নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের\'

যাযাবর জোনাকি

‘আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের’

যাযাবর জোনাকি › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্য পুরাণ(ধারাবাহিক গল্প)

১৬ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৮

অন্য পুরাণ: দ্বিতীয় অধ্যায় : প্রতিশ্রুত রাজ্য
এক.
বেলা গড়িয়ে চলেছে, বোঝার উপায় নেই। চারিদিকে মেরুন রঙের কুয়াশা। সূর্যের ম্লান আলো কিছুটা দেখা যায়।অসহ্য গরম আর চ্যাপচ্যাপে ঘামে যুডো উপাসকদের শরীর ধুয়ে যাচ্ছে।রাসায়নিক বিষক্রিয়ায় তাদের সকলের চামড়ায় ফোস্কা পড়েছে। এখন ঘামে ভিজে সেগুলি চুলকোচ্ছে। ইতিমধ্যে সমুদ্রের শক্তিশালী স্রোতের সাথে ভেসে আসা তাদের নৌকার উচ্ছিষ্ট কাঠ,দড়ি, পালের কাপড় ইত্যাদি, কুড়িয়ে নিয়ে সকলে নিজের সম্পদের মত বোঝা করেছে। কেউ কেউ সকালবেলা পাওয়া নতুন দাস -দাসীদের গলায় দড়ি বেধে পিঠে সেইসব উচ্ছিষ্টর বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে, কেউ বা ভাঙা পা নিয়ে নিজেই দাস-দাসীদের কাঁধেচেপে বসেছে। তাদের গরম চামড়ার পোশাক অনেকেই খুলে ফেলে প্রায় অর্ধ উলঙ্গ হয়ে কাফেলার সাথে হেটে চলেছে।কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচির একটা পাটাতনের ওপর বসে আছেন। সেটাকে কাঁধে করে বহন করছে দুইজন বাতিল দাস। কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচির ভাঙা হাত একটা দড়ি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা হয়েছে।তাঁর দুই পুত্র তাঁর স্ত্রী কে একই ভাবে বহন করে নিয়ে চলেছে।কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচি কাফেলাকে পথের নির্দেশনা দিচ্ছেন।তাঁরা সৈকত ধরে উত্তরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মৃত্যু উপকূলে মৃত্য পরে থাকা লাশেদের শরীর গলে হাড় বেরিয়ে গেছে। একটা মসৃণ খাড়া পাথরের অপর কাপড়ের মত লটকে থাকা মুক্সোলিফাট এটাকচিসির থেঁতলান শরীর থেকে চুয়িয়ে রক্ত পড়ছে। সে বেঁচে আছে কিনা ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা।

দুই.
বহুদুর হাঁটার পর যুডো উপাসদের কাফেলা বিকালের দিকে এসে থামল একটা লাভা নদীর সামনে, যা দিয়ে বয়ে চলেছে গরম ফুটন্ত মেরুন রাসায়নিক অর্ধতরল। এইগুলি গিয়ে ফোঁস করে মিশে যাচ্ছে সাগরের পানিতে, সেখান থেকে মেরুন ধোঁয়া চারিদিকে ছড়িয়ে পরছে। এইরকম অনেক গুলি নদী এই উপকূল জুড়ে শিরা উপশিরার মত ছড়িয়ে রয়েছে। এইটা গিয়ে একেবারে মিলেছে সাগরে। এটাকে এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছেনা। এই নদীটা এখন পার হতে হবে। নালার গভীরতা মাপার জন্য একজন একটা লাঠি দিতেই সেটা ফোস শব্দ করে জ্বলে উঠলো। নিমিষেই পুড়ে চাই হয়ে গেল লাঠিটা। সকলে হই হই করে উঠলো। কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচি বলে উঠলেন,
“ ভালই হলো ঈশ্বর আমাদের রাতে আগুনের ব্যবস্থা করে দিলেন।”
বিরিনচিসি ইশ্লাব চিকারুভিচি বলল,
“ কিন্তু পিতা, আমরা অনাহারক্লিষ্ট। আমাদের খাদ্য এবং পানি প্রয়োজন, ঈশ্বর কি আমাদের অবস্থা অবগত নন?”
“ সন্দেহ! তোমাদের কে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। ধৈর্য স্বর্গের পথ দেখায়। আজ রাতে আমরা এখানেই বিশ্রাম করবো!”
খাবার, পানির ব্যবস্থা না হলেও সকলে হাপ ছেড়ে বাঁচল, গরম পাথরের উপরে হাঁটতে হাঁটতে সকলের পায়ে ফসকা পড়ে গেছে। রাসায়নিক বিষক্রিয়ায় গায়ে পড়া ফসকাগুলিতে পানি জমেছে। সকলে হতবম্ভ হয়ে বসে আছে। কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচি একটু নিরিবিলি খুঁজে নিজের গায়ের চামড়ার আলোয়ানটা উষ্ণ পাথরের উপরে বিছিয়ে হাটু ভাঁজ করে প্রার্থনা করতে বসলেন। আকাশ থেকে ঠান্ডা ছাই পড়তে শুরু করেছে। কেউ কেউ সংগে করে বয়ে আনা নৌকার কাঠগুলি হিসেব করে জ্বালিয়ে চারিদিকে গোল হয়ে বসেছে। বাতিলদের বেশীর ভাগই গায়ে চামড়ার আলোয়ান জড়িয়ে পাথরের উষ্ণতার আশ্রয় নিয়েছে। বাচ্চা ছেলেমেয়েগুলি ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদতে কাঁদতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। দূরথেকে বাতিল কিশোরীদের আর্তনাদধ্বনি ভেসে আসছে। যাযবরদের কিছু লোকের ভিতরের পশু গুলি ক্ষুধার্ত হয়ে, সদ্য পাওয়া দাসীদের অপর চড়াও হয়েছে।
কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচি অনেক্ষন প্রার্থনা করলেন। কেউ এলো না। তিনি প্রার্থনা বন্ধ করে উঠে দাড়াঁতে চেষ্টা করলেন। পারলেন না। নিজের ভাঙা হাতটায় শক্ত করে বাধা দড়িটা খুলতে শুরু করলেন। ভেতর থেকে আস্তা আস্তে অজগর সাপের মত ফোলা, পানি জমা হাতটা বের হয়ে এল। তিনি নিজের কোমর থেকে হাতরে একটা ছোট পাথরের ছেনী বের করে আনলেন। তারপর ফোলা হাতের চামড়াটা বেশ খানিকটা কেটে সব পুঁজ বের করেদিলেন। কাটা জায়গাটা দিয়ে গলগল করে রক্ত আর পুঁজ বের হয়ে যাচ্ছে, তিনি আরাম বোধ করতে লাগলেন । এই সময় কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচি চিন্তা করলেন, এই যে রাসায়নিক বিষক্রিয়া ছড়াচ্ছে বলে সকলের ধরনা, আসলে তা নয়।আসলে এই রাসায়নিক বিষক্রিয়া তাদের শরীরে প্রবেশ করে ছড়াতে পারছেনা, তাই বেরিয়ে আসতে চাইছে। তিনি নিজে নিজে অনেক্ষন হাসলেন। তাঁর হাত থেকে পুঁজ বের হওয়া বন্ধ হল। তিনি পুনরায় দড়ি দিয়ে হাতটাকে শক্ত করে আবারও পেঁচিয়ে রাখলেন। একটা ছোট পাথরে হেলান দিয়ে তিনি চামড়ার আলোয়ানটা গায়ে জড়িয়ে নিয়ে জ্বরের কোলে ঢোলে পড়লেন। গভীর ঘোরের মধ্যে স্বপ্নে তিনি দেখলেন একজন মিশমিশে কালো শীর্ণকায় বৃদ্ধ ,নরম একফালি কাপড় পরে তাকে দেখতে এসেছে। বৃদ্ধের মাথায় সোনালী চুল।

তিন.
খুব ভোরবেলা বীভুলার ঘুম ভাঙলো । তাঁর পাশে শুয়ে থাকা কৃষ্ণাঙ্গ ,নিদ্রাচ্ছন্ন ,কিশোরী সেবা দাসীর উন্মুক্ত নিতম্বে ভোরের আলোর এক ফালি পড়েছে। তিনি বিছানা ছেড়ে উঠে চিন্তিত মনে পড়নের এক খন্ড সুতী কাপড় শক্ত করে বাধতে বাধতে শোবার ঘরের সাথে লাগানো ঝুলন্ত বারান্দায় গেলেন। ভোরের কুয়াশা এখনো চারিদিকে ছড়িয়ে রয়েছে। এরমধ্যেই রোদ লুকোচুরি খেলে বেড়াচ্ছে । স্বপ্ন যে নিজে দেখেনি এব্যাপারে তিনি নিশ্চিত । তাঁকে স্বপ্ন দেখানো হয়েছে। একদল বিদেশী ,মোটা চামড়া গায়ে নিয়ে বিষাক্ত উপকূল “ অঘা” তে এসে উঠেছে । তাঁরা আস্তে আস্তে তাদের দেশের দিকে কাফেলা করে এগিয়ে আসছে। বীভুলা ধ্যানে বসলেন । অনাময়া পর্বতের সেনা ছাউনিতে সেনাপ্রধান কে খবর পাঠালেন । তিনি পরপর তিনবার একই কথা পুনরায় বলে গেলেন,
“ নদীর অপর প্রান্ত থেকে যে বা যারাই আসুক না কেন ,তাদেরকে বন্দী বানানো হোক !”

একরাত অনাহারে বিশ্রামের পর ক্লান্ত শরীরে সকল যুডো ধর্মের অনুসারী সকাল বেলা জমায়েত হল। কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচি সকলকে দেখাচ্ছেন কিভাবে শরীর কেটে ছড়াতে না পারা বিষ বের করে দিতে হয়। সবাই মনযোগ দিয়ে দেখছে, সাথে সাথে কেউ কেউ ব্যবহারিক পরীক্ষা করে দেখছেন । এমন সময় বিরিনচিসি ইশ্লাব চিকারুভিচি এসে তাঁর পিতার পাশে দাঁড়ালেন । সকলের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেয়ার ভঙ্গিতে তিনি বললেন,
“ এখান থেকে পশ্চিম দিক বরাবর, এই লাভার নদী যেখানে সাগরে মিলেছে সেখানে, লাভার তাপমাত্রা এত বেশী না, সাগরের পানি সামান্য উষ্ণ, আর লাভা ঠান্ডা পানিতে মিশে শক্ত পাথরের মত হয়ে গিয়েছে, সেখানে স্রোতের তীব্রতা থাকলেও পানির গভীরতা একেবারেই কম। আমাদেরকে যদি উত্তরে যেতে হয় তো এই লাভার নদী পার করতে হবে। আর সেটা পার করার একমাত্র রাস্তা ওই সাগর লাভা মোহনা।”
সকলে মন দিয়ে কথা গুলি শুনলো, বোঝার চেষ্টা করল। এরপর দল বেঁধে সবাই হেঁটে গেল মোহনার কাছে৷ লাভা গুলি সমুদ্রের পানিতে পড়ার সাথে সাথে পানি থেকে ফস ফস করে বেগুনি ধোঁয়া উঠছে। কেউ কেউ হাত দিয়ে পানির উষ্ণতা পরখ করে দেখলো। খুব বেশি গরম না। বরং আরামদায়ক।তারপর এক এক করে সকলে পানিতে নামলো। পানির গভীরতা বুক পর্যন্ত। পায়ের নিচে মসৃন পাথরের মত লাভা জমে আছে। সকলে খুব নিরাপদে লাভা নদীর ওপারে পৌছাল। এরপর আবার কাফেলাটা এগিয়ে চলল উত্তর দিক বরাবর। সাথে খাবার নেই, পানি নেই। এভাবে আর খুব বেশী হলে দুই একদিন টেকা যাবে। কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচি গভীর চিন্তায় পড়ে গেলেন। এ কোন ধরনের নিষ্ঠুর পরীক্ষা তাঁর ঈশ্বর তাঁর প্রতি নিচ্ছেন?
লাভা নদী থেকে আরও অনেক দূর হাঁটার পর সকলে যখন আবার নতুন করে হাঁটার উৎসাহ হারিয়ে এখানে ওখানে বসে পরেছে, তখন ইককিনচিদান ইশ্লাব চিকারুভিচি কাফেলার একেবারে সামনে থেকে দৌড় দিয়ে এসে চিৎকার করে খবর দিলো।
“ মানুষ আছে, নদী আছে, পাহাড় আছে। গাছপালা, পশুপাখি সব আছে।নদীর ধারে একটা পাথরের ফলক আছে, আমি দেখেছি, আর মাত্র কিছু দূর পরেই, এখান থেক ৭০-৮০ ধাপ দূরে। ”
এই খবর শুনে সাবাই যে আনন্দে আত্মহারা হল তা না। তারা আবার নতুন করে চিন্তায় পড়লো এখানেও মানুষ তারমানে আবার যুদ্ধ অথবা বন্দী। তাহলে ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত দেশ কোথায়? সকলেই হতাশ হল। কিন্তু পিপাসা আর ক্ষুধার জ্বলায় তারা বাদবাকি ৭০-৮০ ধাপ জলদি জলদি ফেলার চেষ্টায় থাকলো।
সুন্দর বহমান একটা নীল নদী। কুল কুল শব্দে বয়ে চলেছে। সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়লো নদীর অপর। গা ভিজিয়ে, ডুব দিয়ে, পানি খেয়ে , পানি ছিটিয়ে সবাই ক্ষনিকের আনন্দে মেতে উঠলো। ইককিনচিদান ইশ্লাব চিকারুভিচি ফলকটা তাঁর বড় ভাই এবং বাবাকে এনে দেখালো। ভিন্ন কোন ভাষায় লেখা। কাইয়িক ইশ্লাব চিকারুভিচি বললেন,
“ এখানকার মানুষের ভাষা ভিন্ন। তারা আমাদেরকে কিভাবে গ্রহন করবে তা ভাবার বিষয়!”
বেলা গড়িয়ে দুপুর হলে, নদীর ওপারে মহিষ আর ঘোড়ার পিঠে করে শ’খানেক মানুষকে জোড় হতে দেখা গেল। এদের সকলের গায়ের রঙ কালো। তাদের পড়নে নিম্নাংগে একটা পাতলা নীল কাপড়। ওপার থেকে তারা ধনুকে তীর পড়িয়ে,সিংগায় ফু দিয়ে, ইশারায় এপারে লোকজনকে সাবধান করতে থাকলো।
[চলবে]

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: জীবনে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন মনের জোর।

২| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:৩৩

ব্লগ মাস্টার বলেছেন: সুন্দর।

৩| ১৬ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ভাল লাগল পাঠে।

চলুক সিরিজ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.