![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কুয়াশা ভেজা কোনো এক রাত শেষের ভোরে প্রান্তর ভেজানো শিশিরে, আমি জন্মেছি, কারো স্বপ্নে বিভোর ঘুম জড়ানো কন্ঠে জল পেতেছি দৃষ্টির আড়ালে। জোসনা ভেজা রাতে চন্দনের ঘ্রাণে ভোরের শিউলিও থমকে ছিলো খানিকটা। মৃদু হাওয়ার স্পন্দনে বকুল ফুলের নেশা আমায় গ্রাস করেছিলো শুভ্র আবহে। ঘরের এককোনে অনাদরে মলিন হওয়া তারপুরার বেদনার সাথে কেনো যেনো বন্ধুত্ব ছিলো শতাব্দী ধরে। চিঠির কালি শুকিয়ে পড়তো জলেশ্বরীর জলপদে। শ্রাবণের সন্ধ্যার বর্ষণের পানে আমি কতোকাল চেয়েছি। তরুণীর ভেজা চুল আকাশের স্বপ্নের শরৎের বিকেল কাশফুলের শুভ্রতা লুটতো আমাকে সঙ্গী রেখে। কারো স্বপ্নে, এক ফোঁটা নিঃশ্বাসে, হয়তো একটুখানি তৃপ্তিতে আমি দিনশেষে ফুরিয়ে যাবো মহাকালের বুকে। হয়তো স্বপ্ন ভিড়বে কুয়াশায়, বকুলের ঘ্রাণে, শ্রাবণের বর্ষনে!
[img|http://s3.amazonaws.com/somewherein/pictures/AahmadIstiak/AahmadIstiak-1479191021-fe60798_xlarge.jpg
সম সরেন, চাম্পাই সরেন আড়ালে বসে চোখ মুছছেন। জীবনের নানা প্রান্ত দেখতে দেখতে সবই অভ্যাস হয়েছে। এখন শুধুই মাঝেমাঝে চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। দীর্ঘশ্বাসের সাথে বেরিয়ে আসে একগাদা ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ। কখনোই ভাবতে পারেন নি তাঁরা।
পুরোটা জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন মাটি আর মানুষকে ভালবেসে। সম সরেন যখন শুনেছেন নিজের মা, বোন, খালা, ফুফুকে গাছের সাথে বেঁধে ধর্ষণ করেছে, মাথায় ভীষণ ঝিম ধরেছিলো। তিনি তখন আগরতলায়। খালি পায়ে হাফপ্যান্ট পরে দৌড়াচ্ছেন, মাটি নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন, দেখছেন মানুষের চোখের মাঝের আবেগ। বারেবারে দেখেছেন শোষণের প্রকাশ।
ইংরেজদের তাড়িয়েছেন মাটি থেকে।
জীবনের সবটুকু সম্বল নিয়ে যখন ভালোই কেটে যাচ্ছে দিন, ঠিক তখনই চেপে বসলো। বাপ দাদার ভিটে সম্বলটুকু পুড়িয়ে দিয়েছে রাজাকারেরা।
চাম্পাই সরেন বারেবারে চেয়ে দেখছে। মুখে এক বিন্দু রা নেই। আচ্ছা কি হয়েছে রে সম। এই মাটি আর মানুষ যে বেঈমানি করে আজ তো নিজের চক্ষে দেখলি! সম কিছুই বলেন না, তাঁর মনে পড়ে ৭ নং সেক্টরের দিনগুলো। চোয়াল জমে উঠেছিলো ক্ষুধায়, অথচ ঠিকই শেষ রাতে বেরিয়েছেন রেকি করতে। ভুল ছিলো কি? এক মাস চলছিলো শুধুই ভাত আর ডালে। একবার মাংশ পেয়ে লুকিয়ে কেঁপেছেন, বাড়ি যে আর নেই। জ্বালিয়ে দিয়েছে শুয়োরের বাচ্চারা। আশায় বুক বেঁধে প্রতিদিন সকালে দিন গুনতেন কবে হবে শেষ।
কিন্তু না দিন আর ফুরোয় না। আগের মতোই চলে দিন। সেই ইংরেজ হোক আর পাকিস্তানী, কিংবা বাংলাদেশ। তাঁর দৃষ্টিতে সবই এক। দেখছেন নিজের উত্তরাধিকারদের লাশ নিয়ে বয়ে চলা। চোখে মুখে আগের মতোই ঘৃণা। শুধু একটু খানি ডাল ভাত পেট পুরে খেতে তাড়িয়েছিলেন ইংরেজ আর পাকিস্তানীদের। কিন্তু হায়, এখন তো সব মুখোশধারী। চাম্পাই বিশ্বাস করেন না। শুধুই মৃত্যুর অপেক্ষা করেন। থাক তবে নাহয় আর দেখতে হয়না।
মনে পড়ে দিনাজপুরের ফাদার লুকাশ মারান্ডিকে। কি বিনয়ী। রুহিয়া মিশনে ছাত্রদের আবদারের জায়গা ফাদার। পেট পুরে দুই চারটে খাওয়ার লোভে বাইরের ছেলেরা এসে জুটতো ফাদারের কাছে। ফাদার দেখতেন ওদের দৃষ্টি। জ্বালিয়ে দিয়েছে ওদের বাড়িঘর। ওদের বাপেরা কোথায় আছে কে জানে! ৮ এপ্রিল গাছের সাথে বেঁধে বেয়নেটের নির্মম আঘাতেও মুখ বুজে ছিলেন ফাদার। দৃষ্টিতে শুধুই ঘৃণা। বেয়নেটের আঘাতে চোয়াল ঝুলে রইলো। নাক ফেটে ঠোঁট ঘিরে রইলো। ফাদারের তখনো গুনছেন কয়টি ছেলে যেতে পারলো ভারতে। ধরা পড়বে না তো এই ছেলেগুলো।
সাগরাম মাঝি কি ভুল করেছিলেন? সাঁওতাল বিদ্রোহের বীর সিধু-কানহু-চাঁদ-ভায়রোর সাহসী উত্তরাধিকার সাগরাম মাঝি। মুক্তিযুদ্ধে ঠেলিয়ে পাঠিয়েছেন শত শত যুবককে। প্রাণের ছেলে সুধীর মাঝিকে কি ভুলতে পারেন? অথচ স্বপ্নে তখনো মুড়েছিলো চারপাশ।
কিন্তু না আজো হলোনা। তবে আগের চেয়ে তফাৎ কি। উত্তরাধিকারীদের লাশ ভীষণ ভারি মনে হয়। বুক ফেটে কান্না আসে। মার খেয়ে ফাটা চোয়াল বারেবারে ধিক্কার দেয়।
তবে কি একাত্তর মিথ্যে ছিলো?
২| ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১০:২০
হাসান মাহবুব বলেছেন: সাবধান হও বাঙালি! ইতিহাস কিন্তু ফিরে ফিরে আসে।
©somewhere in net ltd.
১|
১৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:০৭
কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: ছবির লিংকের পেছনে একটা থার্ড ব্র্যাকেট মুছে যাওয়ায় ছবিটি আসে নি। অনুগ্রহ করে তা যোগ করে দিন।
