ময়না বিবি অনেক ভোরে ঘুম থেকে উঠে। ফজরের আজানের সময়। আজ তার ঘুম ভেঙেছে শেষ রাতে, তার মনে হয়েছে সে আজান শুনেছে। তাদের নতুন কন্যা সন্তান হয়েছে, সে রাতে এমনিতেই কম ঘুমাতে দেয়,কাপড় নষ্ট করে।এই শীতের রাতে ঘুম থেকে উঠে কাপড় পাল্টে ময়নাবিবি অজু করার জন্য টিউবওয়েলের কাছে গেল। টিউবওয়েলে প্রথমে কয়েকবার চেপে পানি ফেলে দিলে পরে গরম পানি উঠে।অজু করতে করতে ময়নাবিবি বিশ্রি পচা পোড়া গন্ধ পেল। গন্ধ আসছে রান্না ঘর থেকে। নামাজের এখনো অনেক দেরি। সে একটা বাতি নিয়ে গুনগুন করে দোয়া পড়তে পড়তে রান্না ঘরে ঢুকলো।
"ও আল্লাগো! এদিকে দেইখা যান গো, ও আল্লা! হায় হায়, জলদি আহেন ও মনির বাপ কই আপনে। ও আল্লাগো! "
ময়নাবিবির চিৎকার শুনে শুধু মনির বাপ জালাল মিঞা না, মনি, চুনি, পান্না তিনজনই এবং পাশের বাড়ির লোকজন এসে হাজির হল। ঘটনা দেখে সকলে আঁৎকে উঠলো। ফুকনি বুড়ী তার ঘা ওয়ালা
পা দুইটি চুলার মধ্যে দিয়ে মরে পড়ে আছে।রাতের রান্নার পর কিছু আগুন চুলাতে থাকে। সেই আগুনে পা দুইটি খানিকটা পুড়ে গেছে, মাংস পোড়া বিশ্রী গন্ধ বের হচ্ছে। তার একচোখ ঠিকরে বের হয়ে আসছে প্রায়, নাকে মুখে হাল্কা রক্ত লেগে আছে। কমরে দোররার দাগ দগদগে ঘায়ে পরিণত হয়েছে। মাথায় নোংরা কাপড়ের পট্টিতে রক্ত জমে কালো হয়ে আছে। জালাল মিঞা ধমক দিয়ে বাচ্চা মেয়েদের ভেতরে যেতে বলল। কি করবে সে ঠাহর করতে পারছে না।
মাস যেতে না যেতেই ফুকনি বুড়ীর কথা সবাই ভুলে গেল। যেন এই রকম কেউই এই গ্রামে কোন দিন ছিলো না। কিন্তু বছর ঘুরে ঘুরে বর্ষায় বৃষ্টি ভেজা রাতে ইশকুলের বারান্দায়, প্রচণ্ড গরমের খা খা দুপুর গুলিতে দীঘির পাড়ে আর শীতের নিশ্চুপ রাতে ফাকা রাস্তাগুলিতে কান পাতলে কুসুম দীঘির মানুষ প্রায় শুনতে পায় ভীন ভাষার এক গানের সুর আর সেই তালে হাত তালির আওয়াজ,
"জ্ঞানোবা মাওলী, জ্ঞানোবা মাওলী
জ্ঞানোবা মাওলীই,তুকাড়া
জ্ঞানোবা মাওলী, জ্ঞানোবা মাওলী
জ্ঞানোবা মাওলী, জ্ঞানোবা মাওলী
জ্ঞানোবা মাওলীই, তুকাড়া
জ্ঞানোবা মাওলী, জ্ঞানোবা মাওলী
জ্ঞানোবা মাওলীতুকাড়া..... "
তখন প্রকৃতি অন্যমনস্ক হওয়ার চেষ্টা করে।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:১৫

মোহেবুল্লাহ অয়ন বলেছেন: খুব ভাল লেগেছে। সবকিছু খোলাসা না করে আপনি গল্পটাকে বেশ রহস্যময় করতে পেরেছেন।

২| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:৩৬

কালীদাস বলেছেন: গল্পটা দুইবার পড়লাম পুরোটা মাথায় ভালমত ঢোকানোর জন্য। প্লটটা ইন্টারেস্টিং, স্পেশালি ডাইনিরা ফজরের আজানের পরেও থাকে আবার গাঁজাও খায় =p~ হা হা, এই জমানায় সবই সম্ভব, খুঁজলে হয়ত দেখা যাবে ফেসবুকেও একাউন্ট রাখে ;)

লেখাটা ভাল হয়েছে। নতুনত্বটুকু আসলেই ভাল লেগেছে :)

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১:১০

যাযাবর জোনাকি বলেছেন: ধন্যবাদ, জনাব আমাদের গ্রাম বাংলার জীবন বহু যুগ ধরেই বৈচিত্র্যময়। সব জামানায়ই ডাইনী বুড়ীরা মানুষ, তারা ফজরের আজানের পরও পৃথিবীতে বিরাজমান সাধারণ মানুষের মতই।তারা তো আর ভেম্পায়ার না।আর একটু খোজ করে দেখবেন গঞ্জিকা সেবন গ্রাম বাংলার বহু পুরানো ঐতিহ্য। কবি সাহিত্যিক, ফকির দরবেশ, সাধু শয়তান সব শ্রেণীর মানুষের কাছেই এর গ্রহণযোগ্যতা বিদ্যমান। এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নাই। (আমার মনেহয় বিড়ি, গাঁজা খাওয়া বৃদ্ধা আপনি এদেশে দেখেন নি!) ভাল থাকবেন। :)

৩| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ২:৪৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


অশিক্ষিত গ্রাম বাংলার কস্টের কাহিনী; নারীদের দু:খের গল্প

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:৫৬

যাযাবর জোনাকি বলেছেন: শুধুই কি তাই? "সমালোচক হিসাবে আপনি সফল না লেখক হিসাবে আমি ব্যার্থ" সেটা একটা জটিল সমীকরণ। তবে আমাদের মত শিক্ষিত বাংলার মানুষদের পৃথিবীটা অনেক ছোট!এখন অনেকটা হাতের মুঠোয় এটে যায়।:) ধন্যবাদ, ভালো থাকবেন।

৪| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৩:১১

প্রজ্জলিত মেশকাত বলেছেন: ভাল লেগেছে। অনিঃশ্বেষ শুভকামনা রইল।

৫| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ ভোর ৪:১৪

জাহিদ অনিক বলেছেন:


এত বড় গল্প ! আপাতত পড়ার ধৈর্য্য হল না।



অশিক্ষিত গ্রাম বাংলার কস্টের কাহিনী; নারীদের দু:খের গল্প
যাক, মিঃ চাঁদগাজী সাহেবের মন্তব্য পড়ে প্লট বোঝা গেল।

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১১:৫৭

যাযাবর জোনাকি বলেছেন: অন্যের কথায় কান দেওয়া ঠিক না!

৬| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৩:০৭

প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার গল্প। সামাজের বাস্তব চিত্রই যেন ফুটে উঠেছে।

৭| ১১ ই জুন, ২০১৮ সকাল ৮:৪০

অক্পটে বলেছেন: ভাল লাগল রহস্য এবং পরবর্তীতে কি অপেক্ষা করছে এসব ভাবতে ভাবতে পড়া শেষ। আপনি আসলে খুব দারুণ লেখিয়ে। গল্পের মূল ভাব এবং এর পারিপাশির্কতার বিবরণও দারুণ। মুগ্ধ!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.