নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কুতুবদিয়া লাইট হাউস থেকে প্রায় দুই মাইল পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে ভাসছে আমাদের জাহাজ। ডীপ এ্যাংকরে। চিটাগাং থেকে জলি বোট এসেছে। দুরত্ব প্রায় পঞ্চাশ কি.মি.(সাতাশ নটিক্যাল মাইল)। এতদুর আসতে প্রায় চার ঘন্টা লেগে যায়, বিপরীত স্রোত হলে আরো বেশী। জাহাজের ঝুলসিঁড়ি বা জ্যাকস্ ল্যাডার বেয়ে লারেলাপ্পা করতে করতে শিপের গা বেয়ে উঠছেন ভদ্রলোক। উনি সাপ্লাইয়ারের একজন স্টাফ, মুখ গোমড়া। ক্যাপ্টেনের আর্জেন্ট অর্ডার পেয়ে এতদুর এসেছেন মহামুল্যবান সাপ্লাই নিয়ে। গলায় ঝুলছে ব্যাগ, ওটাও লারেলাপ্পা করছে। ব্যাগে আছে সিদ্দিকা কবীরের মহামুল্যবান বই। ব্রীজের (যেখান থেকে শিপ নেভিগেট করা হয়) উইংয়ে দাঁড়িয়ে আমি তামাশা দেখছি, মুখে হাসি। ব্রীজের টেলিফোন বাজছে। আমি জানি ক্যাপ্টেন ফোন করেছে, বাজুক। ধরবো একটু পর।
রান্নার বইয়ের বিশিষ্ট লেখিকা সিদ্দিকা করীরের নাম নিশ্চই সবার মনে আছে। আমি যতদুর জানি সিদ্দিকা কবীর দেশে সর্বপ্রথম রান্না বিষয়ক বই প্রকাশ করেন। এ বইটি আমাদের দেশে রান্নাবান্নার জগতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। এমন কোন মধ্যবিত্ত বাড়ী নেই যেখানে এই বই দেখা যায় না। তাছাড়া প্রবাসী স্টুডেন্ট বা ব্যাচেলরদের বাইবেল ছিলো সিদ্দিকা কবীরের এই বই। সিদ্দিকা কবীরের বই নিয়ে আমারও বিশেষ একটা অভিজ্ঞতা আছে। সেটা ব্যাচেলর লাইফের নয়, কর্ম জীবন। অর্থাৎ আমার সমুদ্রজীবনের যেখানে সিদ্দিকা কবীরের বই থাকার প্রশ্নই ওঠে না।
সে বছর রোযার শেষের দিকে আমাদের জাহাজ চট্টগ্রাম আউটার এ্যাংকরেজ তথা বহিঃনোঙ্গরে ছিলো। তখন আমাদের জাহাজে যে চীফ কুক ছিলো তার রান্নার হাত ভালো ছিলোনা। সেকেন্ড কুকও তথৈবচ। এখানে রান্নার হাত ভালো ছিলোনা এটা অসত্য। কারন জাহাজের কুক মানে দুনিয়ার ট্রেনিং, পড়ালেখা করে বৈশ্বিক রান্নাবান্না, হাইজিন, সেইফটি, ইত্যাদি ইত্যাদি পাশ করে তার পর তারা এই প্রফশনে আসতে পারে। এদিকে আমরা সবাই দেশী, মামুর বাড়ীর আবদারের মত কুক দের পক্ষে মায়ের হাতের রান্না'র মজা দেওয়া সম্ভব না। এদিকে ক্যাপ্টেন আবার খাওয়া-দাওয়ার মানের ব্যাপারে বেশী সিরিয়াস। তাঁর কথা হচ্ছে, কঠোর এ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পূর্বশর্ত হচ্ছে খাওয়া দাওয়ার উচ্চমান। অফিরার, ক্রু রা মজা করে পেট পুরে খাবে আর শান্তিতে ডিউটি করবে। মায়ের হাতের রান্নার মজা দিতে পারবেনা মানে? অবশ্যই পারবে, ব্যবস্থা আছে।
এবছর আমাদের ঈদ হবে আউটার এ্যাংকারেজ থেকেও দুরে, ডীপ এ্যাংকারেজে।
শীপ চ্যান্ডলার (জাহাজে যারা খাবার/স্টোর্স ইত্যাদি সাপ্লাই করে)-কে ফোন করে বললেন ‘সিদ্দিকা কবিরের বই’ সাপ্লাই করার জন্য। (আমাদের জাহজা তখন ডীপ এ্যাংকারেজে, কুতুবদিয়ার পশ্চিমে) শীপ চ্যান্ডলারের স্টাফ বেচারা জলিবোট নিয়ে এতদুর এলো সেই বই নিয়ে।
বই পেয়ে ক্যাপ্টেন আমাকে তাঁর অফিসে ডেকে পাঠালেন। বললেন,
- ঈদের মেনু যাতে কোনোভাবে স্পয়েল না হয় সেজন্য সিদ্দিকা কবীরের এই বই আনিয়েছি, আগে কখনো এ বই দেখেছো।
- জ্বী-না, তবে নাম শুনেছি।
- হ্যাঁ, যো জিন্দেগীতে রান্না করেনি সে-ও এ বই ফলো করে পাকা রাঁধুনী হয়ে যেতে পারবে। আর এরাতো সার্টিফিকেট পাওয়া প্রফেশনাল কুক। আইটেমগুলো মার্ক করা আছে তুমি ঐ পেইজগুলো এনলার্জ ফটোকপি করে ওদের ভালোমত বুঝিয়ে দাও বলে দাও এর পরও যদি জাহাজের অফিসার আর ক্রু রা খাবার খেয়ে মজা না পায় তাহলে বাকী জীবনে আর জাহাজে জব করা লাগবেনা। সোজা বাড়ী পাঠায়া দিবো। শীপচ্যান্ডলার (সাপ্লাইয়ার) ঈদের আগের দিন বিকেল নাগাদ দুটো খাসী, তরতাজা গুরুর মাংস, ফ্রেশ ভেজিটেবলস্ আর স্যালাড আইটেম পৌঁছে দেবে। ঈদের দিনটা অন্ততঃ লোকজন খেয়ে খুশী হোক। খাসী দুটো পেছনের ডেকে তুলেছিলাম সাপ্লাই ক্রেন দিয়ে। ক্যাপ্টেনের আদেশে খৎনা করানো এই দুইটি বগুড়ার কালা ছাগল আমদানী করা হয়েছে সেই বগুড়া থেকে। ক্যাপ্টেন বলেছেন বগুড়ার কালা ছাগল স্বাদে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ। ক্রেনে করে যখন ডেকে তুলছিলাম ছাগলের কালো চামড়ার উপর রোদের আলো ঠিক্রে রঙধনুর সাত রং দেখে ক্যাপ্টেনের সাথে আমিও একমত, বগুড়ার কালা ছাগল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ।
ঈদের দিন লাঞ্চ আইটেম ছিলো কাচ্চি বিরিয়ানী, চিকেন টিক্কা, বীফ রেজলা, বড় লবস্টার্স, পমফ্রেট ফিশ, রাশান স্যালাড, বোরহানী, সফট্ ড্রিংকস, নানান ধরনের পায়েশ, সেকেন্ড কুকের ইশ্পেশাল আচার ইত্যাদি। বিশেষ করে কাচ্চি বিরিয়ানী, বীফ রেজালা আর লবস্টার্স পুংখানুপুংখভাবে সিদ্দিকা কবীরের বই অনুযায়ী যাতে হয় সেটা বলে দিলেন। আমি প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠা কপি করে নীচে গ্যালিতে গেলাম (জাহাজে কিচেনকে গ্যালী বলে)। ততক্ষনে খবর হয়ে গেছে ঈদের খাবার পাকাতে হবে বই দেখে দেখে। চীফ কুক খানিকটা আহত, তবে ভাবখানা এই যে সে খুব খুশী কারন খাবার করো পছন্দ না হলে যাবতীয় দোষ সিদ্দিকা কবীরের ঘাড়ে চাপানো যাবে।
জাহাজে অফিসার/ক্রু/ভাবী/ বাচ্চা সব মিলে আমরা মোট উনত্রিশ জন। তন্মধ্যে যাদের বাসা চিটাগাং তাদের সবাইকে ক্যাপ্টেন ঈদের ছুটি দিয়েছেন। মানবিক কারনে সেটাই স্বাভাবিক। ভটভটিয়া বোটে চেপে দল বেঁধে তারা যখন আউটার এ্যাংকারেজ (পতেঙ্গা থেকে বেশ দুরে, কুতুবদিয়ার পশ্চিমে, বঙ্গোপসাগরে) থেকে পতেঙ্গার ১৫ নম্বর জেটিতে যাচ্ছিলো, মনটা কেমন জানি করছিলো। চট্টগ্রাম থেকে আমার ফেণী বাসা পর্যন্ত যেতে লাগে মাত্র দেড় ঘন্টা। সময়ের হিসেবে আমিও স্থানীয় তাই না? যাই হোক, জাহাজে এখন অফিসার/ক্রু মিলে আমরা মোট বিশজন, এবং ছয়জন সিকিউরিটি ওয়াচম্যান। সর্বমোট ছাব্বিশ জন।
এখানে একটা বিষয় উল্যেখ করা প্রয়োজন, আমাদের চট্টগ্রাম এবং মংলা পোর্ট দেশী বিদেশী কোন জাহাজের জন্য নিরাপদ নয়। চোর-ছ্যাঁচড় আর জলদস্যুর নিদারুন উৎপাত এবং সেজন্যেই সার্বক্ষনিক ওয়াচম্যান রাখা। ছাব্বিশ জনের জন্যে আইটেমগুলো প্রস্তুত করতে মাছ, মাংস, মসলাপাতি কি অনুপাতে লাগবে ইত্যাদি ইত্যাদি হিসেব চলছে। আমার সেকেন্ড কুক চিটাগোনীয়ান, এবং তিনি এম এ পাশ। প্রমিত শুদ্ধ বাংলায় কথা বলেন তবে স্ট্রং চাটগাঁইয়া এ্যাকসেন্টে। খালি চোখে পড়তে পারেন না তাই গাঢ় ফ্রেমের চশমা পরেন। তখন উনাকে দেখতে মনে হয় মহিলা কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল। আচ্ছা, মহিলা কলেজ কেন?
গুরুগম্ভীর সেকেন্ড কুক চশমা লাগিয়ে সিদ্দিকা কবীরের রান্নার বই পড়ছে আর হিক্-হিক্ করে হাসছে।
- চার (Sir), এই চিদ্দিকা কালাম্মার ভঁয়ঁস কঁত?
- কেন?
- সোঁন্দর কারবার। সবাইকে তুমি তুমি করি বইলতেছে-যে। এই দেকেন! আমি ফড়ি,
এক: মাংস দুয়ে লবন মেকে থিরিশ মিনিঠ রাকো। মাংস আঁবার দুঁয়ে ফাঁনি জরাও।
দুই: ফেঁয়াঁইজ গিঁ’য়ে (ঘি-এ) বাঁদামী করে বেঁজে থোল। টান্ডা হলে মোটা গুঁরা কর
থিইন (তিন): . . .
- ঠিক আছে, ঠিক আছে, তিনি ‘আপনি’ বললেন নাকি তুমি কিংবা তুই, তাতে কিছু এসে যায় না, আমরা মজা করে খেতে পারলেই হল। সাপ্লাইয়ারতো সব দিয়ে গেছে, খাসীগুলো মাশাল্লাহ্ দারুন স্বাস্থ্যবান দেখলাম, চামড়া নাড়ি-ভুড়ি, খুরা এসব ফেলে কতখানি মাংস থাকবে?
সেকেন্ড কুক এক দৌড়ে পুপ-ডেক(পেছনের ডেক)-এ গিয়ে জিভটা সামান্য বের করে দাঁতে চেপে একটা খাসী কোলে নিয়ে আবার নামিয়ে রাখলো।
- জবঅ করে চামরা, ওঁজলা, আঁতরি, খুরা, কল্লা, বেদরকারি আঁড্ডি-উঁড্ডি ফালাই্এ্যারে দশ কেজি তাকিবো।
- তারমানে দুটো মিলে বিশ কেজি। আমাদের অতো লাগবেনা তারপরও দুটোই জবাই করে রেডী করে ফেলেন। স্ট্যুয়ার্ডদের ডেকে নেবেন, আর ওয়াচম্যাগুলোকোও কাজে লাগাতে পারেন যারা ফ্রী আছে। বোনলেস করে নেবেন।
- ফুল বোনলেস্ করবোযে? আঁড্ডি-উঁড্ডি তাকিলে লোকজন চাবাই-চুবাই কাইতো!
- কোনো দরকার নেই, বইতে যেভাবে আছে ঠিক সেভাবে। এক চুলও এদিক ওদিক হতে পারবেনা। এমনকি টেম্পারেচারও স্ট্রিক্টলি মেইনটেইন করবেন।
- চার (sir), ওভেনের মিটারতো বেকার, ইঞ্জিনরুম তেকে একটা তার্মোমিটার আইনবো?
- আনেন!
পরদিন সকালে গোসল সেরে জাহাজের বোট ডেকে (Boat deck যেখানে লাইবোট রাখা হয়) সবাই মিলে ঈদের নামাজ পড়লাম। নামাজ শেষে কোলাকুলী, অফিসার্স সেল্যনে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের সেমাই, লুচী-হালুয়া, ফিরনী, চা, কফি ইত্যাদি খাওয়া। এর মধ্যে আমার চীফ কুক তার অগ্রগতির রিপোর্ট দিলো,
- ও স্যার, খাঁসীর গোসত যেমনে বইত লেইকছে হেমনে কাডি ধুই-ধাই রাইকছি। কাড়ারি-ভোগ চাইল বিজাই ফানি জরাই থুইছি, চিকেন টিক্কার টুকরা, ইচামাছ, বীফ, চান্দামাছ (পমফ্রেট), চায়নীজ ভেজিটেবল কাডাকুডা সব রেডী। কতা হইলোযেন্, একটার মইদ্দে হইত্তান্ ন’।
- কেন পারবেন না? আসল কাজ হচ্ছে কাটা-কাটি, ওটাইতো কমপ্লিট। এখন শুধু মসলাপাতি মিশিয়ে সময়মতো রান্না। ব্যাস। বারোটায় লাঞ্চটাইম, সেখানে আপনাকে পুরো এক ঘন্টা বেশী সময় দেওয়া হয়েছে।
- কাইন্ডলি দুইটা ফইজ্জন্ত টাইম দেন। রেডি করি দিমু।
- একটা-তিরিশ, এর বেশী এক সেকেন্ডও নয়। ঈদ হোক আর যাই হোক অফিসারদের ডিউটিতো মাফ নেই, ক্রু রা নাহয় ছুটি করছে।
চীফ কুকের বাড়ি মীরশরাই, তবে ভাষা মাশাল্লাহ্ শতভাগ ফেণী অরিজিন। (চুপি চুপি বলে রাখি, আমার বাড়িও ফেণী, একদম মাঝখানে)
দেড়টায় নয়, ক্যাপ্টেনের আদেশে স্ট্যুয়ার্ডরা একটায়ই লাঞ্চ সার্ভ করলো। জয়েন্ট লাঞ্চ, অর্থাৎ অফিসার্স ডাইনিং রুমে ক্রুরাও আসবে এবং খাবে। যেহেতু ঈদের দিন, ইউনিফর্ম পরতে হবেনা, সবার পরনে বাহারী পাঞ্জাবী, পাজামা, চটি, খাবার সময় ছুরি কাঁটাচামচের বাধ্যবাধকতা নেই, হাত চলবে। এতো স্বাধীনতা জাহাজে এসব বিশেষ দিনেই পাওয়া যায়। তা-ও যদি সবাই বাংলাদেশী হয়।
একটায় লাঞ্চ সার্ভ করার কারনে কাচ্চি বিরিয়ানীতে মিনিট পাঁচেক কম স্টিমিং হয়েছে। তার পরও লক্ষ্য করলাম সকালের হেভী এবং আনলিমিটেড ব্রেকফাস্টের পরও সবাই গোগ্রাসে খাচ্ছে আর খালি হচ্ছে ডিশের পর ডিশ। কম স্টিমিং হওয়াতে স্বাদের ঘাটতি পড়েনি। বেশীরভাগ আইটেম ছিলো তেলসমৃদ্ধ এবং গুরুপাক। জাহাজের পোলাও বিরিয়ানী সব সময় নষ্ট হয় অথচ সেদিন একটুও উচ্ছিস্ট ছিলো না। খাওয়া শেষে লাইন ধরে গ্যালীতে (জাহাজের রান্নাঘর) গিয়ে সবাই চীফ কুক কে ধন্যবাদ দিচ্ছে। এতদিন আপনার এই যাদু কেন দেখালেন না, ইত্যাদি বলছে।
বিকেলে চীফ কুক উপরে আমার অফিসে এসে বলে,
- স্যার, আঁরে বিষ আনি দেন, খাই মরি যাই।
- কেন?
- ছত্তিরিশ বছর ধরি কুগের চাকরী করি (আমরা গ্রেটার নোয়াখাইল্লারা কুককে 'কুগ' বলি)। গোরাইয়াগো লগে (সাদা), কালাইয়াগো লগে (আফ্রিকান), ইন্ডিয়া, আম্রিকা, সুইডেন, অশটেলিয়া, জাফান, ফিলিপিন্না, চীনাইয়া, কত রংগের অফিসারেরগো খানা খাবাইলাম। ইংলিশ খানা, সাউথ ইন্ডয়ান খানা, চীনা, জাফানী, থাই, কোরিয়ান কত্ত রকমের কত্ত কিছু বানাইলাম, কেউ অবজেকশনতো দে-ই ন’ বরঞ্চ খাই খুশী অইছে, দোয়া কইচ্ছে। আর আইজ্জা আঁরেদি আন্নেরা মাহইয়াহোলার বই হড়াই হড়াই রান্দাইছেন। তারফরে কন ‘থ্যাংক ইউ!’ আঁরে বিষ দেন স্যার। মরি যাই।
- বিষতো আপনার স্টোরেই আছে। অষ্ট্রেলিয়ায় ক্যাপ্টেন সাহেব ইঁদুরের ওষুধ আনালো না? রাতে ঘুমানোর আগে চামে এক প্যাকেট খেয়ে নেবেন।
- ওম্মা? তো-ই লে ত’ ছেঁড়াইতে ছেঁড়াইতে মরুম!
আর হাসি আটকে রাখতে পারলাম না। জাহাজে ইঁদুর নিধনের জন্য যে সে বিষ ব্যাবহার করা যায় না কারন প্রচুর দূর্ভেদ্য জায়গা আছে, সেখানে মরে পড়ে থাকলে ওসব ফাঁক-ফোঁকর থেকে কিছুতেই মৃত ইঁদুর বের করা যাবেনা এবং পঁচা গন্ধ সহ্য করে যেতে হবে দিনের পর দিন। সেন্ট্রাল এয়ার কন্ডিশনের বদৌলতে গন্ধ ছড়িয়ে পড়বে জাহাজের পুরো এ্যাকমোডেশনে। তাই বিশেষ বিষ তৈরী করা হয় যেটা খেলে ইঁদুরের ভয়াবহ ডিহাইড্রেশন হয় এবং মারা যায়। পুরো শরীরে একটুও পানি থাকেনা বিধায় না পঁচে মৃত ইঁদুরটি গন্ধহীন শুকনো খড়কুটোর মত পড়ে থাকে, গন্ধতো দুরে থাক, জীবাণুও ছড়ায় না। বেচারা চীফ কুক ভাবতেও পারেনি তাকে আমি মরার ব্যাপারে উৎসাহ দেবো। হাসিমুখে বললাম,
- তাছড়া আরেকটা শর্টকাট উপায় আছে, এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে মরে যাবেন। গ্যালীতে আপনার চুলা আছে না, এর উপরের প্লেটটা খুলে ফোর-ফর্টি (440Volts) লাইন অন করে টার্মিনালগুলো খালি হাতে চেপে ধরবেন, টেরই পাবেন না কখন মারা গেলেন।
- স্যার, আঁরে ছুডি দিতেন ন’?
বিরিয়ানী খেতে বসলে সেই ঈদের লাঞ্চের কথা এখনও মনে পড়ে। শুধু কাচ্চি বিরিয়ানী নয়, চিকেন, লবস্টার্স থেকে শুরু করে বোরহানীটা পর্যন্ত নিখুঁতভাবে সিদ্দিকা কবীরের বই দেখে তৈরী করা হয়েছিলো। জাহাজের প্রবীণ এ্যাক্সপার্ট দুই কুক আরো এক্সপার্ট হয়েছে সিদ্দিকা কবীরের বই পড়ে। ঈদের কিছুদিন পর সিংগাপুরের বাংলাদেশী দোকান থেকে কেনা ইলিশ মাছ দিয়ে সর্ষে ইলিশ রেঁধেছিলো চীফ কুক। সিদ্দিকা কবীরের বই মোতাবেক। এক কথায় দারুন!
আমি নিজেও সময় পেলে বইটা পড়তাম। লন্ডনে ছাত্রাবস্থায় বাসা থেকে ক্যূরিয়ারে বইটি আনিয়েছিলাম। সত্যি এটা কিচেন বাইবেল। বইটিতে শুধু রেসিপি বা রান্নার পদ্ধতি আছে তাই নয়, কিভাবে খাবার সংরক্ষন করতে হয়, কোন ধরনের খাবারে কি ধরনের পুষ্টি তার বিববরণ আছে। উচ্চ শিক্ষিত, অধ্যাপিকা সিদ্দিকা কবীর শুধু রেসিপি দিয়ে ক্ষান্ত দেন নি, দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। সবচেয়ে বেশী ভালো লেগেছে বইটি তিনি উৎসর্গ করেছেন বাংলাদেশের পুষ্টিহীন শিশুদেরকে।
কৃতজ্ঞতা মহীয়সী সিদ্দিকা কবীরকে এমন একটি বই লেখার জন্য যা নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবার উপকার করছে। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই, তবে তাঁর এই সৃষ্টি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম মানুষের উপকারে আসবে।
আল্লাহ্ মরহুম সিদ্দিকা কবীরকে জান্নাতবাসী করুন।
১৫ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৩:১০
আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: এবং খুবই উপকারী।
২| ১২ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৪:৩২
মিরোরডডল বলেছেন:
লারেলাপ্পা মানে কি?
- বিষতো আপনার স্টোরেই আছে। অষ্ট্রেলিয়ায় ক্যাপ্টেন সাহেব ইঁদুরের ওষুধ আনালো না? রাতে ঘুমানোর আগে চামে এক প্যাকেট খেয়ে নেবেন।
- ওম্মা? তো-ই লে ত’ ছেঁড়াইতে ছেঁড়াইতে মরুম!
হায়দারতো অনেক দুষ্ট প্রকৃতির
সিদ্দিকা কবীরের বই পড়িনি, কখনও ওনার রেসিপি ট্রাই করা হয়নি।
তবে নাম শুনেছি উনি সেরাদের সেরা।
জাহাজিদের ঈদ কেমন হয় একটু জানা গেলো।
হায়দারের ভাষার দখলতো সেইরকমের!
আমারতো চীফ কুক-কে পছন্দ হয়েছে
১২ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৪:৫৯
আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: সুন্দর কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ। You are very kind also.
আমারতো চীফ কুক-কে পছন্দ হয়েছে
খোঁজ নিবো?
১২ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৫:০৬
আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: লারেলাপ্পাঃ- ইয়ো ইয়ো কে লারেলাপ্পা বলে।
দড়ি দিয়ে বানানো মই কে বলে জ্যাকবস্ ল্যাডার। ওটা বেয়ে উঁচু জাহাজে ওঠার সময় ব্যালেন্স থাকেনা। ল্যাডার এদিক ওদিক দুলতে থাকে সারা শরীর ডান বাম বা উপর নিচ করতে থাকে। সেটকে আমরা লারেলাপ্পা বলি। হুবহু ইয়ো ইয়ো না হলেও প্রায় সেরকমই।
৩| ১২ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৫:২৪
মিরোরডডল বলেছেন:
বুঝতে পেরেছি, অনেকটা হিপ-হপ স্টাইলে উঠে এসেছে
শুধু খোঁজ নিলে হবে নাহতো! হায়দারকেও যে তাহলে সাথে থাকতে হবে ইন্টারপ্রেটারের ভূমিকায়
১৫ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৩:১১
আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: তথাস্তু
৪| ১২ ই অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১৭
নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: চট্টগ্রামে লারেলাপ্পা বলতে বোঝায় অনেকটা হেলেদুলে হাঁটাকে অথবা চলনে বলনে কোন ভারসাম্য না থাকলে তাকে । বিশেষ করে এই অঞ্চলে ব্যান্ড সংগীতের ভক্তদের এই নামে ডাকত !!
১৩ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৩:০০
আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: হতে পারে। আমার কাছে লারে লাপ্পা মানে হ্যাঁকৎ হ্যাঁকৎ
৫| ১২ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৮:৪৩
শেরজা তপন বলেছেন: দুর্দান্ত!
যেমন লেখনি তেমন কাহিনী- এক কথায় আমি পড়ে বিমোহিত। সেই সাথে হাসতে হাসতে শেষ!
১৩ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৩:০১
আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই।
৬| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১২:৪৬
আমি সাজিদ বলেছেন: চমৎকার লেখা।
১৩ ই অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ২:৫৮
আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।
৭| ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১:১২
রাজীব নুর বলেছেন: ''রান্না খাদ্য পুষ্টি'' সিদ্দিকা কবীরের এই বইটি একসময় অনেক বাসায় দেখেছি। আমাদের ঘরেও একটা ছিলো।
১৩ ই অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ২:৫৫
আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: হুমম আমি প্রায় সব বাসার বুক শেল্ফে এই বই দেখেছি। বিয়েতেও এই বই উপহরা দেওয়া হয় প্রচুর।
৮| ১৪ ই অক্টোবর, ২০২৩ সকাল ১০:৪১
মিরোরডডল বলেছেন:
আমি একবার উত্তরাধিরসূত্রে প্রেমিকা পেয়েছিলাম।
উত্তরাধিরসূত্রেও প্রেমিকা হয় প্রথম জানলাম।
এটা নিয়েও একটা সেরকম মজার পোষ্ট হতে পারে।
১৫ ই অক্টোবর, ২০২৩ রাত ৩:১২
আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: এটা নিয়ে গল্প আছে তবে সাইজে বড় বলে সামুতে দেবো কি না ভাবছি। সাহস দেন
৯| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৩:০৪
মিরোরডডল বলেছেন:
হায়দারের লেখার স্টাইলটা এমন যে ধরে রাখতে পারে।
তাই বড় হলেও সমস্যা নেই।
আর সেইরকম খুব বেশি বড় হলে, দুই পর্বে লিখবে।
১৮ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৪:৫২
আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: আপু গো! আবার দেখলাম। আমার এই লেখা প্রায় পাঁচ হাজার ওয়ার্ডের। খুব বেশী লম্বা। এক হাজার ওয়ার্ড করে দিলেও পাঁচ পর্ব হবে।
১০| ১৯ শে অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১৯
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আমার ধারণা সমস্যা কুগের না বরং জাহাজের ক্যাপ্টেনের। কুগ এতো বছর ধরে রান্না করেছে। রান্না ভালো না হলে চাকরী আরও আগেই চলে যেত। কুগের ছিল কিছু ইঁদুর মারার ওষুধ ক্যাপ্টেনের খাবারে দিয়ে দেয়া।
সিদ্দিকা কবির পুষ্টিহীন শিশুদের সাথে মশকরা করেছেন। বই পুষ্টিহীন শিশুদের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ না করে বই বিক্রির লাভ ঐ শিশুদের জন্য খরচ করা উচিত ছিল। আদর্শবাদী কথা বলে ঐ বাচ্চাদের কোন উপকার হবে না।
আপনার বইটা এখন আমার বউ পড়ছে। আপনার বইটার দাম অনেক বেশী। দেখা যাক প'ড়ে কতটুকু উসুল করা যায়। উসুল না হলে আপনার পরের বই ফ্রিতে দিতে হবে আমাকে।
১৯ শে অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৩০
আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: প্রিয় সাড়ে চুয়াত্তর,
আপনার, এবং ভাবীর হাতে আমার বই। এটা ভেবেই আমি ধন্য, সম্মানিত বোধ করছি। যদি কখনও আরো কিছু লিখতে পারি, বই আকারে বের হবে হয়তো। কিন্তু কবে হবে বলতে পারছিনা। প্রফেশন, বাসা, সংসার সব মিলিয়ে লিখা হয়ে উঠছেনা। যদি বের হয়, আপনাকে অবশ্য জানাবো এবং পাঠিয়ে দেবো।
ভালো থাকবেন।
১১| ১৯ শে অক্টোবর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪৫
মিরোরডডল বলেছেন:
সাচুর মন্তব্য আর হায়দারের প্রতিমন্তব্য, দুটোতেই ভালো লাগা।
প্রিয় দুজন ব্লগারের মাঝে আন্তরিকতা দেখে সত্যি খুব ভালো লাগলো।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই অক্টোবর, ২০২৩ বিকাল ৪:১৫
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: সিদ্দিকা কবীরের লেখা বইটি দারুণ।