নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বাপ্নিক এই আমি

আমি কাল্পনিক সজল

আমি মানুষ হিসেবে খুবই সরল কারণ আমার মনে অত্যাধিক প্যাঁচ।

আমি কাল্পনিক সজল › বিস্তারিত পোস্টঃ

=>রত্নার গল্প<=(পিক্যুয়েল অব ''শীতের পরে বসন্ত আসে'')

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৩২





-তুমি আমাদের বাসায় দেখা করতে যাচ্ছো না কেন?



-দেখো,রত্না,আমি জানি আমাকে তোমার বাবা পছন্দ করবেন না,এর আগেও তো তোমার জারিজুরিতে কথা বলেছিলাম,কিছু হয়েছে?



-বুয়েটে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ হলো,এখন একটা চাকরি নাও,বাবাকে বল । তিনি নিশ্চয় আমাদের কথা ভেবে রাজি হবেন ।



-চাকরি কি হাতের মোয়া?যে চাইলেই পেয়ে যাবো? আর তুমি তো জানোই,আমাকে অপছন্দের কারণ চাকরি না,আমার.......



-বাদ দাও । যা খুশি করো,কিন্তু আমি তোমাকে না পেলে বাঁচবো না,এই আমি বলে দিলাম । আমি কেমিস্ট্রির ছাত্রী,এটা মনে রেখো ।



-এই দেখো,কান্না শুরু করে দিলা কেন?কত মানুষ এখানে,কি ভাববে?



-(চোখের জল মুছতে মুছতে) কি ভাবে ভাবুক,মানুষের ভাবনায় কাজ নাই । আমি চললাম ।



রত্না আমিরকে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই গট গট করে হেঁটে গেল । আমির রত্নার গমনপথের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবলো,চাকরি নাহয় একটা যোগাড় করেই ফেলবে,কিন্তু রত্নার বাবা যেখানে তাকে আটকে দিয়েছে সেখান থেকে সে বের হবে কি করে? রত্না দেখতে অনেক সুন্দর,আগুনসুন্দরী । দেখলেই মনটা ভালোবাসার আগুনে জ্বলে উঠে । তবে মনটা তারচেয়ে সুন্দর । ওর মনটা খুব স্পর্শকাতর । যাকে বলে কুসুমকোমল মন,খুব অল্পতেই অভিমান করে,আবার খুব অল্পতেই মন ভালো হয়ে যায় । তবে তার জিদটা অস্বাভাবিকরকম বেশি । একরোখা বললেও ভুল হবে না । আমিরের ভয় এখানেই । জিদের বশে যদি কিছু করে ফেলে!



ছয় মাস পর.......



রত্না অনেক সুন্দর করে সেজে এসেছে । আকাশী রঙের শাড়ি,তার সাথে মিলিয়ে আকাশী রঙের টিপ,রেশমী চুড়ি,চোখে নীলচে কাজল,নীল পাথরের দুল । মাথায় খোঁপা,তাতে নীল ফুল । তাকে পরীর মত লাগছে । আমির তো বলেই ফেলল,

-তোমাকে ঠিক পরীর মত লাগছে ।



-পরীর তো ডানা থাকে,আমার তো তা নেই ।



-তুমি হচ্ছো অন্যরকম পরী ।



-ভালো । এই নাও,বলে রত্না আমিরকে একটা কার্ড ধরিয়ে দিয়ে চলে যায় আর বলে যায় এটাই তাদের শেষ দেখা ।



আমির কার্ড খুলে দেখে সেটা রত্নার বিয়ের কার্ড । রত্না তাকে কঠিনভাবে দাওয়াত দিয়েছে ।



বিয়ের দিন.......



আমির হঠাৎ করে একটা বড়সর চাকরি পেয়ে গেল । অগ্রিম কিছু বেতনও পেল । একটা পরিচিত এতিমখানায় বাচ্চাদের খাইয়ে দিয়ে সোজা রত্নার বিয়েতে এল । একটা শেরওয়ানী কিনেছে,সেটাই পড়েছে । আমিরকে ঠিক বরের মতো দেখাচ্ছে তাই অনেকে তাকে বর ভেবে ভুল করলো ।



আমির শান্তশিষ্ঠভাবে দাওয়াত খেতে বসলো । আমির গল্পে এরকম প্রেমিকার বিয়েতে প্রেমিকের দাওয়াতের কাহিনী অনেক পড়েছে,আজ সেটার বাস্তব অভিজ্ঞতা হলো । তবে গল্পে যত সহজে প্রেমিকরা পেটপুরে খেতে পারে আমির তত সহজে খেতে পারলো না । খাবার অনেক সুস্বাদু কিন্তু তার গলা দিয়ে নামছে না,বার বার রত্নার কথা মনে পড়ছে,মনটা অনেক খারাপ । পেট খারাপ থাকলে তাও খাওয়া যায় কিন্তু মন খারাপ থাকলে অমৃতেও অরুচি ধরে । বর এসে গিয়েছে । আমির না খেয়েই উঠে পড়লো । বরের দামী ব্র্যান্ডের গাড়ি দেখেই বুঝলো,সে আসলেই রত্নার বরের নখেরও যোগ্য না ।



সেলফোনে একটা মেসেজ এলো,অপরিচিত নাম্বার হলেও চিনতে অসুবিধা হলো না,রত্নার নাম্বার । সেদিন শেষ দেখা হবার পর নাম্বারটা সেলফোন থেকে মুছে দিয়েছিল,তাই অপরিচিত নাম্বার হিসেবে এসেছে। কিন্তু মন থেকে তো নাম্বার মুছতে পারে নি,জানে,পারবেও না ।



রত্না লিখেছে,"তোমাকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে,বরের মতো,ঠিক যেভাবে আমি দেখতে চেয়েছিলাম ।"



সেলফোনটা পকেটে রেখে সে রত্নাকে চোখ দিয়ে খুঁজলো,কিন্তু পেল না । কিছুক্ষণ পর আরেকটা মেসেজ,"এই,এখন আমার কাবিন পড়ানো হবে,তাড়াতাড়ি আসো,সময় খুব কম।"



আমির মনে মনে বলে,আসলেই সময় খুব কম,আর একটু পড়েই রত্না অন্যের হয়ে যাবে,চিরদিনের জন্য ।



আমির পৌছাতে পৌছাতে কাবিন পড়ানো প্রায় শেষ,এখন কাজি কবুল বলতে বলছে । কিন্তু রত্না চুপ । রত্নার মা রত্নাকে বলছে,মা,কবুল বল ।



রত্না আমিরের দিকে তাকালো । একটা মায়া রয়েছে এই চাহনীতে,রয়েছে একটা অভিযোগ । রত্না ইশারায় আমিরকে ডাকলো,আমির কি করবে ভেবে পেল না । ইতোমধ্যেই রত্নার মা-বাবার সাথে চোখাচোখি হয়েছে । আমির শেষ পর্যন্ত কি যেন মনে করে গেল । রত্না তার মাকে সরিয়ে আমিরকে বসালো । ক্রমেই মানুষের মাঝে গুঞ্জন বাড়ছে ।



আমিরের কানে কানে রত্না ফিস ফিস করে বলল,বলেছিলাম না,তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না । আমি আসলেই বাঁচবো না । আমার খুব ইচ্ছা তোমার কোলে মাথা রেখে মরবো । আমার খুব কষ্ট হচ্ছে । কথা বলতে...



-কি বলছো এসব?আজ তোমার বিয়ে । কবুল বলো । সবাই অপেক্ষা করছে ।



রত্না ঢোক গিলে ফিস ফিস করে অনেক কষ্টে আমিরের কানে বলল,আমার তো কবেই বিয়ে হয়ে গিয়েছে । তোমার সাথে । আবারো যদি শুনতে চাও তবে বলি,আমি তোমাকে বর হিসেবে গ্রহণ করলাম,কবুল,কবুল,কবুল ।



রত্না আমিরের কোলে আস্তে আস্তে ঢলে পড়লো ।



আমিরকে দুইহাতে চেপে ধরতে যেয়ে হাত ফসকে একটা কালো বোতল মেঝেতে পড়লো । আমির তুলে নিয়ে দেখলো । সেটা বিষের বোতল । এখনো অর্ধেক বাকি রয়েছে । রত্না রসায়নের ছাত্রী,তাই সে কমও খায় নি,বেশিও খায় নি,যতটুকু খেলে মৃত্যু নিশ্চিত হবে, ততটুকুই খেয়েছে । রত্না শেষ কথাটিখুব ক্ষীণ কণ্ঠে বলল,আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।



এরপর আরো কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে কিছু বলল, কিন্তু সেগুলো তার ঠোটেই জড়িয়ে গেল।এরপর আমিরের কোলে মারা যেয়ে সে তার শেষ ইচ্ছা পূরণ করলো । আমিরের কোলে মাথা রেখে মরলো ।



আমির বোধশক্তিহীন হয়ে পড়লো । তার কোন অনুভূতি কাজ করছে না । তার কোলে রত্নার মরে পড়ে রয়েছে,কিন্তু তার কোন বহিঃপ্রকাশ নাই । ইতোমধ্যেই লোকজনের ছোটাছুটি,রত্নার মা-বাবার আহাজারিতে পরিবেশ গুমোট হয়ে গিয়েছে ।



আমির রাস্তায় হাঁটছে । পকেটে অর্ধপূর্ণ বিষের বোতলটা । হাঁটতে হাঁটতে সেই এতিমখানাটার সামনে এসে দাঁড়ালো । এখানেই সে কাটিয়েছে জীবনের কয়েকটা আধ্যায় । যেই অধ্যায়গুলোর জন্য সে কখনো রত্নার পাণিপ্রার্থীর যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি,রত্নার বাবার কাছে । আটকে গিয়েছে বার বার,শতবার ।



চার বছর পর..........



চাকরি ছেড়েছে সেইসময়েই । রত্নার আত্মহত্যার কারণে জেলও খাটতে হয়েছে। এখন সে পুরোপুরি মাস্তান হবার চেষ্টা করছে । কিন্তু যে কোনকালেই খারাপ ছিল না,সে কোনকালেও খারাপ হতে পারে না । তাই,আমির গুন্ডামি আর কি করবে,উল্টা উপকার করতেই দিন চলে যায় । যে কারণে তার দাদার বয়সী লোকেরাও তাকে সম্মান করতে ভুলে না ।



এতিমখানার ছেলেরাই তার সাঙ্গ-পাঙ্গ । সবাই আমিরকে বড়ভাই বলে ডাকে ।



আমিরের পকেটে এখনো সেই অর্ধপূর্ণ কালো কাঁচের বোতলটা রয়েছে । কতবার যে মরতে চেয়েছে,কিন্তু পারে নাই । নিজেকে হত্যা করতে নিজের আর সমাজের উপর যে কি পরিমাণ ক্ষোভ থাকতে হয় তা আমির বুঝেছে । সে এতীম বলে তার মনে যত ক্ষোভ ছিল তা জন্মের সাথেই রেখে এসেছে,তাই বোতলটা সে আর ব্যবহার করতে পারে না । তবুও প্রতি রাতে হয় ব্যর্থ প্রচেষ্টা ।



আজ রত্নার চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী । রত্নাকে খুব মনে পড়ছে । আজকের দিনটা সে পার্কে একা কাটাবে । তার সাঙ্গ-পাঙ্গরাও জানে বিষয়টা ।তাই এদিন কেউ তাকে বিরক্ত করে না।



আমির বসে আছে পার্কের সেই বেঞ্চে যেখানে সে প্রায় বসতো রত্নার সাথে । বসার পরপরই সে লক্ষ্য করলো একটা মেয়ে তাকে বারবার দেখছে । একসময় মেয়েটা তার দিকেই আসতে লাগলো । মেয়েটা দেখতে ঠিক রত্নার মতো । আগুন সুন্দরী । রত্নার কথা ভেবে তার মনটা আবার হু হু করে কেঁদে উঠলো ।



মেয়েটা এসেই আমিরকে বলল,আমাকে বিয়ে করবেন?

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:১১

ডরোথী সুমী বলেছেন: খুব ভাল লেগেছে। গল্পের বিষয়বস্তু নয়, লেখা। শুভ কামনা।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৯

আমি কাল্পনিক সজল বলেছেন: কি করলে বিসয়বস্তুও ভালো হবে সে বিষয়ে কিছু বললে কৃতজ্ঞ বোধ করতাম।

মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। শুভ কামনা।

২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৮

ডরোথী সুমী বলেছেন: বিষয়বস্তু অবশ্যই ভাল। মন খারাপ হয়েছে তাই অমন করে লিখলাম। ভাল লেখা তো ভাল লেখাই, তাতে মন ভালও হতে পারে আবার খারাপও।শুভ কামনা।

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৩৫

আমি কাল্পনিক সজল বলেছেন: ও, তাই? আমি বুঝতে পারি নাই।

আমার লেখাকে ভালো বলেছেন এটাই আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। ভালো থাকবেন। শুভ কামনা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.