নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রয়োজনে যে বেয়াদপ হতে পারে, ভদ্রতা পাওয়ার অধিকার শুধু তাই।

অদ্বিত

পরাজয়ে ডরে না বীর।

অদ্বিত › বিস্তারিত পোস্টঃ

বই রিভিউ - ভবিষ্যতের পদার্থবিজ্ঞান

৩০ শে মে, ২০২০ সকাল ১০:৩৪



এ বছর ফেব্রুয়ারীতে বইমেলা থেকে বইটা কিনেছি। পদার্থবিজ্ঞানী মিচিও কাকু ভবিষ্যতে কি ধরণের প্রযুক্তি আসতে পারে, আমাদের জীবনযাত্রা কেমন হতে পারে তার উপর 300 জন বিজ্ঞানীর স্বাক্ষাৎকার নিয়ে বইটি লিখেছেন।

কার্দাশভ স্কেল অনুযায়ী সভ্যতার 3 টি ভাগ রয়েছে। টাইপ 1 ( আন্তঃগ্রহীয় সভ্যতা ), টাইপ 2 ( আন্তঃনাক্ষত্রিক সভ্যতা ) এবং টাইপ 3 ( ছায়াপথীয় সভ্যতা Galactic Civilization )। টাইপ 4 বা আন্তঃছায়াপথীয় ( Intergalactic ) সভ্যতার কথা কেউ ভাবেনি।
আন্তঃগ্রহীয় সভ্যতার অর্থ হল যে সভ্যতা একাধিক গ্রহের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ রক্ষা করে। আন্তঃনাক্ষত্রিক সভ্যতা একাধিক নক্ষত্রের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ রক্ষা করে। আমাদের সূর্য একটা তারা এবং রাতের আকাশে যত তারা দেখা যায় সেগুলোও একেকটা সূর্য। সেই তারাগুলোর প্রত্যেকটির নিজস্ব গ্রহরাজি আছে, এমনকি পৃৃথিবীর মত বাসযোগ্য গ্রহও আছে। যখন আমরা অন্য সৌরজগতে, অন্য নক্ষত্রে গ্রহে বসতি স্থাপন করব তখন পরিণত হব আন্তঃনাক্ষত্রিক সভ্যতায়। আর গ্যালাক্সি কাকে বলে ? কয়েকশ কোটি নক্ষত্রের গুচ্ছকে বলা হয় ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি। By the way, আমি মোবাইল ফোন Samsung Galaxy এর কথা বলছি না। আমাদের পাশের গ্যালাক্সি এন্ড্রোমিডা। আমাদের গ্যালাক্সির নাম Milky Way ( দুগ্ধপথ ), বাংলা নাম আকাশগঙ্গা ছায়াপথ। যদি কোন সভ্যতা সম্পূর্ণ গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ দখল করে নেয় তবে সেটা ছায়াপথীয় সভ্যতা ( টাইপ 3 সভ্যতা )।



আগামী একশ বছরে মানুষ টাইপ 1 সভ্যতায় উন্নীত হবে। মানুষ শুধুমাত্র সৌরজগতের অন্য গ্রহে বসতিই স্থাপন করবে না, মানুষ শক্তির অপচয় সর্বোচ্চ রোধ করে ও পরিবেশ দূষিত না করে পৃথিবীর সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করতে সক্ষম হবে। মানুষ আবহাওয়া নিয়ন্ত্রন করতে পারবে। কৃষকের বৃষ্টি দরকার, শুধু তার জমিতেই বৃষ্টি হবে। আশেপাশে রোদ থাকবে। রোদ বৃষ্টি আমরা ইচ্ছামত নিয়ন্ত্রন করতে পারব। পৌরাণিক গ্রন্থে দেবতাদের যেসব ক্ষমতার কথা বলা হয়েছে সেসব ক্ষমতার কিছু কিছু মানুষ অর্জন করবে। যেমন - মন দিয়ে জড়বস্তুকে নিয়ন্ত্রন করা। টেবিল থেকে বই আনার জন্য টেবিলের কাছে যেতে হবে না, বই উড়ে হাতে চলে আসবে। সেজন্য মাথায় বিশেষ যন্ত্র পড়তে হবে। বিছানায় শুয়ে ঘর ঝাড়া মোছা করতে পারবে। তাতেও কষ্ট হলে কাজের রোবট থাকবে। চশমা বা কন্ট্যাক্ট লেন্সের মধ্যে মোবাইল, কম্পিউটার, টিভি, ইন্টারনেট সবকিছু চলে আসবে।
ভীনগ্রহী প্রাণীদের সাথেও যোগাযোগ স্থাপন হতে পারে। কিন্তু আমার ব্যক্তিগত অভিমত হলঃ ভীনগ্রহীদের সাথে contact হলেও তাদের কাছ থেকে কোন প্রযুক্তি বা Physics-Chemistry এর scientific knowledge নেয়া উচিত হবে না। কেন ? পরীক্ষায় নকল না করে নিজের চেষ্টায় পরীক্ষা দেয়া উচিত। আমরা নিজের চেষ্টায় উন্নতি করব। নিজেরা মাথা খাটিয়ে ডার্ক মহাবিশ্বের রহস্য উন্মোচন করব। নিজেদের চেষ্টায় আন্তঃনাক্ষত্রিক সভ্যতায় উন্নীত হব। ওদের সাহায্য কেন নেব ? হ্যা, শুধু biology এর জ্ঞান নেয়া যায়। ওদের শারিরীক গঠন আমাদের মত হবে না। ওদের অনুমতি নিয়ে ওদের শরীর সমন্ধে জানলাম। এর চেয়ে বেশী জ্ঞান নিলে আমরা ওদের কাছে ছোট হয়ে যাব।
মিচিও কাকুর মতে, 2100 সালের মধ্যে চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতির দরুণ বার্ধক্য ও রোগবালাই দুনিয়া থেকে মুছে ফেলবে। অসুখে কেউ মারা যাবে না, ন্যানোবট ( আণুবীক্ষণিক রোবট ) শরীরের ভিতর ঢুকে জীবানু ধ্বংস করবে। বৃদ্ধ হয়ে কেউ মরবে না, বার্ধক্য জিনিসটা বিদায় নিবে। একজন মানুষ যেরকম শরীর চায় সেরকম শরীর ধারণ করতে পারবে। আশি বছর বয়সেও হয়ত 17 বছরের কিশোরের মত শরীর থাকবে বা 21 বছরের তরুণীর মত শরীর থাকবে। এটা বুঝাই মুশকিল হয়ে যাবে কে বয়সে বড় আর কে বয়সে ছোট।
সড়ক দুর্ঘটনা ঘটবে না। কারণ, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার জাগরণ। গাড়ি নিজেই বুদ্ধি খাটিয়ে চলবে, ড্রাইভার লাগবে না। অন্যান্য দূর্ঘটনা ঘটতেই পারে। খুন খারাপি বন্ধ করা সহজ না হলেও অনেক অনেক কমে আসবে। আমরা দশ হাজার, বিশ হাজার বছর আগের বিলুপ্ত প্রাণীদের DNA পেয়েছি। তাই প্রাচীনকালের অতিকায় হাতি ( ম্যামথ ), খড়গদন্ত বাঘ আবার recreate করা যাবে। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর উন্নতির ফলে জন্মের আগেই সন্তানের ( ভ্রূণের ) মধ্যে নিজেদের ইচ্ছামত বৈশিষ্ট্য দেয়া যাবে। ঝামেলা বাধবে তখন যখন বাবা মা সন্তানে মধ্যে গায়ক হবার জিন দিবে, আর সন্তান জেনেটিক কারণে ভাল গায়ক হবার পরেও প্যাশন হিসেবে "science" choose করবে। বংশগত রোগগুলো যেমন - ডায়াবেটিস, বাত পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব হবে। আরো মাথা নষ্ট করা প্রযুক্তি ভবিষ্যতে আসছে।
মিচিও কাকুর মতে, একবার টাইপ 1 সভ্যতায় উন্নীত হয়ে গেলে টাইপ 2 সভ্যতায় পৌঁছতে খুব বেশী সময় লাগবে না। কিন্তু টাইপ 1 সভ্যতায় পৌঁছানোই সবচেয়ে মুশকিল। কারণ, একটা গোষ্ঠী আছে যারা মানবজাতির সকল উন্নতির বিরোধী। এরা মনে করে কেয়ামত খুব নিকটে। তাই কেয়ামতের জন্য মানসিকভাবে সর্বদাই প্রস্তুত। এরা মানবজাতিকে 1400 বছর অতীতে নিয়ে যেতে চায়। টাইপ 1 সভ্যতায় উঠতে হলে এই পাগলদের সাথে রীতিমত যুদ্ধ করে উঠতে হবে। ( মিচিও কাকু তার বইতে এই বিশেষ গোষ্ঠীর নাম উল্লেখ করলেও আমি নাম উল্লেখ করলাম না )।
মিচিও কাকু আরো বলেছেন, "আমেরিকায় শিক্ষার হার খুবই নিম্নমানের। সেখানে পোলাপান মাইয়াপান হাইস্কুল পার হওয়ার পর লেখাপড়াই করে না। তাহলে আমেরিকা বিশ্ব অর্থনীতিতে 1 নম্বর পজিশনে কিভাবে আছে ? এর কারণ, তাদের নিজেদের মেধা না থাকলেও তারা মেধার দাম দিতে জানে। অন্য দেশ থেকে মেধা কিনে ফেলে। আপনি যদি দেখাতে পারেন যে আপনার মধ্যে কোন বিশেষ ট্যালেন্ট আছে তবে আপনাকে টাকা দিয়ে কিনে নিয়ে যাবে। আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বেশীরভাগ শিক্ষার্থীই বহিরাগত বিশেষত ভারতীয়। দক্ষিণ এশিয়ার ছেলেমেয়েরা প্রতিযোগীতায় সবচেয়ে বেশী ভাল করে। গণিত অলিম্পিয়াড, ফিজিক্স অলিম্পিয়াড ইত্যাদি পরীক্ষায় ইউরোপ আমেরিকার চেয়ে এশিয়ার ছেলেমেয়েরাই বেশী ভাল করে। কিন্তু এশিয়া থেকে নোবেল লরেট বিজ্ঞানী বের হয় না কেন ? কারণ, পরীক্ষায় ভাল করা এক জিনিস আর গবেষণা আরেক জিনিস। অঙ্ক করতে পারলেই, problem solve করতে পারলেই creative হওয়া যায় না। এশিয়ার ছেলমেয়েদের মধ্যে creativity বা সৃষ্টিশীলতা কম। "

বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বানী করতে ভালবাসে। কোন subject তখনই বিজ্ঞান হিসেবে স্বীকৃত হবে যখন ভবিষ্যদ্বানী করতে পারবে। ভবিষ্যদ্বানী করতে না পারলে সেটা বিজ্ঞানের মধ্যে পড়ে না। যেমন নিউটনের Gravity র সূত্র খাটিয়ে পদার্থবিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বানী করেছেন, "75 বছর পরপর হ্যালির ধুমকেতু দেখা যাবে ( আসলেও দেখা যায় ), তারপর 300 কোটি বছর পর আমাদের আকাশগঙ্গা গ্যালাক্সির সাথে প্রতিবেশী এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সির সংঘর্ষ হবে ইত্যাদি।"
But প্রাকৃতিক ঘটনার ভবিষ্যদ্বানী করা এক জিনিস আর মানব সভ্যতার ভবিষ্যদ্বানী করা আরেক জিনিস। অনেককিছু মাথায় রাখতে হয় প্রথমত অর্থনীতি, দ্বিতীয়ত প্রযুক্তির বিবর্তন, তৃতীয়ত প্রযুক্তির পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের চাহিদার পরিবর্তন, চতুর্থত ইতিহাস। রেডিও আবিস্কার হবার পর সবার ঘরে ঘরে রেডিও দেখা যেতে লাগল। যখন টিভি আবিস্কার হল তখন রেডিওর প্রতি মানুষের আকর্ষণ চলে গেল, কারণ টিভিতে ছবি দেখা যায়। আগে গ্রামফোনে মানুষ গান শুনত, ক্যামেরা নামক বিশাল যন্ত্রে ছবি তোলার পর ডার্ক রুমে গিয়ে ওয়াশ করতে হত। আর এখন রেডিও, টেলিভিশন, ক্যামেরা, গান শোনার কল সবকিছু মোবাইলে app হিসেবে চলে আসছে। একশ বছর আগের মানুষের কাছে মোবাইল নিয়ে গেলে আপনাকে God ভাববে। ঠিক সেরকম একশ বছর পরের প্রযুক্তি আমাদের কাছে গ্রীক পুরাণের দেবতার power মনে হবে।
আমি বইটা পড়ে স্তম্ভিত হয়ে গেছি এই ভেবে যে মিচিও কাকুকে কি পরিমাণ গবেষণা করতে হয়েছে বইটা লেখার জন্য জন্য। উনি বিজ্ঞানী হওয়ার পরেও উনাকে একটা বই লেখার জন্য অর্থনীত, ইতিহাস কতকিছু জানতে হয়েছে। Just wow ! বইটা কেনার উদ্দেশ্য ভবিষ্যতে আমি science fiction গল্প লিখলে এ বই থেকে আইডিয়া নেয়া যাবে।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে মে, ২০২০ সকাল ১১:০৭

আমি সাজিদ বলেছেন: ইন্টারেস্টিং। ইশ যদি আরও ১০০ বছর বেঁচে থাকতে পারি! দেখে যেতে পারতাম সব।

৩০ শে মে, ২০২০ সকাল ১১:২৩

অদ্বিত বলেছেন: 2050 সাল পর্যন্ত বাঁচলেই 2100 সাল দেখে যেতে পারবেন।
2050 সালের মধ্যেই আমরা বার্ধক্যকে জয় করে ফেলব।

২| ৩০ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: একজন আধুনিক মানুষের সব কিছুই জানতে হয়।
কল্প কাহিনি লেখা শুরু করুন।

৩| ৩০ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:০৯

আমি সাজিদ বলেছেন: এমনেই আমার মনে আগামী ৩০ বছরের মধ্যে চিকিৎসা ব্যবস্থার অনেকটাই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নির্ভর হতে পারে। আলামত পাচ্ছি।

৪| ৩০ শে মে, ২০২০ বিকাল ৩:১৪

আমি সাজিদ বলেছেন: আমি যতদূর জানি টেলোমারেজ এনজাইম এর অভাবে সেল ডিভিশন হওয়া বন্ধ হয়ে যায়, সেলুলার এজিং হয়। বার্ধক্য আসে। কিভাবে বার্ধক্য জয় করা যাবে ? কি কি নিয়ে বিজ্ঞানীরা কাজ করতেসেন এখন ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.