![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সৃষ্টি-সেবা মহান কাজ
গত বেশ কয়েক দিন ধরে মিয়ানমারে একের পর এক নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলমানদের ঘরবাড়িতে যৌথবাহিনী হামলা চালিয়ে জানমাল সব শেষ করে ছাড়ছে। হিংস্র হায়েনার মতো তাদের উন্মত্ততা থেকে নারী, শিশু কেউই রেহাই পাচ্ছে না। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা লাখো রোহিঙ্গার জীবনের গল্প যেন একই। কষ্ট, দুর্ভোগ, ক্ষুধা, আতঙ্ক আর স্বজন হারানোর বেদনায় ভরা। নিষ্পাপ শিশুর নিথর দেহ উপকূলের বিভিন্ন স্থানে পড়ে থাকতেও দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন বনজঙ্গলের পথ পাড়ি দিয়ে যারা কোনো রকমে প্রাণ বাঁচিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, তারাও ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করছে। নিষ্পাপ শিশুদের আর্তনাদে আকাশ-বাতাস যেন ভারি হয়ে উঠছে। মানুষ হিসেবে আল্লাহপাকের কাছে সবাই সমান। কার ধর্ম কী তা পরের বিষয়। কেননা সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহর পরিবারভুক্ত। কেউ বিপদে পড়লে আরেকজন তাকে উদ্ধার করবে, এটাই ধর্মের শিক্ষা। জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সবার প্রতি এমনকি অপরাপর জীবজন্তুর প্রতি দয়া প্রদর্শন করাই হচ্ছে ধর্ম।
হাদিস ও গ্রন্থাবলি থেকে আমরা জানতে পারি, একজন নারী এ কারণে নরকাগি্নতে প্রবেশ করেছে যে, একটি বিড়ালকে সে ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত রেখেছিল। অন্যদিকে এক ব্যক্তি পিপাসার্থ একটি কুকুরকে পানি পান করানোর ফলে বেহেশত লাভ করেছে। সৃষ্টির সেবা যে কত মহান কাজ, তা উলি্লখিত দুটি ঘটনার দ্বারা সহজে অনুমেয়। ধর্ম, মানুষের সুখ-শান্তি ও পথপ্রদর্শন এবং আলোর সন্ধান দেওয়ার জন্য। ধর্মের মৌলিক অংশ দুটি। প্রথমটি হলো আল্লাহর প্রতি মানুষের কর্তব্য, নামাজ, রোজা, হজ ইত্যাদি। আল্লাহর গুণ প্রকাশ, মহিমা কীর্তন ও তার পবিত্রতা ঘোষণা, তা আল্লাহর নির্দেশিত যে নিয়মেই হোক না কেন, তা মৌখিকভাবে প্রকাশ, আন্তরিকতার সঙ্গে বিশ্বাস এবং কার্যত প্রকাশ করলে সাধারণত আল্লাহর হক আদায় হয়। দ্বিতীয়টি হলো, মানুষের প্রতি মানুষের কর্তব্য। আল্লাহ যা আদেশ দিয়েছেন, তা পালনে মানুষ মুক্তি লাভ করতে পারে।
মানুষের প্রতি মানুষের করণীয় যা আছে তা পালনে বান্দার হক আদায় হয়। মানুষ সমাজবদ্ধভাবে বসবাস করতে ভালোবাসে, জীবনধারণের জন্য একে অপরের প্রতি নির্ভর করে। একা কেউই তার সম্পূর্ণ প্রয়োজনীয়তা পূর্ণ করতে পারে না। একে অপরের সহায়তা করবে এবং করে থাকে, এটাই স্বাভাবিক। কোনো ধনাঢ্য ব্যক্তির কেবল স্তূপীকৃত সম্পদ থাকলেই তার জন্য মহাপ্রাসাদ গড়ে উঠবে না। সে জন্য তাকে রাজমিস্ত্রি হতে শুরু করে সাধারণ মজুরের প্রতি নির্ভর করতে হয়। তাই কাউকে ছোট বা হেয় করারও শিক্ষা ইসলামে নেই।
আমরা বিভিন্নভাবে বান্দার হক আদায় করতে পারি। আল্লাহতায়ালা যাদের ধন-সম্পদ দিয়েছেন, তারা অসহায়, বন্যার্ত আর এখন রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে পারি। আবার যাদের জ্ঞান দিয়েছেন, কিন্তু ধন-সম্পদ দেননি, তারাও পারেন মানবসেবা করতে। দেখা যায়, গরিব ছেলেরা লেখাপড়া করতে বিশেষ অসুবিধার সম্মুখীন হয়। আবার প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়ার সামর্থ্যও তাদের হয় না। সম্পদশালীরা তাদের অর্থের দ্বারা এবং শিক্ষিত ব্যক্তিরা তাদের বিদ্যার দ্বারা তাদের সাহায্য করতে পারেন। এক কথায়, বক্তা তার বক্তৃতার মাধ্যমে, লেখক তার লেখার মাধ্যমে, বিত্তশালীরা তার সম্পদ দ্বারা, বুদ্ধিমান তার বুদ্ধির দ্বারা, জ্ঞানী তার জ্ঞান দ্বারা, স্বাস্থ্যবান তার শক্তির দ্বারা সমাজের সেবা করতে পারে। আমরা সবাই যদি নিজ নিজ স্থানে অন্যকে আলোর দিকে পথ দেখাই, সুপথের দিকে আহ্বান করি, তাহলে অনেক অশুভ থেকে আমরা মুক্ত থাকতে পারব। বিদ্যার দ্বারা জনসেবা করলে বিদ্যা কমে যায় না বরং তার বৃদ্ধি ঘটে, প্রদীপ্ত হয়ে ওঠে। আল্লাহর প্রতিটি দান মানুষের উন্নতির জন্য। প্রয়োজন শুধু পরস্পর সহযোগিতার। আগেকার দিনে দেখা যেত, গ্রামাঞ্চলে মানুষ একখানা পত্র পড়ানোর ও লেখানোর জন্য সমস্যায় পড়তে হতো আর এর জন্য কাকুতি-মিনতি করতেও দেখা যেত। যদিও এখন সেই অবস্থা নেই, তথাপি জ্ঞান বিতরণের অনেক সুযোগ রয়েছে।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক মানুষকে স্বার্থপর ও কৃপণ হতে নিষেধ করেছেন। তাই মূল্য ছাড়া কোনো কাজেই হাত দেব না বলে যারা প্রতিজ্ঞা করে, তাদের চিন্তা করে দেখা উচিত। অনেক সময় পথঘাটে কলা বা আমের খোসা ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। আবার ওইগুলোতে পা পিছলে ধরাশায়ী হতে এমনকি হাত-পা ভাঙতেও দেখা গেছে। একটু কষ্ট করে হলেও মানুষ পথঘাট পরিষ্কার রেখে এ প্রকারের দুর্ঘটনা হতে রেহাই লাভ করতে পারে। আমরা যাকে ভালোবাসি তার দুঃখ সহ্য করতে পারি না। মানুষ যদি বাস্তবিক মানুষকে ভালোবেসে থাকে, তবে সবার ব্যথায় ব্যথিত হবে ও সবার দুঃখে দুঃখিত হবে, এটাই সত্য। আজ রোহিঙ্গারা মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। তাদের জন্য আমরা কি কিছুই করতে পারি না?
কারও শরীরের কোনো অঙ্গ যদি আঘাত পায় বা দুর্বল হয়ে পড়ে, তবে সে কি আনন্দ পায়? বরং কষ্ট পাওয়াটাই স্বাভাবিক। সমাজের এক অংশ ক্ষুধার্ত, ব্যাধিগ্রস্ত, বস্ত্রহীন হলে অপর অংশ তাদের সাহায্যার্থে প্রাণঢালা সাহায্য করবে। তবেই সুষ্ঠু ও বলিষ্ঠ জাতি গড়ে উঠবে। আত্মতুষ্টির জন্যও সৃষ্টি-সেবার প্রয়োজন রয়েছে।
প্রত্যেহ সৃষ্টি-সেবার কত সুযোগই না পাওয়া যায়, যেগুলো পালনের জন্য আল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেন; কিন্তু আমরা সে সুযোগের সদ্ব্যবহার করি না বরং অবহেলা করি, অবজ্ঞার চোখে দেখি। স্রষ্টার সৃষ্টিকে অবহেলা করে স্রষ্টাকে তুষ্ট করা যায় না। মানুষের দুঃখ ও ব্যথায় ব্যথিত হয়ে, তাকে মনে-প্রাণে অনুভব করে, তার প্রতিকার করার জন্য সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়াই হচ্ছে ধর্মের শিক্ষা। প্রত্যেক ব্যক্তি যদি তার দায়িত্বের প্রতি সজাগ থাকে, তবেই সৃষ্টি-সেবার মহান এক সংঘ গড়ে উঠবে। অপরের প্রতি অনুকম্পা, সহানুভূতি, উদারতা ও দয়া প্রদর্শন করা আজ আমাদের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে। দয়া থেকে দানশীলতার সৃষ্টি হয়। দানশীলতা ও সেবা করা মানব চরিত্রের একটি বৈশিষ্ট্য আর নির্দয় ব্যক্তি পাষাণবৎ। অপরের অশ্রু দর্শনে যার হৃদয় বিগলিত হয় না, সে জনসেবার দাবি করতে পারে বটে, কিন্তু কোনো উপকারই করতে পারে না। দুঃখীর দুঃখ মোচন, বিপন্নকে উদ্ধার, শোকাতুরের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করা সৃষ্টি-সেবার অন্তর্ভুক্ত। লোক দেখানো দয়া, দান, উপাসনাকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। কর্তব্যানুসারে জনসেবা করতে হবে প্রকাশ্যে ও গোপনে। তবে এতে বিনয় অবলম্বনই শ্রেয়।
সব ধর্মই মানবসেবার কাজকে পুণ্য বলে আখ্যায়িত করেছে। সেবার উৎসাহ না থাকলে অন্ধ, খঞ্জ, বধিররা করাল গ্রাসে নিপতিত হতো। মানবসেবায় মন উদার হয়। এতে আনন্দ লাভ করা যায়। তাই আসুন, আপনার আমার অপেক্ষায় যারা অতি কষ্ট করে সময় অতিবাহিত করছেন, তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াই।
©somewhere in net ltd.