![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
যাত্রাপথের গল্প-৪
-অদ্বিতীয়া সিমু
আজ বড্ড ব্যস্ত ছিলো মুনীরা। ওর ফুরসতই ছিলো না, কারো সা্থে কথা বলার। তারপরো নুরজাহানের সাথে নাস্তা করতে নিচে নামলো। তামান্না ছিলো। ফুড লাভারসের কাঁচঘেরা টেবিলে গরম চা আর সিংগারা।
মুনীরাঃ আমার চা চিনি ছাড়া...
নুরঃ কবে ডায়েট ধরলি!!!
টাম্মুঃ ঊম্মা, কেমন চলছে? জানো, আমি না মুনিরাপ্পি তোমাদের মাধবদী গেছি...
মুনীরাঃ কই?
টাম্মুঃ ড্রিম ল্যান্ড...
মুনীরাঃ কার সাথে, বাসার সবাই??
টাম্মুঃ হা, তবে ঐশী যায়নি, অর এক্সাম...দেহ ছবি টুলছি...
মরিয়ম ইসলাম। আমাদের তাম্মু এমন্ধারাই। মোবাইল খুলে ছবি দেখাতে লেগেছে...ওর আম্মু, আর ও...নুরের বোধহয় তাড়া আছে।
নুরঃ আমি গেলামগা...
টাম্মুঃ কেন আপ্পি এমন কর কেন?
মুনীরাঃ কি হইছে তোর?
নুরঃ টেনশন শাহ আলম এখুনি ডাকবো।
টাম্মুঃ যমুনা ব্যাংক!!!
মুনীরাঃ তোর শরীর কুলুচ্ছে???
নুরঃ আর বলিস না। একদিন কাজ করেই মনে হচ্ছে আর পারছি না। অপারেশন্টার পর মনে হয়...।
নুর কথা বলতে বলতে উঠে পড়ল। ওর আসলেই হয়তো তাড়া আছে।
টাম্মুঃ আপ্পি তুমি যাও, আমরা আসছি।
ও চায়ের কাপে আয়েশ করে চুমুক দিলো।
টাম্মুঃ মুনীরাপ্পি, তোমারো কি অনেক কাজ?
মুনীরাঃ না আমি আজ হাওয়ায় ঘুরবো...
টাম্মুঃ হিঃ হিঃ দাড়াও টাকাটা দিয়ে আসি...
______________
উপর উঠতেই মিটিং এর এহলান। দোতলায় নামতে হবে। কিন্তু এল বি এফ এল –এর চিঠি উত্তরটার বাংলা করে দিতে হবে। মুনীরা ছোট রুমে গিয়ে বস্লো। জাকিয়া আপু, শরীফ আল মাহমুদ ভাই, শিমুল, মিঠু, আশিক, শরীফ ভাই... সবাই বসে।
জাকিয়া আপুঃ এই শরীফ সাহেব, আপনার লটটপট(ল্যাপটপ)- এ এসব কি?
শরীফ আল মাহমুদ ভাইঃ এহ আপু, এসব কি মানে? মান ইজ্জত রাখবেন্না!!!
সবাই হো হো করে হাসছে। মুনীরা এক ঝলক তাকালো। কোনো মেয়ের ছবি।
মুনীরাঃ কে?
শিমুলঃ কে আবার ... ভাবী...
মুনীরাঃ নাম কি?
শিমুলঃ মিতু...
শরীফ আল মাহমুদ ভাইঃ কি শুরু করলেন...
তারপর হাসি। রনির এন্ট্রি ঘটলো রুমে। হাল্কা পাতলা রনি ভাইকে দেখলে মনে হয় এখুনি বুঝি দমকা বায় উড়ে যাবে বেচারা! মুনীরা রনির দিকে তাকিয়ে মাথা দোলালো।
মুনীরাঃ কি রনি ভাই, আপনার বন্ধু নাকি বিয়া করছে?
রনিঃ আরে কন কি! গোপালগঞ্জের মাইয়া।
শরীফ আল মাহমুদ ভাই রনির দিকে হাত পাকিয়ে মারলেন।
শরীফ আল মাহমুদ ভাইঃ আপু, হচ্ছে কি!!!!
মুনীরাঃ গোপালগঞ্জের ভাবী
আজ আমাদের দাবী...হি...হি...
শরীফ আল মাহমুদ ভাই হাসতে হাসতে বের হয়ে গেলেন। মুনীরা পেছন থেকে চিল্লে বল্লো, ‘ ভাই, আমি মিতু নিয়ে ছড়া আজ লিকছি...’।
____________________
মিটিং। চেয়ারে বসে ইশ্তি ঘুমাচ্ছে। মুনীরা কলম দিয়ে দিলো খোঁচা। পিছন বসা মেয়েদের কেউ হেসে উঠলো। সাইফুল স্যার ব্যাংক ওয়ালাগো হিসাব নিতাছে। আর পিছনোয়ালারা গপ্প মারতাছে। স্যারের কথা শুনে আমার মাথা গন্ডগোল হইবার যোগার যন্তর। ‘এভাবে অবরোধ আর হরতাল চল্লে, তোমাদের পরীক্ষা মোটেও পিছানো হবে না, আমরা রাতে তোমাদের এক্সাম ফিক্স করবো...।‘ মুনীরার কানে আর কিছু ঢুকছে বলে মনে হচ্ছে না... কানে বাজছে... ‘এভাবে অবরোধ আর হরতাল চল্লে, তোমাদের পরীক্ষা মোটেও পিছানো হবে না, আমরা রাতে তোমাদের এক্সাম ফিক্স করবো...।‘
____________________
স্যার লিফটে উঠবেন। মুনীরা পিছিয়ে দাড়ালো, যাতে স্যার না দেখে।
সাইফুল স্যারঃ ওই বেডি, যা লাঞ্চ কইরা রেডি হ... এল বি এফ এল লইয়া মিটিং এ বমু...
কাম সারছে মুনীরা!
______________
খাবার সময় তাম্মুর উপর কিছুটা রাগ করল মুনীরা। ও বেখামাখাই জুথির পাশে বসে ডাকছে আপ্পি আপ্পি করে। ওর জানা উচিত মুনীরা জুথির সাথে খাবে না। জুথি মেয়েটাকে ভীষণ ভালবাসা দিয়েছে মুনীরা। কিন্তু মেয়েটা হয়ত বোকা, নয়তো অতি চালাক। তবে তাকে খারাপ বলে না মুনীরা, বলে-এডিক্টেড। আসলে প্রেম মানুষকে কতটা নীচে নামাতে পারে জুথি তার প্রমাণ। তাও এমন এক ছেলের জন্য। আমার মত না, এ ছেলের বন্ধুই বলে, এ কেমন জঘন্য ছেলে!! ভাবতে ভাল্লাগছে না। মেয়েটার জন্য দুঃখ করা ছাড়া কারো আসলে কিছু করার নাই। কিন্তু আমার সাথে মেয়ে চালাকী কেনো করলে?? আমার অজান্তেই ভিউ ডিটেইল থেকে নাম না কেটে মা আর বোনের নাম্বার কেটে দিছে আমার মোবাইল থেকেই!! ব্রেভো!! আর আমি কেনো ওর পারসোনাল বিষয় ওর ছোট বোন কে বোলেছি!! চমৎকার!! বল অমত কার?? এমন এডিকশন না হলে একে প্রেম বলে!! কিছু জঘন্যতা নাই বললাম। তুলে রাখলাম।
____________
স্যারের সাথে মিটিং। সাইফুল স্যার, কাম্রুল স্যার, রিয়াদ ভাই...। মিটিং শেষ হতেই ছুট চা খেতে। তাম্মুর একটা কথা হিলিয়ে দিছে মুনীরার অস্তিত্ব। কিছু বলার নাই। কাম্রুল স্যার এল বি ফাউন্ডেশনের একাউন্ট দিয়ে গেছে, সেতাও দেখতে হবে। ওমর কে নিয়ে বস্তে হবে।
____________
মুনীরাঃ দাদা, কাল একশনাইডের ফাইল নিয়ে আস্তে যাব। আমি আর ওমর যাচ্ছি...
দাদাঃ না, ওমর আজ থেকে ইন্সেন্তিভে ডপুডেট। রাগীব স্যার বোলছে...
মুনীরাঃ স্যার!! স্যার নিজেও জানে আর এম জি র্যাগস প্রোজেক্ট এ ডোনার রিপোর্ট করতে হয়!! স্যার, কাজ শেষ না হলে একথা বল্বেই না। আর আমাকে জিগেস তো অন্তত করত বা বলতো!!! আমি স্যারের সাথে কথা বলি...
স্যার ফোন ধরেন্নি। ফোন ধরেছেন ভাবি। কি করা!হয়তো স্যার বলতেও পারে!
মুনীরাঃ দাদা, তাহলে অন্য কাওকে দেন!
দাদার মুখে যেনো হাসি ফুটলো।
দাদাঃ হে...হে...তুমি বৈশাখী কে নাও...
মুনীরাঃ মাথা কি আপনার খারাপ! যদি ও খালি থাকে তো ওকে ইন্সেন্টিভে দেন। আমি ওমর কে কেন দিব?
দাদাঃ বৈশাখীকে ইন্সেন্তিভে দিতে মানা করছে।
মুনীরাঃ কে? রাগীব স্যার? আমি এখুনি ফোন করে জানবো।
মুনীরার রাগে গা জলছে । এরা পাওয়ার পে যা খুশী তা করে।যারে দিয়ে অডিট হবে তারে দেয় ইন্সেন্তিভে, আর গাধা দেয় অডিটে! এমন ফার্ম এর প্রতি দরদ কার থাকবে! ওরা কাজ করে ফিল্ডে না আমরা! আমরা জানি কাদের দিয়ে কাজ উঠবে। তাই তাদেরকেই আমরা চাই। আমাদের দরকার নেইত কাউকে সাধ করে চাইতে! আর আমরা ২ দিন কাজ করলেই বুঝি কারে দিয়ে কোন কাজ হবে। এরা ২/৩ জন নেকা মেয়ে নিয়ে তাদের জন্য দরদে উথলে পড়ে। কেউ যদি বলে এই মেয়ে নিয়ে কাজ করতে, আমি সাদা কাগজে লিখে দিব অকাজ বেশী হবে। নেকামী করতে করতে এদের জান যায়।।
দাদাঃ মুনীরা , আমি যে বলেছি বৈশাখী বিষয়ে এতা স্যারকে বলো না...
স্যার ফোন ধরলেন। মুনীরার খুব ইচ্ছে করছে স্যারকে বলতে। কে বলেছে বৈশাখী ইন্সেন্টিভে কাজ করতে মানা! মুনীরা নিজেও এ সেক্টর এ কাজ করেছে। তাহলে নেকা মেয়েরা কেন পাড় পায়! স্যারকে প্রশ্ন করতে বড্ড ইচ্ছে করছে। মুনীরা করলো না। ওমরকে চেয়ে ফোন রাখলো মুনীরা।
দাদা দৌড়ে এল।
‘তুমি স্যারকে বলনি তো আমি যা বলেছি। বৈশাখী যে খালি আছে তা আবার কও নাইতো... আমি কাল-ই ওকে কোন ক্লায়েন্টে দিয়ে দিব...তুমি কিছু কও নাইতো...আর ওমর তুমি মুনীরার কাজ শেষ হলেই ইন্সেন্তিভে ঢুকবা...’
মুনীরা কিছু বলল না। ওর ঘেন্না লাগছে, ঘেন্না লাগছে...
____________________________________________________________
©somewhere in net ltd.