নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাহিত্য, সংস্কৃতি, কবিতা এবং সমসাময়িক সামাজিক বিষয়াদি নিয়ে গঠনমুলক লেখা লেখি ও মুক্ত আলোচনা

ডঃ এম এ আলী

সাধারণ পাঠক ও লেখক

ডঃ এম এ আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরশ পাথর প্রাপ্তি পর্ব-৪ : মৈমনসিংহ-গীতিকা প্রসঙ্গ

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:৪৮


পরশ পাথর প্রাপ্তি :পর্ব-১
পরশ পাথর প্রাপ্তি: পর্ব-২
পরশ পাথর প্রাপ্তি পর্ব -৩
পরশ পাথর প্রাপ্তি পর্ব -৩ এ বলা হয়েছে আমাকে গল্প শুনানোর সময় ছোট কাকা বলেছিলেন প্রথম দর্শনেই মহুয়ার রূপে-গুণে মুগ্ধ হয়ে নদের চাঁদ তৎক্ষণাৎ তার প্রেমেতো পরলই , হাজার টেকার শাল দিল আরো দিল টেকা কড়ি, বসত করতে হুমড়া বাইদ্যারে দিল একখান বাড়ী। উদ্দেশ্য মহুয়া তার এলাকায় স্থায়ী হোক। হুমরা বেদে উপহার গ্রহণ করল , পাশের গ্রাম উলুয়াকান্দায় গিয়ে বাড়ি বানাল। এই পর্যন্ত বলে কাকা শুরু করেছিলেন একটি গান-(অনেক বছর পরে গানের সব কথাগুলি জানতে পারি ময়মনসিংহ গীতিকায় থাকা মহুয়ার কাহিনী পাঠে)
নয়া বাড়ী লইয়ারে বাইদ্যা বানলো জুইতের ঘর,
লীলুয়া বয়ারে কইন্যার গায়ে উঠলো জ্বর।
নয়া বাড়ী লইয়া রে বাইদ্যা লাগাইল বাইঙ্গন,
সেই বাইঙ্গন তুলতে কইন্যা জুড়িল কান্দন।
কাইন্দ না কাইন্দ না কইন্যা না কান্দিয়ো আর,
সেই বাইঙ্গন বেচ্যা দিয়াম তোমার গলায় হার।
https://www.kishorgonj.com/মহুয়া-সুন্দরী-ও-নদের-চাঁ/

পরবর্তীতে হাই স্কুলে ক্লাশ নাইনে পড়ার সময়ে বাংলা পাঠ্য বই ‘কিছছা কাহিনী’ নামক সহায়ক গ্রন্থে থাকা কাজল রেখা নামে একটি কিসছা পড়ানোর সময় বাংলার শিক্ষক্ষের কাছে শুনেছি ময়মনসিংহ গিতীকা নামে বাংলা সাহিত্যে বি্খ্যাত একটি ঐতিহ্যবাহী লোকসাহিত্যগাথা পুস্তক আছে, সেখানে 'কাজল রেখা'সহ আরো অনেক বিখ্যাত লোকগাথা আছে। উল্লেখ্য আমার বড় কাকা ছিলেন বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক। কর্মসুত্রে বিভিন্ন সরকারী কলেজে বদলির চাকুরী ও ব্যচেলর কোয়ার্টারে থাকার কারণে উনার বিশাল গ্রন্থ সংগ্রহের বেশীর ভাগই দেশের বাড়ীতে বুক সেলফ সংরক্ষন করে রাখতেন । বই পাগল কাকা উনার মাসিক বেতনের প্রায় অর্ধেকই ব্যয় করতেন পুস্তক ক্রয় ও পুথি সংগ্রহের কাজে।উনার জীবনের শেষদিন পর্যন্ত দেখেছি এমন ভাবেই বই কিনতে । উনার বিশাল সংগ্রহশালায় পুর্ব বঙ্গ ও পশ্চিম বঙ্গের সে সময়কার নামকরা সাহিত্যিকদের প্রায় সকল বইই ছিল। প্রতি বছর ভাদ্র মাসে প্রখর রোদের সময় আমি আর দাদী দুজনে মিলে পুরাতন পুঁথি আর বইগুলি বুকসেলফ হতে বেড় করে রোদে শুকাতে দিতাম যেন বইগুলিতে উইপোকা না ধরে ।অনেক সময় দেখা যেত বেশ কিছু বইয়ে উই পোকা বাসা বেধেছে। বইগুলি রোদে শুকাতে দিয়ে লম্বা কাঠি নিয়ে বসে থাকতাম কাকে যেন সেগুলি তুলে নিয়ে না যায়, কারণ কাক সুযোগ পেলেই পুথির পাতা তার বাসা বানাবার জন্য তুলে নিয়ে যায় গাছের মগডালে তার বাসার ভিতরে।কাকের বাসা থেকে ছিনতাইকৃত পুঁথির পাতা উদ্ধার করতে গিয়ে দেখা যেতো আয়না, চিরুনী, সাবান, সেম্পু,সুতা,কাপড়, শুকনা মরিচ, আদা,রসুন তথা পুরা এক সংসারের জিনিষ রয়েছে কাকের বাসার মধ্যে। যাহোক পুরাতন বই রোদে শুকাতে দেয়ার সময় এক দিন একটি বই এর উপরে লেখা ময়মনসিংহ গীতিকা নাম লেখা দেখতে পাই। মনে পড়ল এইতো সেই ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’ যার কথা স্যার ক্লাশে বলেছেন কাজল রেখা কিছসা কাহিনীটি পাঠ দানের সময় ।
ছবি-২ : ময়মনসিংহ গীতিকা

বিশাল গ্রন্থখানি হাতে নিয়ে পাতার পর পাতা উল্টিয়ে কাব্যকারে লেখা অনেক কাহিনী সাথে কিছু ছবি দেখে মনে হল সুন্দর সুন্দর কিছছা কাহিনীর একটি রত্ন খনি পেয়েছি। পরে দিন কয়েক লাগিয়ে রাতে দিনে সবগুলি কাহিনী পাঠ করেছি। এর ভিতর দেখতে পাই বছর পাঁচেক আগে কাকার মুখে গল্পচ্ছলে শুনা মহুয়া ও নদের চাদের কাহিনী।যার কিছুটা পরশ পাথর প্রাপ্তি ৩য় পর্বে উল্লেখ করেছি।

এখন পরশ পাথর প্রাপ্তি ৪র্থ পর্বে স্মৃতি কথা লেখার সময় কাকার মুখে শুনা সেই মহুয়া গল্পের স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে খুলে বসলাম ময়মনসিংহ গীতিকা নামের বিশাল গ্রন্থখানি।
এবার প্রথমেই মনযোগ গেল এর ভুমিকা পাঠে, যা ছোটবেলায় গিয়েছিলাম শুধু পাতা উল্টিয়ে ।তখন ভুমিকার বিশাল একটি অধ্যায়ে লেখা পন্ডিতি কথা বাদ দিয়ে সরাসরি চলে গিয়েছিলাম
মহুয়া, মলুয়া, দেয়ান ভাবনা , কাজলরেখা, কঙ্ক লীলা , চন্দ্রাবতী প্রভৃতি মনোমুগ্ধকর কাহিনী পাঠে।
এবার ড.দিনেশচন্দ্র সেন সম্পাদিত ময়মনসিংহ গীতিকার ভুমিকায় থাকা প্রথম লাইনটিই মনযোগ আকর্ষন করে ।সেখানে তিনি লিখেছেন এই গাথাসমূহের সংগ্রাহক চন্দ্রকুমার দে ।
ছবি-৩ : চন্দ্রকুমার দে ( সুত্র : Click This Link

এরপর তিনি গাথা সংগ্রহে চন্দ্রকুমার দের ভুমিকা বর্ণনা করেছেন, তাঁর কাজের মূল্যায়ন করেছেন, প্রশংসা করেছেন লোকগাথার প্রতি তাঁর অকৃত্রিম ভালবাসা এবং সেগুলো সংগ্রহের অসীম ত্যাগ তিতিক্ষা এবং পরিশ্রমের কথা উল্লেখ করেছেন:
কি কষ্টে যে এই সকল পল্লীগাথা তিনি সংগ্রহ করিয়াছেন, তাহা তিনি ও তাঁহার ভগবানই জানেন এবং কতক আমি জানিয়াছি। এই সকল গান অধিকাংশ চাষাদের রচনা। এইগুলির অনেক পালা কখনই লিপিবদ্ধ হয় নাই। পূর্ব্বে যেমন প্রতি বঙ্গপল্লীতে কুন্দ ও গন্ধরাজ ফুটিত, বিল ও পুষ্করিণীতে পরম ও কুমুদের কুঁড়ি বায়ুর সঙ্গে তাল রাখিয়া দুলিত — এই সকল গানও তেমনই লোকের ঘরে ঘরে নিরবধি শোনা যাইত, ও তাহাদের তানে সরল কৃষকপ্রাণ ত্নময় হইয়া যাইত। ফুলের বাগানে ভ্রমরের মত এই গানগুলিরও শ্রোতার অভাব হইত না। কিন্তু লোকের রুচি এইদিকে এখন আর নাই। এইগুলি গাহিবারও লোকের অভাব হইয়াছে, যেহেতু এই শ্রেণীর গানের উপর শ্রোতার সেই কৌতুকপূর্ণ অনুরাগ ফুরাইয়া আসিয়াছে। যাহা লিখিত হয় নাই, আবৃত্তিই যাহা রক্ষার একমাত্র উপায়, অভ্যাস না থাকিলে সেই কাব্য-কথার স্মৃতি মলিন হইয়া পড়িবেই। এখন একটি পালাগান সংগ্রহ করিতে হইলে বহু লোকের দরবার করিতে হয়। কাহারও একটি গান মনে আছে কাহারও বা দুইটি, — নানা গ্রামে পর্য্যটন করিয়া নানা লোকের শরণাপন্ন হইয়া একটি সম্পূর্ণ পালা উদ্ধার করিতে পারা যায়। এইজন্য চন্দ্রকুমার প্রতিটি পালা সংগ্রহ করিতে গিয়া অনেক কষ্ট সহিয়াছেন।

বুঝাই যাচ্ছে পল্লীর গাথাগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য চন্দ্রকুমারের ছিল হৃদয় নিংড়ানো আকুতি? পথ চলতে গিয়ে যখন তিনি কৃষান বালকের কন্ঠে শুনেন
আমার বাড়ীতে যাইওরে বন্ধু খালে হাঁটু পানি
ভিজা চুলে মুছ্যা দিবাম তোমার পা দুখানি

তখন চন্দ্রকুমার বলে উঠেন আহা কি মধুর! কি সুন্দর! থামিও না বালক গাও।’
এমন আবেগমথিত আহবানই ছিল চন্দ্রকুমার দের। সুত্র:কাজী মামুন https://blog.mukto-mona.com/2013/07/20/36241/
চন্দ্রকুমারই বিশ্বখ্যাত ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’র সংগ্রাহক। তাঁর সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত পল্লী গাথার ভিত্তিতেই ড. দীনেশ চন্দ্র সেনের সম্পাদনায় কলকাতা থেকে প্রকাশিত হয়েছিল বাংলা সাহিত্যের এই অমূল্য সম্পদ।
চন্দ্র কুমার দে যেসব লোকসাহিত্য সংগ্রহ করেছেন সেগুলো দীনেশচন্দ্র সেন সম্পাদনা করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ময়মনসিংহ গীতিকা (১৯২৩) এবং পূর্ববঙ্গ-গীতিকা (১৯২৩ – ১৯৩২) নামে প্রকাশ করেন। ময়মনসিংহ গীতিকায় অন্তর্ভুক্ত চন্দ্রকুমার সংগৃহীত পালা গুলো হচ্ছেঃ
• মহুয়া (রচয়িতা দ্বিজ কানাই),চন্দ্রাবতী (রচয়িতা নয়নচাঁদ ঘোষ),‘কমলা (রচয়িতা দ্বিজ ঈশান),দেওয়ানা মদিনা (রচয়িতা মনসুর বয়াতী,
• ‘দস্যু কেনারামের পালা (রচয়িতা চন্দ্রাবতী),কঙ্ক ও লীলা, মলুয়া, দেওয়ান ভাবনা, কাজলরেখা ও রূপবতী ।
তাঁর সংগৃহীত যে সমস্ত পালা পূর্ববঙ্গ গীতিকায় ৪ খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে সেগুলোর কয়েকটির নাম হলঃ ধোপার পাট, মইষাল বন্ধু, কমলা রাণীর গান,দেওয়ান ঈশা খাঁ, ভেলুয়া, আয়না বিবি ও গোপিনী কীর্তন, মসনদ আলী, ফিরোজ খাঁ দেওয়ান, শ্যামারায়ের পালা, শিলাদেবী, আন্ধা বন্ধু, বগুলার বারমাসী, রতন ঠাকুরের পালা, পীর বাতাসী, জিরালনি, সোনারায়ের জন্ম ও ভারাইয়া রাজার কাহিনী।
এই পালাগুলোর অধিকাংশই ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও সিলেট এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
এ ছাড়াও অসংখ্য কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন চন্দ্র কুমার দে । তিনি সংগ্রহ করেছিলেন গ্রাম-বাংলায় ছড়িয়ে থাকা লোকসাহিত্যের আরও নানা নিদর্শন, যার অনেকগুলিই সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে গেছে। নিজ গ্রাম থেকে ‘মহাভারতী’ নামে একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকাও প্রকাশ করেছিলেন চন্দ্র কুমার। এর একটি সংখ্যাও আজ কারও সংগ্রহে নেই। ‘ত্রিপত্র’ নামে একটি বই ছাড়া তাঁর আর কোন বই প্রকাশিত হয়নি কখনও।
পল্লীর সাধারণ মানুষের রচিত এসব গাঁথা-গীতিকা তখন ঝড় তুলেছিল বিশ্ব সাহিত্যে। বাংলা সাহিত্যকে দিয়েছিল মর্যাদার আসন। কিন্তু বলা বাহুল্য, চন্দ্র কুমার দে’র নিজ গ্রামে আজ তাঁর কোন স্মৃতি-চিহ্নই নেই। বেহাত হয়ে গেছে তার পৈত্রিক বাস্তুভিটাটি। সংগ্রহ ও সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে তাঁর অনেক রচনা-নিদর্শনও।

এই উপেক্ষিত চন্দ্রের জীবনটাও ছিল দুঃখে ভরা। খুব অল্প বয়সেই চন্দ্র মাতৃহারা হন। কৈশোরে গ্রামের জমিদার তার পিতার সহায় সম্পত্তি চোখের সামনে কেড়ে নিলে পিতা রামকুমার অচিরেই শোকে দুঃখে পৃথিবীর মায়া কাটান। এরপর পেট বাঁচাতে চন্দ্র নিজ গ্রামের মুদি দোকানে ১ টাকা বেতনের চাকুরী নেয়। কিন্তু ভাবুক ও সাংসারিক বিষয়াদি সম্পর্কে অনভিজ্ঞ চন্দ্রকে কিছুদিনের মধ্যেই ঐ দোকান থেকে অর্ধচন্দ্র পেতে হয়। কিন্তু দোকানের খাতায় হিসাব-নিকাশের বদলে ছড়া-কবিতা লিখে রাখায় মালিক মহা বিরক্ত হয়ে একদিন বিদায় করে দেন তাঁকে। এরপর হতভাগা চন্দ্রকুমার কলেরায় আক্রান্ত হন। পরিত্রাণের আশায় হাতুড়ে চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হযেছিলেন। এতে সুস্থ তো হলেনই না, উপরন্তু মানসিক বৈকল্য দেখা দিল, যা প্রায় দু’বছর স্থায়ী হয়েছিল। এই চরম দুর্দিনে এক গ্রাম্য জমিদার
A4 রামগোপালপুর জমিদার শৌরীন্দ্র কিশোর রায় চৌধুরীর বাড়ী

তাকে মাসিক ২ টাকা বেতনে তহশীল আদায়ের চাকুরী দেন। এই চাকুরীটিই চন্দ্রের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তহসীল আদায় করতে চন্দ্রকে গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরতে হত। ঐ সময়ই তিনি কৃষকদের কণ্ঠে শুনতে পান অপূর্ব সব পল্লী গাথা ও উপাখ্যান। কিন্তু গ্রাম-গ্রামান্তর ঘুরে তহশিলের বদলে তিনি লিখে আনতে লাগলেন পল্লীর গায়েনদের গাঁওয়া উপাখ্যান।
এসব কারণে একদিন এ চাকরিটিও হারাতে হয় তাঁর। এর কিছুদিন পর ময়মনসিংহ হতে কেদারনাথ মজুমদার এর সম্পাদনায় প্রকাশিত ‘সৌরভ’ পত্রিকায় চন্দ্রনাথ লেখালেখি করেন ।
উক্ত পত্রিকায় চন্দ্র কুমার দে’র লোক সাহিত্যের উপর কয়েকটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ১৯১৩ সালে সৌরভ পত্রিকায় মহিলা কবি চন্দ্রাবতীর উপর প্রকাশিত একটি প্রবন্ধ পড়ে মুগ্ধ হন ড. দীনেশ চন্দ্র সেন। তারপর পত্রিকার সম্পাদক কেদার নাথ মজুমদারের মাধ্যমে চন্দ্র কুমার দে’র সাথে পরিচিত হন এবং তাঁঁকে দিয়ে দিনের পর দিন কষ্টসাধ্য সাধনার মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে ঘুরে গীতিকা গুলি সংগ্রহ করান ।
উল্লেখ্য ময়মনসিংহ হতে প্রকাশিত সৌরভ পত্রিকায় পবিত্র কোরানের প্রথম বাংলা অনুবাদকারী গিরিশ চন্দ্র সেন, বাংলার স্বভাব কবি গোবিন্দ দাস, চন্দ্রকুমার দে ও সৌরভ কুমার রায়সহ তখনকার সময়ের নামকরা কবি-সাহিত্যিকগণ লিখতেন।উল্লেখ্য সৌরভ পত্রিকার সম্পাদক কেদারনাথ মজুমদার ছিলেন একজন ইতিহাসবিদ, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। তিনি সে সময়ে উত্তর-পুর্ব বঙ্গের ইতিহাস ও সাহিত্যকে সমগ্র বঙ্গ সমাজে পরিচিত করাতে সহায়তা করেছেন ।
ছবি-৫ : কেদারনাথ , সম্পাক, সৌরভ পত্রিকা

লেখালেখির সুবাদে চন্দ্র কুমার দে’র ওপর সুদৃষ্টি পড়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. দীনেশ চন্দ্র সেনের।
তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাঁকে মাসিক ৭০ টাকা বেতনে পালাগান সংগ্রহের কাজে নিযুক্ত করেন।
এরপর শুরু হয় চন্দ্রকুমারের গ্রাম-বাংলার আনাচ -কানাচ থেকে হারানো মানিক খুঁজে বের করার অমানুষিক সংগ্রাম। কেমন ছিল এই সংগ্রাম? চন্দ্রের ভাষায়:
এই সংসার চিন্তা বিব্রত পথিক দুঃখ দারিদ্র্যের বোঝা ঘাড়ে ফেলিয়া যখন পাগলা বন হরিণের মত বাঁশীসুরে উধাও হইয়া ছুটিয়াছিল, পাড়াগায়ের এক হাটু কাঁদা ভাঙ্গিয়া মেঘে ভিজিয়া রৌদ্রে পুড়িয়া কৃষকের গোয়াল ঘরের সাঁঝালের ধারে বসিয়া এই কৃষক গীতি সংগ্রহ করিয়াছে, তখন তাহাকে লোকে ক্ষ্যাপা বলিয়া উপহাস করিতে ছাড়ে নাই।
অপরিসীম ভালবাসা না থাকলে, আত্মত্যাগ না থাকলে কারো পক্ষে সম্ভব এমন সাধকের রূপ পরিগ্রহ করা?
গীতিকা সংগ্রহের কাজে নিযুক্ত হয়ে চন্দ্র কুমারের যেমন জীবিকার সংস্থান হয়, তাঁর সংগৃহূত এই গীতিকা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্বের সাহিত্য-দরবারে কাছে পরিচিতি পায়। এর সম্পাদক হিসাবে দীনেশচন্দ্র সেন আন্তর্জাতিক মর্যাদায় অভিষিক্ত হন।
দীনেশচন্দ্রের আলোয় জ্বল জ্বল করে বিশ্বসভায় দ্যুতি ছড়িয়ে যায় ময়মনসিংহ গীতিকা, অনেকটা সম্রাট সাজাহানের তাজমহলের মত করেই। এদিকে আড়ালে-আবডালে, লোকচক্ষুর একেবারে অন্তরালে থেকে যান তাজমহলের আসল কারিগর হতভাগা চন্দ্রকুমারেরা।
তবে একথা সত্য যে দীনেশচন্দ্রের সমর্থন ও উদ্যোগ না থাকলে ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’ হয়ত কখনই পৃথিবী জয় করতে পারত না। তাই দীনেশচন্দ্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য এবং অবিস্মরণীয়।

তবে চন্দ্রকুমারের অবদানের গুরুত্ব ,তাঁর প্রচেষ্টা ও ঐকান্তকতা নিয়ে সঠিক আলোচনা ও গবেষনা হলে তার গড়া তাজমহলের উজ্জলতা বাড়বে বই কমবেনা। আমাদের ভাবতে হবে, যে চন্দ্রের আলোয় আমাদের লোকজ তাজমহলটি বাঁচিয়ে রাখার জন্য ছিল বড্ড প্রয়োজন, তাকে আমরাই নিভে যেতে দিয়েছি, হারিয়ে যেতে দিচ্ছি বিস্মৃতির অতলে!
বিনয়ী চন্দ্রকুমার যদিও নিজেকে উপেক্ষিত ভাবেননি, তবে বাঙালি পাঠককুলে তার মত উপেক্ষিত নায়ক কিন্তু আর একজনও আসেনি। ময়মনসিংহ গীতিকার সুচনা লগ্নে ভুমিকার কিছু অংশ জুরে তাঁর জীবন সংগ্রামের কটি কথা বলেই চন্দ্রকুমারকে অর্ধচন্দ্র প্রদর্শন করা হয়েছে! অথচ তিনি শুধু একজন সাহিত্য প্রেমিই ছিলেন না তাঁর সাহিত্য কর্মের প্রতিভার স্বাক্ষরও তিনি দিয়েছিলেন তখনকার সুধি সমাজে ।
চন্দ্রকুমারের মত এমন একজন ছিলেন বলেই বৃহত্তর ময়মসসিংহের ভাটি অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মনি-মুক্তো আমরা বের করে আনতে পেরেছি। কিন্তু কি সন্মান দিয়েছি সেই বিরল মুক্তো সংগ্রাহককে?
চন্দ্রকুমার সম্বন্ধে ডঃ দীনেশ সেন তাঁর ময়মনসিংহ গীতিকার ভূমিকায় যে-পরিচয় দিয়েছেন, তাতে তার আসল পরিচয়টাই অনেকটাই অজ্ঞাত রয়ে গেছে। যার একক কীর্তি সমস্ত বঙ্গ সাহিত্যে এক উচ্চ স্থানের দাবী রাখে- তাকে আমরা শুধু একজন সংগাহকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে রেখেছি। আমাদেন ব্লগার নুরু ভাই অনেকের জন্ম ও মৃত্যু দিবস উপলক্ষে অনেক পোষ্ট দিয়ে থাকেন । চন্দ্রকুমারের প্রতি উনার দৃস্টি আকর্ষন হলে আমরা তাঁর বিষয়ে আরো অজানা অনেক কথা জানতে পারতাম ।

দীনেশ চন্দ্র সেন তাঁর সম্পাদিত জগদ্বিখ্যাত ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’ ও ‘পূর্ববঙ্গ গীতিকা’য় তথ্যদাতা হিসেবে চন্দ্রকুমারের পরিচয় সন্নিবেশ করেছেন, তাকে বিনে পয়সায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন, অনাথ ও চিররুগ্ন চন্দ্রকুমার যখন স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে সংসার নির্বাহ করতে বাধ্য হয়েছিলেন, তখন দীনেশচন্দ্র তাকে চাকুরী-থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চন্দ্র শুধু সংগ্রাহকই রয়ে গেছেন, হতে পারেননি নায়ক।বিনয়ের অবতার চন্দ্রকুমার নীজেই বলেন:
দীনেশচন্দ্র আমার সংগৃহীত ভাঙ্গা ইটে আজ বঙ্গ ভাষার বিচিত্র তাজমহল গড়িয়া তুলিয়াছেন, আমি তাহার মজুর মাত্র। তিনি এ বিরাট যজ্ঞভূমির অধিনায়ক হোতা। আমি শুধু সমিধ কাস্ঠ বহন করিয়াছি মাত্র।

তবে বাংলা ১৩৩৬ সনে ময়মনসিংহ শহরে অনুষ্ঠিত ‘সারস্বত সাহিত্য সম্মিলনে’ চন্দ্রকুমার দে একটি প্রবন্ধ পাঠ করেন, যার উপসংহারে তিনি বলেন:
আমি ময়মনসিংহ গীতিকার সংগ্রাহক। আমি হীন নহি-উপেক্ষিত নহি-ইহার চাইতে গর্ব গৌরব করিবার জিনিস আমার কিছুই নাই। আমার ময়মনসিংহ আজ সমগ্র জগতের মধ্যে তাহার সন্মানের আসন বাছিয়া লইয়াছে ( লেখা সুত্র: কাজীমামুন : https://blog.mukto-mona.com/2013/07/20/36241/ )

বাংলা ১৩৪৬ সনে (১৯৩৯) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর মৃত্যুর প্রায় বছর দুয়েক আগে দীনেশচন্দ্র সেনকে এক পত্রে লেখেন:
ছবি-৬ : ১৯১৩ সনে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

“বাংলা প্রাচীন সাহিত্যে মঙ্গলকাব্য প্রভৃতি কাব্যগুলি ধনীদের ফরমাসে ও খরচে খনন করা পুষ্করিণী; কিন্তু ময়মনসিংহ গীতিকা পল্লী হৃদয়ের গভীর স্তর থেকে স্বত উচ্ছ্বসিত উৎস, অকৃত্রিম বেদনার স্বচ্ছ ধারা। বাংলা সাহিত্যে এমন আত্ম-বিস্মৃত রসসৃষ্টি আর কখনো হয় নি।“-রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর
ময়মনসিংহ গীতিকা ইংরেজী ভাষায় অনূদীত হয়ে প্রকাশের পর বিদেশের সুধীবৃন্দকে প্রবল ভাবে আকৃষ্ট করে। বিশেষ করে মনীষী রোমা রোলাঁ, ড. সিলভা লেভি, স্যার জর্জ গ্রীয়ারসন, উইলিয়াম রদেনস্টাইন, ফ্রান্সিস. এইচ. স্ক্রাইন, ই.এফ. ওটেন ময়মনসিংহ গীতিকা সম্পর্কে উচ্চসিত প্রশংসা করেন।
ছবি-৭: ১৯১৫ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত ফরাসী দার্শনিক রোমা রোঁলা

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তার ‘বাংলা সাহিত্যের কথা’ গ্রন্থে বলেন-‘গীতিকা গুলোর সাহিত্যিক মূল্য বিদেশী সাহিত্য রসিকেরা কি দিয়াছেন, তাহা জানিলে বোধ হয় আমরা আমাদের ঘরের জিনিসকে একটু বেশি আদর করিব।’
ময়মনসিংহ গীতিকার সাহিত্য মূল্য অসীম। গীতিকাগুলি প্রধানত নায়িকা প্রধান। মহুয়া পালার নায়িকা যখন জল আনতে নদীর ঘাটে যায় তখন নায়ক নদ্যার চাঁদের সাথে ভীরু প্রণয়ীর সসঙ্কোচ আত্মনিবেদনে চিরন্তন প্রেমের পরিবেশ পাওয়া যায়। অসাধারন ব্যঞ্জনাময় তার প্রণয়ের প্রকাশ। যেমন-
‘‘জল ভর সুন্দরী কন্যা জলে দিছ ঢেউ ।
হাসি মুখে কওনা কথা সঙ্গে নাই মোর কেউ।।’’
শুধু তাই নয় মহুয়ার রূপের সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ নায়ক নির্লজ্জের মত তার প্রেমের প্রকাশ করে অকাতরে। যেখানে নেই কোন আধুনিক প্রেমের ভনিতা।
‘‘কঠিন আমার মাতা-পিতা কঠিন আমার হিয়া ।
তোমার মত নারী পাইলে আমি করি বিয়া।।’’
প্রেমিকাকে নিজের করে পাবার যে বাসনা তা পূরনে প্রেমিক যে কোন অবলম্বন গ্রহণ করতে পারে।
‘‘কোথায় পাইবাম কলসী কন্যা কোথায় পাইবাম দড়ি।
তুমি হও গহীন গাঙ আমি ডুব্যা মরি।।’’

চিরন্তন গ্রামীণ সরল পরিবেশ, অতিথি পরায়নতা, মানুষের সাথে মানুষের বন্ধনের এক অকৃত্রিম রূপ আমরা ময়মনসিংহ গীতিকায় দেখতে পাই।

‘‘আমার বাড়িত যাইওরে বন্ধু বইতে দিয়াম পিড়া।
জলপান করিতে দিয়াম শালি ধানের চিড়া।।
শালি ধানের চিড়া দিয়াম আর ও শবরী কলা।
ঘরে আছে মইষের দইরে বন্ধু খাইবা তিনো বেলা।।’’
ময়মনসিংহ গীতিকার অধিকাংশ গীতিকায়ই প্রণয়মুলক। এতে গ্রামীণ প্রেমের বর্ণনা অপূর্ব রূমান্টিকতায় বর্নিত। কাজল রেখা, মহুয়া, মলুয়া, লীলা, চন্দ্রাবতী প্রভৃতি গীতিকার নায়িকাদের প্রেম ও ত্যাগের গভীরতা আমাদের মর্মকে স্পর্শ করে নিবিরভাবে।
এই পল্লীগাথার রমণীরা অনেকবার কুলধর্ম বিসর্জন দিয়েছেন, কিন্তু কখনোই নারী ধর্ম ত্যাগ করেন নি । বরঞ্চ নারীধর্মের যে সমস্ত মুর্ত্তিগুলি এই সকল গাথায় পাওয়া যাচ্ছে তারা পতিরত্যে ,বুদ্ধির তীখ্নতায় ,বিপদে ,ধর্যে উপায়-উদ্ভববনায় এবং একনিষ্ঠায় আতুল্য। এই গীতিকায় জাতি বিচার কুলশীল পদমর্যাদা সমস্তই প্রেম রত্নাকরের অতল জলে ডুবে গিয়েছে, এরা মুক্ত গগনের সীমাহীন পথের পথিক। প্রেম পারিজাত স্পর্শে এরা প্রাণ ত্যাগ করেও অমর হয়েছেন এরা কোন গৃহের সম্পর্কিত নহেন, এরা পরস্পরের প্রতি উদ্দাম, অনুরাগ ভিন্ন অন্য কোন বিধি মানে নাই, এদের ধর্ম নাই পরস্পরের জন্য এরা কোন গৃহ সুখ কল্পনা করে নাই ।

ময়মনসিংহ গীতিকার পালা গুলোর মাঝে হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতির অপূর্ব সম্মিলন পাওয়া যায়। যা চিরায়ত অসা¤প্রদায়িক বাঙ্গালী চেতনার পরিচয় বহন করে।
ময়মনসিংহ-গীতিকায় থাকা মহুয়া’র( প্রাচীন পল্লী নাটিকা)বন্দনা গীতিতেইতা পরিস্ফুট যথা
বন্দনাগীতি
পুবেতে বন্দনা করলাম পুবের ভানুস্বর( ভানুর ইশ্বর=শিব)
এক দিকে উদয়রে ভানু চৌদিকে পশর
দক্ষিণে বন্দনা গো করলাম ক্ষিরো নদী সাগর ।।
যেখানে বানিজ্‌জ করে চান্দ সদাগর।।
উত্তরের বন্দনা গো করলাম কৈলাস পর্বত।
যেখানে পড়িয়া গো আছে আলীর মালামের পাথ্‌থর ।।
পশ্চিমে বন্দনা গো করলাম মক্কা হন স্থান ।
উর্‌দিশে বাড়ায় বাড়াই ছেলাম মমিন মুসলমান ।।
সভা কইরা বইছ ভাইরে ইন্দ(হিন্দু) মুসলমান
সভার চরণে আমি জানাইলাম ছেলাম ।।
চাইর কোনা পির্‌থিমিবী গো বইন্ধ্যা মন করলাম স্থির।
সুন্দরবন মুকামে বন্দলাম গাজী জিন্দাপীর।।
আসমানে জমিনে বন্দলাম চান্দে আর সুরুয।
আলাম-কালাম বন্দুম কিতাব আর কুরাণ।।
কিবা গান গাইবাম আমি বন্দনা করলাম ইতি ।
উস্তাদের চরণ বন্দলাম করিয়া মিন্নতি ।
বন্দনাগীতি সমাপ্ত


গ্রামের সহজ সরল যে মানুষের হাতে এত অপূর্ব সুন্দর সাহিত্য সৃষ্টি হয় সেই সকল লৌকিক কবির প্রতি হাজার প্রনাম ও সালাম।

যাহোক শেষ জীবনে ময়মনসিংহ শহরের নওমহলে দুই শতাংশের একটি বাড়ি কিনেছিলেন চন্দ্র কুমার। ওই বাড়িতেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর পর সে বাড়িটিও বিক্রি করে দেয়া হয়। চন্দ্র কুমারকে দাহ করা হয়েছিল ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে কেওয়াটখালি শ্মশানঘাটে। তাঁর পরিবার-পরিজনরা সেখানে ছাতাকৃতির একটি স্তম্ভ নির্মাণ করেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় পাকবাহিনী সে স্তম্ভটিও ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়। এ ভাবেই দিন দিন বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যেতে থাকেন চন্দ্র কুমার দে। বললে- বাড়িয়ে বলা হবে না যে, তাঁর নিজ গ্রামের নতুন প্রজন্মের অনেকে আজ তাঁর নামটিও জানে না।

সত্যি বলতে বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি এবং রস হৃদয়ঙ্গম করতে আমাদের এখনো বাকি রয়েছে। আর সেই সমৃদ্ধির অন্যতম কারিগর চন্দ্রকুমার প্রতি রইল শ্রদ্ধাঞ্জলী ।
জলা জঙ্গলাকীর্ণ ময়মনসিংহের গ্রামগুলি পালার পটভূমি । ওই অঞ্চলের অধিকাংশই বনভূমি চর নদ-নদী, ছোট খাল , শাখা নদী , বিশাল বিশাল বিল বা হাওর পরিবেষ্টিত হয়ে অনেকানেক গ্রাম দ্বীপের মত জেগে থাকে । পর্বত গাত্র বেয়ে যেমন নেমেছে নদী,তেমনি নেমেছে হিস্র-সর্প-ব্যাঘ্র-সঙ্কুল ঘন অরণ্যভুমি।ঝিল ও তরাগ,কুড়া পাখির গুরুগম্ভীর শব্দেনিনাদিত আকাশ, বার দোয়ারী ঘর, সানবাঁধা পুকুর ঘাট ,স্বর্ণপ্রসু শালিধানের ক্ষেত, সুরভিময় কেয়াবন-সবমিলে এক বিচিত্র নিসর্গ শোভা।
দীনেশচন্দ্র সেন ময়মনসিংহ-গীতিকার ভুমিকায়লিখেছেন’বাঙ্গালার মাটির যে কি অকর্ষন তাহা স্বভাবের খাটি সৃষ্টি, এইগীতিগুলিতে দৃষ্ট হইবে। বাঙ্গালার চাঁপা, বাঙ্গালার নাগেশ্বর ও কুমুদ ফুল,বাঙ্গালার কুটিরেকুটিরে কি চমতকার দেখা ,এই সাহিত্যের পথেঘাটে তাহারনিদর্শন আছে।বর্ষার কদম্ববৃক্ষ ,মান্দার গাছের ডালে-ঘেরা কদলী বন,নদীর ধরে কেয়া ফুলের ঝাড়,মুক্তাবর্ষী প্রস্রবণপ্রতিম বৃহত তরুশাখা হইতে অজস্র বকুল ফুলেরদন- কাব্য বর্ণিত কর্মশলার মাঝে মাঝে উঁকি মারিয়া আমাদের শ্রম অপনোদন ও চোখের তৃপ্তি ঘটাইয়া যায় । কোথাও বর্ণনার বাহুল্য নাই অথচ কৃষকের দৃষ্টি যেরূপ কিছুতেই মাথার উপরকার আকাশ ও চোখের সামনের শ্যামল বনরাজি এড়াইতে পারেনা , এই কাব্য সাহিত্যের নানা ঘটনার মধ্যেপরিপাশ্বিক শোভা দৃশ্যগুলিও সেই রূপ পাঠকের অপরিহার্য্য সহচররূপে সঙ্গে সঙ্গে থাকিবে ।

একটু মনযোগী হয়ে পাঠ করলেই গীতিকার প্রতিটি পালায় স্বতন্ত্র ভোগলিক পাকৃতিক পরিবেশের চিত্র স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। এবার আসা যাক ময়মনসিংহ গীতিকায় থাকা কয়েকটি পালার কথায় ।

মহুয়া
https://upload.wikimedia.org/wikisource/bn/3/39 /মৈমনসিংহ_গীতিকা_(প্রথম_খণ্ড)_-_দীনেশচন্দ্র_সেন.pdf

নমশূদ্রের ব্রাহ্মণ দ্বিজ কানাই নামক কবি প্রায় ৪০০ বৎসর পূর্বে এই পালা গান রচনা করেন। ধারনা করা হয় এর রচনাকাল ১৬৫০ সন ।মহুয়া পালায় ১৭৫৫টি ছত্র আছে যা ২৪টি অধ্যায়ে বিভক্ত করে ময়মনসিংহ গীতিকায় প্রকাশিত হয়েছে ।প্রবাদ আছে এর রচয়িতা দ্বিজ কানাই নমসুদ্র সমাজের অতি হীনকুল-জাতা এক সুন্দরীর প্রেমে মত্ত হয়ে অনেক কষ্ট পেয়েছিলেন ।এজন্যই নদের চাঁদ ও মহুয়ার কাহিনীতে তিনি এরূপ প্রাণঢালা সরলতা প্রদান করতে পেরেছিলেন। নদের চাঁদ ও মহুয়ার গান এক সময়ে পূর্ব ময়মনসিংহের ঘরে ঘরে গীত অভিনীত হতো, কিন্তু উত্তরকালে ব্রাহ্মণ্য ধর্মের কঠোর সাসনে এই গীতিবর্ণিত প্রেম দুর্নীতি বলে প্রচারিত হয়। এবং হিন্দুরা এই গানে উৎসাহ দিতে বিরক্ত হন । চন্দ্রকুমার বহুকষ্টে এই গীতিকবিতার অংশ উদ্ধার করতে সমর্থ হয়েছেন । গীতিকার প্রথম ১৬ স্তোত্র জনৈক মুসলমান গায়ক রচিত। গীতি বর্ণিত ঘটনার স্থান নেত্রকোনার নিকটবর্তী। নেত্রকোনার বৃস্তিত ‘তলার হাউর’ এর পূর্বে বামন কান্দি, বাইদার দিঘি, ঠাকুরবাড়ির ভিটা উলুয়াকান্দির অবস্থান রাজকুমার নদের চাঁদ ও মহুয়ার স্মৃতি বহন করতেছে।
মহুয়াকে ধনু নদী পারের কাঞ্চনপুর গ্রাম হতে চুরি করে ছিল হুমরা নামের এক বেদে ।

ময়মনসিংহ-গীতিকা
মহুয়া
( প্রাচীন পল্লী নাটিকা)
বন্দনাগীতি
পুবেতে বন্দনা করলাম পুবের ভানুস্বর১( ভানুর ইশ্বর=শিব)
এক দিকে উদয়রে ভানু চৌদিকে পশর২
দক্ষিণে বন্দনা গো করলাম ক্ষিরো নদী সাগর ।।
যেখানে বানিজ্‌জ করে চান্দ সদাগর।।
উত্তরের বন্দনা গো করলাম কৈলাস পর্বত।
যেখানে পড়িয়া গো আছে আলীর মালামের পাথ্‌থর ।।
পশ্চিমে বন্দনা গো করলাম মক্কা হন স্থান ।
উর্‌দিশে বাড়ায় বাড়াই ছেলাম মমিন মুসলমান ।।
সভা কইরা বইছ ভাইরে ইন্দ(হিন্দু) মুসলমান
সভার চরণে আমি জানাইলাম ছেলাম ।।
চাইর কোনা পির্‌থিমিবী গো বইন্ধ্যা মন করলাম স্থির।
সুন্দরবন মুকামে বন্দলাম গাজী জিন্দাপীর।।
আসমানে জমিনে বন্দলাম চান্দে আর সুরুয।
আলাম-কালাম বন্দুম কিতাব আর কুরাণ।।
কিবা গান গাইলাম আমি বন্দনা করলাম ইতি ।
উস্তাদের চরণ বন্দলাম করিয়া মিন্নতি ।
বন্দনাগীতি সমাপ্ত

Maimonsingha-GitikaVol.1,No.2 Ed.3rd

হুমরা বেদে
উত্তরে না গা‌রো পাহাড় ছয় মা্ইস্যা পথ ।
তাহার উত্তরে আছে হিমানী পর্বত।।

হিমানী পর্‌বত পারে তাহারই উত্তর ।
তথায় বিরাজ করে সপ্ত সমুদ্দর ।।
চান্দ সুরুয নাই আন্দারিতে ঘেরা ।
বাঘ ভাল্লুক বইসে মাইন্সের নাই লরাচর।।
বনেতে করিত বাস হুমরা বাইদ্যা নাম।
তাহার কথা শুন কইরে ইন্দু মুসলমান ।।
ডাকাতি করিত বেটা ডাকাইতের সর্দ্দার ।
মাইন্‌কানামে ছুডু ভাই আছিল তাহার ।।
ঘুরিয়া ফিরিয়া তারা ভ্রমে নানান দেশ।
অচরিত ( ) কাইনী কথা কইবাম সবিশেষ ।।
আর ভাইরে,
ভর্‌মিতে ভর্‌মিতে তারা কি কাম করিল ।
ধনু নদীর পারে যাইয়া উপস্থিত অইল ।।
ছবি-৯ : ধনু নদী

কাঞ্চনপুর নামে তথা আচিল গেরাম।
তথায় বসতি করিত বির্দ্দ এক বরাম্মন।।
ছয় মাসের শিশু কইন্যা পরমা সুন্দরী ।
রাত্রি নিশাকালে হুমরা তারে করল চুরী ।।
চুরী না কইরা হুমরা ছাইরা গেল দেশ ।
কইবাম সে কন্যার কথা শুন সবিশেষ ।।
ছয় মাসের শিশু কন্যা বচ্ছরের হইল ।
পিঞ্জরে রাখিয়া পঙ্খী পালিতের লাগিল।।
এক দুই তিন করি শুল বছর যায় ।
খেলা কছরত তারে যতনে শিখায় ।।
সাপের মাথায় যেমন খাইক্যা জ্বলে মণি।
যে দেখে পাগল হয় বাইদ্যার নন্দিনী ।।
বইদ্যা বাইদ্যা করে লোকে বাইদ্যা কেমন জনা ।
আন্ধার ঘরে থইলে কন্যা জলে কাঞ্চা সোনা।।
হাট্টিয়া না যাইতে কইন্যার পায়ে পরে চুল ।
মুখেতে ফুট্টা উঠে কনক চাম্পার ফুল ।।
াআগল ডাগল আখিরে আসমানের তারা ।
তিলেক মাত্র দেখলে কইন্যা না যায় পাশুরা।।
বাইদ্যার কইন্যার রূপে ভাইরে মুনীর টলে মন।
এই কইন্যা লইয়া বাইদ্যা ভরমে তিরভুবন ।।
পাইয়া সুন্দরী কইন্যা হুমরা বাইদ্যার নারী ।
ভাব্যা চিন্তা নাম রাখল “মহুয়া সুন্দরী”।।

ষোল বছর কেটে গেছে। ডাকাতি ছেড়ে হুমরা বেদে হয়ে স্থায়ী হয়েছেন গারো পাহাড়ের অনেকটুকু উত্তরে যেখানে হিমানী পর্বত, তারও উত্তরে যেখানে বাঘ-ভাল্লুক ভিন্ন প্রানীর দেখা মেলা ভার, সেই অন্ধকার জঙ্গলে।

হুমরা বাইদ্য্ দল বল নিয়ে ঘুরে বেড়য় দেশ দেশান্তরে।

আর সেই শিশুকন্যা? সে থাকে হুমরা বেদের সাথেই, হুমরা তাকে খেলা শেখায়, বেদে’র কৌশল শেখায়। ষোড়শী কন্যাকে যেই দেখে সেই পাগল হয়- সাপের মাথায় যেমন থাইক্যা জলে মণি, যে দেখে পাগল হয় বাইদ্যার নন্দিনী। কাঁচা সোনা হয়ে হুমরা বেদের অন্ধকার ঘর আলোকিত করে রাখে সে, হাট্টীয়া না যাইতে কইন্যার পায়ে পরে চুল, মুখেতে ফুট্টা উঠে কনক চাম্পার ফুল। তার ডাগর ডাগর চোখের তাঁরার আলোয় পথ খুঁজে হুমরা তাকে নিয়ে দেশবিদেশ ঘুরে বেড়ায়। পাইয়া সুন্দরী কইন্যা হুমরা বাইদ্যার নারী, ভাব্যা চিন্ত্যা নাম রাখল “মহুয়া সুন্দরী”

মহুয়ার চরিত্রগুলো হলো- নদের চাঁদ, মহুয়া, হুমরা বেদে। এর রচনাকাল ধরা হয় ১৬৫০ সাল। এই পালায় মোট ৭৮৯টি ছত্র আছে।সুদর্শন পুরুষ নদের চাঁদ ছিলেন এক জমিদারের দেওয়ান। অপর পক্ষে রূপবতি মহুয়া বেদে সরদার হুমরা বেদের পালিত কন্যা, যাকে শিশুকালে হুমরা বেদে নেত্রকোণার কাঞ্চণপুর থেকে ডাকাতি করে নিয়ে আসে। জানা যায়, বেদে মহুয়াও এক সভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে ছিলেন।
বেদেরা ঘাটে ঘাটে নোঙ্গর ফেলত ও হাট বাজারে পাড়ায় সাপের খেলা দেখাত। বেদে মহুয়া যখন নদের চাঁদের গ্রামে সাপের খেলা দেখাতে আসে তখন মহুয়ার রূপে মুগ্ধ হয়ে নদের চাঁদ তাকে প্রণয় নিবেদন করে। মহুয়াও নদের চাঁদের প্রণয়ে সম্মতি জ্ঞাপন করে। কিন্তু দুজনের প্রণয়ের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ায় সরদার হুমরা বেদে।
ততততত

গভীর নিশিতে মহুয়ার সঙ্গে নদ্যার ঠাকুরের পুনর্মিলন

ফাল্গুন মাসে চল্যা যায়রে চৈত্র মাস আসে।
সোনার কুকিল কু ডাকে বইস্যা গাছে গাছে।।
আগ রাঙ্গিয়া সাইলের ধান উঠ্যাছে পাকিয়া ।
মধ্য রাত্রে নদ্যার চান উঠিল জাগিয়া ।।
শীর ছিল আর বাশিটি তুইল্যা নিল হাতে ।
ঠার দিয়া বাজাইল বাশী মহুয়ায় আনিতে।।
আসমানেতে চৈতার বউ (বউ কথা কও পাখী)ডাকে ঘনে ঘন।
বাশী শুন্যা সুন্দর কইন্যার ভাঙ্গ্যা গেল ঘুম।।
সুখে ঘুমায় বাইদ্যার দল নয়া ঘরে শুইয়া
ঘরের বাইর হইল কইন্যা পাগল হইয়া ।

শেষ বিদায়- মহুয়ার উক্তি
শুন শুন নদ্যার ঠকুর বলি যে তোমারে
এই না গেরাম ছাড়্যা যাইবাম আমি নিশাকালে।।
মাও মাপে সঙ্গে কইরা ছাইরা যাইবো বাড়ী ।
তোর সঙ্গে যাইয়াম রে বন্ধু হইয়া দেশান্তরী।।
তোমার সঙ্গে আমার সঙ্গেরে বন্ধু এই না শেষ দেখা
কেমন কইরা থাকবাম আমি হইয়া অদেখা ।।
আমি যে অবলা নারী আছে কুল মান।
বাপের সঙ্গে নাহি গেলে নাহি থাকব মান।
পড়্যা রইলো বাড়ী জমি পড়্যা রইলা তুমি।
মন কইরা পাগল মনে বান্ধ্যা রাখাম আমি।।
আর না শুনবাম রে বন্ধু তোমার গুণের বাশী।
আর না জাগিয়া বন্ধু পুয়াইবাম নিশি।।
মনে যদি লয়রে বন্ধু রাখ্যো আমার কথা।
দেখা করতে যাইও বন্ধু খাওরে আমার মাথা।।

যাইবার কালে একটি কথা বল্যা যাই তোমারে।
উত্তর দেশে যাইও তুমি কয়েক দিন পরে ।।

পরদিন
বাঁশ লইল দড়ী লইল সকল লইয়া সাথে।
পলাইল বাইদ্যার দল আইন্ধ্যারিয়া রাতে।।
মহুয়া পৃ: ১৭


এক দিন নদের চাঁদ মহুয়াকে নিয়ে পালিয়ে যায়। এদিকে হুমরা বেদে তা জানতে পেরে দলবল নিয়ে তাঁদের পিছু ধাওয়া করে। অবশেষে তারা মহুয়া এবং নদের চাঁদকে ধরে ফেলে। হুমরা বেদে নদের চাঁদকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। সরদার মহুয়ার হাতে বিষলক্ষা ছুরি দিয়ে বলে ‘‘যাও নদের চাঁদকে মেরে ফেল’’। বিষলক্ষা ছুরি নিয়ে মহুয়া নদের চাঁদের দিকে এগিয়ে যান। নদের চাঁদের সম্মুখে পৌছে বিষলক্ষা ছুরি দিয়ে তিনি তাঁর নিজের বক্ষ বিদীর্ণ করেন এবং মাটিতে ঢলে পড়েন। প্রণয় পিয়াসী নদের চাঁদ মহুয়ার এই আত্মত্যাগ সহ্য করতে না পেরে প্রেমের প্রতিদান সরূপ বিষলক্ষা ছুরি দিয়ে নিজ জীবন আত্মহুতি দেন। মহুয়া ও নদের চাঁদের এই আত্ম ত্যাগ চিরন্তন প্রেমকে মহিমান্বিত করেছে। আজও সেই প্রেমের অমর কহিনী লোক মুখে মুখে বিরাজমান।
দীনেশচন্দ্র সেন মৈমনসিংহ গীতিকার প্রথম খণ্ডের ভূমিকায় লিখেছেন, ”মহুয়ার প্রেম কী নির্ভীক, কী আনন্দপূর্ণ! শ্রাবণের শতধারার ন্যায় অশ্রু আসিতেছে, কিন্তু প্রেমের মুক্তাহার কণ্ঠে পরিয়া মহুয়া চিরজীবী, মৃত্যুকে বরণ করিয়া মৃত্যুঞ্জয়ী হইয়াছে”।

চন্দ্রাবতী

বাংলা ভাষার প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতী (1550 থেকে11 600 ) চন্দ্রাবতীর নিজের জীবন কাহিনী নিয়ে রচিত হয়েছে বিখ্যাত পালা চন্দ্রাবতী । নয়নচাঁদ রচিত মৈমনসিংহ গীতিকায় এটা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে ।
চন্দ্রাবতীর বাবা দ্বিজবংশি ছিলেন বিখ্যাত মনসামঙ্গল কাব্যের রচয়িতা। এই মহিলা কবির জন্ম বর্তমান বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার নীলগঞ্জ স্টেশন এর কাছাকাছি পাতুয়াইর গ্রামে ।চন্দ্রাবতীর উল্লেখযোগ্য রচনা হলো ‘দস্যু কেনারাম ও মলুয়া । দীনেশচন্দ্র সেন সম্পাদিত মৈমনসিংহ গীতিকায় এ দুটিও স্থান পেয়েছে ।

নয়নচাঁদ ঘোষ রচিত চন্দ্রাবতী পালা থেকে জানা যায় চন্দ্রাবতীর জীবন ইতিহাস ছিল বড়ই করুণ এবং বিয়োগান্তক। তিনি একদিকে যেমন ছিলেন সাহিত্য প্রতিভাদীপ্ত নারী তেমনি ছিলেন পরমা সুন্দরী ও প্রেমিক মনের অধিকারী ।
চন্দ্রাবতী নীজ পরিচয় ও গৃহপরিচয় এভাবে দিয়েছেন -

ধারাস্রোতে ফুলেশ্বরী নদী বহি যায়।
বসতি যাদবানন্দ করেন তথায়।।
ভট্টাচার্য্য বংশে জন্ম, অঞ্জনা ঘরণী।
বাঁশের পাল্লায় তালপাতার ছাউনি।।
ঘট বসাইয়া সদা পূজে মনসায়।
কোপ করি সেই হেতু লক্ষ্মী ছেড়ে যায়।।
দ্বিজবংশী পুত্র হৈল মনসার বরে।
ভাসান গাইয়া যিনি বিখ্যাত সংসারে।।
ঘরে নাই ধান-চাল, চালে নাই ছানি।
আকর ভেদিয়া পড়ে উচ্ছিলার পানি।।
ভাসান গাইয়া পিতা বেড়ান নগরে।
চাল-কড়ি যাহা পান আনি দেন ঘরে।।
বাড়ীতে দরিদ্র জালা কষ্টের কাহিনী।
তাঁর ঘরে জন্ম নিলা চন্দ্রা অভাগিনী।।
চন্দ্রাবতীর হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছিলেন জয়ানন্দ নামের এক যুবক, তিনি ছিলেন চন্দ্রাবতীর খেলার সাথী ও সহপাঠী । কৈশুর উত্তীর্ণ হলে জয়ানন্দ চন্দ্রাবতীর সম্পর্ক প্রেমে গড়ায়, চন্দ্রাবতী কাব্যে তার স্পষ্ট উল্লেখ আছে।

তেমনি চন্দ্রাবতীর পুর্বরাগে রয়েছে সুন্দর ছবি

ডাল যে নুয়ায়ে ধরে জয়ানন্দ সাথী
তুলিল ম’লতি ফুল কন্যাচন্ত্রবতী ।
একদিন তুলি ফুল মালা গাথি তায়
সেইতো না মালা দিয়া নাগরে সাজায়।।

-চন্দ্রাবতী পৃ:১০৩
কিন্তু চন্দ্রাবতীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার পরও জয়ানন্দ এক মুসলিম নারীর প্রেমে আসক্ত হন। পরে চাপে পরে ধর্মান্তরিত হয়ে তাকে বিয়ে করেন। চন্দ্রাবতী এ বিয়োগ ব্যথা মেনে নিতে পারেননি । বিরহ অভিমানে তিনি স্থির করেন কুমারী থেকে শোদ্ধাচরিনীর মতো শিব পূজায় মনোনিবেশ করে জীবন কাটিয়ে দেবেন । পিতাকে এই ইচ্ছার কথা জানালে পিতা ফুলেশ্বরী নদীর তীরে শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
কবির ভাষায়
অনুমতি দিয়া পিতা কয় কন্যার স্থানে
শিব পূজা করো আর লেখ রামায়ণে

সকাল-বিকাল শিবের পূজা আর রামায়ণ রচনা এই হল চন্দ্রাবতীর কাজ।
চন্দ্রাবতীর লেখা আসমাপ্ত রামায়ণ সংকলিত হয়েছে পূর্ব্ববঙ্গ গীতিকার চতুর্থ খণ্ডে। চন্দ্রাবতীর রামায়ণকে অনেকে দুর্বল এবং অসমাপ্ত বলে সরিয়ে রেখেছিলেন। চন্দ্রাবতীর রামায়ণ পাঠে বিস্ময়াভূত নবনিতা দেব সেন বলেছেন যে, এটি দুর্বল বা অসমাপ্ত কোনোটিই নয়। এটি একজন নারীর দ্বারা রচিত কাব্য যেখানে রামের গুণগান না করে তিনি সীতার দুঃখ ও দূর্দশার দিকটাই বেশি তুলে ধরেছিলেন যা তৎকালীন পিতৃতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধাচারণ হিসাবে দেখা হয়েছিল। ফলে তিনি অন্য পালার জন্য খ্যাতি পেলেও রামায়ণ রচয়ীতা হিসাবে গুরুত্ব পান নি।

দীনেশচন্দ্র সেন চন্দ্রাবতীর এই রামায়ণের সাথে মেঘনাদবধের আশ্চর্য মিল খুঁজে পেয়েছেন। তাঁর ধারণা মেঘনাদবধ কাব্য রচনার আগে মাইকেল মধুসুদন দত্ত চন্দ্রাবতীর রামায়ন পড়েছেন এবং তারই প্রভাব পড়েছে মেঘনাদবধে (সুত্র: পূর্ব্ববঙ্গ-গীতিকা – দীনেশচন্দ্র সেন)

ওদিকে আত্মগ্লানিতে দগ্ধ হতে থাকলেন জয়ানন্দ। একদিন সন্ধ্যায় দরজা বন্ধ করে চন্দ্রাবতী মন্দিরে পূজা করছিলেন। অনুশোচনায় দগ্ধ জয়ানন্দ চন্দ্রাবতীর সঙ্গে দেখা করতে এলেন। কিন্তু অভিমানী চন্দ্রাবতী মন্দিরের দরজা খুললেন না। বাইরে দাঁড়িয়ে অনুনয়-বিনয় করলেন জয়ানন্দ। মন্দিরের সামনে বেদীতে মালতী ফুলের রস দিয়ে চারছত্রের একটি পদে চন্দ্রাবতী ও গৃথিবীকে চির বিদায় জানিয়ে সেখান থেকে চলে গিয়ে ফুলেশ্বরীর জলে আত্মাহুতি দেন। কবির ভাষায় জয়ানন্দের কবিতাটি ছিল এমন
শৈশব কালের সঙ্গী তুমি যৌবন কালের সাথী
অপরাধ ক্ষমা করো তুমি চন্দ্রাবতী ।
পাপীষ্ঠ জানিয়া মোরে না হইলা সন্মত
বিদায় মাগি চন্দ্রাবতী জনমের মত।।

অনেক দেরীতে চন্দ্রাবতী মন্দিরের কপাট খুলে কবিতাটি দেখতে পান ।তিনি বুঝতে পারেন জয়ানন্দের আগমনে দেবালয় অপবিত্র হয়েছে। তাই তার লেখা কবিতাটি ধুয়ে ফেলার জন্য কলসি নিয়ে নদীর ঘাটে জল আনতে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন ফুলেস্বরীর জ্বলে তার প্রেমিক জয়ানন্দের প্রাণহীন দেহ ভাসছে । এ দৃশ্য দেখার পর চন্দ্রাবতীর মনেও তীব্র অনুশোচনা জেগে উঠে। তিনিও জয়ানন্দের মতো ফুলেশ্বরীর জলে প্রাণ বিসর্জন দেন।কালের বিবর্তনে এখন আর ফুলেশ্বরী নদীর অস্তিত্ব নেই। কিন্তু শিবমন্দির আজও চন্দ্রাবতী-জয়ানন্দের অমর প্রেমের ট্রাজেডি বুকে ধারণ করে নিজস্ব মহিমায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

চন্দ্রাবতীর মৃত্যু নিয়ে সবাই অবশ্য একমত নন। নয়ানচাঁদ নিজেও তাঁর চন্দ্রাবতী পালাগানে চন্দ্রাবতীর মৃত্যু নিয়ে কিছু বলেন নাই। কারো কারো মতে নদীর ঘাটে মৃত অবস্থায় জলে জয়ানন্দের লাশ ভাসতে দেখে তীব্র অনুশোচনায় চন্দ্রাবতীও পরবর্তীতে ফুলেশ্বরী নদীর জলে ঝাঁপিয়ে জয়ানন্দের মত অনুগামী হন। আবার কারো মতে, জয়ানন্দের জলে ডুবে আত্মহত্যা বা মৃত্যুর কিছুদিন পরপরই শোকাবিভূত চন্দ্রাবতী মর্মান্তিক আঘাত প্রাপ্ত হয়ে স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেন। দীনেশ্চন্দ্র সেন মৈমনসিংহ-গীতিকার ভূমিকায় লিখেছেন, “প্রবাদ এই যে, প্রেমাহতা চন্দ্রা জয়চন্দ্রের শব দর্শন করার অল্পকাল পরেই হৃদরোগে লীলা সংবরণ করেন।“
অপরদিকে ব্রজেন্দ্রকুমার দে তাঁর মঞ্চনাটক ‘কবি চন্দ্রাবতী’-তে দেখিয়েছেন যে, শোক এবং অপমান থেকে বাঁচার জন্য চন্দ্রাবতী নিজেই গিয়ে ফুলেশ্বরীর বুকে ঝাপিয়ে পড়ে আত্মাহুতি দিয়েছেন।
তবে যেভাবেই হোক, হৃদয়ে গভীর আঘাত নিয়ে তীব্র মনোযাতনায়, অসামান্য প্রতিভাবান বাংলার এই প্রথম নারী কবির মৃত্যু হয়েছিল, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাঁর মত অভাগিনী বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিরল। নিজেকে ধুপের মত পুড়িয়ে তিনি যে কাব্য সৌরভ পরিবেশন করে গিয়েছেন অনাগত সময়ের জন্য তার খবর শহরে মানুষেরা রাখে নি। কিন্তু পল্লীর মানুষেরা তা ভোলে নি। তাঁদের মুখে গীত হয়ে দুখিনী কবি চন্দ্রাবতী আজো বেঁচে আছেন।

চন্দ্রাবতীর শিবমন্দির এবং তাঁর অসংখ্য লোকগীতিকে কেন্দ্র করে কাচারিপাড়ায় চন্দ্রাবতী মেলার আয়োজন বাংলার আদি কবি চন্দ্রাবতীর স্মৃতিকে অমলিন রাখার একটি উৎকৃষ্ট উদ্যোগ হতে পারে বলে অনেকের অভিমত।

পরশ পাথর প্রাপ্তি ৫ম পর্বে ময়মনসিংহ গীতিকায় থাকা অনান্য পালাগুলির উপর আলোচনায় অংশ গ্রহনের জন্য আম্ন্ত্রন রইল ।


ছবিসুত্র : কৃতজ্ঞতার সহিত গুগল অন্তর্জাল ও যথাস্থানে উল্লেখিত সুত্র সমুহ
তথ্যসূত্র
১. Dr. Dinesh Chandra Sen. History of Bengali Language
And Literature (A Series of Lectures Delivered As Reader
To The Culcutta University), vol.1,Gyan Publishing
House, 2007, ISBN-13: 978-8121209359, 2007

২. Bengali Folk-Ballads from Mymensingh and the Problem
of Their Authenticity" by Dusan Zbavitel Review by:
Niharranjan Ray, Indian Literature. 1964; 7(2):127-129.
Sahitya Akademi, Stable URL: https://www.jstf
or.org/stable/23329262
৪. বদিউজ্জামান সম্পাদিত , মোমেনশাহী গীতিকা, বাংলা একাডেমি,ঢাকা, একাত্তর।









মন্তব্য ৭৪ টি রেটিং +২০/-০

মন্তব্য (৭৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:২৪

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: আমি যেন সত্যিই আমার মনের মতো কিছু একটা পেয়ে গেলাম।
এমন কিছুই চাইছিলাম আমি। পাচ্ছিলাম না।
আপনি পোষ্ট দেয়ায় আমার খুব ভালই হলো।
আমি একে একে সবগুলো পর্বই পড়বো।
আপনার সীমাহীন ধৈর্য দেখে আমি অভিভূত। আমার শুভেচ্ছা নিন।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:১৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



আপনার শুভেচ্ছা সাদরে গৃহীত ।
পোষ্টটি মনমত হয়েছে শুনে ভাল লাগল ।
সবগুলি পর্ব পড়বেন শুনে খুশী হলাম ।

ভাল থাকার শুভ কামনা রইল ।

২| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: নয়া বাড়ি লইয়ারে বাইদা লাগাইলো কলা চমৎকার গান।
গান টা খুব সুন্দর।

কাজল রেখা নিয়ে অনেক যাত্রাপালা হয়েছে। গ্রাম বাংলায় খুব জনপ্রিয় ছিলো- কাজল রেখা।

প্রতিটা ঘরে ঘরে একজন বই পাগল কাকা থাকা খুব দরকার।

হ্যা মহুয়া এবং নদের চাঁদের কাহিনী আমাকে মুগ্ধ করেছে।

পোষ্টে আমাদের পল্লী কবির কথা আসবে এরকম আশা করেছিলাম।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:২১

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
নয়া বাড়ি লইয়ারে বাইদা বেগুনও লাগাইছে।
গানটি চমৎকার হয়েছে শুনে ভাল লাগল ।
মহুয়া পালাটি বাংলাদেশের বাইরেও মন্চস্ত হয়েছে ।
মযমনসিংহ গীতিকার সকল রচয়িতাই বাংলার প্রাচীন পল্লীকবি ।
মহুয়া হলো বাংলার প্রাচীণতম পল্লী নাটিকা ।

৩| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: চন্দ্রকুমার দে সম্পর্কে আজ'ই প্রথম জানলাম আপনার পোষ্ট থেকে।
ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত 'সৌরভ' কি পত্রিকা না ম্যাগাজিন ছিলো?
মহুয়া, চন্দ্রাবতি আর কাজলরেখা মুগ্ধ হয়ে পড়লাম।


সব মিলিয়ে আজকের পোষ্ট টি বেশি ভালো লেগেছে। অনেক পরিশ্রম করেছেন এটা পরিস্কার। পোষ্ট টি খুব ধীরে ধীরে বুঝে এবং হৃদয় দিয়ে পড়লাম। ৩৪ মিনিট সময় লেগেছে।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৩২

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:


সৌরভ ছিল একটি মাসিক পত্রিকা ।
বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকটি ময়মনসিংহের (তথা সমগ্র বাংলার) সাময়িকপত্রের ইতিহাসে খুবই গৌরবোজ্জ্বল হয়ে উঠেছে কেদারনাথ মজুমদার সম্পাদিত মাসিক ‘সৌরভ’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে। কিশোরগঞ্জের জাতক কেদারনাথ দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে গবেষণার উদ্দেশ্যে ময়মনসিংহ শহরের আমলাপাড়ায় ‘রিসার্চ হাউজ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। সেখান থেকেই সৌরভ প্রকাশিত হতো। পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যায় (১৯১৩ সালের অক্টোবর মাসে) সম্পাদকীয়তে কেদারনাথ লিখেছিলেন—

“ময়মনসিংহ জেলা বিস্তৃত, জনসংখ্যা অগণ্য, ইহার ঐশ্বর্য প্রচুর। সৌরভের প্রতিষ্ঠায় সাহিত্যচর্চার যে উজ্জ্বল স্বপ্ন দেখিতেছি তাহা সফল হইলে আমরা আমাদের যত্ন সার্থক জ্ঞান করিব।”

কেদারনাথের ‘উজ্জ্বল স্বপ্ন’ পুরোপুরিই সফল হয়েছিল। সৌরভের পাতা থেকেই আবিষ্কৃত হন চন্দ্রকুমার দে। ‘বঙ্গভাষা ও সাহিত্য’র অমর লেখক ডক্টর দীনেশ চন্দ্র সেন এই চন্দ্রকুমারকে দিয়েই ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’ সংগ্রহ করান।

আনেক সময় নিয়ে মনযোগ দিয়ে পোষ্টটি পাঠ করেছেন শুনে খুবই খুশী হলাম ।

শুভেচ্ছা রইল ।

৪| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:১০

ফয়সাল রকি বলেছেন: তথ্যমূলক ও পরিশ্রমী পোষ্টে অভিনন্দন।
আপনার পোষ্টটা পড়তে পড়তে অতীতে চলে গিয়েছিলাম। মহুয়া পালা, কাজল রেখার গল্পগুলো ছোটবেলায় শুনেছি। তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় বেশ কিছু মঞ্চনাটক দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল, যার মধ্যে কয়েকটাতেই মহুয়া, মলুয়া সুন্দরী, কাজল রেখার গল্প ছিল, গান ছিল। বিশেষত-
উত্তরে না গা‌রো পাহাড় ছয় মা্ইস্যা পথ ... তাহার উত্তরে আছে হিমানী পর্বত...
গানটা প্রায়ই গাইতাম বন্ধুরা মিলে। অথবা, কাজলরেখার গান।
মৈমনসিংহ গীতিকা নিয়ে এতো বিশদ কখনো পড়া হয়নি। আর চন্দ্রকুমার দে'র কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করার জন্য ধন্যবাদ।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:৪৩

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:


ময়মনসিংহ গীতিকার সাথে ভাল একটি পরিচয় আছে শুনে ভাল লাগল ।
লেখাটি ময়মনসিংহ গীতিকার সংগ্রাহক চন্দ্রকুমার দে'র স্মরনেই
নিবেদিত ।যার অক্লান্ত পরিশ্রমের কারনে বাংলার লোক সাহিত্য
বিশ্বমাজে সুপরিচিত হয়েছে তাকে নিয়ে সকলের মাঝেই
আলোচনা হওয়া প্রয়োজন । আমাদের নব প্রজন্ম তাকে
যথাযথভাবে মুল্যায়ন করুক এ আশাই রইল ।
সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।

শুভেচ্ছা রইল

৫| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:০৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: এইসব তথ্যমূলক ও শিক্ষণীয় লেখা বই আকারে থাকা খুবই দরকার । কয়েকবার পড়লে মনের তৃপ্তি মিটবে

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:২৩

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



বই আকারে প্রকাশ করার আশা আছে ।
দোয়া করবেন ।

শুভেচ্ছা রইল

৬| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:২৯

আহমেদ জী এস বলেছেন: ডঃ এম এ আলী,




আপনার মতো কেউ কেউ আছেন বলেই পরশ পাথর প্রাপ্তি আমাদের জন্যে খুব সহজ হয়ে গিয়েছে।

চন্দ্রকুমার দে'র মতো এখানে সেখানে ঘুরে ঘুরে গীতিকা সংগ্রহে কষ্ট নেই আমাদের , ব্লগে ঢুঁ দিলেই ‘মৈমনসিংহ গীতিকা’র মতো কিছু কিছু পরশ পাথরের দেখা মেলে যার স্পর্শে জ্ঞান ভান্ডারের দুয়ার খুলে যায়। ব্লগকে তখন যেন মনে হয়, ‘সৌরভ’ পত্রিকার সম্পাদক কেদারনাথ মজুমদারের বিস্তৃত ময়মনসিংহ জেলার মতো বিশাল , অগণ্য জনসংখ্যা নিয়ে প্রচুর ঐশ্বর্যময় একটি ভূখন্ড!

আপনিও চন্দ্রকুমার দে'র মতো এখান সেখান থেকে কুড়িয়ে আনা পরশ পাথর দিয়ে এই যে সাজালেন এক অনন্য তাজমহল তাতে বলতেই হয় -
" নয়া বাড়ী লইয়ারে বাইদ্যা ( ডঃ এম আলী ) বানলো জুইতের ঘর ...."

“ আমার বাড়ীত যাইওরে বন্ধু বইতে দিয়াম পিড়া ”
‘মৈমনসিংহ গীতিকা’র এমন আহ্বানে ফুলেশ্বরীর স্রোত ঠেলে তাই আপনার বাড়ীতে আসতেই হলো। প্রিয় শালিধানের চিড়াও নিয়ে গেলুম পোটলা বেঁধে, তুলে রাখবো নিজের ভাড়ারে ।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৩৭

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:

আপনার মুল্যবান মন্তব্যগুলি পরশ পাথরের উজ্জলতা বাড়িয়ে দেয় ।
একটি পোষ্টের লেখার নির্যাস গুলিকে চয়ন করে প্রাসঙ্গিক মন্তব্য দানের
বিষয়ে ব্লগের সর্বসেরা হিসাবে অনেক আগেই আপনি প্রতিষ্ঠিত হয়ে
আছেন , এ বিষয়ে আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখেনা ।
সমাজ সচেতনতা মুলক আপনার সাম্প্রতিক পোষ্টগুলি
আমাদের ঘুণে ধরা সমাজকে নাড়া দিয়েছে প্রবলভাবে ।
রোহিঙ্গাদের অপসারন বিষয়ে দেখলাম সরকার বেশ একটু
তৎপরতা দেখাচ্ছে । আপনার সে পোষ্টটির একটি
ইতিবাচক দিকই পরিলক্ষিত হচ্ছে ।

আমার এই আগোছালো লেখাটিকে প্রিয়তে নিয়েছেন,
সে জন্য কৃতজ্ঞতার অন্ত নেই ।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল ।



৭| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৪:৫৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



ভুলে গিয়েছিলাম "কাজল রেখা"কে, আপনি আবার মনে করায়ে দিলেন।
আপনার বদৌলতে আবার ফিরে গেলাম আগের বাংলায়।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:০৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
আমার ধারনা আপনি আপনার স্কুলের নবম শ্রেনীর পাঠ্য বইয়ে
কাজল রেখা গল্পটি পাঠ করেছেন ।
পরের কোন এক পর্বে চট্টগ্রাম এলাকার লোকগাথা তুলে
আনার চেষ্টা করব । চট্টগ্রামের লোকগাথাও বেশ সমৃদ্ধ।
কর্নফুলি নদীর নামের সাথে জড়িয়ে আছে বিখ্যাত একটি
লোকগাথা ।

শুভেচ্ছা রইল

৮| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৮

রামিসা রোজা বলেছেন:

তথ্যমূলক ও পরিশ্রম করে লিখেছেন সেজন্য আন্তরিকভাবে
ধন্যবাদ জানাচ্ছি । আপনার সুবাদে এমন একটি লেখার
জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ । লেখাটি আমি সময় নিয়ে
পড়বো তাই প্রিয়তে নিয়ে রাখছি ।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:১১

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



বেশ বড় আকারের পোষ্টটি পরিশ্রম দিয়ে পাঠ করার জন্য ধন্যবাদ ।
আপনার মুল্যবান মন্তব্যের অপেক্ষায় থাকলাম ।

শুভেচ্ছা রইল ।

৯| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৮:০৪

জুন বলেছেন: ছোট বেলায় কাজল রেখার দুঃখের গল্প শুনে কত যে কেদেছি তা লিখে বোঝাতে পারবো না। লাইক আর প্রিয়তে নিলাম পরে আরেকবার আসবো পুরো লেখাটি পড়ে ডঃ এম এ আলী ভাই। অসাধারণ একটি লেখা।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:১৮

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



কাজল রেখার কাহিনী চোখে কান্না আসার মতই ।
স্কুলের পাঠ্য বইয়ে থাকা গল্পটি যে কতবার পড়েছি
তা কি আর বলব । এই কালজয়ী লোকগাথার
মুল রচয়িতার নামটি এখনো অজ্ঞাত । আপনার
মত ঐতিহাসিকের দৃষ্টি আকর্ষন করছি এ বিষয়ে ।
পোষ্টটি প্রিয়তে নেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানবেন ।
লেখাটি আসাধারণ অনুভুত হওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

শুভেচ্ছা রইল


১০| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৮:১২

মনিরা সুলতানা বলেছেন: কিছু কিছু গানের লাইন বেশ জনপ্রিয় সে হিসেবেই শুনেছি- যেমন
কোথায় পাবো কলসি কন্যা কোথায় পাবো দড়ি
তুমি হও জল কন্যা জলে ডুইব্বা মরি "
আমাদের ছোটবেলায় বিটি ভি তে কিছু গীতিকা নাট্যর‍্যপ হত, তখন দেখেছি কিছু। এছাড়া বিশদ ভাবে পড়া হয় নি। আপনার লেখায় সে স্বাদ কিছুটা হলে ও পূরণ হল।
খুব মন ছোঁয়া লাগে এদের বাক্য বিন্যাস, এত সুন্দর সব নাম !! ডুবডুবা পাখি, ধনঞ্জয়, মলুয়া আহা ! কী অপূর্ব !!!
আমার এইচ এস সি' র বাংলা শিক্ষক ছিলেন আপনার বড় কাকা র মত একজন! উনার লাইব্রেরীর বই ছিল আমাদের জন্য অবারিত! এবং প্রতি সপ্তাহে উনি নিজেই নতুন বই এর যোগান দিতেন আমাদের। উনার কাছেই দ্বিজ কানাই , কাহ্নপা বড়ু চণ্ডিদাস এমন অসংখ্য নাম শুনেছি।
গাথাসমূহের সংগ্রাহক চন্দ্রকুমার দে উনার নাম এর প্রথম জানতে পারলাম! সত্যি ই মনি মাণিক্য সংগ্রাহক নিজেই রয়ে গেলেন অবহেলিত। মৈমনসিংহ-গীতিকা' র এ ব্যাপার টা আমাকে সব সময় ই মুগ্ধ করে যে এর সব গল্পই নারী চরিত্র প্রধান।

আপনার এই পরশ পাথর সিরিজ তো একবার পড়ে বুঝে যাওয়া বা ভুলে যাবার নয় ! এ হচ্ছে সত্যি ই মনি মাণিক্য ! তাই সংগ্রহে রাখলাম প্রিয় তে।

অফ টপিকঃ এর মাঝে আমি ডাহুকী বিলাপ নামে কয়েক লাইন লিখেছিলাম, সেখান আপনার মূল্যবান মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:৩৮

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:




আপনি ঠিকই বলেছেন ময়মনসিংহ গীতিকায় থাকা বেশ কিছু জনপ্রিয় গানের কলি
এখনো বাংলার পথে ঘাটে লোকমুখে শুনা যায় ।
ময়মনসিংহ গীতিকার অনেক পালাই গীতি নাট্যরুপে টিভিতে প্রচারিত হয়েছে ।
মৈময়মনসিংহ গীতিকাটি সংগ্রহ করে পাঠ করে ফেলুন , দেখতে পাবেন কি মনি রত্ন তাতে রয়েছে ।

গাথাসমূহের সংগ্রাহক চন্দ্রকুমার দের জন্য কষ্ট লাগে । তার মত উপেক্ষিত নায়ক বাংলায় খুব কমই আছে । যে চন্দ্রের অক্লান্ত পরিশ্রমে তাজমহল গড়া হয়েছে তিনি থাকলেন শুধু সংগ্রাহক হিসাবে । ময়মনসিংহ গীতিকা নিয়ে আপনার মুল্যায়ন সঠিক ।

পোষ্টটি প্রিয়তে নেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানবেন ।

ডাহুকী বিলাপ কেন যে আমার দেখা হয়ে উঠেনি সে জন্য অআক্ষেপ লাগছে ।
এর মধ্যে সেটা দেখে এসেছি । ভাল লাগার দুএকটি কথাও সেখানে বলে এসেছি ।

শুভেচ্ছা রইল

১১| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২০

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




ভাই সাহেব,
আমি আজ রাতের তূর্ণা নিশীথা ট্রেনে চিটাং যাচ্ছি ফিরবো রবিবার নাগাদ। আপনার জন্য দোয়া প্রার্থনা রইলো, ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন, আমার জন্যও দোয়া করবেন। বর্ষাকালে ও শীতের রাতে আমাদের বাড়িতে পুথিপাঠ কিসসা ও মৈমনসিংহ-গীতিকা পাঠ হতো আমি ফিরে সে গল্প করবো ইনশাল্লাহ। পোস্টটি প্রিয়তে রইলো।

সবেইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিচ্ছি। ফি আমানিল্লাহ।

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:০২

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:

প্রথম যখন উল্কা চালু হয় তখন ঢাকা হতে চিটাগাং যেতে সময় লাগত ৬ ঘন্টা ।
তূর্ণা নিশীথা ট্রেনে চিটাং যেতে এখন সময় কি আরো কম লাগে ?

দোয়া করি যে উদ্দেশ্য নিয়ে চিটাগাং যাচ্ছেন তা সফল হোক ।

বর্ষাকালে ও শীতের রাতে আপনাদের বাড়িতে পুথিপাঠ কিসসা ও
মৈমনসিংহ-গীতিকা পাঠ হতো শুনে খুশী হলাম ।
এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত শুনার অপেক্ষায় রইলাম ।

শুভেচ্ছা রইল

১২| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১:৪৭

রাজীব নুর বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমার দুটা মন্তব্যের খুব সুন্দর উত্তর দিয়েছেন।
অবহেলা করেন নি। অনেকেই অবহেলা করেন।

ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:০৭

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:


আপনি আমার প্রিয় ব্লগারদের একজন ।
আপনাকে আবহেলা করার দু:সাহস যেন
কোনদিন না হয় সে বিষয়ে আমি সচেতন
আছি ।

শুভেচ্ছা রইল

১৩| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৫:৪৮

জোবাইর বলেছেন: ব্যক্তিগত ঝামেলা ও ব্যস্ততার কারণে এখন ব্লগে চোখ বুলানোর সময়ও পাচ্ছি না! আজকে হঠাৎ করে চোখ বুলাতে এসে পরশ পাথরে চোখ আটকে গেল এবং এক টানে পড়ে শেষ করে ফেললাম 'পরশ পাথর প্রাপ্তি পর্ব-৪ : মৈমনসিংহ-গীতিকা প্রসঙ্গ'। এক কথায় চমৎকার! প্রিয়তে রাখলাম।

বরাবরের মতো আবারো অনেক পরিশ্রম ও সময় নিয়ে লেখা অসাধারণ একটি পর্ব। মৈমনসিংহ-গীতিকা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা আগে থেকে থাকলেও আপনার লেখা থেকে অনেক নতুন তথ্য জানলাম। তবে মৈমনসিংহ-গীতিকার মূল কারিগর চন্দ্রকুমার দে সম্পর্কে আজকে আপনার লেখা থেকেই বিস্তারিত জানলাম। মৈমনসিংহ-গীতিকার পালাগুলোর কাহিনী-সংক্ষেপ খুবই সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন।

আপনি কঠোর পরিশ্রমে সাহিত্য, বিজ্ঞান, ইতিহাস, গল্প, কাব্য, কাহিনী, অভিজ্ঞতা এবং দুর ও কাছের বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ব্লগে যেভাবে পরশপাথর উপস্থাপন করে যাচ্ছেন, তাতে আমার তো মনে হয় ব্লগে আপনিই আমাদের জন্য আরেক জন 'চন্দ্রকুমার দে'। অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইলো, ভালো থাকুন।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ২:৩৭

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



ব্যক্তিগত ঝামেলা ও ব্যস্ততার মাঝেও বেশ বড় আকারের পোষ্টটি
একটানে আদ্যোপান্ত পাঠের জন্য ধন্যবাদ ।
পোষ্টটি প্রিয়তে নেয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানবেন ।
ময়মনসিংহ গীতিকার কারিগড় চন্দ্রকুমারের প্রতি সকলের সকলের দৃষ্টি
আকর্ষন , তাঁর কৃতির যথাযথ স্বিকৃতি ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করাও ছিল পোষ্টটির
অন্যতম লক্ষ্য । আমি একটি সাহিত্য সংগঠনের সাথে যুক্ত আছি ।
চেষ্টায় আছি চন্দ্রকুমারের স্মৃতি রক্ষার্থে তাঁর এলাকায় একটি
ভাল স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণের জন্য , দোয়া করবেন যেন সফল হই।

পুরাতন লোকগাথা ও কাব্যকাহিনী নিয়ে এই ব্লগে আমি কিছুটা নাড়াচাড়া করি ।
নিন্মলিখিত কয়েকটি বিষয়ে পর্বাকারে এ ব্লগে আমার কয়েকটি লেখা রয়েছে ।
সময় পেলে দেখে আসতে পারেন ।
মহাকবি কালিদাসের সচিত্র মেঘদূত
তপোবনবাসিনী নিয়মচারিণী শকুন্তলা প্রণয় কাহিনী
সপ্তদশ শতকের কবি ‘’কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ’’ বিরচিত মনসা মঙ্গল
ছয়ফল মুল্লুক- বদিরুজ্জামাল রূপকথার সচিত্র কাব্যগাথা

আপনার মুখে ফুল চন্দন পরুক ,তবে হোক কথা হলো
চন্দ্রকুমার দে'র নখের তুল্য হতে পারলেও নীজকে ধন্য মনে
করতাম।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল


১৪| ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৯:০২

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: বাংলা সাহিত্যের অন্তর্নিহিত শক্তি সম্পর্কে অনেকের ধারণা নাই তাই তারা একে ছোট করার চেষ্টা করে। আপনার লেখা পড়ে মইমনসিংহ গীতিকা সম্পর্কে আরও অনেক কিছু জানা হোল। আপনার লেখা ব্লগের পাঠকদের বাংলা সাহিত্যের প্রতি আরও আকৃষ্ট করবে। চন্দ্রকুমারকে আমরা সঠিক সম্মান দিতে পারিনি এটা আমাদের ব্যর্থতা।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ২:৪১

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:


মুল্যবান মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।
আপনি যতার্থই বলেছেন
চন্দ্রকুমারকে আমরা সঠিক সম্মান দিতে পারিনি এটা আমাদের ব্যর্থতা।
আমরা সকলে মিলে চেষ্টা করলে মনে হয় এই ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পারব ।

শুভেচ্ছা রইল

১৫| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৩:৩৩

অনল চৌধুরী বলেছেন: ময়মনসিংহ গীতিকা অনুসরণে ১৯৮০'র দশকে বিটিভি"তে হীরামন ধারাবাহিকে বিভিন্ন গল্প দেখানো হতো, যেগুলির অনেকগুলিতে দৈত্যও ছিলো।
ছোটরা দেখে ভয় পেতো।

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৫০

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



মুল্যবান তথ্যটুকু জানানোর জন্য ধন্যবাদ ।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা সাহিত্যে মাস্টার্স ডিগ্রী অধ্যয়নকালে ও লাভের পর আমাদের পল্লীকবি জসীম উদ্‌দীন ময়মনসিংহ গীতিকার সম্পাদক প্রখ্যাত পণ্ডিত ড. দীনেশচন্দ্র সেনের তত্ত্বাবধানে ‘রিসার্চ ফেলো’ পদে কর্মরত ছিলেন । দীনেশ চন্দ্রসেন সেই দিনগুলোতে বাংলাদেশের বিভিন্ন পল্লী এলাকার মানুষের মুখে গীত-পঠিত পুথি সংগ্রহ ও গবেষণা করতেন । ড. সেন তার উপযুক্ত শিষ্য জসীম উদ্‌দীনকে বাংলার জেলাগুলোর বিশেষভাবে ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ জেলার কিছু পুঁথি (কাব্য-লোকগাথা) সংগ্রহের দায়িত্ব দেন। তারই ধারাবাহিকতায় জসীম উদ্দীন রচনা করেন হিরামন।


শুভেচ্ছা রইল


১৬| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৮

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আগের মন্তব্য করার পরে কবি জসিমুদ্দিনের একটা বই পড়া শুরু করেছিলাম। যেটার নাম 'ঠাকুর বাড়ির আঙ্গিনায়'। এখানে কবি জসিমুদ্দিনের ময়মনসিংহ গীতিকার উপর কয়েকটা কথা পড়ে একটু বিভ্রান্তির মধ্যে পরে গেলাম। ঠাকুর বাড়ির আঙ্গিনায় বইটির (অন্তরজালে বইটা পাওয়া যায়) ২৯ ও ৩০ পৃষ্ঠায় কবি জসিমুদ্দিন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে বলছেন " ময়মনসিংহ-গীতিকার গানগুলি শুধুমাত্র কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বইয়ে পাওয়া যায়। ময়মনসিংহে সাত - আট বছর গ্রাম হতে গ্রামে ঘুরে বেড়িয়েছি, কোথাও এই ধরণের মাজাঘষা সংস্করণের গীতিকা পাওয়া যায় না। গ্রাম্য গাঁথার একটা কাঠামো সংগ্রহ করে চন্দ্রকুমার দে তার উপর নানা রচনা-কারজের বুনট পরিয়ে দীনেশ বাবুকে দিয়েছেন। তাই পল্লীর অশিক্ষিত কবিদের নামে চলে যাচ্ছে।"

উনি বলতে চাচ্ছেন যে ময়মনসিংহ গীতিকার কিছু কিছু গীত বা অংশ বিশেষ আসলে পরবর্তীতে সংগ্রহকারীদের দ্বারা মূল কাহিনীতে সংযুক্ত হয়েছে। এগুলি প্রচলিত ছোট ছোট গ্রাম্য গান ছিল। চন্দ্রকুমার বাবু এগুলি সংগ্রহ করে সেই প্রচলিত পল্লী গীতিকার কাঠামোর মধ্যে ভরে দিয়েছেন। এই অংশ বিশেষগুলির ভাষা থেকে বোঝা যায় যে এগুলি পল্লীর অশিক্ষিত কবিদের লেখা নয়। উনি আরেকজন সংগ্রহকারী ক্ষিতিমোহন বাবুর সংগ্রহ করা এই ধরণের দুই একটি উদাহরণ দিয়েছেন। যেমন

কমল মেলে কি আঁখি, তার সঙ্গে না দেখি
তারে অরুণ এসে দিল দোলা রাতের শয়নে,
আমি মেলুম না, মেলুম না নয়ন
যদি না দেখি তার প্রথম চাওনে।

এর পরে কবি জসিমুদ্দিন বলছেন যে ' আপনি কি বলবেন, এসব লাইন কোনও অশিক্ষিত গ্রাম্য বাউলের রচিত হতে পারে?

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৩৪

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:

ময়মনসিংহ গীতিকার উপর প্রভাব বিস্তারকারী কিছু তথ্য সম্বলিত
মতামত রেখে যাওয়ার জন্য ধন্যবাদ । বাংলার লোকগাথা সংগ্রহ
ও সেগুলির গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার
প্রয়োজন আছে বলে মনে করি । দেশের লোক সাহিত্য
প্রেমিরা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন বলে মনে
করি ।
শুভেচ্ছা রইল

১৭| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৯:১১

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: তথ্যবহুল একটি লেখা।চন্দ্রকুমার দে যা অবদান রেখেছেন এই গীতিকাগুলো সংগ্রহের ক্ষেত্রে সে অনুযায়ী তিনি উপেক্ষিতই বলতে গেলে।তাকে নিয়ে বেশি লেখা পাওয়া যায় না। লোকগীতি সংগ্রহে তিনি যে কষ্ট করেছেন তার খুবই সামান্য অনুভব করেছি বরিশাল অঞ্চলের গ্রামে গিয়ে ছড়া সংগ্রহের সময়।মাত্র ১৬ টি ছড়া সংগ্রহ করতে পেরেছিলাম। গীতিকা সমূহের শক্তিশালী দিক নারীর সরব উপস্থিতি। গীতিকার নারীরা প্রেমময়ী,দুর্দমনীয়,অভিমানী কিন্তু অনুগত,পরোপকারী,মমতাময়ী এবং দৃঢ় চরিত্রের অধিকারী। মহুয়া,কাজলরেখা,দেওয়ানা মদীনা প্রত্যেকেই প্রেমময়ী, ধৈর্যসশীল,শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের অধিকারিনী।বাঙালি নারীর জীবন সংগ্রাম তথা নারীর এমন শক্তিশালী উপস্থিতি খুব কমই দেখা যায়।আপনাকে ধন্যবাদ এমন কষ্টসাধ্য এবং চমৎকার লেখার জন্য।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:০৬

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:


চন্দ্রকুমারের মুল্যবান অবদান যেমনভাবে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্বিকৃতি দিলেন তাতে আমি মুগ্ধ ।

বরিশাল অঞ্চলেও ছড়িয়ে আছে সমৃদ্ধ লোকগাথা ছড়া উপাক্ষান । তবে সেগুলি সংগ্রহ
করা বেশ কঠিন কাজই বটে । বরিশালের পুথি যথা গুনাই বিবি , ষাটের দশকেএটা নিয়ে রচিত
হয়েছে ব্যবসা সফল একটি চলচিত্রও । গুনাই বিবিতে নায়িকা সুজাতা আর নায়ক আজিমের
অভিনয়ের কথা ও গানের সুর ‌ " কুহু কুহু সুরে আর ডাকিছ নারে কুকিল " আজো মনে বাজে ।

বরিশাল এলাকার ১৬টি ছড়াগান সংগ্রহ করা দুর্লভ কৃতিত্বই বটে।
এ দুর্লভ কৃতিত্বের জন্য অভিনন্দন রইল ।

বরিশালের জারি সারি যা নৌকা বাইচের সময় মঝিদের কন্ঠে গীত হয় তার ছন্দময় ভাষা
ও সুর সে কতই না মধুর ।
বরিশাল এলাকায় জীবনের মুল্যবান পাঁচটি বছর কাটিয়েছি । শুনেছি আনেক ছড়াগান।
মনে পরে াতি কৌতুকময় একটি ছড়াগান যথা -

ও গেদু তুই কম্বে গেলি?
তড়াতড়ি আয় তোর নানা আইছে
সালুন নিয়া, ভাত খাতি বুলায়।

মুড়া-মুড়কি কিনি আনছে,
আরো আনছে আম..
কতফর এউক্কা কাডল আনছে
হত্তুর টাহা দাম।

আরো জানি কি কি আনছে
তুই দেখি যা আয়..
কাইল বিয়ানে দেওরের লেইক্কা
কাডবি রেন্টি গাছ
পুহুত্তুনে ধরবি এউক্কা
ডাংগর কাতল মাছ
বুড়া মানু গুস্ত খা না
মাছ খাতি মুলায়
ও গেদু তুই কম্বে গেলি?
তড়াতড়ি আয়।

ময়মনসিংহ গীতিকার সাহিত্য মুল্য ও নারী চরত্রগুলি মন্তব্যের ঘরে যতার্থভাবে তুলে ধরেছেন
দেখে ভাল লাগল ।

শুভেচ্ছা রইল ।

১৮| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১:৪৫

ওমেরা বলেছেন: বাংলা সাহিত্য সম্পর্কে আমার জ্ঞান খুবই সীমিত , আপনার পরশ পাথর পড়ে তার একটু ছোঁয়া তবু পাচ্ছি।
আপনি কত পরিশ্রম করে লিখছেন আপনাকে একটা ধন্যবাদ দিলে হবে না । অনেকগুলো ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার জন্য।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:১০

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:


আপনাদের মত নব প্রজন্মের জন্যইতো এ লেখা ।
এসে দেখায় খুবই খুশী হলাম ।
লেখা থেকে পাঠে বেশী পরিশ্রম । তাইতো এ লেখায়
পাঠক সংখ্যা খুবই কম !!

সবগুলি ধন্যবাদ সাদরে গৃহীত ।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল ।

১৯| ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৪:৪০

অনল চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ।
আরেকটা তথ্য হয়তো আপনার কাজে লাগবে। বিটিভির' হীরামন ধারাবাহিকের উপস্থাপক ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও লোকশিল্প গবেষক ড: আশরাফ সিদ্দিকী।
সেই ১৯৮৫-৮৬ সালে আমার বয়স ছিলো মাত্র ১১-১২ বছর। কিন্ত তারপরও হীরামনের অনেক গল্পের কথাই এখনো মনে আছে। সেখানে জ্বীন-পরী-দৈত্য-রাজা-রাণী-রাজকন্যা-রাজকুমার এদের নিয়ে গল্প থাকতো। নাচ-গান ছিলো। মাঝে-মাঝে তলোয়ার যুদ্ধও দেখানো হতো। নৃত্যশিল্পী শামীম আরা নিপা অনেককগুলি পর্বে অভিনয় করেছিলেন।
একজন লম্বা ব্যাক্তি দৈত্য চরিত্রে নিয়মিত অভিনয় করতেন। আংটি ঘষলেই দৈত্য হাজির হতো। তার কথা বলার ভঙ্গী ছিলো হাস্যকর। তবে তাকে দেখে ৫-৬ বছরের শিশুরা খুব ভয়ে পেয়ে কম্বলের নীচে লুকিয়ে পড়তো।
বেশীরভাগ গল্পেরই দৃশ্য ধারণ করা হতো ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানে।
ইউটিউবে অনেকগুলি পর্ব আছে।লোক কাহিনী ও লোক গাথা অবলম্বণে আলেখ্য অনুষ্ঠান “হীরামন”

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৩৩

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



আবার এসে মুল্যবান তথ্য রেখে যাওয়ার জন্য ধন্যবাদ ।
বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও লোকশিল্প গবেষক ড: আশরাফ সিদ্দিকীর সাথে
ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাতের দুর্লভ সুযোগ হয়েছিল ।
বিটিভিতে নিয়মিত আমি হিরামন দেখতাম ।
তবে চাকুরী সুবাদে প্রায়ই বাইরে থাকার কারণে
অনেক অনুষ্ঠান মিস করে ফেলতাম ।
আপনি যখন ভুত প্রেত দেখে ভয় পেতেন
আমি তখন ভুত প্রেত তাড়িয়ে বেড়াতাম :)
''হিরামনে''র লিংকটি দেয়ার জন্য ধন্যবাদ ।
এখন লিংক ফলো করে জমিয়ে প্রিয় হিরামন দেখছি ।
প্রথম দৃশ্যেই আমার প্রিয় অভিনেতা আশিষ কুমারের
অভিনয় দেখে যেন ফিরে গেলাম অনেক পুরানো দিনের
স্মৃতিতে ।
হিরামনের মত আরো পুরাতন লোকগাথা নিয়ে টিভিতে
ধারাবাহিক চালু থাকলে ভাল হয় । ভারতীয় টিভি
স্টার জলসায় দক্ষিনারঞ্জন মিত্র মহোদয় রচিত
'ঠাকুমার ঝুলী " ও ''দাদা মশায়ের থলী''তে থাকা
দেও দৈত্য দানবের কাহিনীতে ঠাসা কিসছা কাহিনী
নিয়ে নীয়মিত একটি বাংলা ড্রামা সিরিয়াল চলছে,
এটি বাচ্চাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে ।
কামনা করি বিটিভি লোকগাথাগুলির প্রচারে
এগিয়ে আসুক আরো প্রবলভাবে ।

শুভেচ্ছা রইল

২০| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৮:২৮

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




আয় আয় আয়
শোনেন দশজনা
সুন্দরী রুপবানের কথা
আমি করিবো ব-র্ণ-না-আ-হ

আগুন বরণ রূপ তাহার
পটল চেরা চোখ,
মুক্তা দাঁতের হাসি মুখে
পিঙ্গল বরণ কেশ।

রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে আনুমানিক রাত ০৮:৩০ - ০৯:০০ টা থেকে গান শুরু হতো। সময়কাল ৬০ এর দশক। তখন রাত ০৮:০০ টা অর্থ গভীর রাত - আপনি জানেন। আমাদের পুরো এলাকাতে বিদ্যুৎ ছিলো না। বাড়িতে জমিতে কাজ করার বদলি লোকদের আনন্দদানের জন্য সহ এলাকায় সে সময়ে গানের আয়োজন করা হতো, সেই গানগুলো ছিলো আসলে গানের আদলে লোকগাঁথা, পুথিপাঠ, গীত ও গল্প বলা যার জন্য গাতক আসতো সুদূর ময়মনসিংহ থেকে। আস্ত একটি পুথিপাঠ হয়ে যেতো গানে গানে। মাঝে বিরতি দিয়ে গুড়ের চা, মুড়ি/টোস্ট বিস্কুট অথবা শিরনির ব্যবস্থা থাকতো।

ভাই সাহেব আপনার লেখা পোস্টের কারণে সে সব আজ মনে পড়েছে। রুপবান, বেহুলা লক্ষিন্দর, সাত ভাই চম্পা, বেল কুমার, নুনের মতো ভালোবাসা সহ কতো কতো লোক গল্প এভাবে পাঠ হয়েছে যা এখন স্মৃতি। ৬০ এর দশকের ময়মনসিংহের প্রখ্যাত গাতক কাঞ্চন মিয়া (কাছন মিয়া) ও তার দল, সুরুজ মিয়া ও তার দল, লাল মিয়া ও তার দল, আমাদের বাড়িতে ও আমাদের এলাকাতে গান করেছেন। পরবর্তিতে ৮০ এর দশকে সুরুজ মিয়া ও তার দল ও লাল মিয়া ও তার দলের গানের স্টেরিও ক্যাসেট বার হয়।

আমি আবারও আসছি মন্তব্য নিয়ে। অত্যন্ত গুরুত্বপপূর্ণ লেখা পোস্ট দিয়েছেন পাঠক সংখ্যা ও মন্তব্য সংখ্যা দেখে আমারই দুঃখ হচ্ছে। আমি খুব তাড়ায় ছিলাম ভাই সাহেব তাই ছোট মন্তব্য করে বিস্তারিত আলোচনা না করেই চিটাং দৌড় দিয়েছি।
আপাতঃ আমার সার্বিক কাজ শেষ হয়েছে।

আমার ছেলেমেয়েরা আপনার লেখা নিয়মিত পড়েন। আপনার জন্যও সব সময় দোয়া করি ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৫০

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:


আবার এসে মুল্যবান মন্তব্য রেখে যাওয়ায় খুশী হলাম ।
আপনাদের এলাকায় সে সময়ে গানের আয়োজন করা হতো, আর সে গানগুলো ছিলো গানের আদলে লোকগাঁথা, পুথিপাঠ, গীত ও গল্প বলা যার জন্য গাতক আসতো সুদূর ময়মনসিংহ থেকে। আস্ত একটি পুথিপাঠ হয়ে যেতো গানে গানে। মাঝে বিরতি দিয়ে গুড়ের চা, মুড়ি/টোস্ট বিস্কুট অথবা শিরনির ব্যবস্থা থাকতো। খুবই মুল্যবান তথ্য এখানে পরিবেশন করেছেন ।উল্লেখ্য আজ থেকে হাজার বছর পূর্বের ইতিহাস লোকগীতি গেটু যাত্রাপালা গান, আজ কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়ার পথে ।

সমাজ সংস্কারের ঐতিহ্যবাহী সেই সাংকৃতি জীবন চিত্র যাত্রাপালার মধ্যে রুপবান, বেহুলা লক্ষিন্দর, সাত ভাই চম্পা, বেল কুমার, নুনের মতো ভালোবাসা সহ কতো কতো লোক গল্প কথা যে সময়ে বাংলার আকাশে বাতাশে পল্লী বাংলার আকাশে বাতাশে ভেসে বেড়াতো তা এ যুগের তরুন প্রজন্ম চিন্তাও করতে পারবেনা। যাত্রা পালা বাংলার ঐতিহ্য , কালের বির্বতনে হারিয়ে যাচ্ছে , বাংলার ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন ।

আমার মনে পড়ে বাল্যকালের চাদুনী শিতের রাত । প্রচন্ড শীতে জমে যাওয়ার জোগাড়; কিন্তু তাতে কী? আমাদের চোখ-মন সবকিছুই তো নিবিষ্ট মঞ্চের দিকে। বাঁশের খুঁটিতে সাদা কাপড় প্যাঁচানো। এর ওপর ছাদ দেওয়া হয় কমলা-নীল রঙের শামিয়ানা দিয়ে। সেই শামিয়ানায় আবার ঝুলছে সুতোর রং-বেরঙের ঝালর। হেজাক লাইটের আলো চারদিকে , এই দৃষ্টিনন্দন মঞ্চে উঠে
উপস্থাপকের ঘোষণা শেষ হতে-না-হতেই বেজে ওঠে বাদ্য। বাদ্যের তালে-তালে সারিবদ্ধভাবে মঞ্চে আসেন কয়েক জন নারী। এই নারীরা মঞ্চে এসেই যাত্রাগানের চিরায়ত রীতি অনুযায়ী শুরুতেই কণ্ঠে তোলেন দেশাত্মবোধক গান ‘ও আমার বাংলা মা '' গান ।
রূপবানের যাত্রা পালা এগিয় চলে । কোন এক শুভক্ষণে বাদশাহর ১২ দিনের ছেলে রহিম এর সাথে ১২ বছর বয়সী রূপ য়ৌবনা কন্যা রূপবানের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বাসরঘরে কেঁদে বুক ভাসায় রূপবান আর মনের দুঃখে গান ধরে :
‘বাসরঘরে থাকো পতি গো,
ও পতি খেলো নানা ছলে গো/
আমার পতি গো
কে পরাবে তৈল কাজল রে,
ও আলস্না কে খাওয়াবে দুধ রে’।

ওইদিন বাসর শেষে রূপবান রহিমকে কোলে নিয়ে অজানার উদ্দেশে বনবাসে যাত্রা শুরু করে।
তার আগে গানের সুরে সুরে সবার কাছ থেকে এভাবেই বিদায় নেয় :
‘বিদায় দেন বিদায় দেন আববা গো/
ও আববা বিদায় দেন আমারে গো/
আমার আববা আববা গো।/
বিদায় দেন বিদায় দেন আম্মা গো/
ও আম্মা বিদায় দেন আমারে গো/ আমার আম্মা আম্মা গো
বারো দিনের স্বামী লয়ে গো ও আববা চললেম নির্বাসনে গো/
আমার আববা আববা গো ’

রাজ্য থেকে বেরিয়ে রূপবান এক নদীর ঘাটে এসে মাঝিদের পার করে দেওয়ার অনুরোধ জানায়। মাঝিরা দু-আনা পয়সা ছাড়া পার করবে না বলে জানালে রূপবান তাতে সম্মতি জানায়। তবে নদী পার হওয়ার পর রূপবান তার আঁচলে বেঁধে রাখা একটি স্বর্ণালঙ্কার তাদের বকশিস দেয়। মাঝিরা পিতলের টুকরো ভেবে সেখান দিয়ে যাতায়াতরত এক পথিকের কাছে বিক্রি করে দেন।

সময় গড়ায়। রহিম ধীরে ধীরে বড় হয়। তবে তার কাছে রূপবানের প্রকৃত পরিচয় অজানাই রয়ে যায়। রহিমের কাছে রূপবান নিজেকে তার দাসী বলে পরিচয় দেয়। রূপবান রহিমকে ডাকে ‘দাদা’ আর রহিম ডাকে ‘দিদি’। রূপবান রহিমকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়; কিন্তু রহিমের সঙ্গে কোনোভাবেই পড়ালেখায় কুলিয়ে উঠতে পারছিল না ছায়েদ বাদশার মেয়ে তাজেল।

এক সময় রুপবান গান ধরে
শুনো তাজেল গো মন না জাইনা পেমে মইরো না
রুপবানের গান ভাবলে মনে হয় পুরানা দিনগুলি আবার আসুক ফিরে ।

ধাইমাকে উদ্দেশ্য করে রুপবান গকায়
কিসের লেখা , কিসের পড়াগো
কিছুই বাল লগেনাগো দাইমা দাইমাগো
কি জানি কি শুনি কানেগো

পাড়ার লৌকে সবাই বলেগো
ও রূপবান তোমার স্বামী কোথায় ঘুরেগো
বাড়ীর দক্ষীন পাশে কিসের বাদ্য বাজেগো । ইত্যাদি ইত্যাদি

যাহোক, পুরান দিনের স্মৃতি নিয়ে অনেক কথা বলে ফেললাম ।
আপনার ছেলেমেয়েরা আমার লেখা নিয়মিত পড়েন শুনে ভাল লাগল ।
আমার লেখাগুলি মুলত এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের জন্যই ।
বই আকারে বেড় করার ইচ্ছা আছে ।

ভাল থাকার শুভেচ্ছা রইল ।



২১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৩:২৯

অনল চৌধুরী বলেছেন: আমি তখন একটু বড় ছিলাম। তাই এতোকিছু মনে আছে। টিভিতে জ্বীন-ভূত দেখে ভয় পেতাম না।
তবে আমাদের পরিবারের ছোটো শিশুরা খুব ভয় পেতো।
আপনার লেখার প্রেক্ষিতে ইউটিউবে গিয়ে এতোবছর পর হীরামন খূজে পেয়েছি। ওটা বিটিভির, নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল। পুরানো দিনের গল্পগুলির আবার দেখা যাচ্ছে।
কিভাবে ভুত-প্রেত তাড়িয়ে বেড়াতেন- সে ব্যাপারে বিস্তারিত লিখলে সবাই জানতে পারবে।
আগামী লেখাটা সেই বিষয় নিয়ে লিখবেন কি?

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৩৪

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



ভুত প্রেতে ভয় পেতেন না শুনে খুশী হলাম ।
বিটিভির ইউটিউব চ্যনেলে গিয়ে আমিও পুরানোদিনের
গল্পগুলি দেখছি ও শুনছি ।
সময় পেলে ভুত-প্রেত তাড়িয়ে বেড়ানোর গল্প শুনাবো ইনসাল্লাহ ।

শুভেচ্ছা রইল

২২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:২৯

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
ব্লগের এ বছরের জন্য অন্যতম একটি পোস্ট। সুপার-ডুপার হিট হওয়র কথা।

দুঃখ সামু আগের অবস্থানে নেই। ১০০টি কমেন্টও কম হয়ে যায় এই পোস্টের জন্য।

ইতিহাস যেন নিজেই উঠে েএসেছে ব্লগে। +++++

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ২:৪৯

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



আপনার সাধুবাদের জন্য ধন্যবাদ ।
ঠিকই বলেছেন সামু আগের আবস্থানে নেই ।
ব্লগে মনে হয় একটি মেরুকরন চলছে ।
পুরাতন অনেকের যাদেরকে ব্লগে পেতাম
তাঁদেরকে অন্যত্র সদর্পে বিচরণ করতে
দেখা গেলেও তাঁরা এ পথ মারাচ্ছেন না
একেবারেই । কিছুই করার নাই -
যার যাই মন চায় তাই কররে ভাই।
যাহোক, ভুল ভ্রান্তি মনোমালিন্য ঘুচে
গিয়ে ব্লগ সচল হোক এ কামনাই করি।
আপনিসহ সকলের প্রতি শুভেচ্ছা রইল ।

২৩| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ৯:১৩

সোহানী বলেছেন: আপনার এ লিখা একটা মাস্টার পিস (সব লিখাই বলতে গেলে)। আপনি কি দয়া করে বই এ হাত দিবেন। যাতে এ লিখাগুলো হারিয়ে না যায়। আপনার প্রয়োজন না হলেও পরবর্তী জেনারেশানের জন্য দরকার!!!!!!!!!

ময়মনসিংহ গীতিকা বা সমসাময়িক কোন কিছু পড়ার সুযোগ ছিল না। কিন্তু আমার স্নেহেময়ী মায়ের কাছেই বলতে গেলে গল্পগুলো শুনেছি। মহুয়া, চন্দ্রাবতী, কাজলরেখা সবই মায়ের মুখে শোনা। মা ছিলেন বই পাগল।

বাবার সংগ্রহে হাজার বই ছিল। এর মাছে ছেঁড়া মলাট বিহিন কিছু বই ছিল।অিনেক কষ্টে পাতা খুঁজে খুঁজে হাজার এক রাত্রি আরব্য উপন্যাসটা পড়েছিলাম।

আচ্ছা এ গিলা আমাদের বাসায় ছিল। আপনার মতই মা বলেছিল কনেদের এ দিয়ে গোসল করাতে হয়। মেরুন খয়েরী রং এর বাহিরটা। পরে আমাদের বিয়ের সময় সেটা নিয়ে কেউ ভাবেনি.........হাহাহাহা আফসোস। তাহলে হয়তো আরেকটু উজ্জল দেখাতো বিয়েতে :P

কাকের বাসায় যে যাবতীয় কিছু পাওয়া যায় তাও শুনেছি মায়ের বাসায়। যদিও কখনো দেখার সুযোগ হয়নি। এখন আমি দেখি স্কুয়েরেল এ বাসা। আমার জানালার পাশের গাছে দু'টো বাসা। খুব মনোযোগ দিয়ে ওদের কাজ দেখি। খুব ভালোলাগে ওদের কাজকর্ম।

১১ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১:২৪

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:


এসে দেখে মুল্যবান মন্তব্য রেখে যাওয়ার জন্য ধন্যবাদ ।
বই লেখায় উৎসাহ দেয়ায় খুশী হলাম । ব্লগে প্রকাশিত কিছু লেখা নিয়ে একটি বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি ।
দোয়া করবেন বইটি যেন আলোর মুখ দেখে ।
আপনার মা বই পাগল ও সংগ্রহকারী ছিলেন শুনে খুশী হলাম । বেশি পুরাতন বইগুলিকে ভাদ্রমাসে প্রখর রোদে
মেলে দেয়ার জন্য বলবেন। তানা হলে পোকায় আনেক পাতা খেয়ে ফেলবে । তবে খেয়াল রাখতে হবে বই যেন
কাকে নিয়ে না যায় । অবশ্য কাক বলতে গেলে এখন দেশ হতে বিলীন হওয়ার পথে ।

আরব্য রজনী ‎ কিতাব আলফে লায়লা ওয়া-লায়লা) মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশীয় গল্প এবং লোককথার সংকলনটি আপনার মায়ের সঙগ্রহশালায় আছে জেনে খুশী হলাম । উল্লেখ্য ইসলামের স্বর্ণযুগে আরবিতে সংগৃহিত গ্রন্থটির মূল নাম এক হাজার এবং এক রাত হলেও এটি এরবিয়ান নাইটস নামেও সমধিক পরিচিত।পশ্চিম, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়া এবং উত্তর আফ্রিকা হতে লেখক, অনুবাদক ও গবেষকগণ বহু বছর ধরে আরব্য রজনীর গল্পগুলো সংগ্রহ করেছেন। মূলত প্রাচীন ও মধ্যযুগের আরব, পারস্য, ভারত, মিশর ও মেসপেটমিয়ার লোককাহিনী ও সাহিত্য এ গল্পগুলোর উৎস হলেও এর মাঝে কিছু ভারতীয় উপাদান বিদ্যমান। তাই এর মাঝে আমাদের দেশাঞ্চলের কিছু গল্পকথাও অন্তর্ভুক্ত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয় ।

আরব্য রজনীর সকল সংস্করণেই সম্রাট শাহরিয়ারকে তার স্ত্রী শেহেরেযাদ কাহিনীগুলো শোনায়।

ছোট সময় আমাদের নানী দাদীরাও অনেক শাহজাদা শাহজাদী ও ভয়ংকর রাজা বাদশা , ভুত প্রেত , দেও দানব, রাক্ষসের গল্প শুনায়ে আমাদেরকে ঘুম পাতাতেন । সেগুলির কাহিনী আলেফ লায়লা ওয়া লাইলা থেকে গুণে মানে কোন অংশেই কম নয়।
আরব্য রজনীর গল্প আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ, আলী বাবা এবং চল্লিশ চোর আর সিন্দাবাদের সমুদ্রযাত্রা গল্পগুলো মুল আরব্য রজনীতে আন্তর্ভুক্ত ছিলনা। মধ্যপ্রাচ্যের এসব লোককাহিনী আরব্য রজনীর মাঝে অন্তর্ভুক্ত করেন ইয়োরোপীয় অনুবাদকগণ। এই গল্পগুলি আমাদের স্কুলের সহায়ক পাঠ্য বইয়ে অন্তরভুক্ত ছিল । আপনাদের সময় ছিল কিনা জানা নেই আমার । ভাল করে গবেষনা করলে দেখা যাবে আমাদের দেশের অনেক প্রাচীন লোক কাহিণী হয়তবা আরব্য রজনীর মধ্যে ঢুকে বসে আসে, যার খবর আমরা এখনো জানিনা ।

রূপে গুণে এমনিতেই আপনি অনেক উজ্জল , গিলা লাগানোর দরকার আগেও ছিলনা
এখনো নেই , ব্লগের লিখাই আপনার জন্য গিলার কাজ দিবে :)

আপনার জানালা দিয়ে দেখা যাওয়া স্কুয়েরেলের বাসার দৃশ্য খুব সুন্দর হয়েছে ।
আপনার হয়ত মনে আছে বাসার সামনে বাগানে টিউলিপ ট্রি লাগানোর জন্য বলেছিলাম।
দেখেন সামারে টিউলিপ ট্রিতে কি সুন্দর করে টিউলিপ ফুটে আর
শীতে ফুল ঝরে গেলে পাতাবিহীন গাছে লাইটপোষ্টের আলোতে
স্কুয়োরেলের বাসা সমেত গাছ দেখতে কি সুন্দর লাগে ।


আপনার লাগানো ঘরে বাইরের ফুলের ছবি দেখাবেন কিন্তু !
হাজার গোলাপ ফুলের গাছটি মনে হয় লতায় পাতায় ফুলে
আরো বড় হয়ে বাড়ীর উঠান আর দেয়াল ঢেকে গেছে ।

শুভেচ্ছা রইল

২৪| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৫৬

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




সোহানী আপা,
১৯৭৮ সনের কথা তখন ডোভ, ইয়ার্ডলে, নিভিয়া সাবান বাংলাদেশের জন্য একটি ব্যাপার স্যাপার ছিলো, আমি দিঘীতে গোসল করতে নেমেছি ১৫০ গ্রাম ওজনের ইয়ার্ডলে সাবান কিভাবে কাক খামচা দিয়ে নিয়ে উড়ে গেলো তা বিরাট চিন্তার বিষয়।ডঃ এম এ আলী ভাই সময়ের মানুষ তিনি সময়ের সাথে চলা এক পথিক। তিনি জীবনে যা দেখেছেন তা অবস্যই বিশাল অভিজ্ঞতার উপন্যাস প্রবন্ধ ও জীবনি হতে পারে।

ভাই সাহেব, সেই সাবান উদ্ধার করতে আমরা রিতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলাম। কারণ সাবান চলে গেছে শাল গাছের চুড়ায় সেই কাকের বাসায়।


১১ ই ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১:৪৯

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:

আপনার মন্তব্যটি আশা করি সোহানী'‌পুর নজরে আসবে ।

ঠিকই বলেছেন ভাই , কাকের বাসা থেকে লুন্ঠিত সম্পদ উদ্ধার করা যুদ্ধ ঘোষনারই সামিল ।
আমার মনে পরে ছোট সময় খেলার সময় মাঠের বাইরে চলে যাওয়া ছোট একটি ফুটবল কাক তার বাসায় নিয়ে যায় ।
বদ্দিরাজ গাছের মগ ডাল হতে সেটি উদ্ধার করতে গিয়ে মরনাপন্ন অবস্থা হয়েছিল । গাছে উঠে কাকের
বাসার কাছে যেতে না যেতেই শত শত কাক কা কা করতে করতে এসে ঘিরে ধরেছিল । কাকের বাসায়
চেয়ে দেখি সেখানে রয়েছে কাকের দুটি ছা । আর যায় কোথায় ! কাকেরা যেন পারলে আমার মাথার চুল ছিড়ে
নিয়ে যায় । ছেড়ে দে মা কেঁদে বাচি অবস্থা , কোন মতে জান নিয়ে গাছের নীচে নামি । কাকেদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ
সংগ্রাম দেখলে বিস্ময়াভুত না হয়ে পারা যায় না !!

শুভেচ্ছা রইল

২৫| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৫:১৪

সোহানী বলেছেন: আপনার বই প্রকাশের খবর শুনে খুব ভালো লাগছে। যাক্ আমার চেচাঁমেচি স্বার্থক ;)। আপনারা গুনীজন যদি বই বের না করেন আমার মতো ছাপোষা কিভাবে এ পথে হাটে, বলেন? আগেতো গুরু যাবে তারপর শিষ্য B-))

আপনার চমৎকার এ গাছ দেখে অভিভূত! এ বছর সামারে কোন গাছ লাগাতে পারিনি। করোনার কারনে চারা সংগ্রহ করতে পারিনি। আর টিউলিপ গাছের বাল্ব রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু কেন যেন এর পর আর হয়নি। এ জানুয়ারীতে আবার লাগাবো। আশা করি এবারও আগের মতই ফুল পাবো।

বই আগে ভাদ্র মাসে রোদে শুকাতো কিনা তা জানা নেই। বা কখনো দেখিনি। তবে এখন আর তার কিছুই কালেকশানে নেই।্এবার দেশে যেয়ে দেখি হাতে গোনা ছেঁড়া কিছু বই পরে আছে। মা ও নেই, কিছুই নেই। যে মমতায় সব কিছু আগলে রাখতেন তা এখন কে রাখবে?

ছোটবেলায় ছিলইতো ওই ঠাকুরমার ঝুলি আর আলিফ লায়লা। মা দাদী নানী সবার মুখে মুখে সে গল্প শুনেই বড় হওয়া। তারপর শুরু করলাম রাশিয়ান গল্প, গ্রীম ব্রাদার্স এর ফেইরি টেইল আর ইশপ। ব্যাস টুপ করে বড় গেলাম কখন বুঝতেই পারিনি।

আর হাঁ, গিলা লাগানোর দরকার আছে বলেইতো ফেয়ার এন্ড লাভলী আর লাক্স ওয়ালারা ব্যবসা করে যাচ্ছে। :P

@ঠাকুরমাহমুদ ভাই, ১৫০ গ্রাম ওজনের ইয়ার্ডলে সাবান আর আলী ভাইয়ের বল উদ্ধারের গল্প শুনে হাসতে হাসতে শেষ। আপনাদেরতো সাহস কম নয় কাকের বাসায় হানা দেন। কাকেরও তো ফর্সা হতে ইচ্ছে করে, তার বাচ্চাদের সাথে বল খেলতে ইচ্ছে করে...... তাই নয় কি!!!!!

১১ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৮:৪৮

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



আবার এসে মুল্যবান মন্তব্য রেখে যাওয়ার জন্য ধন্যবাদ ।
গিলার প্রয়োজনীয়তা আছে শুনে গিলা নিয়ে একটি পোষ্ট
দেয়ার কথা ভাবছি ।
শুভেচ্ছা রইল

২৬| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৫:০৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



বিজয় দিবসের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
আমরা কোন এক বছর একত্রে বিজয় দিবস পালন করবো।
আপনি ভালো থাকুন।

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৭:০২

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



আপনার প্রতিউ রইল বিজয় দিবসের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা ।
দিন ক্ষন ঠিক করুন , বিজয় দিবস পালন করব একত্রে ।
ভাল থাকার শুভকামনা রইল ।

২৭| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১১:০২

মলাসইলমুইনা বলেছেন: আলী ভাই,
আপনার এই সিরিজের অন্য লেখাগুলো খুশির সাথেই পড়েছি কিন্তু এই লেখাটা পড়তে পড়তে একটু কষ্টও লাগলো ।
এইচএসসিতে আমাদের একটা প্রবন্ধ ছিল ডক্টর শহীদুল্লার পল্লী সাহিত্য নামে । ঢাকা কলেজে আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ স্যার পড়াতেন আমাদের বাংলার সেই ক্লাসটা । আপনি যুগ আগে এই লেখাটা লিখলে আর আমার তখন পড়া হলে আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ স্যারের ক্লাসে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করতে পারতাম ময়মনসিংহ গীতিকা নিয়ে সেটা নিশ্চিত। একটু মিস টাইমিং হয়ে গেলো লেখাটার সাথে ! ডক্টর দীনেশ্চন্দ সেন ময়মনসিহ গীতিকার সংকলন করেছেন সেটাই জানতাম কিন্তু চন্দ্রকুমার দে সম্পর্কে কিছুই জানতাম না । এটা আপনার লেখাটা পড়ে জানা হলো।কাজল রেখা আমাদের স্কুলে কোনো ক্লাসে পাঠ্য ছিল (কোন ক্লাসে সেটা ভুলে গেছি), চন্দ্রাবতীর কাহিনীও ছোট বেলায় পড়া । কিন্তু ময়মনসিংহ গীতিকার সাথে আরো গারো পরিচয় কিন্তু কখনোই হয়নি । আসলে বাংলাদেশের লোক সাহিত্য শহুরে মানুষদের কাছে মনে হয় সব সময় আড়ালেই থেকে গেছে । যাক অনেক ভালো একটা লেখা হয়েছে আমাদের পল্লী সাহিত্য নিয়ে । সিরিজের অন্য লেখাগুলোতেও কমেন্ট করবো ইনশাল্লাহ দ্রুতই । ভালো থাকুন ।

২২ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:২৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



এই সিরিজের অন্য লেখাগুলো খুশির সাথে পড়েছেন শুনে ভাল লাগল । তবে এই লেখাটা পড়তে পড়তে একটু কষ্ট লাগার কথা শুনে দু:খিত হলাম । আমার লেখা পাঠে কারো কষ্ট হলে সে দায়তো আমারই । আমার লেখার দুর্বলতার যে কোন সীমা পরিসীমা নেই সেটা আমিউ ভাল জানি । কষ্ট নিয়েও পাঠ করে গেছেন দেখে আপ্লুত হলাম ।

ডক্টর শহীদুল্লার পল্লী সাহিত্য নামে প্রবন্ধটি আমাদের সময়ে নবম-দশম শ্রেণীর আবশ্যিক বাংলাপাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভুক্ত ছিল । খুবই পান্ডিত্য পুর্ণ লেখা , আমাদের স্কুলের হেড মাষ্টার পড়াতেন বাংলা সাহিত্য । উনার কাছে ডক্টর মুহাম্মদ শহিদুল্লার কথা অনেক শুনেছি । শুনেছি তিনি নাকি ১৭টি ভাষা জানতেন , শুধু যে জানতেন তাই নয়, তিনি সে সব ভাষার উপর পন্ডিতও নাকি ছিলেন ।
ডক্টর শহিদুল্লার কথায় আমার একটি পুরাতন সুখ স্মৃতির কথা মনে পড়ে যায় । ডক্টর শহিদুল্লাহর কথা শুনে আমরা সবাই হেড স্যারকে আনুনয় বিনয় করে জেকে ধরলাম এবারকার আমাদের স্কুলের বার্ষিক পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করে তাঁকে নিয়ে আসতে হবে । স্যার রাজী হলেন, তবে শর্ত দিলেন এবার ইন্টার স্কুল ফুটবলে যদি আমাদের স্কুল চ্যম্পিয়ন হয় তাহলেই কেবল তিনি ড।শহিদুল্লাহকে প্রধান অতিথি করে নিয়ে আসার জন্য সর্বাত্তক প্রচেষ্টা চালাবেন । আল্লার রহমতে সে বছর সকলের সর্বাত্বক প্রচেষ্টায় আমাদের স্কুল সাবডিভিশন ইন্টারস্কু ল ফুটবল প্রতিযোগীদতায় চ্যাম্পিয়ন হয় । আর যায় কোথায় । স্যারকে সকলে ধরে বসলাম আমরা ডক্টর শহিদদুল্লাহকে স্কুলের বার্ষিক পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে দেখতে চাই । স্যার ছিলেন খুবই করিতকর্মা পুরুষ । তিনি ডক্টর শহিদুল্লার সাথে যোগাযোগ করে সফল হলেন । নির্ধারিত দিনে তিনি আসবেন । উনাকে বরন করে স্কুলের মাঠে সামিয়ানা টেনে মনঞ্চ তৈরীর জন্য লেগে গেল মহা তোরঝোর । দশম শ্রেণীর কেপ্টেন হিসাবে আমার উপরে দায়িত্ব বর্তিল ছোট একটি দল নিয়ে বাড়ী বাড়ী ঘুরে স্কুলের মাঠে মঞ্চ ও সামিয়ানার খুটির জন্য প্রয়োজনীয় বাঁশ সংগ্রহ করা । আমার বাড়ী ছিল স্কুলের কাছে নদীর পাড়ে । নদীর কুল ঘেসে আমাদের একটি বড় বাঁশের ঝাড় ছিল । কে যায় মানুষের বাড়ী বাড়ী বাঁশ মাগতে . দাদার কাছে কাকুতি মিনতি করে খান পাঁচেক বাঁশ কাটার পারমিশন নিয়ে ৫টির জায়গায় খান দশেক বড় বরাক বাঁশ কেটে কঞ্চি ছেটে বাঁশগুলিকে ভেলারমত করে একত্রে বেধে নদীতে ভাসিয়ে লগি ঠেলে নিয়ে গেলাম স্কূলের ঘাটে।
একটি বাঁশের ভেলা ।

মন্ঞ্চ হলো । নির্দিষ্ট দিনে ডক্টর শহিদুল্লাহ এলেন , অনুষ্ঠানটিকে আরো বর্ণিল ও আকর্ষনীয় করেছিলেন স্যার অন্য সকলের পরামর্শে । অনুষ্ঠানে ঢাকা হতে এলেন ঢাকা বেতারের শিল্পী মাহমুদুন নবি ও খুরশীদ আলম ,মহিলা শিল্পিউ একজন এসেছিলেন নাম মনে নেই )। বিকালে অনুষ্ঠান শুরুর আগেই স্কুলের বিশাল মাঠ কানায় কানায় জনতায় ভরে গেল । আগে জাাতীয় সংগীত, তার পর ভাষন তারপর সংগীতানুষ্ঠান । হেডমাষ্টার স্যার ও স্থানীয় গন্যমান্যদের ভাষনের পরে প্রধান অতিথীর ভাষন দিতে দাঁড়ালেন ডক্টর মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ।আমরা উন্মোখ হয়ে আছি তার মুল্যবান কথা শুনার জন্য । স্বাগত ভাষনের পরেই তিনি শুরু করলেন পল্লী সাহিত্য প্রসঙ্গ কথায় । সেকি ভাষন তার কথায় আমাদের মনে হচ্ছিল আমাদের দেশের আনাচে কানাচে আদরে আনাদরে ছড়িয়ে থাকা গ্রাম বাংলার প্ল্লীগাথা , পুথির কথা , কবিগান সবি নাকি জগতের সেরা সাহিত্যের একটি । ঐ সময় তিনি ময়মনসিংহ গীতিকার কথাও বলেছেন , বলেছেন ময়মনসিংহ গীতিকায় থাকা একটি রূপকথা ‘কাজল রেখাও’ ময়মনসিংহ গীতীকায় থাকা কাহিনীরই একটি । আমাদের পল্লী সাহিত্য নিয়ে বিদেশীরাও প্রসংসায় পঞ্চমুখ । তাঁর ভাষণ শুনে গর্বে আমাদের বুক ভরে যায় ।

গ্রাম বাংলার প্রকৃতিতে ছড়িয়ে থাকা আনেক গাছ গাছড়ার প্রকৃত নামের সাথেও তিনি পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন । বলছিলেন এই মাঠেরই আনাচে কানাচে গজিয়ে উঠেছে কত কন্টকময় ঘাসফুল , আমরা কি তার নাম জানি , যেমন পায়ে চলার পথে গায়ের কাপড়ে বিধে লেঙরা জাতীয় ছোট ফুলের কাটা , কয়জনই বা এর আসল নামটি জানি । তিনি বললেন এই লেংরাই নিলাজী ফুল । অবহেলায় তাকে পায়ে মারিয়ে গেলেও সাথে করে অগনিত নিলাজীকে পড়নের কাপড়ে ফুটিয়ে সাথে করে ঘরে নিয়ে যাই । ঘরে গিয়ে একটি একটি করে কাপড় হতে উঠিয়ে ফেললেও পরের দিন ঠিকই তাকে আবার পায়ে মারিয়ে গিয়ে ঘরে তুলে নিয়ে যাই । তাঁর বক্তৃতার কথাগুলি মনে এমনই ধরে ছিল যে প্রায় অর্ধ শতাব্দি পরেও সে কথা আমার মনে ছিল । তাই এই ব্লগে প্রকাশিত আমার একটি কবিতাকচুরী পানার সাথে ফুলেরা কথা কয় তে
জুরে দিয়েছিলাম নিলাজীকে নিয়ে কটি ছত্র ।
নিলাজী ( ল্যাংরা) ফুলটিও অতি কষ্টে বলে দু:খ করুনা বন্ধু
পায়ে মারিয়ে গেলেও জড়িয়ে ধরে আমাকে নিয়ে যায় তুলে
যুবকের লুংগীর খোচায় আর তম্বী তরুনীর শাড়ির আঁচলে
নখের চিমটিতে একটি একটি করে তুলে ডাস্টবীনে ফেলে
দু:খ কষ্ট পাইনা মোটেও জানেনা সে আমি আসবই ফিরে
পরদিন জড়িয়ে ধরবে আমায় ঘাস মারিয়ে চলার কালে ।

মন্তব্যের ঘরে দেশ বরেন্য পন্ডিত ও বহুভাষাবিদ ডক্টর মুহাম্মদ শহিদুল্লাহর কথা উঠে আসায় তাঁর প্রতি জানাই প্রগাড় শ্রদ্ধাঞ্জলী । প্রখ্যাত অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সা্ঈদ স্যারের প্রতিও রইল শ্রদ্ধাঞ্জলী ।

সিরিজের অন্যান্য লেখার উপরে আপনার মুল্যবান মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম ।

শুভেচ্ছা রইল

২৮| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২২

জুন বলেছেন: আমি যখন ক্লাশ টেনে পড়ি সে সময় আমাদের বাসায় এক গৃহকর্মী আসলো, তার বাড়ি কুমিল্লা ময়নামতি এলাকায়। সে অনেক বছর আমাদের বাসায় ছিল। স্বামী পরিত্যক্ত হলেও সেই স্বামীর জন্য তার অনেক টান ছিল। আমাদের রান্নাঘরটা ছিল মুল বাসা থেকে আলাদা। সেখানে সে থাকতো এক বুড়ী খালার সাথে। সন্ধ্যার পড়া শেষ হলেই আমি আর আমার ছোট পিঠাপিঠি বোনের আস্তানা ছিল সেই রান্নাঘর। প্রধান আকর্ষণ ছিল তার মুখ থেকে কত শত গ্রামীন রূপকথা, কত গল্প,কত গ্রামীণ ছড়া, গান শোনাতো। এখন মনে হয় যদি লিখে রাখতাম তবে অবশ্যই একটা গ্রামীন সাহিত্যের সম্পদ হতো। সেই দুখী নায়িকার ভালোবাসার পরাজয়ের গল্প বলতে বলতে তার দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পরতো। গান গাইতো পাড়াগায়ের টান মাখা গলায় এক অদ্ভুত মিষ্টি করুন দুঃখের গান যা শুনে আমাদের দুবোনের এক অজানা কষ্টে বুকের মাঝে টনটন করতো , অশ্রু টলটল করতে থাকতো চোখে ডঃ এম এ আলী ভাই। তাকে ছেড়ে যাওয়া স্বামীকে ফিরে আসার জন্য কাকুতি মিনতি করে আমাদের দিয়ে চিঠি লিখাতো তাতে কত শ্লোক, কত পদ্য যে থাকতো। সত্যি আপনার লেখা পড়ে সেই মেয়েটির কথা মনে পরছে ভীষণভাবে।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ২:৩৯

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:


আপনার বাড়ীর গৃহকর্মী গল্প ছড়া গান শুনাতো শুনে ভাল লাগল ।
ঠিকই বলেছেন আগের দিনের বয়স্ক মানুষেরা তিনি গৃহকর্মী কিংবা নানী দাদী যেই হোন না কেন জানতেন অনেক গল্প কথা ।
গল্পের মাঝে সুর করে গাইতেন অনেক অনেক পল্লী গানের কথা । বয়স্কদের কাছে শুনা গল্পের কথা আমার কিছু কিছু
এখনো মনে আছে । সেগুলি নিয়ে লিখলে প্রায় প্রতিদিনই সামুতে দেয়া যাবে কিছু গল্প কথা । আমার মনে পরে আমাদের
গ্রামে ভেলার বাপ নাম এক জন বেশ বয়স্ক দিন মজুর ছিলেন । তিনি খুব ভাল রূপকথার গল্প বলতে পারতেন । একবার তাকে
দিয়ে গল্প বলাতে শুরু করলে একটানা দুতিন ঘন্টা লাগিয়ে সেই গল্প সাথে সেটাই গান সুর করে গাইতে পারতেন । ছোটকালে
দেখেছি আমাদের বাড়ী লাগোয়া খালের পাশে জলাসয়ে পানিতে জাক দেয়া পাট গাছ থেকে পাটের ছাল ছাড়ানোর সময়
দিন মজুরগন দল বেধে বসে পাটের আটি হতে পাটের আশ ছাড়াত, তখন ঘন্টার পর ঘন্টা তিনি সকলকে রূপ কথার গল্প শুনিয়ে তাদেরকে ক্লান্তি ভুলিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে সহায়তা করেছেন ।

পঁচানো পাট গাছ হতে পাটের সোনালী আশ ছাড়ানো একটি বেশ পরিশ্রমী কাজ । মন ভোলানো গল্প শুনিয়ে কৃষি কর্মীর কষ্ট ভোলানো সত্যিই ছিল প্রসংসনীয় । কিন্ত আজ কি দেখি! দেশের অনেক জায়গায় দেখা যায় খেটে খাওয়া দরিদ্র নারী কৃষি কর্মীরা কষ্ট করে পাটের আশ ছাড়িয়ে বিনিময়ে পাচ্ছেন শুধু পাঠসোলা ।

আগের দিনের নানী দাদীরা সুন্দর সুন্দর গল্প কথা শুনাতেন আর আমাদের এই আমলের কিংবা আমরা যখন নানা, নানী, দাদা দাদু হব তখন হয়তবা নাতী নাতনীদেরে ডেকে বলব -
বল দিকি আমাদের নাতি আর পুতিরা
আমাদের ঝুলি থেকে উঁকি মারে কাহারা?
ব‌ই থাকে, থাকে পেন আর থাকে লেপটপ,
মাউসের সুড়সুড়ি হাতে পরে করে খপখপ ।
আর আছে আইপড ঝোলে তার দু-সূতো
গান আছে সেভ করা রক-পপ কত শত ।
আইফোন সামসুং আছে কত লুকিয়ে আর
লেখা আছে গল্প কথা ফেবুতে দেখ চোখ পাকিয়ে ।
সূতোবাঁধা চশমা ফেলে দিয়ে সজোরে
পড়ে আছি আপটিক লেন্স দুচোখের ভেতরে ।
ঝুলিতে আছে আরো কত শত হরিপদো-রাউলিং
রাম-সীতা লাইলি মজনু আরো কত যে ডার্লিং ।
বুড়াবুড়ি দিনভর টিভিতে সিরিয়াল দেখি বাড়িতে
ফোনের লাইনে থাকি দুটি কথা ক‌ইতে ।
গাড়িতে চলতে থাকে অবিরত রেডিও,
মেসেজ লেখি নখের ডগায়,শুধু তোমরা পড়িও।
নিজেরা্ই এখন গল্প শুনি সেলুলার ভজনে
কি করে বুঝাই এখন নাতি-পুতি-স্বজনে ?

যাহোক, আপনি পুরান দিনের সুন্দর সুন্দর গ্রামীণ গল্প গুলি লিখে না রাখলেও লিখে চলেছেন অনেক নতুন নতুন গল্প কথা । বয়স্ক গৃহকর্মীদের বিজ্ঞতা নিয়ে এইতো দিন কয়েক আগে মনোরম একটি পোষ্ট দিয়েছেন সামুতে ।

শুভেচ্ছা রইল

২৯| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১০:০৮

আখেনাটেন বলেছেন: অসাধারণ বললেও কম বলা হবে। গ্রাম বাংলায় এভাবে কত শত যে রত্ন ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল একসময়।

আমরা যখন বেশ ছোট ছিলাম তখন গ্রামে রংপুর অঞ্চল থেকে অনেক মানুষ আসত আমন ধান বপন করার জন্য। তারা সারাদিন কাজ শেষে রাতে বসাতো পালাগান। তার মধ্যে বিখ্যাত ছিল 'মানিকচাঁনের কিচ্ছা', 'কাজল-রেখা' ইত্যাদি। এইসব চমৎকার রূপকথাগুলো এখন আমাদের নয়া প্রজন্মের কাছে অচ্ছুত। এখন এরা আছে জাপানের ডোরেমন জাতীয় কিছু নিয়ে। আপসোস।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৩১

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



মুল্যবান মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।
পোষ্টটি অসাধারণ অনুভুত হওয়ার কথা শুনে ভাল লাগল ।

রংপুর অঞ্চলের 'মানিকচাঁনের কিচ্ছা'র কথা আমি শুনেছি । আমাদের দেশের
লোক সাহিত্য ও লোক সংস্কৃতিতে রংপুরের অবদান অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আর এসব কর্মকান্ড সম্পাদিত হয়েছে
রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায়। আঞ্চলিকতার দিক দিয়ে ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালীর বিপরীত প্রান্তের লোকসঙ্গীত।
ভাওয়াইয়া রংপুরের লোকসঙ্গীত ধারায় সর্বাপেক্ষা উজ্জবল ও সমৃদ্ধ শাখা। ভাওয়াইয়া লোকসঙ্গীতের ধারায়
ঐ অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদের বিভিন্ন পেশার মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, প্রেম-ভালোবাসা,
বিরহ-বেদনাকে আশ্রয় করে লোকের মুখে মুখে রচিত এবং বিপুল আবেদনময় সুরে বাঁশি ও দোতরার
মতো বাদ্যযন্ত্র যোগে গীত হয়ে আসছে।রংপুর অঞ্চলের ভাওয়াইয়া- ওকি গাড়িয়াল ভাই, কি ও বন্ধু
কাজল ভোমরা , তোরসা নদীর ধারে ধারে প্রভৃতি শুনলে মন জুরিয়ে যায় ।

রংপুরের লোক সংস্কৃতি ও সঙ্গীতের ধারায় মেয়েলী গীত- বিয়ের গীতগুলিও উল্লেখযোগ্য ।
রংপুরের মেয়েলী গীত মেয়েলী আচারঅনুষ্ঠানের অনেক বিষয় নিয়ে রচিত ও গীত। যেমন বিয়ে,
সাধভক্ষন, অন্নপ্রাসন, নবজাতকের ক্ষৌ্র কাজসহ বিয়ের বিভিন্ন পর্বকে ঘিরে এই গীতগুলো রচিত
এবং নৃত্যযোগে আনন্দমুখরতার মধ্যদিয়ে গীত হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। রংপুরের অনেক বড়ীতে
বিয়ে অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত অতিথি হিসাবে মেয়েলী গানগুলি আমি মুগ্ধহয়ে শুনেছি ।

রংপুরের লোক সঙ্গীতের ধারায় আরো আছে হুদমার গান, জগেরগান, যোগীর গান, গোয়ালীর গান,
ক্ষ্যাপাগান, জারীগান, মালশা গান, পালাগান, কাহিনীগান লোকসঙ্গীত রংপুরের উল্লেখযোগ্য সঙ্গীত ধারা।
এ ধারায় রয়েছে অসংখ্য পালাগান। যেমন, নসিমন সুন্দরীর পালা, গুনাইবিবি, অমমূলা কন্যা, নেকোবিবি,
কলিরাজা, চিনুবিনু, আরো অনেক । রংপুর এলাকার লোকগাথার ঐতিহ্যগুলির সংরক্ষন অতি প্রয়োজন ।
তা না হলে কালের গর্ভে সে গুলি এককদিন হারিয়ে যাবে ।

শুভেচ্ছা রইল

৩০| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:৩১

জুন বলেছেন: আলী ভাই আমি কিন্ত বলেছি আমাদের গৃহকর্মী ছিল বছর ২৫/ ৩০ এর, বুড়ি ছিল তার খালা। মেয়েটির স্বামী আরেকটি বিয়ে করে চলে গিয়েছিল কিন্ত তার বিশ্বাস ছিল তার স্বামী ফিরে আসবে । তার মেঠো সুরের করুন গানগুলো ছিল কিন্ত সেই তার ফিরে আসার প্রতীক্ষায় যেমন একটা লাইন মনে পড়ে
পথের পানে চাইয়া থাকি,
মেকুর ( বিড়াল) দেইখা ডরায় উঠি
প্রানের বন্ধু গো ,
বন্ধু তুমি আইবা কোন মাসে ---

আর তার বলা গল্পগুলো ছিল মুলত লোকজ কাহিনী নির্ভর যেমনঃ- আলোমতি প্রেম কুমার, সোনাভানের কিসসা এই জাতীয় যা মনে হয় সে যাত্রা-পালায় দেখেছিল।
অনেক ধন্যবাদ ভারী সুন্দর এক প্রতি উত্তরের জন্য :)

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৫১

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



আমি মনে করেছিলাম সেই ঘরে আপনি তার খালার কাছে গল্প শুনেছেন ।
সম্ভবত লোকগাথা ভিত্তিক সরস গল্পগুলির কথা ভেবে আমি একটু অন্যমনস্ক
হয়ে ছিলাম । যাহোক , পুণরায় এসে আমার ভ্রান্তিটুকু ধরিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ ।
বলেছেন মেয়েটির স্বামী আরেকটি বিয়ে করে চলে গিয়েছিল কিন্ত তার বিশ্বাস ছিল তার
স্বামী ফিরে আসবে।তার স্বামী কি শেষতক ফিরে এসে মেয়েটির দু:খ ঘুচিয়েছিল?

এ প্রসঙ্গে আমার মনে পরে ঢাকায় আমার এক নিকট আত্মিয়র বাসায় বেশ বয়স্ক এক গৃহকর্মী ছিলেন ।
তার মাথায় খানিকটা ছিট ছিল । তার দেশের বাড়ী ঘরের অবস্থা বেশ ভাল্ই ছিল । বাপ মার একমাত্র মেয়ে
ছিল বলে বর ছিল ঘর জামাই । মাথার ছিটের কারনে তার স্বামী তাকে ছেড়ে যায় । সেও রাগ করে বাড়ী ছেড়ে
ঢাকায় চলে আসে । থাকার জন্য আশ্রয় পায় আমার আত্মীয়ের বাসায় । সে আগের দিনের মেয়েলী গান তথা
বিয়ের গান ভাল গাইতে পারত । কোন বাড়ীতে কারো মেয়ের বিয়ের সময় বিশেষ করে গায়ে হলুদের দিনে
গানের জন্য তার নাকি ডাক পড়তই । তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম তুমি বাড়ী ছেড়ে এসে এখানে কাজ কর কেন?
সে বলল বর নাকি তাস আর জুয়া খেলে , কাজকর্ম কিছুই করেনা , ঘর জামাই হলে নাকি বরের কোন কাজ করতে
হয়না । এই নিয়ে নাকি সে আর তার বরের সাথে ঝগড়া লেগেই থাকতো । শেষতক বর তাকে ছেড়ে নীজের বাড়ী
চলে যায় । এবং সেখানে গিয়ে নাকি আরেক বিয়ে করেছে । এর পর থেকে সেও তার বাড়ী ঘর ছেড়ে চলে আসে ।
আমি বললাম এখন যদি সে তার নতুন বউকে নিয়ে তোমার ফেলে আসা খালি ঘরে এনে তুলে তখন কেমন হবে ।
সে বলল "ঘরে ভিতর কাটা গাছ দিয়ে ভরে তালা বন্ধ করে রেখে এসেছে, গোলামের পুত যেন সেই ঘরে নতুন
বউ নিয়ে ঢুকতে না পারে " । কথা শুনে হাসব না কাদব ভেবে পাচ্ছিলাম না। পরে জানা গেল সত্যিই সে ঘরে কাটযুক্ত
গাছ দিয়ে ভরে রেখে তালা বন্ধ করে রেখেছে । সে তার বিগত দিনের স্মৃতি মনে করে ক্ষনে হাসত , ক্ষনে কাদত , ক্ষনে
গুনাই বিবির, পদ্মাবতীর গানের কলি মুখে টেনে গান গাইত । আসলেই মানুষের দু:খ কষ্টের কোন সীমা পরিসীমা নেই ।

বিড়ালের আরেক নাম যে মেকুর তা জানা ছিল না ।
মন্তব্যের ঘরে দেয়া আপনার গানের কথার উদ্ধৃতি
হতে তা জানতে পারলাম । গানটিউ খুবই সুন্দর ।
হতভাগা মেয়েটির দু:খের কথা শুনে ব্যতিথ হলাম।
আশা করি এই গুনবতী মেয়েটি শেষতক সুখের মুখ
দেখেছিল ।

শুভেচ্ছা রইল

৩১| ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:১৪

মিরোরডডল বলেছেন:



মৈমনসিংহ গীতিকা নিয়ে টিভিতে বেশ কয়েকটা নাটক হয়েছিলো যেমন মহুয়া সুন্দরী, কাজলরেখা, চন্দ্রাবতী । কিন্তু চন্দ্রকুমারের যে লাইফ স্টোরি এখানে জানলাম কেমন করে গীতিকা সংগ্রহ করতেন, এটা নিয়েও কিন্তু একটা ভালো মুভি হতে পারে এসময়ের কোনও ভালো ডিরেক্টর যদি করতো । এর মধ্যে দিয়ে অনেকে এই বিষয়গুলো জানতে পারতো । আলী ভাইয়ের পোষ্ট মানেই তথ্য সম্ভার । একের পর এক পরশ পাথর প্রাপ্তি যেভাবে নিয়ে আসছেন , আমরা মনে হয় এখন বলতে পারি আলী ভাই স্বয়ং আমাদের সামু ব্লগের পরশ পাথর ।

পুরনো দিনের কলিম শরাফীর একটা বাংলা গান শেয়ার করলাম

পথে পথে দিলাম ছড়াইয়া রে
সে দুঃখের চোখেরও পানি
ও আমার চক্ষু নাই
পাড় নাই কিনার নাই রে
ও আমার চক্ষু নাই
ঘর নাই
ও মোর জন নাই
তবু দিলাম ভাঙা নায়ে
অকূল সায়র পাড়ি







৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২০ ভোর ৬:৩৯

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:

চমৎকার মুল্যবান মন্তব্য সাথে মনমাতানো গানের ভিডিউ রেখে যাওয়ার জন্য অসংখ ধন্যবাদ ।
ভিডিউ লিংকটি অনকরে বার ককয়েক শুনলাম ।

আপনি যতার্থই বলেছেন বাংলার প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতীর মত বাংলার উপেক্ষিত চন্দ্রকুমারের জীবন আলেখ্য নিয়ে
তৈরী হতে পারে একটি মুভি ।
চন্দ্রকুমার দে কতটা উপেক্ষিত, তার একটি প্রমাণ হল, উনবিংশ শতাব্দীতে জন্ম নেয়া চন্দ্রের জন্ম ও মৃত্যু তারিখটি নিয়ে এখন পর্যন্ত সাহিত্য বোদ্ধারা নিঃসন্দেহ হতে পারেননি। যখন চন্দ্রের ব্রাকেটে লেখা হয় (১৮৮১-১৯৪৫), তখন তা অনেক সংশয় ও কিন্তুর সঙ্গে আপোষ করেই লেখা হয়। এই উপেক্ষিত চন্দ্রের জীবনটাও ছিল দুঃখে ভরা। খুব অল্প বয়সেই চন্দ্র মাতৃহারা হন। কৈশোরে গ্রামের জমিদার তার পিতার সহায় সম্পত্তি চোখের সামনে কেড়ে নিলে পিতা রামকুমার অচিরেই শোকে দুঃখে পৃথিবীর মায়া কাটান। এরপর পেট বাঁচাতে চন্দ্র নিজ গ্রামের মুদি দোকানে ১ টাকা বেতনের চাকুরী নেয়। কিন্তু ভাবুক ও সাংসারিক বিষয়াদি সম্পর্কে অনভিজ্ঞ চন্দ্রকে কিছুদিনের মধ্যেই ঐ দোকান থেকে অর্ধচন্দ্র পেতে হয়। এরপর হতভাগা চন্দ্রকুমার কলেরায় আক্রান্ত হন। পরিত্রাণের আশায় হাতুড়ে চিকিৎসকের ঔষধ গিলেছিলেন। এতে সুস্থ তো হলেনই না, উপরন্তু মানসিক বৈকল্য দেখা দিল, যা প্রায় দু’বছর স্থায়ী হয়েছিল। এই চরম দুর্দিনে এক গ্রাম্য জমিদার তাকে মাসিক ২ টাকা বেতনে তহশীল আদায়ের চাকুরী দেন। এই চাকুরীটিই চন্দ্রের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তহসীল আদায় করতে চন্দ্রকে গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরতে হত। ঐ সময়ই তিনি কৃষকদের কণ্ঠে শুনতে পান অপূর্ব সব পল্লী গাথা ও উপাখ্যান। গানগুলো চন্দ্রকে এতই মোহিত করে যে, শুনে শুনেই তা খাতায় লিখে রাখতেন। এক সময় চন্দ্রকুমার এই পল্লী গাঁথাগুলোর সৌন্দর্যের সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দেয়ার প্রবল তাগিদ অনুভব করেন। আর সেই কারণেই বিখ্যাত সৌরভ পত্রিকায় এগুলোর উপর লেখা পাঠাতে আরম্ভ করেন।

অল্প শিক্ষিত চন্দ্রকুমার এমনকি ‘আমি’ বানানটি ঠিকমত লিখতে পারতেন না। ভুল করে লিখতেন ‘আমী’। ‘কৃত্তিবাস’কে লিখতেন ‘কীর্তিবাস’। কিন্তু চন্দ্রকুমারের বিরল সাহিত্য-মনন , প্রতিভা ও লেখক সত্তা ‘সৌরভ’ সম্পাদক কেদারনাথের দৃষ্টি এড়ায়নি। এমনকি চন্দ্রকুমার নামক মুক্তোটি বেশিদিন দীনেশচন্দ্রেরও অনাবিস্কৃত থাকেনি। মনীষী ডক্টর দীনেশচন্দ্র সেন চন্দ্রকুমারকে মাসিক ৭০ টাকা বেতনে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পালাগান সংগ্রহের জন্য নিয়োগ দান করেন।

এরপর শুরু হয়ে যায় চন্দ্রকুমারের গ্রাম-বাংলার আনাচ -কানাচ থেকে হারানো মানিক খুঁজে বের করার অমানুষিক সংগ্রাম। কেমন ছিল এই সংগ্রাম? চন্দ্রের ভাষায়:

এই সংসার চিন্তা বিব্রত পথিক দুঃখ দারিদ্র্যের বোঝা ঘাড়ে ফেলিয়া যখন পাগলা বন হরিণের মত বাঁশীসুরে উধাও হইয়া ছুটিয়াছিল, পাড়াগায়ের এক হাটু কাঁদা ভাঙ্গিয়া মেঘে ভিজিয়া রৌদ্রে পুড়িয়া কৃষকের গোয়াল ঘরের সাঁঝালের ধারে বসিয়া এই কৃষক গীতি সংগ্রহ করিয়াছে, তখন তাহাকে লোকে ক্ষ্যাপা বলিয়া উপহাস করিতে ছাড়ে নাই।

অপরিসীম ভালবাসা না থাকলে, আত্মত্যাগ না থাকলে কারো পক্ষে সম্ভব এমন সাধকের রূপ পরিগ্রহ করা? একবার চন্দ্রকুমার কবি রামকান্ত রায়ের প্রত্যন্ত গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন কবির লিখিত ‘মনসা ভাসান’ সংগ্রহের জন্য। রামকান্তের বংশধরের কাছে বইটির কথা বলতেই সে চন্দ্রকে ভুল বুঝে, মনে করে যে, ছল-চাতুরী করে চন্দ্রকুমার তার কাছ থেকে অনেক মূল্যবান একটি জিনিস হাতিয়ে নেয়ার মতলব করছে। অথচ ঐ বংশধরের গৃহে কীট ছাড়া আর কারো কাছেই বইটির ন্যূনতম কোন মর্যাদা বা মূল্য ছিল না। তবু যখন রামকান্তের বংশধর বইটি দিতে রাজী হচ্ছিল না, চন্দ্র অনেকটা মরিয়া হয়েই চুরি করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু চুরিবিদ্যায় সম্পূর্ণই অনভিজ্ঞ চন্দ্র শেষ পর্যন্ত সফল না হওয়াতে কীটের উদরেই বইটির চূড়ান্ত সমাধি ঘটে। এভাবে যে কত অমূল্য সাহিত্য-সম্পদ কীটের গর্ভে বিলীন হয়েছে, তার কোন হিসেব আছে আমাদের কাছে? না, থাকা সম্ভব? কিন্তু চন্দ্রকুমারের মত কেউ কেউ ছিলেন বলেই অন্তত কিছু মনি-মুক্তো আমরা বের করে আনতে পেরেছি। কিন্তু কি সন্মান দিয়েছি সেই বিরল মুক্তো সংগ্রাহককে?

চন্দ্রকুমারের স্ব-গ্রামবাসী ভূপেন্দ্র মজুমদার আক্ষেপ করে লিখেছেন:

চন্দ্রকুমার সম্বন্ধে ডঃ দীনেশ সেন তাঁর ময়মনসিংহ গীতিকার ভূমিকায় যে-পরিচয় দিয়েছেন, তাতে তার আসল পরিচয়টাই অজ্ঞাত রয়ে গেছে। …যার একক কীর্তি সমস্ত বঙ্গ সাহিত্যে এক উচ্চ স্থানের দাবী করছে- তাকে আমরা কতখানি মূল্য দিয়েছি?

হ্যাঁ, দীনেশচন্দ্র সেন তার জগদ্বিখ্যাত ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’ ও ‘পূর্ববঙ্গ গীতিকা’য় তথ্যদাতা হিসেবে চন্দ্রকুমারের পরিচয় সন্নিবেশ করেছেন, তাকে বিনে পয়সায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন, অনাথ ও চিররুগ্ন চন্দ্রকুমার যখন স্ত্রীর গহনা বিক্রি করে সংসার নির্বাহ করতে বাধ্য হয়েছিলেন, তখন দীনেশচন্দ্র তাকে চাকুরী-থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চন্দ্র সংগ্রাহকই রয়ে গেছেন, হতে পারেননি নায়ক। চন্দ্রকুমার বিনয়ের আতিশয্যে বলেন:

দীনেশচন্দ্র আমার সংগৃহীত ভাঙ্গা ইটে আজ বঙ্গ ভাষার বিচিত্র তাজমহল গড়িয়া তুলিয়াছিলেন, আমি তাহার মজুর মাত্র। তিনি এ বিরাট যজ্ঞভূমির অধিনায়ক হোতা। আমি শুধু সমিধ কাস্ট বহন করিয়াছি মাত্র।

আসলেই ময়মনসিংহ গীতিকা এক তাজমহল, যার রসে বুঁদ হয়ে থাকেন রোমান রোঁলা, জুলে ব্লক, সিলভান লেভি, গ্রীয়ারসন প্রভৃতি জগৎ প্রসিদ্ধ পণ্ডিতগণ। কিন্তু এই তাজমহল গড়ার নায়করূপে যুগে যুগে স্বরিত-পূজিত হন দীনেশচন্দ্র সেনই, দীনেশচন্দ্রের আলোয় জ্বল জ্বল করে বিশ্বসভায় দ্যুতি ছড়িয়ে যায় ময়মনসিংহ গীতিকা, অনেকটা সম্রাট সাজাহানের তাজমহলের মত করেই। এদিকে আড়ালে-আবডালে, লোকচক্ষুর একেবারে অন্তরালে থেকে যান তাজমহলের আসল কারিগর হতভাগা চন্দ্রকুমারেরা।

যে আসল চন্দ্রের আলো আমাদের লোকজ তাজমহলটি বাঁচিয়ে রাখার জন্য ছিল বড্ড প্রয়োজনীয়, তাকে যে আমরাই নিভে যেতে দিয়েছি, হারিয়ে যেতে দিয়েছি বিস্মৃতির অতলে ! যাহোক চন্দ্রের আলো সকলের ঘরে ঘরে পৌঁছে যাক এ কামনাই করি ।
সামুর সকল ব্লগারই এক এক জন পররশপাথর , তাইতো নিত্য নতুন অনেক মুল্যবান লেখা আমরা দেখতে পাই ।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল

৩২| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৩৫

করুণাধারা বলেছেন:  আপনার অসাধারণ পোস্ট আগেই পড়েছি, পুরোটা আত্মস্থ করে মন্তব্য করার চেষ্টা করছি ।

সমসাময়িক দেশি-বিদেশি সাহিত্যের সাথে পরিচয় থাকলেও লোকসাহিত্যের সাথে আমার একেবারেই পরিচয় নেই। আপনার এই পরিশ্রমসাধ্য পোস্ট পড়ে অনেক কিছু জানা গেল। আপনার কাকাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই; আপনার ছোট কাকা আর বড় কাকা দুজনেই আপনার মনে লোকসাহিত্যের প্রতি অনুসন্ধিৎসা জাগিয়ে তুলেছিলেন যা আজও আপনার চিন্তনে রয়ে গেছে যার ফলে আমরা এমন অসাধারণ পোস্ট পেলাম!

আপনার দাদীর প্রতিও শ্রদ্ধা, বৃদ্ধ বয়সেও তিনি ছেলের প্রিয় পুঁথি গুলোকে ভাদ্রের প্রখর রোদে মেলে দেবার কাজ করেছেন!!

কাকের সংসারে আয়না, চিরুনি, সাবান, সুতা কাপড়, মরিচ আদা রসূন জমা করেছিল সে নিশ্চয়ই পুঁথির পাতা ছাড়া তার সংসারকে অপূর্ণ মনে করেছিল!! আমাদের চারপাশে কত বিচিত্র ঘটনাই ঘটে!!

ময়মনসিংহ গীতিকা কখনো পড়া হবে না কারণ আমি ইদানিং বড় বই পড়তে পারিনা। এই লোক গাঁথা গুলোর সংগ্রাহক চন্দ্র কুমার দে'র পরিশ্রমের ফলে আমরা জানতে পেরেছি অতীত কালেও বাংলার মানুষের মধ্যে কিভাবে সাহিত্য চর্চা চলত। আপনার পোস্ট থেকে আমি একটা বিস্ময়কর জিনিস জানতে পেরেছি। সম্প্রতি মেহের আফরোজ শাওন এবং চঞ্চল চৌধুরীর গাওয়া "সর্বত মঙ্গল রাধে" গানটি আলোচনায় আসে কারণ সরলপুর ব্যান্ড দাবি করে এই গানটি তাদের লেখা বলে কপি রাইট তাদের অথচ মেহের আফরোজ শাওন এবং চঞ্চল চৌধুরী দাবি করছেন তারা প্রচলিত লোকগীতি থেকে গানের কথা সংগ্রহ করেছেন!! আমি গানটি ইউটিউব থেকে আবার শুনলাম, (লিঙ্ক দিতে পারলাম না) দেখলাম মহুয়ার পালায় নায়িকা আর নায়কের বলা কথার সাথে এই গানের কথা অনেক মিলে যায়। যেমন নদের চাঁদ বলছে,
"কোথায় পাইবাম কলসী কন্যা কোথায় পাইবাম দড়ি।
তুমি হও গহীন গাঙ আমি ডুব্যা মরি।।"

চঞ্চল চৌধুরী গাইছেন,
"কোথায় পাবো হাড়ি কলসি কোথায় পাবো দড়ি
তুমি হও যমুনা রাধে আমি ডুইবা মরি।"

এখন মনে হচ্ছে মেহের আফরোজ শাওন এবং চঞ্চল চৌধুরী লোকগীতি থেকেই তাদের গানের কথা সংগ্রহ করেছেন, সরলপুর ব্যান্ডের দাবি ঠিক নয়।

লোকসাহিত্যে নিয়ে লেখা আপনার এই পোস্টটি অনন্য! এক্ষেত্রে অন্য মন্তব্যকারীদের মতো আমিও আপনাকে সামুর চন্দ্র কুমার দে বলে আখ্যায়িত করতে চাই।

এমন পোস্টে পাঠক কম হবার কারণ সম্ভবত এর আকার। এত বড় পোস্ট পড়তে বেশিরভাগ ব্লগার আগ্রহী হন না। আবার যাদের আপনার লেখার সাথে পরিচয় আছে, তারা সবসময়ই অতি আগ্রহ নিয়ে আপনার পোস্ট পড়েন।

অনেক দিন পর মন্তব্য করছি, আশাকরি ইতিমধ্যে শারীরিক সমস্যা কমেছে আর বোনের চলে যাবার ব্যথা কিছুটা সহনীয় হয়েছে। আপনার পরিবারের সকলের জন্য শুভকামনা রইল।



১৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ ভোর ৪:৫৬

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:


পুণরায় এসে মুল্যবান মন্তব্য রেখে যাওয়ায় আমি মুগ্ধ ।
লোক সাহি্ত্যের প্রতি আপনার আগ্রহ দেখে আমার ভাল লাগছে ।

মুক্তি যুদ্ধের সময় আমাদের সংগ্রহে থাকা অনেক মুল্যবান পুথি হারিয়ে যায় ।
পরিবারের লোকজন বাড়ীঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়ায় বাড়ীঘর অনেকদিন অরক্ষিত ছিল ।
দাদীর সংগ্রহে অনেক পুরানো ফারসী পুস্তকাদি ছিল । সেগুলি শুধু ধর্মীয়ই ছিলনা । সেগুলি
আয়ুর্বেদিক ও শিল্প সাহিত্য বিষয়কও ছিল। সেগুলিরো অনেক হারিয়ে ও নষ্ট হয়ে যায় ।

আপনার অনুসন্ধানী ক্ষমতা সত্যিই অনেক প্রসংসনীয় ।
সর্বত মঙ্গল রাধে বিনোধিনি রাই
বৃন্দাবনের বংশিধারী ঠাকুর কানাই ।

গানটিতে আফরোজ শাওন এবং চঞ্চল চৌধুরীর দাবিই যতার্থ বলে মনে করি ।
তাঁদের গানের কথাগুলি লোহসাহিত্য হতেই উৎসারিত হয়েছে বলে প্রতিয়মান হয় ।

আমার পোষ্টগুলি এক খন্ডেই প্রকাশ করতে বেশী আ্গ্রহী হই যাতে করে আমি যা বলতে
চাই তা পাঠকগন এক সাথেই এক খন্ডেই পেয়ে যান । তাতে অবশ্য আনেক পাঠক
পোষ্টটি পাঠের আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। তারপরেও আপনাদের মত আনেক গুণী
পাঠক যারা কষ্ট করে পাঠ করে মুল্যবান মন্তব্য রেখে যান তাতেই আমি খুবই
পরিতৃপ্তি অনুভব করি । আমার পরিশ্রম স্বার্থক হয়েছে বলে ধরে নিই ।

বিবিধ ধরনের শারিরিক সমস্যায় ভোগছি । সামুতে বয়োজেষ্ঠদের মধ্যে আমিউ একজন ।
লিখতে কষ্ট হয় । ভাবনাতেও বিশৃংখলা দেখা দেয় । করুনার সাইড ইফেক্ট হয়ত রয়ে গেছে
অনেক । আমার জন্য দোয়া করবেন । আপনাদের মত বয়সে নবিনদের সাথে স্বাচ্ছন্দে যেন
জীবনের বাকি কটা দিন কাটিয়ে যেতে পারি ।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল


৩৩| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৫৯

আমি সাজিদ বলেছেন: কেমন আছেন স্যার? অফটপিক - এই পোস্টে অনেকের মন্তব্য চাচ্ছি। একটু ঘুরে আসবেন সময় করে।

২০ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৩৮

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
আমন্ত্রন জানানোর জন্য ধন্যবাদ ।
সেই পোষ্টটি দেখে ছোট একটি মন্তব্য রেখে এসেছি ।
শুভেচ্ছা রইল

৩৪| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৫৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: "ফুলের বাগানে ভ্রমরের মত এই গানগুলিরও শ্রোতার অভাব হইত না" - কি চমৎকার করেই না কথাটা বলেছেন!
মহুয়া-নদের চাঁদ, চন্দ্রাবতী-জয়ানন্দ এর প্রেমকাহিনী পড়ে অভিভূত হ'লাম।
চন্দ্রকুমার দে কে অন্তর থেকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
১৭/১৮ বছর আগে নেত্রকোনার 'ক্ষীরো' নদীটি দেখেছি। তখনই এটাকে খালের চেয়ে একটু বড় মনে হয়েছিল। এখন হয়তো আরো শুকিয়ে গেছে।
আপনার এই পোস্ট একটি রেফারেন্স ম্যাটেরিয়াল হিসেবে পঠিত হবে দীর্ঘদিন, এ বিশ্বাস আমার আছে। পরিশ্রমসাধ্য এ কাজটির জন্য অভিনন্দন ও সাধুবাদ জানাচ্ছি।
পোস্টে ভাল লাগা + +।

২২ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ৯:১৩

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



মনযোগ দিয়ে পোষ্টটি পাঠ করে মুল্যবান মন্তব্য রেখে যাওয়ার জন্য ধন্যবাদ ।
চন্দ্রকুমার দে র প্রতি আপনার শ্রদ্ধা বাণী তাঁর প্রতি নিবেদন করা হল ।

নেত্রকোনার প্রায় সব নদীগুলির মূলধারা তার উৎসস্থলে প্রায় বিলুপ্ত।
বর্ষা মৌসুম ছাড়া অন্য কোন মৌসুমে পানি প্রবাহ তেমন থাকেনা।

ময়মনসিংহ গীতিকার পাঠক বাড়ুক এটাই কামনা । পাঠকগন বাংলার লোকগাথার
সাথে পরিচিত হোক অধিকহারে , তাতে করে আমাদের লোকজ সংস্কৃতির
প্রসার ঘটবে বহুলভাবে ।

পোষ্ট ভাল লেগেছে শুনে ভাল লাগল ।

শুভেচ্ছা রইল

৩৫| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:১৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: ময়মনসিংহ গীতিকা এবং বাংলার অপরাপর লোকসাহিত্য সম্পর্কে সামান্য ছিঁটেফোঁটা কিছুটা জানা থাকলে, বাংলার লোকসাহিত্যের 'তাজমহল' এর দিনমজুর চন্দ্রকুমার দে সম্বন্ধে কিছুই জানা হতো না, আপনার এ পোস্টটা না পড়লে। আমার মত আরো অনেকেই এ কথাটা মন্তব্যের ঘরে বলেছেন। আমাদের সবার এ জ্ঞানবৃদ্ধির জন্য আপনাকে আবারও ধন্যবাদ।

এ পোস্টে সোহানী এর মন্তব্যগুলোকে বেশ প্রাণবন্ত মনে হয়েছে। জুন এর গৃহকর্মীর অন্তহীন প্রতীক্ষার করুণ গল্প মনে বেদনা ছড়িয়েছে। মিরোরডডল সংযোজিত কলিম শরাফী'র 'পথে পথে দিলাম ছড়াইয়া রে' গানটি উপযুক্ত মনে হয়েছে এবং ভাল লেগেছে।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ২:৫৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:


আবার এসে লোগগীতির প্রতি প্রিতি প্রদর্শনের জন্য অন্তরের অন্তস্থল হতে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি ।
বিনয়ের অবতার আপনি যতই বলুন না কেন, লোক গীতির সাথে আপনি শুধু পরিচিতই নন, এর অন্তরনিহিত মুল্যবোধ ও ঐতিহ্য সম্পর্কেও আপনি যে সম্যক অবগত আছেন সে দৃঢ়বিশ্বাস আমার আছে ।

আপনি হলেন রংপুরের একজন কৃতি সন্তান, আর বাংলার প্রসিদ্ধ লোকগীতি ভাওয়াইয়া গানের আকর ভূমি হল রংপুর। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের নদী-নালা কম থাকায় গরুর গাড়িতে চলাচলের প্রচলন ছিল বেশী । আর গরুর গাড়ির গাড়োয়ান রাত্রে গাড়ি চলাবস্থায় বিরহ ভাবাবেগে কাতর হয়ে আপন মনে ধরত গান । উঁচু-নিচু রাস্তায় গাড়ির চাকা পড়লে তার গানের সুরে আধো-ভাঙ্গা বা ভাঁজ পড়ত স্বাভাবিক কারণেই । এই রকম সুরে ভাঙ্গা বা ভাঁজ পড়া গীতরীতিইতো 'ভাওয়াইয়া' গানে লক্ষণীয় উঠে । প্রেম-বিয়োগে উদ্বেলিত গলার স্বর জড়িয়ে যেরকম হয়, সেরকম একটা সুরের ভাঁজ উঁচু স্বর হতে ক্রমশঃ নিচের দিকে নেমে আসে। সুরে ভাঁজ পড়া ভাওয়াইয়া গানের একটি স্বকীয় বৈশিষ্ট্য , আর এ জন্যই তা শুনতে ভাল লাগে । রংপুরের ভাওয়াইয়া গানকে জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন উত্তর বঙ্গেরই ( কুচবিহারের ) কৃতি সন্তান বাংলার সর্বকালের সেরা লোক সংগীতশিল্পী ও ভাওয়া গায়ক আব্বাসউদ্দীন আহমদ (২৭ অক্টোবর ১৯০১ - ৩০ ডিসেম্বর ১৯৫৯) ।

গানগুলোতে স্থানীয় সংস্কৃতি, জনপদের জীবনযাত্রা, তাদের কর্মক্ষেত্র, পারিবারিক ঘটনাবলী ইত্যাদির সার্থক প্রয়োগ ঘটেছে।
যেমনঃ গরুর গাড়ি চালক বা গাড়িয়ালকে উদ্দেশ্য করে বলছে -
ওকি গাড়িয়াল ভাই,
কত রব আমি পন্থের দিকে চাঞা রে।
যেদিন গাড়িয়াল উজান যায়
মন মোর পরিয়া রয় রে ।


এ প্রসঙ্গে 'উত্তরের সুর' নামে একটি ছায়া ছবির কথা মনে পড়ে । ছায়াছবিটি ২০১২ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার-এ শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ চারটি পুরস্কার অর্জন করে। চলচ্চিত্রটি ১৮তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও দেখানো হয়। একজন ভাওয়াইয়া গায়কের জীবনচিত্র তুলে ধরা হযয়েছিল ছবিটিতে। কাহিনীর মুল চরিত্র চাঁন মিয়া ও তার মেয়ে আয়শা রাস্তায় গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। বাবার স্বপ্ন মেয়ে একদিন বড় গায়িকা হবে। কিন্তু আয়শার মা আম্বিয়া চায় তার মেয়ে লেখাপড়া করুক। আয়শা মায়ের আগ্রহে স্কুলে যায় কিন্তু সে তার বাবার সাথে গান গাইতেই বেশি পছন্দ করে। একদিন কিছু বাইরের লোক তাদের গ্রামে আসে এবং তারা আয়শা ও তার বাবার গান শুনে মুগ্ধ হয়। আয়শা ও তার বাবা গ্রামে আগের চেয়েও বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করে। হঠাৎ একদিন আয়শা অসুস্থ হয়ে যায় এবং তার বাবাও বিদেশী সংস্কৃতির সাথে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে পারে না। অচিরেই তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পেতে থাকে। ছবিটিতে উত্তরবঙ্গে দারিদ্র্যের কারণে ধীরে ধীরে ভাওয়াইয়া গানের অবলুপ্তি তুলে ধরার চিত্রই ছায়াছবিটিতে তুলে ধরা হয়েছে । আমাদের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক লোকগীতীগুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ।

বোন সোহানী , জুন ও মিররডডল এর মন্তব্যগুলি সম্পর্কে যতার্থ বলেছেন ।

শুভেচ্ছা রইল



৩৬| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:১৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: "ছিঁটেফোঁটা কিছুটা জানা থাকলে" - কথাটাকে "ছিঁটেফোঁটা কিছুটা জানা থাকলেও" পড়তে হবে।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৩:০০

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
ধন্যবাদ , হ্যাঁ সে ভাবেই পড়ে নিয়েছি , বুঝতে কোন অসুবিধা হয়নি ।

৩৭| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ১২:১৯

কল্পদ্রুম বলেছেন: পোস্ট ও মন্তব্য ঘর থেকে অনেক কিছু জানা গেলো। আসলে যতই সময় যাচ্ছে এগুলো থেকে আমাদের প্রজন্ম কিংবা তার পরবর্তী প্রজন্ম দূরে সরে যাচ্ছে। আমার মাঝে মধ্যে মনে হয় অনেক পল্লীগানকে এ যুগে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বাংলা ব্যান্ডগুলো একটা বিকল্প মাধ্যম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। পল্লী পালাগানগুলোর দিকে চিত্রনির্মাতাদের নজর দেওয়া উচিত। এগুলোকে ভিন্নভাবে হলেও যদি পর্দায় জনপ্রিয় করে তোলা যায়। আমার মনে হয় সেটা একটা ভালো কাজ হবে। পশ্চিমা দেশের অনেক পরিচালকরা বিভিন্ন ফোকলোরের উপর নির্ভর করে চলচ্চিত্র,টিভি সিরিজ তৈরি করেন। সেগুলো জনপ্রিয়তাও পায়। এরপর ভক্তরা নিজেরাই উৎসাহী হয়ে এগুলোর আদি উৎস খুঁজে বের করেন। লেখালেখি করেন। নতুন প্রজন্মের কাছে এই কেচ্ছাকাহিনীগুলোর একটা পুনর্জন্ম ঘটে যেন।

২৬ শে এপ্রিল, ২০২১ ভোর ৬:৪৫

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:


আপনি যতার্থই বলেছেন-
অনেক পল্লীগানকে এ যুগে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বাংলা ব্যান্ডগুলো একটা বিকল্প মাধ্যম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। পল্লী পালাগানগুলোর দিকে চিত্রনির্মাতাদের নজর দেওয়া উচিত।এগুলোকে ভিন্নভাবে হলেও যদি পর্দায় জনপ্রিয় করে তোলা যায়। আমার মনে হয় সেটা একটা ভালো কাজ হবে। উল্লেখ্য পালাগানগুলি নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে দেশে।
দ্বিজ কানাই রচিত মহুয়া পালার আধুনিক চিত্রনাট্যরূপ রচনা করেন পরিচালক নিপা।মহুয়া সুন্দরী রওশন আরা নীপা
পরিচালিত ২০১৫ সালের বাংলাদেশী রোম্যান্টিক-নাট্য চলচ্চিত্র।চলচ্চিত্রটি ২০১৫ সালের ২০ নভেম্বর বাংলাদেশে মুক্তি
পায়। এই ছবিতে "তোমারে ছাড়িতে বন্ধু" গানে কণ্ঠ দিয়ে সুবীর নন্দী ৪০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ পুরুষ
কণ্ঠশিল্পী বিভাগে পুরস্কার লাভ করেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.