নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কেউ না।

আফলাতুন হায়দার চৌধুরী

আফলাতুন হায়দার চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

অপেক্ষা . . . (ধারাবাহিক, সত্য ঘটনা অবলম্বনে।) শেষ পর্ব

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১৬

ঠান্ডা মাথায় মনে মনে এ্যারেষ্ট, এ্যারেষ্ট রিজন, ইত্যাদি আরেক বার ঝালিয়ে নিচ্ছে…

কেন এ্যারেষ্ট করবে (Reason for this arrest), এ্যারেষ্টের প্রয়োজনীয়তা (Necessity) তারপর ক’শন. . .
উফ্ ক’শন কেন মনে আসছেনা? মোবাইল বের পকেট সার্জেন্ট ওপেন করলো। এই এ্যাপটা খুব কাজের। Caution এর প্রথম দুই অক্ষর সার্চ ফিল্ডে বসাতেই চলে এলো,
“You do not have to say anything. But, it may harm your defence if you do not mention when questioned, something which you later rely on in court. Anything you do say may be given in evidence.”

জমে থাকা ভারটা বুক থেকে দীর্ঘ নিঃশ্বাস দিয়ে বের করে নিলো নাইজেল। কত লক্ষবার এটা বলেছে ট্রেনিংএ থাকতে আর আজ হঠাৎ ব্রেন ব্লক করলো। ক’শন দিয়ে টাইম নোট করতে হবে পকেট নোটবুকে। তারপর আসামী যা বলবে সেগুলো দ্রুত নোট করে ওদের থেকে সিগনেচার নিতে হবে। না দিলেও সমস্যা নেই, ক্যামেরাতো চলছেই। এ্যারেস্ট করার পর আসামী যা বলে তাকে বলে ‘সিগনেফিক্যান্ট স্টেটমেন্ট’। কোর্টের জন্য ওগুলো খুবই জরুরী।

নাইজেলের পুরো মনযোগ ওই বেডের দিকে। সে এই কেইসের অফিসার ইন-চার্জ, সংক্ষেপে ও.আই.সি। আফিয়ার হাতের কব্জি, আঙ্গুলে দুনিয়ার ব্যান্ডেজ। তালুর কাছে একটুখানি খালি জায়গা পাওয়া গেছে যেখানে মা আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করতে পারছে। সারা শরীরে ব্যান্ডেজ, অনেকগুলো স্যালাইনের পাইপ, ইলেক্ট্রিক ক্যাবল। মা তার সন্তানকে ছোঁয়ার এই সামান্য সুযোগ পেয়ে অঝোরে কাঁদছে আর গুনগুন করে কত কি বলছে। একটু পর পর নিশ্বাস নিতে গিয়ে বিষম খাচ্ছে যেন। নাইজেল ভাবতে পারছেনা, আফিয়ার এই ভয়াবহ ইনজ্যূরি কিভাবে হল?

কে জানি ওয়ার্ডে ঢুকলো, দরজা খোলার সাথে সাথে ভারী অথচ নীচু মোটা গলায় ছেলেবেলার অতি পরিচিত একটা গান গাইতে গাইতে একজন ভেতরে ঢুকছে। গুনগুন করে হলেও নাইজেল স্পষ্ট শুনছে এবং বুঝতে পরছে,
“Incy wincy spider
Climbed up the spout
Down came the rain
And washed the spider out
Out came the sunshine
And dried up all the rain
So incy wincy spider
Climbed the spout again.”


ওয়ার্ডের হেভী ডাবল ডোর ঠেলে ভেতরে ঢুকতে বেগ পেতে হচ্ছে, হাতে দুটো এ্যালুমিনিয়ামের স্যুটকেস আর কাঁধে কেবল আর পাইপ (cables & pipes) ঝুলছে, কিন্তু গান থামছেনা। নাইজেল সাহায্য করার জন্য উঠতে যাবে তখন সে পুরোপুরি ওয়ার্ডে ঢুকে পড়েছে।
“আমার জন্য তোমাকে উঠে দাঁড়াতে হবেনা অফিসার। যদিও জানি আমি কিং অফ দ্য ওয়ার্ল্ড তবু তোমাকে ক্ষমা করলাম।”
আই ডি চেক করে বুঝলো তিনি একজন ফুসফুস বিশেষজ্ঞ, পালমোনলজিস্ট। ভদ্রলোককে দেখেই নাইজেলের পছন্দ হয়ে গেলো, চেনা চেনাও লাগছে। বয়স ষাটের কম হবেনা, জিনিষপত্র আফিয়ার বেডের কাছে রেখে নাইজেলের সামনে আসলে নাইজেলও উঠে দাঁড়ালো। হঠাৎ নাইজেল তাকে চিনতে পারলো, আরে? এতো ম্যাড হ্যাটার! অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারলেন্ডের সেই পাগলা চা-খোরের মত দেখতে এই ডাক্তার।! নাইজেলকে বললো,
“আমি ডক্টর ফ্যারাডে।” তারপর হঠাৎ নাইজেলের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললো, “আসলে আমি ডাক্তার না, প্লাম্বার। পানির লাইন রিপেয়ার করি।” বলে এমভাবে চোখ টিপলো যেন ষড়যন্ত্র করছে। ভদ্রলোকের দুষ্টুমি বুঝতে পেরে সে ও একটু হাসলো।
“ওয়ার্ডে রোগী ছাড়া আর কেউ থাকলে আমার শরম লাগে। পুলিশ দেখলে অবশ্য শরম লাগেনা।” ডক্টর ফ্যারাডের কথা শোনা মাত্র নাইজেল আফিয়ার মা আর পাশের বেডের ছেলেটির মা কে ওয়ার্ড থেকে বের করে দিলো।

প্রায় আধ ঘন্টা একটানা কাজ করার পর ডক্টর ফ্যারাডে বললো, “আহ্! সেচ প্রকল্প সফল হয়েছে।” এই আধ ঘন্টা ধরে যা ঘটলো, নাইজেলের মনে হল সে ভিন্ন এক জগতে ছিলো। আফিয়ার ফুসফুস নাকি রক্তে ডুবে গিয়েছিলো। আইভি এনেস্থেটিকস দিলো, তারপর বুক কেটে পাইপ ঢোকানো হল। এ্যাকুরিয়ামে যেমন পাম্প থাকে ওই ধরনের একটা ছোট পাম্প এবং স্যালাইনের পাইপের মত পাইপ দিয়ে রক্ত বের করে প্যাকেটে পুরেছে। আবার আরেক পাম্প দিয়ে লিকুইড ঢুকিয়ে আবার বের করেছে। এভাবে পুরো ফুসফুস ক্লীন করে ফেলেছে। অন্যদিকে ব্লাড সাপ্লাই কন্টিনিউ করেছে। ব্লাড ব্যাগস্‌ ডক্টর ফ্যারাডের সাথেই ছিলো। কাজ শেষে কাটা বুক আবার জোড়া লাগিয়ে নিখুঁতভাবে ড্রেসিং করে দিয়েছে। ড: ফ্যারাডে কাজ শেষে আবার ব্লাড স্যালাইন জুড়ে দিয়ে সব গুছিয়ে নিয়ে বিদায় নিলো। বিদায় নেবার সময় বললো ফুসফুস রিপেয়ার করে দিয়েছে, সময়মতো হীল (heal) হবে। যাবার সময় আবার গাওয়া শুরু করলো সেই গানটি…
“Incy wincy spider
Climbed up the spout
Down came the rain
And washed the spider out . . .”

ডক্টর ফ্যারাডের পেছন পেছন তার গানও চলে গেলো।

আবার নীরবতা।

অনেক দিন আগের কথা। বাবা বাড়ী ফিরে এসে দেখে মা চীৎ হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে। বুকে তাদের ছোট্ট নাইজেল, বয়স তখনও চার মাস হয় নি। চিঁ হিঁ স্বরে কাঁদছে। মায়ের কি জানি এক অসুখ হয়েছিলো। দিনের পর দিন দুর্বল হয়ে পড়ছিলো। ডাক্তারেরাও আশংকার কথা জানালে মা নাকি বার বার বলতো, 'আমার নাইজ্‌! আমার নাইজের কি হবে?' বাবা মা-কে মিথ্যে সান্তনা দিতেন। 'আমাদের নাইজ্‌ আমাদের মাঝেই বড় হবে।'...
... বাবা এখনও বলেন, 'নিজের জীবন দিয়ে তোকে বাঁচিয়েছে সে।' সেটা সত্যি, রিপর্টে বলায় হয় সটান চীৎ হয়ে পড়ে মাথার পেছনে আঘাত পেয়ে ব্রেনের ইন্টারনাল ইনজ্যূরি হয়। এমনিতেই অসুখে কাবু, তার উপর ব্রেন ইনজ্যূরি। মা চলে গেল ইশ্বরের কাছে। বাবা নাইজেল কে বড় করেছে সিঙ্গেল ফাদার হিসেবে। বিয়ে থা করে নি, নাইজেল কখনো কোন পার্টনারও দেখেনি বাবার সাথে। নাইজেলকে প্রান দিয়ে ভালোবেসেছে বাবা, মায়ের অভাব বুঝতে দেয় নি। বাবা এখনও ভালোবাসে নাইজেল কে, নাইজেলও বাবাকে। কিন্তু নাইজেল সব সময় মায়ের কথা ভেবে মনে মনে হাহাকার করেছে। মায়ের ভালোবাসা কেমন? মায়ের গায়ের গন্ধ কেমন? মা! মা! মা!

মণিটরের দিকে তাকিয়ে অবাক নাইজেল। রেসপিরেটরি লেভেল এখন ৪০/৫০ উঠানামা করছে যেটা ১৬ তে স্থির ছিলো। তারমানে ফুসফুস এরমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে? হার্ট রেটেও লাভ চিহ্নের বদলে নাম্বার দেখা যাচ্ছে। মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও হসপিটালের ডাক্তার, স্পেশালিস্টার যা করছে নাইজেলের কাছে মনে হচ্ছে ম্যাজিক। অবস্থার উন্নতি হচ্ছে।

একটু পর আফিয়ার বাবা আর মা একসাথে ফিলে এলো। মা এসে আফিয়াকে ডাকছে, আফিয়া গভীর ঘুমিয়ে। একবিন্দু নাড়াচাড়া করছেনা। কিন্তু হার্ট রেট আর লাং ফাংশান ফিরে এসেছে। মা কি সেটা বুঝতে পারছে? কিংবা ওর বাবা?

এত কিছুর পরও, ডিউটি ডাক্তার বলে দিয়েছে। আফিয়ার বাঁচার কোন সম্ভাবনা নেই। যদি কোনমতে বেঁচেও যায় (যার কোনও সম্ভাবনা নেই) তাহলে জীবম্মৃত হয়ে বেঁচে থাকবে। আফিয়ার ব্রেন ইনজ্যূরি রিপেয়ারের উর্ধে। আফিয়া চলে যাবে ইশ্বরের কাছে। সেখানে গিয়ে মায়ের সাথে দেখা হবে আফিয়ার? খুব ইচ্ছে করছে, ব্যান্ডেজের ফাঁকে, আফিয়ার একটা হাতের তালুর কাছে সামান্য খোলা অংশটুকুতে আঙ্গুল রেখে বলতে, 'আফিয়া, আমার মায়ের কাছে চলে যেও। মা তোমাকে বুকের ভেতর আগলে রাখবে। সব সময়।' নাইজেলের চোখে জল আসে। ধীর, নিঃশব্দ, লম্বা শ্বাস নিয়ে নিজেকে ফিরিয়ে আনে।

নাইজেল আবার গিয়ে চেয়ারে বসেছে। আফিয়ার মা এবং বাবাকে অবজার্ভ করছে।

সে অপেক্ষায় আছে, বাচ্চাটি মারা যাবে। তারপর বাচ্চার মা এবং বাবাকে এ্যারেষ্ট করবে। বলবে, "ইউ বোথ আর আন্ডার এ্যারেষ্ট ফর সাসপিশন অফ মার্ডার অফ আফিয়া বেগম. . . "

- সমাপ্ত -
আগের পর্বের লিংকসমূহ
পর্ব: ১
পর্ব: ২
পর্ব: ৩
পর্ব: ৪

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: বড্ড অগোছালো এবং এলোমেলো।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:১০

আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: আমি গরিব লেখক। চেষ্টা করে যাবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.