নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আলোকরেখার আঁকিবুকি

ধরে নিও, স্বপ্নরাজ্য থেকে টুপ করে তোমাদের পৃথিবীতে নেমে বিভ্রান্ত এক লেখক...

জ্যোতিষ্কের আলোকরেখা

কল্পনার জগতে বিচরণকারী বাস্তবতার মূর্ত প্রতীক

জ্যোতিষ্কের আলোকরেখা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বারান্দার গল্পকথা

২৮ শে মে, ২০১৫ রাত ১২:০১



রাতুল বারান্দায় বসে আছে। সাততলার গ্রিল ছাড়া বারান্দা, রাত ৮টা ছুঁই ছুঁই। আশে পাশের বিল্ডিংগুলো সব ৫তলা, কোন একটা কারনে এ বিল্ডিং টা মাথা চাড়া দিয়ে একটু লম্বা হয়ে গেছে। পুরো এপার্টমেন্ট বিল্ডিং এর সব ফ্ল্যাটের বারান্দায় গ্রিল দেয়া। এ বাসার অন্য বারান্দাটাতেও গ্রিল দেয়া। খালি এ বারান্দাটা জেলখানা নয়। রাতুলরা এ বাসায় উঠার সময় থেকেই এমন ছিল; সে শুনেছে, আগে যে পরিবারটা ছিল, তাদের ও রাতুলের সমান একটা ছেলে ছিল, যে জেদ করে গ্রিল-ওয়ালা বারান্দা গ্রিল-বিহীন করেছিল। প্রথম প্রথম রাতুলের বাবা গ্রিল করে দিতে চেয়েছিলেন, পরে আর করা হয়ে ওঠেনি।


অনেক দুরের শহরের বোকেহ লাইট এফেক্ট দেখা যাচ্ছে। দুরের বাসা-বাড়ি গুলো কেমন ডল হাউজ ডল হাউজ লাগে রাতুলের কাছে। জানালা গুলোয় দেখা যায় কেউ এদিক থেকে ওদিক হেঁটে যাচ্ছে, কেও টিভি দেখছে। প্রায় সন্ধ্যায় বারান্দায় বসে রাতুল পুতুল-সংসার দেখে। ভাল লাগে, কানে হেডফোন, বোকেহ নগরী, পুতুল সংসার আর সূর্য পরবর্তী ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস।


পিতা-পুত্রের একলা এ পরিবারে পুতুল সংসারের চিরাচরিত পাট গুলো অভিনীত হয় না। বাপ-ছেলের মধ্যে কথাই তো হয় না তেমন। মা চলে গেছে ছোট কালে, নিজের সুখ খুঁজে নিতে। এমন এলোমেলো লোকের সাথে সংসার করা সম্ভব নয় – বলে সংসার পেতেছেন খুব গোছানো এক ভদ্রলোকের সাথে। চেয়েছিলেন রাতুল কে নিয়ে যেতে সাথে। রাতুল নিজেই রয়ে গেছে তার এলোমেলো বাবার কাছে। লোকটা কথা কম বলে, রাতুল এর কাজ কারবারে মাথা ঢুকায় না। নীরবে নিভৃতে থাকার জন্যে ভাল কম্প্যানিয়ন।


টুইট টুইট! ভাবনায় ছেদ পড়ে, মোবাইলের মেসেজ। রিয়াজ লিখেছে কালকে ক্লাস হবে না। ক্লাস হলে যে সে যেত, তাও না। কিন্তু জানাতে হয়, তাই রিয়াজ তাকে ঠিকঠাক মতন জানায়। ক্লাস রাতুল করতে পারে না, একটা ঘরে বন্দী হয়ে থাকতে হবে ভাবতে তার দমবন্ধ লাগে। ক্লাসের সময়টা সে গাছতলা আর চায়ের দোকানে কাটিয়ে দেয়। গাছতলায় বসে প্রেমিক প্রেমিকাদের গল্প শুনে, তাদের সুখ দেখে। এই সুখ গুলো তার দূর থেকে দেখতেই ভাল লাগে। মাঝে মাঝে দেখে ক্লাসের ছেলেমেয়ে গুলো লাফালাফি করতে করতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের সুখটাও তার দূর থেকে দেখতেই ভাল লাগে। সে জানে, সে তাদের মাঝে বেমানান। তাদের মজায় কাবাবের হাড্ডি হয়ে থাকার থেকে প্লেটের পাশের শসার টুকরা হয়ে থাকাতেই তার সুখ।


বৃষ্টি নামবে বোধহয়। রাতের আকাশেও মেঘ দেখা যাচ্ছে। অনেক বাতাস। রাতুলের কিজানি কি মনে হল, রেলিং এর উপরে উঠে দাঁড়াল। নাহ, সুইসাইডাল সে না। অতটা বীরপুরুষ, বা কাপুরুষ – কোনটাই সে না। বাতাস উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে তার মাথা ভর্তি ঝাঁকড়া চুলগুলোকে। দু হাত দু দিকে ছড়িয়ে দিয়ে প্রাণ ভোরে ঝড়ের ঘ্রাণ নিল। হঠাত করে পেছন থেকে তার বাবা ডাক দিলেন, রাতুল!


তখন প্রচন্ড বাতাস, হকচকিয়ে ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলল রাতুল। পায়ের তল থেকে রেলিং সরে গেল… হাওয়ায় উড়তে লাগল, এ বারান্দার পূর্ববর্তী বাসিন্দার মতন।


“হাওয়ায় উড়ে পালক খানি
অইটুক শেষ, অইটুক জানি
দেহ যে তার হার মেনেছে
মনে মনে কানাকানি”

(গল্পটা অনেকদুর যেতে পারত, কিন্তু মৃত্যু সবসময়ই অসমাপ্ত গল্প রেখে যায়। এটাই বাস্তবতা)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.