নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আহমেদ রিয়াজ

লেখক

আহমেদ রিয়াজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাবা! ও বাবা!

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৭

আমার দ্বিতীয় পুত্র নবনিল। ভীষণ বাপনেওটা। কথা বলা শেখার পর শিশুরা সাধারনত মা শব্দটা আগে বলে। কিন্তু আমাদের অবাক করে দিয়েছিল নবনিল। বাবা দিয়েই ওর কথা বলা শুরু। শুনতে হয়ত অবাক লাগবে কারো, তবে সত্যি-নবনিল একদিনে যতবার বাবা বলত এক বছরে ততবার মা-ও বলেনি।

ছুটির দিনে বাসাতেই কাটাতে পছন্দ করি আমি। এর একটা কারণ নবনিল। আমাকে বাসায় পেলে ভীষণ খুশি হয় ও। তবে খুশিটা প্রকাশ করে না। কেবল আমার ধারে কাছে ঘোরাঘুরি করে। আসছে জানুয়ারিতে চার বছর হবে ওর। শিশুসুলভ চপলতায় মাতিয়ে রাখে আমাদের। ওর বড়ভাই অবনিলকে তো সারাদিন খোঁচানোর ওপর রাখে। সঙ্গে চিৎকার চেঁচামেচি তো আছেই। মাঝে মাঝে নবনিলের মা-ই খেপে যায় ওদের ওপর। আমি বাসায় না থাকলে নাকি অমন হইচই হয় না। আমাকে দেখলেই ওদের দুষ্টুমি বেড়ে যায়।

৩ নভেম্বর রোববার আমি বাসায়। রোববার আমার ছুটির দিন। বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ড তৃতীয় একদিনের ক্রিকেট খেলা। দুপুরের খাবার শেষে বাংলাদেশের ব্যাটিং দেখছিলাম শুয়ে শুয়ে। নবনিল কয়েকবার আমার পাশে এসে শুয়ে গেছে। ঘুম পেলেই উঠে চলে যায়। ঘুম তাড়িয়ে আবার আমার পাশে এসে শোয়। হঠাৎ ওদের মায়ের কী হলো কে জানে-নবনিলের পশ্চাৎদেশে ঠাস করে একটা লাঠির বাড়ি বসিয়ে দিল। ব্যস, অমনি নবনিল ভ্যাঁ করে কেঁদে ওঠল। তারপর নবনিলের মা ওকে টানতে টানতে নিয়ে গেল পাশের ঘরে। শুইয়ে দিল বিছানায়।

বিছানায় শুয়ে নবনিল বেঁকে বসল, তুমি আমাকে মারলে কেন?

তুমি এখনও ওই ঘরে কেন? ঘুমুবে না?

নবনিল জবাব দিল, ওই ঘরে তো বাবা। আমার যে বাবার কাছে থাকতে ইচ্ছা করে!



২.

রমজান আলীর কাছে প্রায় দিনই বায়না ধরে মনির, বাবা তোমার সঙ্গে যাব।

কাভার্ড ভ্যান চালান রমজান আলী। গার্মেন্টেসের মালামাল বহন করেন। ৪ নভেম্বর সোমবার। বিরোধী দলের টানা ৬০ ঘণ্টার হরতাল চলছে। এর মধ্যেই মনিরের আবদার-বাবার সঙ্গে যাবে ও। যদিও পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ে মনির। এত বড় হয়ে গেছে, তবু চালক বাবার সঙ্গ খুব একটা পায়নি। ব্যস্ত থাকতে হয় বাবাকে। যতখানি পায়, বাপের কাছছাড়া হয় না। বাপের ধারে-কাছেই ঘোরাঘুরি করে। কিন্তু হরতালের মধ্যে বাবা বেরিয়ে গেলে কখন আসে, ঠিক নেই। বাপের জন্য বড্ড ভয় ছোট্ট মনিরের। রমজান আলীও ভাবলেন, ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই ডিউটি দেবেন। হরতালের আগের দিন ছেলেকে নিয়েই ঢাকা এলেন। রোববার সারাদিন বাপের সঙ্গে সঙ্গে ছিল মনির। পরদিন খুব ভোরে মালপত্র ভরে রওনা নিলেন। খুব তো বেশি কাজ নেই। হরতালে রাস্তাঘাটও থাকে ফাঁকা। শিগগির কাজ শেষ করে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরবেন। বাড়ি তাঁর গাজীপুরের কালিয়াকৈরের কাঞ্চণপুর গ্রামে।

পুরো একটা দিন বাপের সঙ্গে থেকে দারুণ খুশি মনির। বাপের সঙ্গেই কাভার্ড ভ্যানে বসে গাজীপুর ফিরছিল। বাপের সঙ্গে গাড়িতে চড়তে ওর দারুণ লাগে। কিন্তু গাড়িতে ওর ঘুম পায়। কখন যে ও ঘুমিয়ে পড়েছে জানে না।

ছেলেকে ঘুমিয়ে পড়তে দেখে বড্ড মায়া হলো বাপের। গাজীপুরের চান্দনা এসে গাড়িটা রাস্তার পাশে রেখে নামলেন রমজান আলী। ওই তো রাস্তার পাশেই খাবারের দোকান। ছেলের পছন্দের খাবার কিনে তারপর আবার গাড়িতে উঠবেন। কতণ আর লাগবে খাবার কিনতে? ঘুম খেকে উঠে ছেলেটা যখন খাবার দেখবে, খুব খুশি হয়ে যাবে। মাত্র তো সকাল সাড়ে নয়টা।

খাবারের দোকানে কেবল পা দিয়েছেন রমজান আলী, হঠাৎ কী মনে পিছনে তাকালেন। দাউ দাউ করে জ্বলছে তাঁর কাভার্ড ভ্যান। কোন ফাঁকে পিকেটাররা কাভার্ড ভ্যানে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। এক মিনিটও হয়নি গাড়ি থেকে নেমেছেন তিনি। এর মধ্যেই এত কাণ্ড ঘটে গেল!

ভ্যানের ভিতরে তখন ডেলিভারি দেওয়ার জন্য লাখ টাকার গার্মেন্টস পণ্য।

পুড়ুক ওসব। কিচ্ছু যায় আসে না। হরতালে দেশের এমন সম্পদ অনেক পোড়ে।

কিন্তু ওখানে যে তাঁর পুত্রধন!

চোখের সামনে গাড়ির ভিতর নিজ সন্তানকে অগ্নিদগ্ধ হতে কেমন লেগেছিল রমজান আলীর?

জানি না। কারো পে জানা সম্ভবও নয়। কেবল রমজান আলীই জানেন সেই অনুভূতি। আর কেউ না।



৩.

জ্বলন্ত গাড়ি থেকে শিশু মনিরকে কোনো রকমে উদ্ধার করা হলো। নিয়ে যাওয়া হলো ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে। কিন্তু ওর ছোট্ট শরীরটার একশ ভাগই পুড়ে গেছে। ডাক্তাররা জানালেন ওর অবস্থা খুবই খারাপ।

ডাক্তারদের সেই আশঙ্কাই ঠিক হলো। হরতালের আগুনে পুড়ে তিন দিন অসহ্য কষ্ট ভোগ করে অন্য জীবনে পাড়ি জমাল মনির।

মনির যখন বাবার সঙ্গে আসতে চেয়েছিল, হয়ত মনিরের মা ওকে নিষেধ করেছিল। মনিরও হয়ত জবাব দিয়েছিল-আমার যে বাবার কাছে থাকতে ইচ্ছা করে!

দুনিয়ার সকল শিশুর অনুভূতি একই রকম। বড় হতে হতে আমাদের অনুভূতি বদলে যায়।

অগ্নিদগ্ধ মনিরের কোনো ছবি আমি দেখিনি। দেখতে চাইওনি। তবে মনিরের কথা মনে হলেই নবনিলের মুখটা ভাসে আমার চোখের সামনে। বাপের সঙ্গটা একটু বেশিই না হয় চেয়েছিল মনির। এটাই কি ওর অপরাধ ছিল?

আহমেদ রিয়াজ

০৭-১১-২০১৩

আলোকচিত্র : হাসপাতালের বিছানায় মনির,

বিডিনিউজটুয়েন্টিফোরডটকমের সৌজন্যে

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:১৩

এস এম মোমিন বলেছেন: পিকেটার নয় এরা মানুষরূপি হায়নার দল..

২| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪১

ভবঘুরের ঠিকানা বলেছেন: খুব খারাপ লাগল।

৩| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৯

সামির কবির বলেছেন: মনের ব্যাথা আর চোখের পানি দিয়ে আমার নিমোন্ত রচনা।


- একটি বাবা ঘাড় ফিরে তাকানো, একটি চিৎকার মনির...
- কি করে ঝলসে যাওয়া সন্তানকে কে কোলে নেই..
- যে চামড়ায় কোটি কোটি চুমা খেলাম, কি হলো এই চামড়ার...

- ভয় নেই একটি বাবা হাতে একটুকরো কয়লা

- আমিও একটি বাবা হাতে অনলাইন নিজউজ পেপার...
- আমিও একটি বাবা আমার চোখে পানি...
- আমিও একটি বাবা, কাপুরুষ বাবা
- আমার চোখের সামনে আমার সন্তান কয়লা হবে
- ভুল বলালাম, কাপুরুষের নিচে কিছু থাকলে অ্যাখা দিন আমাকে

আর কিছু লিখতে পারছিনা, বাবা মনির তোকে কি দেই?
আমার জীবনে কিছু যিকির করেছি, কিছু ভালো কাজ করেছি জানি,
সেগুলো কবুল হয়েছ কিনা জানিনা, যদি হয়, আল্লাহর কাছে বলি..কি বলি আল্লাহ জানেন, তিনি অন্তর যামি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.