![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রচন্ড শীত
পৌষের ঠান্ডা পড়েছে।
কনকনে শীতে সব কিছু ই জমে যাওয়ার উপক্রম।
হাতঘড়িটার দিকে তাকালেন নাবিল সাহেব।
ইফতেখার আহমেদ নাবিল।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
ঘড়ির সময়টা জানান দিচ্ছে রাত 11:00 টা।
বাইরে বেরোবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এই শীতে নিজস্ব উদ্যোগে প্রায় দশ হাজার কম্বল বিতরণ করার পরিকল্পনা করেছেন তিনি।
বাল্য বন্ধু আতিক ও জুনায়েদের সহায়তায় প্রায় দশ দিন থেকে এ কাজ করছেন তিনি।
তাও আবার একেবারে লোকচক্ষুর আন্তরালে।
গাড়ি বারান্দার দিকে এগুতেই দেখতে পেলেন তার সহধর্মিনী শেষ একশো কম্বল নিজে গাড়িতে তুলে দিচ্ছেন।
মুখ থেকে সহসাই বের হয়ে আসলো ’আলহামদুলিল্লাহ’।
তার এই প্রচেষ্টায় নিরবে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন ইনি।
নুসাইবা নুসরাত আফরিন।
গিয়ে প্রশান্তি চিত্তে আলিঙ্গন করলেন প্রিয়তমা কে।
বাহুডোরে রেখেই বললেন নুসু দোয়া করো মহান রব যেন আমার কাজকে কল্যানের চাদরে আবৃত করে দেন।
প্রিয়তমার কাছে বিদায় নিয়ে ’বিসমিল্লাহ’ বলে উঠলেন গাড়িতে।
নিস্তব্ধ এই রাতে কনক্রিটের গলি পেরিয়ে গাড়ি রাস্তায় উঠলো।
গন্তব্য দশ কি.মি. দূরে আতিয়ানগর।
শহর ছেড়ে মাঠ পেরিয়ে ওই গ্রামে পৌছতে হয়।
গাড়ি চালাতে চালাতে তার মনও ছুটে চললো সুদুর এক অতীতে।
মনে পড়লো পিতার সেই মেহনতগুলি।
আবেগতাড়িত হয়ে উঠলো মন।
পরম মমতার সেই স্নেহ আর জীবনে পথ চলার সেই দীক্ষা গুলি।
স্মৃতিগুলো আজও যেনো জীবন্ত।
স্কুলে প্রথম দিনেই পাঠানোর পূর্বে প্রথম একটাই কথা
“আমি ভালো ছাত্র চাই না,ভালো মানুষ চাই।’’
এই একটা কথার বাস্তবায়নে সারাটা জীবন ওয়াহেদ সাহেব চেষ্টা করেছেন।
ছেলেকে প্রথম শিক্ষাটাই দিয়েছেন কুরআনের এ আয়াতের আলোকে ,‘বলুন!হে নবী,আমার নামায,আমারকুরবানী,আমার জীবন ও আমার মরণ সবই মহান আল্লাহর জন্য।
জীবন নদীর কোন বাকেই যেন শুধূ প্রিয়ংবদার ছলনায় নিজের স্বকীয়তা না হারায় বরং আর্তপীড়িত মানুষের মাঝেই নিজের স্বকীয়তা খুজে নেয় মহান প্রভুর জন্য।
স্মৃতির অতল থেকে অতলে হারিয়ে যাচ্ছে নাবিল।
হঠাৎ খেয়াল ফিরে গাড়ির ইঞ্জিন অফ হয়ে যাওয়াতে।
শহর ছেড়ে গ্রামের পথে পা বাড়াতেই গাড়ি অফ হয়ে গেল।
বিরক্ত ও শঙ্কিত হলো সে।
চেষ্টা করলো বারকয়েক।
গাড়ি চালু হলেও হেডলাইট জ্বলছে না।
তবে কি গন্তব্যে পৌছতে পারবে না?
মনে হাজারো প্রশ্নের উদয় হলো।
তবুও অনড় নাবিল।
কাজ শেষ তাকে করতেই হবে।
গাড়িতে বসতেই দেখতে পেলেন কে যেন এগিয়ে আসছে।
কাছে আসতেই চমকে উঠেছেন নাবিল।
হাত পা স্থির হয়ে গেছে তার।
না,কোন ছায়া নয় ।
-বাবা!
মৃদু শব্দে ডেকে উঠলেন তিনি।
ধমকের সুরে বললেন কিরে চমকে উঠেছিস?
চল।গাড়ি চালু কর।
যেতে হবে তো।
কিছুটা নড়ে উঠলেন,
শুধু কন্ঠ থেকে একটাই শব্দ বের হয়ে আসলো
-চলো।
মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলোতে প্রচন্ড কম্পন তৈরি হয়েছে।
স্মৃতি হাতড়ে ঘটনার ব্যাখ্যা তৈরিতে ব্যস্ত।
মনে মনে ভাবলেন,
-বাবাতো আজ থেকে পাচ বছর আগেই.....
না,ভাবনাটা সম্পূর্ন হলো না নাবিলের।
আবারো বাবার কন্ঠ,
-কি হলো?
গাড়ি চালু কর।
চালকের পাশে সামনেই উঠে বসলেন ওয়াহেদ আহমেদ জামিল।
ছয় ব্যাটারীর লম্বা টর্চটা জ্বালিয়ে সামনে রাস্তা বরাবর মেলে ধরলেন।
অদ্ভূত এক ঘোরের মধ্যে অবস্থান করছে নাবিল।
গাড়ির ইঞ্জিন চালু হলো।
মৃদু হিস হিস শব্দ করে গাড়ি ছুটে চললো আতিয়া নগর এর উদ্দেশ্য।
আতিয়া নগর এসে পড়েছে নাবিল।
বাবা ছেলে দুজনে কম্বলগুলো গাড়ি থেকে নামালো।
শীতে প্রচন্ড কষ্ট পাওয়া মানুষগুলোর আনন্দের কাছে নাবিলের ক্লান্তি যেন কিছুই নয়।
গুনে গুনে নিরানব্বই টা শেষ করেছে।
আর একটি কম্বল আছে।
বাড়ি সব শেষ।
ওয়াহেদ সাহেব টর্চের আলো লম্বা করে ফেলেছেন সামনে।
দুশো গজ দূরে একটা বাড়ি চোখে পড়ে নাবিলের।
হাটতে থাকে সেদিকেই।
আধাখোলা দরজা।
কাছাকাছি হতেই কানে আসে টিউবওয়েলে পানি তোলার শব্দ।
ফিরে চাই সেদিকে।
-কে ওখানে?
অন্ধকার ভেদ করে এগিয়ে আসে এক যুবক।
মিনহাজ।
পিতৃহারা সংসার টাকে বেশ কষ্ট করেই আগলে রেখেছে সে।
মিনহাজকে দেখে চোখ দুটো বিস্ফোরিত হয় নাবিলের।
এতো তার অফিসের সহকারী।
এতটা দৈন্য দশা!
গায়ে একটা পুরাতন জামা ছাড়া আর কিছু নেই।
তবুও আত্মমর্যাদাবোধের কারনে কখনো সে কিছু বুঝতে দেয়নি কাউকে।
-এত রাতে কেন বের হয়েছো?
’ওযু করছিলাম।’
-মৃদু উত্তর মিনহাজের।
বুঝতে বাকি থাকে না তার।
দারিদ্যতাও যে প্রভু প্রেম থেকে রাখতে পারেনি তাকে দূরে।
নাবিল জড়িয়ে ধরে মিনহাজকে।
দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে কয়েক ফোটা অশ্রু।
শেষ কম্বলটা মিনহাজকে দিয়ে গাড়িতে এসে বসে।
গাড়ি চালু হতেই দেখে হেডলাইট জ্বলে।
পাশে তাকিয়ে দেখে বাবা নাই।
মস্তিষ্কে এক অসম্ভব রকমের কাপুনি তৈরি হয় তার।
মনে হয় সমস্ত নিয়ন্ত্রণ ভেঙ্গে যেতে চাইছে।
গাড়ির গতি একটু বাড়িয়ে দিয়েছে নাবিল।
গতি পেয়েছে তার চিন্তা।
বাবা,মিনহাজ ও হেডলাইট।
হিসেব মিলছে না তার।
ভোরের আযান কানে আসে তার।
আল্লাহু আকবার,আল্লাহু আকবার।
মায়াবী মিষ্টি সুরে ডাকছে মুয়াজ্জিন।
বাড়িতে প্রবেশের উদ্দেশ্য কলিংবেলে হাতটি চেপে বসে তার।
©somewhere in net ltd.