![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের মুসলমানদের ওপর নির্মম ও বর্বর হামলা এখনো অব্যাহত আছে এবং লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান জীবন বাঁচাতে মাতৃভূমি ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে এবং নিচ্ছে। চোখের সামনে তারা আপনজনকে হারিয়েছে। মৌলবাদী বৌদ্ধ বর্বরতার পৈশাচিক হামলায় সব হারিয়ে এখন তারা নিঃস্ব। আশ্রিত রোহিঙ্গারা ক্ষুধার জ্বালায় আর রোদ-বৃষ্টিতে পুড়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। মানবতা যেন আজ ডুকরিয়া কাঁদে অথচ বিশ্ববিবেকের এ বিষয় নিয়ে মনে হচ্ছে কোনো চিন্তাই নেই। যদিও বিভিন্ন দেশ ও সংগঠনের পক্ষ থেকে তাদের মাঝে ত্রাণের ব্যবস্থা করছে; যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। বলা যায়, আশ্রিত লাখ লাখ রোহিঙ্গা বেঁচে থাকার সংগ্রামে আর দুমুঠো খাবারের সন্ধানে দিকবিদিক ঘুরছে। এত দিন পরেও কি তাদের জন্য আপনার-আমার কিছুই করার নেই? বিভিন্ন সংগঠন আর সরকারি পর্যায়ে যা করছে, সেসব কর্মকা-ের আলোকচিত্রগুলোই কি আমাদের মনের সান্ত¦নার কারণ? আমাদের একবেলার খাবার কি তাদের জন্য উৎসর্গ করতে পারি না?
মধ্যযুগের কবি চন্ডীদাশ যথার্থই তার এক কবিতায় লিখেছেন-‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’। বিশ্ববিবেকের কাছে চন্ডীদাসের সেই অমর বাণীর আজ কোনোই মূল্য নেই। এক মাস ধরে মিয়ানমারের নির্মম নির্যাতনের ফলে সমুদ্র উপকূলে ভাসমান হাজার হাজার মানুষ যখন প্রতি মুহূর্তে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছে, তখন নিজেদের যারা বিশ্ববিবেক বলে দাবি করে আসছেন, তারা এদের উদ্ধারের ব্যাপারে জোরালো কোনো ভূমিকাই নিচ্ছেন না। একটু বিশুদ্ধ পানি আর সামান্য শুকনো খাবারের আশায় ভোরের আলোর অপেক্ষা করে আবার আলো নিভে গিয়ে অন্ধকার ঘনিয়ে আসে কিন্তু পেটে জোটে না কিছুই। হায় মানবতা! তারা যে ধর্মের বা যে দেশেরই নাগরিক হোক না কেন, তারা তো আল্লাহপাকের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ। আমরা কি পারি না এই মানুষদের পাশে দাঁড়াতে?
অনেক দিন থেকে একটি বিষয় আমি লক্ষ করছি, শুক্রবার এলেই বিভিন্ন ইসলামী সংগঠনের কর্মীরা মসজিদের সামনে জড়ো হয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে-কয়েকটি মিয়ানমারের পতাকায় আগুন জ্বালিয়ে আর জ্বালাও-পোড়াওয়ের স্লোগান দিলেই কি নির্যাতিত মুসলমানদের সেবা হয়ে যাবে? মোটেও না, যার যতটুকু সামর্থ্য আছে তা নিয়েই তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। কে কোন ধর্মের তা বিষয় না, বিষয় হচ্ছে তারা মানুষ। বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন যদিও তাদেরকে সেবা প্রদান করছে, কিন্তু তা খুবই সামান্য। আমরা জানি, অতীতে মুসলমানদের হাতেও নির্যাতনের শিকার হয়েছিল শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ। আজ সেই শিখ সম্প্রদায়ের লোকজনও এই সংকটাপন্ন রোহিঙ্গা মুসলমানদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছেন। তারা প্রতিদিন ৫০ হাজার রোহিঙ্গাদের মাঝে খাবারের ব্যবস্থা করছেন। আবার আহমদিয়া মুসলিম জামাতের সেবামূলক সংগঠন হিউম্যানিটি ফার্স্ট-এর মাধ্যমে সরকারের অনুমতিক্রমে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মাঝে বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট স্থাপন, মেডিক্যাল ক্যাম্প স্থাপন এবং কয়েক হাজার রোহিঙ্গার খাবারের জন্য লঙ্গরখানার ব্যবস্থা করেছে। আর আমরা রাজধানী ঢাকায় বসে কী করছি? শুক্রবার এলেই পতাকা পোড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি, দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করছি?
আজ মুসলিম জাহানের অবস্থাও করুণ, তাদের মাঝেও মানবতা বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই। যার ফলে মুসলিম জাহান আজ চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন। যদিও মানুষ হিসেবে আমরা সবাই একই উম্মাহর অন্তর্ভুক্ত, তার পরও একে অপরকে সহ্য করতে পারছি না অথচ এক জাতি হিসেবেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে সৃষ্টি করেছেন। যেভাবে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় তোমাদের এই উম্মত একই উম্মত এবং আমিই তোমাদের প্রভু-প্রতিপালক। অতএব তোমরা আমার ইবাদত কর’ (সুরা আম্বিয়া : ৯২)। ‘আর জেনে রাখ তোমাদের এ সম্প্রদায় একটিই সম্প্রদায়। আর আমি তোমাদের প্রভু-প্রতিপালক’ (সুরা মোমেনুন : ৫২)। এই লাখ লাখ মানুষও তো সেই আল্লাহপাকেরই সৃষ্টি যিনি আপনার আমার সবার সৃষ্টিকর্তা। তাহলে আমরা কেন এই অসহায় লোকদেরকে নিজ ভাই মনে করে তাদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে যাব না। ইসলাম আমাদের এই শিক্ষায় দেয় যে তারা একে অপরের ভাই ভাই, একজনের কষ্টে অন্যজন ব্যথিত হয়। মানবজাতি হিসেবে কারো মাঝে কোনো ভেদাভেদ নেই। সবই এক আল্লাহর সৃষ্টি এবং একই সত্তা থেকে সবার সৃষ্টি। যেভাবে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রভু-প্রতিপালকের তাকওয়া অবলম্বন কর, যিনি একই সত্তা থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং তা থেকে তার সঙ্গী সৃষ্টি করেছেন আর তাদের উভয় থেকে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন’ (সুরা আন নেসা : ১)। এখানে কোনো ধর্ম বা জাতির কথা বলা হয়নি বরং বলা হয়েছে ‘হে মানুষ’ অর্থাৎ সব মানুষের কথা বলা হয়েছে। তাই একজন মানুষ সে যে ধর্মের অনুসারীই হোক না কেন মানুষ হিসেবে সবাই একই সম্প্রদায়ভুক্ত। তাই কাউকে অবজ্ঞা করার কোনো সুযোগ নেই।
তাই আসুন না, আমরা সবাই মিলে কিছু একটা করার চেষ্টা করি, এই বর্বর নির্যাতনে যারা তাদের আপনদের হারিয়েছে, হয়তো তা কোনো সরকার বা দেশ পূরণ করতে পারব না। কিন্তু তাদের জন্য যদি কেউ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়, তাহলে হয়তো তারা সব হারানোর যে দুঃখ তা থেকে কিছুটা হলেও সুখ খুঁজে নেবে। বিশ্ববিবেক কি পারে না এসব নির্যাতিত লোকের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে? এ ছাড়া আমরা কি পারি না, তাদের দুঃখের দিনের বন্ধু হতে? মানুষ হিসেবে কি আমাদের ওপর এই দায়িত্ব বর্তায় না, তাদের সাহায্য করা? এদের উদ্ধারের জন্য দেশের বিত্তশালী, বিভিন্ন এনজিও, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসহ সাধারণ মানুষকেও পাশে দাঁড়ানো উচিত। নির্যাতিতরা নিতান্তই অতি দরিদ্র মানুষ। আমরা যদি সবাই মিলে এদের পাশে গিয়ে দাঁড়াই, তাহলে হয়তো তারা আবার বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারে। অবুঝ শিশুদের মুখে আবার হাসি ফুটে উঠবে। এদের জন্য আমাদের অনেক কিছুই করার আছে, আমাদের সবার সম্মিলিত সহযোগিতা হাজারো মানুষের প্রাণ বাঁচতে পারে। আসুন না, আমরা সবাই সেসব লোকের পাশে যাই, যারা অপেক্ষায় বসে আছেন।
হয়তো আল্লাহ কোনো ফেরেশতাকে পাঠাবেন আমাদের সাহায্য করতে, তাদের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দিতে। মহান খোদাতায়ালা আমাদের সবাইকে তার সৃষ্টির সেবা করার মন-মানসিকতা দান করুন।
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে মে, ২০১৮ সকাল ১১:৫৬
মোঃ ফখরুল ইসলাম ফখরুল বলেছেন: আমিন
