![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কল্পনার জগতে বিচরণকারী বাস্তবতার মূর্ত প্রতীক
একটা মেয়েকে সুন্দর সাজতে কত্ত কিছুই করার লাগে, না?
পাউডার মাখাতে হয়, কাজল দিতে হয়, মাসকারা দিতে হয়, আই লাইনার দিতে হয়, আই শ্যাডো দিতে হয়, ঠোঁটে ঘষতে হয়, নাকে ঘষতে হয়। আরো কি কি জানি করতে হয়। নাজনীন অত নাম জানে না। কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হত নাজনীনের হয়তো জানা উচিত ছিল। নাজনীনের মনে আছে, ১২ বছর বয়সে তাকে তার খালা ফেয়ার এন্ড লাভলী কিনে দিয়েছিল, বলেছিল, এটা লাগাও। ফর্সা হবে। ফুপু প্রায়ই হলুদ-দুধ ইত্যাদি দিয়ে বিশ্রী গন্ধওয়ালা একটা থকথকে কিজানি বানিয়ে এনে ওর মুখে মাখিয়ে দিত। এতে নাকি ত্বক আরো উজ্জ্বল হবে।
ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছে, কালো মেয়ের বিয়ে কি করে হবে। প্রায় একটা সময় পর্যন্ত তো নাজনীন বিশ্বাস করে বসেই ছিল, কালো মেয়ের বিয়ে হয় না, তাই সে অনেক অভাগী।
বিমানে বসে সুন্দরী বিমানবালা দের দেখতে দেখতে নাজনীন এত সব ভাবে। তার টিন এজ লাইফ কেটে গেছে, গায়ের রঙের চিন্তায়। সে পরীক্ষায় সবচে বেশি নাম্বার পেত, ছবি আঁকতে জানতো খুব সুন্দর; কিন্তু ওসব ছাপিয়ে সে কালো – এই আলোচনাই বেশি শুনেছে। সে পড়াশুনা করতো নিজের মনের আনন্দে। কিন্তু তাকে তার বাবা আড়ালে তার মা কে বলতো, মেয়েকে ভাল করে পড়াশুনা করাও। নাহলে বিয়ে দিব কি করে? নাজনীন জানে, নাজনীনের নিজের থেকে নাজনীনের মা কে গঞ্জনা শুনতে হয়েছে বেশি। এখন ভাবতে হাসি আসে, কয়েকটা রাসায়নিক যৌগের কারনে তার জীবনের কত ঘটনা কত দিকে মোড় নিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে নাজনীন প্রেম করেছিল। নাজনীন শিখেছিল, কালো মেয়েদের ও ছেলেরা ভালবাসতে পারে। কিন্তু সেই ছেলেটির বিয়ে ঠিক হয়ে যায় অন্য আরেকটি মেয়ের সাথে। ছেলেটি অজুহাত দিয়েছিল, “মা কালো মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দেবেন না”।
তবে নাজনীনের পরিবারের সদস্যদের কারনে যেমন নাজনীনের জীবন থেমে থাকেনি, ওই ছেলেটার কারনেও থেমে থাকেনি।
এই শুনছো? ঠান্ডা লাগছে? গায়ে চাদর টা জড়িয়ে নাও!
চিন্তায় ছেদ পড়ে নাজনীনের। শাহেদের হাত থেকে চাদরটা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিল। প্লেন আর ১ ঘন্টা পরেই ল্যান্ড করবে। নাজনীনের ঠান্ডা-গরমের খোঁজ নাজনীনের আগে শাহেদ পেয়ে যায়। টরোন্টতে একদিন হুট করেই পরিচয় হয়ে যায় নাজনীন আর শাহেদের। নাজনীন তখন পি.এইচ.ডি করছে, আর শাহেদ গবেষণা। ব্যস তারপরের টা ইতিহাস। নাজনীনের কখনো আর তার মেলানিনের পরিমাণ চিন্তা করতে হয় নি। দুজন মিলে পায়ে পায়ে এগিয়ে গেছে অনেকটা দূর। বিয়ের জন্যে পড়াশুনা করতে হয়নি, পড়াশুনার জন্যেই বোধহয় বিয়েটা হয়ে গেছে।
অনেক বছর পর দেশে ফিরছে নাজনীন। ব্যাগ ভর্তি সার্টিফিকেট আর সম্মাননা। পুরষ্কারের থলেটাও বেশ ভারী। বাংলাদেশের অন্যতম নারী বৈজ্ঞানিক হিসেবে সরকার তার জন্যে বিশাল সংবর্ধনা ও সম্মাননা আয়োজন করছে। ছোটবেলার মেলানিনের হিসাবটাকে হাস্যকর মনে হয়। দেশের মাটিতে নেমে বিলবোর্ডের ফেয়ার এন্ড লাভলির বিজ্ঞাপণগুলো দেখে। মনে আছে ছোটবেলায় দেখেছিল, ফেয়ার এন্ড লাভলী লাগিয়ে এক মেয়ে বিমান বালার চাকরী পেয়েছে এমন একটা বিজ্ঞাপন। ভাবনা চিন্তা আর আগায় না, এয়ারপোর্টে নেমেই সাংবাদিকদের ভীর, অনেক সাক্ষাতকার দিতে হবে তার।
©somewhere in net ltd.