নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ, আমার প্রাণ, মুক্তিযুদ্ধ আমার চেতনা\nসাংবাদিকতা পেশা এবং নেশা!

আহমাদ ইশতিয়াক

কুয়াশা ভেজা কোনো এক রাত শেষের ভোরে প্রান্তর ভেজানো শিশিরে, আমি জন্মেছি, কারো স্বপ্নে বিভোর ঘুম জড়ানো কন্ঠে জল পেতেছি দৃষ্টির আড়ালে। জোসনা ভেজা রাতে চন্দনের ঘ্রাণে ভোরের শিউলিও থমকে ছিলো খানিকটা। মৃদু হাওয়ার স্পন্দনে বকুল ফুলের নেশা আমায় গ্রাস করেছিলো শুভ্র আবহে। ঘরের এককোনে অনাদরে মলিন হওয়া তারপুরার বেদনার সাথে কেনো যেনো বন্ধুত্ব ছিলো শতাব্দী ধরে। চিঠির কালি শুকিয়ে পড়তো জলেশ্বরীর জলপদে। শ্রাবণের সন্ধ্যার বর্ষণের পানে আমি কতোকাল চেয়েছি। তরুণীর ভেজা চুল আকাশের স্বপ্নের শরৎের বিকেল কাশফুলের শুভ্রতা লুটতো আমাকে সঙ্গী রেখে। কারো স্বপ্নে, এক ফোঁটা নিঃশ্বাসে, হয়তো একটুখানি তৃপ্তিতে আমি দিনশেষে ফুরিয়ে যাবো মহাকালের বুকে। হয়তো স্বপ্ন ভিড়বে কুয়াশায়, বকুলের ঘ্রাণে, শ্রাবণের বর্ষনে!

আহমাদ ইশতিয়াক › বিস্তারিত পোস্টঃ

যেখানে সর্ব কালে সেরা বব ডিলান।

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:৩৯



[

সাহিত্যে নোবেল পেলেন কিংবদন্তি সংগীত শিল্পী বব ডিলান।
বব ডিলান আমেরিকান সংগীতের এক অবিসংবাদিত নাম। বব ডিলান আমাদের হূদয়েও বিশেষভাবে স্থান করে আছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধকালে তাঁর সহমর্মী অবদানের জন্য।

জর্জ হ্যারিসন, জোয়ান বায়েজ আর বব ডিলান—এই নামগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে ১৯৭১ সাল; পূর্ব পাকিস্তানের নিরীহ, নিরস্ত্র জনগণের ওপর নির্বিচারে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যার খবর বন্ধুবান্ধব ও সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে জেনে কিছু একটা করার তীব্র তাগিদ থেকেই বিটলস খ্যাত জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবিশঙ্কর যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের মানুষের সাহায্যার্থে আয়োজন করেছিলেন ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’।
(কনসার্ট ফর বাংলাদেশে সহ শিল্পীদের সাথে বব ডিলান)
১ আগস্টের এই কনসার্টে জর্জ হ্যারিসন যেমন ‘বাংলা দেশ’ গান লিখে ও গেয়ে বিখ্যাত হয়ে আছেন, তেমনি এই অনুষ্ঠানে আরেকজনের উপস্থিতি কনসার্টের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছিল বহু গুণে। তিনি হলেন বব ডিলান, মার্কিন রক ও ফোকসংগীতের জগতে ষাটের দশকেই কিংবদন্তিতুল্য নাম। কনসার্ট ফর বাংলাদেশে বব ডিলান তাঁর বিখ্যাত ‘ব্লোইং ফর দ্য উইন্ড’ গানটি পরিবেশন করেছিলেন। এবং এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই দীর্ঘ আট বছর পর এটাই ছিল বব ডিলানের জনসমক্ষে প্রথম সংগীত পরিবেশনা।


(কবি অ্যালেন গিনসবার্গের সাথে বব ডিলান)

বিট কবি অ্যালেন গিনসবার্গের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অবলম্বন করে লেখা বিখ্যাত কবিতা ‘যশোর রোড’কেও গানে রূপান্তরের পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন বব ডিলান। বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশায় আরও একজন শিল্পী গিটার হাতে গেয়েছিলেন ‘বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ (২৫ মার্চ ১৯৭১) গান। তাঁর নাম জোয়ান বায়েজ, বব ডিলানের দীর্ঘদিনের সহচর। তাঁরা একসঙ্গে বহু সংগীতসফরে অংশ নেন। ডিলানের বিখ্যাত রোলিংস্টোন রিভ্যু ট্যুরের (১৯৬৪-৬৫, ১৯৭৫-৭৬) প্রতিটিতে সহশিল্পী হিসেবে ছিলেন জোয়ান বায়েজ। ১৯৮৪ সালে বব ডিলানের বিখ্যাত ইউরোপ সফরেও জোয়ান ছিলেন অবিচ্ছিন্ন সঙ্গী, এই সফরে তাঁরা গান বিখ্যাত ‘ব্লোইং ইন দ্য উইন্ড’ ও ‘উই শ্যাল ওভারকাম’ গান দুটো।


বাংলাদেশের মানুষের কাছে চিরস্মরণীয় বব ডিলানের সংগীতের শুরু বিচিত্রভাবে: ১১ বছর বয়সে সংগীতে হাতেখড়ি পিয়ানো বাজানোর মধ্য দিয়ে, পরে ডিলান পিয়ানো ফেলে প্রথমে হ্যাঙ্ক উইলিয়ামস, এলভিস প্রেসলি ও পরে লিটল রিচার্ডের গানে মুগ্ধ হয়ে অ্যাকুয়াস্টিক গিটার তুলে নেন। তবে ঘরের দেয়ালে অন্য হাজারো মার্কিন তরুণের মতো সাঁটানো ছিল চলচ্চিত্র অভিনেতা জেমস ডিনের পোস্টার। শুরুতে ডিলানের নাম ছিল রবার্ট অ্যালেন জিমারম্যান, জন্ম মিনেসোটার ডুলুথে।


১৯৫৭ সালে জিমারম্যান চলে আসেন মিনিয়াপোলিসে এবং ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটায়। পড়াশোনা শেষ করার আগেই বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে যান তিনি। এখানে পড়াশোনার সময়ই তাঁর রকসংগীত-প্রীতি পরিবর্তিত হয়ে আগ্রহ তৈরি হয় মার্কিন লোকসংগীতের প্রতি। ১৯৮৫ সালে লোকসংগীত পরিবেশন শুরু করেন জিমারম্যান। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কয়েক বাড়ি পরে একটি কফি হাউস ছিল তাঁর সংগীতমঞ্চ। এ সময় তাঁর পরিচয় হয় স্থানীয় লোকসংগীতের দল ডিঙ্কিটাউন ফোক সারকিটের সঙ্গে। ডিঙ্কিটাউনের দিনগুলোতেই জিমারম্যান নিজেকে বব ডিলান বলে পরিচয় দিতে শুরু করেন। বব ডিলান তাঁর আত্মজীবনীতে বলেছেন: নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কবি ডিলান টমাস তাঁকে প্রভাবিত করেছেন পুরোমাত্রায়। ডিলান টমাসের কবিতাপ্রীতি থেকেই তিনি জিমারম্যান নাম ঝেড়ে ফেলে হয়ে ওঠেন বব ডিলান।


০০৪ সালে এক সাক্ষাৎকারে ডিলান বলেন, ‘আমার জন্ম আসলে ভুল নামে ভুল মা-বাবার ঘরে। এমনই হয়। কাজেই তুমি তোমাকে যেকোনো নামে ডাকতে পারো। আমেরিকা মুক্ত মানুষের ভূখণ্ড।’ ১৯৬২ সালে ডিলানের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ঘটনা ঘটে। ওই বছর তাঁর পেশাদার সংগীতশিল্পের জগতে প্রবেশ ঘটে। বিখ্যাত সংগীত ম্যানেজার আলফ্রেড গ্রসম্যানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরে সক্ষম হন ডিলান।
এবং আইনগতভাবেও ওই প্রথম বব ডিলান নামটি নথিভুক্ত হয়। সংগীতজগতের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব গ্রসম্যান ডিলানের ম্যানেজার ছিলেন একোবের, ১৯৭০ সাল পর্যন্ত। সংগীতের পথপরিক্রমায় মার্কিন দুনিয়ায় ডিলানের প্রভাব সুদূরপ্রসারী। বিটলসের জর্জ হ্যারিসন বলেন, ‘বিরতিহীনভাবে আমরা ডিলানের গান শুনেছি, রেকর্ড জীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বেজেই গেছে। ডিলানের গানের কথা, সুর—অবিশ্বাস্য রকম মৌলিক আর অভিনব।’ আরেক মার্কিন ঔপন্যাসিক জয়েস ক্যারল ওটস ডিলানের গানের প্রভাব সম্পর্কে বলেন, ‘তরুণ, আনকোরা কোনো রকম ঘষামাজা ছাড়া খানিকটা খোনা স্বরের ওই শিল্পী আমাদের প্রথমবারেই মুগ্ধ করে ফেলে। তারপর যত দিন গেছে, আমার স্বামী আর আমার মুগ্ধতা শুধুই বেড়েছে।’


১৯৬৩ সালে ডিলান অন্য পরিচয়ে পরিচিত হয়ে ওঠেন। শুধু লোকগান কিংবা উন্মাতাল রক গানের শিল্পী নন—তিনি হয়ে ওঠেন অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বরও। এ সময় দীর্ঘদিনের সঙ্গী জোয়ান বায়েজ আর ডিলান সক্রিয়ভাবে অংশ নেন বিভিন্ন নাগরিক অধিকার আন্দোলনে।





(প্রিয় বন্ধু সহকর্মী জোয়ান বায়েজের সঙ্গে বব ডিলান)

২৮ মার্চ ১৯৬৩ তাঁরা অংশ নেন মার্চ অন ওয়াশিংটন নাগরিক অধিকার রক্ষার আন্দোলনে। তৃতীয় অ্যালবাম দ্য টাইমস দে আর আ চেঞ্জিং-এ ডিলান পুরোপুরি হাজির হন এক রাজনীতিসচেতন, কিন্তু নৈরাশ্যবাদী গায়ক হিসেবে। এ সময় ডিলানের রচিত সব গানে স্থান করে নেয় সমসাময়িক বিষয়াবলি, ব্যক্তিগত গল্প এবং সমাজের নানা অসংগতি। ‘ওনলি আ পন ইন দেয়ার গেম’ গানের বিষয়ে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের কর্মী মেডগার ইভস, ‘দ্য লোনসাম ডেথ অব হেটি ক্যারল’ গানে প্রতিবাদী ডিলান স্মরণ করেন শ্বেতাঙ্গ উইলিয়াম জান্টিঙ্গারের হাতে নিহত হোটেলকর্মী কৃষ্ণাঙ্গী হেটি ক্যারলকে। ‘ব্যালাড অব হোলি ব্রাউন আর নর্থ কান্ট্রি ব্লুজ’-এ ডিলান প্রতিবাদী হন খনিশ্রমিক আর কৃষিজীবীদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে।




তাঁর অতি ব্যক্তিগত প্রেমের গানেও এ সময় দ্রোহ, রাজনীতি থেকে মুক্ত ছিল না: ‘বুটস অব স্প্যানিশ লেদার’ এবং ‘ওয়ান টু ম্যানি মর্নিংস’। প্রতিবাদ আর নিপীড়নবিরোধী গান লেখা ও গাওয়ার সময়ই অতি নীরবে ডিলানের ভেতরে আরেকটি পরিবর্তন সূচিত হতে থাকে। এ সময় ডিলান তাঁর দীর্ঘ ব্যাপ্তির দুটো গানে (চাইমস অব ফ্রিডম এবং মাই ব্যাক পেজেস) ফোক গানের ধারা থেকে যেন মুক্ত হতে চেয়েছেন। ১৯৬৪-৬৫ সালের শেষ ভাগে ডিলানের পরিবর্তন ঘটে দ্রুত, ফোক গান থেকে দ্রুত তিনি সরে আসেন ফোক-রক-পপ গানে। এ সময় পোশাক-আশাকেও পরিবর্তন আসে তাঁর। ফোক সিঙ্গারের গিটার, ধূসর জিনসের সঙ্গে যোগ হয় বিটলসের মতো সুচালো বুট আর চোখে দিন-রাতের রোদচশমা। গায়ে রংচঙে শার্ট। নতুন পরিচয়ে বাড়তি আগুন যোগ করে ডিলানের সাধারণ গিটার ছেড়ে ইলেকট্রিক গিটার হাতে তুলে নেওয়ার পর। এ সময় চারদিকে তাঁকে নিয়ে বিতর্ক হতে থাকে। মার্কিন লোকশিল্পীদের যাঁরা এত দিন ডিলানকে তাঁদের একজন মনে করে গর্ব করতেন, তাঁরাও তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেন। কনসার্টেও ডিলান দর্শকদের নানা কটূক্তির শিকার হন।






(বর্তমানের এক সময়ে বব ডিলান)


কিন্তু ডিলান সরে আসেননি। তাঁর শক্তিশালী কাব্যিক কথা আর সুর শেষ পর্যন্ত শ্রোতামন ঠিকই জয় করেছে। বব ডিলান এই সময়ে বিশ শতকের এক অবিসংবাদিত সংগীতশিল্পী, এর প্রমাণ টাইম-এ শতাব্দীর ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের তালিকায় বব ডিলানের নাম। টাইম তাঁর বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছে: সেরা কবি, সমাজের অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তীব্র অকুতোভয় বিদ্রুপাত্মক সমালোচক। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ডিলানকে তুলনা করতে গিয়ে নামোচ্চারণ করেছেন মোৎসার্ট, পিকাসো, শেক্সপিয়ার ও ডিকেন্সের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের। ডিলানের কাজ নিয়ে ৫০০ পৃষ্ঠার এক সুবিশাল বইয়ে অধ্যাপক ক্রিস্টোফার রিকস তাঁর গানের কথাকে তুলনা করেছেন কবি এলিয়ট ও টেনিসনের সঙ্গে। ১৯৯৬ সাল থেকেই বব ডিলানের নাম বিবেচিত হচ্ছে নোবেল পুরস্কারের জন্য।


গেল বছর ল্যাডব্রুকসের বাজিতে টোমাস ট্রান্সট্রমার নয়, এগিয়ে ছিলেন বব ডিলানই। বব ডিলানের রক-পপ ও ফোকসংগীতে চিরস্থায়ী অবদানের কথা শ্রদ্ধাভরে স্বীকার করেছেন তাঁর ও এ সময়ের প্রায় সব শিল্পীই। জন লেনন ও পল ম্যাককার্টনি বলেছেন, ডিলান পুরো রক মিউজিককেই বদলে দিয়েছেন। পশ্চিমা বিশ্ব যেমন এই প্রবাদপ্রতীম সংগীতব্যক্তিত্বকে স্মরণ করবে চিরকাল, তেমনি বাংলাদেশ যত দিন থাকবে তত দিন বব ডিলানের নাম লেখা থাকবে বাংলাদেশের ইতিহাসে। জর্জ হ্যারিসন, জোয়ান বায়েজ আর বব ডিলানের নাম এ দেশের প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে স্মরিত হবে শ্রদ্ধাভরে।


অভিনন্দন বব ডিলান। আপনি থাকবেন আমাদের হৃদয়ে মণিকোঠায়।


মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:১৭

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
চমৎকার পোস্ট। +

২| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:১৮

চাঁদগাজী বলেছেন:



ভালো হলো, সে মানবতার গায়ক ও কবি

৩| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:২৮

এ কে এম রেজাউল করিম বলেছেন:
বাংলাদেশ ও বাংলাদেশীদের সুহৃদ প্রিয় বব ডিলান-এর মর্যাদা পূর্ণ রেকগনি'শন এবং তাকে আবার সম্মানিতগন চিনিতে পারায় আমি আনন্দিত।

৪| ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:১৪

ডা. অমিতাভ অরণ্য বলেছেন: চমৎকার পোস্ট!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.