নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার ওপর মানুষ সত্য

আবু আফিয়া

আবু আফিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিপাটি শহর রাজশাহীতে একদিন

১৩ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৭


মাত্র ক’দিন আগে রাজশাহী থেকে ঘুরে আসলাম আমরা তিন জন । আমরা বৃহ:স্পতিবার রাতে ১১.২০ মিনিটে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পদ্মা এক্সপ্রেস দিয়ে যাত্রা করি। বেশ আরামের সাথেই ভোর ৫টায় রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে যাই। আমাদেরকে যথাস্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য পূর্ব থেকেই অটোরিক্সা ঠিক করে রেখেছিলেন এক ভাই। রাজধানীতে এখন শীতের আমেজটা যদিও তেমন নেই কিন্তু রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে নামতেই বুঝতে পেরেছিলাম শীতের তীব্রতা। যদিও গরম কাপড় সাথে ছিল তাই তেমন সমস্যা হয় নি। কুয়াশাচ্ছন্ন এই ভোরে স্টেশনের পাশে গরুর খাঁটি দুধের এককাপ চায়ে যেন শরীরের সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেল। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে যে কাজে এসেছিলাম তা সুন্দরভাবে শেষ করলাম।
আমাদের ফিরতি ট্রেন বিকাল ৪টায়। ইতোমধ্যে আমরা জানতে পেলাম যে, ট্রেন ৩ ঘন্টা বিলম্বে ছাড়বে। তাই ঝটপট সিদ্ধান্ত নিলাম, এই সময়ে রাজশাহী শহরটা ঘুরে দেখার। এবারও অটোরিক্সা ঠিক করে রাখা ছিল রাজশাহী শহর ঘুরে দেখানোর জন্য। এছাড়া আগে থেকেই জানতাম যে দেখার মতো অনেক জায়গাই আছে রাজশাহীতে। অটোরিক্সা ওয়ালা উজ্জ্বল ভাইও বেশ রসিক ও ভ্রমণপ্রিয় বুঝা গেল, তিনি অত্যন্ত আনন্দের সাথে একের পর এক স্থানে আমাদেরকে নিয়ে যাচ্ছেন, যা বেশ ভালই লাগছিল। রেশম নগরী রাজশাহীর সিল্কপল্লী সপুরা ঘুরে দেখে মুগ্ধ হয়ে যাই। সপুরা সেই এলাকা, যার পুরোটাতেই সিল্কের কাপড় তৈরীর কাজ হয়। এখান থেকে চলে আসি বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে। বরেন্দ্র যাদুঘর, যা কিনা বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন যাদুঘর, এটি রাজশাহী মহানগরের কেন্দ্রস্থল হেতেম খাঁ-তে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর। প্রত্নত্ত্ব সংগ্রহের দিক থেকে এটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সংগ্রহশালা। এপ্রিল থেকে অক্টোবর সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পযর্ন্ত, নভেম্বর থেকে মার্চ সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পযর্ন্ত এবং শুক্রবার দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পযর্ন্ত কোন দর্শন মূল্য ছাড়াই জাদুঘর সবার জন্য উন্মুক্ত থাকে।
এক এক করে শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখে হজরত শাহ মখদুম রুপোশ (রহ.) এর মাজারের সামনে এসে পৌঁছলাম। বহু পীর সাধকের পুণ্যভুমি রাজশাহী মহানগরী। জানা যায়, এই জনপদের মানুষ যখন কুসংস্কার আর কুপ্রথার নিবিড় অন্ধকারের অতল গহ্বরে ডুবে থেকে নানান কুকর্মে লিপ্ত ছিল, বিভিন্ন দেব-দেবীর নামে নরবলি দেয়া হতো, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ছিল প্রকট, তখন থেকেই এ সকল পীর সাধকের আগমন ঘটতে থাকে সুদূর মধ্য প্রাচ্য ও অন্যান্য অঞ্চল থেকে। অবোধ মানুষের মাঝে জ্ঞানের শিখা ছড়ানোর মহৎ উদ্দেশ্যে, বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের প্রতিজ্ঞায় এবং মনুষ্য সম্প্রদায়ের কল্যাণে তারা তাদের জীবনের সব সময়টুকু দান করে দেন। তাদের ডিঙ্গাতে হয় নানা প্রতিকূলতার দেয়াল। এ সকল মহৎ প্রাণের অন্যতম এক ব্যক্তিত্ব পদ্মাপারে চিরশায়িত হজরত শাহ মখদুম রুপোশ (রহ.)। মাজারের কাছেই একটি চায়ের দোকানে রাব্বি ও তানিম ভাই মিলে চা পানের পর পুনরায় যাত্রা শুরু করি। এরপর অন্যান্য কতিপয় দর্শনীয় স্থান দেখে খুব দ্রুত ফিরে এলাম শহরে, উদ্দেশ্য পদ্মাপারে কিছুক্ষণ কাটাবো বলে। পদ্মাপারের বিডিআর ক্যাম্প এরিয়াতে যখন পৌঁছলাম, তখনও ঝলমলে বিকেল। পদ্মার তীর মহানগরীর অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র। প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময়ে অসংখ্য মানুষ এখানকার বিশাল নীলাকাশের নিচে সূর্যের সোনালী কিরণ মাখা পদ্মার ওপারের বেলে ভূমি ও সবুজ প্রকৃতি দর্শন এবং পদ্মার হিমেল হাওয়া গায়ে মেখে সারা দিনের অবসাদ দূর করার জন্য এখানে ভিড় জমায়। অনেকে ভাড়া নৌকায় পদ্মার ওপার ঘুরে আসে। পাঁচশত টাকা হলেই ৩০/৪০ জনের জন্য একটি ইঞ্জিন চালিত বড় নৌকা ভাড়া করে ওপার ঘুরে আসা যায়। এছাড়া একা কেউ যেতে চাইলে জন প্রতি লাগে ৪০ টাকা। একটি বিষয় লক্ষ্য করার মত, হাজার হাজার দর্শনার্থীর আনাগোনা, কিন্তু পুরো এলাকাটি বেশ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। বাদাম ভাজা, মুড়ি, ফুচকা, চটপটি বিক্রেতার মত ছোট ব্যবসায়ীরা ভাল ব্যবসা করে এই বিনোদন প্রিয় মানুষের সঙ্গে। আমরা কিছুক্ষণ পদ্মাপারের মনোরোম দৃশ্য উপভোগ করলাম, সময়টা বেশ ভালই কেটেছে।
বেড়াতে গিয়েছি বলে কি শুধুই ঘুরাঘুরি? সেই সাথে যদি এলাকার বিখ্যাত খাবারের স্বাদ নেওয়া যায়, তাহলে তো মন্দ হয় না। রাজশাহীর মজাদার কালাই রুটি না খেয়ে রাজশাহী ত্যাগ কীভাবে করি। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, রেলওয়ে স্টেশনের সামনেই নাকি কালাই রুটি পাওয়া যায়। গিয়ে দেখি, অনেকেই মজা করে গরম গরম কালাই রুটি খাচ্ছেন। আমরাও বসে গেলাম খেতে। বিভিন্ন ধরণের ভর্তা দিয়ে গরম গরম কালাই রুটি বেশ ভালই লাগল। রাব্বি ভাইও বলতে লাগলেন আসলেই মজাদার। একবার খেলে যে এর স্বাদ মুখে লেগে থাকবে এতে সন্দেহ নেই। এদিকে ট্রেন ছাড়ার সময়ও ঘনিয়ে আসছে। ট্রেনে চেপে ফিরে এলাম ঢাকায়, ফেলে আসলাম পরিচ্ছন্ন স্নিগ্ধ নগরী রাজশাহীর স্মৃতি ও অনুভূতি। এমনি স্নিগ্ধ অনুভূতি নিয়ে আমরা তিনজন ঢাকা ফিরলাম । আসলে পুরো শহর যেন গোছানো, বিভিন্ন প্রকৃতির পাতাবাহার আর ফুলের গাছ দিয়ে পুরো শহরের রাস্তাগুলো সাজানো, যা আপনার মন কাড়বেই। চট্টগ্রাম কিংবা সিলেটের মত পর্যটন নগরী না হয়েও রাজশাহী ভ্রমণ আপনাকে দিবে এক স্নিগ্ধ অনুভূতি।
যেভাবে যাবেন: কল্যাণপুর থেকে বাস সার্ভিস যেমন, হানিফ, শ্যামলী, ন্যাশনাল, দেশ ট্যাভেলে যেতে পারেন। এছাড়া ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনেও যেতে পারেন।
থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা: সাহেব বাজার ও স্টেশন বাজারে থাকা ও খাওয়ার সব রকমের ব্যবস্থাই আছে। পদ্মাপাড় বিডিআর এরিয়াতেও খাওয়ার ভাল ব্যবস্থা আছে ।
দর্শনীয় স্থান: পদ্মাপার, রাবি ক্যাম্পাস, সপুরা সিল্ক, পুঠিয়া, জিয়া পার্ক, বরেন্দ্র যাদুঘর, ইত্যাদি।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৯:৩০

বিএম বরকতউল্লাহ বলেছেন: তথ্যসমৃদ্ধ গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট এটি।
অনেকেই পড়ে উপকৃত হবে।
আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।

১৪ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:০৫

আবু আফিয়া বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ, লেখাটি পড়ার ও ভাল লাগার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

২| ১৪ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ১০:৩২

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: বাংলাদেশের কক্সবাজার যাওয়ার প্রবল ইচ্ছা আছে।ভারতেরও নানান জায়গায় ইতিমধ্যে ঘুরেছি।তবে আপনার পোস্টটি পড়ে রাজশাহী দেখার ইচ্ছা তৈরী হল।উপর ওয়ালা সহায়।
তবে দিদিভাই,অল্প কয়েকদিন হল আমি ব্লগে এসেছি।এটুকু বুঝেছি পাঠকরা ছোট প্যারা বেশি পছন্দ করে।মন্তব্যে আঘাত পেলে ক্ষমা প্রার্থী।রইল অনন্ত শুভেচ্ছা।

১৫ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১০:৪৫

আবু আফিয়া বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ

৩| ১৫ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:৪১

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: আপনার পোষ্ট পড়ে নস্টালজিক হয়ে পড়লাম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ের কথা মনে পড়ে আসলে রাজশাহীর কথা শুনতেও ভাল লাগে। রাজশাহী নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ।

১৫ ই মার্চ, ২০১৮ সকাল ১১:৫০

আবু আফিয়া বলেছেন: লেখাটি পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই, ভাল থাকুন

৪| ১৭ ই মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৫:১৯

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: ভাল লাগল। সময় করে আমিও ঘুরে আসব।

৫| ১৫ ই মে, ২০১৮ ভোর ৬:১৪

ANIKAT KAMAL বলেছেন: অাপনার ঐ‌তিহ‌সিক লেখায় গ‌র্বে অার অান‌ন্দে মনটা অাকাশ ছোঁয়া খু‌শির পরশ পে‌লো য‌দিও রাজশাহীর সন্তান হি‌সে‌বে অামার লেখার অক্ষমতা অাপনার মা‌ঝে ফু‌টি‌য়ে তুল‌লেন। বু‌কের প্লাটফ‌র্মে অার নয়‌নের অায়নায় উজ্জল নক্ষ‌ত্রের ম‌তো অামা‌কে অাপনার কথা ভাবনায় স্মর‌ণের অাবীর ছ‌ড়ি‌য়ে যা‌বে চির‌দিন অার হৃদয় ছোঁয়া লেখনীর ভাষা শৈলী মন্ত্রমু‌গ্ধের ম‌তো গেঁথে থাক‌বে বু‌কের সবুজ অা‌ঙ্গিনা। ধন্যবাদ

১৭ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১:৩৮

আবু আফিয়া বলেছেন: আপনার মন্তব্যের প্রতিটি বাক্য আমাকে মুগ্ধ করে,
আপনার প্রতি রইল কৃতজ্ঞতা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.