![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কুয়াশা ভেজা কোনো এক রাত শেষের ভোরে প্রান্তর ভেজানো শিশিরে, আমি জন্মেছি, কারো স্বপ্নে বিভোর ঘুম জড়ানো কন্ঠে জল পেতেছি দৃষ্টির আড়ালে। জোসনা ভেজা রাতে চন্দনের ঘ্রাণে ভোরের শিউলিও থমকে ছিলো খানিকটা। মৃদু হাওয়ার স্পন্দনে বকুল ফুলের নেশা আমায় গ্রাস করেছিলো শুভ্র আবহে। ঘরের এককোনে অনাদরে মলিন হওয়া তারপুরার বেদনার সাথে কেনো যেনো বন্ধুত্ব ছিলো শতাব্দী ধরে। চিঠির কালি শুকিয়ে পড়তো জলেশ্বরীর জলপদে। শ্রাবণের সন্ধ্যার বর্ষণের পানে আমি কতোকাল চেয়েছি। তরুণীর ভেজা চুল আকাশের স্বপ্নের শরৎের বিকেল কাশফুলের শুভ্রতা লুটতো আমাকে সঙ্গী রেখে। কারো স্বপ্নে, এক ফোঁটা নিঃশ্বাসে, হয়তো একটুখানি তৃপ্তিতে আমি দিনশেষে ফুরিয়ে যাবো মহাকালের বুকে। হয়তো স্বপ্ন ভিড়বে কুয়াশায়, বকুলের ঘ্রাণে, শ্রাবণের বর্ষনে!
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় মানেই হাসির রাজা। তাঁর কাণ্ডে হাসেনি এমন লোক বিরল। নিখাদ সব বাল্য সরলতায় মেতে উঠতেন বিভুতি দাদা।
দেখুন তেমনই কিছু কাণ্ড।
বিভূতির তখন কলেজবেলা।
দেখা দেখা হয়ে গেল রবিঠাকুরের সঙ্গে! সেই প্রথম বার।
ইউ পি স্কুলের শিক্ষক গগন পালের কাছে রবিঠাকুরের ‘‘বঙ্গে শরৎ’ আবৃত্তি শুনে মনে মনে কবির প্রতি বিভোর ছিল সে। তাঁকে এ বার পেল সামনাসামনি, সেন্ট পলস কলেজে। পা ছুঁয়ে প্রণাম করল বিভূতি।
মেসে ফিরে দিনলিপিতে লিখল প্রথম রবিঠাকুর দেখার স্মৃতি। —‘‘বক্তৃতা দিতে উঠলেন, কণ্ঠস্বর কানে যেতেই চমকে উঠলাম। ... মনে হল, অসাধারণ, জীবনে এমন কণ্ঠস্বর কানে গেল যা হাজার লোকের মধ্যে পৃথক করে নেওয়া চলবে। তিনি চাঁপার কলির মতো আঙুল দিয়ে একটি মুদ্রা করে বলেছিলেন, ‘কল্পলোক’, ‘কল্পলোক’।’’
দিন কয়েক রবিঠাকুর-দর্শনে মশগুল বিভূতি। কিন্তু সুখ-স্বপ্ন যেন তার কপালে লেখা নেই।
============
সে সময় বিভূতিভূষণ মির্জাপুর স্ট্রিটের মেসে রয়েছেন।
রোজ সেখান থেকে গঙ্গার ধারে যেতে পারেন না। তাই মেসের কাছেই শ্রদ্ধানন্দ পার্কে গিয়ে বসেন। কখনও কলেজ স্কোয়ারেও তাঁর বিকেল কাটে।
বিকেল গড়িয়ে রাত।
একবার জ্যোৎস্নারাতে ভয়ানক এক কাণ্ড!
বিভূতিভূষণের ছাত্র ডক্টর আবিরলাল মুখোপাধ্যায় স্মৃতিকথায় লিখেছেন সেই কাহিনি।
বিভূতি বসে ছিলেন পার্কে। রাত ন’টা।
হঠাৎ লাল পাগড়ির এক কনস্টেবল এসে হাজির। এত রাতে পার্কে কেন?
একরকম জোর করে বিভূতিকে থানায় নিয়ে হাজির। আর থানায় যেতেই চার্জ।
বিভূতি যত বোঝান, গিয়েছিলেন ঘুরতে। পুলিশের সন্দেহ বাড়ে! সোজা গারদে ঢুকতে হল তাঁকে।
মাঝরাতে থানার বড় কত্তা এলেন।
পঞ্চানন ঘোষাল।
তিনি তো এসেই বিভূতিকে চিনতে পারলেন। লজ্জায় ক্ষমা চাইলেন।
তাড়াতাড়ি বাইরে আনলেন বিভূতিকে। পঞ্চানন ছিলেন বিভূতিভূষণেরই ছাত্র। ভোরের আগেই সেদিন তিনিই মেসে পৌঁছে দিয়েছিলেন তাঁর স্যারকে!
========
বিভূতিভূষণকে কোথাও তাঁর অনুরাগীরা নেমন্তন্ন করলে, তাঁরা ঢালাও জলখাবারের ব্যবস্থা রাখতেন।
সকলেই জানতেন, এই মানুষটি সকলের সঙ্গে ভাগ করে খাওয়া-দাওয়া করতে ভালবাসেন।
একবার তেমন এক সাহিত্যের অনুষ্ঠানে গিয়েছেন। প্লেটের দিকে তাকিয়ে তো হতবাক! কী নেই!
হঠাৎ করলেন কী, এদিক-ওদিক তাকিয়ে প্লেট থেকে খাওয়ার তুলে পকেটে ভরে রাখলেন কিছু!
চোখে পড়ে গেল ব্যাপারটা!
পরে ঘনিষ্ঠ দু’ এক জন বিভূতিভূষণকে জিজ্ঞেসই করে ফেলেন। বিভূতি বলেছিলেন, ভালো খাবার খেলে বাবলুর কথা মনে পড়ে! বাবলু, পুত্র তারাদাস। পরে বিভূতির এমন কাণ্ডে মজা পেতেন তাঁর অনুরাগীরা। বিভূতিকে নেমন্তন্ন বাড়িতে চুপি চুপি নজরে রাখতেন ওঁরা।
এরকমই একদিন কবি কৃষ্ণদয়াল বসু ওঁকে দেখে অবাক! বলেই ফেললেন, ‘আরে বিভূতিবাবু, জামার পকেট রসে ভিজে যাচ্ছে যে!’
====
সেবার প্রকাশক-বন্ধুরা একটি কাজে ব্যারাকপুরে গিয়েছেন। একটি দলিল রয়েছে বিভূতিভূষণের কাছে। কাজটি সেটিকে ঘিরেই।
গিয়েই তাঁরা বললেন, সেই নথির কথা। বিভূতি বললেন, সে সব হবে। আগে চলো ইছামতীতে স্নান করে আসি।
স্নান তো হল, নথি দেখতে গিয়ে চোখ কপালে প্রকাশকদের!
একটা কেরোসিন কাঠের আলমারি থেকে বেরলো সে দলিল। উইপোকায় কেটে একশা। বিভূতিভূষণ সেখানা দেখিয়ে বললেন, ‘‘খুব দরকার?’’
কী বলবেন ওঁরা!
মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন সবাই! তাঁদের এক জন উইয়ের মাটি সরাতে সরাতে হঠাৎ হাতে পেলেন এক তাড়া নোটের বান্ডিল!
সঙ্গে ছিলেন এক সাহিত্যিক। তিনিই বের করলেন খাতা। তার মধ্যে কয়েকটা চেক।
কোনওটা এক বছর, কোনওটা দু’বছর আগের। বিভূতিভূষণ দেখে বললেন, চেকে উই লাগেনি ভাগ্যিস! তাতে এক প্রকাশক বললেন, তার আর দরকার হয়নি। চেকের মেয়াদ খতম!
শুনে কোনও হেলদোল নেই বিভূতির। বললেন, ‘‘চলো তো, স্নান সেরে আসি!’’
=====
সুবর্ণরেখার ধারে নির্জন শালবনে বসে দুই লেখক লিখছেন।
বিভূতিভূষণ আর প্রমথ নাথ বিশী।
দু’জনের মধ্যে মৌখিক চুক্তি, কেউ কারও সাধনায় বিঘ্ন ঘটাবে না।
চুক্তির নাম ‘বিশী-ব্যানার্জি প্যাক্ট’।
বিভূতি তাঁর চির পছন্দের টেবিল মানে, চামড়ার সুটকেসটির উপর লিখতে লিখতে উঠে গেলেন প্রমথর কাছে।
—একটা চুরুট হবে?
—কী কথা ছিল?
—চুরুট তো বাগানো হল!
চুরুট ধরিয়ে চলে যাচ্ছেন বিভূতি। পিছু ডাকলেন প্রমথ— ‘‘এসেছেন যখন, দু’মিনিট কথা হোক। কিন্তু আর যেন চুক্তি ভঙ্গ না হয়!’’
পুজো এসে গেল। লেখা শেষ করতেই হবে দু’জনকে। ফের চুক্তি ভঙ্গ।
এ বার প্রমথ হাজির।
বললেন, ‘‘বলি দেশলাই হবে!’’ বিভূতি কলম ফেলে বললেন, ‘‘একটা বিড়িই বরং খাও!’’
এতেই শেষ নয়, দু’জনেরই চাই তামুক!
অদূরে গৌরীকুঞ্জ। কল্যাণী তামাক সেজে নিয়ে আসেন। দুই বন্ধু জমিয়ে তামুক খান। চুক্তি টেকে না আর!
তারই মাঝে লেখা জমে ওঠে। প্রমথ পরে লিখছেন, ‘‘নেহরু-লিয়াকৎ চুক্তির যে দশা, বিশী-ব্যানার্জি প্যাক্টেরও তাই!’’
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:০৫
প্রামানিক বলেছেন: সুন্দর পোষ্ট।