নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার ওপর মানুষ সত্য

আবু আফিয়া

আবু আফিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই

০৯ ই অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:০১

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিনিয়ত অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। এমন কোনো দিন নেই যে, বিশ্বের কোনো না কোনো দেশে সন্ত্রাসী কর্মকা- ঘটছে না। প্রতিদিনই আমরা নৈরাজ্যকর কোনো না কোনো খবর মিডিয়ার সুবাদে পেয়ে থাকি। বড়ই কষ্ট হয়, যখন শুনি, এসব অন্যায় কাজ আল্লাহ এবং রাসুল (সা.)-এর নামেই তথাকথিত ধর্মান্ধ দলগুলো পরিচালনা করছে। অথচ সমগ্র বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই ইসলাম ধর্মকে মহান আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবীতে তার প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে শান্তির অমিয় বাণী দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। অপরদিকে, বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত শব্দের নাম জঙ্গিবাদ। উগ্রপন্থায় সংঘবদ্ধভাবে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করার অর্থই জঙ্গিবাদ। যারা এসব সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িত, তাদের ধারণা, তারা ধর্মের জন্য জিহাদ করছে। অথচ জঙ্গিবাদ আর জিহাদ এক নয়। কোরআনের সবগুলো জিহাদ সংশ্লিষ্ট আয়াতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর কথা বলা হয়েছে। এসব আয়াতের বক্তব্য মতে, জোরজবরদস্তি, জঙ্গিবাদ এবং সন্ত্রাসের কোনো স্থান ইসলামে নেই। দু’পক্ষের সশস্ত্র সংগ্রামকে জিহাদ বলা হয়নি। বরং শত্রুপক্ষের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য সশস্ত্র যুদ্ধকে ‘কিতাল’ পরিভাষায় ব্যবহার করা হয়েছে। এ কথা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, ইসলামের আবির্ভাব থেকে বিগত ১৪০০ বছরের ইতিহাসে জিহাদ কোরআন-হাদিস মোতাবেক আল্লাহকে পাওয়া। আল্লাহর আদেশ-নিষেধ পালন, শয়তান থেকে নিজেকে রক্ষা করা, শত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করা, ভালো কাজের উদ্যোগ নেওয়া ইত্যাদি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত ইতিবাচক অর্থেই ব্যবহৃত হবে। দুর্ভাগ্যের বিষয়, ইসলামের অপব্যাখ্যাকারী, কোরআন-হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা দানকারী তথাকথিত একদল পথভ্রষ্ট, বিপথগামী গোষ্ঠী ইসলামের, কোরআন-হাদিসের এই পবিত্র পরিভাষা ও কাজকে মøান করার উদ্দেশ্যে, সত্যিকারের ওলামা-মাশায়েখ ও তাদের শান্তিপ্রিয় ধর্মীয় কার্যক্রমকে প্রশ্নের সম্মুখীন করার হীন উদ্দেশ্যে ইসলামের নামে বোমাবাজি, ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, বিনা বিচারে মানুষ হত্যা, জনগণের প্রাণ ও সম্পদ বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চালিয়েছে এবং বর্তমানেও চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এই অপকর্মের সঙ্গে পবিত্র কোরআন-হাদিস বা গোটা ইসলামী জীবনব্যবস্থার কোনো সম্পর্ক নেই।
ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য কাউকে কষ্ট দেওয়া ইসলামে কোথাও সমর্থন করা হয়নি। ইসলামের উত্তম আদর্শে মুগ্ধ হয়েই যুগে যুগে মানুষ ইসলামে আকৃষ্ট হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) তায়েফের ময়দানে অমুসলিমদের নির্যাতনে রক্তাক্ত অবস্থায় জ্ঞান হারিয়ে ফেললেও তাদের প্রত্যাঘাত করার কথা ভাবেননি। ইসলাম প্রচারের পদ্ধতি সম্পর্কে আল্লাহর নির্দেশ হলো, ‘আপনি আপনার পালনকর্তার পথের দিকে আহ্বান করুন জ্ঞানগর্ভ কথা ও উত্তম উপদেশগুলোর দ্বারা এবং তাদের সঙ্গে উত্তম পদ্ধতিতে বিতর্ক করুন।’ (সূরা আন-নাহল, আয়াত : ১২৫)। এমন উন্নত আদর্শ থাকা সত্ত্বেও আজ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বে অভিযান চালানো হচ্ছে। অথচ এটা কেউ দেখছেন না, এসব উগ্র-ধর্মান্ধ আইএস নামে সন্ত্রাসী সংগঠন কিভাবে গড়ে উঠল। কিভাবে এত শক্তিশালী হয়ে উঠল! তাদেরকে কারা এভাবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে এবং কেন? আইএসের উত্থানের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ ইরাকে সাদ্দামের পতন। এছাড়া আইএসের উত্থানের পেছনে নিজেদের পরোক্ষ ভূমিকার কথা প্রকাশ্যেই স্বীকার করেছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট স্বীকারোক্তি দিয়েছিলেন, ২০০৩ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশের নির্দেশে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা অভিযানের সময়ই সশস্ত্র গোষ্ঠী আইএসের উদ্ভব হয়েছে। এর আগে নোয়াম চমস্কিসহ বেশ কিছু মার্কিন বুদ্ধিজীবী একই যুক্তি তুলে ধরেছিলেন। জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ২০০৩ সালে ইরাকে আগ্রাসন চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। মার্কিন অভিযানের অজুহাত হিসেবে বলা হয়েছিল, ইরাকে রাসায়নিক অস্ত্র মজুদ রয়েছে। কিন্তু ইরাকে সাদ্দামের পতনের পর এ ধরনের রাসায়নিক অস্ত্রের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
আল-কায়েদা থেকেই আইএসের উত্থান। ২০০৩ সালে হামলা চালালে সাদ্দাম হোসেনের পতন ঘটে। ইরাক দখল করে নেয় যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বাহিনী। পরবর্তীকালে বিশ্লেষকরা দেখেছেন, সাদ্দামের পতন এবং ইরাক দখল করতে গিয়ে আল-কায়েদাকে ব্যাপক অস্ত্র ও ট্রেনিং দেওয়া হয়েছিল। ২০০৬ সালে সালাফি জিহাদি গোষ্ঠীর সঙ্গে সুন্নি নেতাদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। স্থানীয় উপজাতি এবং আমেরিকানদের মধ্যে সহযোগিতার কারণে ইরাকে অভ্যন্তরীণ যুদ্ধের সূত্রপাত। কয়েক বছরের ব্যবধানে আইএসের হাতে আসে উন্নত অস্ত্র। আর্থিক ভিত্তিও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। আসলে আইএসের শীর্ষ নেতা ছিল মোসাদের অনুচর। মার্কিন প্রচারমাধ্যম এবিসি নিউজ ও সিএনএনে প্রকাশ, যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের সিনিয়র সিনেটর এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী জন ম্যাক কেইনের সঙ্গে বাগদাদির বেশ কয়েকবার বৈঠক হয়। তেমনই এক বৈঠকের ভিডিও স্ন্যাপশটে যার প্রমাণ মিলেছে। মধ্যপ্রাচ্যের জনপ্রিয় ইন্টারনেট রেডিও আজিয়াল ডটকম, সোশিও-ইকোনমিক হিস্ট্রি, গ্লোবাল রিসার্চ, এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁস করা আমেরিকার গোপনীয় নথি, পলিটিসাইট ডটকমে আইএসের শীর্ষ নেতা বাগদাদিকে নিয়ে প্রচারিত তথ্য অনুযায়ী খলিফা আবু বকর আল-বাগদাদি ছিলেন একজন ইহুদি। ২০০৪ সাল থেকে সিআইএর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা শুরু হয় এবং টানা এক বছর সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে মোসাদ। ইরাক হামলার সময় ছদ্মবেশে মসজিদের খতিব ছিলেন আইএসের এই শীর্ষ নেতা আবু বকর আল-বাগদাদী। ২০১৩ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান সিনেটর জন ম্যাককেইন সিরিয়ায় আবু বকর আল-বাগদাদীসহ অর্ধডজন শীর্ষ জঙ্গি নেতার সঙ্গে গোপন বৈঠকও করেন। তখন বাগদাদির মুখে লম্বা দাঁড়ি ছিল না। ওই বৈঠকে বাগদাদির সহযোগী আইএসের শীর্ষ সন্ত্রাসী মোহাম্মদ নূরও উপস্থিত ছিলেন।
মোসাদের প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতেই আইএস জঙ্গিদের ‘যুদ্ধকৌশল’ শেখানো হয়। ‘গ্লোবাল রিসার্চ’ নামের একটি গবেষণা ওয়েবসাইট দাবি করে, ২০০৪ সাল থেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে আবু বকর আল-বাগদাদী। আইএস নামে উগ্র-ধর্মান্ধরা নিজেদের মতো করে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চায়। অথচ খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা আল্লাহ তায়ালার কাজ। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে তাদের তা-ব দেখছে বিশ্ববাসী। নিরীহ মানুষদের পুড়িয়ে মারছে, জবাই করছে। নিরপরাধ নারী-শিশুরাও বাদ যাচ্ছে না এদের হাত থেকে। যারা ধর্মের নামে অধর্ম করছে, তারা কখনো মুসলমান হতে পারে না, তারা সন্ত্রাসী, তাদের কোনো ধর্ম নেই।
এই যে সমগ্র বিশ্বে ধর্মের নামে নজিরবিহীন সহিংসতা, তা শুধু ইসলাম নয়, বরং কোনো ধর্মই সমর্থন করে না। নৈরাজ্য সৃষ্টি করে কাউকে ইসলামের সুশীতল ছায়ার বেহেশতি বাতাসের স্বাদ উপভোগ করানো যায় না। নৈরাজ্যের মাধ্যমে কেবল বিশৃঙ্খলাই দেখা দিতে পারে; শান্তি নয়। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চাই ইসলামের শান্তিময় শিক্ষার বাস্তবায়ন। বিশ্বনিয়ন্ত্রণকর্তা সব সময়ই মানুষকে শান্তির পথে আহ্বান করেন। শান্তির ধারক-বাহক ইসলাম ধর্মের নিষ্ঠাবান, শান্তিপ্রিয় অনুসারী মুসলমান কখনো সমাজের এবং দেশের অশান্তির কারণ হতে পারে না। রাষ্ট্রের বা সমাজের সামগ্রিক স্বার্থের প্রয়োজনে বিপজ্জনক সর্বনাশা দুষ্কৃতকারীকে কঠোরতম শাস্তি প্রদানে ইসলাম ইতস্তত করে না। স্বপ্নবিলাসীদের আবেগ-উচ্ছ্বাসের তোয়াক্কা না করে যুক্তি ও বিচারের মাপকাঠি অনুসরণ করে ইসলাম রাষ্ট্রের বা জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধকারীর শাস্তি নির্ধারণ করে। এই আয়াতে যে নির্বাসিত করার কথা বলা হয়েছে, ইমাম আবু হানিফার (র.) মতে, এর তাৎপর্য হলো কারাদ-। যারা সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো ব্যবস্থা নিলে তা কখনো ইসলাম পরিপন্থী হবে না। কেননা, ইসলাম দেশে নৈরাজ্যকারীদের শাস্তি নির্ধারণ করে দিয়েছে। আমাদের এই দেশ একটি শান্তিপূর্ণ দেশ। এ দেশে শত শত বছর ধরে বিভিন্ন ধর্মের লোকেরা একত্রে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। এখানে যারা অশান্তি সৃষ্টি করবে, তাদেরকে সবাই ঐকবদ্ধ হয়ে প্রতিহত করতে হবে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘পৃথিবীতে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তোমরা এতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না।’ (সূরা আল-আরাফ, ৫৬)। সমাজে বিশৃঙ্খলা করার কোনো শিক্ষা ইসলামে পাওয়া যায় না। যারা সমাজ ও দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করে, তারা শুধু শান্তিকামী মানুষেরই শত্রু নয়, বরং তারা মহান আল্লাহ তায়ালারও শত্রু। ইসলাম আমাদেরকে উচ্ছৃঙ্খল জীবন পরিহার করে বিনয়ী এবং নম্র হয়ে চলার শিক্ষা দেয়।
পৃথিবীর সর্বত্রই যেন আজ অশান্তি বিরাজ করছে। এসব নৈরাজ্যকারীর জন্য সমগ্র বিশ্বই আজ রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সর্বোপরি নৈতিকভাবে চরম অধঃপতনের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। ইসলাম কাউকে হত্যার শিক্ষা দেয় না। কাউকে হত্যার ব্যাপারে ইসলামের নবী বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে মোকদ্দমার ফয়সালা করা হবে, তা হবে রক্তপাত অর্থাৎ হত্যা সম্পর্কিত।’ (বুখারি)। তাই আসুন, আমরা সবাই প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা অনুসারে নিজেদের জীবন পরিচালনা করি আর দেশকে ভালোবাসি, সব ধর্মের অনুসারীকে ভালোবাসি, নৈরাজ্য সৃষ্টির পরিবর্তে সবাই সবার জন্য শান্তি কামনা করি।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৭

ফারহানা সুন্দর মন বলেছেন: লেখাটি পড়ে ভাল লাগলো

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.