নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আজাড় মানুষ। নিজেকে আবিষ্কারের নেশায় নেশাগ্রস্থ।

জিসান অাহমেদ

একজন কসমিক ট্র্যাভেলার, মহাজাগতিক মুসাফির।

জিসান অাহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জেন্ডারবান্ধব প্রযুক্তি ও প্রযুক্তিবান্ধব নারী

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৫১



ইউরোপ-আমেরিকায় রাস্তাঘাট, বাজার, অফিস-আদালত, সিনেমা-পার্ক, যানবাহন ইত্যাদি তৈরি করা হয় বৃদ্ধ, শিশু, গর্ভবতী, প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ ব্যক্তিদের বিষয়টি মাথায় রেখে, যাতে তাদের চলাফেরা সহজসাধ্য হয়। আমাদের দেশে সেসবের বালাই নেই। জেন্ডার শব্দটি প্রয়োগ করলেই অনেকে ভাবেন, এতে কেবল নারীর অধিকারের কথা বলা হচ্ছে। আসলে জেন্ডার-সমতা নারী-পুরুষ উভয়ের সমানাধিকারে সোচ্চার। যে সমাজ নারীকে দ্বিতীয় লিঙ্গ বা অধস্তন বিবেচনা করে, সে সমাজের জন্যই জেন্ডার-সমতার প্রয়োজনীয়তা। জেন্ডার ধারণা সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগে সব দেশেই কেবল পুরুষদের সুবিধার কথা পরিকল্পনা করে বিভিন্ন স্থাপনা, যানবাহন এমনকি পোশাকও প্রস্তুত করা হতো। প্রাকৃতিক দুর্যোগকবলিত আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে খোলা পায়খানা তৈরি করা হতো। বড় বড় বাজারে নারীর জন্য আলাদা টয়লেটই ছিল না, কাপড় পাল্টানো বা স্তনদানের জন্য সংরক্ষিত পরিসর পাওয়া তো দূরের কথা। অনেকে যাঁরা জেন্ডারবৈষম্য বোঝেন না বা বুঝতে চান না, তাঁরা গলাবাজি করেন, ‘এত সমতা সমতা করেন তো আবার সংরক্ষণ চান কেন?’ কিন্তু জেন্ডার স্টাডি নারী-পুরুষের শারীরিক পার্থক্যকে মেনে নিয়ে সামাজিক পার্থক্য নিরসনের কথা বলে। নারীর শারীরিক গঠন ও চাহিদা পুরুষের থেকে ভিন্ন। জেন্ডারবৈষম্য দূর করা মানে নারীর পুরুষ হয়ে ওঠা নয়।

পা-চালিত সেলাই মেশিন একসময় পুরুষ দরজিরা ব্যবহার করতেন। মেয়েদের জন্য হাত-চালিত এল। মেয়েরা যদি তা ব্যবহার করতেই চান, তবে তা খানিকটা আলাদা ও মেয়েলি হতে হবে। বলা হলো, পা দিয়ে চালালে মেয়েদের জরায়ুতে চাপ পড়বে এবং সন্তান প্রসবে অসুবিধা হবে। ওদিকে মেয়েরা মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে এক হাতে সেলাইয়ের কাপড় ধরে অন্য হাতে চাকা ঘোরাতে গিয়ে কোমরের ব্যথায় ভুগতে লাগলেন। কিছুদিন পর তা টেবিলে রেখে চেয়ারে বসে চালালেন। সেলাই করা কাপড়ের চাহিদা বাড়তে লাগল কিন্তু হাতে চালিয়ে দ্রুততর হচ্ছিল না। শেষমেশ পা-ই ভরসা। দুটি সন্তান যথেষ্ট, একটি হলে ভালো—বলেও জন্মহার বৃদ্ধি ঠেকানো যায়নি। আর এখন সময়ের প্রয়োজনে পোশাকশিল্প কারখানায় লাখ লাখ নারীকে বিদ্যুচ্চালিত সেলাই মেশিনে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। জেন্ডার ও প্রযুক্তির বিষয়ে আলোচনার সময় অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলছিলেন, ‘আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে আমাদের তৈরি পোশাকশিল্প কারখানা, যেখানে ৯০ ভাগই নারী শ্রমিক। কিন্তু দুঃখের বিষয়, কারখানার যন্ত্রপাতির সবগুলোই নারীবান্ধব নয়। নারীর শারীরিক গঠন, বিশেষ করে সন্তানসম্ভবা নারীর জন্য তা মোটেই উপযোগী নয়।’

নারী বিজ্ঞানীরা সন্তান লালনের জন্য প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। যেমন বেবি জগার, তিন চাকার স্ট্রলার, ট্যাম্পুন, ফিডার, দোলনা, টিথার ইত্যাদি। এ উদ্ভাবন কেবল তরুণী মাকেই স্বস্তি দেয়নি, বিশ্বে এসব পণ্যের একটি বিরাট বাজারও তৈরি হয়েছে, যা অর্থনীতিকেও চাঙা করছে।

বারবারা নামের একজন বিবাহিত এক সন্তানের মা পূর্ব জার্মানির এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটারবিজ্ঞানে ডিপ্লোমা করলেন। তিনি পশ্চিম জার্মানির একটা আইটি সেক্টরে চাকরি পেলেন। সেখানে ১৫০ জন কর্মচারীর মধ্যে মাত্র পাঁচজন নারী। তিনি একে তো নারী, তার ওপর পূর্ব জার্মানি থেকে আসা বলে পুরুষ সহকর্মীরা তাঁর সঙ্গে অসহযোগিতা শুরু করলেন। কিন্তু গ্রাহকেরা তাঁকে খুব পছন্দ করতেন। বারবারা অসহায় বোধ করতে লাগলেন। তখন তাঁর মায়ের একটি উপদেশ মনে পড়ল ‘কারোর ওপর নির্ভর করবে না। যদি তুমি কিছু করতে চাও, তবে তোমার নিজেকেই তা অর্জন করতে হবে।’ পরে বারবারা কেবল একজন দক্ষ সফটওয়্যার ডিজাইনারই হয়ে ওঠেননি, তিনি একজন সফল বিশেষজ্ঞ হিসেবে আমেরিকার বিভিন্ন সেমিনারে আইটি সেক্টরে নারীদের আরও এগিয়ে আসতে অনুপ্রাণিত করে চলেছেন।

ইলেকট্রনিকস ও ডিজিটালাইজেশনের অভাবনীয় সাফল্যের ফলে যন্ত্র চালনার ক্ষেত্রে পেশিশক্তি ব্যবহারের যুগ শেষ হলেও পুরুষের আধিপত্য বিস্তারের মানসিকতা একেবারে মরে যায়নি। নারীও অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের মনন থেকে পুরুষের শ্রেষ্ঠত্বকে বিদায় জানাতে পারেননি। কিন্তু প্রযুক্তি নিজের প্রয়োজনে এতটাই বুদ্ধিভিত্তিক যন্ত্রে পরিণত হচ্ছে যে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তা জেন্ডার-সমতা সঙ্গে নিয়েই আবির্ভূত হতে পারে। সুতরাং, নারীকেও যদি উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে অপরিহার্য করে তুলতে হয়, তবে তাঁকে প্রযুক্তিবান্ধব করে তোলার জন্য জেন্ডারবান্ধব প্রযুক্তির বিকল্প নেই।

[ছবিঃ ইন্টারনেট।]
[পোষ্টটি লিখেছেন- কথাসাহিত্যিক উম্মে মুসলিমা।আজকের প্রথম আলোর পত্রিকার মতামত বিভাগে লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে।]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০১

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: অতি মুল্যবান একটি নিবন্ধ ।
উপসংহারের সাথে সহমত
প্রযুক্তি নিজের প্রয়োজনে এতটাই বুদ্ধিভিত্তিক যন্ত্রে পরিণত হচ্ছে যে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তা জেন্ডার-সমতা সঙ্গে নিয়েই আবির্ভূত হতে পারে। সুতরাং, নারীকেও যদি উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে অপরিহার্য করে তুলতে হয়, তবে তাঁকে প্রযুক্তিবান্ধব করে তোলার জন্য জেন্ডারবান্ধব প্রযুক্তির বিকল্প নেই

শুভেচ্ছা রইল ।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:২৬

জিসান অাহমেদ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.