নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলি আশরাফ

আলি আশরাফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

লাহোর প্রস্তাব এবং ৬ দফা

২১ শে নভেম্বর, ২০১০ সকাল ৯:৫২



৬ দফার প্রণেতা শেখ মুজিবুর রহমানের একটি লেখার শিরোনাম-“আমাদের বাঁচার দাবি ছয় দফা”। এই লেখায় তিনি ৬ দফার দফাওয়ারী আলোচনা করেছেন। ছয় দফার এক নম্বর দফা সম্পর্কে তিনি বলছেন, “এই দফায় বলা হইয়াছে যে, ঐতিহাসিক লাহোর-প্রস্তাবের ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনা করত: পাকিস্তানকে একটি সত্যিকার ফেডারেশন রূপে গড়িতে হইবে।” শেখ মুজিবের এ কথা থেকে বোঝা যায় “কায়দে আজম”-এর দ্বিজাতিতত্ত্বের লাহোর প্রস্তাবের সাথে ৬ দফা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ৬ দফা সাম্প্রদায়িক লাহোর প্রস্তাবের থেকে নতুন কিছু নয়।

তিনি আরও বলছেন, “ইহাতে আপত্তির কি আছে? লাহোর-প্রস্তাব পাকিস্তানের জনগণের নিকট কায়দে-আজমসহ সকল নেতার দেওয়া নির্বাচনী ওয়াদা।........... কাজেই আজ লাহোর-প্রস্তাবভিত্তিক শাসনতন্ত্র রচনার দাবি করিয়া আমি কোনও নতুন দাবি তুলি নাই; পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের পুরান দাবিরই পুনরুল্লেখ করিয়াছি মাত্র। তথাপি লাহোর-প্রস্তাবের নাম শুনিলেই যাঁরা আৎকিয়ে উঠেন, তাঁরা হয় পাকিস্তান-সংগ্রামে শরিক ছিলেন না, অথবা পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণের দাবি-দাওয়ার বিরোধিতা ও কায়েমী স্বার্থীদের দালালি করিয়া পাকিস্তানের অনিষ্ট সাধন করিতে চাহেন।”

শেখ মুজিবের নিজের দাবি হচ্ছে, ৬ দফায় নতুন কিছু নেই। শেখ মুজিব পাকিস্তান আন্দোলনে শরিক হিসেবে কায়দে-আজম নির্দেশিত লাহোর-প্রস্তাবের ভিত্তিতে মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র পাকিস্তানকে মজবুত ও শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যেই ছয় দফার পুনরুল্লেখ করেছেন মাত্র। ছয় দফায় অসাম্প্রদায়িক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নেই। কী আছে? শেখ মুজিব বলছেন,

“এমনি উদারতা, এমন নিরপেক্ষতা, পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের মধ্যে এমন ইনসাফ-বোধই পাকিস্তানী দেশপ্রেমের বুনিয়াদ। এটা যার মধ্যে আছে কেবল তিনিই দেশপ্রেমিক। যে নেতার মধ্যে এই প্রেম আছে, কেবল তিনিই পাকিস্তানের উভয় অঞ্চলের উপর নেতৃত্বের যোগ্য। যে নেতা বিশ্বাস করেন, দুইটি অঞ্চল, দুইটি অঞ্চল আসলে পাকিস্তান রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় দেহের দুই চোখ, দুই কান, দুই নাসিকা, দুই পাটি দাঁত, দুই হাত, দুই পা; যে নেতা বিশ্বাস করেন পাকিস্তানকে শক্তিশালী করিতে হইলে এই সব জোড়ার দুইটিকেই সমান সুস্থ ও শক্তিশালী করিতে হইবে; যে নেতা বিশ্বাস করেন পাকিস্তানের এক অঙ্গ দুর্বল হইলে গোটা পাকিস্তানই দুর্বল হইয়া পড়ে; যে নেতা বিশ্বাস করেন ইচ্ছা করিয়া বা জানিয়া শুনিয়া যারা পাকিস্তানের এক অঙ্গকে দুর্বল করিতে চায় তারা পাকিস্তানের দুশমন; যে নেতা দৃঢ় ও সবল হস্তে সেই দুশমনদের শায়েস্তা করিতে প্রস্তুত আছেন, কেবল তিনিই পাকিস্তানের জাতীয় নেতা হইবার অধিকারী। কেবল তাঁরই নেতৃত্বে পাকিস্তানের ঐক্য অটুট ও শক্তি অপরাজেয় হইবে। পাকিস্তানের মত বিশাল ও অসাধারণ রাষ্ট্রের নায়ক হইতে হইলে নায়কের অন্তরও হইতে হইবে বিশাল ও অসাধারণ।”

মন্ত্রসাধকদের এক মাত্র ভরসা মন্ত্র কেউ বুঝে না। গাফ্ফার চৌধুরী, মুনতাসীর মামুন, আবেদ খান, আব্দুল মোমেন, এবি মুসা, শাহরিয়ার কবীর প্রমুখ ৬-দফাসাধকদেরও এক মাত্র ভরসা কেউ ৬ দফা পড়ে না, কেউ ৬ দফার জনকের ব্যাখ্যাও জানে না।

কিছু মুসলমান আছেন, যাঁরা “ইন্টারেস্ট” নিতে অসুবিধা বোধ করেন না কিন্তু “সুদ” তাঁদের কাছে অসহনীয়। একইভাবে, আমরা দেখতে পাচ্ছি কিছু ব্যক্তি আছেন যাঁরা “কায়দে-আজম”, “পাকিস্তান”, “দ্বিজাতিতত্ত্ব”, “লাহোর-প্রস্তাব” ইত্যাদি শোনা মাত্র খিস্তিখেউর করতে থাকেন কিন্তু তাঁরাই “জাতির জনক”, “ছয় দফ"-কে ভক্তি গদগদ হয়ে প্রণাম করে থাকেন। কিন্তু আমরা শেখ মুজিবুর রহমানের “আমাদের বাঁচার দাবি ছয় দফা- প্রবন্ধে দেখতে পেলাম- মুসলিম লীগ, কায়দে-আজম, দ্বিজাতিতত্ত্ব, লাহোর-প্রস্তাব, পাকিস্তান, শেখ মুজিব, ছয় দফা ইত্যাদি একই নদীর বিভিন্ন ঘাট। দ্বিজাতিতত্ত্ব যে নদীর উজানের ঘাট, ছয় দফা সে নদীরই ভাটির ঘাট। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর ছয় দফাকে সদা সর্বদা সাষ্টাঙ্গ প্রণিপাত হয়ে প্রণামরত গাফ্ফার চৌধুরী, মুনতাসীর মামুন, আবেদ খান, শাহরিয়ার কবির, কবির চৌধুরীদের জাতির জনক কায়দে আজম ও তাঁর দ্বিজাতিতত্ত্ব, লাহোর-প্রস্তাবকে উচ্চকণ্ঠে নিন্দা ধ্বনির চেয়ে অধিক কৌতুককর আর কী হতে পারে? ২৮/৬/০৮

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.