নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\'আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের\'

যাযাবর জোনাকি

‘আমাদের চাওয়া আর পাওয়ার মাঝখানে একটা দেয়াল আছে, এর একদিকে থাকে চাওয়া,আর একদিকে পাওয়া। মুখ্য সমস্যা হল দেয়ালটা স্বচ্ছ কাঁচের’

যাযাবর জোনাকি › বিস্তারিত পোস্টঃ

#নোট : মিউনিসিপালটি

০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪১


অনেক ছোটবেলায় শোনা একটা শব্দ, মিউনিসিপালটি। খুব সকালে ভোরের প্রায় পর পর বাড়ির সামনে সরু পিচ ঢালা রাস্তায়, ঘটাং ঘটাং আওয়াজ তুলে চারিদিক কাঁপিয়ে,দুর্গন্ধ ছড়িয়ে চলেছে একটা গাড়ি। অনেকটা ট্রেনের বগির মত চাকাওয়ালা ছোট ছোট ড্রাম একটার পর একটা সারিবদ্ধভাবে লাগানো তার সাথে। কখনো তিনটা, কখনো চারটা -পাঁচটা। মিউনিসিপালিটির গুয়ের গাড়ি। এই নামেই সকলের কাছে পরিচিত। হয়তো আওয়াজ, দুর্গন্ধ আর নামটার আকর্ষণেই কষ্ট করে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার কত চেষ্টা। বারান্দায় সব ভাইবোনরা একসাথে দাড়িয়ে হাত তালি দিতে দিতে দেখা। যেদিন অল্পের জন্য দেখা মিলত না সেদিনটাই কেমন মন খারাপ করা যেত।
একটু বড় হওয়ার পর এই মিউনিসিপালটি শব্দটার ভয়বহতার সাথে পরিচয়। পাড়ায় খবর ছড়াতো ‘মিউনিসিপালিটির লোকেরা আসছে’। সকলে ব্যাস্ত হয়ে যেত নিজের প্রিয় পোষা কুকুরটার খালি গলায় লাল ফিতা বাধার জন্য। যাদের কুকুরের গলায় বেল্ট লাগানো তারা নিশ্চিন্ত। কিন্তু পোষা কুকুর টমিটার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শত্রু, পাড়ার মোড়ের খেকি কুকুরটা, যেটা শীতে ৪টা বাচ্চা দিয়েছে, তাদের দুর্ভাগ্য।তাদের গলায় লাল ফিতা নেই। বেলা ১১টায় গোঁ গোঁ আওয়াজ তুলে মাঝারী সাইজের ভাঙাচোরা নীল রঙের ট্রাকটা সরীসৃপের মত গড়িয়ে গড়িয়ে আসে।তার সাথে পায়ে হেঁটে আসে কালো অথবা গাঢ় নীল পোশাক পরা তিনজন যমদূত। দুইজনের হাতে দুইটি বড় বড় সাঁড়াশি। একজনের হাতে একটা বড় সিরিঞ্জ, তাতে লাল বিষ ভরা। যেকোন কুকুর চোখে পরার সাথে সাথেই একজন সেটার গলায় আর একটা সাঁড়াশি দিয়ে চেপে ধরে,তারপর শুন্যে তুলে এক আছাড়! দ্বিতীয় জন সাঁড়াশি দিয়ে পেটের কাছে চেপে ধরে,একটা পা পেটের ওপর তুলে দেয়। এবার তৃতীয় জন হাতের সিরিঞ্জে লাল বিষ ঢুকিয়ে দেয় অসহায় জন্তুটার শরীরে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে কুকুরটির শরীর নিথর হয়ে যায়। দুই সাঁড়াশিওয়ালা যমদূত একসাথে ছুঁড়ে দেয় মরা জন্তুটাকে ট্রাকের পেছনে। এভাবে একের পর এক। ট্রাকের সামনে এবং আসেপাশে সবসময়ই কিছু সাহসী বাঘা কুকুর ঘাড়ের লোম খাড়া করে ঘেউ ঘেউ করতে থাকে। হয় তাদেরও একই পরিনতি হয় অথবা তারা সজোরে সাঁড়াশির বাড়ি খায়। এইভাবেই এক ডাস্টবিন থেকে আরেক ডাস্টবিন, এক পাড়া থেকে অন্য পাড়া৷ এদিকে পাড়ার সকলে নিজেদের বাড়ির বারান্দায় নয়তো রাস্তার ধারে, চায়ের দোকানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে। যেন এই নৃশংস দৃশ্যটা দেখার জন্য সবাই এক বছর ধরে অপেক্ষা করছে। অনূভূতিটা মোটেও সুখকর নয় সাবার কাছে। অনেকটা কৌতুহল, আফসোস, খারাপ লাগা আর খানিকটা ভয় মিশিয়ে একটা অসুস্থ অনূভূতি। কেউই চাইছে না আবার বাধাও দিচ্ছেনা। এটা যেন ঋতু নিয়ন্ত্রিত একাটা কৃত্রিম ব্যাপার। প্রতি বছর ঘটে যাবে, সকলে তাকিয়ে দেখবে, এটাই নিয়ম। যেন কেউ নতুন নিয়ম বানাতেও চান না আবার এই নিয়ম ভাঙতেও চান না। যেন মিউনিসিপালিটির গাড়ী, যমদূত, বিষে ভরা সিরিঞ্জ, কুকুর, দর্শক সবই একটা সামাজিক যজ্ঞের অংশ। বহু বছর এই যজ্ঞ আর চোখে পড়ে না। কিন্তু স্মৃতিতে সেই মিশেল অসুস্থ অনূভূতিটা এখনো রয়ে গেছে ।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৭

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: শহরের শৃঙ্খলার জন্য কুকুর নিধনের দরকার আছে...

২| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:৩৬

সনেট কবি বলেছেন: কুকুর মারা বেশ ভাল।

৩| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:৪০

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।

৪| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৯:০৬

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: কোন প্রাণীই মারা উচিত নয়। বংশ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করুন। হত্যা করা বন্ধ করুন। লালন পালন করতে না পারলে পৃথিবীতে আনার কি দরকার।

৫| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ২:০৪

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



আমি কখনো নিজ চোখে এমন বর্বরতা দেখিনি; দেখলে সহ্য করতে পারতাম না। একটি নিরীহ পশুর জন্য এমন আচরণ অন্যায়।

৬| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:০০

রাজীব নুর বলেছেন: সারা জীবন ঢাকা শহরে পার করে দিচ্ছি। ছোট বেলায় মাত্র একবার দেখেছি সিটি কর্পোরেশনের লোক এসে কুকুর ইনজেকশন দিয়ে মারছে। মেরে বড় পিকাপে করে নিয়ে যাচ্ছে।

৭| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:০৪

গরল বলেছেন: কোন জাতি কত মার্জিত তা পশু-পাখিদের প্রতি তাদের আচরণ দেখেই বোঝা যায়। মানুষের মধ্যে যারা যত উগ্র, নিষ্ঠুর বা ভয়ঙ্কর তারা পশুদের প্রতি তত নির্মম। নির্দিধায় যারা পশু-পাখি হত্যা করে, অত্যাচার করে বা তার সমর্থন করে তারা খুবি নিচু স্তরের, নিচু জাতের ও নিচু মানষিকতার।

৮| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩২

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: আমাদের শহরেও কুকুর মারা অভিযান চলে, কখনো সাহস করে দাঁড়িয়ে দেখা হয়নি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.