নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ, আমার প্রাণ, মুক্তিযুদ্ধ আমার চেতনা\nসাংবাদিকতা পেশা এবং নেশা!

আহমাদ ইশতিয়াক

কুয়াশা ভেজা কোনো এক রাত শেষের ভোরে প্রান্তর ভেজানো শিশিরে, আমি জন্মেছি, কারো স্বপ্নে বিভোর ঘুম জড়ানো কন্ঠে জল পেতেছি দৃষ্টির আড়ালে। জোসনা ভেজা রাতে চন্দনের ঘ্রাণে ভোরের শিউলিও থমকে ছিলো খানিকটা। মৃদু হাওয়ার স্পন্দনে বকুল ফুলের নেশা আমায় গ্রাস করেছিলো শুভ্র আবহে। ঘরের এককোনে অনাদরে মলিন হওয়া তারপুরার বেদনার সাথে কেনো যেনো বন্ধুত্ব ছিলো শতাব্দী ধরে। চিঠির কালি শুকিয়ে পড়তো জলেশ্বরীর জলপদে। শ্রাবণের সন্ধ্যার বর্ষণের পানে আমি কতোকাল চেয়েছি। তরুণীর ভেজা চুল আকাশের স্বপ্নের শরৎের বিকেল কাশফুলের শুভ্রতা লুটতো আমাকে সঙ্গী রেখে। কারো স্বপ্নে, এক ফোঁটা নিঃশ্বাসে, হয়তো একটুখানি তৃপ্তিতে আমি দিনশেষে ফুরিয়ে যাবো মহাকালের বুকে। হয়তো স্বপ্ন ভিড়বে কুয়াশায়, বকুলের ঘ্রাণে, শ্রাবণের বর্ষনে!

আহমাদ ইশতিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা বিতর্কের জবাব

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫২



বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা এবং সংগ্রামের বিষয়াবলী নিয়ে আজকের পাঠ সাজিয়েছি। আশা করি স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে যাবতীয় বিতর্ক তথা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ মুলত পহেলা মার্চ থেকে শুরু হয়েছে। আবার অনেকে মতামত দিবেন পুরো ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। তো মুক্তিযুদ্ধ তো নয় মাসের অধিক। তবে একথা বলে রাখা প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধ যুদ্ধকালীন সময় ২৫শে মার্চ কালোরাত থেকে শুরু হলেও আত্মসমর্পণের পরেও কিন্তু যুদ্ধ হয়েছে। ঢাকার মিরপুর স্বাধীন হয়েছে ১৯৭২ সালের ৩১ জানুয়ারি।

আমার প্রসঙ্গ মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল নয় স্বাধীনতার ঘোষণা। এ কথা এই জন্যই বললাম আমাদের স্বাধীনতার এবং মুক্তি সংগ্রামের ডাক। যা এসেছে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ থেকে। কার্যত তখন থেকেই শুরু হয়েছে স্বাধীনতা। শুধু বাকি রইলো ঘোষণা পত্র। ৭ই মার্চের ভাষণের পরই মানুষ বুঝতে পারে, নিজেকে আত্মত্যাগ ছাড়া আর কিছুই বাকি রইলো না। শুধু অপেক্ষা ছিলো ঘোষণা পত্রের।

এখানে প্রমাণের আগে একটি কথা বলে নিই মেজর জিয়াউর রহমান জীবিত থাকা অবস্থায় কখনো নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে দাবি করেনি। বরং জীবিতকালে তিনি তার লেখা, বক্তব্যে ও সাক্ষাতকারে বঙ্গবন্ধুকেই স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

১৯৭২ সালের স্বাধীনতা দিবসে ‘পূর্ব দেশের’ সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে জেনারেল ওসমানী বলেছেন : “২৫ মার্চ রাত দশটায় বঙ্গবন্ধু আমাকে বলেছিলেন আপনাকে যেন ওরা কোনো অবস্থাতেই ধরতে না পারে। তিনি আমার ওপর যুদ্ধ পরিচালনা করার নির্দেশ প্রদান করেন।” যিনি যুদ্ধ পরিচালনার জন্য সেনাপতি নিযুক্ত করেন তিনি যুদ্ধ ঘোষণা করেননি এ যুক্তি কোনভাবে গ্রহণীয় নয়। ১৯৮০ সালে জেনারেল এম এ জি ওসমানী বলেন, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ জিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করেনি। বঙ্গবন্ধুই সেদিন স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। এ সময় আমার নতুন পদ হলো ব্রিগেড মেজর, ৫৭নং ঢাকা ব্রিগেড মেজর।
এটা আমার অরিজিন্যাল ব্যাটেলিয়ন। ২৪ মার্চ আমি ফোর্থ বেঙ্গলের সে সময়কার পাঞ্জাবি কমান্ডার লে. কর্নেল খিজির হায়াত খানের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিলাম। দায়িত্ব নেবার পর মুহূর্তে একটা অর্ডার ইস্যু হলো আমার নামে, আমাকে তখনই রওয়ানা হতে হবে শমশেরনগর, একটা কোম্পানি নিয়ে। কারণ, হিসেবে বলা হলো ভারত থেকে সশস্ত্র নকশালরা অনুপ্রবেশ করছে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখলাম ভিন্ন পরিস্থিতি। যার জন্য আমি ব্রাহ্মাণবাড়িয়ার দিকে ফিরে আসি। আসার পথেই সংবাদ পাই ২৫ মার্চ পাকিস্তানিরা ঢাকায় গণহত্যা শুরু করেছে। তারা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করেছে। বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার আগ মুহূর্তে স্বাধীনতার ঘোষণা করেণ এবং পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সর্বস্তরের বাঙালিদের যুদ্ধের আহ্বান জানান। এ সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবস্থিত আমার অধীনস্থ সৈনিকদের জানিয়ে দেই আমি স্বাধীন বাংলার আনুগত্য স্বীকার করছি। সেই সাথে সৈনিকদের নির্দেশ দেই তোমরাও পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোল। আমার নির্দেশ পাওয়ার সাথে সাথে বাঙালি সৈনিক, জিসিও অফিসার জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। তারা সেখানে পাকিস্তানিদের হত্যা এবং আটক করে স্বাধীন বাংলার বিজয় পতাকা উত্তোলন করে।




২৬শে মার্চ ১৯৭১ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কতৃক স্বাধীনতা ঘোষণার ওয়ারলেস বার্তা।
বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তথা ২৫শে মার্চ রাত ১২ টায় (অর্থাৎ, ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে) তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন যা চট্টগ্রামে অবস্থিত তৎকালীন ই.পি.আর এর ট্রান্সমিটারে করে প্রচার করার জন্য পাঠানো হয়।

ঘোষণাটি নিম্নরূপ অনুবাদ: এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।

২৬শে মার্চ বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাসেম সহ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কয়েক'জন কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এম.এ.হান্নান প্রথম শেখ মুজিব এর স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রটি মাইকিং করে প্রচার করেন।


পরে ২৬শে মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। অবশ্যই এখানে বিতর্ক রয়েছে। অনেকেই বলেন ২৬ শে মার্চ নয় ২৭ শে মার্চেই শহীদ জিয়া স্বাধীনতার ঘোষণা বার্তাটি পাঠ করেন এবং তারা একটা ভিডিও চিত্র উপস্থাপন করেন।

ঘোষণাটি নিম্নরূপ:
আমি,মেজর জিয়া, বাংলাদেশ লিবারেশন আর্মির প্রাদেশিক কমান্ডার-ইন-চিফ, শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। আমি আরো ঘোষণা করছি যে, আমরা শেখ মুজিবর রহমানের অধীনে একটি সার্বভৌম ও আইনসিদ্ধ সরকার গঠন করেছি যা আইন ও সংবিধান অনুযায়ী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের সরকার জোট-নিরপেক্ষ নীতি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর। এ রাষ্ট্র সকল জাতীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে এবং বিশ্বশান্তির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। আমি সকল দেশের সরকারকে তাদের নিজ নিজ দেশে বাংলাদেশের নৃশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। শেখ মুজিবর রহমানের সরকার একটি সার্বভৌম ও আইনসম্মত সরকার এৰং বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাবার দাবিদার।


২৭শে মার্চ প্রত্যুষে কালুরঘাটে অবস্থিত চট্টগ্রাম বেতারের বিপ্লবী কর্মীরাও অদূরে বাঙালী সেনাদের অবস্থানের খবর পেয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করে। সেখানে তারা মেজর জিয়াকে বেতারে একটি ঘোষনা দিতে এবং ট্রান্সমিশন কেন্দ্র পাহারা দিতে কয়েকজন সৈনিক দেবার অনুরোধ করে। মেজর জিয়া এতে রাগান্বিত হয়ে তাদের ফিরিয়ে দেন। অবশ্য কিছুক্ষন পরে তিনি কালুরঘাট ট্রান্সমিশন কেন্দ্র পাহারার জন্য ৮জন সৈনিক পাঠান। তারপর হঠাৎ করে নিজে সেখানে গিয়ে উপস্থিত হন এবং ট্রান্সমিশন কেন্দ্র থেকে নিজেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে ঘোষনা করে স্বাধীনতার ঘোষনা প্রদান করেন।

তার এই ধরনের ঘোষনায় নেতৃবৃন্দ হতভম্ব হয়ে পড়েন। পরে সর্বজন শ্রদ্বেয় ব্যক্তিত্ব প্রাত্তন কেন্দ্রীয় শিল্পমন্ত্রী জনাব,এ.কে. খান সাহেবের বাসায় স্থানীয় নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে নিজ হাতে মেজর জিয়ার মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে স্বাধীনতার ঘোষনা দেন যেটা আজ আমরা শুনে থাকি।

তার এই ঘোষণা পত্রটিতে যেহেতু বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে ঘোষণা করছেন কথাটি উল্লেখ ছিলনা তাই তিনি পরবর্তীতে সেই ভাষণ সংশোধন করেন এবং পুনরায় ২৭ শে মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে সকাল ১১টায় স্বাধীনতার আরেকটি ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। ঘোষণাপত্রটির ভাষ্য নিম্নরুপ:



This is Swadhin Bangla Betar Kendra. I, Major Ziaur Rahman, at the direction of Bangobondhu Mujibur Rahman, hereby declare that Independent People's Republic of Bangladesh has been established. At his direction , I have taken the command as the temporary Head of the Republic. In the name of Sheikh Mujibur Rahman, I call upon all Bengalees to rise against the attack by the West Pakistani Army. We shall fight to the last to free our motherland. Victory is, by the Grace of Allah, ours. Joy Bangla.


অনুবাদ: আমি,মেজর জিয়া, বাংলাদেশ লিবারেশন আর্মির প্রাদেশিক কমাণ্ডার-ইন-চিফ, শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। আমি আরো ঘোষণা করছি যে, আমরা শেখ মুজিবর রহমানের অধীনে একটি সার্বভৌম ও আইনসিদ্ধ সরকার গঠন করেছি যা আইন ও সংবিধান অনুযায়ী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের সরকার জোট-নিরপেক্ষ নীতি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর। এ রাষ্ট্র সকল জাতীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে এবং বিশ্বশান্তির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। আমি সকল দেশের সরকারকে তাদের নিজ নিজ দেশে বাংলাদেশের নৃশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। শেখ মুজিবর রহমানের সরকার একটি সার্বভৌম ও আইনসম্মত সরকার এৰং বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাবার দাবিদার।"







২৫ শে মার্চ ১৯৭১ এ হোয়াইট হাউস ডিফেন্স ইনটেলিজেন্সের রিপোর্ট






বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রের একটি কপি। এখাণ থেকে জানা যায় বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন রাত সাড়ে ১১ টায়।




এটি স্ক্যান কপি।





এবার আসুন জেনে নিই কিভাবে প্রচার হলো

পরিস্থিতি তেমন হলে স্বাধীনতা ঘোষণার সিদ্ধান্ত এবং প্রাথমিক প্রস্তুতি বঙ্গবন্ধু আগে থেকেই নিয়ে রেখেছিলেন। তবে তিনি চেয়েছিলেন প্রথম আক্রমণটা পাকিস্তানিদের পক্ষ থেকে আসুক যাতে বিশ্ব আমাদের একতরফা বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে চিহ্নিত করতে না পারে। ঘোষণাটি চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারের আগেই ২৫ মার্চ দিনগত রাত ১২টার পর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

চট্টগ্রাম সংগ্রাম কমিটির শীর্ষ নেতা সিটি আওয়ামী লীগের সভাপতি জহুর আহমদ চৌধুরীর মেজ ছেলে মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও আর এক ছেলে হেলাল উদ্দিন চৌধুরী (মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ শামসুল হক) কে দেয়া দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানান, ওই দিন রাত ১২টার দিকে তাঁদের পল্টন সড়কের বাসভবনে এক ব্যক্তি ফোন (নং ৮০৭৮৫) করে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার কথা জানান এবং তা লিখে নিতে বলেন। ফোন ধরে তা লিখে নেন জহুর আহমদ চৌধুরীর স্ত্রী ডা. নূরুন্নাহার জহুর। মাহতাব উদ্দিন তখন মাধ্যমিকে প্রথম বর্ষ এবং হেলাল উদ্দিন পঞ্চম কি ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র।

নূরুন্নাহার ঘোষণাটির কয়েকটি কপি করে চট্টগ্রাম সংগ্রাম কমিটির নেতাদের কাছে পাঠান। এছাড়া তিনি চট্টগ্রামের ফৌজদার ক্যাডেট কলেজের কাছে সলিমপুর অয়্যারলেস স্টেশনে তাঁর পরিচিত সহকারী প্রকৌশলী এ কে এস এম এ হাকিমের (পাবনা) কাছেও ঘোষণার কথা জানান ফোনে (নং সিজি ৮৩২০০)। ওই সময় হাকিমের অনুপস্থিতিতে এটি লিখে নেন রেডিও টেকনিশিয়ান জালাল আহমদ (পটিয়া, চট্টগ্রাম)। পরে হাকিমের নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁর সহকর্মীরা ঘোষণাটি তাঁদের জানাশোনা আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও সাংবাদিকসহ বিশ্বস্ত সূত্রগুলোকে টেলিফোনে জানান।

পাশাপাশি সকালে (২৬ মার্চ) সমুদ্রে অবস্থানরত বিদেশি জাহাজগুলোতে জানিয়ে দেন আন্তর্জাতিক মেরিটইম অয়্যারলেসের মাধ্যমে। অপরদিকে স্বাধীনতা ঘোঘণার একটি টাইপ করা কপি মধ্যরাতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ঢাকার মগবাজার ভি এইচ এফ (ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি) অয়্যারলেস স্টেশনে পৌঁছে দেন। সেখানে কর্তব্যরত সহকারী প্রকৌশলী আবদুল কাইউম (পরবর্তীতে কাস্টমস কমিশনার) ও ইঞ্জিনিয়ারিং সুপারভাইজার মেজবাহউদ্দিন ভি এইচ এফ স্টেশন থেকে চট্টগ্রামের সলিমপুরসহ সারাদেশের মোবাইল বেইজের আওতাধীন অঞ্চলগুলোতে পাঠান।

চট্টগ্রামে ভিএইচ এফ স্টেশনে দায়িত্বরত সহকারী প্রকৌশলী গোলাম রব্বানী ডাকুয়ার সঙ্গে পরামর্শক্রমে ঘোষণাটি তাঁর দুই সহকর্মীও (রেডিও টেকনিশিয়ান) তাঁদের জানাশোনা আওয়ামী লীগ নেতাসহ বিভিন্ন সূত্রগুলোর কাছে টেলিফোনে জানান। পাশাপাশি অয়্যারলেসযোগে জানিয়ে দেন বহির্ণোঙ্গরে অবস্থানরত বিদেশি জাহাজগুলোতে। এই অয়্যারলেসের মাধ্যমে ঘোষণা গ্রহণ ও প্রচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত সহযোগী অন্যরা হচ্ছেন আবদুল কাদের (রাউজান, চট্টগ্রাম) মাহফুজ আলী (বাঁশখালী, চট্টগ্রাম), শফিকুল ইসলাম (শাহরাস্তি, কুমিল্লা), আবুল কাসেম খান (পাবনা), জুলহাস উদ্দিন (কাবাড়িয়া, জামালপুর), আবুল ফজল (সেনবাগ, নোয়াখালী)।

এদিকে ২৫ মার্চ এম আর সিদ্দিকীর বাসায় ঢাকার সর্বশেষ পরিস্থিতি ও এখানকার করণীয় বিষয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে নেতৃবৃন্দ চলে যান জহুর আহমদ চৌধুরীর বাসায়। সেখানে আলাপ আলোচনা চলাকালে রাত ১২টার কিছুক্ষণ পর বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার কথা জেনে তাঁরা চলে যান আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর বাসায়।

আওয়ামী লীগ নেতা এম এ মান্নান আন্দরকিল্লা বিনোদা ভবনস্থ সিটি আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গিয়ে স্বাধীনতা ঘোষণার বাংলা অনুবাদসহ সাইক্লোস্টাইল কপি করিয়ে তা উপস্থিত কর্মীদের মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন স্থানে মাইকযোগে বিলি করার ব্যবস্থা করেন।

অয়্যারলেস স্টাফ, সাংবাদিক এবং বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিসহ অনেকেই রাতের মধ্যেই স্বাধীনতা ঘোষণার কথা জেনে যান। তাঁরা তা পরম আগ্রহে জানিয়ে দেন ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধব ও পাড়া প্রতিবেশীদের কাছে। ২৬ মার্চ সকালে আবারো অনেক নেতা-কর্মী জড়ো হন আখতারুজ্জামান চৌধুরীর বাসভবন জুপিটার হাউসে। সেখানে দীর্ঘ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় বঙ্গবন্ধুর পাঠানো স্বাধীনতার ঘোষণাটি রেডিও’র মাধ্যমে জনগণকে জানানো প্রয়োজন। তখনো সবাই আদৌ জানতেন না যে, বঙ্গবন্ধু কোথায় কী অবস্থায় আছেন।

খোঁজ নিয়ে যতদূর জানা যায়, আখতারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় আলোচনার সময় এম এ হান্নান, এম এ মান্নান, ডা. এম এ মান্নান এমপি, শাহজাহান চৌধুরী, মীর্জা আবু মনসুর, আতাউর রহমান খান কায়সার, তরুণ কর্মী রাখাল চন্দ্র বণিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় জহুর আহমদ চৌধুরী, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরী ও এম আর সিদ্দিকীসহ চট্টগ্রামের তৎকালীন এমপিদের মধ্যে যাঁরা শহরে আছেন তাঁরা একযোগে রেডিও স্টেশনে যাবেন এবং সংসদ সদস্যদের পক্ষে জহুর আহমদ চৌধুরী স্বাধীনতার ঘোষণা বেতারে প্রচার করবেন।

আখতারুজ্জামান চৌধুরীর বাসা থেকে আগ্রাবাদ বেতার কেন্দ্রের দিকে যাবার সময় কয়েকজন নেতা-কর্মী আসেন আওয়ামী লীগ অফিসের সামনে। তাঁদের সঙ্গে মিরসরাই থেকে এসে যোগ দেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন (পরবর্তীতে মন্ত্রী)। তিনিসহ ডা. এম এ মান্নান, এম এ হান্নান, শাহজাহান চৌধুরী, মীর্জা মনসুর প্রমুখ রওনা দেন আগ্রাবাদ বেতার কেন্দ্রে। তখন বেলা প্রায় ১২টা।

এর আগে সকাল ১০টা নাগাদ জিপিও’র সামনে চট্টগ্রাম কাস্টমস্ অফিসের তৎকালীন একজন প্রিভেন্টিভ অফিসার এম এ হালিম (পরবর্তীতে সহকারী কালেক্টর) হান্নান সাহেবকে স্বাধীনতা ঘোষণার একটি কপি পাওয়ার কথা জানান এবং বেতার কেন্দ্রের কিছু লোকের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। হান্নান সাহেব হালিম সাহেবকে কিছুক্ষণ পর আগ্রাবাদ আসার কথা বলে চলে যান সংগ্রাম পরিষদ নেতাদের কাছে। এর পর অন্য নেতাদের নিয়ে আগ্রাবাদ বেতার কেন্দ্রে আসেন। কিন্তু কর্মীরা ততক্ষণে কাজ বন্ধ করে চলে গেছেন। হান্নান ও তাঁর সঙ্গীরা বেতার কেন্দ্রে কাউকে না পেয়ে বেতারের আঞ্চলিক প্রকৌশলী মীর্জা নাসির উদ্দিনকে ডেকে আনার জন্য তাঁর আগ্রাবাদ সরকারি কলোনির বাসায় লোক পাঠান। তিনি প্রথমে ইতস্তত করলেও কাস্টমস কর্মকর্তা হালিমসহ স্থানীয় লোকজন তাঁকে নিরাপত্তার আশ্বাস হান্নান সাহেবের কাছে নিয়ে যান। আবদুস সোবহান নামে একজন রেডিও ইঞ্জিনিয়ারকেও নেওয়া হয় সঙ্গে। কিন্তু কর্ণফুলী নদীর কাছে অবস্থিত হওয়ায় আগ্রাবাদ বেতার কেন্দ্র থেকে অনুষ্ঠান প্রচার চালানো মীর্জা নাসিরসহ অনেকের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হয়। পরে সবাই রওনা দেন কালুরঘাটস্থ বেতার সম্প্রচার কেন্দ্রের দিকে। যাবার পথে চকবাজারের বাদুরতলা এলাকায় অবস্থানরত দেলোয়ার হোসেন নামে একজন বেতার প্রকৌশলীকেও সঙ্গে নেওয়া হয়। একই এলাকায় অবস্থানরত মোসলেম খান নামে অপর বেতার প্রকৌশলী যান রাতের পালায়। প্রায় দেড়টার সময় সবাই পৌঁছান সম্প্রচার কেন্দ্রে। বেতার প্রকৌশলীদের দেখে বেতার কর্মীরা ট্রান্সমিটার অন করার ব্যবস্থা করেন।

এদিকে সেখানে কি বলা হবে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তা ঠিক করেছিলেন এম এ হান্নান, আতাউর রহমান খান কায়সার, ডা. এম এ মান্নান, শাহজাহান চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠান ঘোষক হিসেবে ঠিক করা হয় রাখাল চন্দ্র বণিককে।

প্রায় ১০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত অনুষ্ঠানটি প্রচার শুরু হয় বেলা প্রায় দুইটায়। রাখাল চন্দ্র বণিক ঘোষণা করেন ‘চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র। একটি বিশেষ ঘোষণা, একটু পরেই জাতির উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন চট্টগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের বিপ্লবী সাধারণ সম্পাদক জনাব এম এ হান্নান। আপনারা যাঁরা রেডিও খুলে বসে আছেন তাঁরা রেডিও বন্ধ করবেন না।’ বেতার কেন্দ্রের নাম ‘চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র’ ছাড়াও ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’ বলেও উল্লেখ করেছিলেন রাখাল চন্দ্র বণিক।

এভাবে বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ঘোষণা বেতারে সর্বপ্রথম প্রচারের গৌরব অর্জন করেন সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা এম এ হান্নান। ঘোষণা প্রচার শেষে নেতৃবৃন্দ আন্দরকিল্লা চলে আসেন।

ঘোষণাটি নানাভাবে প্রচারিত হয় একাধিকবার। এর মধ্যে নিজের নাম উল্লেখ না করে প্রচার করেন ডা. এম এ মান্নান এমপি।

উল্লেখ্য, এই বেতার অধিবেশন চট্টগ্রাম বেতারের প্রচার ফ্রিকোয়েন্সি ৮৭০ কিলোহার্জ এ প্রচারিত হয়েছিল। লক্ষ্য করার বিষয় যে, ২৬ মার্চ দুপুরে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে এম এ হান্নানের স্বাধীনতা ঘোষণা প্রচারের অনুষ্ঠানটি ছিল রাজনৈতিক নেতৃত্বের স্বতঃউৎসারিত দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফল। এটি বেতার কর্মীদের উদ্যোগে সংগঠিত অনুষ্ঠান ছিল না। সূচনার দিক থেকে প্রথম অধিবেশন হলেও এটি ছিল অবিন্যস্ত খন্ডকালীন অধিবেশন।



তথ্য সুত্র -
ইদরিস আলমের কলাম, পূর্বকোণ, ২৩.৭.৯৮
বাংলাদশের স্বাধীনতা ঘোষণার গোড়ার কথা : এম.এ হালিম,
সংবাদ. ৭.৪.৯২,
ভোরের কাগজ ১৬.০৪.৯৮
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র : পৃষ্ঠা-৮৭,
সাপ্তাহিক অনুবীক্ষণ ১৪.১২.৯৭
মুক্তিযুদ্ধের বিজয়: পৃষ্ঠা-১৩,
আজকের কাগজ : ২.১২.৯১
মুক্তিযুদ্ধে মুজিব নগর : পৃষ্ঠা ৩৪,
দৈনিক আজাদী, ৮.৪.১৯৭২,
রক্ত আগুন অশ্রুসজল স্বাধীনতা, (মাহবুব-উল আলম)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫৫

খোলা মনের কথা বলেছেন: ভাল লিখেছেন কিন্তু বিতর্কীত যে কোন জিনিস সব সময় বিতর্কীত থেকে যায়। সেটির সমাধান কখনো সম্ভব না। আপনি আপনার মত করে সুন্দর সাজিয়ে গুছিয়ে দলিল সহ উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু আপনার লেখার বিপক্ষে যারা আছে তারাও আপনার থেকে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে হাজার লজিক সামলে উপস্থাপন করবে তাদের পক্ষের জন্য। আমার আপনার লেখায় ইতিহাস পরিবর্তন সম্ভব না। সবাই নিজে নিজের দৃষ্টিতে সঠিক থাকতে পছন্দ করে.......

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.