নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গরম কাল, ১৯৮৮ সাল। (কোন মাস মনে নেই।)
ঝকঝকে রৌদ্রোজ্জ্বল দিন। কিন্তু পরিবেশ চরম উত্তেজনাকর। ফেনী কলেজের ফিজিক্স ফ্যাকাল্টি অফিসের সামনে বসে জেসমিন ঘোষণা দিয়েছে আগামী চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে আমি শেষ। লাশও খুঁজে পাওয়া যাবেনা। জেসমিন ন্যাচারালি দেখতে সুন্দর, রেগে মেগে ওর গাল টকটকে লাল হয়ে আরো সুন্দর লাগছে।
সায়েন্স গ্রুপে ছেলে ছিলো প্রচুর। কিন্তু মেয়ে পড়তো হাতে গোনা কয়েকজন। কার ঠেকা পড়েছে সায়েন্স গ্রুপ নিয়ে ভেজালে পড়ার? মেইন সাবজেক্টের সাথে অংক, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, তার উপর মরার প্র্যাকটিকাল। এত লেখাপড়া করলে সাজুগুজু আর প্রেম করবে কখন? তাই বেশীরভাগ মেয়েরা বেআক্কেলের মত সায়েন্স গ্রুপে না গিয়ে আর্টস গ্রুপে চলে যায়। আমাদের সময় সায়েন্স গ্রুপে মেয়ে ছিলো মাত্র দশ-বার জন, ওদের নাম মনে করে দেখার চেষ্টা করে দেখি হয় কি না; দিনা, শান্তা, রুমা, কেমি, জেসমিন, নাছরিন, শিউলী, পান্না, শিল্পী, প্রীতি . . . . আরও একজন আছে নাম মনে পড়ছেনা। সে ছিলো রামপুর গার্লস্ স্কুলের হেড স্যারের মেয়ে, আজ সে আমাদের মাঝে নেই। এদের মধ্যে জেসমিন, নাছরিন, শিউলী আর পান্না মিলে গ্রুপ বানিয়েছে, “জেনাশিপা”। চার বান্ধবী একে অন্যের কইলজার টুকরা, যেন একটি রসুন। তাহারা চারটি কোয়া টিয়া একটা (এক্ষেত্রে ‘টিয়া’ বলতে দৃঢ় বন্ধন বোঝানো হয়েছে, অন্য কিছু না)।
ফেনী কলেজের মেইন বিল্ডিং পাইলট হাই স্কুল মাঠের পুর্ব দিকে। পেছনে পুকুর, উত্তর আর দক্ষিন দিকে হোষ্টেল, পুকুরের পূব পাশে কমার্স, সায়েন্স ফ্যাকাল্টি আর গ্যালারী। গ্যালারীর অবস্থান ক্যাম্পাসের একেবারে পুর্ব দিকে। তারপর দেয়াল, তারপর রেল ষ্টেশন, বিশাল ঝিল, তারপর রেললাইন। দোতলা থেকে দক্ষিনে তাকালে দেখা যায় খোলা মাঠ যেখানে আমরা ক্রিকেট খেলতাম, বাঁয়ে ঝিল, ডানে দ্বিতল কমার্স কাম সায়েন্স ফ্যাকাল্টি, তার দক্ষিনে টেনিসকোর্ট যার পশ্চিমে সতের নম্বর হল, দক্ষিনে কচুরিপানায় ভরা পুকুর পেরিয়ে মাষ্টারপাড়ার বাড়ীঘরের পেছন দিক। গ্যালারীর ঠিক উপর বরাবর ফিজিক্স ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর নূর মোহাম্মদ খান স্যারের চেম্বার। নেমপ্লেটে স্যারের নাম লেখা ছিলো, “এন. এম. খান”, আমরা ভালোবেসে বলতাম “নিমকি”। চেম্বারের দরজার বাঁ পাশে যেখানটায় নিমকি স্যারের নেমপ্লেট বসানো তার নিচে পাশাপাশি দুটো লো বেঞ্চ। ওখানে মেয়েরা বসে।
লো বেঞ্চে উপবিষ্ঠ জেসমিন ফুল স্পীডে বকে যাচ্ছে আমাকে। ফাঁকে ফাঁকে দম নেয় তারপর আবার শুরু,
“এত বড় সাহস তোর? এত বড় ‘অড’ (Odd!) কেন্নে এই কাম কইত্তে পাইল্লি? কেন্নে, কেন্নে? পাঁচ পাঁচ টা ভাইয়ের একমাত্র বইন আমি । হেগুনেরে কইলে বেগ্গুনে আই তোরে এক্কেরে ছিঁড়িয়ালাইবো।”
তাৎক্ষনাত কল্পনায় আসে পাঁচ ভাইয়ের চার ভাই আমার দুই হাত আর দুই পা ধরে টানছে ছিড়েঁ ফেলার জন্য। পঞ্চম ভাই কি ধরে টানবে? সেটা মনে হতে শিউরে উঠি আতংকে। না না, জেসমিনকে বোঝাতে হবে। যা করেছি বন্ধু হিসেবে উপকার করেছি। এত রেগে যাবার কোন কারন নেই।
শিউলী ডাই-হার্ড জেসমিন সাপোর্টার, ‘জেনাশিপা’ গ্রুপের শক্তিবতি সদস্য শিউলী চোখমুখ শক্ত করে রোষকষায়িত লোচনে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। এত বড় অপরাধ! এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া যায় না। স্বাভাবিকের চেয়ে রাগী চেহারার শিউলী একটু বেশী সুন্দরী। দুঃখের বিষয়, আমাকে দুই চোখে দেখতে পারে না। এমন ভাবে দিকে তাকায় যেন জোঁক, কিংবা তেলাপোকা দেখছে। মনে মনে বলি, “এরে রূপসী শিউলী, তুই চব্বিশ ঘন্টা চেঁতি থাক। আঁই রেনি থাকি।”
নাছরিন জেসমিনকে থামানোর চেষ্টা করছে, বাকীরা চুপ। ওরা কনফিউজড কারন অপরাধ গুরুতর, কিন্তু এত গুরুতর নয় যার জন্য সাগরকে ছিঁড়ে ফেলতে হবে। আমিও বুঝলাম না এই সাধারণ বিষয় নিয়ে এত মামামাতির কারন কি? জেসমিনের মুখে ঘাম দেখে ভালোর জন্য ব্ল্যাকবোর্ডের ডাস্টার দিয়ে পাউডার মেখে দিয়েছিলাম। গালের ডানে, বাঁয়ে আর কপালে। পাউডার দিলে মুখের ত্বক হয় আরো উজ্জ্বল, কমনীয়। এতে করে এত রেগে যাবার কারন কি? বন্ধু হিসাবে উপকার করা কি অপরাধ? পন্ডস ট্যালকম পাউডার আর চকের গুঁড়া একই জিনিষ। দুঃসহ গরমে ত্বকের জন্য অতিশয় উপকারী।
বহুদিন পরে শুনেছি ডাস্টার দিয়ে তার গালে টাস্ (touch) করা চরম অপরাধ হয়েছে। সেজন্য জেসুমণি রাগান্বিত হয়েছে।
আহারে, দোষ আমার ভোঁতা মস্তিষ্কের। আল্লাহ্ মেহেরবান। পাঁচটি ভাইয়ের কেউ আমাকে ছিঁড়তে আসেনি। জেসুমণি রাগবতি হলেও অশেষ দয়াবতি।
✻ ✻ ✻ ৩৬ বছর পর ✻ ✻ ✻
গরম কাল, ২০২৩ সাল। জুন মাস। ব্রাসেলস্, বেলজিয়াম।
গতকাল থেকে মারজান আর সিয়ামসহ ফুল প্রুফ প্রোগ্রাম সেট করা ছিলো। মারজান আমার সহপাঠী জেসমিন ওরফে জেসুমণির বড় মেয়ে। পরিবার নিয়ে বেলজিয়ামের ব্রাসেলসে বেড়াতে এসেছি। উঠেছি জেসমিনের বাসায়। আমরা যাবো প্রাচীন শহর ব্রুঝ (Bruges) যেখানে মধ্যযুগীয় অট্টালিকা আর ঘরবাড়ির কোল ঘেঁষে এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে নদী। যেখানে আছে টলটলে পরিষ্কার জল, আশেপাশে ফুটে আছে অজস্র ফুল। আমরা সবাই ফুল, খাল-বিল আর দেয়ালের সাথে ম্যাচ করে জামা কাপড় পরে খুটুশ খুটুশ ফটো তুলবো আর ছড়িয়ে দেবো সোশ্যাল মিডিয়ায়। লোকজন দেখবে আর বলবে, “আহা, কি সুন্দর!”
মাত্র এক ঘণ্টার পথ। যাবো, এনজয় করবো, তারপর বিকেলের মধ্যে ব্রাসেলস্ ফিরে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে প্যারিস রওয়ানা হতে হবে। তিনশ-কুড়ি কিমি. পথ, রাত এগারটার মধ্যে পৌঁছে যাবো ইনশা আল্লাহ্। সেখানে অপেক্ষায় থাকবে বাল্যবন্ধু রাসেল আর ভাবী।
দিনটি ছিলো সোমবার। বেলজিয়ামের জাতীয় দিবস। এরা দেখে শুনে গ্রীষ্মের চমৎকার এক দিনে ওদের জাতীয় দিবস বানিয়েছে, যেদিন কখনও আলোর অভাব হয় না। পড়েনা ঠাণ্ডা, হয় না বৃষ্টি। আকাশ ভরা নীল, সূর্য ভরা আলো। একই দিন জাতীয় দিবস ফ্রান্সেও।
কিন্তু জেসুমণি বলছে মাত্র আধা ঘণ্টার জন্য ওকে সময় দিয়ে তারপর ব্রুঝ ঘুরে আসা যাবে। জেসমিনকে তার শপের জন্য ওয়্যারহাউস থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কিনতেই হবে, না হলে নয়। ছেলে জাহিদ বোঝাতে চাইছিলো জাতীয় দিবসের কারণে জায়গায় জায়গায় রাস্তা বন্ধ, পথে ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। অনেক দেরী হয়ে যাবে। তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয় সুপারওম্যান জেসমিন,
“আরে রাখিস! ব্রাসেলস্ শহরের ইবা-চিবা আঁই চিনি হাতের তাইল্লার মত। গাঁড়ী বার কর, চল আঁর লগে।”
আমি বাধ্য ড্রাইভার, গাড়ী বের করলাম। আমরা যাবো ‘মুতেরি’ যেটা খুব কাছে, এইতো এইখানে। সব ঠিক ছিলো, দশ মিনিটের মাথায় গন্তব্যের মুখামুখি এসে দেখি ব্লকেড। পুলিশ রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। জাতীয় দিবসের কি জানি হবে। এবার শুরু হল ঘুর পথে ওয়ান ওয়ে সিস্টেম দিয়ে ট্রাফিকের পেছন পেছন জিরো স্পীডে যাওয়া। প্রায় ঘণ্টা খানেক পর গন্তব্যের কাছাকাছি গেলে জেসমিন নেমে গেলো। সে বললো পাবলিক পার্কিংয়ে গাড়ি পার্ক করে ফোন করলে ও চলে আসবে। আমি বললাম তথাস্তু। ছেলেকে রেখে গেলো আমার কাছে। বহুত কসরত করে শামুকের মত ইঞ্চি ইঞ্চি করে পার্কিংয়ে ঢোকার পর পার্কিং ওয়ার্ডেন বললো বের হয়ে যেতে হবে। পর্কিংয়ে কোন স্পেস নেই। আবার বের হয়ে ডাবল ঘুর পথে ফেরত যাবার পালা। মিনিটের পর মিনিট যেতে যেতে ঘণ্টা পার হয়ে গেলো ট্রাফিক জ্যাম, পুলিশ কন্ট্রোল্ড ওয়ান ওয়ে ট্রাফিক সিস্টেম আর ব্লকেডের ঝামেলায়। কিন্তু জেসমিনকে পিক আপ করবো কিভাবে? এক পর্যায়ে জিপিএস অন করে বৃটিশ স্টাইল ড্রাইভিং শুরু করলাম। আমার ভোম্বা ভলভো নিয়ে চিপাচাপা হয়ে ঢুকে হঠাৎ অন্য গাড়ীর ফাঁকে নাক ভরে দিয়ে এক পর্যায়ে ‘নো এন্ট্রি’ ভায়োলেট করে একটা সার্ভিস রোডে ঢুকে পড়লাম। এটা জেসমিনের ওয়্যারহাউসের পেছনের সার্ভিস রোড। ভাগিনাকে বললাম আমরা ঠিক পথেই আছি, জেসমিন ওয়্যারহাউস থেকে মাল কিনবে, সেটা ওরা তুলে দেবে আমার গাড়ীতে। আরো ঘণ্টা খানেক পর দেখি গভর্ণর জেসমিন আসছেন, পেছন পেছন ফ্ল্যাটবেড ট্রলিতে প্রায় পৌনে এক টন মাল। ফাজলামো হচ্ছে?
“আঁর গাড়ীরে ট্রাক পাইছত?” জেসমিনকে ঝাড়ি দিতে সে ডাবল ঝাড়ি দিয়ে অর্ডার দেয়,
“তাড়াতাড়ি মাল লোড কর!”
আমি পেছনের দুই সীট নামিয়ে গাড়ীকে ট্রাক বানিয়ে দিলাম। জেসমিনের ছেলে ঝটপট লোড করতে লাগলো। আমার সাধের ভলভো ফোর-বাই-ফোর এখন গ্রোসারী ট্রাক। হেভী ট্রলি মুভ করতে গিয়ে আমার ডান পায়ের শীন (হাঁটুর নিচের সামনের অংশ) ইঞ্চিখানেক কেটে রক্তে একাকার। জেসমিন ঝটপট ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে সঠিক সাইজের প্লাষ্টার দিলে ব্যান্ডেজ করে নিলাম। যাক আপততঃ নিরপদ।
“আমার প্রতি ফোঁটা রক্তের দাম তোকে দিতে হবে।” জেসমিনকে হুঁশিয়ার করে দিলাম।
“খালি আওয়াজ দে বন্ধু, কত চাস? দিয়া দিমু।” জেসমিনের তাৎক্ষনাৎ জবাব।
“ঠিক আছে, দেখা যাইবো।” বললাম।
এখান থেকে যাবো “জেসমিন ষ্টোর, ৫০ এ্যাডলফ্ বুইল এভিনিউ।” ওরে আল্লাহ্ রে, জায়গায় জায়গায় রাস্তা বন্ধ। বেলজিয়ামের জাতীয় দিবস, মরার ‘ন্যাশণাল ডে’; দশ মিনিটের পথ, এখন ঘুর পথে যেতে যেতে গোটা ব্রাসেলস্ ঘুরেও জেসমিন ষ্টোর পর্যন্ত যেতে পারছিনা। এইখানে ইউ টার্ন, ওইখানে রাস্তা বন্ধ সুতরাং অন্য পথে যাও। ইতিমধ্যে কেটে গেছে আরো এক ঘণ্টা।
আরো একবার নটরিয়াস ব্রিটিশ ড্রাইভিং করতে হল। জেনারেল জ্যাক্যুয়ে বুলেভার্ড থেকে এ্যাডলফ্ বুইল এভিনিউতে ঢোকার পথে রোড ব্লকে একটা ফাঁক দেখে আমার ভলভোর নাক গলিয়ে দিলাম। যা হবার হবে। সামান্য এগিয়ে দেখি আরেকটা ব্লকেড, সাথে ছয় জন পুলিশ। ওদের গাড়ীর ওপাশে বাঁয়ে জেসমিন ষ্টোর। জেসমিনের ছেলে গিয়ে অফিসারদের সাথে ফ্লেমিশ ভাষায় কি জানি বললো। ওরা জবাব দিলো। সন্তুষ্ট চিত্তে ভাগিনা গাড়ীতে ফিরে সুখবর দিলো। একটু পর এই ব্লক খুলে দেওয়া হবে। হলোও তাই, পনের মিনিট অপেক্ষার পর শেষ মেশ পৌঁছলাম জেসমিন ষ্টোরের সামনে। আল্লাহর রহমত, গাড়ী পার্কিং পেলাম জেসমিনের ষ্টোরের ঠিক সামনে।
জেসমিন তার ষ্টোরের জন্য দুনিয়ার জিনিষ কিনেছে। আজকের দিনটা কোনোভাবেই সে নষ্ট করতে চায়নি কারন তিন দিন বন্ধের পর কাল থেকে আবার সব খোলা। তার দোকান ব্রাসেলসের অন্যতম ব্যস্ত এলাকায় যেখানে সারক্ষণ কাষ্টমারের ভীড় থাকে। তার উপর বন্ধুপ্রতীম স্বভাবের কারণে জেসমিনের বাঁধা কিছু কাষ্টমার আছে যারা জেসমিনকে না দেখলে মন খারাপ করে। আজও যখন জেসমিন মাল নিয়ে এসে অনেক দেরীতে শপ ওপেন করছিলো, ইয়াং একটা মেয়ে আগে থেকে শপের সামনে দাঁড়িয়ে। জেসমিনকে বলে,
“তুমি কি জানো? সকাল থেকে কতবার এসেছি?”
দোকানীর প্রতি কাষ্টমারের এই ভালোবাসা আমাকে অভিভূত করে। এরকম লয়্যাল কাষ্টমার আছে প্রচুর। জেসমিন সেই ভালোবাসা অর্জন করেছে তার অসাধারণ ভালোমানুষী আচরণের মাধ্যমে। জেসমিন বলছিলো সে নিজে ব্যাবসার দেখভাল করছে চব্বিশ বছর ধরে, তার স্বামী করে আসছিলো আরো আগে থেকে।
এর মধ্যে বেজে গেছে বিকেল চার টা। এতক্ষণে জানা হয়ে গেছে সাধের ব্রুঝ (বেলজিয়ামের সুন্দর একটি বন্দর শহর) যাওয়া হবেনা আর। বাসায় গিয়ে সামান্য বিশ্রাম নিয়ে কিংবা এখানে ওখানে ঘুরে বেলা থাকতে থাকতে প্যারিসের দিকে রওনা হতে হবে।
মাত্র ক’ বছর আগেও জেসমিন এক সাথে চারটা ষ্টোর ম্যানেজ করেছে। কমাতে কমাতে একটায় নামিয়েছে কারন একা আর পারেনা। এই ছোট্ট ষ্টোরটা আজ থেকে প্রায় সাতাশ বছর আগে স্বামীর সাথে লাজুক বধু হিসেবে হাত লাগাতো।
স্বামীর ব্যাবসার হাত ভালো ছিলো, জেসমিনও শিখে নিয়েছিলো কিভাবে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের রাজধানী ব্রাসেলসে কিভাবে বানিজ্য করতে হয়। বড় মেয়ে ব্রাসেলসে ইউনিভার্সিটির উচ্চ ডিগ্রী নিয়ে বেলজিয়ান সিভিল সার্ভিসে কর্মরতঃ। সে কাজ করে ফাইন্যান্স মিনিষ্ট্রিতে। দুই ছেলে ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে। বড় ছেলে ইন্টারন্যাশণাল বিজনেসে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে, ছোট ছেলে অনার্স কোর্স করছে আইটিতে। ছোট মেয়েটা স্কুলে যায়। স্বামীর অবর্তমানে ব্যাবসা, বানিজ্য, সন্তানদের দেখাশোনা, লেখাপড়া, বিয়ে থা সব দেখাশোনা করে যাচ্ছে জেসমিন যাকে আমরা পাগলী বলে দুষ্টামী করতাম। কলেজ জীবনের এই পাগলী ব্রাসেলসের মত শহরের একজন ইনভেষ্টর, প্রতিষ্ঠিত অন্টারপ্রেনার। আত্ববিশ্বাসী, প্রত্যয়ী, ব্রাসেলসের বাংলাদেশী সমাজের সম্মানিত্ব ব্যক্তিত্ব। প্রচন্ড পরিশ্রমের পরও যার মুখে লেগে থাকে হাসি। বিশাল বন্ধুবহর আমাদের। এছাড়া আছে "আমরা ৮৭" নামের সুবিশাল ফেইসবুক গ্রুপ যেখানে রয়েছে লাখেরও বেশী মেম্বার। সবাই জেসমিনকে এক নামে চেনে। (১৯৮৭ যারা এস এস সি পাশ করেছে। প্রকৃতপক্ষে প্রচুর ৮৭ ফেইসবুক গ্রুপ আছে।)
আমরা সবাই এই ভালো মানুষটিকে অনেক অনেক ভালোবাসি।
আমি তার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করছি।
©somewhere in net ltd.