নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আকতারুর্জ্জামান00

আমি নতুন

আকতারুর্জ্জামান00 › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেঁদোনা মা বিজয় আসবেই

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৩১

কেঁদোনা মা বিজয় আসবেই

বাংলার আকাশে-বাতাসে আজ লাশ আর বারুদের গন্ধ। রাস্তা-ঘাট, বনে-জঙ্গলে, ডোবা-নালায়, নদীতে প্রতিদিন পাওয়া যাচ্ছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জীব আশরাফুল মাখলুকাতের।

কেঁদোনা মা বিজয় আসবেই।


বাংলার আকাশে-বাতাসে আজ লাশ আর বারুদের গন্ধ। রাস্তা-ঘাট, বনে-জঙ্গলে, ডোবা-নালায়, নদীতে প্রতিদিন পাওয়া যাচ্ছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ জীব আশরাফুল মাখলুকাতের মৃতদেহ। রাতের অন্ধকারে বন্দুকের একটি আওয়াজ মানেই অজানা এক আতংক। না জানি ক্রসফায়ারের নামে ঝড়ে পড়লো কোন তাজা প্রাণ? আজীবনের জন্য নিভে গেল কোন উজ্জল প্রদীপ! এটি কোন সভ্য সমাজে কল্পনা করা যায় না। এ যেন কোন মায়ের নাড়ী ছেড়া সন্তানের বুকে গুলি যাজরা করা মৃত লাশের খবর!। কোন স্ত্রীর বিধাবা হওয়ার এক মহা-দু:সংবাদ। এতিম সন্তানেরা পৃথিবীতে বাবা বলে আর কাউকে ডাকতে না পারার পরিসমাপ্তি। বুলেট কেড়ে নিলো ঢাকা কলেজের অনার্সের মেধাবী ছাত্র এমদাদ উল্যাহ, ভিক্টোরিয়া কলেজের মেধাবী ছাত্র শাহাব উদ্দিন পাটোয়ারী, মেধাবী ছাত্র জসিম উদ্দিন, শিক্ষক সাইদুর রহমান, অধ্যপিক শাহীন,চট্রগাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র সাকিবুল হাসান সহ অনেকের স্বপ্নকে। কিন্তু এর কোন জবার আছে কি আমাদের রাষ্ট্রের কাছে? ক্রসফায়ারের খবর শুনলেই যেন বুক কেঁপে উঠে। প্রিয়জনের সন্ধানে হাসপাতালের মর্গে কিংবা অজ্ঞাতনামা লাশের মিছিলে খোঁজাখুজি। বুলেট আর পেট্রোল বোমার আঘাতে এ জনপদে লাশের মিছিল এখন অনেক দীর্ঘ। এর কি নেই কোন উত্তর? নেই কোন সমাধান?

এই জনপদে এখন নুনের চেয়ে খুনের দাম অনেক কম। যা প্রতিদিন দেশী-বিদেশী মিডিয়ায় তা প্রচারিত হচ্ছে। যাদের হত্যা করা হচ্ছে তাদের বেশীর ভাগই বিরোধী দলের নেতা-কর্মী। এদের মধ্যে রয়েছে সমাজের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও। জনপ্রিয় নিবাচিত ওয়ার্ড কমিশনার এ্যাড; ইমরুল কায়েসও এর শিকার। অনেকেই আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সেরা ছাত্র। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র সাহাবুদ্দীন, সবার এই প্রিয় মানুষটিকে বুলেট দিয়ে যাযরা করে ঘাতকেরা গাড়ীর চাকার নীচে ফেলে দু,পা থেতলে দিয়েছে। ক্রপ সায়েন্সের সেরা ছাত্র সাহাবুদ্দীন হয়তো হতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা রাষ্ট্রের উজ্জল কোন নক্ষত্র। মেধাবী ছাত্রী সাদিয়া চেয়েছিল মেডিকেলে ভর্তি হয়ে ডাক্তার হয়ে জাতির সেবায় আত্ম নিয়োগ করবে। কিন্তু নিয়তি তাদের মত অসংখ্য মেধাবী তরুণদের সব সুযোগই যেন কেড়ে নিল। একটি বুলেটের আঘাতে চুরমার করে দিচ্ছে সকল স্বপ্নকে। তাহলে প্রশ্ন আমরা কি ফিলিস্তিন কিংবা আফগান রাষ্টের নাগরিক? এখানে কি যুদ্ধ চলছে?

সিরাজ সিকদারকে ক্রসফায়ারে দিয়ে আওয়ামীলীগ যে গল্পের সূচনা করেছে তা আজো চলছে। বিএনপি ক্ষমতায় এসে নিজদলের এবং সন্ত্রাসীদের ক্রসফায়ারের প্রচলন প্রবর্তন করে। অবশ্য আওয়ামীলীগ সে সময় এর খুব বিরোধীতা করলেও ক্ষমতায় বিরোধী দল দমনে ক্রসফায়ারের ব্যবহার করছে পুরোদমে। আর বিএনপি এখন দিচ্ছে তার খেসারত। তাই কোন অন্যায়কেই নিজেদের প্রয়োজনে কখনো হালাল ভাবা উচিৎ না। মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বলা হয়েছে “যে অন্যায়ভাবে একজন মানুষকে হত্যা করলো, সে যেন গোটা মানব জাতিকেই হত্যা করল।

আমাদের কাছে একটি মৃত্যুর খবর কিংবা একদিনের জানাযায় উপস্থিতি। কিন্তু যারা আপনজন হারানোর বেদনা বয়ে বেড়ান আজীবন, তারা বুঝে আপনজন হারানোর বেদনা কত কঠিন, কত মর্মান্তিক? চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র সাকিবুল হাসান সাত বোনের মধ্যে একমাত্র প্রিয় ভাইকে হারিয়ে সাকিবের বড় বোন তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন- “পৃথিবীতে এসেছিস সবার শেষে, কিন্তু চলে গেলি সবার আগে। কিসের এতো তাড়া ছিল তোর? জান্নাতের মেহমান হওয়ার? তোর এই ছোট্ট জীবনে সব কাজেই তুই ফার্স্ট ছিলি, মাদরাসা, সংগঠন, খেলাধুলা, পড়াশুনা সব কিছুতেই। তাইতো তুই এই কাজেও ফার্স্ট হয়ে গেলি। ভাইয়া, স্বার্থপরের মতো চলে যাওয়ার আগে একবারও ভাবলিনা আমাদের কথা, তোর বুড়ো মার কথা। ভাবলিনা তোকে ছাড়া আমরা কিভাবে থাকবো?? ভাববিইবা কেন!! এই নোংরা কদর্য পৃথিবী তো তোর মতো পবিত্র মানুষের মূল্য দেয়না। তবুও... ভাইয়া স্বপ্নেও তো ভাবিনি তোকে এতো তাড়াতাড়ি বিদায় জানাতে হবে!! এভাবে চলে যাবি সবাইকে কাঁদিয়ে। বুঝতেই পারিনি তোর এই ছোট্ট জীবনে তোর এতো অর্জন!!! টেরও পেলামনা কখন তুই এতো এতো মর্যাদার অধিকারী হয়ে গেলি!!! হাজার-হাজার মানুষ আজ তোর জন্য কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে। ছুটে এসেছে তোকে শেষ বারের মতো এক নজর দেখতে!!! সবার মুখে শুধু তোর কৃতিত্বের কথা। ভাইয়া, তুইতো আর ফিরে আসবিনা এই নোংরা পৃথিবীতে, তবে মাঝে মাঝে এসে মা কে দেখে যাস। মা খুব কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু ধৈর্য ধারন করছে শুধুমাত্র শহীদের মা হিসেবে যেন হাশরের মাঠে পরিচিত হতে পারে এই আশায়। ভাইয়া জান্নাতে আমাদের ছেড়ে একা একা যাসনে। তুই শহীদ। আমরা তোর গর্বিত বোন।" - হুরে জান্নাত

শাহাদাত হোসেনের চার বছরের এক অবুঝ শিশু আজও চেষ্টা করে যাচ্ছে তার আব্বুকে কবর থেকে বাড়ি নিয়ে যাবার। এক ব্যর্থ চেষ্টা শাহাদাত ভাই যখন মারা যান, তার শিশু ছেলে সাইমুম কে সবাই বলেছিল তোমার আব্বু এখন ঘুমিয়ে আছে, ঘুম ভাংলেই আবার তোমার কাছে আসবে। যখন শাহাদাত ভাই কে কবরে শেষ বিদায় দিয়ে সবাই ফিরছিলো তখন শিশুটি বলছিল- “আমার আব্বুকে তোমরা এখানে রাখছ কেন, আব্বু যে ভয় পাবে? আব্বু কি এখানে ঘুমাবে? আব্বুকে বাড়িতে নিয়ে চলো, আমার খাটে আব্বু ঘুমাবে? তাই তো কবরের বেড়া ধরে ঝাকাচ্ছে ও তার আব্বুকে ডাকছে। এ রকম অসংখ্য সাইমুম আজ বারা হারা। আমাদের রাষ্ট্র কিংবা সমাজ এর কি জবাব দেবে? তার বাবা কোথায়? তার মা এই শিশুটি বড় হলে কি জবাব দেব? কি জবাব দেবে সেই হত্যা কারীরা? যারা এই অবুঝ শিশুটিকে এতিম করল। দুনিয়ার আদালতে তাদের বিচার না হলেও মহান আল্লাহ আদালত থেকে তারা রেহাই পাবে না।

আইন শৃংঙলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে আজ লক্ষ-লক্ষ মায়ের সন্তানেরা আজ বাড়ী-ঘর ছাড়া। প্রতিটি মুহুর্তে লাশের মিছিল অনেক দীর্ঘ হচ্ছে। সন্তান হারা পিতা-মাতার আহাজারি, ভাই হারা বোনের আর্তনাদ, পিতা হারা সন্তানের করুন চাহনী, মা হারা সন্তানের অব্যক্ত বেদনা বাংলার আকাশ বাতাসকে প্রকম্পিত করছে। এবার লাশের তালিকায় যোগ হচ্ছে সমাজের শ্রেণী পেশার মানুষ। বৃদ্ধ বণিতা এমনকি অনেক নিষ্পাপ শিশু ও মাতৃগর্ভের শিশু্ রেহাই পায়নি জালেমের বুলেটের আঘাত থেকে। এতিম সন্তান পিতার অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছে কখন যে বাবার আবার ফিরে আসবে। অনেক মায়েরা রাত জেগে জেগে সন্তানের জন্য আল্লাহর দরবারে চোখের পানিতে বুক ভাসাচ্ছেন। অনেকে উপার্জনক্ষম বাবা-ভাইকে হারিয়ে এখন প্রায় পাগল পারা। অনেক খেটে খাওয়া মানুষের একমাত্র সম্বল হারিয়ে এখন পথের ভিখারী। আবার গুম হয়ে যাওয়া আত্মীয় স্বজনেরা কোথায় ও লাশের খবর ফেলেই ছুটে যান মর্গে অথবা হাসপাতালে। লাশটা ফেলে অন্তত কবরের পাশে দাঁড়িয়ে যেন দোয়া করতে পারেন পেতে চান অন্তত সেই সুযোগটুকু।

বাংলাদেশে এখন বেওয়ারিশ লাশের স্তুপ দিন দিন বাড়াছে। এটি মানবতার জন্য বড়ই অবমাননাকর। কিন্তু অনেকের ভাগ্যে লাশটিও জুটছেনা। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র অলি উল্যাহ আর মোকাদ্দাস,চৌধূরী আলম, মিঠাপুকুরের নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান আবুল বাসেত,আর ইলিয়াস আলী আজ ও ফিরেনি। এ রকম হাজারো গুম-খুন, রিমান্ডের নামে নির্যাতন, পঙ্গু হাতহারা-চোখ হারাদের সারি এখন অনেক দীর্ঘ। কিছুতেই যেন তা আর থামছেনা। দেশীয়-আন্তজার্তিক কোন সমালোচনাই যেন আওয়ামী শাসক গোষ্ঠী তোয়াক্কাই করছেনা। তাহলে এর অবসান আসলে কবে হবে? কবে বন্ধ হবে এই কান্নার আওয়াজ? কবে বন্ধ হবে হুংকার আর নিষ্ঠুরতা। আল্লাহ বলেন- আর যারা আল্লাহর পথে নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো না। এই ধরনের লোকেরা আসলে জীবিত। কিন্তু তাদের জীবন সম্পর্কে তোমাদের কোন চেতনা থাকে না। (২:১৫৪) আল্লাহ বলেন -যারা আল্লাহর ও তাঁর রসূলের প্রতি ঈমান এনেছে তারাই তাদের রবের কাছে সিদ্দীক ও শহীদ বলে গণ্য। তাদের জন্য তাদের পুরস্কার ও নূর রয়েছে। আর যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতকে অস্বীকার করেছে তারাই দোযখের বাসিন্দা। (৫৭:১৯)

হযরত রাশেদ বিন সাদ জনৈক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন। কোনো এক ব্যক্তি রাসূলূল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! কবরে সকল মুমিনের পরীক্ষা হবে, কিন্তু শহীদের হবে না, এর কারণ কী? হুজুর (সা.) জবাবে বলেন, তার মাথার ওপর তলোয়ার চমকানোই তার পরীক্ষার জন্য যথেষ্ট। হযরত উম্মে হারেসা বিনতে সারাকা থেকে বর্ণিত, “তিনি হুজুর (সা.) এর দরবারে এসে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনি কি হারেসা সম্পর্কে কিছু বলবেন না? জঙ্গে বদরের পূর্বে একটি অজ্ঞাত তীর এসে তাঁর শরীরে বিঁধে যায় এবং তিনি শহীদ হন। যদি তিনি জান্নাতবাসী হয়ে থাকেন তাহলে আমি সবর করবো, অন্যথায় প্রাণ ভরে কাঁদব। হুজুর (সা.) জবাব দিলেন, হারেসার মা, বেহেশতে তো অনেক বেহেশতবাসীই রয়েছেন, তোমার ছেলে তো সেরা ফেরদাউসে রয়েছেন।

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর লগি-বৈঠার তান্ডব, বিডিয়ার হত্যাকান্ড, শাপলা চত্বর ট্রাজেডি, হয়ে আজও প্রতিনিয়ত খুন হচ্ছে মানুষ। কিন্তু এসকল মানুষের রক্ত বৃথা যাবে না। এ মানুষের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে বিজয় আসবেই। আওয়ামীলীগ আজ মানুষের রক্তের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছে। ইনশাল্লাহ কোন ষড়যন্ত্রই করে তারা কিনার খুঁজে পাবেনা। আজ এক শোকাহত মা বেগম খালেদা জিয়া সন্তান হারানোর বেদনাকে শক্তিতে পরিণত করে দেশের মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করছে। অসংখ্য মায়েরা তাদের প্রিয় সন্তান হারিয়ে প্রায় পাগলপারা। তাই তোমরা আর কেদোঁনা মা। রক্তের বিনিময়ে বিজয় আসবেই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.