![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কুয়াশা ভেজা কোনো এক রাত শেষের ভোরে প্রান্তর ভেজানো শিশিরে, আমি জন্মেছি, কারো স্বপ্নে বিভোর ঘুম জড়ানো কন্ঠে জল পেতেছি দৃষ্টির আড়ালে। জোসনা ভেজা রাতে চন্দনের ঘ্রাণে ভোরের শিউলিও থমকে ছিলো খানিকটা। মৃদু হাওয়ার স্পন্দনে বকুল ফুলের নেশা আমায় গ্রাস করেছিলো শুভ্র আবহে। ঘরের এককোনে অনাদরে মলিন হওয়া তারপুরার বেদনার সাথে কেনো যেনো বন্ধুত্ব ছিলো শতাব্দী ধরে। চিঠির কালি শুকিয়ে পড়তো জলেশ্বরীর জলপদে। শ্রাবণের সন্ধ্যার বর্ষণের পানে আমি কতোকাল চেয়েছি। তরুণীর ভেজা চুল আকাশের স্বপ্নের শরৎের বিকেল কাশফুলের শুভ্রতা লুটতো আমাকে সঙ্গী রেখে। কারো স্বপ্নে, এক ফোঁটা নিঃশ্বাসে, হয়তো একটুখানি তৃপ্তিতে আমি দিনশেষে ফুরিয়ে যাবো মহাকালের বুকে। হয়তো স্বপ্ন ভিড়বে কুয়াশায়, বকুলের ঘ্রাণে, শ্রাবণের বর্ষনে!
***এক অনাবাসী বাঙ্গালী প্রকৌশলী এবং দুই ভীনদেশির অসীম বীরত্বগাঁথা**
MIT - ম্যাসাচুসেটস ইনিস্টিটিউটস অফ টেকনোলজি ! ১৮৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি জন্মের সূচনালগ্ন থেকেই প্রযুক্তিবিদ্যা এবং প্রকৌশলবিদ্যায় শিক্ষা ও গবেষণায় সুপরিচিত বিশ্বব্যাপী । এম আই টিতে অধ্যয়ন করা সারা বিশ্বের ইঞ্জিনিয়ারদের স্বপ্ন এবং সেই সাথে গর্ব এবং আনন্দের বিষয়ও বটে।
১৯৭১ সালে তড়িৎপ্রকোশলী রেজাউল হাসান আমাদের গর্ব হয়ে গবেষণা করছিলেন সুদূর আমেরিকার সেই এমআইটিতে। কিন্তু দূরে থাকলে কী দেশের প্রতি টান তার বিন্দুমাত্র কমে? পাকিস্তান বাহিনী যখন ২৫শে মার্চের কালরাত্রিতে ঝাঁপিয়ে পরে নিরস্ত্র বাঙ্গালীদের উপর তখন থেকেই তিনি উৎসুক হয়ে পড়েন দেশের জন্য কিছু করবার নিমিত্তে। সাথে মাহবুবুল আলম,তৈয়বুদ্দীন মাহতাব এবং খোরশেদ আলমকে নিয়ে পরিকল্পনা করতে থাকেন আমাদের মুক্তিবাহিনীকে সাহায্য করবার।
কিন্তু সুদূর আমেরিকায় বসে কীভাবে সম্ভব দেশ মাতৃকার তরে জীবন বিলিয়ে দেওয়া বীর যোদ্ধাদের সহায়তা করা?
এক সময় পেয়ে গেলেন এই প্রশ্নের উত্তর। নিজের প্রকৌশলবিদ্যাকেই তিনি কাজে লাগাতে চান দেশের স্বার্থে। পর্যাপ্ত কমিউনিকেশন ডিভাইস অর্থাৎ মুক্তিবাহিনীর আভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য ওয়াকিটকি এবং ওয়ারল্যাসের অভাবে সম্মুখযুদ্ধে খুব একটা সুবিধে করতে পারছিলনা আমাদের যোদ্ধারা। রেজাউল হাসান সিদ্ধান্ত নিলেন আমাদের যোদ্ধাদের এই অভাব পূরণের। আমেরিকায় নিজ ল্যাবে বসে ওয়াকিটকি,ওয়ারলেস বানিয়ে বাংলাদেশে পাঠাবার দুঃসাহসিক এক পরিকল্পনা করলেন তিনি।
আমেরিকান সরকার পাকিস্তানকে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করছিলো এবং আমেরিকার নিয়মানুযায়ী কোনো যুদ্ধ বিধ্বস্ত এলাকায় সরকারের সহায়তা ব্যতীত ত্রাণ বিতরণ নিষিদ্ধ। তাই ধরা পরলে রেজাউলকে হয়তো ভিসা বাতিল করে পাকিস্তানেই ফেরত পাঠানো হতো এবং এদেশে আসা মাত্র পাকিস্তানী সামরিক জান্তার নির্যাতনের খড়গ নেমে আসতো তার উপর।
কিন্তু না, এসব কিছুই থামাতে পারেনি দেশপ্রেমিক রেজাউলকে। নিজে এবং আরো কয়েকজন বাঙ্গালীর সহায়তায় তিনি প্রায় তিরাশি হাজার ডলার সংগ্রহ করেন এবং তা দিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করে তৈরি করেন ১০টি HF Communication সেট যা দিয়ে দশ হাজার মাইল দূরে পর্যন্ত কথা বলা যেত,৫০টি VHF ওয়ারলেস সেট যা দিয়ে পাঁচ মাইলের মধ্যে যোগাযোগ করা যেত এবং ৪৫০ টি ওয়াকিটকি যা দিয়ে দুই মাইলের মধ্যে যোগাযোগ করা যেত।
সব মিলিয়ে ১০৫০টি অত্যাধুনিক কমিউনিকেশন ডিভাইস যা যুদ্ধক্ষেত্র আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ছিল অত্যাবশ্যকীয়।
শুধু তৈরি করলেই তো হবে না, যুদ্ধক্ষেত্রে প্রেরণের পূর্বে প্রয়োজন এই ডিভাইসগুলোর কার্যকারিতা পরীক্ষা। এগিয়ে আসেন তার এক মার্কিনী বন্ধু,যার ফ্যাক্টরিতে বসে এগুলোকে পরীক্ষা করা হয়। সব যন্ত্র তৈরি এবং পরীক্ষার পর এবার আসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, মার্কিন গোয়েন্দাদের চোখ এড়িয়ে কীভাবে পাঠানো যায় এই যন্ত্রগুলো বাংলাদেশে।
এগিয়ে আসেন রেজাউল হাসানের আরেক পরিচিত নিউ হ্যাম্পশায়ারের কনকর্ডে ফ্রাঙ্কলিন পিয়ার্স সেন্টারের অধ্যক্ষ ড. রবার্ট রাইস। তার প্রতিষ্ঠান থেকে ত্রাণ পাঠানোর নাম করে তিনি ব্যবস্থা করতে পারবেন এই যন্ত্রগুলো পাঠাবার। এদিকে নিজ দেশের আইনের তোয়াক্কা না করে মানবতাবাদী মার্কিন বিমান বাহিনীর এক অবসরপ্রাপ্ত অফিসার কার্ল মাইলস আমেরিকার ফ্লেচার স্কুলে এমএ তে অধ্যয়নরত বাঙ্গালী তৈয়বউদ্দীনকে শিখিয়ে দেন এই যন্ত্রগুলোর ব্যবহার।
যথারীতি মার্কিন কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে তৈয়বউদ্দীন ডক্টর রাইসের সহযোগিতায় এই যন্ত্রগুলো নিয়ে রওনা হন বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে এবং নির্বিঘ্নে বাংলাদেশ পৌঁছে জিনিসগুলো তিনি তুলে দেন জেনারেল ওসমানীর হাতে এবং মুক্তিবাহিনীদের শিখিয়ে দেন যন্ত্রগুলোর ব্যবহারবিধি।
এতগুলো কমিউনিকেশন সেট পেয়ে ওসমানী এত খুশী হয়েছিলেন যে তিনি রেজাউল হাসানকে একটি চিঠি লিখেন আনন্দ এবং ধন্যবাদ প্রকাশ করে। সেই সাথে উল্লেখ করেন তিনি রণাঙ্গনে মুক্তিবাহিনীর সাফল্যের কথা। একইসাথে রেজাউল হাসানের নিকট প্রেরণ করেন প্রয়োজনীয় জিনিসের আরো একটি তালিকা, যেগুলোও পাঠাবার ব্যবস্থা করেছিলেন রেজাউল হাসান।
যুদ্ধক্ষেত্রে রেজাউলের এই কমিউনেকশন সেটগুলো বাঁচিয়ে দিয়েছিলো বহু মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণ, এবং সেই সাথে তার এই সেটগুলোর কারণে রচিত হয়েছিল বহু বিজয়ের বীরত্ব গাঁথা। শুধু তাই নয়, দেশ স্বাধীন হবার পরেও প্রত্যন্ত এলাকায় প্রশাসনিক যোগাযোগের জন্য এই সেটগুলোর ব্যবহার হয়।
শ্রদ্ধা এই বাঙ্গালী প্রকৌশলীর প্রতি যিনি প্রমাণ করেছেন দেশপ্রেমই যথেষ্ট দেশের প্রতি কাজ করবার জন্য। দেশমাতৃকার টানে উদ্ধ্বুদ্ধ হয়ে যে যার অবস্থান থেকে সম্মিলিতভাবে কাজ করে গেলে সাফল্য সুনিশ্চিত। সেই সাথে শ্রদ্ধা আরেক বাঙ্গালী তৈয়বুদ্দীন, ভিনদেশী ডক্টর রাইসের প্রতি!
২| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ভোর ৫:০১
কলাবাগান১ বলেছেন: কোন লিং নাই?? উনি কি বেচে আছেন?
৩| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০১
শামছুল ইসলাম বলেছেন: কত যে ভাললাগছে, বলে বোঝাতে পারবো না।
অন্যরকম এক যুদ্ধের কাহিনী পড়ে রেজাউল হাসান ও তাকে সহায়তাদানকারী সকলের প্রতি শ্রদ্ধায় মনটা ভরে গেছে।
এমন ব্যতিক্রমধর্মী একটা পোস্টের জন্য আহমাদ ইশতিয়াককে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভাল থাকুন। সবসময়।
৪| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:১৩
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন:
শ্রদ্ধা। এগুলো বাঙালীকে উঁচু রাখতে শেখায়।
৫| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৪৪
হাসান মাহবুব বলেছেন: সালাম সালাম হাজার সালাম।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:০৩
বীরেনদ্র বলেছেন: My hats off to the valiant man who showed his love for the country what we needed most at that time.