![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সম্প্রতি বিভিন্ন দেশে একের পর এক সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেই চলেছে। কাজী নজরুল ইসলাম কতই না সুন্দরভাবে তার এক কবিতায় বিষয়টি এভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, ‘মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান/মুসলিম তার নয়ন-মণি, হিন্দু তাহার প্রাণ।/এক সে আকাশ মায়ের কোলে/ যেন রবি শশী দোলে,/এক রক্ত বুকের তলে, এক সে নাড়ির টান।/এক সে দেশের খাই গো হাওয়া, এক সে দেশের জল,/এক সে মায়ের বক্ষে ফলাই একই ফুল ও ফল।/এক সে দেশের মাটিতে পাই/কেউ গোরে কেউ শ্মশানে ঠাঁই/এক ভাষাতে মা’কে ডাকি, এক সুরে গাই গান।
যারা আজ ধর্ম নিয়ে অতি বাড়াবাড়ি করছে তাদের কাছে জানতে চাই, ধর্ম কি নৈরাজ্য সৃষ্টির নাম? ধর্মের নাম কি রক্তপাত? মোটেও তা নয়, ধর্ম শান্তির নাম। পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে শুধু মাজহাবি যুদ্ধে। অথচ আল্লাহপাকের কোনো মাজহাব নেই। সমগ্র সৃষ্টি একই মাজহাবের, আর তা হল মানব মাজহাব, আর একই উৎস থেকে আমাদের সবার সৃষ্টি। একই স্থানে সবার প্রত্যাবর্তন। তারপরও আমরা সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতেই যেন ভালোবাসি।
আজ সমগ্র বিশ্বে ইসলাম ধর্মের অনুসারীরাই ধর্ম নিয়ে বেশি মাথা ঘামাচ্ছে। অথচ পবিত্র কোরআন এবং মহানবী (সা.) সব ধর্মের অনুসারীদের নিজ নিজ রীতি অনুযায়ী ধর্মকর্ম পালন করার অনুমতি দিয়েছেন। হজরত রাসূল করিম (সা.) যে ধর্মনিরপেক্ষতা কায়েম করেছিলেন তা মদিনা সনদই স্পষ্ট প্রমাণ। সবার অধিকার রক্ষার ব্যাপারে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘জেনে রাখ, যে ব্যক্তি কোনো অঙ্গীকারাবদ্ধ অমুসলিম ব্যক্তির ওপর জুলুম করবে, তার অধিকার খর্ব করবে, তার ওপর সাধ্যাতীত কোনো কিছু চাপিয়ে দেবে বা তার মনোতুষ্টি ব্যতীত তার কোনো বস্তু নিয়ে নিবে আমি কেয়ামত দিবসে (আল্লাহর আদালতে) তার বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করব’ (আবু দাউদ)। অমুসলিমদের উপাসনালয়ে হামলা চালানোকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। শুধু তা-ই নয়, বরং অমুসলিমরা যেসবের উপাসনা করে সেগুলোকেও গালমন্দ করতে আল্লাহপাক বারণ করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ পাক বলেছেন ‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা যাদের উপাস্যরূপে ডাকে তোমরা তাদের গালমন্দ করো না। নতুবা তারা শত্র“তাবশত না জেনে আল্লাহকেই গালমন্দ করবে’ (সূরা আন আম : ১০৮)। এ আয়াতে শুধু প্রতিমা পূজারীদের সংবেদনশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য নির্দেশ দান করা হয়নি, বরং সব জাতি এবং সম্প্রদায়ের মাঝে বন্ধুত্ব এবং সৌহার্দ্য স্থাপনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
কোনো ধর্মের উপাসনালয় বা ঘরবাড়ি জালিয়ে দেয়ার শিক্ষা ইসলামে নেই। ইসলাম ধর্মের মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব হল, ইসলাম প্রত্যেক মানুষকে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করে। এই স্বাধীনতা কেবল ধর্ম-বিশ্বাস লালন-পালন করার স্বাধীনতা নয় বরং ধর্ম না করার বা ধর্ম বর্জন করার স্বাধীনতাও এই ধর্মীয় স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘তুমি বল, তোমার প্রতিপালক- প্রভুর পক্ষ থেকে পূর্ণ সত্য সমাগত। অতএব, যার ইচ্ছা সে ঈমান আনুক আর যার ইচ্ছা সে অস্বীকার করুক’ (সূরা কাহাফ : ২৮)।
সত্য ও সুন্দর নিজ সত্তায় এত আকর্ষণীয় হয়ে থাকে, যার কারণে মানুষ নিজে নিজেই এর দিকে আকৃষ্ট হয়। বল প্রয়োগ বা রাষ্ট্রশক্তি নিয়োগ করে সত্যকে সত্য আর সুন্দরকে সুন্দর ঘোষণা করানো অজ্ঞতার পরিচায়ক। ফার্সিতে বলা হয়, সূর্যোদয়ই সূর্যের অস্তিত্বের প্রমাণ। এই নিয়ে গায়ের জোর খাটানোর বা বিতণ্ডার অবকাশ নেই। সূর্যোদয় সত্ত্বেও কেউ যদি সূর্যের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে তাকে বোকা বলা যেতে পারে, কিন্তু তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কিছুই নেই। তেমনি কে আল্লাহকে মানল বা মানল না, কে ধর্ম করল বা করল না এটা নিয়ে এ জগতে বিচার বসানোর কোনো শিক্ষা ইসলাম ধর্মে নেই। বরং এর বিচার পরকালে আল্লাহ নিজে করবেন বলে তার শেষ শরিয়ত গ্রন্থ আল কোরআনে বারবার জানিয়েছেন। এ স্বাধীনতা কাজে লাগিয়ে সমাজে আস্তিকও থাকবেন, নাস্তিকও থাকবেন। মুসলমানও থাকবেন হিন্দুও থাকবেন এবং অন্যান্য মতাবলম্বীরাও থাকবেন।
ইসলাম এমন একটি শান্তিপূর্ণ ধর্ম যা সর্বক্ষেত্রে শান্তির বিধান নিশ্চিত করে। ইসলাম হচ্ছে শান্তির উদগাতা। শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই ইসলামের লক্ষ্য। ইসলাম মানুষের জীবনে শান্তির বন্যা নিয়ে আসে আর প্রবাহিত করে শান্তির বায়ু। আর এ শান্তির বায়ু মানুষের দেহের সুস্থতায়, মানুষের দৈহিক শক্তি-সামর্থ্য,মানুষের মনে এবং তার আত্মায় এক কথায় বলা যায় সর্ব দিক দিয়ে তাকে সতেজ করে। পরিশেষে বলব, যারা কোরআন ও আল্লাহর রাসূলের শিক্ষা পরিপন্থী কাজ করে তারা মূলত ইসলাম নামক শান্তির ধর্মকে কলঙ্কিত করছে। তাদের জন্য দোয়া করি আল্লাহপাক যেন তাদের মস্তিষ্কে প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা প্রবেশ করিয়ে দেন।
©somewhere in net ltd.