নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আকতারুর্জ্জামান00

আমি নতুন

আকতারুর্জ্জামান00 › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রতিবেশী ভারতে বাংলাদেশ নিয়ে জরুরি কথা - 2q ce

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৩০



বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আরেকটি দেশের নাম বলা দরকার। পাকিস্তান বাংলাদেশে গণহত্যা করেছিল। তাদের যুদ্ধাপরাধীদের এখনো বিচারের আওতায় আনা হয়নি। এখন পর্যন্ত পাকিস্তান তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করেনি, উল্টো নানা ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে। তার পরও পরিষ্কার করে বলতে হবে যে পাকিস্তান মানেই নির্যাতক সামরিক জান্তা নয়। পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কৃষক-শ্রমিক-গরিব-নারী-পুরুষ-শিশু-শিক্ষার্থী নিজেরাও পাকিস্তান রাষ্ট্রের নিপীড়ন, নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার। সেখানে সিন্ধু, বেলুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ এখনো স্বাধীনতার চিন্তা লালন করছে। ভারতের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। অরুন্ধতী রায়ের হিসাবে, ভারতের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অঞ্চল এখন সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, বাংলাদেশে ভারতবিরোধী ক্ষোভ তৈরি হয়েছে সেই শাসকশ্রেণীর বিরুদ্ধেই। এটাই দুই দেশের মানুষের ঐক্যের জায়গা।

কিন্তু রাষ্ট্র ও জনগণকে কি সব সময় আলাদা করে দেখা সম্ভব? বিশেষত বেশি শক্তিশালী রাষ্ট্র যখন তুলনামূলকভাবে দুর্বল দেশের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে নিয়োজিত থাকে, তখন ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মানুষের পক্ষে এ রকম বিভাজন করা কঠিন হয়। তা ছাড়া শক্তিশালী দেশ নিজ দেশের জনগণকে যেমন অজ্ঞতা, তথ্য গোপন বা বিকৃত করে বিভ্রান্তির মধ্যে আটকে রাখতে চেষ্টা করে, তেমনি চেষ্টা করে সীমান্তের বাইরের জনগণের সঙ্গে দেশের মানুষের যোগাযোগের সুযোগ যতটা সম্ভব কম রাখতে। কলকাতা ও দিল্লির আলোচনায় তাই জোর দিয়ে বললাম, ভারতের জনগণ বাংলাদেশে ভারতের আধিপত্যবাদী অন্যায় তৎপরতার বিরুদ্ধে সরব হলে বাংলাদেশের মানুষও বুঝতে পারবে, ভারতের জনগণ তাদের সরকার বা প্রভাবশালী গোষ্ঠীর অন্যায় কাজের শরিক নয়। রামপালে যখন ভারতের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান উচ্চ মুনাফা নিশ্চিত করতে শুধু বাংলাদেশের নয়, মানবসমাজের স্থায়ী ক্ষতি করতে উদ্যত, তখন ভারতের সজাগ মানুষ নীরব থাকলে পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন সম্ভব হবে না। বললাম, আপনারা যদি রামপাল প্রকল্প, সীমান্ত হত্যা, ট্রানজিট নিয়ে গোপন চুক্তি, টিপাইমুখ বাঁধ, নদী চুক্তি নিয়ে টালবাহানা, অসম বাণিজ্য ইত্যাদির প্রতিবাদ করেন, তাহলে বাংলাদেশের মানুষ তার বন্ধু ভারতের অস্তিত্ব উপলব্ধি করতে পারবে।

ভারতের শাসকশ্রেণীর এসব তৎপরতাকে পুঁজি করে বাংলাদেশে ধর্মপন্থী সাম্প্রদায়িক রাজনীতি বিস্তারের চেষ্টা বরাবরই শক্তিশালী। ভারতে মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা বাংলাদেশের রাজনীতিতে নানাভাবে ভূমিকা রাখে। ভারতের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির কৌশলও তা-ই। কিন্তু ভারত মানেই কেবল হিন্দু নয়, বাংলাদেশ মানেই কেবল মুসলমান নয়। ধর্মীয় পরিচয় দিয়ে রাষ্ট্রের আধিপত্যের ব্যাকরণ নির্ধারিত হয় না। নেপাল হিন্দুপ্রধান রাষ্ট্র হলেও ভারতের কাছে তার অবস্থানের উন্নতি হয়নি। ভারতের নির্যাতিত মানুষের সংখ্যাগরিষ্ঠই হিন্দুধর্মাবলম্বী, পাকিস্তানে তারা মুসলমান। ধর্মের কারণে তাদের পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ধর্মপন্থী রাজনীতি বস্তুত স্বধর্মের মানুষকেই শৃঙ্খলিত করে প্রথম।

ভারতে বিভিন্ন আলোচনায় বাংলাদেশে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ওপর নিপীড়ন ও সহিংসতার বিষয়টি ঘুরে ঘুরে আসে। ২০১৩ সালে দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হতবাক করে বাংলাদেশের মানুষকে, আর বিজেপির হাতে তুলে দেয় নির্বাচনী অস্ত্র। ২০১৪ সালে একতরফা নির্বাচনের পর আবারও বেশ কয়েকটি স্থানে সহিংসতা দেখা যায়। ভারতের রাজনীতিতে সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় উন্মাদনার প্রধান সংগঠন বিজেপি বাংলাদেশের এ সহিংসতাকে তাদের রাজনৈতিক পুঁজি করে ঢাকা অভিমুখী লংমার্চের কর্মসূচিও দেয়।

বস্তুত ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জাতিগত, বর্ণগত, শ্রেণীগত, লিঙ্গীয় ও আঞ্চলিক বৈষম্য-নিপীড়নের শিকার। দারিদ্র্য, সহিংসতা, নিরাপত্তাহীনতায় জর্জরিত। সামরিকীকরণে শৃঙ্খলিত ভারতের বিশাল খনিসমৃদ্ধ অঞ্চল। আরেক ভারত শাইনিং—দক্ষিণ এশিয়া থেকে আফ্রিকা পর্যন্ত আধিপত্য বিস্তারে ব্যস্ত; নিজ দেশের মানুষের জীবন ও পরিবেশের বিনিময়ে বিপুল সম্পদ কেন্দ্রীভবন করা ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী। মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন ও ধর্মীয় উন্মাদনার মাধ্যমে যে বিজেপি বর্তমানে ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বী, তারা এ গোষ্ঠীর বিশেষ আস্থাভাজন হয়ে উঠেছে। পশ্চিমা বহুজাতিক পুঁজিও তাদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। কংগ্রেসের ভোটের রাজনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি বিপর্যস্ত, দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক নীতির কারণে বিক্ষুব্ধ জনগণ। একই পরিস্থিতি বাংলাদেশেও।

কোন ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাংলাদেশকে নিরাপদ করবে? যে শাসকশ্রেণী নিজ দেশের মানুষকে নিপীড়িত রাখে, তাদের পক্ষে অন্য দেশকে বিপর্যস্ত করা ছাড়া আর কী সম্ভব? দক্ষিণ এশিয়াকে জনগণের জন্য এক সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা খুবই সম্ভব। তার জন্য প্রতারিত ও নিপীড়িত জনগণের মধ্যে সংহতি গড়ে তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজ নিজ দেশে সাম্প্রদায়িকতা, বৈষম্য, নিপীড়ন ও মানববিধ্বংসী প্রকল্পবিরোধী লড়াইয়ের পাশাপাশি সীমান্ত ছাড়িয়ে জনগণের স্বার্থের ঐক্যসূত্রকে স্পষ্ট করতে নানামুখী উদ্যোগ তাই জরুরি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.