![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভয়াল ও আতংকের সেই কালো রাত্রির রক্তাক্ত অধ্যায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট খুনী চক্র সর্ব প্রথম হামলা করে সেরনিয়াবাত পরিবারের উপর ভোর সোয়া পাঁচ টায় কৃষকলীগের প্রতিষ্টাতা ও ততকালীন মন্ত্রী প্রয়াত আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের ২৭ মিন্টু রোডের বাসভবনে। Blood and Quick Execution এর পরিকল্পনা মাফিক সেনা বাহিনীহতে বহিস্কৃত মেজর ডালিম এ হামলার নেতৃত্ব দেন। খুনী চক্র এ হত্যাকান্ড সফল ভাবে সম্পন্ন করতে হেভী মেশিনগান সংযোজিত দ্রুতগতির জীপ, প্রচুর এমুনিশন ও গুলি সহ এক প্লাটুন ল্যান্সার সৈন্য নিয়ে ইতিহাসের ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞে মেতে উঠে। আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের সেই বাড়িতে উপস্থিত ছিলেন অনেক আত্মীয় স্বজন সহ বরিশালের অনেকেই। হামলাকারীরা প্রথমেই বাসার সিকিউরিটিকে নিস্ক্রিয় করতে খুব দ্রুতগতিতে পুড়ো বাড়ি ঘিরে ফেলেন। সুরু করে বৃষ্টির মত গোলাবর্ষন। ব্যাপক গোলাগুলিতে বাড়ির সকলে আতংকিত হয়ে পড়ে। ঘটনার বাস্তবতা বিবেচনা করে রব সেরনিয়াবাত এর বড় ছেলে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ কালো উর্দি কোট পড়া সৈনিকদের প্রতিহত করার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যাপক আক্রমন করে বাড়ির সব কিছু তছনছ করে দরজা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে।
বাড়ি আক্রমনের সুরুতেই রব সেরনিয়াবাত বঙ্গবন্ধু ও শেখ মনিকে অবহিত করেন তার বাড়ির রেডফোন দিয়ে এবং জানতে পারেন বঙ্গবন্ধুর ৩২ নং ধানমন্ডি বাড়ির চারদিকে প্রায় একই অবস্থা। এতে সে তাতক্ষনিক ভাবে বিমূঢ় হয়ে বসে পড়েন “হে আল্লাহ বংশে বাতি দেওয়ার মত তওফিক রেখ” ঠিক সেই মূহুর্তে ঘাতকরা দরজা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে পরে এবং সকলকে বারান্দায় নিয়ে যায় ঘাতক সৈনিকরা। এ সময় উপস্থিত ছিল আঃ রব সেরনিয়াবাত, স্ত্রী আমিনা বেগম, মেয়ে বাবী ও বিউটি সেরনিয়াবাত, ছোট ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, শহিদ সেরনিয়াবাত, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর স্ত্রী শাহানারা আব্দুল্লাহ ও তার সন্তানরা সহ বরিশালের অনেকেই। ঘাতকারা দোতালা থেকে সবাইকে অস্ত্রের মুখে নিচতলায় নামিয়ে নিয়ে যান। সিঁড়ি দিয়ে নামবার সময় আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর ৪ বছর ১ মাস ২৩ দিন বয়সের শিশু সুকান্ত বাবু আব্দুল্লাহ মায়ের কোলে যেতে চাইলে শহিদ সেরনিয়াবাত তাকে কোলে তুলে নেন।
পরিবারের বাইরের আত্মীয় স্বজন সহ সকলকে ঘাতকরা একটি কক্ষে ঢুকিয়ে রাখেন এ সময় ঘাতকের হুংকার গুলির আওয়াজে রব সেরনিয়াবাত এর স্ত্রী আমিনা বেগম ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে জিজ্ঞাস করেন “ বাবা তোমরা কি আমাদের মাইরা ফেলবা” এর সাথে সাথে সুরু হয় ঘাতকদের নির্মম ব্রাস ফায়ার।
ঘাতকের ক্রমাগত ব্রাসফায়ারের একে একে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার স্ত্রী আমিনা বেগম, পুত্র বধু শাহানারা আব্দুল্লাহ, শহিদ সেরনিয়াবাত ও কোলে থাকা সুকান্ত বাবু সেরনিয়াবাত আব্দুল্লাহকে নিয়ে পাটিতে গুলিবৃদ্ধ হয়ে উপুর হয়ে পরেন। কোমরে গুলিবৃদ্ধ অবস্থায় শাহানারা আব্দুল্লাহ সহ বাকিরা গুলিবৃদ্ধ হয়ে কাতরাচ্ছিলেন। ঘাতকরা এ অবস্থায় নিচে নেমে যায়। এ সময় আহত বিউটি সেরনিয়াবাত রক্তাক্ত রব সেরনিয়াবাতকে ধরে চিতকার করে কেঁদে উঠলে ঘাতকরা ফিরে এসে দ্বিতীয় সফা গুলিচালায়। ঘাতকদের নির্মম ১৬টি বুলেট বিদ্ধ হয় বেবী সেরনিয়াবাতের শরীরে। এ সময় ভাগ্যক্রমে রক্ষা পান আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর মেয়ে কান্তা ও দের বছরের ছেলে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। ঘাতকদের গুলিতে আরও নিহত হন ক্রিডেন্স ব্যান্ডের সদস্য অপসোনিনের মালিক মরহুম আঃ খালেক খান এর বড় ছেলে আবদুর নাঈম খান রিন্টু ও আহত হন ক্রিডেন্স ব্যান্ডের সদস্য ডা খ ম জিল্লুর রহমান সহ আরও অনেকে।
দীর্ঘ সময় চিকিতসাধীন থেকে মহান আল্লাহর তালার রহমাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে বেঁচে যান রব সেরনিয়াবাতের স্ত্রী আমিনা বেগম, মেয়ে বিউটি ও রিনা সেরনিয়াবাত, আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ (খোকন) সহ আরও কয়েকজন। ১৫ই আগষ্ট ঘটনার আনেক দিন পর আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ জানতে পারেন যে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে বেঁচে আছেন তার স্ত্রী শাহানারা আব্দুল্লাহ। যারা আজও বয়ে বেড়াচ্ছেন ভয়াল সেই রাতের দূঃসহ স্মৃতি স্বজন হারাণো তিব্র বেদনা...।
©somewhere in net ltd.