নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ, আমার প্রাণ, মুক্তিযুদ্ধ আমার চেতনা\nসাংবাদিকতা পেশা এবং নেশা!

আহমাদ ইশতিয়াক

কুয়াশা ভেজা কোনো এক রাত শেষের ভোরে প্রান্তর ভেজানো শিশিরে, আমি জন্মেছি, কারো স্বপ্নে বিভোর ঘুম জড়ানো কন্ঠে জল পেতেছি দৃষ্টির আড়ালে। জোসনা ভেজা রাতে চন্দনের ঘ্রাণে ভোরের শিউলিও থমকে ছিলো খানিকটা। মৃদু হাওয়ার স্পন্দনে বকুল ফুলের নেশা আমায় গ্রাস করেছিলো শুভ্র আবহে। ঘরের এককোনে অনাদরে মলিন হওয়া তারপুরার বেদনার সাথে কেনো যেনো বন্ধুত্ব ছিলো শতাব্দী ধরে। চিঠির কালি শুকিয়ে পড়তো জলেশ্বরীর জলপদে। শ্রাবণের সন্ধ্যার বর্ষণের পানে আমি কতোকাল চেয়েছি। তরুণীর ভেজা চুল আকাশের স্বপ্নের শরৎের বিকেল কাশফুলের শুভ্রতা লুটতো আমাকে সঙ্গী রেখে। কারো স্বপ্নে, এক ফোঁটা নিঃশ্বাসে, হয়তো একটুখানি তৃপ্তিতে আমি দিনশেষে ফুরিয়ে যাবো মহাকালের বুকে। হয়তো স্বপ্ন ভিড়বে কুয়াশায়, বকুলের ঘ্রাণে, শ্রাবণের বর্ষনে!

আহমাদ ইশতিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক অপ্রতিরোধ্য যোদ্ধা ও আফসার বাহিনী

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:১৩



মুক্তিযুদ্ধে নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে বেশ কয়েকটি অনিয়মিত বাহিনীও যুদ্ধ করে। টাঙ্গাইলের কাদেরিয়া বাহিনী, দক্ষিণবঙ্গের হেমায়েত বাহিনীর কথা কম-বেশী সবাই জানে।

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নিজস্ব উদ্যোগে দেশের ভিতরে যে কটি অনিয়মিত বাহিনী গড়ে উঠে তার মধ্যে ময়মনসিংহের আফসার বাহিনী অন্যতম। স্বহস্তে প্রতিষ্ঠিত আফসার বাহিনীর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শেষ পর্যন্ত আফসার উদ্দিন আহমেদ বীরত্বের সাথে অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি শপথ করে বলেছিলেন আমার মৃত্যু হলে যেন স্বাধীন বাংলার মাটিতেই হয়, দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত এই অস্ত্র ত্যাগ করবো না এবং কারো সাথে কোন প্রকার আপোষ করবো না।



সময়ের পরিক্রমায় ‘আফসার বাহিনী’ মোটামুটি দৃষ্টিসীমার অগোচরেই চলে গেছে।

ময়মনসিংহের দক্ষিণ অংশে প্রতিষ্ঠিত হয় অনিয়মিত আফসার বাহিনী। দক্ষিণ ময়মনসিংহের ভালুকা, ত্রিশাল, ফুলবাড়ীয়া, গফরগাঁও; টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতী, ঘাটাইল ও সখিপুর বর্তমান গাজীপুর জেলার শ্রীপুর ও কালিয়াকৈর থানা এলাকা ছিল আফসার বাহিনী যুদ্ধ এলাকা।

১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন আফসার । মহাযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৯৪৮ সালে রিলিজ হয়ে বাড়ি চলে আসেন। তৎকালীন ভালুকা থানার আফসার উদ্দিন আহমেদ ভালুকা থানার রাজৈ ইউনিয়নের আব্দুল হামিদ মেম্বারের একটি রাইফেল সংগ্রহ করে ৮ জন সদস্য নিয়ে ২৩শে এপ্রিল/৭১ইং তারিখ অত্র থানার নিবৃত পল্লী মল্লিকবাড়ী বাজারে গঠন করেন মুক্তিবাহিনী।

আফসার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রশিক্ষণ শিবির গঠন করেছে এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর ইপিআর-আনসার-মোজাহিদদের ভেতর থেকে বাঙালিদের অনেকেই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এসে তাঁর বাহিনীতে যোগ দিতে থাকেন। কয়েক দিনের মধ্যেই ৫০০ মুক্তিযোদ্ধার এক বাহিনী গড়ে তুললাম। ধীরে ধীরে দেশের ভেতরই অবস্থান নিয়ে বন্ধু দেশ ভারতের কোনো সাহায্য ছাড়াই চার হাজার ৫০০ অস্ত্রধারী মুক্তিযোদ্ধার এক বিরাট বাহিনী গড়ে তুলেন।’
আফসার বাহিনীতে স্থানীয় জনতা ও ছাত্ররাই সংখ্যায় বেশি ছিলেন। তবে কিছু আনসার, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর লোকও ছিলেন। ওই বাহিনী পরিচালিত হয় সেনাবাহিনীর কায়দায়। তাঁর বাহিনী ছিল ২৫টি কম্পানির সমন্বয়ে। প্রতিটি কম্পানিতে ছিল তিনটি প্লাটুন ও তিনটি সেকশন। আর প্রতি সেকশনে ছিলেন ১৫ জন করে মুক্তিযোদ্ধা।
আফসার ‘ব্যাটালিয়নে’র অধিনায়ক ছিলেন মেজর আফসার উদ্দিন আহমেদ। সহকারী অধিনায়ক ছিলেন পাঁচজন। তাঁদের মধ্যে দুজন শহীদ হয়েছেন। এ ছাড়া অ্যাডজুট্যান্ট, সিকিউরিটি অফিসার, সহ-সিকিউরিটি অফিসার, কোয়ার্টার মাস্টার, অফিস ইনচার্জ প্রভৃতি দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি ১০ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদ, বিচার বিভাগ, শাসন বিভাগ ছিল। জুন মাসের মাঝামাঝি নাগাদ ভালুকা সদর ও মল্লিকবাড়ী বাজারে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল এ বাহিনীর। দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ ক্যাম্প চালু ছিল রাজৈ ইউনিয়নের খুর্দ্দ গ্রামে।



আফসার বাহিনীর উল্লেখ যোগ্য যুদ্ধ ছিল ভালুকা থানাধীন ভাওয়ালিয়াবাজু যুদ্ধ। ২৫ জুন ১৯৭১। পাকবাহিনী সড়ক পথে গফর থেকে ভালুকা আসার পথে আফসার বাহিনী বাধা দিলে ভাওয়ালিয়াবাজু নামক স্থানে যুদ্ধ বাধে। এক টানা ৪৮ ঘন্টা যুদ্ধ চলারপর পাক বাহিনীর অবস্থানে দুটি হেলিকাপ্টার থেকে মুক্তি বাহিনীর অবস্থানে পিছনে (ধলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে) ছত্রিসেনা অবতরণ করায়। এই যুদ্ধে ৯৫জন পাক সেনা নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়।

আফসার বাহিনীর এই একটানা ৪৮ ঘন্টার যুদ্ধের খবর তৎকালিন স্বাধীন বাংলা বেতার, বিবিসি ও আকাশবানী থেকে ফলাও করে প্রচার করা হয়। ঢাকা বেতার অবশ্য এই যুদ্ধের খবর পাক বাহিনীর পক্ষে প্রচার করে ছিল। এই যুদ্ধে অধিনায়ক আফসার উদ্দিন আহম্মেদ নিজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এছাড়াও টাঙ্গাইলের বল্লায় এক টানা ৩ ঘন্টা যুদ্ধ ও গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার ফুল বাড়িয়া বাজারে পাক বাহিনীর সাথে একটানা ১৮ ঘন্টা যুদ্ধ সহ এই অঞ্চলে প্রায় দেড় শতাধিক সফল যুদ্ধ পরিচালা করে শত শত পাক ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যদেরকে নিহত ও আত্মসমর্পনে বাধ্য করেন।

এসব যুদ্ধে আফসার বাহিনীর ৪০ জনের বেশী সাহসী মুক্তি সেনা শহীদ হন। শহীদদের মাঝে অধিনায়ক আফসার উদ্দিন আহম্মেদের ৩য় পুত্র ৭ম শ্রেণীর ছাত্র নাজিম উদ্দিনও রয়েছে। আফসার বাহিনী ঘোষিত মুক্ত এলাকা ভালুকা , ত্রিশাল, ফুলবাড়িয়া, গফরগাও , কালিয়াকৈর, শ্রীপুর, কালিহাতি ও সখিপুর থানা এলাকার যেখানে পাকা ও রাজাকার বাহিনী প্রবেশ করেছে সেখানে মুক্তি সেনারা বাধা দিয়েছে।
ভালুকা ছাড়াও গফরগাঁও এবং ত্রিশালের একাধিক স্থানে যুদ্ধ করে আফসার বাহিনী।
২৮ জুন ভালুকা থানায় গ্রেনেড হামলা করে ১৭ হানাদারকে খতম করে এ বাহিনী।
১৭ জুলাই গফরগাঁওয়ে দেউলপাড়া টহল ট্রেন আক্রমণ করে আফসার বাহিনী। এ ছাড়া মশাখালী রেলওয়ে ফরচঙ্গী পুলের পাড় যুদ্ধ, শীলা নদী আক্রমণ, প্রসাদপুর যুদ্ধে অংশ নেয় এ বাহিনী।


১৯ জুলাই সিডস্টোর যুদ্ধে ২৩ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। এ ছাড়া ডাকাতিয়া-আংগারগাড়া বাজার যুদ্ধ, ভায়াবহ ঘাটের যুদ্ধ, ভরাডোবা যুদ্ধ, ধামশুর গ্রামের যুদ্ধ, বাকশী নদীর ব্রিজের পাড় যুদ্ধ, বরাইদ যুদ্ধ, বান্দিয়া যুদ্ধ, তালার যুদ্ধ, চানপুর যুদ্ধসহ অনেক যুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের খতম করে এ বাহিনী।

গফরগাঁও পাকিস্তানি বাহিনীর ঘাঁটিতে ৯ ডিসেম্বর আক্রমণ করে তা দখলে নিয়ে নেয় আফসার বাহিনী। ত্রিশালের কানিহারী গ্রাম, সাকুয়া গ্রাম, ধানীখলা কাঁঠাল, কালীবাজার গ্রামেও আগস্ট মাসে অপারেশন চালায় আফসার বাহিনী। ১৩ সেপ্টেম্বর রায়ের গ্রামে সাত ঘণ্টা স্থায়ী ভয়াবহ সম্মুখযুদ্ধে ১৬ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। খতম হয় পাঁচ রাজাকার। তবে ১০ জন মুক্তিযোদ্ধাও এতে শহীদ হন।
আফসার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা অধিনায়ক আফসার উদ্দিন আহম্মেদ ১৭ সেপ্টম্বর ১৯৭১ ভারতের আগরতলায় হাপানিয়া ক্যাম্পে গিয়ে মেজর শফিউল্লাহর সাথে দেখা করে তার বাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করে এবং উনার মাধ্যমে ১১ নং সেক্টরে প্রধান মিত্র বাহিনীর ব্রিগেডিয়ার সানসিং বাবজির সাথে কথা বলেন ও সার্বিক সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে তাঁর ভূয়সী প্রসংশা করেন। এর পর মেজর আফসার তার বাহিনীর ৫৬৫ জন মুক্তিসেনা ঢালু ক্যাম্পে পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষনের জন্য প্রেরণ করেন।

২৬ অক্টোবর কাশিগঞ্জ-আমিরাবাড়ী যুদ্ধে ৬৫ জন রাজাকারকে খতম করা হয়। আটক করা হয় ১৭ জনকে।
৬ ডিসেম্বর ভালুকা সদরে সেনা ক্যাম্প আক্রমণ করে ২০ জন পাকিস্তানি সেনা ও অনেক রাজাকারকে খতম করা হয়। ১৪ ডিসেম্বর পাড়াগাঁও জঙ্গলে যুদ্ধে আফসার উদ্দিনের তৃতীয় ছেলে নাজিম উদ্দিন আহত হলে তাঁকে শেষ পর্যন্ত কলকাতা নিয়ে গিয়েও বাঁচানো সম্ভব হয়নি।



কতো আত্মত্যাগ আর সংগ্রামের ফলে গড়ে উঠেছিলো আমাদের মুক্তি সংগ্রাম। মাতৃভূমির প্রতি কতটুকু ভালবাসা থাকলে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া যায়।
আপন মনে মাঝে মাঝে গুনগুন করে গাই

"মুক্তির মন্দির সোপান তলে
কত প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে৷
কত বিপ্লবি বন্ধুর রক্তে রাঙা, বন্দীশালার ওই শিকল ভাঙা
তাঁরা কি ফিরবে না আর?
তাঁরা কি ফিরবে এই সুপ্রভাতে-
যত তরুণ অরুণ গেছে অস্তাচলে৷
মুক্তির মন্দির সোপান তলে...
লেখা আছে অশ্রুজলে"।


আজ যখন দেখি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা চিকিৎসার অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরে, চোখ বেয়ে জল নামে। আমরা মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন থেকে এখনো কতোটা দূরে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের আমরা আজো দিতে পারিনি তাঁদের অর্জিত স্বাধীনতা।
মুক্তিযুদ্ধ হোক আমাদের প্রেরণা, আমাদের চেতনা!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৫৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা...

২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:১৪

অগ্নি সারথি বলেছেন: জানা ছিল না এই ইতিহাস। স্যালুট!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.