নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যদি ভালো ইনসানই না হতে পারি, তবে এই রক্ত-মাংস-রূহ-মস্তিষ্কের মূল্য কী? আমি উড়ার স্বপ্ন দেখি না, উড়তে তো মাছিও পারে! আমি মাটির আদম, মাটিতেই মরতে চাই, আমার বুকে লাগিয়ে দিও কদম ফুলের গাছ।

কাগজের ফেরিওয়ালা

কাগজের ফেরিওয়ালা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মোস্তাকিমের পথে (পর্ব ২)

১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৯:৪৯

ফাতেমা বেগম প্রতিদিনের মত উঠোনে ভিখারীদের দান সদকা করছিলেন। এমন সময় নুসরাত হাই তুলতে তুলতে বেরিয়ে এলো আর বলল, দিদা, টুটপেস্টটা কোথায় রেখেছ? খুঁজে পাচ্ছি না তো।
ফাতেমা বেগম বললেন, ভেতরে যা। আমি আসছি।
নুসরাত বলল, কিন্তু টুটপেস্ট...
ফাতেমা বেগম বললেন, বললাম না, ভেতরে যা। আমি আসছি।
নুসরাত বাড়ির ভেতরে চলে গেল।
একজন বৃদ্ধ ফকির বললেন, ও আলমগীরের মেয়ে না?
ফাতেমা বেগম বললেন, জ্বী। দোয়া করবেন।
বৃদ্ধ ফকির বলল, হ্যাঁ, দোয়া করি। ওর বিশেষ দোয়ার প্রয়োজন। আল্লাহ ওকে হেদায়াত দিন।
*****
ফাতেমা বেগম টুটপেস্ট নিয়ে নুসরাতের রুমে এলেন। টুটপেস্ট দিতে দিতে বললেন, তোর এভাবে বাড়ির বাইরে যাওয়া উচিৎ হয়নি। অন্তত ওড়না পরে তো বের হবি। লোকে কী ভাববে?
নুসরাতঃ লোকে আবার কী ভাববে? আর তুমি প্রতিদিন ওদের এত কিছু দাও কেন?
ফাতেমা বেগমঃ রিজিক দেয়ার মালিক আল্লাহ। মানুষ তো কেবল উছিলা মাত্র। আর ধনীদের সবকিছুতে গরীবের হক থাকে।
নুসরাতঃ এত আদর আপ্যায়ন ভালো না। এসব ছোটলোককে যত আস্কারা দিবে, ততই তারা মাথায় চড়ে বসবে।
ফাতেমা বেগমঃ এভাবে বলে না, বোকা মেয়ে। যার টাকা পয়সার দৈন্যতা সে ছোটলোক নয়, বরং সেই ছোটলোক যার মন ছোট, যার আখলাক বা চরিত্রে দৈন্যতা আছে।
নুসরাতঃ হাউইভার, আমার খুব ক্ষিধে পেয়েছে। ভার্সিটিতেও তো যেতে হবে।
ফাতেমা বেগমঃ তুই ব্রাশ করে ডাইনিং টেবিলে আয়।
*****
ডাইনিং টেবিলে খেতে খেতে নুসরাত বলল, আজ ভার্সিটিতে একটা প্রোগ্রাম আছে। নারী দিবস উপলক্ষে। একটা প্রতিযোগিতাও হবে। আমি সেখানে নাম দিয়েছি। ক্লাস শেষে এটেন্ড করব। দোয়া করো দাদি, যাতে ফার্স্ট প্রাইজ আমি জিততে পারি।
ফাতেমা বেগমঃ দোয়া করি, আল্লাহ তোকে সব পরীক্ষায় সফলতা দান করুন।
নুসরাতঃ জানো দিদা, আমি একটা ভাস্কর্য তৈরী করছি। ভালোই হয়েছে দেখতে। ক্লাসে প্রেজেন্ট করব সামনে। সবার মধ্যে আমার ভাস্কর্যটাই বেস্ট হবে, তুমি দেখো।
ফাতেমা বেগমঃ ভাস্কর্য! তুই মূর্তি বানাস?
নুসরাতঃ হ্যাঁ, আমার সাবজেক্টই তো ওটা।
ফাতেমা বেগমঃ কিন্তু মূর্তি বানানো তো শিরকি গুনাহ!
নুসরাতঃ ওহ, দিদা! এটা একটা আর্ট। একটা শিল্প।
ফাতেমা বেগমঃ সে যাই হোক, মূর্তি বানানো ঠিক না। আল্লাহ নাখোশ হোন।
নুসরাতঃ আল্লাহ তো অনেক কিছুতেই নাখোশ হোন। তুমি খোদাকে নিয়ে ঐ জোকসটা শুনেছ?
ফাতেমা বেগমঃ তওবা কর, বোকা মেয়ে। আল্লাহকে নিয়ে জোকস হয় না। এটা জঘন্য অপরাধ। তুই মূর্তি বানানো ত্যাগ কর। মঙ্গলের পথে আয়, শিরকের পথে যাস না।
নুসরাতঃ ওহ কাম অন দিদা, আমি তো আর মূর্তিতে প্রাণ দিতে যাচ্ছি না, আর পূজাও করছি না। জাস্ট একটা আর্ট করছি।
ফাতেমা বেগমঃ প্রথম প্রথম মূর্তির কারিগররা এটাই বলে যে, আমি স্রেফ মূর্তি গড়ছি, আর কিছু করছি না। কিন্তু ধীরে ধীরে মানুষ তার প্রতি আসক্ত হয়ে যায়, তাকে ভালবাসতে শুরু করে, তারপর একসময় ভালবাসা ভক্তিতে পরিণত হয় আর ধীরে ধীরে মানুষ তার পূজা শুরু করে দেয়। অথবা নিজেকেই পূজনীয় ভাবতে শুরু করে।
নুসরাত আর কিছু বলল না।
*****
নুসরাত ভার্সিটিতে তার ভাস্কর্যটিকে দেখছে। সে সময় আবিদ এসে উপস্থিত হলো।
আবিদঃ তুমি যাবে না? প্রোগ্রাম তো শুরু হয়ে যাচ্ছে।
নুসরাতঃ হ্যাঁ যাবো। আর একটু কাজ করে নেই।
আবিদঃ আমার সতীনকে এত সময় দাও, আমার তো হিংসে লাগে।
নুসরাতঃ সতীন?
আবিদঃ হ্যাঁ, এই ভাস্কর্য তো আমার সতীনই।
নুসরাতঃ তুমি এত আজগুবি আজগুবি কথা বলো না? ইচ্ছে করে ধরে সাইজ করি।
আবিদঃ হ্যাঁ ভাই, কাঁদা মাটি হলে তোমার হাতেই সাইজ হতাম যেমন করে এই মূর্তিটি হচ্ছে। আচ্ছা, এটা কার মুখ বানাচ্ছ? কোন পছন্দের হিরোর নিশ্চয়ই?
নুসরাতঃ জানিনা, ব্যস এমনি। মনে যেরকম আসছে সেরকম করেই বানাচ্ছি। ইচ্ছেমতন। অনেক হ্যান্ডসাম চেহারা হচ্ছে, তাই না?
আবিদঃ হুম। হ্যান্ডসাম তো বটেই। একচুয়ালি এটা তুমি আমাকে দেখেই বানাচ্ছ। দুনিয়াতে আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলে আর কোথায় পাবে?
নুসরাতঃ মোটেই না। তোমার সাথে এই ভাস্কর্যের কোন মিল নেই। তবে ভবিষ্যতে ভেবে দেখব তোমার কথা। একটা বান্দরের ভাস্কর্য বানানোর ইচ্ছা আমারও আছে।
আবিদঃ এটা কিছু হইলো! দিলে তো হৃদয়ের তাজমহল ভেঙে। মেয়েরা এতো নিষ্ঠুর কেন?
নুসরাতঃ এক্সকিউজ মি, আজ নারী দিবস। মেয়েদের নিয়ে বাজে কথা বললে ঠ্যাং ভেঙে হাতে ধরিয়ে দেব। ওহ হো চলো, লেট হয়ে যাচ্ছে। আমার তো আবার বক্তব্য দিতে হবে।
আবিদঃ হুম। জিতলে কিন্তু পিৎজা মাস্ট।
*****
“... আমরা জানি, আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে নারীদের কত বড় একটা অবদান ছিল। আমরা প্রমাণ করেছিলাম, নারী মানে অবলা কিছু নয়। নারী মানে শক্তি, নারী মানে সংগ্রাম। অথচ সেই নারীকে আজ নিষ্পেশিত করা হচ্ছে, নিগৃহীত করা হচ্ছে। নারীকে বন্দী করে রাখা হচ্ছে এক অদৃশ্য শিকলে। নির্যাতন, নিপীড়ন করা হচ্ছে যখন তখন যেভাবে খুশি সেভাবে। ধর্মীয় গোঁড়ামি আর সামাজিক রীতিনীতির দোহাই দিয়ে নারীদের অধিকার ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে। এখনই সময় এসেছে প্রমাণ করার যে নারীরাও মানুষ। তাদেরও অধিকার আছে পুরুষের মতো করে বাঁচবার, মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেবার, খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে স্বাধিকারের সমুদ্রে ভাসবার, বন্দীত্বের শৃঙ্খল ভেঙে ময়ুরের মতো পেখম মেলে নাচবার, নির্যাতন নিষ্পেষণের দেয়াল ভেঙে কোকিলের মতো করে গাইবার।”
সবাই করজোড়ে হাততালি দিল। নুসরাত ডায়াস ছেড়ে নীচে নেমে এলো। আবিদ বলল, ফ্যান্টাসটিক। তোমার স্পিচের সত্যিই তুলনা হয় না। জোস।
নুসরাত বলল, থ্যাঙ্ক ইউ। ভালো হয়েছে, তাই না?
আবিদ বলল, মাইন্ডব্লোইং। ফার্স্ট প্রাইজ তুমিই পাবে, দেখো। কি খাওয়াবে সেটা বলো।
নুসরাত বলল, খাওয়াবো তো অবশ্যই। তবে আমার একটা কাজ করতে হবে।
আবিদ বলল, জো হুকুম প্রিন্সেস। আদেশ করুন।
নুসরাত বলল, বাব্বাহ! আদেশ? ওকে যাও, সেনাপতি। প্রিন্সেসের চাঁদ ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে। চাঁদ পেড়ে নিয়ে এসো।
আবিদ হাসল।
নুসরাত বলল, আমি কুমিল্লা যাবো। তোমাকে আমার সাথে যেতে হবে।
আবিদ বলল, কালই না গেলে!
নুসরাত বলল, আজ আবার যাবো। আমার খুব ভালো লেগেছে জায়গাটা।
আবিদ বলল, অসম্ভব। পাগল হয়ে গেছ নাকি?
নুসরাত বলল, হুম, পাগল হয়ে গেছি। তুমি গেলে ভালো, নয়তো আমি একাই যাবো।
আবিদ বলল, ঠিক আছে, ঠিক আছে। যাবো, বাট এটাই শেষবার, ওকে?
নুসরাত বলল, ওকে।
(চলবে...)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.