নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কবিতা,উপন্যাস,দর্শন,সিনেমা ও অন্যান্য

জহিরুলহকবাপি

আমি কামনা করি মানুষের ভিতর স্বপ্নরা আসা যাওয়া করবে। মানুষ তার স্বপ্ন পূরণের জন্য যুদ্ধ করবে।

জহিরুলহকবাপি › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপরেশন সার্চ লাইট এর প্রস্তুতি

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:৩০

অপরেশন সার্চ লাইট নাম হলেও কার্যত এটি ছিল অপরেশন সার্চ বাঙালি। আবার অন্য ভাবে চিন্তা করে বললে রাতের আধারে সসার্চ লাইট দিয়ে খুঁজে খুঁজে বাঙালি নিধন। ১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ রাতে শুরু হওয়া পাকিস্তানী আর্মির অপরেশন শুরু সময় নির্ধারিত ছিল কিন্তু শেষ হওয়ার কোন নির্ধারিত সময় ছিল না যদিও ১৯ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক ভাবে এ অপরেশন শেষ হয়।
অপরেশন সার্চ লাইটের প্রধান উদ্দেশ্য
ঢাকা, চট্টগ্রাম,সিলেট, কুমিল্লা, যশোহর, রাজশাহী, রংপুরের মতো বড় শহরগুলো ২/১ দিনের ভিতর দখল করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রনে এনে বাঙালিকে দমন করা। ৭০ এর নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে পশ্চিম পকিস্তানের কাছেই ক্ষমতা রেখে বাঙালিকে শোষন করার জন্যই ঐ হত্যাযজ্ঞের আয়োজন ।
অভিযান পরিকল্পনা
পুরো অপরেশনের পরিকল্পনা ছিল কঠোর গোপন। ১৯৭১ সালের ২২ ফেব্রয়ারী পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর এক বৈঠকে অপরেশন সার্চ লাইটের সিধান্ত নেওয়া হয়। এ প্রস্তাবনার ভিত্তিতে মেজর জেনারেল খাদিম হুসাইন রাজা ও মেজর রাও ফরমান আলী এই অপরেশনের মূল পরিকল্পনা করে। এ সিধান্ত অণূযায়ী পশ্চিম পাকিস্তানের কোয়েত থেকে ১৬ ইনফ্রেন্ট্রি ডিভিশন এবং খরিয়ার থেকে ১৯ ডিভিশনকে ফেব্রুয়ারীতেই পূর্ব পাকিস্তানে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ভাইস অ্যাডমিরাল এসএম আহসান এবং পূর্ব পাকিস্তানের জিওসি লে জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খান পূর্ব পাকিস্তানের নিরস্ত্র মানুষের উপর এ ধরনের আক্রমনের তীব্র বিরোধীতা করেন। ফল স্বরূপ তাদেরকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। লে. জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর ও জিওসি করে পাঠানো হয়।
১৭ মার্চ পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর সিওএস জেনারেল হামিদ টেলিফোন করে মেজর জেনারেল খাদিম হুসেন রাজাকে অপারেশনের পরিকল্পনা করার দায়িত্ব দেয়।
১৮ মার্চ সকালে ঢাকা সেনানিবাসের জিওসি কার্যালয়ে মেজর জেনারেল রাজা ও মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি কঠোর গোপনীয়তায় অপারেশনের পরিকল্পনা তৈরি করে।
পরিকল্পনা রাও ফরমান আলী নীল রঙের অফিসিয়াল প্যাডের উপর লিখে। পৃথিবীর ঘৃন্য, নৃশংসতম গণহত্যার পরিকল্পনা ছিল মাত্র ৫ পৃষ্ঠার! পরিকল্পনা প্রস্তুতিও ছিল এ দুই জনের উপর।
২০ মার্চ লে. জে. টিক্কা খান ও জেনারেল হামিদ পুরো পরিকল্পনাটি যাচাই করে।
২৫ মার্চের ঢাকার সৈন্যদের কমান্ডে ছিল রাও ফরমান আলি, অন্যান্য স্থানের সৈন্যদের কমান্ডে ছিল জেনারেল খাদেম, জেনারেল টিক্কা ও তার কর্মকর্তারা ৩১ কমান্ড সেন্টারের সব কিছু তদারক করা এবং ১৪তম ডিভিশনের কর্মকর্তাদের সহযোগীতা করার উদ্দেশ্যে ছিল।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ধারনা ছিল ১ মাসের ভিতর বাঙালি ঠান্ডা হয়ে যাবে। এ সময়ের ভিতর আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী, সমর্থকদের পরিবার সহ নিশ্চিহ্ন করে দেও্য়া যাবে। অপরেশন সফল করার জন্য পাকিস্তানী সেনা বাহিনী সেচ্ছাচারিতার ক্ষমতা পায়। ঘন বসতিপূর্ণ এবং হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা গুলোতে বেশি ধরপাকড়, সার্চ এর নির্দেশও দেওয়া হয়।
সফলাতার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরিকল্পনা
* নির্ধারিত শহর, এলাকা গুলোতে অপারেশন শুরু করতে হবে একই সময়ে।
* সর্বোচ্চ সংখ্যক রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠনের নেতা, কর্মী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ এবং শিক্ষকদের গ্রেফতার করা।
* ঢাকায় অপারেশন ১০০% সফল হওয়া বাধ্যতামূলক। দ্রুত সময়ের ভিতর ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় দখল এবং তল্লাশী করা ।
* সেনানিবাসকে সুরক্ষিত রাখার প্রয়োজনে উন্মুক্ত ও সর্বোচ্চ ক্ষমতায় অস্ত্র ব্যবহারের কর্তৃত্ব প্রদান ।
* টেলিফোন, টেলিভিশন, রেডিও ও টেলিগ্রাফ সহ সকল অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিওয়া।
* পূর্ব পাকিস্তানী সৈন্যদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেড়ে নিয়ে নিস্ক্রিয় করা।
* বাঙালিকে নিশ্চিত রাখার জন্য ইয়াহিয়া খান ৭০ এর নির্বাচনে বিজয়ী আওয়ামী লীগ এর আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার অভিনয় করবে। এমনকি ভুট্টো যদি আওয়ামী লীগের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেন, তবুও ইয়াহিয়া আলোচনা চালিয়ে যাবে।
* ঢাকা নিরাপদ হলে পাকিস্তানের ৯, ১৬ ডিভিশনের সৈন্যরা বিমান যোগে ঢাকা আসবে। যে সব শহরে বিমানঘাঁটি আছে যেমন চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোর, রংপুর, কুমিল্লাতে সরাসরি ঢাকা থেকে সি-৩০ বিমান অথবা হেলিকপ্টার ট্রুপস এর মাধ্যমে শক্তি বৃদ্ধি করা হবে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনীর অবস্থান
ঢাকায় ব্রিগেডিয়ার জাহানবাজ আরবাব এর অধীনে ৫৭ পদাতিক বাহিনী।
কুমিল্লায় ব্রিগেডিয়ার ইকবাল শফির অধীনে ৫৩ পদাতিক বাহিনী।
রংপরে পশ্চিম পাকিস্তানী ব্রিগেডিয়ার আবদুল্লাহ খান মালিকের অধীনে ২৩ পদাতিক।
চট্টগ্রামের দায়িত্ব প্রাপ্ত বাঙালি ব্রিগেডিয়ার এম আর মজুমদার নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর গুলি বর্ষণে অস্বীকৃতি জানিয়ে এমভি সোয়াত এর মালামাল খালাসের কাজে বাঁধা সৃষ্টি করলে তাকে ২৪ মার্চ তার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার বদলে ব্রিগেডিয়ার এম এইচ আনসারি চট্টগ্রাম এলাকার দায়িত্ব পায়।
যশোরে ব্রিগেডিয়ার এআর দুররানির অধীনে পাঠানো হয় ১০৭ ।
ঢাকা বিমান ঘাঁটিতে পাকিস্তানী বিমান বাহিনীর ২০টি এফ-৮৬ সাবের জেট এবং ৩টি টি-৩৩ প্রশিক্ষণ বিমান ছিল। সশস্ত্র বাহিনীর এক স্কোয়াড্রন ৪টি এমআই-৮ এবং ৪টি এলট-III হেলিকপ্টার বাংলাদেশে পাঠানো হয়। সি-১৩০ হারকিউলিস বিমানকে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে অপারেশনের জন্য ঢাকায় আনা হয়।
চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, রংপুরের কাছাকাছি লালমনিরহাটে, সিলেটের কাছাকাছি সালুটি করে, যশোরে এবং ঠাকুরগাঁয়ের কাছে বিমানঘাঁটিগুলো স্থাপন করা হয়।
বাংলাদেশে নৌবাহিনীর চারটি গানবোট রাজশাহী, যশোর , কুমিল্লা এবং সিলেটে ও বালাঘাট এলাকায় একটি পেট্রোল এবং একটি পিএনএস জাহাঙ্গির নামে একটি ডেস্ট্রয়ার ছিল। পাকিস্তানী নৌবাহিনীর পিএনএস বাবুর নামের পতাকাবাহী জাহাজ অপারেশন শুরুর পর বাংলাদেশে আসবে ।
সফলতা নিশ্চিত করতে সামরিক বাহিনীতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। বাঙালি অফিসার সৈনিকদের নিষ্ক্রিয় করার বিভিন্ন ব্যাবস্থা নেওয়া হয়। বদলি করা হয় অনেককে। বাঙালি অফিসারদের ছুটি নিতে উদ্বুদ করা হতে থাকে সূক্ষ কৌশলে। এর ফলে কেউ তেমন কিছু সন্দেহ করবে না। গোপনীয়তা রক্ষা্র জন্য পরিকল্পনা অণূযায়ী সেনা কর্মকর্তারা অনেক ধরনের সূক্ষ পরিকল্পনা প্রয়োগ করতে থাকে। পশ্চিম পাকিস্তানী কর্মকর্তা ও সৈন্যদের পরিবারের সদস্যদেরকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে সরিয়ে নেয়া হয় এবং তার বদলে সুযোগ সুবিধা মত কিছু পশ্চিম পাকিস্তানী বেসামরিক কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যদের পূর্ব পাকিস্তানে এনে রাখা হয়।
অপারেশন শুরুর আগেই সমস্ত নিয়মিত বাঙালি ইউনিটকে এক সাথে নিরস্ত্র করে না করে পাকিস্তানী নেতৃত্ব অন্যান্য উপায় বাঙালি ইউনিটগুলো থেকে সম্ভ্যাব্য প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করে। বাঙালি ইউনিটগুলোকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করে তাদেরকে সেনানিবাসের বাইরে পাঠানো হয় বিভিন্ন কাজে । এক অংশ থেকে আরেক অংশকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়। সবগুলো অংশকেই রেডিও এবং তারহীন যোগাযোগের গ্রিড থেকে যত সম্ভব দূরে রাখা হয়। বাঙালি অফিসারদের সরাসরি অপারেশনে নিয়োজিত ইউনিটগুলো থেকে যথাসম্ভব দূরে রাখার ব্যাবস্থা হয়। কোথাও কোথাও পশ্চিম পাকিস্তানী কর্মকর্তারা বাঙালি ইউনিট পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে নেয়। বাঙালি সৈনিকদের অনেককে ছুটিতে পাঠানো হয়, অনেককে নিরস্ত্র করা হয়, তবে এমনভাবে কাজগুলো করা যাতে কারও মধ্যে কোন সন্দেহের উদ্রেক না হয়। ইপিআর এর বেশির ভাগ বাঙালি ইউনিটগুলোকে সীমান্তের প্রতন্ত এলাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ২৪ তারিখে ইপিআর এর বেতার যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
২৪ ও ২৫ মার্চ, পাকিস্তানী জেনারেলরা হেলিকপ্টারে করে প্রধান প্রধান গ্যারিসনগুলো পরিদর্শন করে।গ্যারিসন কমান্ডার ও অপারেশনের অন্যান্য সিনিয়র পাকিস্তানী কর্মকর্তাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দেয়। এই দলের সাথে ছিলেন জেনারেল হামিদ, জেনারেল মিঠঠা, কোয়ার্টার-মাস্টার জেনারেল এবং প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার কর্নেল সাদউল্লাহ। জেনারেল রাও ফরমান আলী যান যশোর, জেনারেল খাদিম রাজা কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের যায়। ব্রিগেডিয়ার এল-ইদ্রিস ও কর্নেল সাদউল্লাহ রংপুর সফর করে।
ঢাকা
*রাত ১১টায় কারফিউ জারি করা এবং টেলিফোন/টেলিগ্রাফ/রেডিও স্টেশন এবং সকল প্রকার পত্রিকা প্রকাশনা বন্ধ করে দেয়া।
* ঢাকার সড়ক, রেল ও নৌ-পথের দখল নেওয়ো। নদীতে টহল জারি করা।
* দ্রুততম সময়ের ভিতর শেখ মুজিব সহ আওয়ামী লীগের আরো ১৫ জন নেতাকে গ্রেফতার করা।
* ধানমন্ডি এলাকায় এবং হিন্দু এলাকাগুলোতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সার্চ করা।
* ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইপিআর সদর দফতর, এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইন ধ্বংস ও পরাভূত করা এবং ২য় ও ১০ম ইবিআর কে নিরস্ত্র করা।
* গাজিপুর অস্ত্র কারখানা এবং রাজেন্দ্রপুরের অস্ত্রগুদাম দখল ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
ঢাকা দখলের পরিকল্পনা
২৫ মার্চের আগে পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড সদর দফতরের সাথে যুক্ত হয়েচিল ১৪তম ডিভিশন। এই সময় ৫৭তম ব্রিগেড ঢাকা সেনানিবাসে অবস্থান করছিল। যেসকল নিয়মিত সেনা ইউনিটগুলো উপস্থিত ছিল সেগুলো হলো―
** ৫৭ ব্রিগেড :
১৮ এবং ৩২ পাঞ্জাব নেতৃত্বে লে.কর্নেল তাজ রেজিমেন্ট
১৩ সীমান্তবর্তী রেজিমেন্ট ২২তম বালুচ রেজিমেন্ট
৬০৪ ইন্টেলিজেন্স ইউনিট
৩১ ভূ-গোলন্দাজ বাহিনীর নেতৃত্বে লে.কর্নেল জাহিদ হাসান।
** ১৪ ডিভিশন সদর দফতরের সাথে নিম্নলিখিত ইউনিট গুলো যুক্ত ছিল-
৪৩ হালকা বিমানবিধ্বংসী রেজিমেন্ট নেতৃত্বে লে.কর্নেল সাফফাত আলি।
৩য় কমান্ডো ব্যটেলিয়নের উপকরন নেতৃত্বে লে.কর্নেল জেড.এ খান
১৯ সংকেত প্রদানকারী রেজিমেন্ট নেতৃত্বে লে.কর্নেল ইফতেখার হুসাইন
১৪৯ পদাতিক বাহিনী। PAF (পাকিস্তানী বিমান বাহিনী) এর সব কিছু তেজগাঁও বিমানবন্দরে জড়ো করা হয়।
২৯ অশ্বারোহী রেজিমেন্ট থেকে ১৪টি M24 শ্যাফি ট্যাঙ্ক ঢাকায় জড়ো করা হয়। সব ইউনিটের সংযুক্তি হিসাবে ৫৭ ব্রিগেড, ১৪ ডিভিশন এবং পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সাহায্যকারী ইঞ্জিনিয়ারিং, সরবরাহকারী, এবং চিকিৎসা ইউনিট ঢাকায় অবস্থান নেয়।
*১৩ সীমান্তবর্তি বাহিনী সেনানিবাসে সংরক্ষিত শক্তি হিসাবে থাকবে এবং নিরাপত্তা প্রদান করবে।
* ৪৩ হালকা বিমানবিধ্বংসী বাহিনী তেজগাঁও বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে।
* ২২ বেলুচ রেজিমেন্ট ইপিআর বাহিনীকে নিরস্ত্র করবে এবং ইপিআর সদর দফতরের ওয়্যারলেস ব্যবস্থা দখলে নেবে।
* ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট রাজারবাগ পুলিশ লাইনকে নিস্ক্রিয় করবে।
* ১৮ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের দায়িত্ব ছিল পুরান ঢাকা এবং নবাবপুরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
* ৩১ ফিল্ড রেজিমেন্ট মোহাম্মদপুর এবং মিরপুরের দায়িত্বে থাকবে।
* 3 SSG এর একটি প্লাটুন মুজিবকে ধরার দায়িত্বে ছিল।
* ২২ বেলুচ এবং ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্ভূল অপরেশন চালাবে।
* ২২ বেলুচ রেজিমেন্ট এরপর পিলখানার শক্তি বৃদ্ধি করবে।
২৫ মার্চ সকালে ২২ বেলুচ রেজিমেন্ট পিলখানার নিরাপত্তার দায়িত্ব নেওয়ার সময় বাঙালি ইপিআর অফিসারদের পাকিস্তানী অফিসাররা পিলখানায় ব্যস্ত রেখেছিল এবং সৈন্যদের প্রায় সবাইকে কাজ বন্ধ রেখে বিশ্রামে পাঠানো হয়।
১০ বাঙালি রেজিমেন্টকে সেনানিবাসে সহজেই নিশ্চিহ্ন করে ঘাতকরা। মেজর বেলাল এবং লে.কর্নেল জেড এ খানের সাথে নিযুক্ত কমান্ডো বাহিনী অপারেশনের শুরুতেই সহজেই শেখ মুজিবুর রহমানকে ধরতে সক্ষম হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা কৌশলে গ্রেফতার এড়াতে সক্ষম হন এবং ২৯ মার্চের ভেতর শহর ত্যাগ করে।
২২ বেলুচ রেজিমেন্ট ইপিআর সদর দফতরে অবস্থিত বেশিরভাগ নিরস্ত্র এবং অসংগঠিত ইপিআর সৈন্যদের আক্রমণ করে সারা রাত যুদ্ধ করার পর পরাজিত করে পাকিস্তানী বাহিনী কোন বাধা ছাড়াই সহজে মিরপুরে অবস্থানরত ইপিআর বাহিনীকে গ্রেফতার এবং রাষ্ট্রপতি ভবন ও গভর্নর হাউস দখল করে নিতে সক্ষম হয়, কিন্তু অনেকে পালাতে সক্ষম হয় এবং অনেকে মারা পড়ে।
১৮ ও ৩২ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের অনিয়মিত বাহিনী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আক্রমণ চালায়, আওয়ামী লীগ স্বেচ্ছাসেবীদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বাধা প্রদানের চেষ্টাকে পরাভূত করে, ছাত্রনিবাসে অবস্থানরত নিরস্ত্র ছাত্রদের হত্যা করে, সাথে বেশ কিছু অধ্যাপকদেরও হত্যা করে এবং তারপর ২৬ মার্চ সকালের দিকে হিন্দু এলাকা এবং পুরান ঢাকা আক্রমণের জন্য গমন করে। রাজারবাগে অবস্থানরত পুলিশেরা আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তুলে ২৫ মার্চ রাতেই কিন্তু ধীরে ধীরে পরাজিত হয়। যারা বেঁচে ছিল তাদের বেশিরভাগ ধরা পরে অথবা এদিক সেদিক পালিয়ে যায়। অপারেশনের সময় নিরস্ত্র বাঙালিদের উপর পাকিস্তানী হায়েনারা কামান এবং সাঁজোয়া যান ব্যবহার করে। ভোরের মধ্যে শহর দখলে চলে আসে এবং শহরব্যাপি কারফিউ জারি করা হয়।
২৬ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত অনিয়মিত আক্রমণ চলতে থাকে,শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের নেতাদের গ্রেফতার করতে না পারা ছাড়া সার্বিক অপারেশনের অন্যান্য সব লক্ষ্য অর্জিত হয়। এছাড়া পাকিস্তানী সেনারা শহীদ মিনার, দৈনিক ইত্তেফাক কার্যালয়, ডেইলি পিপল এবং রমনার কালী মন্দির ধ্বংস করে দেয়। ধরা পরা বাঙালি সৈন্য এবং ইপিআর ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বেশির ভাগকে মেরে ফেলা হয় । অল্প কয়েকজনকে কারাগারে পাঠানো হয়। ২৬ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত একটি অপারেশন যার নাম দেয়া হয় “GREAT FLY-IN”। এর মধ্যে দিয়ে PIA বোয়িং এবং C-130 পরিবহন বিমানের মাধ্যমে ২৭, ৩১৩ এবং ১১৭ ব্রিগেডের সমন্বয়ে গঠিত ৯ ডিভিশনক এবং ৩৪ এবং ২০৫ ব্রিগেড নিয়ে ১৬ ডিভিশনকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয় । ২টি মর্টার ব্যটারি এবং ২টি ইপিকাফ (EPCAF) ইউঙের প্রতিটি এবং পশ্চিম পাকিস্তানী ফরেস্ট রেজ্ঞারদের বিভিন্ন স্থানে নিযুক্ত করা হয়।
চট্টগ্রাম
পাকিস্তানী বাহিনীকে চট্টগ্রামে নিম্নলিখিত লক্ষ্যসমূহ ঠিক করে দেয়া হয়:
*ইবিআর সি ইউনিট, ৮ম ই বি আর, ই পি আর এবং পুলিশ বাহিনীকে নিরস্ত্র করা।
*পুলিশের অস্ত্রসস্ত্র, রেডিও স্টেশন এবং টেলিফোন এক্সচেইঞ্জ দখল করে নেয়া।
*পাকিস্তানী নৌবাহিনীর সাথে যোগাযোগ করা।
*বিদ্রোহী বাঙালি লে কর্নেল এম আর চৌধুরী এবং আওয়ামি লীগ নেতৃবৃন্দদের গ্রেফতার করা।
২৬ মার্চে কুমিল্লা থেকে আগত ৫৩তম ব্রিগেড ট্রুপসের দ্বারা চট্টগ্রাম গ্যারিসনের শক্তি বৃদ্ধি করা হয়।
ময়মনসিংহ ও জয়দেব পুরও ছিল সার্চ লাইটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। রাজেন্দ্রপুর অস্ত্র কারখানা দখলে রাখার জন্য পাকিস্তানী বাহিনী বিশেষ ব্যাবস্থা করে ছিল। ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা নিয়ন্ত্রনে আনার সময় বেধে দেওয়া হয়ে ছিল ৬ ঘন্টা। যদিও ঢাকাকে ধ্বংস করে দিতে, সাধারণ নাগরিককে খুন এবং মনে ভয় ঢুকিয়ে দিতে এর চেয়ে কম সময় লেগে ছিল। ঢাকার এ হত্যাযজ্ঞে বিহারীরাও সক্রিয় অংশ নেয়। পৃথিবীর নৃশংস রাতগুলো একটি ছিল ২৫ মার্চ রাত। সাধারণ, ঘুমন্ত, নিরস্ত্র মানুষের উপর গুলি চালাতে, গোলা চালাতে পাকিস্তানী সুসজ্জিত, শক্তি শালী সেনাদের শিক্ষা বা বিবেকে বাধে নি। তাদেরকে সৈনিকের, যোদ্ধার প্রশিক্ষন দেওয়া হয় নি। দেওয়া হয়েছিল সাইকো টাইপ হত্যার, খুন এবং ক্ষমতার প্রশিক্ষন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর থেকে পাকিস্তান সেনা বাহিনী যে বিকৃত পিশাচদের বাহিনী তা ক্রমে ক্রমে প্রামাণিত হতে থাকে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.