নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বাপ্নিক এই আমি

আমি কাল্পনিক সজল

আমি মানুষ হিসেবে খুবই সরল কারণ আমার মনে অত্যাধিক প্যাঁচ।

আমি কাল্পনিক সজল › বিস্তারিত পোস্টঃ

অণু গল্পঃ আপেক্ষিক আক্ষেপ

০৩ রা অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৯:৫৪





কতদিন পর চোখে আলো পড়লো কে জানে। চোখ পিট পিট করছে, খোলা রাখাই মুশকিল। তালুর উল্টো পিঠ দিয়ে বারকয়েক ঘষে নিলেন। মুহূর্তেই ৪০ বছর আগের স্মৃতি যেন ফিরে এল। সেদিন আজকের দিনের মতো এমনই এক অনুভূতি অনুভব করেছিলেন।



নিজেই নিজেকে দেখে চিনতে পারলেন না। হাড্ডিসার দেহে এক্সরে ছাড়াই হাড় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। হাড়ের সাথে বাহিরের তফাৎ শুধু ভাঁজ পড়া চামড়া । ফুলে ওঠা শিরা-উপশিরাগুলো আসলে মাংসের অভাবকেই জানান দিচ্ছে। তিনি আরো ছয়জনের সাথে এতদিন একটা অন্ধকার রুমে বন্দি ছিলেন।



কেউ তার চুলের ঝুটি টেনে ধরে বলল, ২৫ হাজার টেকা দিয়া কিনছি। যদি পালাস তাহলে জীবন থাকবে না। যেখানে বসিয়ে দেব সেখানে সারাদিন বসে থাকবি। কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে কিচ্ছু বলবি না। বললে বুঝবি তোর দিন শেষ । যত ভালো ভিক্ষা করতে পারবি ততোই ভালো থাকতে পারবি। বুঝছিস?



তিনি কি বুঝলেন কে জানে তবে উত্তরে বললেন, ভাত নাই, মানচিত্র খা।



কি ভেবে যেন,তার চুলের ঝুটি ছেড়ে দিয়ে আজমল মিয়া এক খাবলা পিক ফেলল। মনে মনে বলল,যত বেশি বুড়া আর অসুস্থ ততো বেশি কামাই। তারপর ঘুরল আরেকজনের দিকে। সেইজনের কঙ্কালসার দেহ দেখে দেড় বছরের পরিশ্রমটাকে সে শিস বাজিয়ে উদযাপন করতে লাগলো, “হাওয়া মে উরতা যায়ে...”



****************************



-স্যার, সাইনটা যদি করে দিতেন...



মন্ত্রী সাহেব বললেন, কিসের সাইন?



-টেন্ডারের স্যার। এই বিদেশী কোম্পানীই আমাদের সবচেয়ে বেশি ইয়ে দেবে।



-কিন্তু এরা তো কাজ ভালো পারে না। দেশের উন্নতি করবে আর কি উল্টো ক্ষতি করে যাবে।



-স্যার, নিজে বাঁচলে বাপের নাম। আমরা টাকা পেলেই হল। দেশ দেশ করে কি হবে। দেশ যতো গরীব হবে আমরা ততো বেশি লোন পাব, যতো বেশি লোন পাব, ততো বেশি ইয়ে... হি হি হি।



-তোমরা আর ঠিক হইলা না। দাও সাইন করে দিচ্ছি। আমারটায় যেন কমতি না পরে।



-তা আর বলতে... হি হি হি।



লোকটা চলে যাবার পর কাচের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে মন্ত্রী ভাবেন ঠিক ১৫ বছর আগের কথা। বস্তিতে অনাহারে, অর্ধাহারে ৫ জনের সংসার কোনমতে চলছিল। এর মাঝে আবার শ্রমিক নেতা হবার জন্য লড়তে হবে। অর্ধেকের মতো টাকা জোগাড় হয়েছে, বাকি টাকা কিছুতেই জোগাড় করা যাচ্ছে না।



এমন নড়বড়ে পরিস্থিতে এক লোক টাকা যোগাড়ের একটা পন্থা জানাল। সেই লোকটা চলে যাবার পর তিনি প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে তার মায়ের দিকে তাকালেন। কারণ, লোকটা তাকে মিলিটারীর হাতে তার মা পড়ার কথা মনে করিয়ে দিয়েছে... বীরাঙ্গনা,হাহ।



এতবছর পরে মন্ত্রী তার মায়ের একটা কথা মনে করে নিজের অজান্তেই হেসে উঠলেন, “ভাত নাই, মানচিত্র খা।” কারণ, প্রকৃতপক্ষে, এখন তিনি মানচিত্রই খাচ্ছেন।





অদূরে প্রচণ্ড তাপদাহকে উপেক্ষা করে কয়েকজন শিক্ষার্থী একটা শপিং মলের দরজায় বাক্স হাতে নিয়ে বলছে, একজন মাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন। আপনার সামান্য সাহায্যে বেঁচে যাবে একজন মা।



মন্ত্রী সাহেব বিরক্ত। খবর পেয়েছেন তার ছেলে এই গরমে নাকি কোথাকার কোন মাকে বাঁচাতে টাকা যোগাড়ে নেমে পড়েছে।



এইসময় মন্ত্রীর মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠল, “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায়...”



খুব কাছেই এক ওভারব্রিজে এক অশীতিপর কঙ্কালসার বৃদ্ধা অপেক্ষায় আছে কখন তার সামনের স্টিলের বাটিতে পয়সা পড়ার টুং করে শব্দ হয়। কারণ সেই শব্দ তার হৃদপিণ্ডের স্পন্দনের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে, গত ১৫ বছরে।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:৪৩

কলমের কালি শেষ বলেছেন: অনেক সুন্দর অনুগল্প । অল্পতে ভাল বাস্তবিক বর্ণনা । :)

ভাই পেইজ এ লেখা ডাবল আসছে । একটু দেখবেন প্লিজ ।

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:১৭

আমি কাল্পনিক সজল বলেছেন: মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। :)


ঠিক করে নিলাম। জানানোর জন্য আরেকবার ধন্যবাদ। :)

২| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:৫১

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: +++++++++++++

খণ্ড চিত্রগুলোর অসাধারণ এক সন্নিবেশ করেছেন ।

ঈদের শুভেচ্ছা রইল :)

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৫৭

আমি কাল্পনিক সজল বলেছেন: প্লাস, শুভেচ্ছা, মন্তব্য সবকিছুর জন্য অনেক ধন্যবাদ।

দোয়া করবেন যেন লেখার মান ভালো করে ভালো কিছু উপহার দিতে পারি।

আপনার প্রতিও ঈদের শুভেচ্ছা রইল :)

৩| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৯

ফা হিম বলেছেন: অসাধারণ ও কঠিন বাস্তব এক চিত্র একেছেন!


“ভাত নাই, মানচিত্র খা।”

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৫৯

আমি কাল্পনিক সজল বলেছেন: সবচেয়ে কঠিন বাস্তবতা এই যে আমরা নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরে আনন্দোৎসব করছি.। :(


মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।। :)

ঈদের শুভেচ্ছা রইল :)

৪| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:০১

ফাহিম আহ্‌মেদ বলেছেন: আপেক্ষিকতার মোড়কে বাস্তব জীবনের প্রতিচ্ছবি। যৌক্তিক জীবনের অযাচিত পরিণতি। :( সুন্দর লেখা। :)

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১০:৩৩

আমি কাল্পনিক সজল বলেছেন: এমন সুন্দর মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ.। :)

৫| ০৬ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৫০

আরজু পনি বলেছেন:

মন খারাপ করিয়ে দেয়া লেখা ।

ভালো লাগা রইল।

আপনি প্রিন্ট মিডিয়ায় কী নামে লিখেন জানতে পারলে ভালো হতো।

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ২:০৪

আমি কাল্পনিক সজল বলেছেন: পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। :)

সজল চৌধুরী নামে লিখি। তবে খুব একটা লেখা হয় না। সহজে খুঁজে পাবেন না।

৬| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:২৮

আরজু পনি বলেছেন:

খুঁজে পাওয়ার জন্যে না।
আপনার লেখাটা কোন নামে জমা দিব জানতে আপনার নাম জিজ্ঞেস করেছি। :)

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:৪৫

আমি কাল্পনিক সজল বলেছেন: বুঝতে পারিনি। :(

সজল চৌধুরী নামে জমা দিয়েন। :)

৭| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:৪৫

মনিরা সুলতানা বলেছেন: খুব ভাল লেখা।

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:৪৬

আমি কাল্পনিক সজল বলেছেন: ধন্যবাদ। :)

৮| ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:১৯

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ভালো লাগল X( :| X((

০৭ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:৪৭

আমি কাল্পনিক সজল বলেছেন: ধন্যবাদ। :||

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.