নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ, আমার প্রাণ, মুক্তিযুদ্ধ আমার চেতনা\nসাংবাদিকতা পেশা এবং নেশা!

আহমাদ ইশতিয়াক

কুয়াশা ভেজা কোনো এক রাত শেষের ভোরে প্রান্তর ভেজানো শিশিরে, আমি জন্মেছি, কারো স্বপ্নে বিভোর ঘুম জড়ানো কন্ঠে জল পেতেছি দৃষ্টির আড়ালে। জোসনা ভেজা রাতে চন্দনের ঘ্রাণে ভোরের শিউলিও থমকে ছিলো খানিকটা। মৃদু হাওয়ার স্পন্দনে বকুল ফুলের নেশা আমায় গ্রাস করেছিলো শুভ্র আবহে। ঘরের এককোনে অনাদরে মলিন হওয়া তারপুরার বেদনার সাথে কেনো যেনো বন্ধুত্ব ছিলো শতাব্দী ধরে। চিঠির কালি শুকিয়ে পড়তো জলেশ্বরীর জলপদে। শ্রাবণের সন্ধ্যার বর্ষণের পানে আমি কতোকাল চেয়েছি। তরুণীর ভেজা চুল আকাশের স্বপ্নের শরৎের বিকেল কাশফুলের শুভ্রতা লুটতো আমাকে সঙ্গী রেখে। কারো স্বপ্নে, এক ফোঁটা নিঃশ্বাসে, হয়তো একটুখানি তৃপ্তিতে আমি দিনশেষে ফুরিয়ে যাবো মহাকালের বুকে। হয়তো স্বপ্ন ভিড়বে কুয়াশায়, বকুলের ঘ্রাণে, শ্রাবণের বর্ষনে!

আহমাদ ইশতিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুক্তিযুদ্ধে কেমন ছিলো মৃত্যুপুরী ডালিম হোটেল ও ভয়ংকর খুনি মীর কাশেম আলী!

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:১৫





১৩৭৩ বঙ্গাব্দে চন্দ্র মোহন নাথ চট্টগ্রাম শহরের পুরাতন টেলিগ্রাফ রোডে ৬ শতক জমির ওপর তিন তলা ‘মহামায়া ভবন’ নির্মাণ করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর চন্দ্র মোহন নাথ স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে পাড়ি জমান ভারতে। এরপর বাড়িটি দখলে নেয় তৎকালীন চট্টগ্রাম ছাত্রসংঘের সভাপতি মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বাধীন আলবদর বাহিনী। এরপর নাম পাল্টে রাখা হয় ডালিম হোটেল। এ ভবনটিই ছিল ছাত্রসংঘ তথা আলবদর বাহিনীর কার্যালয় ও প্রধান টর্চার সেল। মীর কাসেমের নেতৃত্বে আরও তিনটি জায়গাকে 'টর্চার সেল' বানানো হয়েছিল। তবে নির্যাতনের ভয়াবহতার দিক থেকে ডালিম হোটেল অন্যগুলোকে হার মানায়। এই নগরীর চাক্তাই এলাকায় দোস্ত মোহাম্মদ ভবন, দেওয়ানহাটের দেওয়ান হোটেল ও পাঁচলাইশ এলাকার সালমা মঞ্জিলেও ছিল নির্যাতন কেন্দ্র।


নগরীর গুডস হিলসহ আরও কয়েকটি জায়গায় নির্যাতনকেন্দ্র থাকলেও একাত্তরে মূর্তিমান এক আতংকের নাম ছিলএই ডালিম হোটেল।
ডালিম হোটলের নির্যাতিতদের মধ্যে খুব কম মুক্তিযোদ্ধাই প্রাণে বেঁচেছেন। মীর কাসেমের নির্দেশেই মুক্তিযোদ্ধাসহ অনেককেই অমানুষিক নির্যাতনের পর হত্যা করে ফেলে দেয়া হত চাক্তাই চামড়ার গুদাম এলাকার কর্ণফুলী নদীতে।
ডালিম হোটেলে বন্দীদের ওপর দিনের পর দিন নির্যাতন করা হতো। অনেকে এই নিদারুণ নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তেন; তরুণ মুক্তিযোদ্ধা জসিম, টুন্টু সেন ও রঞ্জিত দাস এভাবেই প্রাণ হারিয়েছেন।

মীর কাসেম ও তার সহযোগীরা একাত্তরে খোলা জিপ ও অস্ত্র নিয়ে পুরো শহর দাপিয়ে বেড়াত। মীর কাসেমের নির্দেশে মুক্তিযোদ্ধা, তাদের সহযোগী ও স্থানীয় হিন্দুদের ধরে সেখানে নিয়ে চালানো হত অমানুষিক নির্যাতন। ওই হোটেলে মীর কাসেম আলী এলে বদর সদস্যরা ‘ডা. খান আ গ্যায়া…, কাসেম সাব আ গ্যায়া’ বলে হাঁক পাড়ত।

হাজারী গলির মন্দিরের পাশে ছাতা মেরামত করার সময় টুনটু সেনকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলের নির্যাতন কেন্দ্রে হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে অঝোরে কেঁদেছেন ট্রাইব্যুনালের অন্যতম সাক্ষী ও টুনটু সেনের ভাগ্নে প্রদীপ তালুকদার। তিনি বলেন, ৭১ সালে আমার মামার বয়স ছিল ২৭ বছর। তার বয়স ১৫ বছর। হাজারি গলিতে আমার দাদু-ঠাকুরমা, মামা এবং আমরা সবাই একসাথে থাকতাম। মামা হাজারী গলির শিব মন্দিরের পাশে ছাতা মেরামতের কাজ করতেন। তখন শীতকাল ছিল। একদিন বিকালে আল বদর বাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে ২ জন এসে আমার মামাকে ধরে নিয়ে যায়। এসময় পাশের চায়ের দোকানদার রঞ্জিত দাশসহ আরো ৬-৭ জনকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। ওইসময় দুলাল বর্ধন নামে এক ব্যবসায়ীকেও নিয়ে গিয়েছিল। তাকে সেখান থেকে প্রথমে চাক্তাই, পরে গুডস হিলে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি কোনো রকমে ছাড়া পেলেও (বর্তমানে তিনি কানাডায়) আমরা শুনেছি মামাসহ সবাইকে মহামায়া হোটেলে বেঁধে রেখেছে। সেখানে মামাসহ যাদেরকে ধরে নিয়ে গেছে সবাইকে শুধু নির্যাতন করা হত, কোনো খাবার দেয়া হত না। সেখানেই মামা মারা গেছেন বলে ওখান থেকে তখন ছাড়া পাওয়া অনেকের কাছে শুনেছি।


ডালিম ভবনে সাইফুদ্দিন খানের আগে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হান্নান বেগমের চাচাত ভাই জসীম উদ্দিনকে। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তাকে প্রতিদিন চরমভাবে নির্যাতন করতে থাকে রাজাকাররা।নৃশংসতার মাত্রা এত চরম পর্যায়ে পেঁৗছে গিয়েছিল যে, একদিন টর্চার সেলেই জসীম মারা যায়। পরে তার লাশ আর পাওয়া যায়নি। বন্দী অবস্থায় জসীম উদ্দিন একাধিকবার সাইফুদ্দিন খানের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। চট্টগ্রাম শহরের রথের পুকুর পাড় এলাকার টাইপ রাইটার রিপেয়ারিং ওয়ার্কশপে কর্মরত টাইপিস্ট ৫০ বছর বয়স্ক জীবনকৃঞ্চ শীলকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ডালিম ভবনে। তার অপরাধ তিনি গোপনে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য-সহযোগিতা করতেন। তাকে ক্রমাগত এক সপ্তাহ টর্চার চেম্বারে নিয়ে নির্যাতনের পর একদিন সাইফুদ্দিন খানের সামনেই পিটিয়ে হত্যা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের পর তার পরিবার তার খোঁজে ছবিসহ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। ছবি দেখে সাইফুদ্দিন খান জীবনকৃঞ্চ শীলকে চিনতে পারেন। এছাড়া সাইফুদ্দিন খানকে কারাগারে পাঠানোর দিন দুয়েক আগে একদিন তিনি দেখতে পান তাদের রুমের সামনেই মেঝেতে এক যুবক পড়ে আছে। তিনি ভেবেছিলেন অতিরিক্ত নির্যাতনের কারণে সম্ভবত অজ্ঞান হয়ে গেছে। কিন্তু মুখের ওপর মাছি উড়তে দেখে সাইফুদ্দিন খান বুঝতে পারলেন যুবকটি বেঁচে নেই। এ সময় বদর বাহিনীর এক লোক এসে তাকে পায়ে মাড়িয়ে দেখল সে বেঁচে আছে কি না। দেখে বলে উঠল, এ-তো চলে গেছে। লাশ নিয়ে গিয়ে পুঁতে ফেল।


১৯৭১ সালে ডালিম হোটেলে বাঙালিদের নির্যাতন নিয়ে একটি সক্ষাৎকার দিয়েছিলেন গণতন্ত্রী পার্টির প্রয়াত নেতা সাইফুদ্দিন খান একবার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন ডালিম ভবনে নিয়ে যাওয়ার সময় 'জয় বাংলা স্লোগান দিয়েছিলেন সাইফুদ্দিন খান মুক্তিযুদ্ধের সময় সাইফুদ্দিন খান তার পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম শহরের কদমতলী বাস টার্মিনালের পাশে পোড়া মসজিদের সামনে আজিজ কলোনিতে থাকতেন।

৮ নভেম্বর, ১৯৭১। এদিন রাতে তার বাসায় আশ্রয় নিয়েছিলেন মোট ৬ জন। এরা হলেন তৎকালীন জেলা ন্যাপের সভাপতি এ এন নূরুন্নবী, ইস্টার্ন ব্যাংকিং করপোরেশনের দুই কর্মকর্তা অরুণ কুমার চৌধুরী ও শফিউল আলম চৌধুরী, তার দুই ভাইপো ড. ইরশাদ কামাল খান এবং ড. মোসলেহ উদ্দিন খান। এরা দু'জন এ সময় চট্টগ্রাম কলেজের ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিতে তারা সাইফুদ্দিন খানের কাছে এসেছিলেন। রাতে তারা সবাই যথারীতি দুটি রুমে বিভক্ত হয়ে ঘুমাচ্ছিলেন। ভোর রাত চারটার দিকে সশস্ত্র অবস্থায় কিছু লোক এসে তাদের বাসা ঘিরে ফেলল। বাইরে থেকে তারা চিৎকার করে বলতে লাগল,' ভেতরে দুষকৃতকারী থাকলে বের করে দাও, নয়তো আমরা বাসা সার্চ করব।' এসব কথা বলতে বলতেই তারা বাসার দরজায় লাথি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে পড়ে। তাকে আটক করতে আসা সশস্ত্র দলটির নেতাকে চিনে ফেললেন সাইফুদ্দিন খান। লোকটি ছিলেন তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতা এবং পটিয়া এলাকার আলবদর বাহিনীর প্রধান আবুল কালাম।এ এন এম নূরুন্নবী ও সাইফুদ্দিন খানকে দেখে রাজাকার কালাম বলে উঠল, এরা-তো ন্যাপের লোক, ভারতের দালাল। এদের বেঁধে ফেল। এরপর সাইফুদ্দিন খানের স্ত্রী-সন্তান বাদে বাকি ৬ জনকে, চোখে কালো কাপড় এবং রশি দিয়ে হাত বেঁেধ রাস্তায় রাখা একটি মিনি ট্রাকে নিয়ে তোলা হয়। ট্রাকে তোলার পর সাইফুদ্দিন খান এবং এ এম এন নূরুন্নবী মিলে 'জয় বাংলা' বলে সেস্নাগান দিয়েছিলেন। সেস্নাগান শুনে আবুল কালামসহ কয়েকজন এসে 'মালাউনের বাচ্চা' বলে দু'জনকে লাথি দিয়েছিল। ভোরের দিকে তাদের ডালিম ভবনে নিয়ে আসা হয়।



৭ নভেম্বর ভোরে ডালিম হোটেলে নিয়ে যাওয়ার পর একটি অন্ধকার কক্ষে নিয়ে তাদের সবার চোখের কালো কাপড় খুলে দেয়া হয়। সাইফুদ্দিন খান দেখতে পান সেখানে আগে থেকেই বন্দী অবস্থায় রয়েছেন জেলা ন্যাপের তৎকালীন তুখোড় নেতা এডভোকেট শফিউল আলম (বেবী শফি), জাহাঙ্গীর চৌধুরী (বিএনপি নেতা দস্তগীর চৌধুরীর বড় ভাই), তৎকালীন চীনপন্থি ন্যাপ নেতা মো. সেলিম এবং সাংবাদিক মেজবাহ খানসহ আরও কয়েকজন। এদের মধ্যে মুক্তিবাহিনীর লোকও ছিল। ন্যাপ নেতা বেবী শফিকে দেখে সাইফুদ্দিন খান কথা বলতে চাইলে এক রাজাকার এসে তাকে একটি চড় দেয়। পরে বন্দীদের পৃথক করে ফেলা হয়। এদের মধ্যে সাইফুদ্দিন খান, এ এম এন নূরুন্নবীসহ ১৩ জনকে রাখা হয়েছিল ডালিম ভবনের ছোট্ট একটি রান্নাঘরে। বেবী শফিসহ বাকিদের রাখা হয়েছিল অন্য একটি কক্ষে। দিনের অধিকাংশ সময় তাদের চোখ কালো কাপড়ে বেঁধে রাখত। তিনদিন পর ডালিম ভবন থেকে ইরশাদ কামাল খান, মোসলেহ উদ্দিন খান, ব্যাংক কর্মকর্তা অরুণ চৌধুরী ও শফিউল আলম চৌধুরীকে ছেড়ে দেয়া হয়। রাজাকাররা মুক্তিবাহিনীর লোকসহ প্রগতিশীল দলের সমর্থকদের মধ্যে প্রতিদিন ২০-২৫ জনকে ডালিম ভবনে ধরে নিয়ে যেত। অনেককে নির্যাতনের পর কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হতো।


সাইফুদ্দিন খানকে যে রান্নাঘরে আটক করে রাখা হয়েছিল তার পাশেই একটি 'টর্চার চেম্বার' তৈরি করেছিল রাজাকার-আলবদররা। একটি ছোট্ট, অপরিসর কক্ষ, একটি চেয়ার পাতানো আছে। নির্যাতনের সময় বন্দীদের ওই চেয়ারে বসানো হতো। দৈনিক ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা করে কিংবা অজ্ঞান না হওয়া পর্যন্ত সাইফুদ্দিন খান, এডভোকেট শফিউল আলম এবং এ এন এম নূরুন্নবীসহ প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা এবং মুক্তিবাহিনীর লোকদের নির্যাতন করা হতো। সাইফুদ্দিন খান এবং এ এন এম নূরুন্নবীকে একই সঙ্গে টর্চার চেম্বারের সামনে নেয়া হতো। সাইফুদ্দিন খানকে বাইরে বসিয়ে রেখে এ এন এম নূরুন্নবীকে চেম্বারে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হতো। নির্যাতনের পর অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে বাইরে ফেলে রেখে সাইফুদ্দিন খানকে ঢোকানো হতো। তাকেও অজ্ঞান না হওয়া পর্যন্ত নির্যাতন করা হতো। এ সময় রাজাকাররা তাদের 'মালাউনের বাচ্চা' 'ভারতের দালাল' 'রাশিয়ার দালাল' 'নাস্তিক কমিউনিস্ট' 'দুষকৃতকারী' 'দেশের শত্রু' বলে গালাগাল করত। টর্চার চেম্বারে রাজাকাররা তাদের লোহার চেইন, লাঠি, বেত, হাতুড়ি, বেল্ট দিয়ে পেটাত। পেটাতে পেটাতে রাজকাররা বন্দীদের মুক্তিযুদ্ধকে আর সমর্থন করবে কি না জিজ্ঞাসা করে বলত 'বল আর কোনদিন জয় বাংলা বলবি'। জয় বাংলা বললে নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যেত। মেঝেতে ফেলে পেটানোর সময় সাইফুদ্দিন খান কয়েকবার রাজাকারদের কাছে এক গ্লাস পানি চাইলে নরপশুরা তার মুখের ওপর প্রস্রাব করে দিয়েছিল। এরপর থেকে আর কোনদিন তিনি নির্যাতনের সময় রাজাকারদের কাছে পানি খেতে চাননি।

এভাবে টানা ১৪ দিন নির্যাতনের পর ২০ নভেম্বর তাদের কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। ১৭ ডিসেম্বর সাইফুদ্দিন খান কারাগার থেকে মুক্তি পান। ডালিম ভবনের টর্চার সেলে বন্দীদের নিয়মিত কিছু খেতে দেয়া হতো না। মাঝে মাঝে তাদের বেগুনের ঝোল, মাছের কাঁটা আর গোশতের আলু দিয়ে সিদ্ধ চালের ভাত দিত। পানি চাইলে সব সময় পানিও পেত না বন্দীরা। উল্টো নানা ধরনের গালাগাল আর শারীরিক অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হতো। সাইফুদ্দিন খানকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর ভাত খেতে দেয়া হয়েছিল। ডালিম ভবনের বন্দীশালায় ১৪ দিনে তাকে মাত্র ৪ বার ভাত খেতে দেয়া হয়েছিল।





মুক্তিযুদ্ধকালে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরদিন মুক্তিযোদ্ধা জসিমকে আটক করে আলবদর সদস্যরা। ২৮ নভেম্বর মীর কাসেমের নির্দেশে আলবদরের সদস্যরা তাঁকে দিনভর নির্যাতন করে। নির্মম অত্যাচারে জসিম মারা যান। পরে নিহত আরও পাঁচজনের সঙ্গে জসিমের মরদেহ কর্ণফুলী নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।

মুক্তিযোদ্ধা নাসিরুদ্দিন চৌধুরী জানান, ডালিম হোটেলের একটি কক্ষে তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায় আলবদর সদস্যরা। জিজ্ঞাসাবাদে সুবিধা করতে না পেরে এক পর্যায়ে তার চোখের বাঁধন খুলে দিয়ে চলে যায়। এরপর মীর কাসেমের নির্দেশে আলবদর সদস্যরা তাকে বেদম পেটায়। তারা লাঠি, লোহার রড ও ইলেকট্রিক তার দিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছিল। নির্যাতনের শিকার লুৎফর রহমান ফারুক জানান, মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে ডালিম হোটেলে নির্যাতনের কারণে পুরুষত্বহীন হয়ে পড়েন তিনি। আজীবনের জন্য তিনি সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।

বিজয়ের পরে শুধুমাত্র ডালিম হোটেল থেকে আহত অবস্থায় প্রায় সাড়ে ৩০০ মানুষকে উদ্ধার করা হয়।

সুদীর্ঘ ৪৫ বছর পর আজ আমাদের কলংক মোচনের দিন। মানবতার শত্রু একাত্তরের ভয়ংকর খুনি মীর কাশেম আলীদের রক্ষা করেছিলো, রাজনীতিতে আসার সুযোগ করে দিয়েছিলো বাংলার কুখ্যাত মীরজাফর জিয়াউর রহমান। তাই এতোদিন দুই আঙ্গুল তুলে শাসানোর ক্ষমতা দেখিয়েছিলো মীর কাশেম আলীরা! আজ এই মীরজাফর দের শাস্তির আর কয়েক ঘণ্টা বাকি!

প্রাণ খুলে চিৎকার করি

মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়
রাজাকারের ঠাই নেই!

"জয় বাংলা"


মন্তব্য ৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৮:২৯

চাঁদগাজী বলেছেন:




বাংলা যত বিকলাংগ মগজের সন্তানকে জন্ম দিয়েছিলেন, ততটুকু বেদনা সইতে হয়েছিল বাংলাকে; ভালো যে, মগজহীনদের মৃত্যুর সময় জানার মত পুরস্কার দেয়া হয়েছে।

২| ০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:৫৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: জয় বাংলা!

৩| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:২০

আহসানের ব্লগ বলেছেন: :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.