![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মোস্তাকিমের পথে
(পর্ব এক)
চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাসফরে কুমিল্লা এসেছে। কুমিল্লা সেমিট্রিতে তারা ঘুরে ঘুরে দেখছে, ছবি তুলছে। নুসরাত ও আবিদও ঘুরে ঘুরে দেখছে।
নুসরাত ।। ওয়াও! কি সুন্দর জায়গা, তাইনা আবিদ?
আবিদ ।। জায়গাটা সুন্দর ছিল না, তুমি আসায় সুন্দর হয়েছে।
নুসরাত ।। তাই?
আবিদ ।। হ্যাঁ, তুমি যেই যায়গায় যাও সেই যায়গা সুন্দর হয়ে যায়।
নুসরাত ।। ফ্লারট করো না, পিটানি দেব।
আবিদ ।। সেটা আমার সৌভাগ্য।
নুসরাত ।। সিরিয়াসলি, দেখো ভালো করে জায়গাটা। কী নীরব সৌন্দর্যের সাক্ষ্য বহন করে আছে। আমি তো আবার আসব এই জায়গায়, বারবার আসব।
আবিদ ।। আমাকে প্রশ্ন করো। এই প্রথম, এই শেষ। আর জীবনেও এখানে আসব না।
নুসরাত ।। কেন? তোমার ভালো লাগেনি জায়গাটা?কী ইন্টারেস্টিং!
আবিদ ।। ইন্টারেস্টিং এর কি আছে! আর কবরস্থান ঘুরে বেড়ানোর জায়গা নয়। এটা তো বোধোদয়ের জায়গা।
নুসরাত ।। বোধোদয়!
আবিদ ।। হুম। ভেবে দেখো, এই কবরে ঘুমিয়ে থাকা মানুষগুলো একসময় আমাদের মতোই চলত, ফিরত, কথা বলত। হয়তো তাদেরও অনেক স্বপ্ন ছিল, ঘর ছিল, পরিবার ছিল। অথচ আজ কী এক নিবিড়, না ভাঙা ঘুমে সবাই বিভোর হয়ে গেছে। একদিন আমাদের সাথেও এমনটাই হবে। একদিন আমরাও...
নুসরাত ।। ওহ, প্লীজ! দাদির মতো বোরিং লেকচার দেয়া শুরু করো না। ইউ নো, দাদির সাথে যখনই যে ব্যপারেই কথা বলি না কেন, এমনকি সেটা যদি একটা সিম্পল জোকও হয়, তিনি সেটাকে ঘুরিয়ে পেচিয়ে এমন অবস্থায় নিয়ে আসবেন যে মনে ভয় ধরে যাবে।
আবিদ হাসল।
নুসরাত ।। হেসোনা, ক্যামেরা ধরো। আর আমার আরো কিছু ছবি তুলো।
নুসরাতের দাদি ফাতেমা বেগম নারায়নগঞ্জে তাদের পুরনো বাড়িতে থাকেন। নুসরাতের বাবা আলমগীর ফাতেমা বেগমকে স্থায়ীভাবে ঢাকায় নিয়ে আসতে চায়। কিন্তু তিনি আসেন না। ফাতেমা বেগমের একটাই কথা। তিনি আমৃত্যু তার মরহুম স্বামীর বাড়িতেই থাকতে চান। নুসরাত যখন ইচ্ছা তখনই নারায়নগঞ্জে তার দাদির কাছে এসে থাকে। শিক্ষাসফর শেষে সে সোজা তার দাদির বাসায় চলে এসেছে। দাদিকে কুমিল্লায় তোলা তার ছবিগুলো দেখাচ্ছে।
নুসরাত ।। দিদা, দেখো, ছবিগুলো অনেক সুন্দর উঠেছে না?
ফাতেমা বেগম ।। এভাবে কবরের পাশে ছবি তুলতে হয় না, নুসরাত।
নুসরাত ।। উপস! দিদা, আমি জানি তুমি এখন বলবে কবর ছবি তোলার জায়গা না, কবর বোধোদয়ের জায়গা। ওখানে গেলে মানুষের বোধোদয় হয়।
ফাতেমা বেগম ।। তোকে কে বলল?
নুসরাত ।। কে আবার? আবিদ বলেছে।
ফাতেমা বেগম ।। বড় ভালো ছেলে!
নুসরাত ।। হুম। তোমার মতো বুড়ো হয়ে গেছে যে।
ফাতেমা বেগম ।। এটা আবিদের ফটো?
নুসরাত ।। হুম।
ফাতেমা বেগম ।। মাশাল্লাহ। অনেক ভালো দেখতে। ওর বাবা মায়ের সাথে কথা বলব?
নুসরাত ।। কী কথা?
ফাতেমা বেগম ।। বিয়ের!
নুসরাত ।। দিদা! তুমি বিয়ে করো। আমি মরে গেলেও বিয়ে করব না।
ফাতেমা বেগম ।। কেন?
নুসরাত ।। বিয়ে নারীকে শিকলে বন্দী করে দেয়। তার পাখাকে কেটে ফেলে। কিন্তু আমি উড়তে চাই। অনেক অনেকদিন উড়তে চাই, অনেক অনেক উপরে উড়তে চাই। কারারুদ্ধ হতে চাই না, গোলামীর পিঞ্জর পড়তে চাইনা। মুক্ত স্বাধীন আকাশে আমি হতে চাই এক শুভ্র বলাকা।
ফাতেমা বেগম ।। এভাবে বলিস না। খোদাকে ভয় কর। বিয়ে একটি ফরজ ইবাদাত। আর তুই যতই উড়তে চাস, উড়ে উড়ে যত দূরেই যেতে চাস, আল্লাহর সীমানার বাইরে কখনই যেতে পারবি না। আল্লাহর দৃষ্টির বাইরে কখনই যেতে পারবি না।
নুসরাত ।। উফ দাদি, আবার শুরু করলে! খুব ঘুম পাচ্ছে। আমি এখন ঘুমাবো। গুড নাইট।
সুবহে সাদিক। আকাশে হাল্কা হাল্কা আলোর রেখা। মসজিদ থেকে ভেসে আসা সুমধুর আজানের ধবনি। ফাতেমা বেগম নামাজ পড়ে এসে নুসরাতকে ডাক দিলেন। নুসরাত ঘুম জড়িত কন্ঠে বলল, উহ দাদি, যাও তো, ঘুমাতে দাও।
ফাতেমা বেগম বললেন, নামাজ পড়ে ঘুমা। উঠ এখন।
নুসরাত উঠল না।
ফাতেমা বেগম মনে মনে একটু কষ্ট পেল। বললেন, হায়রে দুনিয়া! সবার জন্য বান্দার সময় আছে, শুধু আল্লাহর জন্য সময় নেই।
তিনি দরজা খুলে উঠোনে এলেন। ভোরের পবিত্র বাতায়ন তাকে ছুঁয়ে গেল। তিনি তার পোষা পায়রাগুলোকে খাবার দিলেন। পাড়ার একটা কুকুরও তার দিকে এগিয়ে এলো।
তিনি বললেন, তুই আজকেও এসেছিস। বোস, খাবার আনছি।
কুকুরটি ঘেউ ঘেউ করে উঠলো।
তিনি বললেন, ধৈর্য ধর। কুকুর হয়ে জন্মেছিস, কুকুরের মতোই থাক। মানুষ হোস না, অধৈর্য হোস না।
তিনি খাবার এনে কুকুরকে দিলেন।
(চলবে...)
©somewhere in net ltd.