নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার ওপর মানুষ সত্য

আবু আফিয়া

আবু আফিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিজকে নিয়ে একটু ভেবে দেখি

১২ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৫

নিজকে নিয়ে একটু ভেবে দেখি

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে কেবল শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে আখ্যায়ীত করেননি বরং যথাযথ মর্যাদায় সম্মানিতও করেছেন। আমাদেরকে তিনি বিনা কারণে বা দুনিয়াবী আনন্দ ফুর্তির জন্যী সৃষ্টি করেননি। যেভাবে আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে বলেছেন: ‘মানুষ কি মনে করে, তাকে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ানোর জন্য ছেড়ে দেয়া হবে? (সুরা কিয়ামা: ৩৬)। আবার সুরা মুমিনুনের ১১৫ নম্বর আয়াতে মহান স্রষ্টা একথাই ব্যক্ত করেছেন ‘তোমরা কি ভেবেছো তোমাদের অহেতুক সৃষ্টি করেছি।’ মোটেও নয় বরং বিশেষ উদ্দেশ্যের জন্যই আমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। যেহেতু আজ আমরা আমাদের সৃষ্টির উদ্দেশ্য ভুলে বসেছি, তাইতো সমাজ, দেশ ও বিশ্বের সর্বত্রে অশান্তি বিরাজমান। আমার অধিকার, আমার প্রাপ্য, আমর সম্মান সব কিছু সম্পর্কেই আমি খুব ভালো বুঝি, কেবল নিজেকেই বুঝি না।
একের পর এক অন্যায় আমার দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে, ক্ষণিকের জন্যও আমি আমার প্রভুকে স্মরণ করি না, তাকে ভয় করি না। অথচ তিনি আমাদের সাথেই আছেন, আমাদের অপকর্ম দেখা সত্ত্বেও আমাদেরকে ছাড় দিচ্ছেন, সংশোধনের সময় দিচ্ছেন। এ বিষয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন: ‘যেখানেই তোমরা যাও তিনি তোমাদের সাথে থাকেন আর তোমরা যা-ই কর আল্লাহ তা পুরোপুরি দেখেন’ (সুরা হাদিদ: ৪)। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক এটাও বলেছেন যে, তিনি আমাদের জীবনশিরা অপেক্ষাও নিকটে রয়েছেন (সুরা কাফ: ১৬)। আল্লাহপাক আমাদের এত নিকটে তারপরও আমরা তার রহমত থেকে বঞ্চিত থেকে যাই। এর কারণ হল- আমার যে একজন সৃষ্টিকর্তা আছেন, সব কিছুই যে তার, আমার যে কিছুই নাই, এই বিষয়টা নিয়ে কখনও আমি চিন্তা করি না। আর এ কারণেই আমি আমার সৃষ্টিকর্তা প্রভুকেও চিনতে পারছি না এবং তার কল্যাণ থেকে বহু দূরে অবস্থান করছি। হাদিসে বলা হয়েছে, মহানবী (সা.) বলেন, যেব্যক্তি তার নিজ সত্তার পরিচিতি লাভ করতে পেরেছে সে মহান প্রভুকে চিনতে পেরেছে।’
উল্লিখিত হাদিসের কথাই পবিত্র কোরআনে সুরা হাশরের ১৯ নম্বর আয়াতে ভিন্ন ভঙ্গিতে মহান আল্লাহ ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন ‘তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা আল্লাহকে ভুলে গেছে ফলে আল্লাহ তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করে দিয়েছেন।’ এ কথার অর্থ হল আল্লাহকে ভুলে যাওয়া সমান নিজ সত্তাকে ভুলে যাওয়া। আসলে কি মানুষ নিজ সত্তাকে ভুলে যায়? হ্যাঁ, মানুষ নিজ সত্তাকে ভুলে যায়। আজ আমরা নিজ সত্তাকে ভুলে বসেছি। যেহেতু আজ আমরা নিজ সত্তাকে ভুলে বসেছি তাই আজ আমার দ্বারা কেউ আর নিরাপদ নয়। নিরিহ ও নিষ্পাপ শিশুদের ওপর জুলুম অত্যাচার করতে আমার হৃদয় আজ কাঁদে না। অহংকার আর ক্ষমতার দাপটে আমি আমার জন্মের উদ্দেশ্যকে ভুলে বসেছি। অথচ আমরা দেখতে পাই ইবলিসের সমস্ত আমল নষ্ট হয়েছিল কেবল তার অহংকার আর আমিত্বের কারণেই। সে নিজের সৃষ্টির উপাদানকে শ্রেষ্ঠ মনে করে আদমের সৃষ্টিগত উপাদানকে (মাটি) তুচ্ছজ্ঞান করে প্রভুর নির্দেশের অবাধ্য হয়। ফলে তার অর্জিত সকল আমল বিনষ্ট হয়ে যায় এবং সে প্রভুর অভিশাপে পতিত হয়। তাই মানুষ যাতে কখনো অহংকারী না হয় এবং আমিত্ব তাকে গ্রাস না করে সে জন্যই মহান প্রতিপালক তাকে তার সৃষ্টিগত উপাদানের কথা পবিত্র কোরআনে বারবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।
আজ যারা ক্ষমতা, প্রভাব প্রতিপত্তির গর্ব করে আল্লাহপাকের সৃষ্টিকে কষ্ট দেয় তাদের অবস্থা যে ইবলিসের ন্যায় হবে না তা কি আমরা কখনও ভেবে দেখেছি? আজ আমরা সৃষ্টিকর্তা খোদাকে ভুলে গিয়ে হৃদয়ে শত শত মিথ্যা খোদার স্থান দিয়েছি। মুখে এক আর অন্তরে ভিন্ন, এটাই যেন আজ রীতিতে পরিণত হয়েছে। অথচ আমাদের অন্তরে কি আছে তা তিনি খুব ভাল করেই জানেন। তাই মানুষকে নানানভাবে ধোকা দেয়া সম্ভব কিন্তু আল্লাহপাককে ধোকা দেয়া সম্ভব নয়, কারণ তিনি প্রকাশ্য এবং গোপন, ভিতর এবং বাহিরের সব কিছু সম্পর্কেই অবগত। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তুমি বল, তোমাদের অন্তরে যা আছে তা তোমরা গোপন কর বা তা প্রকাশ কর আল্লাহ তা জানেন। আর আকাশসমূহে যা আছে এবং পৃথিবীতে যা আছে তিনি তাও জানেন। আর আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে সর্বশক্তিমান। সেদিন প্রত্যেকেই যা কিছু সে ভাল কাজ করেছে, চোখের সামনে দেখতে পাবে এবং যা কিছু মন্দ কাজ করেছে তাও, ওরা তখন কামনা করবে, যদি তার এবং এসব কর্মের মধ্যে ব্যবধান দীর্ঘ হতো! আল্লাহ তার নিজের সম্পর্কে তোমাদের সাবধান করছেন। আর আল্লাহ তার বান্দাদের প্রতি অতি মমতাশীল’ (সুরা আলে ইমরান: ২৯-৩০)।
এখন সময় এসেছে নিজেকে চেনার ও জানার, নিজেকে সংশোধন করার। অনেকে বলতে পারেন, কেবল নিজেকে চিনলে লাভ কি? হ্যাঁ, লাভ আছে। যেভাবে বিন্দু বিন্দু জল মিলে নদী হয়, ছোট ছোট পাথর মিলে পাহাড় হয়, লতাপাতা, ছোট ছোট গাছ মিলে জঙ্গল হয় এভাবেই এক এক ব্যক্তি মিলে জাতি গঠিত হয়। কোন জাতির গঠন, উন্নতি, শ্রেষ্ঠত্ব ও দৃঢ়তা অর্জনে ঐ জাতির ব্যক্তিরাই মেরুদন্ডের হাড়ের ভূমিকা রাখে। এই সত্যকে অস্বীকারের কোন সুযোগ নেই যে, কোন জাতির উন্নতির শিখরে পৌঁছার ক্ষেত্রে সেই জাতির লোকেরা চাবিকাঠির ভূমিকা রাখে। সেখানে এ বিষয়টিও প্রনিধানযোগ্য যে, কোন জাতির অধ:পতনের চরমে নিপতিত হওয়ার ক্ষেত্রেও তারাই দায়ী। আজ যদি আমরা পরের দুঃখে ব্যথিত হই, অন্যের কষ্টকে নিজের কষ্ট মনে করি তাহলে সেই সত্তা যিনি আমাদের জীবনশিরারও নিকটে অবস্থান করেন তিনিই আমাদের সব সমস্যা দূর করবেন।
হায়! আজ যদি আমি আমার জন্মের উদ্দেশ্যকে বুঝতে পারতাম তাহলে পশুর ন্যায় ছুটে বেড়াতাম না। তাই আসুন না, নিজেকে নিয়ে একটু ভাবি, নিজ আত্মপরিচিতির মাধ্যমে নিজ স্রষ্টার রহমত ও কল্যাণকে জগতের সামনে ফুটিয়ে তুলি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:১৯

গোলাম হাসনাইন আসাদুজ্জামান বলেছেন: মাশাআল্লাহ। আত্মাকে জাগিয়ে তোলার মতো একটি পোস্ট। জাযাকুমুল্লাহ।

১৫ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১:৩৬

আবু আফিয়া বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ।
ভাল লাগার জন্য ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.