![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগের অংশ
৮.
আমি বেরিয়ে পড়লাম। ভালো লাগছে না। মিসির আলি বাক্স রহস্য উদঘাটন করুক, বাকের ভাই মুনাকে খুঁজে পাক, আমি হেঁটে আসি।
রাত বেশ গভীর। ল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলোয় চারদিক ভরে আছে। চাঁদের আলো তাতে মোটেও পাত্তা পাচ্ছে না। 'সভ্যতা, তুমি দিয়েছ বেগ, কেড়ে নিয়েছ আবেগ।' আজকালকার কবিরা কি জ্যোৎস্না স্নান করে? তাদের কবিতায় তো চাঁদের স্থলে এখন ল্যাম্পপোস্টের স্থান।
ঈশ্বরচন্দ্র ল্যাম্পপোস্টের আলোয় পড়ে বিদ্যাসাগর হোন, আর আমাদের সুপারস্টার সাকিব খান ল্যাম্পপোস্টের আলোয় বুয়েটে পড়াশোনা করে টেক্সটাইলের ইঞ্জিনিয়ার হোন। কেয়া ব্যাত হে!
নাহ! উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাঁটতে ভালো লাগছে না। উদ্দেশ্য দরকার। সামনে একজন লোক হেঁটে যাচ্ছে। বাম কাঁধে ঝুলানো একটা ছোট ব্যাগ। বাম হাত দিয়ে শক্ত করে ব্যাগের বেল্ট ধরে ডান হাত দুলিয়ে দুলিয়ে হন হন করে হাঁটছে। আমিও কয়েক গজ পিছনে তার মতো ডান হাত দুলিয়ে দুলিয়ে হাঁটতে লাগলাম। মন্দ লাগছে না।
লোকটা বোধহয় টের পেয়েছে। কিছুক্ষণ হাঁটার গতি কমিয়ে দিয়েছিল, তারপর হাঁটার বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি বাড়িয়ে দিলাম। নিজেকে দুষ্ট লোক মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে কারও পিছু নিয়েছি। লোকটা ভয় মাখা চোখে একবার পিছনে তাকাল। আমি বোকার মতো হাসি দিলাম। লোকটা ভয় মাখা চোখ ফিরিয়ে নিয়ে জোরে হাঁটা শুরু করে দিল।
লোকটা অহেতুক ভয় পাচ্ছে, এতে আমার খারাপ লাগার কথা, কিন্তু আমার বেশ আনন্দ লাগছে। আমি দ্বিগুণ উৎসাহে তার পিছু নিচ্ছি। মানুষ সবসময় চায় কেউ তাকে ভয় পাক। স্বামী চায় স্ত্রী তাকে ভয় পাক, স্ত্রী চায় স্বামী তাকে ভয় পাক। বিয়ের রাতে একারণেই বিড়াল মারার একটা প্রথা আছে। এই বিড়াল বাস্তবের বিড়াল না, কাল্পনিক বিড়াল। যে মারতে পারবে, বাকি জীবনটা তার শাসনে কাটবে।
কিন্তু একটা কথা সর্বস্বীকৃত, জগতের সবচেয়ে পরাক্রমশালী লোকও তার স্ত্রীর কাছে অসহায়।
হঠাৎ মাথায় চাপা ব্যথা অনুভব করলাম। এটা তো খুব খারাপ। মনে হচ্ছে ভয়ংকর মাথা ব্যথা আবার আসছে। ব্যথা কাবু করার আগেই আমার মেসে ফেরা উচিৎ। গিয়ে দরজা জানালা বন্ধ করে মাথা ভেজা গামছায় ঢেকে ঠান্ডা মেঝেতে শুয়ে থাকতে হবে। কিন্তু মেসে ফিরতে ইচ্ছে করছে না। কড়া ঘুমের ওষুধ খেতে হবে। দশ মিলিগ্রামের চার-পাঁচটা হিপনল ট্যাবলেট।
পিছু নেওয়া বাদ দিয়ে একটা ফার্মেসিতে গেলাম। লোকটাকে কিছু বলার আগেই উঠে গেলেন। ভ্রু কুঞ্চিত করে এক গ্লাস পানি এনে দিলেন, ৫টা হিপনল দিলেন, আর একটা বেঞ্চ দেখিয়ে দিলেন। আমি তো অবাক, এনার ইনট্যুশন ক্ষমতা তো আমার চেয়ে বহুগুণ বেশি।
লোকটা বলল, 'আমি আপনাকে চিনি। আপনি হিমু ভাই। অনেক দিন আগে এসেছিলেন। অনেক কান্ড করেছিলেন। আমি মনে রেখেছি। এখন টেলিফোন নেই, মোবাইল আছে। লাগবে?'
'না। তবে আমার মোবাইলটা চার্জে দিন। খুব গুরুত্বপূর্ণ কল আসবে। রূপার কল আসবে।'
আমি বেঞ্চে শুয়ে পড়লাম। আমরা কাউকে কাউকে অকারণেই মনে রাখি। অনেক যত্নে মনে রাখি। ঠিক যেমন করে গ্রাম্য বঁধু সেলাইয়ের ফোঁড়ে লিখে রাখে তার কিশোরী মনের না বলা ভালোবাসার কথা।
মাথা ব্যথা বাড়ছে, ঘুমও আমাকে গ্রাস করছে। আমি তলিয়ে যাচ্ছি যেন কোন এক জলে। ময়ূরাক্ষীর জলে। তীরে ফেরার আপ্রাণ চেষ্টা। তীরে যেন কেউ আমার জন্য অপেক্ষা করছে। চিরচেনা কেউ। আমি ডুবে যাচ্ছি, আবার ভেসে উঠছি। তীরের মানুষটা আমাকে ইশারায় ডাকছে। মানুষটা একজন নারী। খুব পরিচিত একজন নারী। কিন্তু সবকিছু কেমন ঝাপসা। একটা সময় সবকিছু অন্ধকার।
১৬.১১.১৪
(চলবে)
©somewhere in net ltd.