নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের\'

যাযাবর জোনাকি

‘আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের’

যাযাবর জোনাকি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভট

২৫ শে মে, ২০১৮ বিকাল ৫:১৪

(একটি XXL সাইজের গল্প)

[সকল চরিত্র এবং ঘটনা কাল্পনিক ]

Date : Unknown.
Time: Unknown.
Place : Unknown.
"ঘরে আলো নেই কেন? "
"হুহ! আলো..! "
"না মানে কারেন্ট নেই নাকি, আপনাকে তো ঠিক দেখতে পাচ্ছি না! "
"let there be light...."
"সুইচ বোর্ডটা ঠিক যেন কোনদিকে....?"
" হাতের বামে, প্রথম থেকে ২ নম্বর... পেয়েছ?"
"জ্বী.."
ঘরটা টাংস্টেন বাল্বের টিমটিমে হলুদ আলোয় একটু অদ্ভুত দেখাচ্ছে।ছোট্ট ঘর, কোন এককালে দেয়ালে সাদা রঙ করা হয়েছিল,এখন অধিকাংশ জায়গায় সবুজ ছোপ ছোপ শেওলা আর ফাটলের বাড়াবাড়ি। ছাদে কালো কড়িকাঠ, দুইএকটা হয়তো খোসেও পড়েছে। ঘরের মধ্যে ঠাসাঠাসি করে রাখা একটা লোহার ট্রাঙ্ক, একটা মাঝারী সাইজের বুক সেলফ, একটা চৌকি, তার পাশে একটা কাঠের ইজিচেয়ার। ইজিচেয়ারে একজন বৃদ্ধ বসে আছেন। ঘরটায় পুরানো জিনিষের একটা সোঁদা গন্ধ। পাশের বাড়ি থেকে একটা বাচ্চার কান্না শোনা যাচ্ছে, আর রান্নাবান্নার গৃহস্থালি শব্দ শুনে মনে হচ্ছে যেন এই বাড়িতেই রান্না হচ্ছে।
" কোথায় থেকে শুরু করবেন বলে ভাবছেন? "
"অতীত টা......বড়ই গোলমেলে একটা সময়! "
" আপনি শুরু করুন, শুরুর শুধু একটা পয়েন্ট থাকলেই হবে।"
" আসলে চাকরীটা ছেড়ে দিলাম....তিন মাসের মাথায় সরকারি চাকুরী ছেড়ে দিয়ে একেবারে টেকনাফ...। "
"তারপর.. "
"লেখালেখি শুরু করলাম। কবিতা আর কবিতা, বিপ্লব আর কবিতা, বিপ্লব আর বিপ্লব, বিপ্লবী কবিতা!
মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ, সোভিয়েত সামাজিক সাম্রাজ্যবাদ । দালাল গুলী মস্কোপন্থী পার্টিটা কে সংশোধনবাদী পার্টির তকমা দিয়ে দিলো! রেডিও পিকিং তখন বলছে বসন্তের বজ্রনির্ঘোষ!....পরের বছর ঢাকায় এসে যোগ দিলাম বিপ্লবী পরিষদে, মাও সেতুং গবেষণাকেন্দ্রে যাতায়াত শুরু হল। হারামীর বাচ্চা গুলি সেটাও বন্ধ করে দিল! "
"কবিতাগুলি তো..."
" হ্যা জানি, কেউ বুঝতে পারেনি, কেউই না...
আর কয়েকটা শত্রু খতম হলেই তো গ্রামগুলো আমাদের;
জনগণ যেনো জল, গেরিলারা মাছের মতো সাঁতরায়। ”
" এটা তো আপনার লেখা নয়.... "
" না, এটা আমার লেখা নয়। কয়েকবছর পর থেকে গেরিলা অপারেশন শুরু করলাম আমরা।একেবারে যুদ্ধ..... "
"কিন্তু আপনার কবিতার চেয়ে তো গল্পগুলি অনেক বেশী জনপ্রিয় ছিল।"
" সবগুলি না, প্রথম দিকের গল্প গুলো কেউ ধরতেই পারেনি, পড়ে বিরক্ত হত.."
" কিন্তু ওই গল্পটা তো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল.. আর ইস্তেহার গুলো? "
" ইস্তেহারগুলি মাথা থেকে আসতো না, ওগুলি আসতো অজানা কোন এক জায়গা থেকে! মাও বলতো বন্দুকের নল থেকে! "
" তারপর.. "
"তখন মার্চে সারাদেশে উত্তাল হাওয়া বইছে, এমন সময় ওঁরা আলোচনার মাধ্যমে একটা সমাধান বের করতে চাইলো, আমরা চাইলাম বিপ্লব!জুন মাসে পার্টির নাম দেয়া হল। বেইমান বুর্জোয়ার দল আমাদের সাথে বেইমানী করল!"
" আর লেখালেখি...? "
" স্বাধীনতার কয়েক বছর পর আমাদের কে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দেয়া হল,লেখালেখি তখন দেশ মাতার ভোগে হেহ! সবাই এক এক করে ধরা পড়েগেলাম আমরা, তারপর পুলিশের হাতে একে একে সবাই... "
" এখন লেখালেখি করেন না কেন? "
" লিখতে চেষ্টা করি অনেক জানো, একটা ২৩-২৪ বছরের ছেলের গল্প, যার বাবা মারা গেছে, সময়টা টালমাটাল চারিদিকে, সে চাকরীর জন্য বেপরোয়া ভাবে ঘুরছে... "
" এই গল্পতো লেখা হয়ে গেছে... "
" তাহলে, তাহলে ভিন্ন একটা পৃথিবীর গল্প কেমন হবে, যেখানে একটা জাতি হাজার বছরের দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে একটা নতুন ভূখন্ডে নিজেদের পত্তন করবে, তাদের আধ্যাত্মিক নেতার বদৌলতে..."
" এই গল্পও তো সবাই জানে... "
"তাহলে, তাহলে লিখবো না বলছো? "
" না অবশ্যই লিখবেন, একেবারে নতুন একটা গল্প লিখবেন.. আপনাকে শুধু সুন্দর একটা শুরু করতে হবে, আপনি এখনো কিছুই ভোলেননি আমার দৃঢ় বিশ্বাস! "
" আমি লিখবো? হ্যা লিখতে আমাকে হবেই!"

Date : Sunday, 26/November/2017.
Time: 5:00am.
Place : Badda,Dhaka.
লোকটাকে গভীর রাত থেকে অনুসরণ করছেন আলমগির কবির। এখন ভোরের আলো না ফুটলেও রাত প্রায় সমাপ্তি ঘোষণ করেছে। লোকটা চিন্তিত ভঙ্গীতে পায়চারী করছে লেকের ধারে। এবার সে একটা সিগারেট জ্বালাল। আলমগির কবির বাজপাখির মত লোকটার ওপর নজর রাখছেন। ঘনকুয়াশা আর অন্ধকারের জন্য লোকটার চেহারা ভালো মত দেখা যাচ্ছেনা। একটু পরপর সিগারেটের লাল আলোটা উপরে উঠে উজ্জ্বল হচ্ছে আবার নিচে নেমে মিইয়ে যাচ্ছে। এই শীতের রাতেও আলমগির কবিরের উত্তেজনায় ঘাম ঝরে গায়েই ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।আলমগির কবির শিকারি বিড়ালের মত অপেক্ষায় আছেন। হঠাৎ পুলিশের সাইরেন আর বাঁশির শব্দে চারিদিকে থরহরি কম্পন উঠে গেল। আলমগির কবির ধাওয়া করে গেল লোকটার দিকে, তার সাথে সাথে পুলিশ ফোর্সের আর্মড পুলিশ।
" পালানোর চেষ্টা করবেননা। পুলিশ চারিদিক থেকে আপনাকে ঘিরে রেখেছে! "
হাত মাইকে পুলিশের কেউ একজন ঘোষনা করলো। আলমগির কবির ছুটছেন। তিনি দেখতে পাচ্ছেন লোকটা এবার ভয় পেয়ে সিগারেট ফেলে দিয়ে লেকের পানির দিক বরাবর দৌড় দিচ্ছে। আলমগির কবির গতি বাড়িয়ে দিলেন। আর মাত্র কয়েক ধাপ, লোকটা পানিতে ঝাঁপ দিতে পারে, আলমগির কবির মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন তিনিও পানিতে লাফ দিবেন। লোকটা এবার দৌড়ে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে লেকের সামনে থমকে দাঁড়ালো, তারপর একবার পিছনে ফিরে তাকাল মনে হল,এবার সে তার দুই হাত পাখির মত করে ঝাঁপটা দিতেই ছোট্ট একটা বাজ পাখিতে পরিণত হল এবং ডানা ঝাঁপটে উড়ে অন্ধকারের মধ্যে হারিয়ে গেল। তার ডানার ঠান্ডা ঝাঁপটা এসে লাগলো আলমগির কবিরের মুখে।আলমগির কবির তাঁর পেটে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলেন। আলমগির কবিরের ঘুম ভেঙে গেল, তাঁর সারা গায়ে চ্যাটচ্যাটে ঘাম, মনে হচ্ছে তাঁর পেট আর পাঁজরের মাঝখানটায় কেউ যেন হাজার হাজার সুঁই রেখে দিয়েছে, সেগুলি ক্রমাগত পাঁজরে খোঁচাচ্ছে আর সারা শরীরে বিষাক্ত যন্ত্রনা,মাংসপেশিগুলি যেন অসংখ্য পোকা কামড়ে ধরে আছে, ছাড়ছেনা। তিনি চোখ মেলে তাকালেন,মাথার অপরে ফ্যান বনবন করে ঘুরছে। নভেম্বর মাস এবার শীত আসার কোন নাম গন্ধ নেই। ফুল স্পীডে ফ্যান চালু করেও ছয়তালার গরমে অতিষ্ঠ অবস্থা। আলমগির কবির মুখ কুঁচকে উঠে বসে একটা সিগারেট ধরালেন। বিছানার পাশে খোলা জানালা দিয়ে একটু ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে। রেহানা বাথরুম থেকে গোসল করে বের হচ্ছেন, তিনি গায়ের ওড়নাটা দিয়ে হিজাবের মত করে মাথা থেকে কব্জি পর্যন্ত ঢেকে রেখেছেন।
"কি? ওরকমভাবে মুখ কুঁচকে আছো ক্যান? ব্যাথা? সময় করে ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট নাও না কেন? এমনেও তো দুইজনেরই ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল, তুমি বলছিলা মনে আছে?"
"হুম"
" সিগারেটটা ফেলায় দাও, আমি নামাজ পড়বো। "
বাইরে ফজরের আজান দিচ্ছে, আলমগির কবির বিছানা থেকে উঠে, জানালা দিয়ে সিগারেট টা ফেলে, বাথরুমে চলে গেলেন।

Date : Sunday, 26/November/2017.
Time: 10:00am.
Place : PBI Headquarter,Mirpur, Dhaka.
Additional Superintendent of Police (ASP)- Towhidul Majid
Gazipur PBI, Dhaka Division, HQ.
জানালা দিয়ে ঠান্ডা হাওয়া আসছে, আবার থেমে যাচ্ছে। রুমে একটা এসি আছে, সেটা বন্ধ।সিলিং ফ্যানটা মধ্যম গতিতে ঘুরছে। ASP তাওহীদুল মাজীদ সাহেব মনযোগ দিয়ে পত্রিকা পড়ছেন, তাঁর একহাতে চায়ের কাপ। সামনের টেবিলে একটা সাদা চিনামাটির প্লেটে লেমন পাফড বিস্কিটের একটা প্যাকেট খোলা আছে।
" স্যার আসবো? "
" ওহ, কবির সাহেব আসেন, বসেন।"
পত্রিকাটা যত্ন সহকারে ভাঁজ করে রেখে ASP তাওহীদুল মাজীদ calling bell চাপলেন। একজন পিওন দরজার বাইরে উঁকি দিলো।
" দুকাপ চা নিয়ে আসো, একটাতে এলাচ দিবা।"
" ইন্সপেক্টর কবির, বলেন কেমন আছেন?"
" জ্বি স্যার ভালো আছি, কোন কেসের ব্যাপারে... "
" হ্যা চা খেতে খেতে পুরাটা বলি, পত্রিকাতে আপনি দেখে থাকবেন, খুব Pressur এ আছি এই নিয়ে, গতকালকে Officially case টা PBI টেকওভার করেছে। "
দুই কাপ চা নিয়ে একজন বেয়ারার ভেতরে ঢুকলো।
" নেন চা বিস্কিট নেন, বিস্কিটা খুব ভালো! "
" স্যার আমার পেটে Problem , মনে হয় Acidity, খুব ভুগাচ্ছে, বিস্কিটটা খাবো না স্যার। "
" চা টা তো আরও Acidity বাড়িয়ে দেবে। "
" নেশা তো স্যার কি করবো.."
" কোন ডাক্তার দেখাচ্ছেন? ডা. মহসীন আলী Gastronomyর জন্য খুব ভালো, উনাকে দেখাতে পারেন। "
" জ্বী স্যার"
" আচ্ছা এবার কাজের কথা শোনেন। ময়নাবতী দক্ষিণাচল মডেল টাউন, গাজীপুরেই পড়ে। সেখানকার Murder case গুলির কথা জানেন কিছু?"
" জ্বী স্যার,গত পরশু আরেকটা হয়েছে,এই নিয়ে চার নম্বর , পত্রিকা, ইলেকট্রনিক মিডিয়া তো ছেয়ে আছে!"
"হ্যা, গত সাত মাসে চারটা খুন, পুলিশের তদন্তে এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে ব্যাপারটা Serial Killing! এই ফাইলগুলিতে সব গুলি Caseর মোটামুটি Details আছে। আরও Details তথ্য দরকার হলে আমাদের Criminal Intelligence Analysis Unit এ যোগাযোগ করবেন। আমি Officially আপনাকে, সাব ইন্সপেক্টর বিমল কর এবং Criminal Intelligence Analysis Unit নিয়ে একটা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। "
" পুলিশ তো তদন্ত করেছেই তাহলে আবার আমাদেরকে কেন? "
" দেখেন যত দূর আমি জানি, আমাদের দেশে Serial Killing সেরকম সড়গড় না। এখন পর্যন্ত দক্ষিণখানের Case টা বাদ দিলে, প্রথমেই আছে রসু খা। সে প্রেমে প্রতারিত হয়ে শপথ নিয়েছিল ১০১ জন নারীকে ধর্ষণ করে খুন করবে। ২০০৯ সালের ৭ই অক্টোবর ধরা পরার আগে তার সর্বশেষ শিকার সংখ্যা ছিল ১১। এরপর মাহফুজ: মাত্র ২০ বছর বয়সী এই যুবক চার ঘণ্টায় খুন করে তার ৫ জন নিকটাত্মীয়কে! খুনের অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছিল শিলপাটার শিল।তাৎক্ষণিকভাবে এই খুনের সিদ্ধান্ত সে নিয়েছিল। অপেশাদার খুনি হলেও তার খুনের পেছনে কাজ করা মনোবল এতটাই দৃঢ় ছিল যে, সে প্রথম খুনটি করার পরেও দরজা খুলে না পালিয়ে একে একে দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম খুন গুলো সফলতার সাথে করে।
এই দুই ক্ষেত্রে লক্ষ করেন Motive যাইহোক, Victim বাছাইয়ের ব্যাপারে যে pattern তা একেবারেই সুনির্দিষ্ট এবং সহজ। এছাড়া আর কোন patternনেই। ময়নাবতীর Case গুলিতে দেখতে পাবেন Victim বাছাই করার pattern খুবই foggy একেবারে Randomর কাছাকাছি, ইনফ্যাক্ট আপাত দৃষ্টিতে Random মনে হতে পারে, তবে Random না, কারন রাস্তার নাম্বার আর যে বাড়িতে খুন হয়েছে তার নাম্বার একই। pattern একটা আছে। interval ৭৫ দিন। খুনের পদ্ধতি পুরাপুরি এক রকম, কোন পার্থক্য নেই। পুরা ব্যাপারটার মধ্যে একটা বুদ্ধিদীপ্ত গোছাল patternআছে। যেটা বের করতে পারলে খুনি ধরা পড়বে এবং Next খুনটা আটকানো যাবে। এই pattern বের করা আমাদের কাজ।"
" আপনি Sure স্যার সামনে আরো খুন হবেই?"
" হ্যা মোটামুটি Sure, ৭৫ দিন পরেই আরেকটা খুন হওয়ার সম্ভাবনা আছে, এইসব ক্ষেত্রে তারা নিজেদের তৈরিকৃত pattern নিজেরা ভাঙে না। এটা ওদের কাছে Ruleর মত। which must be maintained!They never break, their own pattern,এখন আমাদের এই প্যাটার্নটা ধরতে হবে, তাহলে Next কবে, কোথায়, কখন,কাকে খুন করা হবে সেটাও বের হয়ে যাবে।আপনাদের কাজ patternবের করা। বিমল খুব Sharp , ওঁ Helpful হবে। কিছু লাগলে বা কিছু করার আগে আমাকে বলবেন।"
" স্যার আপাতত spot থেকে পুলিশ ফোর্স তুলে নেন,সিভিলে কিছু লোকজন থাকলেই হবে। আর মিডিয়া Restricted করে দেন। "
" ওকে, বিমল spot ই আছে আমি বলে দিচ্ছি। আজকে আপনি একবার লাস্ট spotটা ভিসিট করে, ময়নাবতী দক্ষিণাচল মডেল টাউনের চেয়ারম্যান শমশের চৌধুরীর সাথে দেখা করে আসবেন, উপর মহলের Request।"
" ওকে স্যার। "
আলমগির কবির ফাইলগুলি হাতে নিয়ে বের হয়ে গেলেন।

Date : Sunday, 26/November/2017.
Time: 01:00pm.
Place : Moynaboti Dokkhinachol Model Town.
H#3, Road 3, Block D,
ইন্সপেক্টর আলমগির কবির গাড়ী থেকে নেমে এপার্টমেন্টের গেটের দিকে এগিয়ে গেলেন। গেটের সামনে ইয়ামাহা ১০০ সিসি একটা লাল মোটরসাইকেলের ওপরে একজন কালো মোটা লোক বসে আছেন। পরনে গোলাপি রঙের ফুল শার্ট যেটার গলার কাছে দুইটা বোতাম খোলা, খয়েরী কর্ডের ফুলপ্যান্ট, পায়ে বাদামী বাটার লেদার স্যান্ডেল এবং চোখে ফোটোসান ডি শেপের চশমা।লোকটার একেবারে ঘাড়েগর্দানে চেহারা। আলমগির কবির কে দেখে তিনি হাসি হাসি মুখ করে তাকিয়ে রইলেন,ফলে তাঁর পান খাওয়া লাল দাঁত গুলি বের হয়ে এল।
" আদাব স্যার! "
" আপনি? "
" স্যার আমি সাব ইন্সপেক্টর বিমল কর। ইয়ে মানে..আগে ডিবিতে ছিলাম, তাই চেনেন নাই! "
"ও, আর লোকজন কোথায়? "
" সব ছুটি দিয়ে দিয়েছি স্যার, ইয়ে মানে.. শুধু ফ্ল্যাটের সামনে একজন করে ডিউটি দিবে। ফ্ল্যাট সীল করা হয়ে গেছে। আমাদের ফরেনসিক,গতকাল আরেকবার ইনভেস্টিগেশন করে গেছে। ইয়ে মানে... আপনি কি উপরে যাবেন স্যার? "
" হ্যা, আপনি যাবেননা? "
" জ্বী স্যার, অবশ্যই স্যার।"
"চলেন। "
" এখানকার থানার ওসি আসছিল সকালে, বলে যে ফোর্স পুরাপুরি তোলা যাবেনা,সিকিউরিটি ইস্যু।.. না অবশ্যই সিকিউরিটি ইস্যু, ১০০ বার সিকিউরিটি ইস্যু, ফোর্স থাকবেনা কেন? থাকবে,তখন আমি বললাম শুধু আমার স্পোটে থাকবে না।চেক পোষ্ট বসাও, দরকার হলে ফাঁড়ি বসাও, রিমোট এড়িয়া সিকিউরিটি লাগবেই! কিন্তু আমাদের কে তো কাজ করতে হবে, স্পোটে গ্যাদারিং করে লাভটা কি? "
" মিডিয়া? "
" ও, হ্যা মিডিয়া, মিডিয়ার ব্যাপারে ASP স্যারের Interest বেশী, সে রেগুলার প্রেস ব্রিফিং দিয়ে দিবে। কিন্তু এখানে নয় এইচকিউ তে। ব্যাস সব ফাঁকা। "
"হুম, ভালো handle করেছেন। "
" শুধু একটা ব্যাপার, স্যার। ওসি সাহেব বললেন, সিসিটিভির ফুটেজ নাকি এখানকার যে সিকিউরিটি ফোর্স আছে তারা দিচ্ছেনা। তারা শুধু Particular spot গুলির Particular time window র কিছু ফুটেজ দিচ্ছে। "
" ঠিক আছে যাবার সময় ওদের চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করে বলে যাব।"
" এই যে স্যার, এইখানে। "
পাতলা ফর্শা, লম্বা একজন পুলিশ ডিউটি দিচ্ছে ফ্ল্যাটের দরজার সামনে।
" রুহুল, দরজা টা খুলে দাও। অন্য ৩টার একটা তে শুধু ফ্যামিলি থাকে স্যার।"
"বাকি দুইটা? "
" ফাঁকা। সার্চ হয়ে গেছে, ইয়ে মানে.. প্রাথমিকভাবে কিছু পাওয়া যায়নি স্যার। দুটার একটা আবার বিক্রি হয়েছে, Handover নিচ্ছেনা হেহ হেহ হে, এই ভয়! মানে কে নেবে বলুন। আসেন স্যার।"
" হুম, চলেন।"
" দরজার লক এক্কেবারে ইন্ট্যাক্ট। চাবি দুই কপি, হাসবেন্ড চিটাগাং নিয়ে গিয়েছিলেন একটা আর আরেকটা ওয়াইফের কাছে, না মানে এখন আমাদের কাছে ল্যাবে। সিকিউরিটি গার্ড বলছে, সে জুম্মার নামাজ পড়তে যখন যায় তখন গেটের এখানে কেউ ছিলো না। ঘটনা ঘটেছে আনুমানিক ২টা-৩টার দিকে। অথচ হাসবেন্ড বলছেন রাত ১০ টায় তাঁর সাথে তাঁর স্ত্রীর কথা হয়েছে ফোনে। ফোনটা খুঁজে পাওয়া যায় নি স্যার।শেষ location track করে পাওয়া গেছে টংগী ইস্টেশনের কাছে। আলমারি থেকে টাকা-পয়সা, গহনা কিছুই নেয়া হয়নি, শুধু হ্যান্ড ব্যাগের ক্যাশ নাই। "
" হাসবেন্ড কোথায়? "
" রিমান্ডে, ইয়ে মানে victimর ফ্যামিলি থেকে প্রেশার দিয়েই আরকি..। লাশটা বিছানায় ছিলো, সারা ঘর রক্তেমাখা.. ছবি আছে। "
" জানালা বা অন্যকোন দরজা? "
" স্যার,ইয়ে মানে খুনি মেইন গেট দিয়েই ঢুকেছে, ঘরে ধস্তাধস্তির কোন চিহ্ন নাই, মানে victim killer চেনে। তাই পুলিশ আগে হাসবেন্ডকে আগে ধরেছে। কিন্তু ট্রেনের টিকেট, হোটেল, মোবাইল ফোনের কল লগ সবই হাসবেন্ডের পক্ষে।বেশীদিন আটকাতে পারবেনা। অন্য কোন জানালা,দরজা টেম্পারিং হয়নি। "
" ভালো কথা, আপনি জানেন তো আমাদের কাজটা কি? "
" আমাদের কাজটা স্যার patternবের করা, এর জন্য এই চারটা case Details জানতে হবে,একেবারে উপর থেকে Eagle eyes দিয়ে দেখতে হবে। চারটা ঘটনা একসাথে...."
" হ্যা, সেই জন্য চারটা কেসের একটা summary report তৈরি করবেন, সেটা আমাকে এক কপি কালকে সকালে দিবেন। চলেন যাওয়া যাক। "
এপার্টমেন্ট থেকে বের হয়ে আলমগির কবির গাড়িটা ছেড়ে দিলেন, এরপর বিমল করের সঙ্গে বাইক চেপে রওনা হলেন।

Date : Sunday, 26/November/2017.
Time: 02:30am.
Place : Moynaboti Dokkhinachol Model Town.
Chairman Office.
কড়া ঠান্ডা Airconditioned কাঁচের ওয়েটিংরুম। সামনে চেয়ারম্যানের অফিসকক্ষ, সেটাও চারদিকে কাঁচের দেয়ালে ঘেরা। ওয়েটিংরুমের সোফায় গা এলিয়ে ইন্সপেক্টর আলমগির কবির বসে আছেন। তাঁর পাশে সাব ইন্সপেক্টর বিমল কর মেরুদণ্ড খাড়া করে বসে,চোখের চশমাটা মাথায় গুঁজে রেখে, ভুরু জোড়া উঁচু করে পত্রিকা পড়ছেন। আলমগির কবির ঘড়িদেখে চেয়ারম্যানের অফিসকক্ষর দিকে তাকালেন। চেয়ারম্যান শমশের চৌধুরী চেয়ারে বসে ইশারায় নামাজ পড়ছেন,তাঁর পিওন তাঁর লাঞ্চ একটা টিফিন বক্স থেকে বের করে টেবিলে রাখা থালার ওপর সাজাচ্ছে। আলমগির সাহেব বিরক্ত হলেন। বিমল কর পত্রিকাটা ভাঁজ করে সামনে টেবিলে রেখে, হাতের ইশারায় একটা ছেলেকে ডাকলেন,
" এই বাবু এই, এদিকে, এদিকে আসো, তোমার নাম কি? "
" আমাকে বলছেন? আমার নাম রতন "
" রতন, তুমি কি কাজ কর এখানে? "
" আমি ওইযে ডিজি স্যার আছেনা, তার পিওন "
" ওহ, খুবই ভালো কথা, তুমি কি এক কাপ চা খাওয়াইতে পারবা? "
" জ্বী পারবো। দুধ চা না লাল চা?"
" দুধ চা কিন্তু দুধ একটু কম দিবা,চিনি বেশী হবে, স্যার আপনি?"
" নাহ আপনি খান।"
" রতন, যাও ভালো করে এককাপ দুধ চা বানায়ে নিয়ে আসো, যেভাবে বললাম। "
আলমগির কবির আবার চেয়ারম্যানের অফিসকক্ষর দিকে তাকালেন, শমশের চৌধুরীর নামাজ শেষ হয়েছে, তিনি খাওয়া শুরু করেছেন। শমশের চৌধুরী, মোটাসোটা, গোলগাল,মেহেদী রঙা চাপ দাড়ি, কালো বড় চোখ, প্রথম দর্শনে অনেকটা বোলতার মত লাগে দেখতে, বয়স ৫০-৫৫ বছর। আলমগির কবির আবার ঘড়ি দেখলেন। পাশে বিমল কর তাঁর মোটরসাইকেলের চাবি দিয়ে কান চুলকাচ্ছেন আর গুনগুন করে গান করছেন। সুর যতটুকু বোঝা যায় তাতে মনে হচ্ছে হিন্দিগান,
" ধীরেধীরে সে মেরে জিন্দেগী মে আনা,
ধীরেধীরে সে মেরে দিলকো চুরানা। "
রতন ক্ষানিকবাদে চা নিয়ে এল। বিমল বাবু খুব আগ্রহ করে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে, সুরু দিয়ে এক চুমুক চা পিরিচে ঢেলে খেলেন, তারপর চোখ বন্ধ করে তৃপ্তি সহকারে বলনে,
" আহ! তুমি দশে আট পেয়েছ যাও, থ্যাংকইউ! "
আলমগির সাহেবের পেটে একটা কুনকুনে ব্যাথা শুরু হল। তিনি মুখ কুঁচকে চুপচাপ বসে রইলেন। বিমল বাবু পিরিচে চা ঢেলে সুরু দিয়ে খেতে থাকলেন। শমশের চৌধুরীর খাওয়া শেষ হয়েছে। শমশের চৌধুরীর পিওন এসে বলল,
" স্যার আপনারা ভিতরে যান। "
"আসলামু আলাইকুম, আসেন বসেন, আমি শমশের চৌধুরী। "
"ওলাইকুম, আমি ইন্সপেক্টর আলমগির কবির, Investigation Officer, PBI। উনি বিমল কর, সাব ইন্সপেক্টর.."
" PBI। Nice to meet you sir। "
বিমল বাবু গদগদ হয়ে উত্তর দিলেন।
" আসলে আপনারা তো সবই জানেন, প্রথম ঘটনাটার পর আমরা ব্যাপারটাকে টাকা পয়সা দিয়ে একটু Hide করতে চেয়েছিলাম, গরিব মানুষ, আগে পিছে কেউ নাই, even dead body claim করতে কেউ আসেনি, বুঝতে পারছেন? আপনাদের কি মনে হয়?"
"দেখেন এটা একটা Serial Killing Case, বেশ সিরিয়াস! এবং আরও খুন হতে পারে সে ব্যাপারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আর আপনার Head of security কে বলবেন তারা যেন অযথা পানি ঘোলা না করে CCTV র সব Recorded footage PBI কে Handover করেন এবং আমরা আপনাদের মডেল টাউনের surveillance roomএ PBI'র analysts team কে place করব। আশাকরি আপনার সহযোগিতা পাব। "
" জ্বী, জ্বী অবশ্যই। "
" আপনি কোন চিন্তা করবেন না স্যার আমরা তো আছিই। শুধু আমাদের মানে একটু Cooperate করবেন ব্যাস।"
বিমল কর আগেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। আলমগির কবির উঠে হ্যান্ডসেকের জন্য হাতটা বাড়িয়ে দিলেন শমসের চৌধুরীর দিকে।

Date : Sunday, 26/November/2017.
Time: 10:30pm.
Place : Moddho Para
রিতা রানী আজকে একটা নতুন সুতির শাড়ি পরেছেন। শাড়িটা বিমল বাবু আজ সন্ধ্যায় তাঁকে বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে উপহার দিয়েছেন। রিতা রানী বেশ খুশী খুশী মনে খাবার টেবিলে খাবার সাজাচ্ছেন। রুই মাছের ঝোল সিম দিয়ে রান্না করা হয়েছে, ল্যাবড়া, সোনামুগ ডাল আর লাল আলুভর্তা। পাশের শোবার ঘরে বিমল বাবু বাথরুম থেকে বের হয়ে তার প্রিয় সনির ক্যাসেট প্লেয়ারটাতে মিহি ভলিউমে গান ছাড়লেন, বেস্ট অব কুমার শানু,
" রুঠ না জানা তুমসে কাঁহু তো
ম্যায় ইন আঁখো মে যো রাঁহু তো"
গানের ভলিউম জোরে দেয়া যাবেনা,খাবার ঘরে তুতান পড়ছে। তুতান বিমল করের একমাত্র ছেলে। এবার ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিবে। ওর মাথা বেশ পরিষ্কার। কিন্তু এখন যে রকম সময় তাতে বিমল বাবুর ভয় হয়, সময়টা একেবারে সস্তা, চারপাশে সব কিছু বিকিয়ে যাচ্ছে, এই বেচাকেনার মাঝে ছেলেটা যদি তার মেধার ন্যায্য দাম না পায়? তুতান একেবারে তার ঠাকুরদার মত হয়েছে, দেখতে যেরকম, আচার ব্যবহারেও ঠিক তেমনি, রাশভারী টাইপের। এতটুকু ছেলে কোথায় হাসি তামাশা করবে, না তো সারাদিন চৌদ্দরকমের বইয়ে মাথা গুঁজে বসে থাকে। বিমল বাবু খাবার টেবিলে এসে বসলেন,
" কি রে তুতান, আয়, খাবি না? "
" হুম, আসছি.. "
" তোর প্রিপ্যারেশন কেমন? "
" ভালো, শুধু ইংরেজিটা একটু খারাপ। "
" ইংরেজি! কেন?.. তোর এজন্য কি মন খারাপ? "
" নাহ, চেষ্টা তো করছি। "
" তাহলে যে?"
" ওই, কয়েশ্চেন ফাঁস হচ্ছে! "
" কয়েশ্চেন ফাঁস হচ্ছে মানে! ওটা নিয়ে তোমার মাথা ঘামানোর দরকার নাই,তুমি তোমার লড়াইটা লড়বে, ব্যাস। তাহলেই আমরা খুশি!"
" happy wedding anniversary বাবা!"
" ও বাবা! আবার Wedding! আমরা তো marriage পর্যন্ত জানতাম রে! "
তুতান একটু মিচকি হেসে বাবার পাশে এসে বসলো।রিতা রানী দুইজনের থালায় ভাত বেড়ে দিলেন।
" মা, তুমি আজকে বসো না আমাদের সাথে। "
" না, তোমরা খেয়ে নাও, আমি পরে বসছি। "
"আহা, বসো না,ছেলে এত করে বলছে.. "
রিতা রানী স্বামী, ছেলের দিকে তাকিয়ে হাসিমুখে টেবিলে খেতে বসলেন।
" হ্যা রে তুতান, তুই বড় হয়ে কি করবি, কিছু ঠিক করেছিস?"
" না, তবে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চেষ্টা করবো,ফিজিক্স। "
" না আমি বলছি ব্যবসা বাণিজ্য কিছু করবি, মামাদের মত? "
" ও মা! একি কথা?তুতান ডাক্তারি পড়বে, বড় ডাক্তার হবে, এটা আমার ইচ্ছা।"
" না আজকাল চাকরির যে অবস্থা, তার চেয়ে ব্যবসা করলে অনেক পয়সা। অবশ্যি ডাক্তারিতেও অনেক পয়সা তবে বিদেশী ডিগ্রী লাগবে।"
" হুম, আগে ইন্টার পরীক্ষাটা দেই, ওইসব নিয়ে পরে ভাবা যাবে। "
" না রে শোন, আজকাল বিল্ডার্সদের ব্যবসা হেব্বী চলছে, কোটি কোটি টাকার খেলা! "
" আহা তুমি খাও তো, ছেলেটার মাথা খেতে হবে না। "
" না, আজকে গেছিলাম ময়নাবতি মডেল টাউনের চেয়ারম্যানের কাছে,মানে এ যেন ছোটখাটো একটা রাজ্যের রাজা! "
তুতান খেতে খেতে মুচকি হাসে, বিমল বাবু তাঁর ছেলেকে ভালোকরেই চেনেন, সে অন্য কারো কথায় কান দিবেনা, সে যেটা ভালো বুঝবে সেটাই করবে। এইজন্য বিমল বাবু মাঝেমাঝে গর্বিত বোধ করেন। খাওয়া শেষ করে বিমল বাবু একটা পান মুখে দিয়ে, সিগারেট ধরিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন। আয়েশ করে সিগারেটে একটা টান দিলেন। আজ তাঁর ২০ তম বিবাহ বার্ষিকী। তিনি মনে মনে আনন্দ অনুভব করলেন। সিগারেটটা শেষ করে বারান্দায় রাখা একটা মরা ফুল গাছের টবের মাটিতে গুঁজে দিলেন। পেছন থেকে রিতা রানী ফোড়ন কেটে বললেন,
" আর কদিন পর সিগারেটের গাছ গজাবে, দেখ।"
বিমল বাবু হাসতে হাসতে ঘরে ঢুকলেন।
" তুতান, তোর ল্যাপটপটা ধার দিবি একটু?অফিসের কিছু কাজ করবো। "
"নিতে পার, কিন্তু টাইপিং হলে তোমার সময় নষ্ট হবে। "
" তুই সেট করে দে, সারারাত আছে কোন সমস্যা নেই।"
" দিচ্ছি, আমাকে বল আমি করে দেই। "
" না সব confidential case summary "
" ওকে, তাহলে সেভ করে রেখ না আবার। "
" না ইন্টারনেট লাগিয়ে দিবি, মেইল করে দিবো। "
ছেলের ল্যাপটপ হাতে পাওয়ার পর বিমল বাবু প্রথম যে কাজটা করতে চাইলেন, তাহলো History check। যদিও তাঁর ধারনা তুতানের মত বুদ্ধিমান ছেলে ওটা পরিষ্কার করে থাকবে, তারপরও একেবারে ক্লিন কিনা সেটা দেখার জন্য ঢুকলেন। তুতান এই মাত্র একটা বই হাতে নিয়ে পড়ছে, বইয়ের নাম "স্কারফেস", লেখক আর্মিটেজ ট্রেইল। বিমল বাবু হিস্ট্রি খুলতে গিয়ে দেখল অসংখ্য ট্যাব খোলা অবস্থায় আছে, এবং সবগুলি "সার্ন" সংক্রান্ত। তিনি তাঁর History check করার আগ্রহ হারিয়ে ফেললেন। তাঁর হাতের বাম পাশে অনেক গুলি Official ফাইল। তিনি প্রথম একটা খুললেন। তারপর এমএস ওয়ার্ডের একটা নতুন ফাইল খুলে তাতে লিখতে আরাম্ভ করলেন।
১ নং:
কেস নাম্বার :সি.এ. ৩২/০৬ (সিপিএল এ ৯৮৭/২০১৭)
প্রতিবেদন তারিখ:১১/০৪/২০১৭ ইং
প্রতিবেদন সময় : দুপুর ১:০০ টা।
‎প্রতিবেদনকারী কর্মকর্তা : খোরশেদ আলম।
প্রতিবেদক : মোঃ শাহিন।
অপরাধ : খুন
অপরাধ সংগঠনের সময়:১১/০৪/২০১৭ ইং, রাত ২-৩ টা আনুমানিক।
অপরাধের স্থান: বাড়ি নং ৬, রোড নং ৬, ব্লক এফ,ময়নাবতী দক্ষিণাচল মডেল টাউন।
নিহতের বিবরণ : যুবক।
নাম: ফোরকান আলী।
স্থায়ী ঠিকানা: ৩৪/এ, বোথলা পাড়া, রোকেয়া কলেজ রোড, রংপুর সদর, রংপুর।
উচ্চতা:৫'৪"
ওজন: ৬৫ কেজি
চুলের রঙ: কালো
চোখের রঙ: কালো
লিঙ্গ : পুরুষ
পোশাক : লাল গেঞ্জি, সবুজ ও নীল চেকের লুঙ্গী। গলায় কালো কারে বাধা তাবিজ (২টি), বাহুতে কালো কারে বাধা তাবিজ (১টি), বাম হাতের মধ্যমাতে তামার আংটি (১টি)।
বয়স: ৩০ বছর।
জন্ম তারিখ : ২১/০৩ / ৮৭ ইং
ন্যাশনাল আইডি : ৩২১৬৫৯৮২৩৪০৩২
বিশেষ চিহ্ন: পেটে কালো তিল আছে।
পেশা :এপার্টমেন্টের ব্যাক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ।
অফিসের ঠকানা: বাড়ি নং ৬, রোড নং ৬, ব্লক এফ,ময়নাবতী দক্ষিণাচল মডেল টাউন।
অদৃশ্যমান অঘাত : নেই। তবে ফরেনসিক প্রতিবেদনে বাম হাতের পেশীতে ইঞ্জেকশন প্রয়োগের আলামত পাওয়া গেছে।নিহত কে খুনের পূর্বে Succinylcholine প্রয়োগ করার আলামত পাওয়া গেছে।
দৃশ্যমান আঘাতের বিবরণী : বাম কানের নিচ থেকে ডান কানের নিচে পর্যন্ত একটানা ১০" দৈর্ঘ্য, প্রস্থ্য ৫", ৫" গভীরতার আঘাতে শ্বাসনালিকা কাটা হয়েছে( Ear to ear throat cut)।
বাম কানের বৃন্ত (Tragus) থেকে উপবৃত্তাকারভাবে ৭৩" পরিধির, ২" গভীরতার আঘাতে কেটে সম্পূর্ণ মুখের চামড়া তুলে নেয়া হয়েছে। সুক্ষ কাটা। মূখের চামড়া নিখোঁজ।
ব্যবহিত অস্ত্র : নিখোঁজ।
১নাম্বার :ধারাল অস্ত্র। সম্ভবত,
Scalpel No. 184, 4 Graduated, 4 Long, 6A 12.7 mm chisel blade.
২ নাম্বার :
Succinylcholine:
SUX সংক্ষিপ্ত। Neuromuscular Paralytic Drug.স্নায়ু এবং পেশীর সংযোগ স্থলে কাজ করে, ফলাফল পেশীতন্ত্রর অসাড়তা। শুধুমাত্র পেশীতন্ত্রর অসাড়তা আনে, কোন প্রকার চেতনা নাশ করে না।
বিবরণী :
ভোর ৬:৪৫ মিনিটে ময়নাবতী মডেল টাউন থানার ডিউটিরত কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম,বহুতল বিশিষ্ট বাসভবনের নিরাপত্তা রক্ষীদের বিশ্রাম কক্ষে নিহতের লাশ খুঁজে পাওয়ার প্রসঙ্গে একটি টেলিফোন কল পান। টেলিফোন কলকারি নিজেকে ইউসুফ রহমান,একোমডেশন ম্যানাজার, নামে পরিচয় দেন।
সকাল ৭:২৩ মিনিটে ময়নাবতী মডেল টাউন থানার সাব ইন্সপেক্টর রেজাউল করিম, তাঁর চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্তকারী দল নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং থানায় রেডিও মারফত লাশের উপস্থিত নিশ্চিত করেন। তিনি জরুরী ভিত্তিতে থানার ইন্সপেক্টর এবং ময়নাতদন্তকারী দল সহ একটি প্রতিবেদক দলের সাহায্য চান।
৭:৪৫ মিনিটে প্রতিবেদক দল ঘটনাস্থলে পৌছায়, ইন্সপেক্টর মুক্তাদির আহমেদ প্রাথমিক পরিদর্শনেই খুনের ঘটনা নিশ্চিত করেন। নিহতকে নিরাপত্তা রক্ষীদের বিশ্রামাগারে নিজ কক্ষে ,নিজ বিছানার ওপর শবাসনে পাওয়া যায়। নিহতের চোখ খোলা ছিলো, ঘাড়ের নিচে বালিশ দিয়ে গলাটা উঁচু করে রাখা ছিল। ঘরের দরজা খোলা ছিলো ( প্রথম দর্শক মতে), তবে ভেড়ানো ছিলো।
৯:৪৫ মিনিটে ইন্সপেক্টর মুক্তাদির আহমেদ প্রাথমিকভাবে পর্যবেক্ষণের কাজ শেষ ঘোষণা করেন এবং অপরাধ স্থল পরিস্কার করে নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানোর আদেশ দেন।
১০:০০ মিনিটে লাশ ময়নাতদন্তর উদ্দেশ্যে স্থানান্তর করা হয়।
সারাংশ:
ঘতক চিহ্নিত হয় নি। ঘরের দরজা স্বাভাবিকভাবে খোলা ছিলো। ঘরে কোন প্রকার ধস্তাধস্তির আলামত পাওয়া যায়নি। বিছানার পাশের টেবিলে একটি কেরু এন্ড কং রোজা রামের ৭৫০ এম.এল বোতল পাওয়া গেছে,যেটাতে তিনজন ব্যাক্তির হাতের ছাপ পাওয়া গেছে,যার একজন নিহত নিজে এবং অন্য দুইজন অজ্ঞাত। এছাড়া নিহতের শরীরেও ঐ অজ্ঞাত ব্যক্তিদ্বয়ের হাতের ছাপ পাওয়া গেছে। হাতের ছাপ থেকে দুজন অজ্ঞাত ব্যক্তির বয়স অনুমান করা যায় ৫০ বছেরর ঊর্ধ্বে, উচ্চতা মাঝারী, স্বাস্থ্যবান। নিহতের পরিবারের কেউ জীবিত নেই। নিকটাত্মীয়দের কেউ লাশ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি।
২ নং:
কেস নাম্বার :সি.এ. ৩৫২/০৬৯ (সিপিএল এ ৯৭/২০১৭)
প্রতিবেদন তারিখ:২৭/০৬/২০১৭ ইং
প্রতিবেদন সময় : সকাল ৯:০০ টা।
‎প্রতিবেদনকারী কর্মকর্তা : উত্তম কুমার দাস।
প্রতিবেদক : মোঃ শাহিন
অপরাধ : খুন
অপরাধ সংগঠনের সময়:২৬/০৬/২০১৭, দুপুর ২-৩ টা আনুমানিক।
অপরাধের স্থান: বাড়ি নং ৫, রোড নং ৫, ব্লক এইচ ,ময়নাবতী দক্ষিণাচল মডেল টাউন।
নিহতের বিবরণ : কিশোর /তরুণ ।
নাম: মনাই কুমার ।
স্থায়ী ঠিকানা: কানসাট কলোনি , কানসাট গোপালনগর মোড়, কানসাট, চাপাই নবাবগঞ্জ ।
উচ্চতা:৫'২"
ওজন: ৬২কেজি
চুলের রঙ: কালো
চোখের রঙ: কালো
লিঙ্গ : পুরুষ
পোশাক : কালো সেন্ডো গেঞ্জি, খয়েরী,হলুদ চেকের লুঙ্গী। বাম বাহুতে লাল সুতায় বাধা মাদুলি (১টি)।
বয়স: ১৬ -১৭বছর
জন্ম তারিখ : অজানা।
ন্যাশনাল আইডি : নাই।
বিশেষ চিহ্ন: বাম হাতে পুরাণো ১৪ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যর ব্লেড টানা চিকন ক্ষত চিহ্ন আছে।
পেশা : রাজমিস্ত্রী।
অফিসের ঠিকানা: বসুধা বিল্ডার্স, কালী মন্দির, বাজার রোড, গাজীপুর ।
অদৃশ্যমান অঘাত : নেই। তবে ফরেনসিক প্রতিবেদনে বাম হাতের পেশীতে ইঞ্জেকশন প্রয়োগের আলামত পাওয়া গেছে।নিহত কে খুনের পূর্বে Succinylcholine প্রয়োগ করার আলামত পাওয়া গেছে।
দৃশ্যমান আঘাতের বিবরণী : বাম কানের নিচ থেকে ডান কানের নিচে পর্যন্ত একটানা ৮" দৈর্ঘ্য, প্রস্থ্য ৫", ৫" গভীরতার আঘাতে শ্বাসনালিকা কাটা হয়েছে( Ear to ear throat cut)।
বাম কানের বৃন্ত (Tragus) থেকে উপবৃত্তাকারভাবে ৭০" পরিধির, ২" গভীরতার আঘাতে কেটে সম্পূর্ণ মুখের চামড়া তুলে নেয়া হয়েছে। সুক্ষ কাটা। মূখের চামড়া নিখোঁজ।
ব্যবহিত অস্ত্র : নিখোঁজ।
১নাম্বার :ধারাল অস্ত্র। সম্ভবত,
Scalpel No. 184, 4 Graduated, 4 Long, 6A 12.7 mm chisel blade.
২ নাম্বার :
Succinylcholine:
SUX সংক্ষিপ্ত। Neuromuscular Paralytic Drug.স্নায়ু এবং পেশীর সংযোগ স্থলে কাজ করে, ফলাফল পেশীতন্ত্রর অসাড়তা। শুধুমাত্র পেশীতন্ত্রর অসাড়তা আনে, কোন প্রকার চেতনা নাশ করে না।
বিবরণী :
সন্ধ্যা ৬:৩০ মিনিটে ময়নাবতী মডেল টাউন থানার ডিউটিরত কর্মকর্তা নিমাই হালদার , নির্মাণাধীন বহুতল বিশিষ্ট বাসভবনের ৫ম তলায় নিহতের লাশ খুঁজে পাওয়ার প্রসঙ্গে একটি টেলিফোন কল পান। টেলিফোন কলকারি নিজেকে শামসুলউলামা ,রাজ মিস্ত্রীর সর্দার , নামে পরিচয় দেন।
সন্ধ্যা ৭:৪০ মিনিটে ময়নাবতী মডেল টাউন থানার সাব ইন্সপেক্টর রেজাউল করিম, তাঁর চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্তকারী দল নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং থানায় রেডিও মারফত লাশের উপস্থিত নিশ্চিত করেন। তিনি জরুরী ভিত্তিতে থানার ইন্সপেক্টর এবং ময়নাতদন্তকারী দল সহ একটি প্রতিবেদক দলের সাহায্য চান।
রাত ৯:৪৫ মিনিটে প্রতিবেদক দল ঘটনাস্থলে পৌছায়, ইন্সপেক্টর মুক্তাদির আহমেদ প্রাথমিক পরিদর্শনেই খুনের ঘটনা নিশ্চিত করেন। নিহতকে ৫ম তলার নির্মাণাধীন একটি ঘরে শীতল পাটীর অপর চিৎ হয়ে পড়ে থাকা অবস্থায় পাওয়া যায়। নিহতের চোখ খোলা ছিলো, ঘাড়ের নিচে একটা ইট দিয়ে গলাটা উঁচু করে রাখা ছিল।

রাত ১১:০০টায় ইন্সপেক্টর মুক্তাদির আহমেদ প্রাথমিকভাবে পর্যবেক্ষণের কাজ শেষ ঘোষণা করেন এবং অপরাধ স্থল পরিস্কার করে নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানোর আদেশ দেন।
রাত ১১:৪০ মিনিটে লাশ ময়নাতদন্তর উদ্দেশ্যে স্থানান্তর করা হয়।
সারাংশ:
ঘতক চিহ্নিত হয় নি। কোন প্রকার ধস্তাধস্তির আলামত পাওয়া যায়নি। তবে নিহতের পাশে তাস আর খুচরা পয়সা ছড়ানো ছিটানো অবস্থায় পাওয়া যায়।সম্ভব্য জুয়ার আসরের আলামত দেখে নিহতসহ তিনজন ব্যাক্তির উপস্থিতির টের পাওয়া যায় , অন্য দুইজন অজ্ঞাত। নিহতের শরীরেও অজ্ঞাত ব্যক্তিদ্বয়ের হাতের ছাপ পাওয়া গেছে। হাতের ছাপ থেকে দুজন অজ্ঞাত ব্যক্তির বয়স অনুমান করা যায় ৫০ বছেরর ঊর্ধ্বে, উচ্চতা মাঝারী, স্বাস্থ্যবান। লাশ ময়নাতদন্তের পর নিহতের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
শামসুলউলামা তাঁর জবানবন্দীতে বলেছেন, তিনি ঘটনা স্থলে ছিলেন না, ঈদের ছুটিতে গাজীপুরে নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন। বিকাল বেলা তিনি নিহতকে কিছু খাবার আর বাজার দিতে তাঁর ভাই ফরিদ কে সাথে নিয়ে এসেছিলেন।উল্লেখ্য ঈদেরছুটির কারনে ঐ সময় নির্মাণাধীন ভবনের কাজ বন্ধ ছিলো,নিহতের দায়ীত্ব ছিলো সাইট পাহারা দেয়া। শামসুলউলামা খুনের কারন হিসাবে জুয়া খেলার ঘটনাকে বিশেষভাবে দায়ী করেছেন।

৩ নং:
কেস নাম্বার :সি.এ. ৭৪/০৯ (সিপিএল এ ৮৭৬/২০১৭)
প্রতিবেদন তারিখ:১১/১০/২০১৭ ইং
প্রতিবেদন সময় : রাত ১০:০০টা।
‎প্রতিবেদনকারী কর্মকর্তা : হাসান তৈয়াব ।
প্রতিবেদক : মোঃ ফয়েজ আহম্মদ
অপরাধ : খুন
অপরাধ সংগঠনের সময়: রাত ২-৩ টা আনুমানিক।
অপরাধের স্থান: বাড়ি নং ৪, রোড নং ৪ , ব্লক এফ,ময়নাবতী দক্ষিণাচল মডেল টাউন।
নিহতের বিবরণ : প্রবীণ ।
নাম: সৈয়দ আলী আহসান।
স্থায়ী ঠিকানা: বাড়ি নং ৪, রোড নং ৪ , ব্লক এফ,ময়নাবতী দক্ষিণাচল মডেল টাউন।
উচ্চতা:৫'৮"
ওজন: ৭২কেজি
চুলের রঙ: সাদা
চোখের রঙ: কালো
লিঙ্গ : পুরুষ
পোশাক : কালো গেঞ্জি, সাদা কালো চেকের লুঙ্গী। বাম হাতে VULCAIN RETRO TWO TONG RED FACE GENTS WATCH।
বয়স: ৬৬ বছর
জন্ম তারিখ : ০২/০৬ /৫২ ইং
ন্যাশনাল আইডি : ৪৩১৪০৯৮২৬৫০৮৯
বিশেষ চিহ্ন: এপেন্ডিসাইটিস অপারেশন এর দাগ রয়েছে।
পেশা :সাংবাদিক।
অফিসের ঠিকানা: স্বদেশ বার্তা, সাইনবোর্ড বাস স্টপ,গাজীপুর।
অদৃশ্যমান অঘাত : নেই। তবে ফরেনসিক প্রতিবেদনে বাম হাতের পেশীতে ইঞ্জেকশন প্রয়োগের আলামত পাওয়া গেছে।নিহত কে খুনের পূর্বে Succinylcholine প্রয়োগ করার আলামত পাওয়া গেছে।
দৃশ্যমান আঘাতের বিবরণী : বাম কানের নিচ থেকে ডান কানের নিচে পর্যন্ত একটানা ৮.৫ " দৈর্ঘ্য, প্রস্থ্য ৫", ৫" গভীরতার আঘাতে শ্বাসনালিকা কাটা হয়েছে( Ear to ear throat cut)।
বাম কানের বৃন্ত (Tragus) থেকে উপবৃত্তাকারভাবে ৭০" পরিধির, ২" গভীরতার আঘাতে কেটে সম্পূর্ণ মুখের চামড়া তুলে নেয়া হয়েছে। সুক্ষ কাটা। মূখের চামড়া নিখোঁজ।
ব্যবহিত অস্ত্র : নিখোঁজ।
১নাম্বার :ধারাল অস্ত্র। সম্ভবত,
Scalpel No. 184, 4 Graduated, 4 Long, 6A 12.7 mm chisel blade.
২ নাম্বার :
Succinylcholine:
SUX সংক্ষিপ্ত। Neuromuscular Paralytic Drug.স্নায়ু এবং পেশীর সংযোগ স্থলে কাজ করে, ফলাফল পেশীতন্ত্রর অসাড়তা। শুধুমাত্র পেশীতন্ত্রর অসাড়তা আনে, কোন প্রকার চেতনা নাশ করে না।
বিবরণী :
সকাল ৭:০০ টায় ময়নাবতী মডেল টাউন থানার ডিউটিরত কর্মকর্তা মাইনুল ইসলাম ,সাংবাদিক সৈয়দ আলী আহসানের নিজ বাসভবনের বৈঠক খানায় নিহতের লাশ পাওয়ার প্রসঙ্গে একটি টেলিফোন কল পান। টেলিফোন কলকারি নিজেকে মো: সাব্বির ,পত্রিকাওয়ালা, নামে পরিচয় দেন।
সকাল ৭:৩০ মিনিটে ময়নাবতী মডেল টাউন থানার সাব ইন্সপেক্টর রেজাউল করিম, তাঁর চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্তকারী দল নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং থানায় রেডিও মারফত করে লাশের উপস্থিত নিশ্চিত করেন। তিনি জরুরী ভিত্তিতে থানার ইন্সপেক্টর এবং ময়নাতদন্তকারী দল সহ একটি প্রতিবেদক দলের সাহায্য চান।
৭:৪৫ মিনিটে প্রতিবেদক দল ঘটনাস্থলে পৌছায়, ইন্সপেক্টর মুক্তাদির আহমেদ প্রাথমিক পরিদর্শনেই খুনের ঘটনা নিশ্চিত করেন। নিহতকে নিজ বৈঠক খানায় তাঁর লেখার টেবিলে চেয়ারে হেলান দেয়া অবস্থায় পাওয়া যায়। নিহতের চোখ খোলা ছিলো, ঘাড়ের নিচে চেয়ারে হেলান দেয়া অংশটিতে গলাটা উঁচু করে রাখা ছিল। ঘরের দরজা খোলা ছিলো ( প্রথম দর্শক মতে), তবে বাইরের বারান্দার গ্রিলের দরজা তালা বন্ধ ছিল,যার চাবি নিহতের টেবিলে পাওয়া যায়।
১০:০০টায় ইন্সপেক্টর মুক্তাদির আহমেদ প্রাথমিকভাবে পর্যবেক্ষণের কাজ শেষ ঘোষণা করেন এবং অপরাধ স্থল পরিস্কার করে নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানোর আদেশ দেন।
১০:৩০ মিনিটে লাশ ময়নাতদন্তর উদ্দেশ্যে স্থানান্তর করা হয়।
সারাংশ:
ঘতক চিহ্নিত হয় নি। ঘরের দরজা এবং প্রধান ফটক স্বাভাবিকভাবে খোলা ছিলো। ঘরে কোন প্রকার ধস্তাধস্তির আলামত পাওয়া যায়নি। লেখার টেবিলে তিনটি চায়ের কাপ পাওয়া গেছে। যেগুলির প্রত্যেকটিতে তিনজন আলাদা ব্যাক্তির হাতের ছাপ পাওয়া গেছে,যার মধ্যে একজন নিহত নিজে এবং অন্য দুইজন অজ্ঞাত। এছাড়া নিহতের শরীরেও ঐ অজ্ঞাত ব্যক্তিদ্বয়ের হাতের ছাপ পাওয়া গেছে। হাতের ছাপ থেকে দুজন অজ্ঞাত ব্যক্তির বয়স অনুমান করা যায় ৫০ বছেরর ঊর্ধ্বে, উচ্চতা মাঝারী, স্বাস্থ্যবান। নিহতের মানিব্যাগ টাকা শুন্য অবস্থায় টেবিলের অপর পাওয়া যায়। নিহত চিরকুমার।একটি পোষা কুকুর আছে। খুনের সময় এটি উপস্থিত ছিলো সম্ভবত। এটিকে বারান্দায় শেকল বাধা, সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় পাওয়া যায়।
জাত : রোটওয়াইলার, জার্মানি।
বয়স: ৬ বছর ( আনুমানিক)।
লিঙ্গ : পুরুষ।
ওজন : ৬০ কেজি।
উচ্চতা: ৩'
রঙ : মেহগনি।
ময়নাতদন্তর পর নিহতের আপন ভাগ্নে, জনাব রইসুল ইসলাম তালুকদারকে নিহতের লাশ দাফনের জন্য হস্তান্তর করা হয়।
৪ নং:
কেস নাম্বার :সি.এ. ৩২২/০৩৪ (সিপিএল এ ৬৭৫/২০১৭)
প্রতিবেদন তারিখ:২৫/১১/২০১৭ ইং
প্রতিবেদন সময় : রাত ১১:০০ টা।
‎প্রতিবেদনকারী কর্মকর্তা : ইমরান শিকদার ।
প্রতিবেদক : মোঃ আলম পাটোয়ারী ।
অপরাধ : খুন
অপরাধ সংগঠনের সময়:২৪/১১/২০১৭, দুপুর ২-৩ টা আনুমানিক।
অপরাধের স্থান: বাড়ি নং ৩, রোড নং ৩, ব্লক ডি ,ময়নাবতী দক্ষিণাচল মডেল টাউন।
নিহতের বিবরণ : তরুণী ।
নাম: ফাতেমাতুজ্জহরা।
স্থায়ী ঠিকানা: ৪৫/এ, বনানী ১১ নম্বর, বনানী, ঢাকা।
উচ্চতা:৫'১"
ওজন: ৫৫ কেজি
চুলের রঙ: কালো
চোখের রঙ:কালো
লিঙ্গ : স্ত্রী
পোশাক : গাঢ় সবুজ প্রিন্টেড ম্যাক্সি।গলায় আনুমানিক ২০০গ্রাম সোনার চেন। বাম হাতের অনামিকায় আনুমানিক ১৫০ গ্রাম সোনার আংটি।
বয়স: ২৫ বছর।
জন্ম তারিখ : ২৩ / ০৭/ ৯২।
ন্যাশনাল আইডি : ৬২২৩২৭২৪৩৪৫৭৮।
বিশেষ চিহ্ন: নেই।
পেশা: গৃহিণী।
অফিসের ঠিকানা: নেই ।
অদৃশ্যমান অঘাত : নেই। তবে ফরেনসিক প্রতিবেদনে বাম হাতের পেশীতে ইঞ্জেকশন প্রয়োগের আলামত পাওয়া গেছে।নিহত কে খুনের পূর্বে Succinylcholine প্রয়োগ করার আলামত পাওয়া গেছে।
দৃশ্যমান আঘাতের বিবরণী : বাম কানের নিচ থেকে ডান কানের নিচে পর্যন্ত একটানা ৬.৩" দৈর্ঘ্য, প্রস্থ্য ৫", ৫" গভীরতার আঘাতে শ্বাসনালিকা কাটা হয়েছে( Ear to ear throat cut)।
বাম কানের বৃন্ত (Tragus) থেকে উপবৃত্তাকারভাবে ৬২" পরিধির, ২" গভীরতার আঘাতে কেটে সম্পূর্ণ মুখের চামড়া তুলে নেয়া হয়েছে। সুক্ষ কাটা। মূখের চামড়া নিখোঁজ।
ব্যবহিত অস্ত্র : নিখোঁজ।
১নাম্বার :ধারাল অস্ত্র। সম্ভবত,
Scalpel No. 184, 4 Graduated, 4 Long, 6A 12.7 mm chisel blade.
২ নাম্বার :
Succinylcholine:
SUX সংক্ষিপ্ত। Neuromuscular Paralytic Drug.স্নায়ু এবং পেশীর সংযোগ স্থলে কাজ করে, ফলাফল পেশীতন্ত্রর অসাড়তা। শুধুমাত্র পেশীতন্ত্রর অসাড়তা আনে, কোন প্রকার চেতনা নাশ করে না।
বিবরণী :
দুপুর ৩:৩০ মিনিটে ময়নাবতী মডেল টাউন থানার ডিউটিরত কর্মকর্তা শরীফ খান, বহুতল বিশিষ্ট বাসভবনের ৩য় তলায় নিজ শোবার ঘরে নিহতের লাশ খুঁজে পাওয়ার প্রসঙ্গে একটি টেলিফোন কল পান। টেলিফোন কলকারি নিজেকে রিয়াজ আহমেদ ,ব্যাবসায়ী , নিহতের স্বামী, নামে পরিচয় দেন।
বিকাল ৪:২০ মিনিটে ময়নাবতী মডেল টাউন থানার সাব ইন্সপেক্টর রেজাউল করিম, তাঁর চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্তকারী দল নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন এবং থানায় রেডিও মারফত লাশের উপস্থিত নিশ্চিত করেন। তিনি জরুরী ভিত্তিতে থানার ইন্সপেক্টর এবং ময়নাতদন্তকারী দল সহ একটি প্রতিবেদক দলের সাহায্য চান।
বিকাল ৫:০৫ মিনিটে প্রতিবেদক দল ঘটনাস্থলে পৌছায়, ইন্সপেক্টর মুক্তাদির আহমেদ প্রাথমিক পরিদর্শনেই খুনের ঘটনা নিশ্চিত করেন। নিহতকে ৩য় তলার D নং ফ্ল্যাটে নিজ শোবার ঘরে বিছানার ওপর চিৎ হয়ে পড়ে থাকা অবস্থায় পাওয়া যায়। নিহতের চোখ খোলা ছিলো, ঘাড়ের নিচে একটা বালিশ দিয়ে গলাটা উঁচু করে রাখা ছিল।
রাত ৮:০০ টায় ইন্সপেক্টর মুক্তাদির আহমেদ প্রাথমিকভাবে পর্যবেক্ষণের কাজ শেষ ঘোষণা করেন এবং অপরাধ স্থল পরিস্কার করে নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানোর আদেশ দেন। এবং রিয়াজ আহমেদকে সন্দেহভাজন বলে গ্রেফতার করা হয়।
রাত ৮:৩০ মিনিটে লাশ ময়নাতদন্তর উদ্দেশ্যে স্থানান্তর করা হয়।
সারাংশ:
ঘতক চিহ্নিত হয় নি। কোন প্রকার ধস্তাধস্তির আলামত পাওয়া যায়নি। নিহতে হাত ব্যাগ থেকে টাকা খোয়া গেছে। নিহতের হাত ব্যাগে এবং শরীরে অজ্ঞাত দুইজন ব্যক্তির হাতের ছাপ পাওয়া গেছে। হাতের ছাপ থেকে দুজন অজ্ঞাত ব্যক্তির বয়স অনুমান করা যায় ৫০ বছেরর ঊর্ধ্বে, উচ্চতা মাঝারী, স্বাস্থ্যবান। লাশ ময়নাতদন্তের পর নিহতের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
রিয়াজ আহমেদ তাঁর জবানবন্দীতে দাম্পত্যকলহর স্বীকার করলেও খুনের কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবী করেন, তিনি ব্যবসার কাজে চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন একদিনের জন্য। ঘটনার দিন রাতে ১০:০০টায় তার সাথে নিহতের মোবাইল ফোন মারফত কথা হয়েছে। নিহতের মোবাইল ফোন নিখোঁজ। শেষ কলের Location পাওয়া যায় টংগী স্টেশন।
এত দূর টাইপ করে বিমল বাবু থামলেন, একটা সিগারেট ধরিয়ে তাঁর ছেলের দিকে তাকালেন। তুতান বই বুকের ওপর নিয়ে ঘুমিয়ে গেছে। বিমল বাবু বারান্দায় গেলন। তিনি সিগারেট টানতে টানতে রাতের গভীরতা মাপবার চেষ্টা করলেন। সিগারেটটা শেষ হতেই তিনি প্রতিবারের মত মরা ফুল গাছের টবটার মাটিতে গুঁজে দিলেন। এরপর ঘরে ফিরে এসে তিনি আবার ল্যাপটপে টাইপ করতে বসলেন,
লক্ষণীয় :
১) ৪টি খুনের মধ্যে দিনের ব্যাবধান একই, ৭৫ দিন।
২) খুনের সময় আনুমানিক ২-৩টা রাত (২টি), দিন(২টি)। সংখ্যার দিক দিয়ে ২টা থেকে ৩ টার মধ্যে।
৩) খুনের প্রক্রিয়া একই এবং হাতের ছাপ থেকে প্রমাণিত হয় খুনি দুইজন। কিন্তু এই সবক্ষেত্রে দুইজন ব্যাক্তির উপস্থিতি সন্দেহ জনক।
৪) সব গুলি খুনের আলামত দেখে মনে হয়, খুনিরা নিহতদের পূর্ব পরিচিত।
৫) খুনের স্থান গুলির বাড়ি নম্বর আর রাস্তার নম্বর একই। খেয়াল করলে দেখাযাবে, এই নম্বর গুলি নিম্নগামী। বাড়ি এবং রাস্তার নম্বর গুলিকে ক্রমানুসারে সাজালে পাওয়া যায় ৬,৫,৪,৩ এরপর হতে পারে ২। অর্থাৎ যেকোনো ব্লকের ২ নম্বর রাস্তার, ২ নম্বর বাড়ি অথবা কোন একটি নির্দিষ্ট ব্লকের ব্লকের ২ নম্বর রাস্তার, ২ নম্বর বাড়ি।
অনুরূপভাবে ব্লক নম্বর গুলিকে ক্রমানুসারে সাজালে পাওয়া যায়,F, H,F,D।
৬) খুনের জন্য নিহতকে SUX প্রয়োগ করার কারন দুইটি হতে পারে,
ক) খুনের সুক্ষ প্রক্রিয়াটি নির্বিঘ্নে ও দ্রুত করতে পারা।কিন্তু সব ক্ষেত্রেই শিকারের বামহাতের মাংশপেশীতে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে SUX প্রয়োগ করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে SUX সম্পূর্ণভাবে কাজ শুরু করতে ৩ থেকে ৪ মিনিট লাগবে, এই সময়টুকু ধস্তাধস্তি করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু সেরকম কিছুর আলামত মেলেনি।
খ) চেতনা নাশ না করে, শুধু মাত্র মাংসপেশীকে অসাড় করে, যন্ত্রণা দিয়ে শিকারকে হত্যা করা, যাতে করে শিকার পুরো যন্ত্রণাদায়ক প্রক্রিয়াটি টের পায় । কিছু প্রকার কীট ও অমেরুদণ্ডী প্রানী এইরকমভাবে শিকার করে।( কিন্তু SUX প্রয়োগে কোনপ্রকার ventilatory support ছাড়া asphyxia হয়ে মারা যাবার সম্ভাবনা থাকে)
‎হতে পারে এটি SUX নয়, ঐ জাতীয় অন্যকিছু।
৭) এটি একটি ক্রমিক খুন। এইক্ষেত্রে শিকার বাছাইয়ের ব্যাপারে খুনি, নিঃসঙ্গ ব্যাক্তি কে শিকার হিসাবে বেছে নিয়েছে, তবে শিকারের চেয়ে বেশি স্থান ও সময়কে প্রাধান্য দিয়েছে।অর্থাৎ স্থান এবং সময়ের ভিত্তিতে শিকার বাছাই করা হয়েছে, সুতরাং শিকার বাছাই প্রায় বিচ্ছিন্ন, কিন্তু শিকারের স্থান এবং সময়ের ক্রমিকমান আছে।
৮) এই ক্রম অনুসারে পরবর্তী খুনের সম্ভব্য সময় রাত ২টা থেকে ৩ টার মধ্যে, বুধবার , ০৭ ই ফেব্রুয়ারি ২০১৮। সম্ভব্য স্থান কোন এক ব্লকের ২ নম্বর রাস্তার ২ নম্বর বাড়ি।

বিমল বাবু লেখা শেষ করে ফাইলগুলি গুছিয়ে বন্ধ করলেন, তারপর তার লেখা ফাইলটি ডেক্সটপে সেভ করে, আলমগির কবিরের অফিসিয়াল মেইল আইডিতে পাঠালেন। তারপর তিনি ফাইলটি ডিলিট করে ল্যাপটপ বন্ধ করতে যাচ্ছিলেন, কি মনে করে তিনি ব্রাউজারের হিস্টোরি বের করলেন। ব্রাউজার হিস্টোরি তাকে দেওয়ার আগে পরিষ্কার করা হয়েছে। তিনি ল্যাপটপ বন্ধ করলেন। খাবার ঘরের লাইট বন্ধ করে দিয়ে, বিমল বাবু শোবার ঘরে গেলেন। রিতা রানী একপাশ ফিরে শুয়ে বেঘোরে ঘুমচ্ছেন। ডীমলাইটের নীলচে আলোয় তাঁকে অপরূপ দেখাচ্ছে। বিমল বাবু আস্তে করে শোবার ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় শুয়ে বিথী রানীর পেটে হাত রাখলেন।

Date : Monday, 27/November/2017.
Time: 2:00am.
Place : Badda,Dhaka.
ঘুমের মধ্যে আলমগির কবির রেহানার কান্না শুনতে পেলেন। তাঁর পেটে একটা মোচড় দিয়ে পায়খানা চাপল, তিনি ঘুম থেকে উঠেই সোজা টয়লেটে গেলেন। কিছুক্ষণ পর টয়লেট থেকে বের হয়ে এসে আলমগির কবির বিছানায় চীৎ হয়ে শুয়ে রইলেন। রেহানা জায়নামাযে নামাজরত অবস্থায় কাঁদছেন। আলমগির কবিরের মন খারাপ হল। তিনি কি করবেন ঠিক বুঝতে পারলেন না। তিনি পেটে কুনকুন ব্যাথা অনুভব করলেন। রেহানা নামায শেষ করে এবার বিড়বিড় করে দোয়া পড়তে লাগলেন। আলমগির সাহেব তাঁর মোবাইলে মেইল চেক করতে লাগলেন। তিনি বিমল করের পাঠানো রিপোর্টটি মনযোগ দিয়ে পড়তে লাগালেন।

Date : Monday, 27/November/2017.
Time: 10:00am.
Place : PBI Headquater,Mirpur, Dhaka.
আলমগির কবির নিজের অফিস কক্ষে বসে, বিমল করের রিপোর্টগুলি প্রিন্ট দিচ্ছেন। এমন সময় বিমল বাবু দরজার কাছে এসে দাঁড়ালেন, দরজায় হালকা টোকা দিলেন।
" আসেন, বসেন, আপনার রিপোর্ট প্রিন্ট দিচ্ছি, অসাধারণ কাজ! SUX সম্পর্কে এত কিছু, মানে কিভাবে? "
" ডিবিতে থাকাকালীন একটা ট্রেনিং হয়েছিল, সেখানেই আরকি। "
" খুবই ইন্টারেস্টিং, আপনি বলছেন এটা SUX না। "
" আসলে কি স্যার, nature mimic technology বলে একটা টার্ম আছে। জাপানে বুলেট ট্রেন যে প্রকৌশলী তৈরি করেছিলেন, তিনি প্রথমে দেখেন,Kingfisher পাখি এক ডুবে পানির অনেক গভীরে গিয়ে মাছ ধরে আবার উপরে উঠে আসে, তিনি এই kingfisher এর এই ডুব দেয়ার কৌশলটাকে,ডুব দেওয়ার সময় এর শারীরিক ভঙ্গিমাকে কাজে লাগিয়ে বুলেট ট্রেনের নকশা করলেন। মজার ব্যাপার হল শুধু বিজ্ঞান বা কারিগরি দিকে না, খুনের ব্যাপারেও nature mimicing আছে। "
" মানে কিভাবে ? "
"মাকড়শারজাল, কিছু খুনি এইরকম জাল বিছিয়ে রাখে যেখানে শিকার নিজে এসে পড়ে, প্রথমে বুঝেতে পারেনা, জালে জরাতে থাকে, একসময় যখন ভালো ভাবে জরিয়ে যায়, তখন মাকড়শা নিজে আসে আরও ভালো করে জাল দিয়ে পেঁচিয়ে নেয়, তারপর খেলা শেষ। "
" এটাতো metaphor হয়ে গেল।"
" না, না, দাঁড়ান, আরও আছে স্যার। এই যেমন দলবেঁধে শিকার করে নেকড়ে, লালকুকুর। এরা শিকার ধরে বড় দেখে, বাছাই করে, যাতে দলে সকলে মোটামুটি সমানভাবে ভাগ পায়। এবার সবাই কিন্তু শিকার করেনা, সবাই সরাসরি হামলা করেনা, এদের মধ্য কিছু আছে যারা শিকার বাছাই করে দলের সবাইকে ডাকে, এরপর কয়েকটা শিকার কে দূর থেকে তাড়া করে ভয় দেখিয়ে নিজেদের সুবিধা মত জায়গায় নিয়ে আসে, তারপর কাছ থেকে দীর্ঘক্ষণ তাড়া করার জন্য আলাদা দল আছে, শিকার যখন ক্লান্ত হয়ে যাবে তখন প্রধান দল হামলা করে শিকারকে ধরাশায়ী করে ফেলে। "
" you mean group of Killers?"
"হুম হুম হু, আছে,মানে ছিলো এবং এখনো আছে। প্রাচীন ভারতবর্ষের ঠগিরা, বাংলায়ও ছিলো। এদের দলে ২০ থেকে শুরু করে ১০০, ২০০ জন পর্যন্ত থাকতো, এদের খুন করার প্রক্রিয়া নেকড়ের দল বা লালকুকুরের দলের মত। দলে বিভিন্ন কাজের জন্য বিভিন্ন লোক। কেউ শিকার বাছাই করছে, কেউ শিকারের বিশ্বাস অর্জন করছে, কেউ সময় মত শিকার কে ফাকা জায়গায় নিয়ে যাচ্ছে, তো কেউ ফাঁস দিয়ে খুন করছে, কেউ আবার লাশ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে, কেউ কবর খুঁড়ছে। Same to same, এখনো আছে। দলে ছোট। যেমন চট্টগ্রামের রাতের ট্রেনগুলিতে সুযোগ বুঝে গামছা দিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে মেরে চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দিচ্ছে। গত কয়েক বছরে এই লাইনের কিছু কিছু spotএ প্রায় দেড়শ মৃতদেহ পাওয়া গেছে। সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় আখাউড়া, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, কসবা, বি-বাড়িয়া হয়ে নরসিংদী পর্যন্ত।পুলিশ এই লাশগুলা বেশিরভাগ অজ্ঞাতপরিচয় বা আত্মহত্যা হিসেবে রেকর্ড করে। এই ধরেন সাথে থাকা মোবাইল, ক্যাশ টাকা। সর্বনিম্ন ২০ টাকার জন্যও এমন খুন হয়েছে রেকর্ড আছে। মূল উদ্দেশ্য খুন, এটা একধরনের নেশা। এখানে ইনকামটা ব্যাপার না।"
" ভয়াবহ! "
" হ্যা, নিজের অভিজ্ঞতার কথা কিছু বলি আপনাকে, আমার চাকরির তখন সবে ৩ বছর।তখন জাগুয়ার মজিদ নামে একজন পেশাদার খুনি, বাংলাদেশ, ভারত দুই দেশেই সমানে কন্ট্রাক্ট কিলিং করে বেড়াচ্ছে।এদিকে খুন করে ওপারে পালিয়ে থাকে, ওপারে খুন করে এখানে।ওর খুনের ধরনটা কি রকম, অনেকটা জাগুয়ারের মত, সে শিকারকে হঠাৎ হামলা করে আগে ভয় পাইয়ে দেয়, তারপর শিকারকে দৌড়ে পালাতে বাধ্য করে, শিকার দৌড়ালে সেও দৌড় দেয়, এটাকে সে একটা চ্যালেঞ্জ হিসাবে নেয়, তারপর শিকার ধরে S&W Model 10 রিভলভার মাথায় ঠেকিয়ে গুলি করে।এটাকে বলে তাড়া করে শিকার ধরা। একটাও মিস নাই।যে এলাকায় জাগুয়ার মজিদ কাজ করবে সেখানে কয়েকদিন থেকে জায়াগাটার রাস্তা ঘাট ভালো মত চিনে নিবে, তারপর কাজ করবে।বাংলাদেশের সব জায়গা তার নখদর্পণে। একবার হল কি, সে ওপারে Opposition এক নেতাকে খুন করে এদেশে পালিয়ে এল। ব্যাপারটা নিয়ে ওদেশের সরকার বেশ চাপে পড়ে গেল। 'র' আমাদের কে খবর দিলো জাগুয়ার মজিদ তাদের হাত ফসকে ভারতের মুলাই থেকে পালিয়ে দিনাজপুরের একটা গ্রাম বেতুরাতে চলে গেছে। চারজনের একটা টীম মাইক্রো বাসে করে চলেগেলাম বেতুরা।পৌনে চারটার দিকে বাড়িটা খুজে বের করলাম। শীতের রাত। দিনাজপুরে কনকনে ঠাণ্ডা।দরজা নক করতেই হঠাৎ জাগুয়ার মজিদ ঘরের খড়ের চালা ভেঙে দিলো দৌড়। একসময় ও একটা বড় ধান ক্ষেতের মধ্যে ঢুকে গেল , আমাদের দিকে গুলিও ছুড়তে লাগলো। আমার হাতে ছিলো CZ 75 BD Police, দৌড়াতে দৌড়াতে এক সময় জাগুয়ার মজিদকে ২৪ মিটারের মধ্যে পেয়ে গেলাম, হেড শট নিলাম,সহজ হিসাব।আর এক মিটার বেশী গেলেই রেঞ্জের বাইরে চলে যেত !"
" আপনি তো Daring রে ভাই! "
বিমল কর বোয়ালমাছের মত লাল দাঁতগুলি বের করে হাসতে হাসতে বলল,
"এটুকু সুনাম তো ডিপার্টমেন্টে আছেই, স্যার!"
" মোট কয়টা? "
" বেশি না স্যার, মাত্র ৬ টা।"
" যাইহোক আপনার রিপোর্টটা আমি আমাদের কাজের হালনাগাদ হিসাবে ASP স্যারের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি, আপনি নিচে আপনার নামে সই করে দেন। "
"জ্বী স্যার"
"আচ্ছা বিমল বাবু এই কেসের nature mimicing কোন ব্যাখা আছে? "
" জ্বী স্যার, অবশ্যই আছে স্যার। Blue Ringed Octopus। ছোট্ট জিনিষ, শিকার করে কেমন করে জানেন, প্রথমে শিকারকে পা দিয়ে জাপটে ধরে, তারপর নিজের শরীরে তৈরি একধরনের neurotoxin শিকারের শরীরে প্রয়োগ করে, ২-৩ সেকেন্ডের মধ্যে শিকারের মাংশপেশী অসাড় হয়ে যায়। শিকার থাকে জীবিত, কিন্তু নড়াচড়া বন্ধ। এরপর তা আস্তে আস্তে ভক্ষণ। মজার ব্যাপার হল এই একই প্রাণী আরেক ধরনের venom তৈরি করে যেটা শুধুমাত্র নিজের আত্মরক্ষার কাজে ব্যাবহার করে, এটা আগেরটার চেয়ে মারাত্মক, এক মিনিটের মধ্যে respiratory depression এবং paralysis হয়ে শত্রু মারা যায়। এটার কোন antivenom নাই।"
" অবাক করা ব্যাপার! "
" জ্বী স্যার, প্রকৃতি একটা কঠোর নিয়ম মেনে চলে। "
" আচ্ছা আমাদের হাতে তো হিসাব মত ৭২দিন আছে,patternটা তো শিওর করতে হবে।"
" আমি জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করতে চাচ্ছি। আমাদের অফিসে করলে টাইম সেভ হবে না।"
" তাহলে ময়নাবতি মডেল থানায় করি চলেন।কবে বলেন, আমি ইন্সপেক্টর মুক্তাদিরকে বলে এখনই ব্যাবস্থা করছি।লিস্টে কে কে আছে।"
" যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ।
১) ইউসুফ রহমান,একোমডেশন ম্যানাজার।
২) শামসুলউলামা ,রাজ মিস্ত্রীর সর্দার,বসুধা বিল্ডার্স।
৩) মো: সাব্বির ,পত্রিকাওয়ালা।
৪) রিয়াজ আহমেদ ,ব্যাবসায়ী।
৫)রফিকুল ইসলাম,ডিউটি অফিসার।
৬) ইন্সপেক্টর মুক্তাদির আহমেদ।
আজকে আমি একটু বের হচ্ছি জার্মান রোটওয়াইলারটার খোঁজে। "
" মানে, এখন কি কুকুরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন?"
আলমগির কবির আর বিমল কর দুইজনেই হো হো করে হেসে উঠলেন। বিমল বাবু কোনরকমে হাসি থামিয়ে বললেন,
" না, ডিটেল রিপোর্টে ওটার কথা কিছু লেখা নাই, কেন সেটা নিয়ে একটু আগ্রহ এই। "
" সেটাই, প্রত্যক্ষদর্শী কিন্তু ওই একজনই! "
বিমল বাবু হাসতে হাসতে বের হয়ে গেলেন।

Date : Monday, 27/November/2017.
Time: 1:00pm.
Place : Talukder Clothing Manufacturers Factories,Savar, Dhaka.
আধা ঘন্টা হল, বিমল বাবু রইসুল ইসলাম তালুকদার সাহেবের চেম্বারে বসে আছেন। রইসুল ইসলাম তালুকদার একটা জরুরী মিটিংয়ে আছেন। বিমল বাবু বসে বসে একমনে পত্রিকা পড়ে যাচ্ছেন। আরও ৪৫ মিনিট পর রইসুল ইসলাম তালুকদার আসলেন।
" সরি লেট হয়ে গেল, শ্রমিক ইউনিয়নের সাথে মিটিং ছিল। "
" না ঠিক আছে, আমি বিমল কর, PBI।"
" ও আচ্ছা, মামার কেসটার ব্যাপারে তো, বলুন কি জানতে চান?"
" পুলিশ তো সব তথ্য নিয়েইছে, আমি এসেছিলাম কুকুরটার ব্যাপারে জানতে, ওটাকে নিয়ে বেশী কিছু লেখা হয়নি। "
" ও, রাজা! মামার খুবই প্রিয় ছিলো, মামার হত্যার পর, আমি ওটাকে বাসায় নিয়ে যাই, বুড়ো কুকুর, তার মধ্যে এইরকম একটা ঘটনা, কেমন নেতিয়ে গিয়েছিল, আমার বাড়িতে সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতো, খাবার দিতে গেলে দূরে সরে গিয়ে ঘাড়ের লোম খাড়া করে ঘেউঘেউ করতো। "
" করতো মানে? "
" আসলে, কুকুরটাকে বাসায় আনার পর, ওটা আমার ড্রাইভার এবং আমার ছোটছেলেকে কামড়ে দেয়। তাই বাধ্য হয়ে সিটি কর্পোরেশনের সাহায্য নেই। "
"ও আচ্ছা! আমি তাহলে উঠি আজকে.. "
" এইটুকু জানার জন্যই কি.. "
" জ্বী এইটুকুই, কেন আপনি কি আরও কিছু জানেন? "
" না মানে, মামার বাড়ির প্লটটা নেয়ার জন্য এক প্রোমোটার বেশ কিছুদিন আগে তাকে খুব চাপ দিয়ে ছিলেন,গুম করে দেয়ার হুমকি ও দিয়ে ছিলেন।"
" আপনার মামা তো গুম হননি, তিনি খুন হয়েছেন, তার আগে আরও দুইজন একই পদ্ধতিতে খুন হয়েছেন।"
"না মানে.. মামা আমাকে বলেছিলেন.. "
" প্রোমটারের নাম জানেন? "
" বাইজিত, প্রগতি বিল্ডার্স "
" আসি, আপনার হাতের ঘড়িটা সুন্দর "
" জ্বী এটা মামার, স্মৃতি হিসাবে রেখেছি "
" ভালো থাকবেন।"

Date : Tuesday, 28/November/2017.
Time: 5:00pm.
Place : Moynabati Model Thana,Moynabati, Gazipur.
থানার ভেতর একটা অস্থায়ী Interrogation রুমের ব্যবস্থা করেছেন ইন্সপেক্টর মুক্তাদির আহমেদ। আলমগির কবির এবং বিমল কর দুইজন দুইটি চেয়ারে বসে আছেন। সামনে একটি কাঠের টেবিল, তার দুই প্রান্তে দুইজন বসে আছেন। অপর প্রান্তে এক একজন করে এসে বসে, জিজ্ঞাসাবাদ সেরে চলে যাচ্ছেন। সবশেষে এসেছেন রেজাউল করিম। বিমল বাবু তার অষ্টম সিগারেটটি ধরিয়ে রেজাউল করিম দিকে প্যাকেটটা বাড়িয়ে দিলেন,
" ভয় পাবার কিছু নেই, স্যার আপনাকে ডিটেলে ব্রিফ করবে, যেটা জিজ্ঞাস করবে সেটার উত্তর দিবেন। সিগারেট খেয়ে এক কাপ চা খান, রিলাক্স হয়ে শুরু করবেন, কোন ব্যাপার না।"
" রেজাউল করিম সাহেব, এই টেবিলের ওপর যে ডিভাইস টা দেখতে পাচ্ছেন, এটা একটা AV-Link Crime Pad। এটা আমাদের PBI এর নিজেস্ব একটা সার্ভারে সাথে সব সময় কানেক্ট থাকে এবং ১২ ঘন্টা পর এরকম সব গুলি ডিভাইসের ডাটা ওই নিজেস্ব সার্ভারে আপডেট হয়ে থাকে। আমরা এটা তে information,Interrogation,Reports কেস নাম্বার দিয়ে স্টোর করে থাকি। আপনি শুধু এটার ক্যামেরা বরাবর তাকিয়ে যেটা জিজ্ঞাস করা হয় তার উত্তর দিবেন।"
" জ্বী স্যার,শুরু করেন।"
"Ready বিমল বাবু? "
" জ্বী, ? 3,2,1 go!"
"এখন পর্যন্ত যে ৪টি খুন হয়েছে, সেগুলির প্রত্যেকটি Crime Scene এ আপনি প্রথম গিয়েছিলেন, রিপোর্ট করেছেন, এর বাইরে ৪টি কেসের একক ভাবে কোন যোগসূত্র চোখে পড়ে? "
" স্যার প্রতিটা Crime Scene এ অপরাধী বা অপরাধীরা victimর পূর্বপরিচিত মনে হয়েছে।যেমন:
১নং ক্ষেত্রে তালা ভাঙা বা কোন দরজা টেম্পারিংয়ের কোন আলামত পাওয়া যায়নি।রাতে অপরাধী victim র সাথেই তার ঘরে প্রবেশ করেছিল,খুন করে বাইরে থেকে ঘরের দরজা আটকাতে না পেরে দরজা যতটা সম্ভব ভেজিয়ে মেইন গেটে আগের মত তালা লাগিয়ে চলে যায়। টিপ তালাতে অপরাধীদের একজনের হাতের ছাপ পাওয়া গেছে। ৩নং এবং ৪নং ক্ষেত্রেও একইভাবে খুন করেছে। দুইটি ভিন্ন শ্রেনীর মানুষের সাথে কারো কিভাবে পরিচয় এবং এত ঘনিষ্ঠতা হতে পারে? এছাড়া ৪ জন victimই খুনের সময় একা ছিলেন। "
" আপনার Point কি? "
" স্যার আমার Point হল, এমন কে আছে যাদের সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের কাছে অবাধ আনাগোনা? "
" খুব ভালো বলেছেন, আপনার কি মনে হয়? "
" স্যার, সবার সামনে যে বা যাহারা victim র সাথে দেখা না করে, victim যখন একা, তখন আসবে।এই এলাকায় নিষিদ্ধ Drugs কেনাবেচা প্রচুর। একজন Drug dealer পারে অবাদে তার Clientর কাছে যেকোনো সময় যেতে।যদিও কোন আলামত পাওয়া যায় নি, তবে ইয়াবা হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। একটা সাঁড়াশী মারলেই বের হয়ে যাবে স্যার। "
“ ঠিক আছে ধন্যাবাদ আপনাকে। আমরা ব্যাপারটা দেখবো।আসলে Strong কোন Clue না পাওয়া গেলে এইদিকে আগাতে পারছিনা। ”
সবার ইন্টারোগেশন হয়ে গেলে, ৪ নং victimর স্বামী রিয়াজ আহমেদ কে আবার ডাকা হল। তিনি অকপটে স্বীকার করলেন, তাদের দাম্পত্যকলহ শুরু হয়েছে তাঁর সন্তান জন্ম না দিতে পাড়ার ব্যর্থতায় এবং তাঁর স্ত্রী এই ব্যাপারে হতাশ হয়ে নেশাগ্রস্থ হয়ে যান। তাঁর স্ত্রীর একটা নেশাগ্রস্থ চক্রের সাথে চলাফেরা ছিল। তিনি তাদের কয়েক জনের মোবাইল নাম্বার আর বাসা ঠিকানা দেন।

Date : Sunday, 02/December /2017.
Time: 03:00 am.
Place : PBI Headquarter,Mirpur, Dhaka.

আলমগির কবির সাহেবের সামনে ময়নাবতী মডেল টাউনের একটা ম্যাপ খোলা। তিনি ক্রাইমসিন গুলি লাল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করেছেন। আলমগির কবির প্যাকেট থেকে একটা নতুন সিগারেট বের করে ধরালেন। হঠাৎ তাঁর পাশের টেলিফোনটা বেজে উঠলো।
“হ্যালো!”
“আসসালামু আলাইকুম, স্যার আমি CIAU থেকে নাফিসা বলছি।”
“ ওয়ালাইকুম, হ্যা নাফিসা বলেন।”
“স্যার, আমি Finger Print গুলি নিয়ে Detail Analysis করেছি।রিপোর্ট আপনাকে এই মাত্র মেইল করেছি। ”
“ কোন Significant কিছু?”
“ প্রতেক্যটা সিন থেকে victim সহ ৩ জনের হাতের ছাপ পাওয়া গেছে ঠিকই কিন্তু অপরাধী দুইজনের একজনের শুধু লেফট হ্যান্ডের, অন্যজনের রাইট হ্যান্ডের ছাপ পাওয়া যায়। এই ব্যাপারটা একটু Fishy। যে Pattern এ খুন করা হয়েছে তাতে দুইজনের দুই হাত প্রয়োজন কিন্তু ছাপ পাওয়া গেছে প্রত্যেকের একহাতের।আর হাতের ছাপ গুলি আমাদের রেকর্ডের সাথে মেলেনি। ”
“ আপনার কি মনে হয়?”
“ camouflaged।আরেকটা ব্যাপার স্যার ৩ নম্বর crime scene এর চায়ের কাপগুলিতে দুধ চায়ের মত যেটা ছিল সেটা একধরণের নতুন চাইনিজ ড্রাগ, milk tea drug, mainly methylamphetamine,methylenedioxymethamphetamine, ketamine। আর তিনটি কাপের একটিতে victimর হাতের ছাপ নেই। মানে সাধারণত বাড়ির Host চা serve করে কিন্তু, তিনি ২ টা মানে নিজেরটা আর ডানহাতি জনেরটা serve করেছিল , কিন্তু বামহাতি জনেরটাতে অন্য কাউরি হাতের ছাপ নেই, শুধু তার নিজেরটা ছাড়া। এটা পরে প্লান্ট করা হতে পারে, camouflaged। ”
“ কিন্তু পুলিশের ময়নাতদন্ত রিপোর্টে তো ড্রাগের কথা আসেনি!”
“জ্বী স্যার, তবে আমাদের এনালাইসিস ১০০% সঠিক। ”
“ এক্সেলেন্ট জব নাফিসা, ধন্যবাদ। আমি রিপোর্ট গুলি দেখছি।”
আলমগির কবির ফোন রেখে দিয়ে আবার ম্যাপটার দিকে মনযোগী হলেন।

Date : Sunday, 03/December /2017.
Time: 10:00 pm.
Place : PBI Headquarter,Mirpur, Dhaka.
একটা ফাঁকা কক্ষে একটা কমলা রঙের প্লাস্টিকের ফোল্ডিং টেবিল এবং কিছু চেয়ার। একটাতে বসে আছে, প্রগতি বিল্ডার্সের প্রোমোটার বাইজিত। তার ঘাড়ে বাম হাত দিয়ে কিছুটা চাপ দিয়ে আছেন বিমল কর। ঘরের এককোনে জানালার পাশে সিগারেট খাচ্ছেন আলমগির কবির।ঠোঁটে সিগারেটা চেপে ধরে তিনি তাঁর সাদা ফুল শার্টের হাতাটা গোটাচ্ছেন। বিমল কর বাইজিতের হাতে একটা চায়ের কাপ তুলে দিলেন। বাইজিতের মুখটা বাংগির মত ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে।
“ আপনি আহসান সাহেবকে হুমকি দিয়ে ছিলেন?”
“ পুলিশ কে একবার বলেছি তো, আমি আমার পাওনা টাকা চেয়েছি।”
“আমরা পুলিশের লোক না, পাওনা টাকা চাইতে গিয়ে কি বলেছেন গুম করে দিবেন?”
“না মানে দুইবার টাকা নিয়েছে মিথ্যা কথা বলে যে বাড়িটা বিক্রি করবে। মোট ৩০ লাখ টাকা। সব টাকা নেশা করে শেষ করেছে। যখন বুঝতে পারলাম মামদোবাজটা বাড়ি বিক্রি করবেনা, তখন ঠিক করলাম টাকা ফেরত নিব। টাকা ফেরত নিতে গেলে উল্টা প্রশাসনের ভয় দেখায়, বড় বড় কথা বলে। একবার তো আমাদের কোম্পানির নামে মিথ্যা খবর ছাপে উল্টা আরো টাকা চেয়ে বসলো শালা বুড়া ভাম।”
আলমগির কবির সিগারেট ফেলে, টেবিলে এসে এককাপ চা নিলেন।তারপর বাইজিতের সামনে বসে তাকে জিজ্ঞাস করলেন,
“ আপনি যে টাকা দিয়েছেন এর কোন Legal Documents আছে? আর উনি যে নেশা করে সব টাকা শেষ করেছেন এই কথা আপনাকে কে বলল?”
“ স্যার, আমার কাছে কোম্পানির প্যাডে লিখা আছে।আর কবে কবে নিয়েছিল তা কম্পিউটারে সিস্টেমে এন্ট্রি দেয়া আছে, প্রজেক্টের অন্যান্য খরচ হিসাবে। কাস্টমারদের একটু খাতির তো করতে হয়ই। আর উনার কাছের লোকরা সবাই জানে উনি এডিক্টেড।”
“ খাতির করতে ৩০ লাখ টাকা বাবা! আমাদের তো কেউ এভাবে খাতির করেনা! গুম করলেন না কেন?”
“ মানে! না মানে, ওটা কথার কথা, আমি অভাবে বলিনি স্যার!”
“ আপনি কিভাবে বলেছেন তা পাড়ার লোকে শুনেছে, সাক্ষী আছে। এখন বাড়ি যান, কাল আমাদের অফিসে ঐ খাতিরদারির সব কাগজপত্র জমা দিয়ে যাবেন।”
বাইজিত চুপচাপ ঘর থেকে বের হয়ে গেলেন।আলমগির কবির ক্লান্ত চোখে, বিমল করের দিকে তাকালেন।
“ স্যার, রেজাউল করিমের কথাটা ঠিকই মনে হচ্ছে। উনি কিছুটা নিশ্চয় জানতেন। মনেহয় ৩ নম্বর victimর ভাগ্নে Blood Report positive বের করার জন্য উপর মহল দিয়ে চাপ দিয়েছেন।”
“হতে পারে। কিন্তু আমাদের তদন্তের বিষয় pattern বের করা। ৪টা কেসের মধ্যে লিংক যে ড্রাগ সেটার clue এখন আমাদের কাছে আছে।”

Date : Wednesday , 20/December /2017.
Time: 10:00 am.
Place : PBI Headquarter,Mirpur, Dhaka.
আলমগির কবিরের হাতে একটা ৪/৬ এর ছবি, তাতে একটা ঝাপসা চেহারা, আরও কয়েকটা টেবিলের অপর ছড়ানো। তার একটাতে একটা নাম্বার প্লেটের অস্পষ্ট ছবি। নাম্বার ঢাকা মেট্রো হ ৪৫-২৩০৭।অন্য আরেকটি ছবিতে একটা ছাই রঙের TVS activa। বিমল কর সরাসরি রুমে ঢুকে আলমগির সাহেবের সামনে বসলেন।
“আমাদের CIAU থেকে যে টীমটা CC Camera footage নিয়ে কাজ করছিল, তারা এই ছবি গুলি পাঠিয়েছে। ৪ টা Crime Scene এর ২ মাইল রডিয়াসে যত গুলি CC Camera ছিলো সবগুলির footage এনালাইসিস করে দেখা গেছে। ওই চার spotর ২ মাইল রেডিয়াসে এই লোকটা কে খুনের দিনের আগে কিছুদিন দেখা গেছে। এই বান্দা কে হাজির করতে হবে।”
বিমল বাবু মুখটা গম্ভীর করে, কপালের ভুরু দুইটি তুলে নিজের মোবাইল বের করে একটা নম্বরে ফোন দিলেন।
“ হ্যা জসিম, হ্যা আদাব, হ্যা ভালো, একটা নাম্বার লিখো তো, ঢাকা মেট্রো হ ৪৫ ২৩ ০৭। এর মালিককে লাগবে। হ্যা, আজকে রাতে ১১টার দিকে নিয়ে এসো। যেখানে পাবে সাথে সাথে তুলে নিয়ে আসবে। হ্যা আমাদের HQ তে, আচ্ছা রাখছি।”
আলমগির কবির এতক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন বিমল করের দিকে, বিমল কর একটু হেসে বললেন,
“রিস্ক নিলাম না স্যার, যে হয় হোক পরে সামাল দেয়া যাবে। কিন্তু হাত থেকে ফস্কে গেলে মুস্কিল!”
“ না ঠিক আছে, আরো কিছু ইনফোরমেশন আছে, ৪ নং victimর ব্লাড স্যাম্পলে milk tea drug এর আলামত মিলেছে। উনার স্বামী সত্যি কথা বলেছেন। আর আপনার ধারনা ঠিক, ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগকৃত ড্রাগ বাণিজ্যিক Succinylcholine নয়, একটা homemade preparation। এই evidence আমাদের CIAU নিশ্চিত করেছেন। আর Pattern নিয়ে অনেক চিন্তা করেছি বুঝলেন। ম্যাট্রিক্স সম্পর্কে কিরকম ধরনা আপনার?”
“ মানে অংক, ও বাবা, আমি আর্টসের ছাত্র স্যার!”
“ তাতে কি অংক করেননি? ম্যাট্রিক্সে থাকে রো আর কলাম, এর ভেতরের উপাদানগুলির নিচে রো নাম্বার আর কলাম নাম্বার লেখা থাকে। যেমন X12। এই মডেল টাউন কে যদি আমি একটা ম্যাট্রিক্স আকারে চিন্তা করি তাহলে, খুনের স্পোটগুলিকে বাড়ির নাম্বার বাদ দিয়ে আপনি কি করে লিখবেন?”

বিমল বাবু চিন্তা করতে আরাম্ভ করলো, আলমগির কবির একটা সিগারেট ধরিয়ে, প্যাকেটটা বিমল বাবুর দিকে চালিয়ে দিলেন। বিমল বাবু একটা সিগারেট বের করে হাতে নিলেন কিন্তু ধরালেন না।
“ স্যার, 1F6, 2H5, 3F4, 4D3। মানে খুনের নাম্বার, ব্লক নাম্বার, রোড নাম্বার!”
“ চমৎকার! এবার এই কাগজে নাম্বার গুলি লিখে দেখুনতো কিসের কথা প্রথমে মনে হয়।”
বিমল বাবু নাম্বার গুলি কাগজে পর পর লিখে তাকিয়ে থাকলেন। আলমগির কবির ড্রয়ার থেকে একটা দাবার বোর্ড বের করলেন। বিমল বাবু বিস্ময়ের সাথে বললেন,
“দাবা!”
“ হ্যা, এবার এখানে লক্ষ করুন। প্রথম খুন F6 মানে এখানে, কালো ঘর খুন হয়েছে রাতের বেলা। এরপর H5 সাদা ঘর খুন হয়েছে দিনের বেলা। লক্ষ করে দেখুন এই চালটা দাবা খেলায় ঘোড়ার চাল। এরপর F4, আবার কালো আবার রাত, এভাবে D3 এটাও ঘোড়ার চাল সাদা ঘর দিনের বেলা। interval ৭৫ দিন মানে আড়াই মাস, ঘোড়ার চাল আড়াই ঘর। আমার ধারনা খুনের সময়ও ২:৩০ টা। এইটাই খুনি বা খুনিদের খুন করার প্যাটার্ন। এরপর সম্ভব্য লোকেশন গুলি F2,B2,E2,C2। এবং সবগুলিই কালো ঘর অর্থাৎ রাত ২:৩০,তারিখ ৪র্থ খুনের ঠিক আড়াই মাস পর, বুধবার, ৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮।”
“ ওরেব্বাস, কি সুক্ষ্মদর্শী খুনি।”
“ এখন থেকে আমাদেরকে খুব সাবধানে চলতে হবে, এই প্যাটার্নের কথা কেউ যেন না জানে, সামনে মাসে মিটিং আছে তখন আমি বলবো। কারণ খুনি অত্যন্ত চালাক, patternবের হয়ে গেছে জানলে বেঁকে বসতে পারে, সেক্ষেত্রে আমাদের হাতে নাতে ধরা পরার সুযোগ ফস্কে যাবে। আমাদের evidence ground strong না। finger print দুইটির কোন হদিস পাওয়া যায়নি। ”

Date : Thursday , 21/December /2017.
Time: 1:00am.
Place : PBI Headquarter,Mirpur, Dhaka.
বিমল বাবু দুই ঘণ্টা ধরে তাঁর সামনে হাত পা বাধা লোকটাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। এখন পর্যন্ত সে স্বীকার করেছে, সে ওই ছাই রঙের বাইকটার মালিক, সে মধুবতী দক্ষিণাচল মডেল টাউনে হোম ডেলিভারি সার্ভিস দেয়। মাঝেমাঝে কিছু বেশী ইনকামের জন্য গাঁজা, ইয়াবা, বিদেশী মদ এইসবও হোম ডেলিভারি দেয়। কিন্তু খুনের ব্যাপারে সে কিছুই জানেনা । এপর্যন্ত সে প্রায় ৪০টার মত কোষে চড় খেয়েছে, তার ঠোঁটের এক পাশ দিয়ে রক্ত পড়ছে। এবার আলমগির কবির এসে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলেন।
“ ইয়াসিন, ফেসবুকে কি নাম তোর , “হরিন ধরা দুষ্টু ছেলে”, তাই না?”
“ জ্বী স্যার। আর করবো না স্যার!”
“কেনা বেচা কি সব ফেসবুকেই হয়?”
“ আমি কিছু জানি না স্যার, আমি শুধু একজায়গা থেকে নিয়ে অন্য জায়গায় ডেলিভারি দেই।”
“ ডেলিভারি চার্জ কত?”
“১০০, ১৫০, ২০০ ঠিক নাই স্যার মালের ওপর নির্ভর করে।”
“ এই যে খুনগুলি হল, ঐ খুনের যায়গাগুলিতে কি করছিলি?”
“ না স্যার, আমি না স্যার, অন্য কেউ হইবো স্যার আমি না।”
“ ভিডিও আছে আমাদের কাছে দেখাবো?”
“ স্যার, একটা ফোন করবো স্যার, চোষাকান্দি ইউনিয়নের১চেয়ারম্যান আমার মামা, স্যার যত টাকা লাগে আমি দিমু স্যার একবার ফোন করতে দেন স্যার। সব ঠিক হয়ে যাইবো।”
“ তোকে যে তুলে আনা হয়েছে, এটা কিন্তু কেউ জানেনা। দেশে কিন্তু হর হামেশা মানুষ গুম হচ্ছে। তাছাড়া তুই যে ব্যাবসা করিস, তাতে তো এটা কোন ব্যাপার না।”
“ স্যার আমি কিছু জানি না স্যার বিশ্বাস করেন স্যার।”
“ নাহ, এভাবে সময় নষ্ট, বিমল বাবু আপনার প্রসেস শুরু করুন।”
বিমল বাবু দরজাটা খুলে মুখ বাইরে বের করে জোড়ে হাক দিলেন,
“ এই বাদশা! বাদশা মিয়া! এদিকে আসো, মুরাদ কে বল গাড়ি রেডি করতে।”
বাদশা মিয়া ঘরে এসে উপস্থিত হলেন। বাদশা মিয়া বেশ শক্তিশালী একজন প্রৌঢ়, মুখে কাঁচাপাকা খোঁচাখোঁচা দাঁড়ি,তার পড়নে একটা ফেড জিন্স আর ডোরাকাটা ফুল হাতা টি-শার্ট, পায়ে সাদা রঙের কেডস। কোমরে কিছু একটা উঁচু হয়ে আছে।বাইরে ঝুম বৃষ্টি নেমেছে, সাথে ঠান্ডা। কান ফাটা আওয়াজে বাজ পড়ছে। একটু পর গাড়ি স্টার্ট দেয়ার আওয়াজ পাওয়া গেল।

Date :Thursday , 21/December /2017.
Time: 2:00am.
Place : Dhaka Mymanshingh Highway.
একটা টয়োটা হাইয়াস ২০১৫ মডেলের মাইক্রোবাস রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে। গাড়ির ভেতর বিমল কর একটা কাগজের ঠোঙাতে করে খাসির ভেজা ফ্রাই ছোট লুচি দিয়ে খাচ্ছেন। চারটা ভেজা ফ্রাই আর লুচি কেনা হয়েছে ক্যাম্পের বাজার থেকে। চারিদিকে ঝুম বৃষ্টি। একটা ছোট লুচি একটু সালাদে চুবিয়ে নিয়ে, একটা মগজের টুকরা তাতে নিয়ে মুখে পুড়লেন বিমল বাবু।
“মুরাদ, নাও শুরু কর। আর এসিটা বন্ধ করে দাও ঠান্ডা লাগে। বাদশা মিয়া, ইয়াসিনের হাতের বাধন খুলে দিয়ে ওকে একটা প্যাকেট দাও, আর তুমিও খাওয়া শুরু কর।”
ইয়াসিন ঠোঁটের রক্তটা মুছে, ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল,
“ আমি খাবো না স্যার, আমাকে ছেড়ে দেন।”
“ ধুর এই বৃষ্টির মধ্যে কোথায় যাবি, বাদশা মিয়া চায়ের ফ্লাস্কটা কই রাখছো? মুরাদ লাইটটা দাও দেখি।”
মুরাদ ড্রাইভিং সিট থেকে গাড়ির লাইটটা না জ্বালিয়ে তার নিজের মোবাইলের লাইট জ্বালাল। বাদশা মিয়া চায়ের ফ্লাস্কটা একটা সিটের অপর রাখল। সবাই খেতে শুরু করেছে। শুধু ইয়াসিন ফুঁপিয়ে কাঁদছে। বাদশা মিয়া একটু ভাড়ি গলায় ধমকে উঠে বলল,
“কি রে বান্দির ফুত, খাবি না পুটকির মইদ্দে নল ধুকামু!”
“ আহা, বাদশা মিয়া গালিগালাজ কর না। গালিগালাজের সময় শেষ, ও খাবে। তাইনা ইয়াসিন?”
ইয়াসিন এবার কাঁপা কাঁপা হাতে এক টুকরা লুচি মুখে তুলল। বিমল বাবু খাওয়া শেষ করে গাড়ির জানালা খুলে খালি পলি আর ঠোঙা ফেলে দিলো, তারপর একটা সিগারেট ধরালেন। তৃপ্তি সহকারে ধুয়া ছেড়ে তিনি ইয়াসিনের দিকে তাকালেন,
“ ইয়াসিন খাচ্ছিস না কেন? বাদশা মিয়ার খাওয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত তোর টাইম, খা!”
“স্যার আমাকে ছেড়ে দেন স্যার, আমি কিছু করিনি স্যার, আল্লাহর দোহাই স্যার।”
“ আচ্ছা তুই খা।”
বাদশা মিয়ার খাওয়া শেষ হল, বাদশা মিয়া ইয়াসিনের হাত থেকে খাবার প্যাকেটটা ছোঁ মেরে নিয়ে জানালা দিয়ে ফেলে দিল। তারপর মাইক্রোর দরজা খুলে ইয়াসিনকে বলল,
“ যাহ ভাগ, দৌড় দে, খানকির পোলা!”
“ না স্যার আমি যাব না, স্যার আমাকে ছেড়ে দেন স্যার গো!”
“ গেলি শুয়ারের বাচ্চা, দৌড় কইলাম!”
বাদশা মিয়া মাইক্রো থেকে নেমে দাঁড়িয়েছে,তার কোমর থেকে একটা পুরানো মডেলের রিভলভার বের করেছে,মডেলটা চেনা যাচ্ছেনা, ইয়াসিনকে সে টেনেটুনে মাইক্রো থেকে বের করেছে, ইয়াসিন এখন বাদশা মিয়ার এক পা বুকে জড়িয়ে ধরে আছে। সে জোড়ে জোড়ে চিৎকার করছে
“ স্যার আমাকে মাইরেন না স্যার, ছেড়ে দেন স্যার, ও স্যার!”
“ বাইঞ্চোদ পা ছাড় কইলাম,পা ছাড়!”
বাদশা মিয়া খেঁকিয়ে উঠে রিভলভারের হাতল দিয়ে, ইয়াসিনের চোয়ালের ওপর সজোরে আঘাত করলো, ইয়াসিন ছিটকে পড়লো তিনহাত দূরে। সে চোয়াল ধরে কোঁকাতে লাগলো আর রাস্তা কাদা পানির মধ্যে গড়াগড়ি দিতে লাগল। এমন সময় কান ফাটা শব্দে বাদশা মিয়ার রিভলভার গর্জে উঠলো। মনে হল যেন কাছে কোথাও বাজ পড়েছে। ইয়াসিন গুঁইসাপের মত দ্রুত হামাগুড়ি দিয়ে আবার বাদশা মিয়ার এক পা জড়িয়ে ধরে হাওমাও করে চেঁচাতে লাগলো,
“ ও স্যার, ও স্যার, জানে মাইরেন না, দোহাই, স্যার আমি সব বলছি স্যার, মাইরেন না স্যার, স্যার গো!”
বাদশা মিয়া অন্য পা দিয়ে কোষে ইয়াসিনের পেটে লাথি দিলো, ইয়াসিন কোঁত করে একটা শব্দ করে, মাইক্রোর দরজার সামনে উপর হয়ে পড়ে পায়খানা আর রক্ত বমি করে দিল। বিমল বাবু ইয়াসিনের চুলের মুটি ধরে টেনে গাড়িতে তুলল।
“ বাদশা মিয়া, শরীরের কোথাও লাগেনি তো?”
“ জ্বে না স্যার, এক হাত দূরে লাগাইছি।”
“ ও আচ্ছা, হ্যা ইয়াসিন বল, কি বলছিলি?”
ইয়াসিন বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলে ফিসফিস করে বলল,
“ স্যার ওই লোকটা চায়না থেকে নতুন মাল নিয়ে আসছে, দুধ চা”
“নাম কি তার।”
“নাম নজরুল, সে মাল দিসে আমারে কয়েকবার, তারপর একদিন টাউনে আসে। এফ ব্লকের ৬ নাম্বার রোডে ৬ নম্বর বাসা দেখায় দেয়। বলে ওখানকার সিকিউরিটি গার্ড ফোরকান কে রেগুলার মাল সাপ্লাই দিতে আর বাড়ির খোঁজ খবর দিতে, মানে কে কখন যায় আসে, কার কখন ডিউটি। এভাবে ৩ মাসের মত করি, তারপর শুনি ফোরকান খুন হয়েছে। তারপর থেকে আমি আর নজরুলের সাথে কথা বলিনি।কয়েক বার ফোন দিসে ধরি নাই। একদিন নজরুল আমাকে অন্য নাম্বার থেকে ফোন করে ডাকে মাল নেয়ার জন্য, বলে সে আমাকে আরো কিছু কাষ্টমার দিবে টাউনে। আমি ফোরকানের কথা বলার পর বলে, ও নিয়ে তুই মাথা ঘামাস না,তুই কাষ্টমার দেখ। আমি নজরুলের দেয়া ঠিকান মত গেলাম ওর বাড়িতে, ও আমাকে চায়না মাল আরও কিছু দিল। কিভাবে দুধ চা বানাতে হয় দেখাল। তারপর আবার এইচ ব্লকের ৫ নাম্বার রোডে যে এপার্টমেন্ট উঠতেছে ওখানের মনাই মিস্ত্রির নাম্বার দিল, মনাইয়ের সাথে নজরুলের হেব্বী খাতির ছিলো, প্রায়ই বিল্ডিংয়ে ছাদের ওপর জুয়া খেলত। আমাকেও মাঝেমধ্যে নিয়ে যেত খেলার জন্য। মনাইয়ের দুধ চায়ের নেশা ধরেছিল হেব্বী, আমি রোজ সাপ্লাই দিতাম, টাকার কথা জিগাইলে বলতো, নজরুলের কাছে জুয়ায় টাকা পাওনা আছে। এরপর জী ব্লক ৭ নাম্বার রোডে একটা বাড়িতে একটা কাস্টমার দিলো রনি,অনলাইনে বিদেশী ঘড়ির ব্যবসা করে। ঐ বেটাও রেগুলার পার্টি, ওর কাছে নগদ ট্যাকা নিতাম। ওর হিসাব নজরুল পাকা বুঝে নিত। তারপর এফ ব্লকের ৪নাম্বার রোডে ওই বুইড়া সাংবাদিকের বাসা দেখায় দিল। আর ই ব্লকের ৫ নম্বর রোডে আফসানা আপাকে দেখায় দিল, দুজনাই রেগুলার পার্টি, ক্যাশে মাল লইত। এর কিছু দিন পর জোহরা আপার বাড়ি ধরাই দিলো, মানে ডি ব্লকের ৩ নম্বর রোডে যে আপা খুন হইছে সে। আমি মাঝেমাঝে মাল দিতে যাইতাম মাঝেমাঝে নজরুল নিজেই মাল দিতে যাইত। এর মধ্যে মনাই খুন হইলো, তারপর থেইকা নজরুল হাওয়া, হের ফোন বন্ধ, মাল সাপ্লাই বন্ধ, বাড়ি তালা মারা। আমি তখন মনে করলাম নজরুল হয় ধরা খাইছে, না হয় সে আমার কাছে মাল না দিয়ে নিজে নিজেই দেয়া শুরু করছে। তাই আমি সব কাস্টামারের বাড়িতে নজর রাখতাম,আর ওর খোঁজ করতাম। আমার কোন দোষ নাই স্যার, আমি জানি নজরুল এইগুলা কাম করছে,আমি তো শুধু মাল সাপ্লাই দিসি স্যার।”
“ গুড বয়, ইয়াসিন। এ কটা দিন তুই আমাদের অফিসে থাকবি, বাদশা মিয়া তোর দেখাশোনা করবে।আচ্ছা নজরুলের কোন ছবি আছে ফেসবুক বা তোর মোবাইলে, কোথাও।”
“ না, স্যার”
বিমল বাবু পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে দ্রুত কাউকে ফোন করলো।
“হ্যা ভাই তরুণ, রাতের বেলা বিরক্ত করলাম, একটু জরুরী কাজ পড়ল যে ভাই, হ্যা হ্যা আমি গাড়ির ব্যবস্থা করছি। তুমি চলে আসো।”
বিমল বাবু ফোন কেটে দিয়ে আলমগির কবিরকে ফোন দিলেন,
“ স্যার, কাজ হয়ে গেছে, আপনি আসবেন? আসেন, একটা লোকেশনের কথা বলেছে, আর দুই চারজনের ইনফোরমেশন দিয়েছে।কি করবো বুঝতে পারছিনা দুইটা ব্যাপারের লীড নিয়ে আগালেই খুনি এলার্ট হয়ে যেতে পারে। সেনসিটিভ মোমেন্ট স্যার। আপনি আসেন, আমার আর আধা ঘন্টা লাগবে।”

Date : Thursday , 21/December /2017.
Time: 03:00 am.
Place : PBI Headquarter,Mirpur, Dhaka.

আলমগির কবির একটা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে আছে, তার হাতে ধুমায়িত চায়ের কাপ। বাইরে বেশ ঠান্ডা পরেছে। ঘরে প্লাস্টিকের ফোল্ডিং টেবিলটার পাশে একটা সাদা ক্যানভাস দাঁড় করিয়ে, পেন্সিল, রাবার গুলি সাজিয়ে নিচ্ছেন ঝাঁকড়া চুলওয়ালা, চেক শার্ট আর জিন্স পরা এক তরুন। তাঁর চায়ের কাপটা প্লাস্টিকের টেবিলে রাখা আছে। বিমল কর টয়লেট থেকে ফ্রেশ হয়ে এসেই গরম চায়ের একটা কাপ তুলে চুমুক দিয়ে মুখ দিয়ে শব্দ করে বললেন,
“আহা!”
“ আমি ASP স্যারের সাথে কথা বলেছি। অন্য কাউকে কিচ্ছু জিজ্ঞাসাবাদ করা যাবে না। তবে আজকে থেকে ইয়াসিন যে কয়েকজনের কথা বলেছে, তাদের প্রত্যেকের ওপর নজর রাখা হবে।তবে সাবধানে যেন কেউ টের না পায়। এখন একটা গ্যাম্বলিং করতে হবে। সেটা হল, ইয়াসিন নজরুলের বাড়ির যে লোকেশন বলল, ১৬৫/১, জগন্নাথ সাহা রোড, আমলীগোলা, লালবাগ, সেখানে সিভিলে হানা দেয়া।কাউকে যদি পাওয়া তো হল। আর যদি না পাওয়া যায় তাহলে চুপচাপ সরে এসে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত ওয়েট করতে হবে। হাতেনাতে গ্রেফতার করতে হবে। আর এখন নজরুলের সবগুলি নাম্বার বন্ধ। ওর একটা ছবি বানিয়ে আপনি আপনার লোকদের লাগিয়ে দেন খোজ বের করার জন্য। পেলে সরাসরি এখানে নিয়ে আসবে।”
“ স্যার ইয়াসিন কে ১০০% বিশ্বাস করা যায়?”
“এছাড়া ওর উপায়টা কী?”
এমন সময়, ইয়াসিন কে নিয়ে বাদশা মিয়া ঘরে ঢুকলো, ইয়াসিন সাবান দিয়ে গোসল করেছে, সস্তা সাবানের গন্ধ ভুরভুর করে বের হচ্ছে। সাদা একটা গেঞ্জি পরেছে, তাতে লেখা “পুলিশ জনগণের বন্ধু, পুলিশ সপ্তাহ ২০১৭”, আর একটা হলুদ লুঙ্গী। তার বাম হাতে হাতকড়া, সেটা ধরে আছে বাদশা মিয়া। সময় নষ্ট না করে, ইয়াসিন তার কাজ শুরু করলো, তরুণ শিল্পী ইয়াসিনের মুখের বর্ণনা শুনে শুনে ছবি আঁকতে লাগলো। কিছুক্ষনের মধ্যে সাদা ক্যানভাসে ভেসে উঠলো ৩৫-৪০ বছরের এক হাস্য উজ্জ্বল পুরুষের চেহারা।

Date : Thursday , 21/December /2017.
Time: 03:45 am.
Place : 165/1, Jagannath Shaha Road,Aligola,Lalbagh
ঘরটার বাইরে থেকে পুরানো আমলের তালা দেয়া। আলমগীর কবির সাথের একজনকে ইশারা করলেন। সে টর্চ জ্বালিয়ে তালাটা মাস্টার কি দিয়ে সহজেই খুলে ফেললেন। দরজা খুলতেই একটা ক্যামিকেলের ঝাঁজালো গন্ধ নাকে এসে লাগলো। আলমগির কবির, বিমল কর সহ মোট চারজন ঘরের ভেতরে ঢুকলেন। আর এক জন বাইরে অন্ধকারে ছায়ার মধ্যে মিলিয়ে পাহারারত রইল। ঘরের দরজা বন্ধ করে আলো জ্বালানো হলো, ঘরটা টাংস্টেন বাল্বের টিমটিমে হলুদ আলোয় একটু অদ্ভুত দেখাচ্ছে।ছোট্ট ঘর, কোন এককালে দেয়ালে সাদা রঙ করা হয়েছিল,এখন অধিকাংশ জায়গায় সবুজ ছোপ ছোপ শেওলা আর ফাটলের বাড়াবাড়ি। ছাদে কালো কড়িকাঠ, দুই-একটা হয়তো খোসেও পড়েছে। ঘরের মধ্যে ঠাসাঠাসি করে রাখা একটা লোহার ট্রাঙ্ক, একটা মাঝারী সাইজের বুক সেলফ, একটা চৌকি, তার পাশে একটা কাঠের ইজিচেয়ার।এখন ঘরটায় পুরানো জিনিষের একটা সোঁদা গন্ধও পাওয়া যাচ্ছে। পত্রিকা গুলি সব ৬৫ থেকে ৭৫ সালের বিভিন্ন সময়ের। একজন একটা নাইকনের D80 ডি এস এল আর ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে আরম্ভ করেছেন। বই গুলির মধ্য আছে Quotations from Chairman Mao Tse-Tung,The Communist Hypothesis,Settlers: The Mythology of the White Proletariat,The Morning Deluge 2: From The Long March to Liberation,Animal Farm,The Phoenix Moment: Challenges Confronting the Indian Left,লাল ডায়েরী, সম্পত্তি মালিকানা কী ইত্যাদি। বিমল বাবু নাকে রুমাল দিয়ে বললেন,
“বাবা, এ যে দেখি নকশাল!”
“ হুম, নকাশালের ভূতও হতে পারে, হা হা হা।”
এমন সময় একজন লোহার ট্রাংকটা আলতো ক্যাঁচক্যাঁচানি শব্দে খুললেন, সাথে সাথে ক্যামেরাম্যান, ওদিকে ছবি তুলতে আরম্ভ করল। ছবি তোলার গতি দেখে আলমগির কবির এবং বিমল বাবু সেদিকে একসাথে তাকালেন। সবার চোয়াল ঝুলে গেল। ঘরের মধ্যে একটা শীতল নিরবতা। ট্রাংকের মধ্যে ৪টা মানুষের অবয়ব, মানে চামড়া স্টাফ করে রাখা আছে এবং এই চার জন যে ময়নাবতির ভিক্টম চারজনই তা একনজরেই বোঝা যায়।

Date : Sunday, 07/January /2017.
Time: 10:00am.
Place : PBI Headquarter,Mirpur, Dhaka.
Additional Superintendent of Police (ASP)- Towhidul Majid
Gazipur PBI, Dhaka Division, HQ.

ASP তাওহীদুল মজিদ সাহেব মিটিং ডেকেছেন, আলমগির কবির এবং বিমল কর উপস্থিত হয়েছেন।বিমল বাবু একটা ফুল ফুল হাইনেক সোয়েটার পরেছেন। তাওহীদুল মাজিদ সাহেব প্রসন্ন মুখে এলাচ দেয়া চা খাচ্ছেন। তিনি তাঁর সামনে বসা দুইজন কে ইন্সট্রাকশন দিচ্ছেন।
“ আমি প্রথমেই বলেছিলাম, There is a pattern. আমি ১০০% নিশ্চিত next murder টা F2,B2,E2,C2 যেকোন এক জায়গায় হবে।রাত ২:৩০,বুধবার, ৭ই ফেব্রুয়ারি। এরা নিজেদের patternকখনো নষ্ট করে না, তা যে করেই হোক। আলমগির সাহেব যেভাবে explain করেছেন তাতে এটাই Last murder । আমরা যথা সাধ্য চেষ্টা করবো এটা যেন না হয় এবং খুনিকে হাতে নাতে ধরা যায়। নজরুলের কোন trace পাওয়া গেল? ”
“ জ্বী না স্যার এখনো পাওয়া যায়নি, এমনকি কেউ কোনদিন দেখেনি।”
“ ইয়াসিনের কি খবর, ওকে এখানেই রাখ, আমাদের expected date পর্যন্ত,ওর against এ কোন চার্য আনার দরকার নেই আমাদের। কিন্তু ওকে কে কে ফোন করছে? কি বলছে, these must be recorded”
“ জ্বী স্যার, ওর দেশের বাড়ি থেকে দুইবার কল এসেছে ছিল, ও বলেছে ব্যবসার কাজে ঢাকার বাইরে আছে। বেশির ভাগ কাস্টমার ফোন করেছে প্রতিদিন। তাদের সবাইকে বলছে মা অসুস্থ, দেশের বাড়ি আছে।”
“ ভালো কথা ইয়াসিন, যাদের নাম বলেছিল, তাদের update কি?”
“ তারা নজরে আছে। ওদের বাসাতে সিভিলে আসা যাওয়া করা হচ্ছে। কেউ কিছু টের পায়নি,কিন্তু নিজরুলের দেখা পাওয়া যায়নি।”
“ লালবাগের বাড়িটাতে কেউ এসেছে পরে?”
“ ওখানে কেউ আসেনি স্যার, ঘরটার মালিক কাউকে পাওয়া যায়নি। কোন এক হিন্দু ভদ্রলোকের গোডাউন ছিল। ৭১ সালে তিনি ছেড়ে দিয়ে কলকাতা চলে যান। মনে হয় জবরদখল।”
“strange ! যাক গে, ৭ ই ফেব্রুয়ারির প্লান কি করেছেন?”
“ ২ দিন আগে থেকে surveillance team থাকবে প্রতিটি possible sopt এর ২ মাইল রেডিয়াসে, এখন যারা আছে তারাও থাকবে রিপোর্ট করবে, পুরা বাড়ি ঘেড়াও করতে মোট ২০ জনের একটা করে টীম প্রতিটি বাড়ির কাছে থাকবে, এগুলোর টীমের পরিচালনা করার জন্য আমাদের পাঁচজনের একটা টীম হলেই হয়ে যাবে।emergency medical team, এম্বুলেন্স, ফায়ারসার্ভিস টাউনের ৩ নম্বর গেটের দিকে ১ ঘন্টা আগে মোতায়েন থাকবে।”
“ একজন Prosecutor নিয়ে নিলে ভালো হত না?”
বিমল বাবু তাড়াহুড়া করে বলে উঠলেন,
“না না স্যার, ওতে ব্যাপারটা ঘেটে যাবে। আমাদের evidence অনেক আছে, আর হাতে নাতে খুনিকে ধরতে পারলে তো হয়েই গেল।”
“ ঠিক আছে, আপনাদের কাজে আমি Thundered, ভালো করেছেন। এখন শেষ পর্যন্ত সবকিছু ভালো মত শেষ হলেই হয়।”

Date : Friday, 02/February /2018.
Time: 8:00pm.
Place : Badda,Dhaka.
আলমগির কবির খেতে বসেছেন। রেহানার হাতের রান্না সুন্দর। পাঙাশ মাছের কষানো টকটকে লাল ঝোল,লেবু, লবন দিয়ে, আলমগির কবির ভাত মাখিয়ে বেশ তৃপ্তি করে খাচ্ছেন। রেহানা একটু সোনামুগ ডাল তুলে দিতে গেলে তিনি হাতের ইশারায় মানা করলেন। রেহানা নিজের খাওয়াতে মন দিলেন। আলমগির কবির মাথা নিচু করে খেয়ে চলেছেন। রেহানা নিরবতা ভেঙে বললেন,
“ একজন ভালো Obstetrician ইন্ডিয়া থেকে আসেন, Dr. Sushma Prasad Sinha,পাইন হস্পিটালে, প্রতি মঙ্গলবার, বুধবার বসেন। সিরিয়াল আগে থেকেই নিয়ে রাখতে হয়।”
“ হুম, দেশী ডাক্তার কি দোষ করলো?”
“ না, আমি মঙ্গল বার, বুধবার দুইদিনই বুকিং করছি, তুমি যেদিন পারবা, সেদিন ফাইনাল করবো।”
আলমগির কবির মাথা তুলে রেহানার দিকে তাকালেন, রেহানার চোখ পানিতে ভরে এসেছে। আলমগির সাহেব কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে, বললেন,
“ মঙ্গল বার হবেনা, বুধবার নাও, কয়টার সময়?”
“ এপয়েনমেন্ট প১১:০০টায় নিতে হবে। কিছু টেষ্ট আর প্রসেস আছে।”
আলমগির কবির ঘাড় কাত করে খেতে থাকলেন, রেহানা একবার নাক টেনে পানি খেলেন।

Date : Wednesday , 7 /February /2018
Time: 5:00am.
Place : Moynabati Dokkhinachal Model Town,Moynabati, Gazipur.
আলমগির কবিরকে সারাদিন রাত জাগার কারনে অনেক ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে, তার সাদা শার্টটা কোমর থেকে অর্ধেক বেরিয়ে এসেছে, জ্যাকেটের চেইনটা খোলা,তাঁর পেটের মধ্যে কুনকুন করে ব্যাথা করছে।বিমল বাবু ফুল ফুল হাইনেক সোয়েটারটা খুলে গলার সাথে বেধে রেখেছেন। দুইজন এক সাথে মাইক্রোতে উঠে বসে গা এলিয়ে দিলেন। হাতের রেডিওতে প্রতিটি চিহ্নিত জায়গা থেকে প্রতি মূহূর্তে হালনাগাদ খবর আসছে। সম্ভব্য কোন জায়গাতেই কোন খুন হয় নি। সবকিছু ঠিকঠাক আছে। সবগুলি বাড়িতে হানাদিয়েও অপরিচিত বা অতিরিক্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। শেষ একমাসের তালিকাভুক্ত লোকজন ছাড়া কেউ নেই। সবাই মোটামুটি হতাশ।
“ কি করবেন স্যার? এই রকম তো হওয়ার কথা ছিলো না।”
“ আগে যে যেখানে ডিউটিতে ছিল, তাদের সবাইকে আগের মত ডিউটিতে থাকতে বলেন। বাকি সবাইকে Dispatch করে দেন। ASP স্যারের সাথে বসে Next Step ঠিক করতে হবে। আমার সকালে জরুরী কাজ আছে, বিকালে বা সন্ধ্যায় মিটিং হলে ভালো হয়।”

Date : Wednesday , 7 /February /2018
Time: 8:00am.
Place : Badda,Dhaka.
আলমগির কবির কম্বল মূড়ি দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন। অনেক চেষ্টা করেও ঘুমাতে পারছেন না। রেহানা রান্নাঘরে খুটখাট করছেন, তিনি প্রতিটা শব্দ শুনে কল্পদ্রুম সাজিয়ে নিচ্ছেন। আসলে তিনি এই কাজটা করতে চাইছেন না। তিনি ঘুমাতে চাইছেন। কিন্তু তার মাথা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজটা করে যাচ্ছে। তাঁর কানে শুধু বেজে চলেছে ASP তাওহীদ সাহবের একটা কথা,
“ They never break, their own pattern”
এক সময় রেহানা এসে তাঁর গায়ে হাত দিয়ে ডেকে তুললেন ,
“ নাশতাটা করে একটু ঘুমাতে চেষ্টা কর, ১০:৩০টার মধ্যে বের হতে হবে।”
আলমগির সাহেব উঠে গেলেন নাশতার টেবিলে, সকালের নাশতা চালের আটার রুটি আর ধনে পাতা দিয়ে খাসির নিহারি। আলমগির সাহেব গোগ্রাসে খাওয়া শুরু করলেন।

Date : Wednesday , 7 /February /2018
Time: 12:00pm.
Place : PBI Headquarter,Mirpur, Dhaka.
বিমল কর সবাইকে Dispatch করে আর বাড়ি যাননি, অফিস রুমেই ঘুমিয়ে নিয়েছেন। তাঁর অফিস রুমে সে ব্যবস্থা করা আছে। ঘুম থেকে উঠে তিনি একটা তোয়ালে প্যাঁচিয়ে বাথরুমে গেলেন। বরফ ঠান্ডা পানিতে গোসল করলেন। গোসল শেষে তিনি কাপড় পড়ে, বাদশা মিয়াকে ডেকে পাঠালেন। বাদশা মিয়া কালো একটা জ্যাকেট, নীল জিন্স আর কেডস পরে আছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে গত রাতের কোন ক্লান্তি তাকে স্পর্শ করেনি। বিমল বাবু একটা সিগারেট ধড়িয়ে বললেন ,
“ কি রাঁধছ দুপুরে?”
“ আলু শানা আর ভাত স্যার।”
“ ডাল নাই?”
“ জ্বে না স্যার।”
“ সামনের হোটেলে কি পাওয়া যাবে দেখ?”
“ কি খাইবেন কন স্যার, আনাইতেছি।”
“ কিভাবে আনবা?”
“ মোবাইলে Apps আছে স্যার।”
“ খাসির মাংস, মুগের ডাল আর সাদা ভাত। কতক্ষন লাগবে?”
“ আধা ঘন্টা।”
“ আচ্ছা অর্ডার দাও। ইয়াসিন কই?”
“ আমার ঘরে টিভি দ্যাহে।”
“ চল দেখি তোমার ঘরে যাই।”
ইয়াসিন মেঝেতে বসে আছে, টিভিতে নাটক দেখছে আর একা একা হাসছে,তার বাম হাতে লোহার খাটের সাথে হাতকড়া দিয়ে বাধা। বিমল বাবু ঘরে ঢুকেই ইয়াসিনের কানে মুখে পর্যায়ক্রমে পাঁচ ছয়টা চড় কষালেন। ইয়াসিন আচমকা মার খেয়ে আতংকিত হয়ে বলল,
“ কি হয়েছে স্যার? আর করবো না স্যার!”
“ আর করবো না! শালা শুয়ারের বাচ্চা…”
বিমল বাবু এবার ক্যাঁত করে একটা লাথি বসালেন, ইয়াসিনের কোমরে। ইয়াসিন হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। বিমল বাবু নিজের অফিস রুমে ঢুকে খবরের কাগজ পড়তে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর বাদশা মিয়া নিজে হাতে চীনামাটির প্লেটে খাবার সাজিয়ে ট্রে তে করে নিয়ে এল। বিমল বাবু মরিচে কামড় দিয়ে খাওয়া শুরু করলেন। খাবার গরম এবং সুস্বাদু। খেতে খেতে তিনি হঠাৎ করে ময়নাবতীর ম্যাপটা খুলে বসলেন। কিছুক্ষণ দেখে তিনি ম্যাপ বন্ধ করে, আবার খাওয়ায় মন দিলেন। খাওয়া শেষ করে হাতঘড়ির দিকে একবার দিকে একবার তাকিয়ে, প্লেটেই হাতধুয়ে উঠে পড়লেন।নিজের Caracal F pistol টা চেক করে নিয়ে, কোমড়ে গুঁজে নিলেন। তারপর Yamaha 100 CC মটরবাইক নিয়ে বের হয়ে গেলেন।

Date : Wednesday , 7 /February /2018
Time: 12:50pm.
Place : Paine Hospital , Dhaka.
আলমগির কবির, রেহানা ডাক্তারের চেম্বারের সামনে পাংশু মুখ করে বসে আছেন। ডাক্তারের চেম্বারের সামনে প্রচুর ভিড়। আলমগির সাহেবের সিরিয়াল ৯৬ নম্বর, এখন চলছে ৫৮ নম্বর। ডাক্তার বেশ সময় নিয়েই রুগী দেখেন। আলমগির কবির লক্ষ করলেন এখানে যারা লাইন দিয়ে বসে আছেন তারা সবাই তাঁর মত ক্লান্ত আর রেহানার মত আশাহত জীবন কাঁধে করে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিছু কিছু নতুন মুখ আছে তাঁদের দেখলেই বোঝা যায়।তাঁদের মুখে ভয় আর অনিশ্চয়তা মিশ্রিত এক অদ্ভুত অভিব্যক্তি। কিন্তু যারা তাঁদের দলে তাদের মুখে ভয় বা অনিশ্চয়তা নেই, আছে আরও একটাবার চেষ্টা করে দেখার জেদ। আলমগির কবির একটা ম্যাগাজিন হাতে নিলেন, ম্যাগাজিনের কয়েকটা পাতা উল্টাতেই তিনি একটি বিজ্ঞাপন দেখতে পেলেন। বিজ্ঞাপনে একটি দাবার বোর্ডের ছবি দেয়া আছে, আর সব গুটি গুলি সাজানো আছে। আলমগির কবির ঠোঁটে আঙুল দিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করে উঠে দাঁড়ালেন, তারপর মোবাইল ফোনে গাড়িকে আসতে বলে, হনহন করে হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গেলেন।

Date : Wednesday , 7 /February /2018
Time: 2:20pm.
Place : Moynabati Dokkhinachal Model Town,Moynabati, Gazipur.
Block C,Road 6, Plot 6.
পুরা ১০ কাঠার প্লট জুড়ে একটা পুকুর। গভীরতা অনেক বেশী, কালো পানি। আশপাশের প্লট গুলিও খালি এখনো বিল্ডিং ওঠেনি। জায়গাটা অনেকটা নির্জন। বিমল বাবু তাঁর মটর বাইকটা রাস্তার এক পাশে মাটিতে দাঁড় করিয়ে। পুকুরের দিকে তাঁকালেন। পুকুরের ওপাড়ে দুইটি ছোট ছেলে, খালি গায়ে ছিপ দিয়ে মাছ ধরছে। রাস্তার দিকের পাড়ে ঝোপের পাশে একজন বয়স্ক লোক বসে আছেন, ছিপ ফেলে। তাঁর মাছ রাখার খলইয়ে অনেক গুলি কই মাছ, কয়েকটা এখনো লাফাচ্ছে। বিমল বাবু চারপাশের বাতাবরণ আরেকবার পরখ করে, হতাশ হয়ে বাইকে চাপতে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ তাঁর কি মনে হল, তিনি মাছ কেনার জন্য মাছের দাম করতে গেলেন। বৃদ্ধের বয়স প্রায় ৭৫ বছর। ধনুকের মত বাঁকা পিঠ। মাথায় টাক।পরনে একটা ছেঁড়া গেঞ্জি আর মলিন সবুজ চেকচেক লুঙ্গী। মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। তিনি অত্যন্ত মনযোগ সহকারে এক হাতে ছিপ ধরে আছে। তাঁর বাজপাখির মত দৃষ্টি পুকুরের দিকে। বিমল বাবু একটা সিগারেট ধরিয়ে তাঁর পাশে বসলেন।
“ কি চাচা? কয়টা মাছ ধরলেন?”
বৃদ্ধ অস্পষ্ট করে কিছু একটা বললেন। বিমল বাবু শুধু এইটুকু বুঝতে পারলেন যে আস্তে কথা বলতে হবে। এবার তিনি ফিসফিস করে বললেন,
“ বাড়ি কোথায়? সকাল থেকে কয়টা ধরেছেন?”
“ ১০টার মত, হইবো।”
“ মাছ কি নিজের খাওয়ার জন্য নাকি বিক্রি করবেন?”
“নিজে খামু না, বিক্রি করমু।”
“ কত করে বিক্রি করেন, আমি কিনবো।”
এমন সময় হঠাৎ পিছন থেকে ইয়াসিন ডেকে উঠলো,
“ স্যার এখানে কি করেন? মাছ কেনেন নাকি?”
বিমল বাবু চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখেন কেউ নেই, রাস্তাটাও ফাঁকা। এ যেন ভোজবাজি! হঠাৎ তিনি তার বাম হাতে একটা সুঁই ফোটার মত কিছু অনুভব করলেন। এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, …. বিমল বাবুর পায়ের দিক থেকে দ্রুত ভারি আর আসাড় হয়ে আসতে শুরু করেছে, অপ্রস্তুত বিমল বাবু নিজের পা দুই হাতে ধরে, যেই ঘাঢ় ঘুড়িয়ে বৃদ্ধর দিকে তাকাতে যাবেন এমন সময়, তিনি তাঁর পুরো ভারসাম্য হারালেন, তিনি মুখ থুবড়ে পুকুরপাড়ে পড়লেন। তাঁর হাত পা কিছুই তিনি নাড়াতে পারছেন না, কিন্তু স্পষ্ট বুঝতে পারছেন যে তিনি ছেঁচড়ে চলে যাচ্ছেন পুকুরের দিকে। তার পা দুইটি পুকুরের পানি স্পর্শ করেছে। এখন আর তিনি ছেচড়াচ্ছেন না। তার গাল মাটিতে লেগে আছে, তিনি তাঁর শরীরের সমস্ত ব্যথা অনুভব করতে পারছেন, চোখে সব দেখতে পাচ্ছেন, কানেও শুনতে পাচ্ছেন তাঁর নিজের হৃদস্পন্দন। তিনি বড় নিশ্বাস নিচ্ছেন। এবার কেউ একজন তার মাথা স্পর্শ করলো, তাকে চিৎ করে শুয়িয়ে দিল। এখন তিনি বৃদ্ধটিকে দেখতে পাচ্ছেন। বৃদ্ধ হাতে একটা Scalpel নিয়ে তার মুখের অপর ঝুঁকে এসে গুনগুন করে ছড়া কাটছেন,

“রোদে রাঙা ইঁটের পাঁজা তার উপরে বসল রাজা—
ঠোঙাভরা বাদাম ভাজা খাচ্ছে কিন্তু গিলছে না।
গায়ে আঁটা গরম জামা পুড়ে পিঠ হচ্ছে ঝামা;
রাজা বলে, “বৃষ্টি নামা— নইলে কিচ্ছু মিলছে না।”
থাকে সারা দুপুর ধ’রে ব’সে ব’সে চুপ্‌টি ক’রে,
হাঁড়িপানা মুখটি ক’রে আঁক্‌ড়ে ধ’রে শ্লেটটুকু;
ঘেমে ঘেমে উঠছে ভিজে ভ্যাবাচ্যাকা একলা নিজে,
হিজিবিজি লিখছে কি যে বুঝছে না কেউ একটুকু।
ঝাঁঝা রোদ আকাশ জুড়ে মাথাটার ঝাঁঝ্‌রা ফুঁড়ে,
মগজেতে নাচছে ঘুরে রক্তগুলো ঝনর্ ঝন্;
ঠাঠা’-পড়া দুপুর দিনে, রাজা বলে আর বাঁচি নে,
ছুটে আন্ বরফ কিনে— কচ্ছে কেমন গা ছন্‌ছন্।”
সবে বলে। “হায় কি হল! রাজা বুঝি ভেবেই মোলো!
ওগো রাজা মুখটি খোল— কও না ইহার কারণ কি?
রাঙামুখ পানসে যেন তেলে ভাজা আম্‌সি হেন,
রাজা এত ঘামছে কেন— শুনতে মোদের বারণ কি?
রাজা বলে, “কেইবা শোনে যে কথাটা ঘুরছে মনে,
মগজের নানান্ কোণে— আনছি টেনে বাইরে তায়,
সে কথাটা বলছি শোন, যতই ভাব যতই গোণ,
নাহি তার জবাব কোনো কূলকিনারা নাই রে হায়!
লেখা আছে পুঁথির পাতে, ‘নেড়া যায় বেলতলাতে,’
নাহি কোনো সন্দ তাতে— কিন্তু প্রশ্ন ‘কবার যায়?’
এ কথাটা এদ্দিনেও পারে নিকো বুঝতে কেও,
লেখে নিকো পুস্তকেও, দিচ্ছে না কেউ জবাব তায়।”

বৃদ্ধ এবার বিমল করের বুকের অপর চড়ে বসেছে, বিমল বাবু দ্রুত নিশ্বাস নিচ্ছেন, বুক ভরে নিশ্বাস নিচ্ছেন, কিন্তু কোন লাভ হচ্ছেনা যেন, তার দম বন্ধ হয়ে আসছে প্রায়। এবার তিনি scalpel র ধাতব স্পর্শ পেলেন আর বাম কানের কাছে । তীব্র যন্ত্রণায় চিৎকার করতে চাইলেন তিনি, লাভ হল না, মুখদিয়ে শুধু গো গো শব্দ ছাড়া আর কিছুই বের হল না। বিমল বাবুর হৃদস্পন্দন বেড়েই চলেছে, এখন তাঁর কাছে তাঁর শরীর তুলার মত মনে হচ্ছে, শীত শীত করছে, মাথা হালকা হয়ে যাচ্ছে,সাদা মেঘ,তুলা,অন্ধকার,ফাঁকা। তাঁর অবলা চোখের দিকে তাকিয়ে বৃদ্ধ নির্বিকার হয়ে ছড়া কেটে চলেছেন। এখন ছড়াটা কানের কাছে গম গম করছে,
“লাখোবার যায় যদি সে যাওয়া তার ঠেকায় কিসে?
ভেবে তাই পাই নে দিশে নাই কি কিচ্ছু উপায় তার?”
এ কথাটা যেমনি বলা রোগা এক ভিস্তিওলা
ঢিপ্ ক’রে বাড়িয়ে গলা প্রণাম করল দু’পায় তাঁর।
হেসে বলে, “আজ্ঞে সে কি? এতে আর গোল হবে কি?
নেড়াকে তো নিত্যি দেখি আপন চোখে পরিষ্কার—
আমাদেরি বেলতলা সে নেড়া সেথা খেলতে আসে
হরে দরে হয়তো মাসে নিদেন পক্ষে পঁচিশ বার।”
এমন সময় কানফাটা আওয়াজে গুলি চলল, বৃদ্ধ ছিটকে পড়লো পুকুরের পানিতে। আলমগির কবির মোট চার জনের একটা ছোট টীম নিয়ে একই জায়গায় এসেছেন। আলমগির সাহেব খুব দ্রুত পাড় বেয়ে নিচে নেমে গিয়ে বিমল বাবু কে ধরে ঝাঁকি দিলেন। বিমল বাবুর মুখের চামড়া বাম কানের Tragus থেকে চিবুক হয়ে ডান কানের Tragus পর্যন্ত অর্ধ বৃত্তাকারে কেটে আলগা করা হয়ে, প্রচুর রক্তপাত হচ্ছে।বিমল বাবুর চোখ খোলা, দৃষ্টি শুন্য, তিনি যন্ত্রের মত ভিতরে বাতাস টানার চেষ্টা করছেন। আলমগির কবির বিমল করের বুকে কান দিলেন হৃদস্পদন একেবারে ক্ষিন, গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে। একজন PBI কর্মকর্তা পুকুরে নেমে বৃদ্ধকে টেনে তুলছেন রাস্তার পাশে, পুকুরের এপাড়ের কালো পানি রক্তাক্ত হয়ে খয়েরী হয়ে গেছে। আরেকজন কর্মকর্তা আলমগির কবিরের সাথে ধরাধরি করে বিমল বাবু কে রাস্তার পাশে নিয়ে এসে চিৎ করে শুয়িয়ে রেখলেন, আলমগির নিজের রুমাল দিয়ে বিমল বাবুর মুখের ক্ষতস্থান চেপে ধরে আছেন।

Date : Wednesday , 7 /February /2018
Time: 3:20pm.
Place : Moynabati, Gazipur Highway
কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের দুইটি এম্বুলেন্স পর পর ছুটে চলেছে সাঁইসাঁই করে। সাইরেন বাজছে পাগলের মত। একটিতে বিমল কর, তাঁকে respiratory support system দেওয়া হয়েছে। রক্তপাত পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। অন্যটিতে বৃদ্ধকে নেয়া হয়েছে, সাথে আলমগির কবির। বৃদ্ধের অবস্থা ভালো না, আলমগির কবিরের ছোড়া গুলি তার কাঁধে লেগে বেড়িয়ে গেছে,কিন্তু প্রচুর রক্তপাত হয়েছে এবং এখনো হয়ে যাচ্ছে, কিছুতেই রক্তপাত বন্ধ করা যাচ্ছে না। এম্বুলেন্সে একজন ডাক্তার আছেন, আলমগির কবির তাকে জিজ্ঞেস করলেন,
“ বাঁচানো যাবে?”
“ সম্ভবত না, Blood pressure অনেক নেমে গেছে, Bleeding বন্ধ হচ্ছে না, উনি সম্ভবত Anticoagulants নিয়মিত নিতেন, High Blood Pressure এর রোগী।”
“ জ্ঞান আছে, কথা বলা যাবে?”
ডাক্তার কিছু বললেন না। আলমগির কবির বৃদ্ধর মুখে ওপর ঝুকে এসে জিজ্ঞেস করলেন,
“ আপনার নাম কি? নজরুল এখন কোথায়?
বৃদ্ধ ঘড়ঘড়ে গলায় উত্তর দিলো,
“ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়….লাইব্রেরী”
তারপর বিড়বিড় করে ছড়া কাটতে থাকলেন,
“রোদে রাঙা ইঁটের পাঁজা তার উপরে বসল রাজা—
ঠোঙাভরা বাদাম ভাজা খাচ্ছে কিন্তু গিলছে না।….”
এই বলে সে আলমগির কবিরের হাতে একটা প্লাস্টিকের কিছু গুঁজে দিলেন।আলমগির কবির হাত খুলে দেখতে পেলেন একটা দাবার গুটি, প্লাস্টিকের রাঙা ঘোড়া।

Date : Wednesday , 7 /February /2018
Time: 8:30pm.
Place : Police Central Hospital,Dhaka
বিমল কর এখন হাসপাতালের পর্যাবেক্ষন কক্ষে। তার অবস্থা বেশ ভালো, জ্ঞান আছে, সবাইকে চিনতে পারছেন। তাকে রক্ত দেয়া হচ্ছে, মুখে অনেক গুলি সেলাই পড়েছে। ডাক্তার পরে Plastic Surgery করার কথা বলেছেন। এখন মুখে ব্যান্ডেজ লাগানো, তিনি কথা বলতে পারছেন না। তুতান, রিতা রানী তাঁর মাথার কাছে দাঁড়িয়ে আছে। আলমগির সাহেব বিছানার পাশে একটা টুলে বসে আছেন। বিমল বাবু তুতানের দিকে ইশারা করলেন। তুতান চট করে একটা প্যাড আর একটা কলম বিমল বাবুর হাতে দিল। বিমল বাবু একটু কষ্ট করে লিখলেন, “কে?”
আলমগির কবির একটি হেসে বললেন,
“ কে তা এখনো জানা যায়নি, তবে নজরুল না। এর বয়স ৭৫ বছর। এর একটি হাত Transplanted, অন্য হাতটি নিজের, ৪ টি crime Scene এ পাওয়া দুই হাতের finger print র সাথে মিলে যায়। মানে এক ব্যাক্তি কিন্তু হাত দুই জনের দুইটি।”
বিমল বাবু এরপর লিখলেন,
“ কোথায়?”
“ Survive করতে পারেনি, গুলি লেগেছিল কাঁধে, প্রচুর Bleeding হয়েছে। হাসপাতালে আনার পথে মারা যায়। তেমন কিছু বের করতে পারিনি। জিজ্ঞাস করলাম নজরুল কই? বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, লাইব্রেরী। ওখানে ফোর্স পঠালাম। নজরুল কে পাওয়া যায়নি। পরে বুঝলাম উনি কাজী নজরুল ইসলামের কথা বলে গেছেন। নজরুলের ব্যাপারটা পরিষ্কার হচ্ছে না। ”
এবার বিমল বাবু লিখলেন,
“ আপনি কিভাবে?”
“ ও আচ্ছা, আপনি যেভাবে আমিও সেভাবে। হঠাৎ মনে হল দাবার বোর্ডে ঘোড়ার সম্ভব্য সকল চালের ঘরে চেক দেয়া আছে। ঘোড়ার এখন আর আগানোর কোন পথ নেই। এই রকম মূহুর্তে কি হতে পারে? বারবার মনে হল, ASP স্যার বলেছিলেন, They never break, their own pattern, তখন মনে হল, আরে দাবার এক পক্ষের ঘোড়া তো একটা না , দুই টা ঘোড়া! একটা পত্রিকায় দেখলাম দাবার বোর্ডের ছবি। তাকিয়ে দেখি ২য় ঘোড়ার সামনে একই দিনে খুন করার দুইটা সুযোগ আছে। সেটা হল C6 এবং A6। ময়নাবতীতে A Block আছে কিন্তু ৬ নম্বর রাস্তা নাই। তারমানে C6,এটা সাদা ঘর, সাথে সাথে ঘড়ি দেখলাম দেখি ১ টা বাজে। ধরে নিলাম আমার অনুমান যদি সত্যি হয় তো শেষ খুন হবে, C Block এর ৬ নম্বর রাস্তার ৬ নম্বর প্লটে, ৭ই ফেব্রুয়ারি, বেলা ২:৩০টায়। ফোন দিলাম অফিসে, নওশাদ আর তারেক কে পেয়ে গেলাম। ওদের Armed হয়ে গাড়ি নিয়ে আসতে বলে দিলাম। ওরা আমাকে নিয়ে রওনা হল। তারপর তো…”
বিমল বাবু খাতা আর কলমটা তুতানের হাতে দিয়ে, ডান হাতটা আলমগির সাহেবের দিকে বাড়িয়ে দিলেন। আলমগির কবির হ্যান্ডশেক করে হাতটা কিছুক্ষণ ধরে থাকলেন। এরপর পকেট থেকে সেই প্লাস্টিকের দাবার লাল ঘোড়াটা বের করে বিমল বাবুর হাতে দিয়ে বললেন,
“ এই নিন, আপনার নকশালের ভূত, স্মৃতি হিসাবে রেখে দিবেন। আমি আসছি, রুহুল থাকবে এখানে ডিউটিতে, কোন অসুবিধা হবে না। কাল আবার আসবো। ভালো থাকবেন।”

Date : Sunday , 11 /February /2018
Time: 12:00pm.
Place : PBI Headquarter,Mirpur, Dhaka.
আলমগির কবির তাঁর অফিসে বসে আছেন। তার সামনে নজরুলের একটা স্কেচ রাখা। ইয়াসিন কে ছাড়া হয়েছে।তবে তাকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছে PBI, তার পিছনে লোক লাগানো হয়েছে। আলমগির কবিরের ধারনা নজরুল কে পাওয়া যাবেই যাবে। হঠাৎ অফিসের ফোন বেজে উঠলো।
“ আসসালামু ওয়ালাইকুম”
“ ওয়ালাইকুমস সালাম, স্যার আমি হাসিব বলছিলাম CIAU থেকে।”
“ হ্যা হাসিব বলেন।”
“ খুনির Finger print আর চেহারা মিলিয়ে, পুলিশ রেকর্ড থেকে Identity বের করা হয়েছে। একসময় চরমপন্থি বাম রাজনীতির সাথে ভালোভাবে জড়িত। বরিশালে খুনের মামলা রয়েছে, ৭২ সালে বোমা বাঁধতে গিয়ে একহাত উড়ে যায়। ৭৫ সালে হিলি বর্ডারে encounter করা হয় । তারপর ফাইল closed।”
“ তারমানে আসলে encounter করা হয়নি, কোন কারনে ঐ যাত্রায় বেঁচে যায়।”
“ জ্বী স্যার, আমি ডিটেল পাঠিয়েছি মেইলে।”
আলমগির কবির মেইল দেখলেন, ছবিসহ বিবরণী দেয়া আছে,
Native name: Najrule Ahmed
Born: 31st May 1944;
Pabna District, Bengal Presidency, British India
Died: 7th February 1975 (aged 30), Bangladesh
Education: MBBS
Alma mater: Dhaka Medical College and Hospital
Occupation: Physician, DMCH
Known for: Naxalite Communist Movement in Bangladesh.
Political party: Purba Bangla Sarbahara Party.

Date : Monday , 8 /June /2020
Time: 10:00am.
Place : Synthia Apartment, Keraniganj
বিমল বাবু পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন ২ বছর হল। তিনি ডেভেলপারের ব্যবসা শুরু করেছেন। তাঁর প্রথম প্রকল্প “ সিন্থিয়া এপার্টমেন্ট” লাভের মুখ দেখেছে। তিনি এই বিল্ডিংয়ে নিজের অফিস রুমে বসে আজকের পত্রিকা পড়ছেন। হঠাৎ একটা খবরে তাঁর চোখ আটকে গেল।

ময়নাবতী দক্ষিণাচল মডেল টাউনের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ইয়াসিন খুন।
নিজেস্ব প্রতিবেদক :
গতকাল রাত আনুমানিক ২ থেকে ৩ টার দিকে, মাদক ব্যবসায়ী ইয়াসিনকে, ময়নাবতী মডেল টাউনের ডি ব্লকের ৪ নম্বর রাস্তার একটি ভাড়া করা ফ্ল্যাটবাড়িতে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে এবং তাঁর মুখের চামড়া তুলে নেয়া হয়েছে। পুলিশ ধারনা করছে …

বিমল বাবু পত্রিকা পড়া বন্ধ করে দিয়ে, ড্রয়ার থেকে সেই প্লাস্টিকের রাঙা ঘোড়াটা বের করে টেবিলে রাখলেন। তারপর নিজের গালে, চিবুকে হাত বোলালেন। তিনি লক্ষ করলেন তাঁর গায়ের লোম সব দাঁড়িয়ে গেছে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৭

অর্থনীতিবিদ বলেছেন: রহস্য গল্প। বিশাল। আরেকটু লিখলে নির্ঘাত একটাকে একটা উপন্যাস হিসেবে দাড় করানো যাবে।

২| ০৮ ই জুন, ২০১৮ ভোর ৬:০৮

অক্পটে বলেছেন: ব্লগে এত্ব বড় লেখা এই প্রথম পড়লাম। প্রথমে এডিয়ে যাচ্ছিলাম পরে কি ভেবে যেন পড়া শুরু করি। শুরু করার পর আর ছাড়তে পারলাম কই পুরুটাই শেষ করে উঠতে হলো...

দারুণ লিখেছেন একেবারে পাকা হাতের গড়ন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.